Full premium theme for CMS
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর : নির্বাচিত ৫০ প্রযোজনা।। প্রসঙ্গ: পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়
Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..

নাটক: পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়। রচনা: সৈয়দ শামসুল হক। নির্দেশনা: আবদুল্লাহ আল-মামুন। মঞ্চপরিকল্পনা: কেরামত মওলা। আলোকপরিকল্পনা: কামরুজ্জামান রুনু। আবহসংগীতপরিকল্পনা: আলম খান। রূপসজ্জা: দুলাল। পোস্টার ডিজাইন: নিতুন কুণ্ডু। প্রথম মঞ্চায়ন-বর্ষ: ১৯৭৬। একটি ‘থিয়েটার’ প্রযোজনা
[পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় নাটক নিয়ে গবেষণাধর্মী নাট্যসমালোচনা লিখেছিলেন বিপ্লব বালা। ‘থিয়েটারওয়ালা’র ১৪তম সংখ্যায় (২০০৪ এ প্রকাশিত) এটি ছাপা হয়। এবারের বিশেষ-সংখ্যায় নাট্যসমালোচনাটি পুনঃপ্রকাশ করা হলো]
পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় নাটকের স্যুভেনিরে নাট্যকার জানান রচনার পরিপ্রেক্ষিত:
আমার মনে পড়ে এই কাব্যনাট্য লেখার পেছনে একটি দিনের কথা। বিবিসি’তে সংবাদকক্ষে সেদিন দুপুরবেলায় আমি বাংলা বুলেটিন তৈরি করছিলাম। হঠাৎ একটি সংবাদে এসে থেমে গেলাম। সায়গনের প্রেসিডেন্ট থিউ আসন্ন পরাজয়ের মুখে ছুটির নাম করে দেশ থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। হঠাৎ মনে হলো ওই লোকটির অন্য এক পরিচয় আছে- সে কারো পিতা, কারো স্বামী, কারো পুত্র। আমার মনে হলো, এ ধরনের চরিত্র আমাদেরও অচেনা নয়। সেই প্রেসিডেন্ট থিউকে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই এবং আমার বাংলাদেশের নিকট অতীত ইতিহাস স্মরণ করেই আমি এই কাব্যনাট্য লেখায় হাত দেই।
‘চিত্রালী’ পত্রিকায় মফিদুল হক সমালোচনায় এই ভাষ্যে বিস্ময় প্রকাশ করেন:
থিউয়ের পলায়ন সংবাদে সঙ্গত তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে মুক্তিসংগ্রামের বিজয়োল্লাস। অবশ্য ভিয়েতনামের বিজয় যাদের কাছে সায়গনের পতন তাদের কথা আলাদা। থিউকে ঘিরে সহানুভূতি উথলে ওঠার মধ্যে যে মানসিকতা প্রকাশ পায় তা এতই তরল ও বুদ্ধিবিবর্জিত আবেগসর্বস্ব যে, শেষ বিচারে তা অমানবিকতার পর্যায়েই পড়ে। গোর্কি বলেছিলেন, ঘৃণা না করলে ভালোবাসা যায় না। বস্তুত শ্রেণিবিভক্ত সামাজে নির্বিচার ভালোবাসা কোনো ভালোবাসাই নয়। আধুনিক জটিল জগতে জটিলতর শিল্পী মানসে এ ধরনের কাঁচা মানসিকতার প্রকাশ হাস্যকর। তবে পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়-এর চরিত্র নির্মাণে লেখকের যে দিশাহারা ভাব লক্ষ করা যায়, তার মূল্য বোধকরি এখানেই নিহিত।
লেখকের ঐ বক্তব্য বিস্মৃত হয়ে নাটক দেখা মঙ্গলজনক মনে করেন তাই সমালোচক। ভালোবাসা ও ঘৃণার অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক বিষয়ক গোর্কির উক্তিটি উদ্ধৃত করায় সমালোচকের বিশেষ নান্দনিক মতি টের পাওয়া যায়।
নাট্যকার সমালোচকের মন্তব্যের জবাব দেন:
আমার মনে হয়, সমালোচক নাট্যাভিনয়পত্রে মুদ্রিত আমার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য সঠিক অর্থে গ্রহণ করেন নি। আমি যখন সায়গনের পলাতক প্রেসিডেন্ট থিউয়ের উল্লেখ করি, তখন তাঁকে একজন গণশত্রু বলে মনে রেখেই উল্লেখ করি। এই ব্যক্তিটির যে সন্তান আছে, এই ব্যক্তিটি যে নিজেই কারো সন্তান, এই কথাগুলো আমার মনে আসে এই জন্যে যে, আমার ধারণায় কেউ যদি এই কথাগুলো মনে রাখতো, তাহলে পাশের মানুষটির ক্ষতি করা তার পক্ষে সম্ভব হতো না। সেই প্রেসিডেন্ট থিউয়ের পাশাপাশি আমার দেশেও অনেক মানুষকে আমি সনাক্ত করতে পারি যাঁরা এই সহজ দৃষ্টি থেকে বঞ্চিত। আর এ কারণেই প্রেসিডেন্ট থিউয়ের উল্লেখ। তাঁকে সমর্থন করে উল্লেখ নয়। আমার পক্ষ সমর্থন করবে আমারই নাটক, নাটকে নিশ্চয়ই লক্ষ করা যায় যে, মাতব্বর পিতা হয়েও কন্যাকে বিসর্জন দিয়েছে নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে।
