Bookmaker Bet365.com Bonus The best odds.

Full premium theme for CMS

আত্মঘাতী প্রযোজনা: রাজা এবং অন্যান্য...

Written by আমিনুর রহমান মুকুল.

Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..

[৪ মার্চ ২০০৮-এ ফুলার রোডের ব্রিটিশ কাউন্সিল অডিটোরিয়ামে পরিবেশিত প্রাচ্যনাটের রাজা এবং অন্যান্য... ’র উদ্বোধনী মঞ্চায়ন দেখে প্রতিক্রিয়া।]

পাভেল ভাই, আপনার রাজা এবং অন্যান্য... দেখে রাজাকে পেলাম না, কেবল অন্যান্যকে পেলাম। জানতে ইচ্ছে হয়, আপনার মনটা কি আপনার আঙিনার বাইরে? আজ আপনার থিয়েটারটি দেখে মুগ্ধ হতে পারলাম না। যে আঙিনায় আপনি শুধুমাত্র মানুষের শরীর, কন্ঠ, মন আর সৃজনকে কাজে লাগিয়ে অসম্ভব সব থিয়েটার তৈরি করেছেন, সে আঙিনাটিতে এত জঞ্জাল ভিড়লো কবে? আপনার আগুণমুখা, সার্কাস সার্কাস; কী বিস্ময়কর সৃষ্টি। থিয়েটারের টানটান উত্তেজনায় মন্ত্রমুগ্ধের মত দেখেছি। তরুণ নাট্য নির্দেশকদের ঈর্ষা জাগানো আসনটিতে তো আপনি, আপনিই রাজা। সেই আপনি আজ রাজা করলেন। বললেন, একটি মাল্টিমিডিয়া থিয়েটার। যেখানে থিয়েটারের মানুষকে অস্বীকার করলেন; মানুষের চেয়ে বেশি কিছু আশা করলেন যন্ত্রপাতির কাছে। এরা আপনাকে কি দিলো? একটি উইন্ডোজ মাল্টিমিডিয়া। যার স্ক্রীনটি জ্বলজ্বল করছে চোখের সামনে, কার্সারটি এদিকওদিক হাতড়াচ্ছে। একবার মিনিমাইজ হচ্ছে, একবার খুলছে। অপারেটর বেচারার যন্ত্রণার শেষ। অন্যদিকে আরো দুটো বিষম যন্ত্র, আপনার আলো এবং অর্কেস্ট্রা। সমানেই বিরক্তিকর বাদ্যবাদন, আলোর ঝলকানি। এগুলো কি ফিউশান? দেখতে দেখতে আমি কেবল হাতড়ে চলেছি, থিয়েটার কোথায়? কোথায় নাট্যমুহূর্ত? প্রতিটি স্থানে এত ভাংচুর, কেবল শব্দ আর দৃশ্যের কোলাহল। অথচ, আমার তো প্রশ্ন জাগবার কথা, টেক্সট’র ব্যাখ্যা নিয়ে, চরিত্র এবং চারিত্রিক দ্বন্দ্বের বিশ্লেষণ নিয়ে।

আপনাকে লিখতে বসে ভাবছি, কী দেখেছি আসলে? কী ছিল দৃশ্য, কী ছিল কথা; আর কী-ই বা তার ব্যখ্যা? নাটক দেখার সময়ে এসব একদম মাথায় আসে নি। তখন কেবল প্রতি মুহূর্তে থিয়েটারের প্রধানতম শক্তি জীবন্ত মানুষকে খাঁটো হতে দেখার পীড়ায় ভুগেছি। লিখতে বসে ভাবছি, কী দেখলাম, কী হলো? মেলানো সত্যি কঠিন। কীভাবে মিলছে কথাগুলো? যা ঘটাচ্ছেন, যা দেখছি, যে ব্যাখ্যা পাচ্ছি, তা কতটা যুক্তিযুক্ত? কতটা মেলে?

