Full premium theme for CMS
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর : নির্বাচিত ৫০ প্রযোজনা।। প্রসঙ্গ: মানগুলা
Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..
নাটক: মানগুলা। রচনা: গোলাম শফিক। পোস্টার ডিজাইন ও নির্দেশনা: আমিনুর রহমান মুকুল। মঞ্চপরিকল্পনা: এস এম রিয়াদ তুষার। আলোকপরিকল্পনা: নাসিরুল হক খোকন। পোশাকপরিকল্পনা: লুসি তৃপ্তি গোমেজ। আবহসংগীতপরিকল্পনা: অজয় দাশ। প্রথম মঞ্চায়ন-বর্ষ: ২০০৫। একটি ‘পালাকার’ প্রযোজনা
[‘ঢাকার থিয়েটার, জানুয়ারি-জুন ২০০৫ : সরাসরি দর্শকের মুখোমুখি কলাকুশলীগণ’- এই শিরোনামে নাট্যালোচনার আয়োজন করে নাট্যপত্রিকা ‘থিয়েটারওয়ালা’। আলোচনায় সরাসরি দর্শকের মুখোমুখি হন ২০০৫-এ ঢাকার মঞ্চের নতুন নাটক মানগুলার নাট্যকার-নির্দেশক ও ডিজাইনারগণ। অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন ‘থিয়েটারওয়ালা’-সম্পাদক হাসান শাহরিয়ার। নাট্যসমালোচনাটি অনুলিখন করে ‘থিয়েটারওয়ালা’র ১৮তম সংখ্যায় (২০০৫ এ প্রকাশিত) ছাপা হয়। এবারের বিশেষ সংখ্যায় নাট্যসমালোচনাটি পুনঃপ্রকাশ করা হলো]
হাসান শাহরিয়ার
আমি মানগুলা নাটকের উপর প্রশ্ন চাচ্ছি।
জাহিদ রিপন (অভিনেতা-নির্দেশক)
মুকুল আমাদের জেনারেশনের উজ্জ্বলতম প্রতিনিধি এবং মানগুলায় সে তার সৃষ্টিশীলতা আমাদের সামনে প্রবলভাবইে তুলে ধরেছে। আমি তার বন্ধু হিসেবে একটা সমালোচনা আজকে বলবো, সেটা হলো মুকুল একটা চেষ্টা করেছিল যে দর্শককে সে স্টুডিওতে নিয়ে যাবে এবং প্রতি শুক্রবার তারা তাদের শো’গুলো করবে...এখন মুকুলের কাছে প্রশ্ন, আপনারা এখন শিল্পকলার এক্সপেরিমেন্টাল হলে ফিরে এলেন কেন? এটা কোনো বিচ্যুতি বা পরাজয় কিনা? আরেকটা প্রশ্ন হলো, আপনি যে প্রযোজনাটি করলেন এটা এক্সপেরিমেন্টাল হল ছাড়া কোথাও করা সম্ভব না বা করবেন না। তো এটা থিয়েটারকে একরকম বন্দি করেছেন কিনা? মানে প্রতি দুইমাস অন্তর হল পাবেন এবং দুইমাস অন্তর শো করবেন, এটা মাথায় রেখেই আপনি মানগুলা নিয়ে নামলেন কিনা? আর একটা প্রশ্ন করতে চাই নাট্যকারকে...সেটা হলো, আপনি যে টেনশনটা তৈরি করতে চেয়েছেন সেটা ক্ষুণ্ন হয় কিনা...মানে, আমার কাছে মনে হয়েছে অনেক আগেই নাটকটি শেষ হতে পারতো বা অনেক জায়গাই আছে যেখানে দর্শক মনে করে এখানেই নাটকটা শেষ হবে, কিন্তু দেখা যায় নাটকটা আবারও এগিয়ে যাচ্ছে...তো আপনার এমন মনে হয়েছে কিনা? যেমন, হাতির পায়ের নিচে একজনকে মারা হলো, সেখানেই নাটকটা শেষ হয়ে গেলে কোনো ক্ষতি ছিল কিনা?
