Full premium theme for CMS
‘নদ্দিউ নতিম’: প্রসেনিয়ামের আলোয় হুমায়ূন পাঠ
Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..
শিল্পান্তর যেকোনো সৃষ্টির নতুন পাঠ তৈরির দুরূহ মাধ্যম। পাঠকের জন্য প্রস্তুতকৃত মাঠে দর্শককে আবিষ্ট করতে বাড়তি প্রস্তুতি, সাহস ও প্রজ্ঞা জরুরি। ‘ম্যাড থেটার’- এর প্রথম মঞ্চ প্রযোজনা ‘নদ্দিউ নতিম’ এই চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা করার চেষ্টা করেছে নান্দনিকভাবে। দর্শক সারি থেকে দেখার অভিজ্ঞতায় এ প্রচেষ্টার আপাত মূল্যায়নের চেষ্টা রইল নিম্নোক্ত বয়ানে।
হুমায়ূন আহমেদের লেখালেখি নিয়ে পাঠক সমাজে যে বিপুল উচ্ছ্বাস জারি আছে থিয়েটারের আঙিনায় তা একেবারেই ম্রিয়মান। বাংলা সাহিত্যের চূড়ায় আসীন হয়েও যে জ্ঞাত-অজ্ঞাত কারণে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের নাটকও যখন মঞ্চায়নের ক্ষেত্রে বিপুল উদাসীনতার শিকার হয়, সেখানে হুমায়ূন আহমেদ ঔপন্যাসিক, টেলিভিশন নাট্যকার পরিচয়ের বাইরে আদৃত হবেন এ আশা দুরাশা! টেলিভিশন নাটকে হুমায়ূন আহমেদের বিপুল আধিপত্যের সমান্তরালে সাম্প্রতিক বাংলাদেশের (পড়তে পারেন ঢাকার) নাট্যমঞ্চে ‘বহুবচন’-এর প্রযোজনায় ‘দেবী’ এবং ‘নান্দনিক’ প্রযোজনা ‘নৃপতি’ নাটক দুটি দেখতে পাই। ‘ম্যাড থেটার’-এর প্রযোজনা ‘নদ্দিউ নতিম’ এ ধারাবাহিকতায় তৃতীয় সংযোজন। হুমায়ূন আহমেদের ‘কে কথা কয়’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত নাটক ‘নদ্দিউ নতিম’ হুমায়ূন আহমেদ পাঠের প্রচলিত ধারার সমান্তরালে, ক্ষেত্রবিশেষে বিপরীতে বলিষ্ঠ উচ্চারণ যা গল্পপাঠের নতুন সম্ভাবনা তথা হুমায়ূন পাঠের উচ্চতর ক্ষেত্র তৈরিতে একটি মাইলফলক নিঃসন্দেহে। বিগত কয়েকমাসে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের মঞ্চে নাটকটির দর্শকপ্রিয়তা সে সাক্ষ্যই দেয়।
এ প্রযোজনাটির প্রতি মুগ্ধতা প্রকাশের নেপথ্যে একাধিক ব্যক্তিগত এবং নৈর্ব্যাক্তিক কারণ সক্রিয় রয়েছে। আমি হুমায়ূন আহমেদের নিবিড় পাঠক নই একেবারেই। এটি প্রথম কারণ। আর একারণেই নাট্যসংলাপ এবং অন্তর্লীন বয়ান একেবারেই আনকোরা, সতেজ এবং সরস লেগেছে যা প্রকারান্তরে বলা চলে ভীষণ সাবলীল এবং হৃদয়স্পর্শী। গল্পকথনকে এবং গল্পটিকে কেন্দ্রে রেখে নিরাভরণ মঞ্চে সামগ্রিক ক্রিয়াকর্ম সংঘটিত হয়েছে। প্রায় দু’ঘন্টা ব্যাপী এই গল্পের জাদুতে দর্শককে আবিষ্ট করে রাখার প্রচেষ্টায় কল্পিত উজবেক কবি মতিন উদ্দিন এবং তার গল্পলোকের বাসিন্দারা রীতিমত সফল।
কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের গল্পকথনের একটা নিজস্ব স্বর ও সুর আছে। কবি না হলেও তাঁর বয়ানে কাব্যময়তার নির্যাস পাওয়া যায়। মঞ্চায়নের জন্য পাণ্ডুলিপি বিবেচনায় যে নাট্যগুণসমূহ প্রাথমিক বিবেচনায় আসে তা হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসে কিছুটা হলেও বিরল বলা চলে। Action-Reaction বা দ্বান্দ্বিকতার তুলনায় ঘটনার একটু বিপ্রতীপ বয়ানই যেন মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এতে করে প্রতিটি ছোট ছোট ঘটনা পাঠককে কিংবা দর্শককে বিনোদিত করে কিন্তু দর্শকের ভাবনার জায়গাটি খুব গভীর করে গড়ে তোলার সুযোগ প্রায় থাকে না। ‘কে কথা কয়’ হতে ‘নদ্দিউ নতিম’-এ রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় হুমায়ূন আহমেদের লেখনীর এ প্রবণতাটুকু এবং গল্পকথনে কাব্যময়তার অন্তর্লীন নির্যাসটুকু উবে যায়নি বরং মঞ্চালোকে বলা চলে অনেক বেশি সংবেদনশীল হয়ে এসেছে। মঞ্চ প্রযোজনাতে পাঠকের সমান্তরালে হাঁটার সচেতনতা ছিল লক্ষণীয়। এ সীমাবদ্ধতা পুনরায় উল্লেখ করব এই লেখার শেষাংশে।
উজবেক কবির চরিত্রাভিনেতা আসাদুল ইসলাম নিজেও একজন কবি বলেই হয়তো এ সাঁকোবন্ধনটুকু অন্য মাত্রা পেয়েছে, চরিত্রটি তাঁর নিজের চরিত্রই হয়ে এসেছে কখনো। মঞ্চে অভিনয়ের দীর্ঘ যাত্রা আর কাব্যচর্চার সৌরভের মিথষ্ক্রিয়ায় ‘নদ্দিউ নতিম’ একটি নতুন গল্প হয়ে মঞ্চে ফুটে উঠেছে।
মুগ্ধতার দ্বিতীয় কারণটি ব্যক্তিগত এবং একান্তভাবেই লেখক হুমায়ূন আহমেদের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা সঞ্জাত। বন্ধুদের আড্ডায় কথা উল্টো করে বলার একটা ঝোঁক ছিল কৈশোরে। ব্যক্ত কথাটিকে অব্যক্ত রূপ দেবার এ নিরীহ প্রয়াস হুমায়ূন আহমেদ আবিষ্কার করেন এক অটিস্টিক শিশুর কথনে। বোল পাল্টালে কি মানুষ পাল্টায়? মানুষ হয়তো তাই ভাবে। নাটকে এই শহরের কোনো এক বেকার, ব্যর্থ কবি ‘মতিন উদ্দিন’ নাম পালটে হয়ে গেলেন উজবেক কবি ‘নদ্দিউ নতিম’! উলটো নামেই তার যত খ্যাতি, প্রাপ্তি!! লেখা ছাপা হচ্ছে, বই বেরুচ্ছে আরো কত কী! এ শহরে কে বা কারা আছেন উল্টো পরিচয়ে? কে চেনে তাকে? তাকে চিনতে হলে উচ্চতর কোনো ভাবের ভাষা জানতে হয়। সে ভাব আমাদের স্বভাবের দূরবর্তী বলেই হয়তো প্রচলিত বিশ্বাসে অস্বাভাবিক আচরণ! মানসিক প্রতিবন্ধী! এই গল্পের কেন্দ্রে আছে কমল নামে একটি শিশু, যে কিনা অটিজম-এ ভুগছে। মতিন উদ্দিন, যে জানতোই না অটিজম কী, সে পেলো কমলকে পড়ানোর ভার! ছাত্রজীবনে এমন করুণ অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমার নিজের। জনৈক অটিস্টিক শিশুর মা