Bookmaker Bet365.com Bonus The best odds.

Full premium theme for CMS

সেলিম আল দীনের সৃষ্টিকথা

Written by আনু মুহাম্মদ.

Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..

সেলিম আল দীনের সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৭৬ সালে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি তখন নতুন ছাত্র আর উনি তরুণ শিক্ষক। কিন্তু তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক দাঁড়াতে সময় লাগে নি। আমি তখন ফজল, ফরীদি, মঞ্জুসহ ‘শিরোনাম’ ‘লেখক শিবির’ ‘প্রগতিশীল পাঠচক্র’ ‘কলিমুল্লা গ্রন্থাগার’ ইত্যাদি বিভিন্ন সংগঠন গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। লিটল ম্যাগাজিন বের করছি। আর তখন বিচিত্রার নিয়মিত লেখক হিসেবে নানা বিষয় নিয়ে পড়ি, লিখি, কথা বলি। সেলিম আল দীন, মোহাম্মদ রফিক ইতোমধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছেন। ক্যাম্পাসে তাঁদের সঙ্গে আমাদের কথা, আড্ডা এমনকি বিতর্ক প্রায় নিয়মিত।
 
১৯৭৭ সালে প্রধানত সেলিম ভাই এর উদ্যোগেই জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসে একটি নাট্য সপ্তাহ হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এ ধরনের উদ্যোগ ছিল প্রথম। এই নাট্য সপ্তাহ কেন্দ্র করে প্রায় দেড় মাস ধরে যে কি প্রাণোচ্ছল তৎপরতা হল তা এখনও অনুভব করতে পারি। নাট্য সপ্তাহ ঘিরেই তৈরি হল অনেকগুলো নতুন নাটক। নতুন নাটক শুধু নয়, নতুন নাট্যকার, নতুন অভিনয় শিল্পী, নতুন পরিচালক, নতুন মঞ্চ পরিকল্পনাকারী, নতুন অনেক শিল্পী, সব নতুন! কী যে উৎসাহ উদ্দীপনা। সবজায়গায় নাটক নিয়ে উদ্দীপ্ত আলোচনা। নাটক লেখা হচ্ছে, রিহার্সেল হচ্ছে, পরিকল্পনার শেষ নাই। দিস্তা দিস্তা কাগজ খরচ হল নাটক লেখায়। সেই নাটক কতবার ঠিকঠাক হল তার সংখ্যা কেউ বলতে পারে না। মেহেদী, বাচ্চুু, রঞ্জু, হাসিসহ উৎসাহী কিন্তু নতুন ছেলেমেয়েদের নিয়ে এইসব কিছু করিয়ে নেয়ায় সেলিম আল দীনের ক্লান্তি নেই। হোল ঠিকই সবগুলো নাটক। 

প্রত্যক্ষ করলাম, আমাদের চারপাশের মানুষেরা মাসেরও বেশি সময় ধরে সৃজনশীলতার এক অদ্ভুত নেশা আর আনন্দে ফুলে ফেঁপে উঠলো, নতুন পরিচয়ে শক্ত পায়ে দাঁড়ালো। এদের মধ্যে ফরীদিও ছিল। অভিনয়ে প্রবল নেশা ওর অনেক আগে থেকেই। কিন্তু এই নাট্য সপ্তাহের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের নতুন পর্বের মঞ্চ নাটকের সঙ্গে ওর যোগ তৈরি হল, বাড়তি হল নাট্য নির্দেশক পরিচয়। বাচ্চুর লেখা আর ফরীদির নির্দেশিত নাটকটিই সেসময় শ্রেষ্ঠ নাটক হিসেবে স্বীকৃত হয়েছিল। যতদুর মনে পড়ে, নাটকটির নাম ছিল আত্মস্থ আগুন ও হিরন্ময়ীদের বৃত্তান্ত। এই নাট্য উৎসবে সেলিম আল দীনের সূত্রে ঢাকা থিয়েটারের অনেকেই আসা যাওয়া করতেন। নাসির উদ্দীন ইউসুফও। এখান থেকেই ঢাকা থিয়েটারের মাধ্যমে হুমায়ূন ফরীদির নতুন যাত্রা শুরু, মঞ্চ-টিভি। আর ক্যাম্পাস ঘিরে সেলিম আল দীনের নাট্যচিন্তার ভিতও এখানেই তৈরি হয়। তখন থেকেই তাঁর এ বিষয়ে পূর্ণ বিভাগ খোলার চিন্তা, যা পরে ‘নাটক ও নাট্যতত্ত্ব’ বিভাগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়েছিল।
 