আমিনুর রহমান মুকুল (নির্দেশক- মানগুলা)
প্রথম-প্রশ্নটার উত্তর আমি একজন সংগঠক হিসেবেই বলবো যে, স্টুডিও থেকে বের হয়ে এসে কেন এই প্রযোজনাটি করছি এবং সেখানে আমাদের পরাজয় বা বিচ্যুতি হচ্ছে কিনা। আমি মনে করি, পরাজয় বা বিচ্যুতি কোনোটাই ঘটে নি। আমরা এমন একটা জায়গায় স্টুডিওটি করেছি. যেটি একটা আবাসিক এলাকার ভেতরে...দিলু রোডে। এই ব্যাপারটা আমরা সাধারণ-দর্শকের কাছে যতটুকু প্রচারণার মাধ্যমে পৌঁছানো দরকার, সেটা আমরা করতে পারি নি। আর স্টুডিওটা আমরা করেছি দলীয় সদস্যদের নিয়মিত চর্চা করে নিজেদেরকে তৈরি করার জন্য। তো সব দর্শককে আমরা জানাতে চাই যে, আমরা এরকম একটা কাজ করি স্টুডিওতে। সে কারণে আমরা একটা বড় প্রযোজনায় গিয়েছি। আমাদের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের স্কিল কতটুকু উন্নত হলো সেটিকে যেমন যাচাই করা, পাশাপাশি দর্শককে জানানো যে, আমরা এই থিয়েটারের বাইরেও ওখানে (দিলু রোডে) ছোট ঘরে, ঐ থিয়েটারটাও করি...এবং আপনারা সেখানে আসেন। এটা বলার যেন সুযোগটা হয়, সেজন্যই আমরা এখানে এসেছি। এটা অনেক দর্শকের কাছাকাছি আসার একটা পদক্ষেপ। দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বলবো যে, না বন্দি করছি না। কারণ আমরা নিয়মিত করি স্টুডিও থিয়েটার, তার বাইরে যদি দুমাসে একটাও শো পাই তাহলেও আমরা এখানে করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েই কাজটা করেছি। আর নাটকের এমন ডিজাইন থাকতেই পারে যে, সেটি সব মঞ্চে হবে না, কোনো না কোনো নির্দিষ্ট মঞ্চেই হবে।
হাসান শাহরিয়ার
নাট্যকারের কাছেও রিপনের একটা প্রশ্ন ছিল।
গোলাম শফিক (নাট্যকার- মানগুলা)
আমি উত্তর দিচ্ছি। অনেকেই আমাকে এই নাটকের রচনা নিয়ে বলেছেন যে, সাধারণত একটি নাটকে একটি চরিত্র যেভাবে ডেভালপ করে, বেড়ে ওঠে বা গড়ে ওঠে এবং পরিণতিতে যায়, সেভাবে আমি করি নি। আমি তখন বলি যে, হ্যাঁ, আমি সেই নিয়মটি ফলো করি নি, কারণ, হাজংদের যে জাতিসত্তা...এই হাজং জাতিকেই আমি একটি চরিত্র হিসেবে দেখেছি। এই জন্যই একেকবার একেকটি চরিত্র এসেছে স্রোতের মতো এবং জাতিসত্তাও একটি চরিত্র। আপনি বললেন যে, মনা সর্দারকে যেখানে হাতির পায়ে পিষ্ট করে হত্যা করা হলো সেখানেই নাটকটি শেষ হতে পারতো। হ্যাঁ, শেষ করা যেত যদি আমি ঐতিহাসিকভাবে ঘটনাগুলো ক্রমলজিক্যালি না আনতাম। এখন মনা সর্দার হত্যার পরও অনেক ঘটনা থেকে গিয়েছিল, সে জন্যই শেষ করা যায় নি। এখন এমনও হতে পারে, মনা সর্দারের মৃত্যুটা এমন ভয়ানকভাবে দেখানো হয়েছে যে, দর্শক হিসেবে ভাবছেন এখানেই নাটক শেষ হবে...সেক্ষেত্রে এটা নির্দেশকের দায়। কারণ, আমি লেখার সময় এমনভাবে লিখি নি যে মনা সর্দারের মৃত্যুটা এমন উচ্চগ্রামে চলে যাবে।
এবার আমি মুকুলের কথার সাথে একটু যোগ করতে চাই...আপনার (জাহিদ রিপন) প্রথম-প্রশ্নটির উত্তরে...আমরা কিন্তু কখনোই বলি নি যে, আমরা কেবল স্টুডিও থিয়েটারে কাজ করবো, এখানে কাজ করবো না। এই নাটক এক্সপেরিমেন্টাল হলে করতে গিয়ে কিন্তু আমরা বলেছি, দিস ইজ আওয়ার ফার্স্ট মেইন স্ট্রিম প্লে।
অনন্ত হিরা (অভিনেতা-নাট্যকার-নির্দেশক)
আমি একটা প্রশ্ন করতে চাই। প্রথমেই বলে নিই, মুকুলভাইদের কাজ বা ওনাদের প্রক্রিয়াটা আমি অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখি। মুকুলভাইকে বলছি যে, আমরা যারা ঢাকায় গত ১০/১২বছর ধরে মঞ্চনাটক দেখছি, তারা এই ধরনের বা এই রীতির অনেক ফিনিসড ওয়ার্ক দেখেছি। বাচ্চুভাইয়ের হাতে বা জামিলভাইয়ের হাতে। তো ঐ একই প্রযোজনারীতির উপর কাজ করার পেছনে আপনার ভাবনা কী ছিল?
