Full premium theme for CMS
আলাপন
Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..
[বি. দ্র. পরবর্তী সময়ে এধরনের আয়োজনকে মুখোমুখি বা আড্ডা শিরোনামে প্রকাশ করা হয়েছে]
আড্ডা- হ্যাঁ, এক আড্ডায় বসেছিলেন কয়েকজন নাট্যকর্মী। ‘আড্ডাবাজ’দের এই বৈঠক আয়োজন করেছিল ‘থিয়েটারওয়ালা’। আয়োজন জমজমাট না হলেও আড্ডা জমজমাট হবে এই প্রত্যাশা ছিল। প্রত্যাশা পূরণও হয়েছিল, তবে একটু বাধ সাধলো ‘রেকর্ডার’। সুতরাং স্মরণ শক্তিকে আশ্রয় করে লেখা হলো এই গদ্য- সম্পাদক।
আড্ডায় অংশ নিয়েছিলেন দেশের বরেণ্য নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতা মামুনুর রশীদ (আরণ্যক নাট্যদল), অভিনেতা প্রশান্ত হালদার (থিয়েটার আর্ট ইউনিট), অভিনেত্রী সামিয়া মহসিন (থিয়েটার, বেইলী রোড) এবং নির্দেশক, অভিনেতা আলী মাহমুদ (জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার-ঢাকা)।
আড্ডার প্রথম প্রসঙ্গ ছিল ঢাকার থিয়েটারের বর্তমান সঙ্কট। সঙ্কট কোনটি? দর্শক কমে গেছে নাকি মঞ্চ নেই? নাটক ভালো হচ্ছে না নাকি নাট্যকর্মীদের commitment এর অভার? কোনটি এখন থিয়েটার চর্চায় সঙ্কট? উত্তর যাই হোক থিয়েটারের সঙ্কট যে এখন বহুমুখি তা স্পষ্ট হয়ে যায় সঙ্কটের প্রকারভেদের তালিকা দেখেই।
থিয়েটারের সঙ্কট যদি দর্শক স্বল্পতা হয় তবে এর একটা প্রধান কারণ, information এর অভাব। তাদের মতে ঢাকার অন্তত সত্তুর ভাগ লোক জানেন না যে, বেইলী রোডে নিয়মিত দর্শনীর বিনিময়ে নাটক মঞ্চস্থ হয়। এ প্রসঙ্গে মামুন ভাই বললেন, ঢাকায় অনেকে এখনো তাঁকে প্রশ্ন করেন, তিনি ঢাকা থিয়েটার কিংবা থিয়েটার অথবা নাগরিক- কোন দলে কাজ করেন? শুধু তাই না বেইলী রোডে নাটক দেখতে আসা বহু দর্শকই টিকেট কাটতে এসে কাদের নাটক? ক’টায় শুরু হবে? দলের নাম কি? টিকেটের দাম কত? প্রভৃতি বিষয়ে প্রশ্ন করেন যেগুলো প্রমাণ করে যে, ঐ দর্শক মঞ্চ নাটকের খবরাখবর নিয়মিত (এমন কি অনিয়মিত) রাখেন না। তো, যাদের জন্য এই থিয়েটার তাদের এতো বৃহৎ অংশ যদি থিয়েটারের সাধারণ information থেকে দূরে থাকেন তবে এ কথা বলতেই হবে ঢাকার থিয়েটারকে ঢাকার নাগরিকগণ এখনো culture হিসেবে গ্রহণ করেন নি কিংবা গ্রহণের সুযোগ তৈরি হয় নি।
যারা থিয়েটারের সাথে জড়িত তাদের একটি অভিজ্ঞতা আছে যে, দর্শক হলে এসে নাটকে টিভি শিল্পীর উপস্থিতি চান। এটা থিয়েটার চর্চায় প্রতিবন্ধক কিনা এ প্রসঙ্গে আলোচনায় একটা কথা পরিষ্কার, টিভি’র জনপ্রিয় শিল্পীকে তাঁর দর্শক মঞ্চে সামনা সামনি দেখতে চাইতেই পারে। এটা নেতিবাচক কিছু না। কিন্তু সমস্যা হয় তখন, যখন ঐ শিল্পীকে থিয়েটার নিজেই অতিমূল্যায়ন করে। অর্থাৎ থিয়েটার দল যদি ঐ শিল্পীর টিভি জনপ্রিয়তাকে প্রাধান্য দেয়, তবে তা অবশ্যই থিয়েটার চর্চায় ক্ষতিকর। একটা কথা মনে রাখতে হবে, থিয়েটার চায় সৃজনশীল নাট্যকর্মী। অর্থাৎ ঐ ধরনের লোক থিয়েটারে প্রয়োজন যারা একাধারে কর্মী এবং অতি অবশ্যই সৃজনশীল। যদি কেবল সৃজনশীল হয় তবে তার অবস্থান টিভিতে (হলেও হতে পারে) হবে আর যদি কেবল কর্মী হয় (সৃজনশীল নয়) তবে থিয়েটার হয়তো তাকে কিছু দেবে কিন্তু সে থিয়েটারকে দিতে পারবে না কিছুই। এই যে সৃজনশীল নাট্যকর্মীর কথা বলা হলো, এঁদের অভাব থিয়েটার পাড়ায় বড়ই স্পষ্ট। কিছু কিছু শিল্পী খুবই প্রতিভাবান, কিন্তু মোটেও থিয়েটারকর্মী নয়, তাঁদের কদর আজকাল কোনো কোনো থিয়েটার দলে বেড়ে গেছে। ফলে সেই দলের সাথে সাথে গোটা থিয়েটার চর্চায় এক অশুভ ছায়া দেখা দিচ্ছে। এই প্রসঙ্গে মামুন ভাই একমত হতেই তাঁকে ‘বাঙলা থিয়েটার’ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলো। অনেক পূর্বে ‘আদিম’ নাটকে একজন শিল্পীকে বাঙলা থিয়েটার