ততদিনে আমি সেলিম আল দীনের লেখা মুনতাসীর ফ্যান্টাসী দেখেছি (পরে যার নাম হয়েছে মুনতাসীর)। এটি রচিত হয়েছিল ১৯৭৪/৭৫ সালে। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এই জনপদের মানুষকে যা দেবার কথা ছিল তা দিতে পারে নি। কিন্তু যা দিয়েছে তার মধ্যে আছে সাহস, স্বপ্ন আর প্রত্যাশার শক্তি। এই সাহস সৃজনশীলতার জগতকেও প্রবল ঝাঁকি দিয়েছিল। এতদিনের প্রথাগত অনেক কিছুই তখনকার তরুণ প্রজন্মের কাছে পানসে। তাদের মধ্যে নতুন সৃষ্টির অদম্য শক্তি।
 
সেলিম আল দীনের বেড়ে উঠা তো বটেই শুরুটাও এই পাটাতনের উপরেই। ঢাকা থিয়েটার সহ  নাটকের জগতে যে হুলস্থূল শুরু হল সেটা সেই পরিবেশেরই ফসল। অন্য অনেক স্বপ্নুই ভেঙে পড়লো। নাটক সেই ভেঙে পড়ার প্রতিবাদের সৃজনশীলতার মধ্যেই প্রবলভাবে দাঁড়ালো। ১৯৭৪-৭৫ এ লেখা এই নাটকে তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গ তাই বাংলাদেশের সেই শ্রেণীর উদেশ্যে যারা সব কিছু খেয়ে অসম্ভব-রকম ফুলে ফেঁপে উঠেছে। এই নাটক সম্ভবত তখনকার সময়ের সবচাইতে বেশি মঞ্চস্থ নাটক। যতদিন গেছে ততই এই নাটকটি আরও বেশি বেশি প্রাসঙ্গিক হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ভেঙে চুরে বহু হাজার কোটিপতি তৈরি হয়েছে যে প্রক্রিয়ায় সেই প্রক্রিয়াতেই আন্তর্জাতিক পুঁজির দখল আধিপত্য আর হজমের শিকার হয়েছে বাংলাদেশ। এই অভিজ্ঞতা কেবল বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বের। মুনতাসীর ফ্যান্টাসী দিয়ে যে সেলিম আল দীনের শুরু তাঁর শেষ হল নিমজ্জন দিয়ে, যা বিশ্বকে হাজির করেছে এক সূত্রে গেঁথে। এক বিশাল ক্যানভাসে।
 
এর পর যে নাটক মুগ্ধ হয়ে দেখেছিলাম সেটি শকুন্তলা। এখানেই সেলিম আল দীনের আরেক অধ্যায় শুরু বলে আমার ধারণা। এই জনপদের মিথগুলোকে ভেঙে তার মধ্যে মানুষের জয় পরাজয় আর অবিরাম লড়াইয়ের ভাষা আবিষ্কার করা। মানুষ ও প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য রূপের মধ্যে টানাপোড়েন, মানুষের অসীম আকাক্সক্ষা আর তার শরীরী সীমার সংঘাত। নাটকের বিষয়বস্তুই দাবি করে নাটক উপস্থাপনের পুরনো সব রীতি ভেঙে ফেলার। সেটা সম্ভব হল নাসির উদ্দীন ইউসুফের নেতৃত্বে এক দল কর্মীর নিষ্ঠা মেধা আর সর্বোপরি আত্মœ-উপলব্ধির শক্তির কারণে।
 