আমিনুর রহমান মুকুল
আমি বাচ্চুভাইয়ের কাজের একজন ভক্ত, ওনার অনেক কাজ আমি মুগ্ধ হয়ে দেখেছি...বনপাংশুল আমি মুগ্ধ হয়ে দেখেছি। সৈয়দ জামিল আহমেদের বিষাদসিন্ধুও দেখেছি, আমার প্রযোজনা এসবের ধারেকাছেও যেতে পারে নি এবং সেটা আমি নিজেও বুঝতে পারি। আমি কোনো রীতি তৈরিরও চেষ্টা করি নি। আমি শুধু দলের ম্যাক্সিমাম এফোর্টটা দেয়ার চেষ্টা করেছি। হাজং সম্প্রদায়ের এই টেক্সটটা কত সহজে দর্শকের কাছে নিয়ে যাওয়া যায়, সেটার চেষ্টা করেছি।
নাসির উদ্দিন ইউসুফ (নির্দেশক-সংগঠক)
এখানে আমি একটু বলতে চাই। সেটা হলো আমি মানগুলা দেখেছি...অনেক কাজ এবং অসম্ভব এফোর্টফুল প্রডাকশন এটা। হিরাসহ আর যারা অনুজপ্রতিম বন্ধুরা আছেন তাদের বলি, প্রতিদিন থিয়েটারটা হয় না। শচীন তেন্ডুলকর প্রতিদিন শত রান করেন না, শূন্য রানেও আউট হন। তবুও তার উপস্থিতি, তার শারীরিক ভঙ্গি থেকে শুরু করে তার বুদ্ধির প্রয়োগ...এটা কিন্তু দেখার বিষয়। তেমনি করে থিয়েটারে যে অভিনেতারা অভিনয় করেন তাদের উপস্থিতি, বুদ্ধি প্রয়োগ, শিল্পবোধের প্রয়োগগুলো একসাথে সন্নিবেশিত হয়ে একটি নির্দিষ্ট লক্ষে পৌঁছাচ্ছে কিনা সেটি দেখবার বিষয় আছে। কিন্তু আমি মনে করি যে মানগুলায় এটা ছিল। তবে মানগুলার বিষয়ে আমার যে জায়গায় আলোচনার অবকাশ আছে সেটা হলো, আলটিমেটলি এটা কোথাও ক্যারি করে কিনা পুরো দর্শককে? থিয়েটার তো একটা চলমান শিল্প, জীবন্ত একটা শিল্প। এটা কখনো হোঁচট খায়, কখনো দাঁড়ায়, তবে উড়াল দেয়ার যে আকাক্সক্ষা, প্রান্তর পেরিয়ে যাওয়ার যে আকাক্সক্ষা এটি কিন্তু আছে মানগুলায় এবং ‘পালাকার’দের। এটিই বিরাট প্রশংসার দাবিদার।
কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন (অভিনেতা-নির্দেশক)
নাট্যকারের কাছে আমার জিজ্ঞাসা...হাজং সম্প্রদায়ের এত বিশাল একটা বিষয়কে উপস্থাপন না করে কোনো একটা বিষয়কে কি ফোকাস করা যেতো না? যেহেতু আপনি আপনার দলের জন্যই নাটকটি লিখছেন, তাহলে আপনি তো আপনার দলের সীমাবদ্ধতার কথা, রিসোর্সের সীমাবদ্ধতার কথা জানেন। দল ভালোভাবে, সফলভাবে যেন নাটকটি দর্শকের সামনে আনতে পারে সেদিকটা তো দেখতে পারতেন। আর মুকুলভাইকে প্রশ্ন করছি যে, যেহেতু আমরা নাটকটিতে অনেক চেষ্টা দেখেছি কিন্তু খুব ফিনিসড ওয়ার্ক মনে হয় নি, সেহেতু আপনি কি আরও অপেক্ষা করতে পারতেন না? দলের কর্মীদের আরও তৈরি হতে সময় দিতে পারতেন না, ভালোভাবে নাটকটি করার জন্য?
