Full premium theme for CMS
চিত্তরঞ্জন সাহা : শ্রদ্ধার্ঘ
Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..
চিত্তবাবু আমাদের লক্ষ্মীপুরের বাড়ির সামনের বাড়ির বিজলীদিকে যখন বিয়ে করেন, সেই সময় থেকে তাঁকে চিনি। আমি তখন স্কুলের ছাত্র। তাই তাঁর সাথে ঘনিষ্টতা হবার সুযোগ ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকে চৌমুহানীতে তাঁর পুঁথিঘরে আমার যাওয়া আসা ঘটে। কিন্তু সম্পর্ক ঘনিষ্ট হয় যখন আমি চৌমুহানী কলেজে অধ্যাপনা করি। ষাটের দশকেই চিত্তবাবু চৌমুহানীর পাশাপাশি ঢাকাতে অফিস স্থাপন করেন। পরে ফরাশগঞ্জে বিরাট এক পুরনো বাড়ি কিনে অফিস, প্রেস, গুদামের ব্যবস্থা করেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলার সময় আবার তাঁর সাথে দেখা কোলকাতায়। যেদিন তিনি বাংলাদেশের শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীদের আহ্বান করে স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ ‘মুক্তধারা’ গঠনের ঘোষণা দেন, সেদিন আমিও উপস্থিত ছিলাম। মুক্তিসংগ্রামের হাতিয়ার হিসেবে তিনি বাংলাদেশের লেখকদের বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ করেছিলেন মুক্তধারা থেকে কোলকাতায়। ‘রক্তাক্ত বাংলা’ প্রবন্ধ সংকলনে আমার লেখাও ছিল।
বাংলা একাডেমীর যে একুশে গ্রন্থমেলা আজ আমাদের সাংস্কৃতিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেই মেলার প্রবর্তক কিন্তু চিত্তবাবু। একা তাঁর প্রকাশনীর বই নিয়ে যে মেলার সূচনা করেছিলেন আজ তাকে কেন্দ্র করে আমাদের প্রকাশনা শিল্প আবর্তিত হচ্ছে। জেলায় জেলায় বইমেলার আয়োজন করেছেন একক প্রচেষ্টায়। তিনি ছিলেন স্বপ্নদ্রষ্টা।
বাংলাদেশে নাটকের বই প্রকাশেও তিনি পথিকৃত। আমি যখন থিয়েটার পত্রিকা থেকে অফ প্রিন্ট নিয়ে নাটকের বই বের করার প্রস্তাব দিলাম, তিনি সম্মত হলেন। প্রথম দিকে বেশ কিছু নাটক সেভাবে প্রকাশ করে পরে নিজেরাই কম্পোজ করিয়ে বই বের করতেন। যে সময়ে প্রকাশকরা নাটকের বই বের করার বিন্দুমাত্র উৎসাহী হতেন না, সে-সময়ে চিত্তবাবু প্রমাণ করেছেন নাটকের বই যথাযথভাবে বাজারজাত করলে সপ্তম সংস্করণও হওয়া সম্ভব। সর্বাধিক নাটকের বই প্রকাশের জন্যে থিয়েটার ‘মুক্তধারা’কে মুনীর চৌধুরী সম্মানে ভূষিত করেছি। দেশপ্রেম, কর্মদ্যোগ আর শিক্ষার প্রসারে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্র দিয়েছে তাঁকে একুশে পদক।
পরলোকে তিনি নিশ্চয়ই শান্তিতে আছেন তাঁর কর্মফলের সুবাদে।
রামেন্দু মজুমদার
নাট্যব্যক্তিত্ব