Bookmaker Bet365.com Bonus The best odds.

Full premium theme for CMS

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর : নির্বাচিত ৫০ প্রযোজনা।। প্রসঙ্গ: দর্পণে শরৎশশী

Written by আতাউর রহমান.

Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..

নাটক: দর্পণে শরৎশশী। রচনা: মনোজ মিত্র। পোশাকপরিকল্পনা ও নির্দেশনা: আলী যাকের। মঞ্চপরিকল্পনা: শেখ মনসুরউদ্দিন আহমেদ। আলোকপরিকল্পনা: নাসিরুল হক খোকন। আবহসংগীতপরিকল্পনা: কে বি আল আজাদ। পোস্টার ডিজাইন: মাজহারুল হক ডালিম। প্রথম মঞ্চায়ন-বর্ষ: ১৯৯২। একটি ‘দেশ নাটক’ প্রযোজনা

[দর্পণে শরৎশশী : মনোরম প্রযোজনা- শিরোনামে নাট্যসমালোচনা লিখেছিলেন আতাউর রহমান। তাঁর নাট্যসমালোচনা-গ্রন্থ ‘পাদপ্রদীপের আলোয়’ থেকে সংগ্রহ করে নাট্যসমালোচনাটি ‘থিয়েটারওয়ালা’র এবারের বিশেষ-সংখ্যায় পুনঃপ্রকাশ করা হলো]

‘দেশ নাটক’ মুক্ত ও পথনাটকের ক্ষেত্রে দেশে সুনাম অর্জন করেছে। মঞ্চনাটকের প্রতি যাঁদের ভালোবাসা আছে তাঁরা অনেকেই ভাবছিলেন যে এমন একটি ভালো, সক্ষম ও কমিটেড নাটকের দল মঞ্চে অর্থাৎ মিলনায়তনে নাটক করবে না কেন? এরা কি শুধু পথেই থাকবে? এ ভাবনা দীর্ঘস্থায়ী হলো না। সবার প্রত্যাশা পূরণ করতে ‘দেশ নাটক’ মঞ্চে আত্মপ্রকাশ করল বিরসা কাব্য প্রযোজনা নিয়ে। শক্তিশালী ঔপন্যাসিক মহেশে^তা দেবীর অরণ্যের অধিকার উপন্যাসের নাট্যরূপ দিয়েছেন মাসুম রেজা। প্রথম মঞ্চ-প্রযোজনাতেই সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়ে গেল ‘দেশ নাটক’। বিরসা কাব্য সুধীজন ও দর্শকের প্রশংসা অর্জন করল।

‘দেশ নাটকে’র দ্বিতীয় মঞ্চ-প্রযোজনা দর্পণে শরৎশশী। অতি-সম্প্রতি মহিলা সমিতি মঞ্চে নাটকটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়ে গেল। বেশ কিছুকাল আগে কলকাতার সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকায় মনোজ মিত্রের এ নাটকটি প্রচ্ছদ-কাহিনি (নাটক) হিসেবে ছাপা হয়েছিল। পড়ে ভালো লেগেছিল। নাটকটির উপজীব্য, রঙ্গালয়ে নারী ও নাট্যাঘাতে কুপকাত কিছু পাগলাটে মানুষের নাট্যপ্রীতি। ‘দেশ নাটক’ বিরসা কাব্যকে অতিক্রম করে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে গেল, নাটকের দল হিসেবে অনন্ত সম্ভাবনাময় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল।

দর্পণে শরৎশশী প্রযোজনায় আমাদের নাট্যাঙ্গনে কিছু অভাবিত-সুন্দর ঘটনা ঘটে গেল। আমাদের মঞ্চের স্বনামধন্য নট ও নির্দেশক আলী যাকের এ নাটকের নির্দেশনার দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। তিনি ‘নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে’র সভাপতি। শুধু তাই নয় আকণ্ঠ ‘নাগরিক’-এ নিমজ্জিত। তবুও তিনি নিজের দলের বাইরে কাজ করতে রাজি হলেন এবং এ কাজে তাঁর দলও সানন্দে সম্মতি দিয়েছে। শুধু তাই নয়, ‘নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে’র মনসুর আহমেদ এ প্রযোজনার মঞ্চপরিকল্পনা করে দিলেন, নাসিরুল হক খোকন আলোকপরিকল্পনা করলেন এবং কে বি আল আজাদ সংগীত ও শব্দপরিকল্পনা করতে এগিয়ে এলেন। আলী যাকের নির্দেশনার পাশাপাশি এ নাট্যপ্রযোজনার পোশাকপরিকল্পনাও করলেন। অভিনয়ে ‘নাগরিকে’র তরুণ অভিনেত্রী আফসানা মিমি নাম-ভূমিকায় অভিনয় করলেন। এক অর্থে দর্পণে শরৎশশী, ‘দেশ নাটক’ ও ‘নাগরিক’-এর যৌথ-প্রযোজনা। আসল কথা হলো, ‘দেশ নাটক’ ও ‘নাগরিক’ যৌথভাবে কাজ করে সহমর্মিতার এক বিরল-দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। দেবার আর নেবার পথ অবারিত করল, নতুন আর পুরাতনের মিলন ঘটাল, অভিজ্ঞতার আর তারুণ্যের মেলবন্ধন রচনা করল। আমাদের দেশের নাট্যচর্চার ক্ষেত্রে এ এক বিরাট-প্রাপ্তি।