হাসান শাহরিয়ার
আগে নাট্যকার উত্তর দিন, প্লিজ।
গোলাম শফিক
আমার উত্তর আগের একটি কথাতে প্রায় এসে গেছে। সেটা হলো এখানে তো মূলত হাজংদের দেখানো হয়েছে। এখন হাজংদের মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনা, অনেক ব্যক্তির সমাবেশ ছিল। আমি লিখতে গিয়ে মনে হয়েছে, ওদের পুরো বিষয়টাকেই আনবো।
কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন
না, আমি বলতে চাচ্ছি যে, আপনি কি এটাকে হাজংদের ডকুড্রামা হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন, না কোনো একটি বিষয়কে হাইলাইট করতে চেয়েছেন? মানে দর্শক হিসেবে এই নাটকটি দেখার সময় আমার অস্থির লাগে...এত ইলিমেন্টস!
আমিনুর রহমান মুকুল
আমি একটু কথা বললে বিষয়টি পরিষ্কার হতে পারে। এখানে দুটো বিষয় আছে। প্রথমত, আমি কিন্তু বলি নি যে আমাদের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ব্যর্থ হয়েছে। আমি বলেছি তারা সর্বোচ্চ এফোর্ট দিয়েছে এবং আরও এফোর্ট দেয়া উচিত সেটাও আমি মনে করি। আরেকটি যেটা বলেছেন যে, এত বড় প্রেক্ষাপটকে কেন এক জায়গায় আনা হলো...তো এই জায়গাটা আমি একটু পরিষ্কার করতে চাই। আসলে হাজং জাতিগোষ্ঠী সম্পর্কে আমাদের নাগরিক লোকদের তেমন করে ধারণা নেই, তাই তাদের হিস্ট্রিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ডটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। শৈল্পীক-ক্রিয়ার মাধ্যমে ওদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়াটাই আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল।
সাইদুর রহমান লিপন (নাট্যশিক্ষক-অভিনেতা-নির্দেশক)
মুকুল আমাদের একজন প্রতিভাবান তরুণ নির্দেশক। তার মানগুলা নাটকটিও একটি বড়মাপের কাজ। আমার একটু ব্যাখ্যা চাওয়ার আছে, সেটা ডিরেক্টরিয়াল ভিউ থেকে...সেটা হলো, আমরা জানি থিয়েটারটা আসলে রিয়াল স্পেস এবং টাইম, ভার্চুয়াল স্পেস এবং টাইম এই দুয়ের মাঝামাঝি খেলা করে। সেই জায়গাটা মুশকিল হয়ে যায় যখন রিয়াল স্পেসে কোনো রিয়ালিটিকে হুবহু রিপ্রেজেন্ট করার চেষ্টা করা হয়। তখন কিন্তু এটা বিশ্বাসের জায়গাটায় আঘাত আনে। তো আমার কাছে মনে হয়েছে বেশ কিছু এলিমেন্টস এখানে এসেছে যে এলিমেন্টগুলো ওভাবে না আনলেই ভালো হতো। এবং এখানে ডিফারেন্ট ডিফারেন্ট অনেক কম্পোজিশন আছে যে কম্পোজিশনগুলো একটার সাথে আরেকটার ইন্টাররিলেশনশিপটা অত স্ট্রং না বরং কিছুটা দুর্বলই মনে হয়েছে। মানে কম্পোজিশনগুলো এস্টাবলিস্টড হওয়ার আগেই কেমন যেন ভেঙে যায়। আমার এই ভাবনাগুলোর ব্যাপারে মুকুলের কাছ থেকে কিছু শুনতে চাই।