ভাষাবিভ্রাটের ঘটনাই তাহলে ঘটেছে। প্রকাশের ক্ষেত্রে ভাষাও যে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, এমনকি ভিন্ন বিপরীত অর্থ প্রকাশ করে বসেÑসেটাও মূলত ভাষার নয় মানব মনেরই জটিলতর অক্ষমতা।
দর্শক-সমালোচকদের মতামত
‘দৈনিক ইত্তেফাক’-এর সমালোচক বলেন:
আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামকে নিয়ে রচিত একটি সার্থক নাটক ‘থিয়েটার’ তার দর্শকদের নিবেদন করবে এ প্রত্যাশা অনেকেরই ছিল। ‘থিয়েটারে’র নতুন প্রযোজনা পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় অনেকের প্রত্যাশা আর থিয়েটারের আন্তর আকাঙ্ক্ষা- এই দুই আবেগের যোগফল।...এই কাব্যগীতিনাট্য আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের দিনগুলোর সংকট, সমস্যা ও আশাকে ভাষা দিতে চেয়েছে।...স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে যখন একাংশের হতাশা, একাংশের ঋণাত্মক মানসিকতা আর আরোপিত জটিলতা প্রায় নাটককে গ্রাস করে ফেলেছে, তখন ‘থিয়েটারে’র এ উদ্দীপনার নাটক বলিষ্ঠ ব্যতিক্রম। রক্তার্জিত স্বাধীনতার উপলব্ধিকে আজ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সঞ্চার করে দেয়া চাই। পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় এই দিকের পথিকৃৎ। এই নাটক নিয়ে মুক্তাঙ্গন অভিনয়ে সারা দেশে ‘থিয়েটারে’র ছড়িয়ে পড়া চাই।
সমালোচকের এই নাটকের বিষয় এবং তাকে ব্যবহারের অভীপ্সা থেকে শিল্পের ভূমিকা সম্পর্কে তাঁর অভিপ্রায়ের ধরন বোঝা যায়, সরল আবেগে উচ্ছ্বসিত এই সমালোচক।
‘দৈনিক বাংলা’র সমালোচক জানাচ্ছেন অন্য কথা:
একজন দালালের জীবনের ট্র্যাজিক আখ্যান হলো পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়। এ দালাল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে দখলদার বাহিনীর দালাল। নিজের সন্তান এবং জীবনের বিনিময়ে এ দালালির অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়া গেল না।...কিন্তু ‘থিয়েটার’ আর একটি দৃশ্যের সংযোজন করে, যেখানে পতাকা হাতে মুক্তিবাহিনী শপথ নেয়। এই শপথ স্বাধীনতা রক্ষার শপথ। আজ সীমান্তে সম্প্রসারণবাদী হামলা চলছে, দেশের অভ্যন্তরেও দেশদ্রোহীরা চক্রান্ত আঁটছে। মুক্তিবাহিনীর এই শপথ এই হামলা প্রতিরোধের শপথ। দেশদ্রোহীদের শায়েস্তা করার শপথ। নাটকের সঙ্গে সমসাময়িক ঘটনার একটি যৌক্তিক যোগসূত্র স্থাপন নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
সরকারনিয়ন্ত্রিত পত্রিকা ‘দৈনিক বাংলা’ তৎকালীন (১৯৭৬) রাষ্ট্রীয় রাজনীতির মুখপত্র হিসেবেই এ নাটককে দেখেছে, স্বভাবতই ১৯৭১ সালের দখলদার বাহিনীর কোনো পরিচয় দেওয়া হয় নি। নাটকটিকে ভিন্ন দৃষ্টিতে ব্যবহার করবার এটা প্রচলিত এক ধরন-আরোপণের পরিচিত একটি চেহারাও এতে প্রকাশ পায়।
নাটকটি আমাদের অভিজ্ঞতারই ফসল। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন এ চিত্র আমাদের সকলেরই জানা। প্রতিটি গ্রামে-গঞ্জেই এ চিত্র আমরা দেখতে পেয়েছি। নাটকের শেষে নিয়তির প্রতি আত্মসমর্পণ লক্ষ করেছি- মুক্তিযোদ্ধাদের আগমনে। এখানে মুক্তিযোদ্ধারা গ্রাম্য যুবক, গ্রামবাসী ও বাউলের শেষ সহায় হিসেবে চিহ্নিত। নিজেদের উন্নয়নের প্রচেষ্টা থাকলেও তারা উত্তরণ ঘটাতে পারে নি। এখানে নাট্যকার ব্যর্থ হয়ে নিয়তিসর্বস্ব হয়ে পড়লেন।