বলেছিলেন ফোনের ওপ্রান্তে, ‘আমার বাচ্চা special child পড়াতে পারবেন? special child মানে কী আমিও বুঝিনি সেদিন। নদ্দিউ নতিম, অর্থাৎ হুমায়ূন আহমেদ আমার সেই অক্ষমতার স্মৃতি ফিরিয়ে দিল। হুমায়ূন আহমেদের লেখনীর চরম উৎকর্ষতো এখানেই। মধ্যবিত্ত জীবনের গ্লানি, প্রাপ্তি, হতাশার সমীকরণ এমন আনুবীক্ষণিক চোখে দেখার চর্চাটা তথাকথিত মূলধারার শিল্প সাহিত্যচর্চায় সবসময় সুলভ নয়। জীবনের এই টানাপোড়েন, মনস্তাত্ত্বিক সংকটের অনুপুঙ্খ বয়ান মঞ্চনাটকে একেবারে দুর্লভ নয় কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা অভিনয়, সংলাপ, প্রতীকি নাট্যক্রিয়ায় একটি সামগ্রিক ছবি হয়ে ধরা দেয়। এই নাটকটি সে অর্থে ব্যতিক্রম, কারণ প্রধানত সংলাপের শক্তিতেই এ নাটকের পট নির্মিত আর শরীরি অভিব্যক্তি হয়ে এসেছে তার সম্পূরক হয়ে ।
তৃতীয় কারণটি হলো, এ নাটকটি শতভাগ পারিবারিক প্রযোজনা! একই পরিবারের দুই প্রজন্মের চলনে বলনে নাটকটি প্রস্ফুটিত। নাটকের চরিত্রগুলোর নিজেদের পারস্পরিক বোঝাপড়া এরচেয়ে শানিত করার উত্তম উপায় আর কই? ভীষণ অনুপ্রাণিত হয়েছি একজন নাট্যকর্মী হিসেবে। অভিবাদন অভিনেতা ও নির্দেশক আসাদুল ইসলাম, সোনিয়া হাসান এবং আগামীর সম্ভাবনা মেঘদূত-এর প্রতি, সীমিত আয়োজনে জীবনের অসীম আনন্দ বেদনার কথাকাব্য প্রায় শুন্য মঞ্চে ফুটিয়ে তোলবার শিল্পিত প্রচেষ্টার জন্য, অকপট গল্পকথনের জন্য। আর হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টির ভিন্নপাঠ উপহার দেবার জন্য টুপি খোলা অভিবাদন!
এই মুগ্ধতার আবেশ এড়িয়ে নাটকটিতে চোখ রাখলেই যে বিষয়টি প্রকট হয়ে ওঠে তা হলো মূল কাহিনিকার অর্থাৎ হুমায়ূন আহমেদ-এর রচনার প্রতি পূর্ণ আনুগত্য। উপন্যাস, গল্প এমনকি কবিতা অবলম্বনে নাট্য রুপান্তরের ক্ষেত্রে নবভাষ্য নির্মাণের যে স্বাধীনতা, আকাঙ্ক্ষা ক্রিয়াশীল থাকে তা এ নাটকে অনুপস্থিত। বই-এর পাতা থেকে মঞ্চের আলোয় তুলে আনার পরেও নাটকটির শরীরে হুমায়ূন আহমেদের স্বর প্রক্ষিপ্ত রয়েছে বরাবর। হুমায়ূন আহমেদকে সর্বদা জারি রাখাটা দোষের নয় কিন্তু এতে প্রযোজনার স্বাতন্ত্র্য ক্ষুণ্ন হয়েছে অনেকটাই। একেবারে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে দর্শকের সাথে যোগাযোগের প্রচেষ্টা নিয়ে নীরিক্ষার প্রয়াস তাই আড়ালেই থেকে গেলো। এ বিবেচনায় প্রযোজনাটির সাফল্যের সাথে সীমাবদ্ধতাও যেন উঁকি দিয়ে গেলো।
হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস, বইয়ের বদলে প্রসেনিয়ামের আলোয় পাঠ করা গেলো, এটা হুমায়ূন আহমেদ-এর সৃষ্টিকর্মের বহুমাত্রিক সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচনের স্মারক হয়ে থাকবে। এর বিপরীতে সীমাবদ্ধতার কথা বলতে গেলে বলতে হয়, প্রতিটি শিল্পকর্ম পাঠক-দর্শকের কাছে নতুন ভাষ্য নিয়ে হাজির হবে, ক্রমশ তার নবরূপায়ণ হবে এটাইতো শিল্পের প্রত্যাশা। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদের প্রতি বিপুল আনুগত্য এ সম্ভাবনার সুষমাটুকু বিকশিত হতে দেয়নি। ‘কে কথা কয়’ উপন্যাসের বর্ণনাকে নির্দেশক প্রযোজনার চাহিদামাফিক কিছুটা সীমায়িত করেছেন, সংলাপের মাধ্যমে দীর্ঘ ঘটনাকে সংক্ষিপ্ত করে উপস্থাপন করেছেন এবং যে চরিত্রগুলো এঁকেছেন সেগুলোর গড়ন, বলন, চলন এবং সর্বোপরি পরিণতি উপন্যাসের বর্ণনানুগ রেখেছেন। দর্শকের জন্য খুব বড় কোনো প্রশ্ন জারি থাকে না বলা চলে, যা থাকে তা হলো একধরনের বিষাদের বাতাবরণ। পুরো নাটকে একই সমান্তরালে চকিত হাস্যরসের ইশারা আছে পরতে পরতে, আছে মধ্যাবিত্তের বেদনা, অসহায়ত্বের বিজ্ঞাপন। দৈনন্দিনতার চাপে চাপা পড়া কান্নাকে উসকে দেয়ার দায় আছে ‘নদ্দিউ নতিম’-এর। মধ্যবিত্ত জীবনের টুকরো টুকরো পরাজয়ের গল্পগুলোর আন্তরিক বয়ান সকলকে আর্দ্র করে কিন্তু এর বিপরীতে পরবর্তী কোনো প্রশ্ন কিংবা ভাবনার উত্তরণের পথ খোলা থাকে না। অর্থাৎ মঞ্চেই গল্পটি পুরোপুরি বলা হয়ে গেলো! ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’ টাইপের কোনো তীব্র অতৃপ্তি থাকে না, কিন্তু থাকলে এর শিল্পমূল্য বেড়ে যেত বহুগুণ!
শিশুশিল্পী মেঘদূতকে একটি পূর্ণাঙ্গ চরিত্রে রূপায়ণের দুঃসাহসী প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। মেঘদূত এই নাটকে যে পরিপক্বতার স্বাক্ষর রেখেছে তা বিবেচনা করে বলা চলে এই চরিত্রটিতে আরো বহুমাত্রিকতা দানে সে সক্ষম। নির্দেশক নিজেই প্রধান চরিত্রে অভিনয় না করলে হয়তো মেঘদূত-এর চরিত্রটি নির্মাণে আরো কিছু যোগ করতে পারতেন। এই চরিত্রটি একরৈখিক হয়ে উঠেছে শেষ পর্যন্ত। কিন্তু গল্পের প্রাথমিক বয়ানে যখন দেখি শিশুটি অটিস্টিক, তখন খুব সাদা চোখেই এই শিশুটির চরিত্রে অন্তত দুটি শিশুর ছাপ আশা করাটা অমূলক ঠেকে না। অটিস্টিক শিশু মানে একগুঁয়ে, নির্মম এই পরিচয়টিই কিন্তু শেষ পর্যন্ত টিকে গেছে। নদ্দিউ নতিম-এর আত্মহত্যা সে সাক্ষ্যই দেয়। এ পরিণতিটুকু নিয়ে ভাবনার অবকাশ রয়েছে। একজন বেকার, অসহায় কবি মৃত্যুর সিদ্ধান্ত এমন সহজে নিতে পারে? কিংবা সেটাই কি আমরা দেখতে চাই? এই প্রশ্নের সমাধান নাটকে কিংবা উপন্যাসটিতে খুব সরলভাবে দেখানো হয়েছে। তবে মঞ্চে নদ্দিউ নতিম ক্রুশবিদ্ধ যীশুর মূর্তি