আমিনুর রহমান মুকুল
এই নাটকে রিয়ালিটি থেকে যে এলিমেন্টগুলো এসেছে সেগুলোকে আমরা অনেক কালার দেয়ার চেষ্টা করেছি এবং আপনার সাথে এই বিষয়ে আমিও একমত যে, একটি কম্পোজিশনের স্থায়িত্ব যতক্ষণ হলে দর্শকের দেখতে ভালো লাগতো তারচেয়ে কম সময় স্থায়িত্ব পেয়েছে। এবং এই সময়টা নেয়া হয় নি বলেই ইমনের (কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন) কাছে তাড়াহুড়ো বা অস্থির অস্থির লেগেছে। আমরা বিষয়টি ভেবে দেখবো।
অনন্ত হিরা
আমি একটু বলতে চাই...ইমন বলছিল যে, ক্ষমতা না থাকলে সেই চেষ্টাটা কেন করবো? এই প্রসঙ্গে বাচ্চুভাইয়ের কথা দিয়েই বলি যে, আকাশ ভেদ করে উড়াল দেবার চেষ্টাটা কিন্তু ওদের প্রযোজনায় আছে। আমার মনে হয় এই উড়াল দেবার ইচ্ছাটা থিয়েটারে বেশ জরুরি। ব্যর্থ হতে পারি কিন্তু চেষ্টাটা জরুরি, আর সব কাজ সমানভাবে সফল হয়ও না।
এরশাদ কমল (সাংবাদিক)
নাট্যকারের কাছে একটা বিষয় জানতে চাই, সেটা হলো আপনি হাজং-সম্প্রদায়ের স্ট্রাগলের একটা ক্রমলজিক্যাল হিস্ট্রি টেনেছেন। এটা টানতে গিয়ে প্রত্যেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ঐ কমিউনিটি থেকেই কোনো একজন হিরোকে দেখাচ্ছেন। মনি সিং-এর হয়তো অবদান আছে এই সম্প্রদায়ের সংগ্রামে কিন্তু এই সময়টাতে এসে আপনি কেন ঐ কমিউনিটি থেকে কাউকে হিরো না করে মনি সিং-কে এত বেশি ফোকাস করলেন?
গোলাম শফিক
আমি নাটক লেখার সময়ই মনি সিং-কে ঐ স্রোতের মধ্যে এনেছিলাম। মনি সিং-কে কিন্তু আমরা আনি নি, বিভিন্ন কথায় বা রেফারেন্সে এসেছে। তো ওরকম রেফারেন্সে এসে এসে যে জায়গায় গেছে, সেখানে মনি সিং হিরো হয় নি বলেই আমার মনে হয়।
আমিনুর রহমান মুকুল
আমিও একটু বলি...আসলে হাজং-সম্প্রদায়ের কথা বলতে গেলে মনি সিং আসবেই, তবে একটু বড় আকারে আমাদের নাটকে এসেছে, সেটাকে কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।
এরশাদ কমল
আমি মানগুলা নাটকের সেট এবং লাইট নিয়ে একটু বলতে চাই। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে মানগুলার সেট ডিজাইনটা বনপাংশুল (‘ঢাকা থিয়েটার’ প্রযোজনা) নাটকের সেট ডিজাইন দ্বারা খুব প্রভাবিত। ভার্টিক্যাল লাইন যেটা ক্রিয়েট করা হয়েছে, পুরো মঞ্চজুড়ে, সেটা অলমোস্ট বনপাংশুল-এর মতোই। মুকুলভাইকে বলছি যে, আপনি আগেই বলেছেন যে আপনি বনপাংশুল দেখে মুগ্ধ...তো ঐ মুগ্ধতা থেকেই এটা করা কিনা?