‘পূর্বাণী’ পত্রিকায় সমালোচক কায়কোবাদ মিলন নাটকে এভাবেই এক নিয়তিনির্ভরতা প্রত্যক্ষ করেন মুক্তিযুদ্ধকালীন আখ্যান-পর্বে।
নাটকটির বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ পাওয়া যায় মাহমুদ আল জামানের লেখায়:
মুক্তিযুদ্ধের বৃহৎ পটভূমি, কাব্য-গীতি-নাট্যের সংবেদনশীলতা এবং গীতিময় পদ্যময়তা নাটকটির দেহে সঞ্চারিত হওয়ায় আমাদের নাট্য-অঙ্গনের ধারায় এ প্রচেষ্টাটি ভিন্নতর অভিধায় চিহ্নিত করা চলে।...পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় কাব্যগীতিনাট্যে নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গীতে মুক্তিযুদ্ধের অভ্যুদয়কে পটভূমি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ কাব্যগীতিনাট্য আমাদের জাতীয় জীবনে ইতিহাসের অন্তঃস্থিত বেদনা ও আনন্দেরই সমাচার।...হানাদার বাহিনীর নৃশংসতা এবং গ্রামের সরল মানুষের জিজ্ঞাসা, উৎকণ্ঠার মধ্যে ক্লেদ ও গ্নানিতে এক মেয়ের আত্মহত্যা একাত্তরের বাংলাদেশের দগ্ধ চেতনাকে ধারণ করে আছে। এই দগ্ধ ক্ষতকে আমাদের জাতীয় মানসভ্রান্তির আলোছায়ায় নিক্ষেপ করেছে, সেখানে সৈয়দ শামসুল হক রচিত ও আবদুল্লাহ আল-মামুন নির্দেশিত এই নাটকের মঞ্চায়ন আমাদের সাংস্কৃতিক জীবনে একটি অনন্যসাধারণ ঘটনাই বটে।...বাংলাদেশের নাট্য-অঙ্গনে এই একটি নাটকই মুক্তিযুদ্ধের আন্তর্বেদনাকে ধরে রেখেছে। নাট্য-আবহে একাত্তরের জাতীয় বিপর্যয় শুধুমাত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রতিফলিত হয় নি, জাতীয় চরিত্রের সংকট এ নাটকে বিশেষভাবে প্রাধান্য লাভ করেছে।...মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি জনচেতনামূলক সার্থক নাটকের সফল মঞ্চায়ন সত্ত্বেও ‘থিয়েটারে’র এ নাটকটি যেন সামগ্রিকভাবে শিল্পিত অভিধায় চিহ্নিত করা যায় না।...কাব্যগীতিনাট্যের গীতিময়তা নাটকটির চেতনা আবেদন স্বভাবতই খর্ব না করে অন্তর্বেদনা ও মর্মকে প্রকাশিত করার জন্য সংলাপের এই দ্রুতগতি উচ্চারণ বারংবার একই ভঙ্গি ব্যবহার কিছুটা হলেও গীতিময় এই নাটকের আবেদনকে ব্যাহত করেছে। সংলাপ এবং বাচনে তীক্ষèতা ছিল বটে, কিন্তু তা যেন শুধুমাত্র তীক্ষèতা-তীব্রতা সৃষ্টির জন্যই। গ্রামের যুবসম্প্রদায় বারবার যখন মাতব্বরকে প্রশ্ন করছে, সেখানে ভঙ্গি, বাচন এবং অভিনেতার সত্তার অভিক্ষেপণে কোনো আবেগই সৃষ্টি করে না। ভাষাকে ছাড়িয়ে ভাষা ব্যবহারের অর্থদ্যোতক কোনো বোধেই উজ্জীবিত করে না। এসব সত্ত্বেও...এ নাটকটি বিশিষ্ট ও অনন্য ও সাংস্কৃতিক আত্মোপলব্ধির ক্ষেত্রে উজ্জ্বল।
নাটকটির ঐতিহাসিক মূল্য ও কৃতিত্ব স্বীকার করেও সমালোচক প্রয়োগ পরিণতির, বিশেষ করে অভিনয় প্রকরণের সমালোচনা করেছেন। পৌনঃপুনিকতার অভিযোগ করেছেন বাচিক ও আঙ্গিক প্রকাশভঙ্গির, যাতে করে দর্শকের যথাবোধে উজ্জীবন ঘটে না। কেবল বিষয়ই যথেষ্ট নয়, তার প্রয়োগপ্রকাশ এবং দর্শককে-প্রণোদিত করাও মুখ্য বিবেচ্য হয়ে দাঁড়ায়- সমালোচকের এহেন নান্দনিক বিবেচনা। রাজনীতি ও শিল্পের সম্পর্কে এটা নিশ্চয় একটি বড় সূত্রবিন্যাস।
নাটকটি সম্পর্কে মফিদুল হকের আরও অভিমত হলো:
সাহিত্যমূল্য ও নাট্যমূল্যে সমভাবে গুণান্বিত এমন আনকোরা নতুন নাটকের অভিনয় দর্শনের ভাগ্য সচরাচর হয় না...পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় প্রযোজনা একটি দুরূহ ও দুঃসাহসী প্রচেষ্টা। নাটকের পাঠক-দর্শক মাত্রেই এটা স্বীকার করবেন।...নাটকের কাহিনি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক। নিকট অতীতের এই মহত্তম সংগ্রাম ও বর্বরতম পাশবিকতার স্মৃতি যখন দেশবাসীর একাংশে লোপ পেতে শুরু করেছে, তখন পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় রচনা-প্রযোজনা অত্যন্ত সময়োপযোগী বলে বিবেচিত হবে। কিন্তু এই তাৎক্ষণিক লাভটুকুই সব নয়, শিল্পসিদ্ধির জোরেও পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটকের শ্রেষ্ঠত্বের আসন দাবি করতে পারে। এই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন আরেক কারণে সম্ভব হয়েছে, সেটি আমাদের জন্য গ্লানিকরও বটে। মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা দেশের জনমানুষকে বিপুলভাবে আলোড়িত করলেও সাহিত্যে এর প্রতিফলন দৈন্যপীড়িত। এই দৈন্যদশা নাটকের ক্ষেত্রে আরও বেশি। সেক্ষেত্রে শক্তিমান কথাসাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হক কাব্যনাটকের আঙ্গিকে মুক্তিযুদ্ধের একটি পর্ব ফুটিয়ে তোলার প্রচেষ্টা নিয়ে সকলের সৎসঙ্গ সাধুবাদ লাভের পদক্ষেপ নিয়েছেন।...আঞ্চলিক ভাষায় রচিত পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় সংলাপ কথ্যভঙ্গীর বিশিষ্টতা এবং লোক-জীবনভিত্তিক উপমার সার্থক প্রয়োগে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ গ্রামের সোঁদা মাটির গন্ধ-বহা এই সংলাপ-মাধুর্যের অজস্র উদাহরণ তুলে ধরা যায়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ‘মহত্তর সংগ্রাম ও বর্বরতম পাশবিকতার স্মৃতি’ বিস্মৃত হওয়ার এবং সাহিত্যে ও নাটকে তার প্রতিফলনের দৈন্যই পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় নাটক রচনা ও মঞ্চায়নের বড় কৃতিত্বÑসমালোচকের এই বিবেচনা শিল্পের রাজনীতি ও দেশ-কাল সম্পর্কিত দায়বোধের নান্দনিক অবস্থান চিহ্নিত করছে; নাটকটির সাহিত্য ও শিল্পগুণ সেক্ষেত্রে অধিক গৌরববহ।
ইংরেজি দৈনিক `THE OBSERVER’-এর সমালোচক বলেন:
The plot is a simple one, but very skillfully handled. There are only a few central characters, in fact, just there is a group of villagers who play a major role both structurally and thematically...there's melodrama in the play but it’s convincing and theatrically effective. The situations and characters are true to life...what distinguishes Haq's play in the combination of realistic manner with a certain degree of rich imaginative flavor...'The sound of foot steps' however, tells a realistic story with genuine poetic flashes in the dialogues. The similes and metaphors are drawn from the familiar would of the rural people and yet with touches of poetry that produces a telling effect. Had sometimes brings in allusions from folk literature, religious lures and myths that have a hint of the stirrings of the collective unconscious of the village people that feature in his play. ...For its poetry, its social content, its realism and for the high quality of acting. The sound of footsteps will, I am sure be widely acclaimed by the theatre-goes of Bangladesh. I wish it could be performed in open stage and not merely in Dacca but all over the country.