ইতোপূর্বে থিয়েটারওয়ালা ত্রৈমাসিকের নবম বর্ষ জানুয়ারী-জুন’০৭ সংখ্যায় [সংখ্যা ২২] প্রকাশিত নির্মাণে প্রাচ্যনাটের রাজা শীরোনামে আপনাদের আলাপচারিতার আলাপটুকুও জেনেছি। দেখেছি আপনার নির্মাণ ভাবনার কোথায় যেন একটা ঔদ্ধত্ব আছে, যা তরুণের সহজাত, মানি। আপনি যখন রবীন্দ্রনাথের শিল্পী স্বত্তার সাথে রাষ্ট্র চিন্তার যুগসূত্রতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তখন আমরা স্বভাবতই ঘাবড়ে যাই। আরো ঘাবড়ে যাই যখন বলেন- রাজা-র মধ্যে যতগুলো রাজা আমি দেখতে পাই, ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে আমার আশে-পাশে সেই রাজাদেরই অস্তিত্ব অনুভব করি। তখন আমি আসলে আমার জানাশোনা ইতিহাসের বা বর্তমানের সেই রাজাদের কথা বলার জন্যই রবীন্দ্রনাথের রাজা-র উপর ভর করেছি। রবীন্দ্রনাথের রাজা-র ওপর ভর করা, শুনতে কেমন লাগে না? বিশেষ করে এমন একজন মানুষ যাকে এক জীবনে পড়ে শেষ করা কঠিন। তার ওপর তিনি আবার বিশ্বজয়ী কবি। তবুও আপনার বিশ্বায়নের রাজনৈতিক চিন্তা, জি-৭ হিসেবে রাজাদের চারিত্রিক ব্যখ্যা, মাল্টিমিডিয়া থিয়েটার, আশা জাগিয়েছিল মনে। ভেবেছিলাম, আপনি সত্যিই নুতন কিছু দেবেন আমাদের; নাট্যকর্মীদের, বিশেষ করে যারা তরুণ, যারা পরস্পর পরস্পরের কাছ থেকে শেখে। উইন্ডোজ মাল্টিমিডিয়ায় ভিডিও ফুটেজ দেখার অনেক পূর্বেই আমরা থিয়েটারের যুদ্ধ এবং যুদ্ধ আর চট্টগ্রাম অরিন্দমের তোরা সব জয়ধ্বনী কর নাটকে ফিল্ম প্রজেক্টরের ব্যবহার দেখেছি এবং খুব চমৎকারভাবে ঐটিকে থিয়েটারের অংশও হতে দেখেছি। থিয়েটারতো অসীমের ধারক, সব কিছু ধারণ করতে পারে সে। কিন্তু আপনার থিয়েটার আপনার মাল্টিমিডিয়াকে ধারণ করতে পারলো না, বরং একেবারে ব্যর্থই হয়েছে বলবো। যখন দুইজন সোলজার, কাল্পনিক পাগলাকুত্তাকে সামলানোর অভিনয় দিয়ে, সামরিক ত্রাস সৃষ্টি করতে সক্ষম হচ্ছেন, তখন পুলিশের সাইরেন বাজানো গাড়ি আর সামরিক বাহিনীর খানাতল্লাশির ভিডিও ফুটেজ দেখানো, সত্যিই কি দরকার ছিল? বার বার আমেরিকান ফ্লাগের ভিডিও দেখিয়ে, কি প্রমাণ মিললো? আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া, এই চরিত্রটি আমেরিকা, বুশ? বুদ্ধিলুপ্ত মানুষ থিয়েটার দেখতে আসে কি? একটু কি দর্শককে জ্ঞান দেয়া নয়? নীতিশিক্ষা? তাহলে বোধের সেই থিয়েটার কই? রবীন্দ্রনাথের রাজা-র সেই বোধ কই? সুদর্শনার ভেতর রাজা-র যে উদার্যের বোধ, তাকে কি আমরা অস্বীকার করছি? এবং ‘অন্যান্য’-র দাপটে রাজা-র বোধ কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে? মোটেই ভুলভাবে ব্যখা করছি না আমি। প্রযোজনাটিকে ডুবিয়ে ফেলবার জন্য আনুসাঙ্গিকতার দাপটই দায়ী। আপনি স্বীকার করেন বা না-ই করেন। আপনার প্রযোজনার ভেতরেই তার আততায়ী। সেটি নাটকের ব্যখ্যায়, চরিত্রের ব্যাখ্যায় এবং প্রযোজনা নির্মাণ কৌশলেও। সর্বক্ষেত্রেই এক বিপরীত প্রবণতা। আত্মঘাতি প্রবণতা। ধরে নেই, এটি আপনার সজ্ঞাত।