cast করেছিলেন কেবল গ্লামার আর অভিনয় প্রতিভা দেখে এবং বলা বাহুল্য ‘আদিম’ নাটকটি সে কারণে দর্শকনন্দিত হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ঐ শিল্পীর নিজস্ব নাট্যদলের আপত্তির কারণে তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য শিল্পীকে পধংঃ করায় নাটকটি তার দর্শকপ্রিয়তা কিছুটা হলেও হারায়। তো এখানে কি বাঙলা থিয়েটার কেবলই সৃজনশীলতাকে প্রাধান্য দেয় নি? উত্তরে মামুনভাইয়ের ব্যাখ্যা ছিল যে, থিয়েটারকে professionalism-এ রূপ দেয়া ছিল উদ্দেশ্য। সুতরাং দর্শককে আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যেই গ্লামারাস শিল্পীকে cast করা হয়েছিল। এখন প্রশ্ন- এতে করে কি থিয়েটার ক্ষতিগ্রস্ত হয় নি? কেননা বাঙলা থিয়েটার, তা সে professionalism থিয়েটারই হোক আর গ্রুপ থিয়েটারই হোক মূল আদর্শতো একই হওয়া উচিত। সুতরাং এখানেও এমন শিল্পীরাই অংশ নিবেন যারা একাধারে সৃজনশীল এবং কর্মী। কারণ professionalism থিয়েটার মানে থিয়েটার নিয়ে ‘ব্যবসা’ করা নয় বরং থিয়েটারকর্মীকে কেবলই থিয়েটার করে বেঁচে থাকার ব্যাপারে আশাবাদী করে তোলা। অবশেষে মামুন ভাই স্বীকার করে নিলেন যে, থিয়েটারের জন্য চাই সৃজনশীল নাট্যকর্মী (professionalism থিয়েটারের জন্যও)।
‘নাট্যকর্মী’- সৃজনশীল না-ও হতে পারে’- এই ধারণা কিংবা বক্তব্য থিয়েটারের জন্য এক বড় ট্র্যাজেডি। এই ট্র্যাজেডিই এখনকার থিয়েটার চর্চায় মহা সঙ্কট স্বরূপ। আড্ডার ‘আড্ডাবাজ’রা থিয়েটারের বর্তমান স্থবিরতার পেছনে থিয়েটার পাড়ার কিছু অসৃজনশীল নাট্যকর্মীর সদর্ভ উপস্থিতিকে দায়ী করেছেন। এদের কেউ কেউ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের কর্মকর্তা। ‘আড্ডাবাজ’রা দেখিয়েছেন, বিগত এক দশকে এই থিয়েটারকর্মীরা (যারা সৃজনশীল নন) গ্রুপ থিয়েটার চর্চাকে বিন্দুমাত্র গাতশীল করতে পারেন নি। তারা সম্মেলন, জাতির দুর্দিনে বিক্ষিপ্তভাবে বিবৃতি এবং কিছু নাট্যোৎসব করার বাইরে থিয়েটার কর্মকা-কে জনগণের সংস্কৃতিতে রূপ দিতে পারেন নি। এবং এ কারণেই বিগত এক দশকের উপরে বাংলাদেশে নাট্যদলের সংখ্যা বাড়লেও ভালো নাটক এবং দর্শক সংখ্যা বাড়ে নি। উৎসবে নাট্যদল বাছাইয়ে গতানুগতিক তালিকার কথা ধর্তব্যে না নিলেও নাটক বাছাইয়ে সাহিত্যবোধের অভাব অতি অবশ্যই পীড়াদায়ক। গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের উৎসবে কঞ্জুস-বিচ্ছু-গিটঠুর মতো নাটক মঞ্চস্থ হবে নাকি বনপাংশুল-ক্রুসিবল-বিষাদ সিন্ধু মঞ্চস্থ হবে তা ঠিক করার মতো কর্মী ওখানে থাকা উচিত।
আলোচনার বিষয় প্রথমে যা ছিল তাতেই আবার ফিরে এলো। দর্শক স্বল্পতা। দর্শক স্বল্পতার জন্য information এর অভাবের পাশাপাশি transport সমস্যাকেও বড় করে দেখা হলো। বেইলী রোড থেকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ব্যয়বহুল। কোনো এক পরিবার যদি কোনো সন্ধ্যায় নাটক দেখতে আসে, তাহলে তার অন্তত পাঁচ’শ টাকার ধাক্কা সামলাতে হবে। এটা ঢাকার মধ্যবিত্তের জন্য একটা চাপ বলা যায়। এ চাপের বিরুদ্ধে নান্দনিক চিন্তা কতো দিনইবা টিকতে পারে। সুতরাং থিয়েটারকে মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে। উন্নত মঞ্চ বানাতে হবে। এমন এমন স্থানে মঞ্চ থাকবে যেখানে মধ্যবিত্তের যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে। টিকেটের দাম নিয়েও কথা উঠেছে আড্ডায়। ঢাকার মঞ্চের টিকেটের হার এতো বেশি যে, তা এমনিতেই মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। সুতরাং হল ভাড়া থেকে শুরু করে production এর সব ধরনের খরচ কমাতে হবে নতুবা যে মধ্যবিত্ত থিয়েটারের সংস্পর্শ ছেড়েছে তাকে শত ডেকেও আর ফিরানো যাবে না।