সেদিক থেকে কিত্তনখোলা আরেক অধ্যায়ের সুচনা করে। সেলিম আল দীন ঠিকই অনুভব করেছিলেন যে এটা এক মহাকাব্যের কাঠামোতে দাঁড়িয়ে গেছে। মহাকাব্যকে মঞ্চে আনা যাবে কী করে? এই মহাকাব্যে দেবদেবী নয়, চরিত্র সব মানুষ, গ্রামগঞ্জের মাটি ও নদীর খুব চেনা মানুষ। কিন্তু সেই চেনা মানুষদের ভেতর একদিকে অচেনা বিশ্বাস, রীতি, প্রথা, ভালোবাসা, শিল্প সৃষ্টির অব্যাহত তাড়না আবার অন্যদিকে সমাজের নির্মম ক্ষমতার সম্পর্ক- বঞ্চনা, প্রতারণার উপর টিকে থাকা ক্ষমতার সৌধ। প্রচলিত গতানুগতিক আমদানি করা পোষাকী নাটকের রীতি থেকে বহুদূর চলে গেলো কিত্তনখোলা।
 
শুধু মানুষই এখানে নতুনভাবে হাজির হল তাই নয়, তার সঙ্গে সঙ্গে তার প্রকাশের এদেশীয় ভঙ্গী ... গল্প বলা, কবি গান, মিথকেন্দ্রিকতা, ভাষা। মেলাকে কেন্দ্র করে পুরো নাটকটি সাজানো। আসলে নাটক বলা ঠিক নয়, এই অঞ্চলের মানুষকে হাজার বছরের শিল্পমাধ্যমগুলোর নবায়নের মধ্য দিয়ে এক অখণ্ড প্রকাশভঙ্গী তৈরি করার দুঃসাহস।
 
আমরা প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস, কবিতা, নাটক, গান, নাচ এগুলোকে আলাদা আলাদা প্রকাশ মাধ্যম হিসেবে জানি। মানুষ এসব ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে তার নিজ নিজ প্রকাশভঙ্গী, ক্ষমতা কিংবা বিষয়বস্তুর সূত্র ধরে। এই বিভাজন খুব বেশি দিনের নয়। অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রের মতো এখানেও জ্ঞানের বিশেষীকরণ ঘটাতে গিয়ে খণ্ড খণ্ড হয়ে পড়ে মানুষের ভাব কিংবা সৃজন। আমি নিজেও নিজের অনুভূতি বা বিশ্লেষণ বা প্রতিবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে মাধ্যমের সীমাবদ্ধতায় বারবার আক্রান্ত হই। সেলিম আল দীনের সবচেয়ে বড় অর্জন একটি অখণ্ড প্রকাশ মাধ্যম উপস্থাপন।
 
সেলিম আল দীন নিজেই বলেছেন,- ‘কিত্তনখোলা ও কেরামতমঙ্গল লেখার সময় নাটককে আমার কাছে নাটকের চেয়ে বেশি কিছু বলে মনে হয়েছে। আমাদের নাটক লিখিয়েদের উচিত নাটকের সঙ্গে অন্যান্য শিল্প মাধ্যমের দ্বৈতাদ্বৈত সম্পর্কটি বুঝে নেয়া। রবীন্দ্রনাথের পর্বত তো বৈশাখের নিরুদ্দেশ মেঘ হতে চায়। নাটকের আঙ্গিক-চেতনা সংকীর্ণ হলে এ মাধ্যমে মানুষ ভাস্কর্যের আনন্দ তার সঙ্গীতের দ্যোতনা পাবে না। রঁদার ভাস্কর্য নির্মাণ পদ্ধতির পরোক্ষ উপস্থিতি কি রিলকের কবিতায় নেই....?’ আরেক জায়গায় বলছেন,- ‘ইউরোপীয় মানদণ্ডে আমাদের লোকজ আঙ্গিকে উপস্থাপিত শিল্প মাধ্যম উত্তীর্ণ হবে না। কারণ এখানে ‘বর্ণনাধর্মিতা ও সংলাপমুখীনতা পরস্পরের পরিপূরক। এখানে ঘটনার তাড়া থাকে না, নৃত্য ও সঙ্গীতের ব্যাপক প্রয়োগে তা হয়ে ওঠে মঞ্চ অলঙ্কার।’ রবীন্দ্রনাথে এর  ধারাবাহিকতা দেখেন সেলিম, ‘গান দর্শককে চিত্র ও ভাবের দিকে, পরিবেশ ও অনুভূতির দিকে টেনে নিয়ে যায়। রবীন্দ্রনাথের নাটকেও তাই দেখি গানের উজ্জ্বল ব্যবহার। সে গানে শুধু সঙ্গীত স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথকে পাই না- সেখানে দেখতে পাই জাতীয় নাট্য আঙ্গিকের স্রষ্টার এক পিতৃপ্রতীপ দার্শনিককে।’
 