প্রাচ্যনাটের প্রচারিত লিফলেটে আপনি আপনার কথার শুরু করেছেন রবীন্দ্রনাথের একটি উদ্ধৃতি দিয়ে। আপনার থিয়েটারের শুরুতেও উদ্ধৃতিটি উইন্ডোজ মাল্টিমিডিয়াতে উচ্চারিত হতে দেখে আবারও হোঁচট খাই। ঔদ্ধত্য মনে হয়। মনে হয়, যে সমালোচকরা আপনার নাটক দেখতে এসেছেন, প্রথম চোটেই তাদের কাত করে ফেলবার চেষ্টা। বুঝেছি, আপনার নাটক নিয়ে আপনি কোনো নাট্য সমালোচকের সমালোচনা চান না। আমি তো একজন নাট্যকর্মী, নির্দেশনার কাজও টুকটাক করি, তাই কলমটা তুলে নেয়ার দায় বোধ করলাম। এবার রবীন্দ্রনাথের সেই উদ্ধৃতিটি যেটিকে আপনি ফলাও করে বলেছেন সেটি হলো, 'Critics and detectives are naturally suspicious. They scent allegories and bombs where there are no such abominations. It’s difficult to convince them of our innocence.' এটিতো রবীন্দ্রনাথ তার দিল্লির এক বন্ধুকে লিখেছিলেন। রাজা নাটকের ইংরেজি অনুবাদ The King of the Dark Chamber পড়ে ইংরেজ সমালোচকরা যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন তারই প্রত্যুত্তর এই চিঠি। রাজা-র সুদর্শনাকে যখন ইংরেজ সমালোচকরা বোকার মতোন লেডি ম্যাকবেথের চরিত্র ও আকাক্সক্ষার সাথে মিলিয়ে ফেলেছেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই রবীন্দ্রনাথ ঐ সমস্ত ইংরেজ সমালোচকদের এভাবে তিরস্কার করেন। প্রাচ্যের দর্শন সম্পর্কে ধারণা না থাকলে সুদর্শনাকে লেডি ম্যাকবেথের সাথে গুলিয়ে ফেলাই স্বাভাবিক। পাশ্চাত্যের সমালোচকরা সে কারণেই ঐভাবে তিরস্কৃত। আপনি জানেন, রবীন্দ্রনাথ বৌদ্ধ আখ্যান কুশা অবলম্বনে রাজা নাটকটি রচনা করেন। জাতকের কুশা ও প্রভা সম্পর্কে যাদের বিন্দু পরিমান ধারণা আছে, তারা রাজা নাটকের ভাবগত অর্থ এবং এর রূপকতার বিষয়টি সহজেই আবিস্কার করতে পারবেন। রবীন্দ্রনাথ নিজেই বলছেন, রাজা নাটকে সুদর্শনা আপন অরূপ রাজাকে দেখতে চাইলে; রূপের মোহে মুগ্ধ হয়ে ভুল রাজার গলায় দিলে মালা; তার পরে সেই ভুলের মধ্য দিয়ে, পাপের মধ্য দিয়ে, যে অগ্নিদাহ ঘটালে, যে বিষম যুদ্ধ বাধিয়ে দিলে, অন্তরে বাহিরে যে ঘোর অশান্তি জাগিয়ে তুললে তাতেই তো তাকে সত্য মিলনে পৌঁছিয়ে দিলে। প্রলয়ের মধ্য দিয়ে সৃষ্টির পথ।... ব্যথাতেই সৌন্দর্য, তাতেই আনন্দ।’ প্রাচ্যের দর্শন তো তাই। সেলিম আল দীন-এর কন্ঠেও তাই একই কথার প্রতিধ্বনি শুনি। স্বর্ণবোয়াল আখ্যানের ভূমিকায় তিরমনের হেরে যাওয়াকে তিনি যৌক্তিক ভিত্তি দেন এই বলে, মানুষের জীবিকা বলি, পেশা বলি- শিকারীর জিতে যাওয়াই আসল। বরশি থেকে মাছ ছুটে গেল- তো সাধারণ চোখে মাছের সঙ্গে শিকারীর হার বলে ধরে নেয়াই সঙ্গত। ... শিকার শিকারী কিংবা হারজিত এক অদ্বৈত নৈসর্গিক ঐক্যে বাঁধা। ... প্রাচ্য এভাবেই হারকে জিত থেকে ভিন্ন করেনি- তা সে হোক ব্যাসদেবের মহাভারত কি ফেরদৌসীর শাহানামা। সমগ্র রবীন্দ্রদর্শনেও দেখি-হারের ভেতর দিয়ে এক অপূর্ব জয় এসে সূর্যকিরণ ঢালে আমাদের চোখের কোটরে। এই দর্শনটি না বুঝলে রাজা-র সুদর্শনা লেডি ম্যাকবেথ হয়ে উঠবে, এতে আর আশ্চর্য কি! হারের সঙ্গে জিতের ঐক্যটা তখনই সাধিত হয়, যখন নাটকের শেষে সুদর্শনা তার অন্ধকারের রাজাকে প্রণাম করে। ঐ আত্মনিবেদনের মধ্য দিয়েই আসে জয়-পরাজয়ের অদ্বৈত, নৈসর্গিক ঐক্য। বৌদ্ধ দর্শনও তাই বলে। অথচ আপনি সুদর্শনার প্রণামকে অযৌক্তিক ভাবলেন, বাদ দিলেন। রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্র দর্শনকে খাঁটো করে দেখলেন। যে সমালোচনার প্রতিউত্তরে রবীন্দ্রনাথ ঐ তিরস্কারটি করেছিলেন; পক্ষান্তরে সেই সমালোচকের আসনটি আপনি নিজেই দখল করলেন। পাশ্চাত্যের ধার করা পদ্ধতিতেই আপনি নাট্যের উপস্থাপন করলেন। তাই তার ব্যখ্যাও হলো সে রকম। না ঘরকা না ঘাটকা।