এবারে নাট্যপ্রযোজনার কথায় আসা যাক। ‘দেশ নাটক’কে নিয়ে আলী যাকের সুন্দর কাজ করেছেন। সুন্দর এই অর্থে যে, তিনি নাট্যপ্রযোজনাটির রন্ধ্রে রন্ধ্রে উপস্থিত ছিলেন কিন্তু কোথাও তাঁর ফৌজি-উপস্থিতি টের পাওয়া যায় নি। নির্দেশকের এই নির্মোহ ও স্থিত ভূমিকা প্রশংসার যোগ্য। আলী যাকের নির্দেশক হিসেবে আর একটি বড় কাজ করেছেনÑদলের কুশীলবদের কাছ থেকে যৌক্তিক, অর্থবহ এবং সত্যানুসন্ধানী অভিনয় আদায় করে নিয়েছেন। মনসুর আহমেদের মঞ্চপরিকল্পনা সহজ-সুন্দর। ইতোমধ্যে মঞ্চপরিকল্পনায় তিনি যথেষ্ট সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। গ্যালিলিও, দর্পণ, ঈর্ষার মঞ্চপরিকল্পনা এর প্রমাণবহ। তবে সেটের পেছনের দিক, অর্থাৎ রেলিং-সিঁড়িসহ উত্থিত অংশটি কুশীলবেরা কেন কম ব্যবহার করলেন তা বোঝা যায় নি। দর্পণে শরৎশশী প্রযোজনায় স্টেজ-ব্লকিং অর্থাৎ কুশীলবদের মঞ্চের উপরে চলাফেরা কখনো কখনো পৌনঃপুনিক ও ক্লান্তিকর মনে হয়েছে। মঞ্চের পেছনের দিকটা আরও বেশি ব্যবহার করলে স্টেজ-ব্লকিং-এ বৈচিত্র্য আসত বলে মনে হয়। নির্দেশক আলী যাকের সচেতনভাবে কুশীলবদের স্টেজ-ব্লকিংকে কিছুটা সীমিত করেছেন বলে মনে করি। কারণ, তিনি ব্যাপারটা জানেন না তাতো নয়। আলোকপরিকল্পনায় নাসিরুল হক খোকন অত্যন্ত সক্ষম কাজ করেছেন। তাঁর পরিকল্পনা যথাযথ ও সুনির্দিষ্ট। কে বি আল আজাদ ইতোমধ্যে ‘নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে’র একাধিক প্রযোজনায় তাঁর গভীর সংগীত-ভাবনার ছাপ রেখেছেন। সাধারণভাবে সংগীত বিষয়ে তিনি নিবেদিত প্রাণ। অসাধারণ যোগ্যতায় তিনি দর্পণে শরৎশশী প্রযোজনায় যাত্রার-সংগীত ও নন্দিত গায়িকা মিতা হকের কণ্ঠের ব্যবহার করেছেন। শব্দ ও সংগীত খুব সহজে শরৎশশী নাটকের আবহ তৈরি করতে সাহায্য করে। আলী যাকেরের পোশাকপরিকল্পনায় কোনো খুঁত চোখে পড়ে না, এ পরিকল্পনায় তিনি সময়কে সঠিকভাবে ধরেছেন। এ প্রযোজনার সবচেয়ে বড় ত্রুটি রূপসজ্জা। প্রায় প্রতিটি চরিত্রের রূপসজ্জা মেকি ও উচ্চকিত মনে হয়েছে। চুল-পাকানো, মুখে ভাঁজ ফেলা, এ বিষয়গুলো রূপসজ্জাকরের আরও মনোযোগ দাবি করে। মনোরমার’র ভূমিকায় ইশরাত নিশাতের রূপসজ্জা অপরিচ্ছন্ন হয়েছে, যে কারণে, মঞ্চের উপর তাঁকে কিছুটা যবুথবু মনে হয়েছে। তবে ইশরাত নিশাত মনোরমার ভূমিকায় এক কথায় অনবদ্য অভিনয় করেছেন। তবে কখনো কখনো তাঁর কণ্ঠস্বরের ওঠানামাকে আরোপিত মনে হয়েছে এবং কথার ঢঙ সচেতনভাবে কলকাতামুখী ছিল। সিতিকণ্ঠের ভূমিকায় আউয়াল রেজাকে খুব মানানসই মনে হয়েছে, তবে মাঝে মাঝে তাঁর দৃষ্টি সমান্তরাল হওয়ার পরিবর্তে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে, যা দেখতে ভালো লাগে নি। অসম্ভব মনোগ্রাহী অভিনয় করেছেন তর্করত্নের ভূমিকায় শামসুল আলম বকুল। সবারই নাম ধরে ধরে না বললেও একবাক্যে বলা যায় যে, দর্পণে শরৎশশীর সবচেয়ে বড় সম্পদ এর সুষম-সুন্দর দলগত অভিনয়। বলা বাহুল্য, নাম ভূমিকায় আফসানা মিমি সক্ষম অভিনয় করেছেন।

‘দেশ নাটক’ তাঁদের অনুষ্ঠানপত্রে যথার্থই জানিয়েছেন যে, দর্পণে শরৎশশী সহজ-সরল একটি নাটক। প্রযোজনায়ও এর ব্যত্যয় ঘটে নি। দর্পণে শরৎশশী দর্শনে আমাদের নাট্যপ্রেম বেড়ে যাবে এই আশা দুরাশা হবে না। কারণ, এই নাটকের মূল-বক্তব্য থিয়েটারের প্রতি ভালোবাসা নিয়েই আবর্তিত। ‘দেশ নাটক’ ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে যাবে, পেছন ফিরে হয়ত তাকাবে কিন্তু পিছু হটবে না- এ আমাদের প্রত্যাশা।

জয়তু ‘দেশ নাটকে’র কুশীলববৃন্দ, এ প্রযোজনার নেপথ্যকর্মীবৃন্দ এবং সবশেষে নির্দেশক আলী যাকের।

আতাউর রহমান ( This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it. ): নাট্যব্যক্তিত্ব