সেলিম আল দীন তার পূর্বসূরীদের ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণ করে দুইহাতে নিয়েছেন, যেমন বলা যায়, মঙ্গলকাব্য তার অন্যতম মনোযোগের জায়গা। ঋণস্বীকারেও তাঁর কুন্ঠা নেই। তাঁর যে কৃতিত্ব তা এই ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে বিশ্বের সামনে বাংলাদেশের মঞ্চকে শক্ত শেকড় নিয়ে দাঁড় করানো, মানুষকে, সুলতানের ছবির মতো, কিন্তু অন্যভাবে সাংস্কৃতিকভাবে শক্ত সমর্থ উজ্জ্বল সৃষ্টিশীল হিসেবে উপস্থিত করা। সেলিমের এসব সৃষ্টিকর্মে তাই মানুষই উঠে এসেছে চেনা অচেনা মিশেল আর কখনো রহস্যময়তা নিয়ে। শক্তি, দুর্বলতা, লোভ, ভালোবাসা, যৌনতা, স্বপ্ন, বিশ্বাস, অন্ধবিশ্বাস সব নিয়ে এই মানুষ, সেখানে তার আড়াল কম। দু’এক জায়গায় কিছু সংলাপ এমন হয়েছে যেগুলো দর্শককে মজা দিয়েছে, ভাবনা অনুযায়ী তাকে মনোযোগী করে নি। সেগুলো নিয়ে সেলিম আল দীন আক্ষেপও করেছেন।

পরপর কেরামতমঙ্গল, হাত হদাই, যৈবতী কন্যার মন, বনপাংশুল, চাকা ইত্যাদিতে এই ধারাতেই সেলিম নিজেকেই বারবার অতিক্রম করেছেন। প্রতিটি সৃষ্টি তাঁর অসম্ভব পরিশ্রম আর নিষ্ঠার ফসল। প্রতিটি চরিত্র, তার ভাষা রূপ গন্ধ তাকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে গেছে- পূর্বসূরীদের সৃষ্টি অনুসন্ধানে তাঁকে বাধ্য করেছে, ভাষা শিখতে প্ররোচিত করেছে, নতুনভাবে নির্মাণ করেছে সেলিম আল দীনকেও।
 
গ্রাম থিয়েটার এই তাগিদেরই ফসল। আমি নিজেও সেলিম ভাই, বাচ্চু ভাইয়ের সঙ্গে গ্রাম থিয়েটার এর কার্যক্রম দেখতে গেছি। গ্রাম থিয়েটার সেলিম আল দীনের কাজ থেকে দিক নির্দেশনা পেয়েছে, আবার এই বি¯তৃত কার্যক্রম সেলিম আল দীনকে পুষ্টি দিয়েছে, মাটি পানি প্রকৃতির বৈচিত্র্যময় মানুষদের সাথে তাকে যুক্ত করেছে, সমৃদ্ধ করেছে, যন্ত্রণার্ত করেছে।
 