ভুলে যাই রবীন্দ্রনাথ। ভুলে যাই প্রাচ্যের সহজাত দর্শন। যেহেতু আপনার রাজা এবং অন্যান্য... রবীন্দ্রনাথের রাজা নয়। আপনার ভাষায় রাজা-র ওপর ভর করা। আপনি বলছিলেন, রাজা-র ৭ রাজা আপনার দৃষ্টিতে জি-৭ হিসেবে আবির্ভূত। কি দেখেছি আমরা, কাঞ্চিরাজারা কি জি-৭ হয়ে এসেছে? পাগড়ি ও টুপি পরিহিত রাজাদ্বয় কার প্রতিনিধিত্ব করে? কোনো ইসলামী মৌলবাদি রাষ্ট্রের অর্ন্তভুক্তি কি জি-৭ এ আছে? বুঝে নিলাম জি-৭ নয়, এ সাম্রাজ্যবাদী ও মৌলবাদি যৌথচক্র; যারা সারা বিশ্বকে তাদের নোংরা তাণ্ডবে সন্ত্রস্ত রেখেছে। তাহলে সুবর্ণ চরিত্রটি কার প্রতিনিধি হিসেবে এলো? হ্যাঁ, আপনার উইন্ডোজ মাল্টিমিডিয়াতে মার্কিন ফ্লাগটি বারবার সুবর্ণকে বেহায়া বুশের সাথে মিলিয়ে দিচ্ছিল। বুঝলাম সাম্রাজ্যবাদী মাতাল বুশ হলো রবীন্দ্রনাথের সুবর্ণ। হ্যাঁ, সত্যি মার্কিনিরা সুবর্ণের বেশ ধরেই দেশ দখল করে। নিজেকে রাজা ঘোষণা করে। কিন্তু কাঞ্চিরাজারা যখন মার্কিনবেশী সুবর্ণের ঘাড়ে চাপে, তখন তালগোল পাকিয়ে যায়। মৌলবাদ কখনও সাম্রাজ্যবাদের ঘাড়ে চাপে, না চেপেছে? বরং সাম্রাজ্যবাদের প্রচ্ছন্ন মদদে থাকে মৌলবাদি ধর্মীয় শক্তি? ইতিহাস কি বলে? আমরা দেখি, আপনার ঐ ৭ রাজা সাম্রাজ্যবাদকে দিয়েই তাদের মনস্কামনা পূর্ণ করে নিচ্ছে। এর কি ব্যখ্যা? সাম্রাজ্যবাদ কি কখনও এভাবে মাথা ঝুঁকিয়েছে? কেবল কিউবাতেই আমরা ভিন্ন চিত্র দেখি। আধুনিক সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার কাছে, হেট হয়ে ঝুঁকে আছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। তবে অন্ধকারের রাজার এ দেশটি কি কিউবা? তাহলে তার পতাকা কোথায়? উইন্ডোজ মাল্টিমিডিয়ার ভিডিওতে তার দেখা মেলে নি কেন? বর্তমান বিশ্ব ও রাষ্ট্রচিন্তায় তৈরি প্রযোজনায় অন্ধকারের রাজার রাজ্য কোনটি? আর সুদর্শনা? আপনার নাটকে মূল এই চরিত্রটি একেবারেই উপেক্ষিত থেকে গেলো। যে চরিত্রের আত্মার উপলব্ধিকে ঘিরে নাট্য কাহিনী এবং অন্যান্য-র ভীড়ে সে চরিত্রই সবচেয়ে উপেক্ষিত ও ব্যখ্যাহীন। অথচ বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে সুদর্শনা তো আমরা, যারা রূপের মোহে মুগ্ধ হয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের গলায় বরমাল্য পরাই। বিনিময়ে মেলে ডোনেশন নামের মুক্তার মালা।