হাসান শাহরিয়ার
আমি প্রথমে উত্তর দিতে বলছি সেট ডিজাইনারকে, পরে যদি বলার থাকে তো মুকুলভাই বলবেন।
এস এম রিয়াদ তুষার (সেট ডিজাইনার- মানগুলা)
এই নাটকের গল্পটা যখন আমি জানলাম এবং পড়লাম, তারপর নির্দেশকের সাথে বসলাম, তিনি তার কিছু রিকোয়্যারমেন্ট-এর কথা বললেন এবং উনি যেভাবে প্রেজেন্ট করতে চাচ্ছেন...সেটাকে আমি মাথায় রেখে এগুলাম। উনি যতটুকু স্পেস যেখানে চেয়েছেন, আমি সেগুলোও মাথায় রেখেছি। আমি যখন সুসং দূর্গাপুর গেলাম, গিয়ে দেখি সেখানকার পাহাড়, পাহাড়ের ভিন্ন ভিন্ন উচ্চতা, কালার সবই আমি মাথায় নিয়েছি। আমি তারপর আমার মতো করেই ডিজাইনটা দাঁড় করিয়েছি। এখন অন্য কোনো ডিজাইনের সাথে মিলে গেছে কিনা, সেটার ব্যাপারে আমি নিশ্চিত না।
আমিনুর রহমান মুকুল
আমি জানি না, আপনার (এরশাদ কমল) বনপাংশুল ভালোভাবে মনে আছে কিনা...
এরশাদ কমল
বনপাংশুল-এও কিন্তু উপরে ওঠার জন্য একটা সিঁড়ি, যেটি দিয়ে বানর উপরে উঠে যায়...
আমিনুর রহমান মুকুল
ওটা ছিল মই, আর আমাদের ডিজাইনে স্পষ্টতই একটা স্লোপ নেমে এসেছে...
সাইদুর রহমান লিপন
বনপাংশুল নাটকের সেট থেকে এটা ফার ফার ডিফারেন্ট। এটাতে স্পষ্টতই তিনটি লেয়ার ব্যবহার করা হয়েছে, যেটি বনপাংশুল-এ ছিল না। আমার মনে হয় এধরনের প্রশ্ন মিসগাইড করে দর্শককে, এধরনের প্রশ্ন না করাই ভালো।
গোলাম নবী (নাট্যদর্শক)
দুই ঘণ্টার মধ্যে একটি সম্প্রদায়ের যে কাহিনি দেখানো হয়েছে, আমার কাছে সেটা খুবই ভালো লেগেছে...বিশেষ করে সংগীত, এটা দুমাস পরে পরেই হোক আর একবছর পরেই হোক, যেন নিয়মিত হয় সেটাই চাই। আমি নাট্যবোদ্ধা নই। আপনাদের কাজ আমার ভালো লেগেছে, সেটাই জানালাম। ধন্যবাদ।
মামুনুর রশীদ (নাট্যকার-নির্দেশক-অভিনেতা)
আমি মানগুলা দেখি নি, তাই কোনো মন্তব্য করছিলাম না। তবুও একটা কথা বলি যে, নাট্যকার ও নির্দেশক বলছিলেন, একটা সম্প্রদায়কে পরিচয় করিয়ে দিতে চেয়েছেন এই নাটকের মাধ্যমে...আমার কথা হচ্ছে এই দায় কিন্তু আমাদের না, পরিচয় করে দিতে হয় না, পরিচয় হয়ে যায়। নাটকটি যদি দর্শক গ্রহণ করে এবং সেটা যদি নাটক হয়ে ওঠে তাহলে ডেফিনিটলি পরিচয়টা হয়ে যায়। আমাদের প্রধান টার্গেট থাকবে সেই সম্প্রদায়ের ইতিহাসে কোনো নাট্যউপাদান আছে কিনা, সেটা বের করা। আমি সাঁওতালদের নিয়ে একটা নাটক করেছি রাঢ়াঙ, তো সেখানে কিন্তু আমি ঐ সম্প্রদায়কে পরিচয় করিয়ে দেবার দায় থেকে করি নি, তাদের জীবনের কোনো না কোনো অংশ বা ইতিহাস আমার কাছে থিয়েট্রিক্যালি ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে, তাই করেছি। চে-কে থিয়েট্রিক্যালি ইন্টারেস্টিং চরিত্র মনে হয়েছে বলে চে’র সাইকেল করেছি। এটা শুনতে নিষ্ঠুর মনে হতে পারে, কিন্তু আসলে কেবল পরিচয় করিয়ে দেবার দায় আমার মনে হয় থিয়েটারকর্মীদের নেই।
হাসান শাহরিয়ার
‘থিয়েটারওয়ালা’র আজকের এই আয়োজনে থাকার জন্য, অংশ নেয়ার জন্য, আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।