তারপরও বলতে হয়, সেলিম আল দীন, ব্যক্তি ও স্রষ্টা, এই দুই রূপে তাঁকে মেলানো অনেকের জন্যই কঠিন হতো। আমার কাছেও এ এক রহস্য। একটা কথা তাই আমার প্রায়ই মনে হত, ‘ব্যক্তি থেকে তাঁর কাজ অনেক বড়’। সেলিম ভাইএর সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদের পক্ষে বড় ধরনের বিভ্রান্তির মধ্যে পড়া খুবই সম্ভব ছিল। ব্যক্তি হিসেবে তাঁর কথা, আচরণ মাঝে মধ্যে তাঁকে এমনভাবে উপস্থিত করতো যার সঙ্গে মেলানো যেত না তাঁর কাজের অন্তর্গত শক্তিকে।
 
তাঁর কাজের অন্তর্গত শক্তি তৈরি হয়েছিল মানুষের ভেতরকার ক্ষরণ আর সেই সঙ্গে তার শক্তির অনুসন্ধানে তাঁর ক্লান্তিহীন যাত্রা থেকে। এক মানুষের মধ্যে কত মানুষ, কত জাতি, কত গোষ্ঠী, কত ভাষা, কত সুর; নারী পুরুষ আর শ্রেণী স্বার্থ এগুলো তো আছেই। সেই মানুষের বর্তমান কীভাবে পরম্পরা থেকে শক্তি নেয় কিংবা বোঝা বহন করে তার অনুধাবন ছাড়া খণ্ডিত বর্তমানকেই বা কীভাবে বোঝা যাবে? সংকুচিত হয়ে থাকে লাউয়ারা কারণ তাদের কোনোকালের পূর্ব প্রজন্ম নমরুদের সহযোগী ছিল। তারা অভিশপ্ত, অতএব এখনও সেই বিশ্বাস তারা টেনে চলে। ক্ষুদ্ধ হয়, কাঁদে কিন্তু এই বিশ্বাসের ভার থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারে না। কেউ কেউ বিদ্রোহী হয়ে বেরিয়ে যেতে চেষ্টা করে কিন্তু এর শেকড়ে হাত দিতে পারে না।
 
কিত্তনখোলা সৃষ্টিকর্মে সেলিম আল দীন বলেন,- ‘শবদাহের হরি-ধ্বনির সাথে আগুন দ্বিগুণ হয়। তারপর হুতাশে, গুঞ্জনে, শোকে স্তিমিত শ্মশানের আলো কাঁপে। দূরে পূর্ণিমার চাঁদ। নদীর ওপারেতে, তারও পেছনে মানুষের তৈরি ঘরবাড়ি। মাঘের রাত্রের অনড় বাতাসগুলি আগুনের ভাপে নড়েচড়ে উঠে। মানুষের এই বিশাল পরিবর্তনের ধারা সুগোল ... চাঁদ ও নদীর বুকে জমা হয় নাকি? চাঁদও রূপান্তরিত হয় কণায় কণায়, নদী নিরন্তর সঞ্চরণশীল। তারও আছে জোয়ার ভাটা, চর, ভাঙা কুল-প্লাবন ও শীর্ণতা। এই তেতো লবনাক্ত জীবনের বাঁকে বাঁকে মানুষের জন্য অপেক্ষা করে রূপান্তর। কিন্তু সে কি এতই সহজ! তার জন্য আছে অশ্র“ঘামরক্তমৃত্যু দুয়ার। আছে দীর্ঘ পথ পরিক্রমা।’
 
এই দীর্ঘ পথে যারা হাঁটে, হাঁটা শুধু নয়, পথ নির্মাণে প্রাণপণ লেগে থাকে, ভুল হয় ঠিক হয়, তাঁদেরই উজ্জ্বল একজন সেলিম আল দীন। এখন সেলিম শারীরিকভাবে অনুপস্থিত। আমাদের সামনে উপস্থিত তাঁর সৃষ্টিসম্ভার- যার প্রতি আমাদের সময় ও সমাজ এখনও প্রাপ্য মনোযোগ দেয় নি।

আনু মুহাম্মদ: লেখক, অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়