মিউজিক আর আলো, আলোচনায় না আসাই ভালো। আলোর অমন ঝনঝন শব্দ আর চোখ ধাঁধানো পরিবর্তন কি আলোর ফিউশন? এ ফিউশন আমাকে ভাবায় না, কোনো বোধ, অনুভূতি দেয় না। লয়-ছন্দহীন এমন ফিউশন, কেবল তার অস্তিত্বকেই জানান দিচ্ছিল। বেচারাদের কষ্ট দিয়ে কী লাভ, মুক্ত হোক। জর্জ হেরিসনের ভিডিও দেখিয়ে সেখানে কার্তিককে জীবন্ত হেরিসনের আদল দেয়াও কৌতুককর। তার চেয়ে পাহাড়ের গায়ে বসা মটকু ছেলেটির হামটি ডামটি-র জীবন্ত ও ভিডিও উপস্থিতি, কিছুটা সহনীয়। রবীন্দ্রগানে যন্ত্রের যান্ত্রিক নিনাদ, কথার গুরুত্বকেই অস্বীকার করেছে। রবীন্দ্রগান তো কথা আর সুরেরই সম্মিলন। এও এক অদ্বৈত। সেখানে যন্ত্র, আপনার প্রয়োগে আততায়ী।

এবার পোশাক পরিচ্ছদের দিকে নজর দিই। একেবারে বৈচিত্র্যে ভরে গেছে বলতে হবে। তবে চিন্তার যোগসূত্রতা পাই না। অন্ধকারের রাজার দেশে যখন ইয়ো পোশাক পরিহিত যুবকদের দেখি বিশ্ববসু আর বিরূপারে প্রতিনিধিত্ব করছে, তখন ঠাকুরদাসহ রাজ্যের অন্য যুবকরা কিনা ধুতি ফতুয়া পড়ে চরিত্র সাজছে। হাল আমলের ইয়ো পোশাকের সাথে ধুতি ফতুয়া কিংবা মেয়েদের ধুতি কোর্তা কোন সময়কে মেলায়? এও কি পোশাকের ফিউশন? অথবা যদি বলি, কাঞ্চিরাজাদের কিংবা রাজবেশী সুবর্ণের পোশাকের সাথে সুদর্শনা বা সুরঙ্গমার পোশাক? কোথায় মেলে, বুঝতে পারি না।

পুরো প্রযোজনায় সবকিছু খুলে দেয়ার প্রবণতাটাও লক্ষণীয়। কিন্তু আগেই বলেছি, এ নাট্য আমাকে ব্রেখটীর এলিয়েনেশনের ভাবনায় ফেলে নি। উইন্ডোজ মাল্টিমিডিয়ার আগ্রাসনে বার বার চোখে আঙুল দিয়ে বলে দিচ্ছিল- এটা মানে এটা আর ওটা মানে ওটা। ফলে প্রয়োগ পদ্ধতিতে আততায়ী ঐ মাল্টিমিডিয়া। যাকে আপনি সদর্পে প্রয়োগ করেছেন, খাঁটো করেছেন জীবন্ত মানুষের অস্তিত্ব। এভাবে হলো কেন? প্রায় বছর খানেক ধরেই তো প্রস্তুতি নিয়েছেন, খেঁটেছেনও; চিন্তাও করেছেন যথেষ্ট। কিন্তু তা সুচিন্তিত বা সুপরিকল্পিত নয় কেন? আপনি কি সত্যি আঙিনার বাইরে চলে গেলেন না? কোথায় যেন শুনেছিলাম, মানুষ তার আঙিনার বাইরে গেলে আত্মঘাতী হয়। আপনি তরুণদের মাঝে তরুণদেরই প্রেরণা, আপনি এমন আত্মঘাতী হবেন না। রাজা এবং অন্যান্য... নতুন ব্যখ্যায় বিশেষায়িত হোক, এই কামনা।

আমিনুর রহমান মুকুল: নাট্যাভিনেতা, নির্দেশক। সদস্য- পালাকার