ধরে এই পরিণতির মহত্তর ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। শিল্প শেষ পর্যন্ত জীবনের জয়গানই করুক এ প্রত্যাশাইতো করি আমরা। শিশুশিল্পী মেঘদূতের অভিষেক অবশ্য দারুণ ইতিবাচক ঘটনা। আমাদের থিয়েটারকে কেবল বড়দের থিয়েটার বানিয়ে তোলবার বিপরীতে এটিও সফল প্রচেষ্টা। মেঘদূতের এ যাত্রা দীর্ঘ হোক এটাই কামনা।
কোরিওগ্রাফির চমক, সুবিশাল ঝকমারি সেট, তীব্র আলোর ঝলকানি এড়িয়ে গল্পের নদী বইয়ে দিয়েছেন কবি, সেই নদীতে হুমায়ূন আহমেদের চোখ দিয়ে দেখি, ব্যক্তি জীবনের আনন্দ হাসি কান্নার বিবিধ উপমা ভেসে যায়, ডুবে যায়, দোল খায়, আমরা আর্দ্র হই, ঋদ্ধ হই। মাত্র তিনজন অভিনেতৃকে আমরা দেখতে পাই মঞ্চে কিন্তু কথক চরিত্রটি হয়ে ওঠে অজস্র চরিত্রের প্রতিচ্ছবি। তার সংলাপেই জীবন্ত হয়ে ওঠে একজন ক্ষমতাবান এডভোকেটের অসহায় মূর্তি, একজন রন্ধনবিলাসী প্রৌঢ়, একজন মমতাময়ী বোন, একজন আপাত নীরিহ কেয়ারটেকার, একজন দূরবর্তী বন্ধু, পাঠক, একজন ভালোবাসার মানুষ। তবে কথক চরিত্রটি কখনো কখনো এতোসব চরিত্রের ভীড়ে কিছুটা ম্লান হয়ে পড়ে। কথক থেকে অন্য চরিত্রে রূপান্তর এবং ফিরে আসার পথে কিছুটা অস্পষ্টতা মাঝেমধ্যোই তৈরি হয়েছে। স্বর প্রক্ষেপণে এ বৈচিত্র আনয়নে কথকের বাড়তি অভিনিবেশ জরুরি। মুনা চরিত্রটি বরং নিরেট এবং নিখাদ। অভিজাতশ্রেণীর প্রতিনিধির রূপায়ণে এবং একরৈখিক চরিত্রের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে বহুমাত্রিক ছবি এঁকেছেন সযত্নে। এর বিপরীতে নদ্দিউ নতিম এবং কমল দুটি চরিত্রই উন্নয়নের, নাট্যদ্বন্দ্ব তৈরিতে, ক্লাইম্যাক্স-এ পৌঁছুতে আরো দীপ্তি দেখানোর দারুণ সুযোগ রয়েছে। পুনঃপুনঃ মঞ্চায়নে এ সুযোগ অবারিত হবে বলেই বিশ্বাস।
প্রতিটি চরিত্রের কথনে আমরা চকিতে দেখে আসি নাগরিক জীবনে পোড় খাওয়া মানুষের স্বপ্ন, সাধ, ক্ষমতা, অসহায়ত্ব, ভালোবাসা, বেদনার বিচ্ছিন্ন দিনপঞ্জি। এই বিচ্ছিন্ন গল্পগুলোর সাথে কখন যেন নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ তৈরি হয় দর্শকের। তবে এই নাগরিক শহরের বাস্তবতায় নাটকটির আয়তন কিছুটা সীমায়িত হওয়া উচিত বলেই মনে করি। আবহসংগীত খুব একটা মনোযোগ কাড়েনি, এ নিয়ে ভাবনার সুযোগ রয়েছে। উজবেক কবির ফেরি করা বেদনার আকাশ বুকে চেপে ফিরে যাই নিজস্ব ঠিকানায়।
‘ম্যাড থেটার’-এর ম্যাডনেস অব্যাহত থাকুক। নদ্দিউ নতিম এর সাথে দেখা হোক কোনো এক ছুটির দিনে। হুমায়ূন আহমেদ পাঠের দিগন্ত বিস্তৃত হোক, পাঠকেরা দখল করুক দর্শকের আসন। জয়তু থিয়েটার।
হুমায়ূন আজম রেওয়াজ: নাট্যকর্মী