`OBSERVER’-সমালোচকও সারাদেশে খোলা মঞ্চে এই নাটক অভিনয়ের কথা বলছেন। কাহিনির বাস্তবিকতা প্রকাশে কাব্যরীতির শিল্পসম্পন্নতা, ভাষায়-প্রতীকে-রূপকে জনমানসের যৌথ অবচেতন ভা-ার আহৃত অনুষঙ্গে এই নাটক সুপ্রযোজিত, সকলেই প্রায় কমবেশি একই রকম বলছেন। ‘দৈনিক সংবাদ’ পত্রিকায় ‘অনিরুদ্ধ’ বাংলাদেশের তৎসাময়িক সংকটবোধ থেকে লিখছেন:
স্বাধীনতাযুদ্ধে লাঞ্ছিত লাখ লাখ মা-বোনের প্রতীক হিসেবে এই নাটকের মেয়ের চরিত্র প্রতিনিধিস্থানীয়।...সমগ্র নাটকটিতে রয়েছে ইতিহাসচেতনার ধারা। ধর্মব্যবসায়ীদের প্রতি ধিক্কার আর সাধারণ সরল-ধর্মভীরু মানুষের মানবতাবোধের উজ্জীবন। এ নাটকের সরল-সহজ বক্তব্যের মধ্যে ’৭১ সালের শেষদিকের অভিজ্ঞতাকে দর্শক আবার নতুন করে যাচাই করে নিতে পারবেন। কোনো পূর্বপুরুষের অভিজ্ঞতার কাহিনি নয়, আপন মনের কাছে সংশয়দীর্ণ চেতনার কাছে নতুন উজ্জীবনমন্ত্র গ্রহণ; জীবনের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার নামই ধর্ম। এই বিশ্বস্ততা বিসর্জন দিয়ে ধর্ম অন্তঃসারশূন্য বুলি। আত্মস্বার্থ উদ্ধারের সহজ সোপান। ঈমান শুধু গরিবের আর ধনসম্পদ বড়লোকের এখতিয়ার এমনটি নৈবনৈবচ।
রাজনীতিতে ধর্ম ব্যবহারের প্রতিক্রিয়ায় সমালোচকের অবস্থান গ্রহণ, শিল্পকর্মের এই অনাচার উৎসাদনে ভূমিকা রাখবার দায় আছে বলে মনে করেন তিনি। শিহাব সরকারের মতে:
Mr. Haq's play tells us of a universal issue, that of truth on the point of being engulfed by even advancing charm of the evil force. The playwright speaks this keeping the theme on a local perspective. For this purpose he made use of the people of Bangladesh their experiences during the war of liberation of 1971.
শিহাব সরকার দেখি একেবারে অন্য কথাই বলছেন। সর্বজনীন সত্য প্রকাশ করতেই নাট্যকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অবলম্বন করেছেন; অথচ বেশিরভাগ সমালোচক তা মনে করেন নি। অপসৃয়মান স্বাধীনতা সংগ্রামের উজ্জীবন ঘটাতে এ নাট্যরচনা এমনই তাদের প্রতীতি, বর্তমান সমালোচকের নিকট যা অবলম্বন মাত্র, মৌল প্রণোদনা নয়। নাট্য-প্রয়োগের সামান্য সমালোচনাও করেছেন তিনি:
Except the songs Mr. Mamun all through the play left marks of superb directorial capability. From the point of commercial success the songs may be excused but as the question is standard production, their effectiveness lies in dispute. Especially the prolonged dance (!) sequence in the final scene at times appears to be a threat to the plays unhindered flow retained so meticulously from the first dialogue.
নানা দৃষ্টিভঙ্গিগত আলোচনা-সমালোচনা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ-প্রণোদিত নাটক হিসেবে পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় একটা সর্বজনীন স্বীকৃতি পেয়ে যায়।
ড. বিপ্লব বালা ( This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it. ): নাট্যশিক্ষক, সমালোচক