Bookmaker Bet365.com Bonus The best odds.

Full premium theme for CMS

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর : নির্বাচিত ৫০ প্রযোজনা।। প্রসঙ্গ: দেওয়ান গাজীর কিসসা

Written by বিপ্লব বালা.

Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..

নাটক: দেওয়ান গাজীর কিসসা। মূলরচনা: বের্টল্ট ব্রেশট (গুড উইম্যান অব সেৎসজুয়ান অ্যান্ড হার পুনটিলা অ্যান্ড হিজ ম্যান মাত্তি)। রূপান্তর ও নির্দেশনা: আসাদুজ্জামান নূর। মঞ্চপরিকল্পনা: আজিজ শরাফি। আলোকপরিকল্পনা: সৈয়দ লুৎফর রহমান। আবহসংগীতপরিকল্পনা: কে বি আল আজাদ। রূপসজ্জা: বঙ্গজীৎ দত্ত। প্রথম মঞ্চায়ন-বর্ষ: ১৯৭৭। একটি ‘নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়’ প্রযোজনা

[দেওয়ান গাজীর কিসসা নাটক নিয়ে গবেষণাধর্মী নাট্যসমালোচনা লিখেছিলেন বিপ্লব বালা। ‘থিয়েটারওয়ালা’র ১৪তম সংখ্যায় (২০০৪ এ প্রকাশিত) এটি ছাপা হয়। এবারের বিশেষ-সংখ্যায় নাট্যসমালোচনাটি পুনঃপ্রকাশ করা হলো]

‘নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়’ কর্তৃক প্রকাশিত দেওয়ান গাজীর কিসসা-র স্যুভেনিরে নাটকটি সম্বন্ধে জানানো হয়:
গল্প নয় ঘটনা প্রবাহ। একটি দরজার দুটো দিক। দরজার এধারে দেওয়ান গাজী, গাজীপুরের জোতদার, এন্তার টাকার মালিক, প্রচণ্ড মদ্যাসক্ত। মাতাল অবস্থায় ভদ্দরলোক, নেশা ছুটে গেলে কুত্তার বাচ্চা। লাইলী, দেওয়ান গাজীর একমাত্র মেয়ে, দেওয়ান গাজীর বিত্তের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই নিরঙ্কুশ স্বার্থপর। এখন এমন, তখন তেমন, নিজে বাঁচলে বাপের নাম। নফর আলী দারোগা, গাজী নির্বাচিত হবু জামাই। বাহ্যত ক্যাবলাকান্ত, দিনভর কেবল ফিলিমের গপ্পো আর টাকা পয়সার গন্ধে চুক্ চুক্। নিজ স্বার্থে বাপের গলায় ছুরি বসাতে দ্বিধাহীন।

মোক্তার, গাজীর গেলাসের ইয়ার এবং আপামর গাজীদের সকল ইয়ারদের মতোই, গাজীর উচ্ছিষ্টতেই সন্তুষ্ট। এধারে আরও আছে চেয়ারম্যান আর কাজী। লোভ, বিত্ত, সংহারের জীবন্ত মূর্তি। দরজার ওধারে আছে মাখন। আগে রিক্সা চালাতো, এখন দেওয়ান গাজীর খাস বেয়ারা। ক্লাস থ্রি অবধি পড়েছে। চেহারা সুরত ভালো। মনটা ভালো, আর একটা খাঁটি মানুষের বাচ্চা।

সকিনা, দেওয়ান গাজীর বাড়ির কাজের ছুড়ি। মায়ের নাম কুলসুম। বাপের নাম কেউ জানে না। দেওয়ান গাজীও হতে পারে। ওর জীবনে কোনো সাধ আহ্লাদ নেই। কেবল মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখেÑসব কিছু ভেঙেচুরে গুঁড়িয়ে দেয়া যায় না?

চামেলী, লতা, কুসুম-শরীর বেঁচে পেট চালায়। ওদের চাওয়া নিতান্ত সহজ-সরল। পেট পুরে খেতে পাবো তো? একটু ভালো-মন্দ কাপড়-চোপড় দেবে তো? শান্তিতে ঘুমুতে পারবো তো? আর আছে ঝাণ্ডা পার্টির আবেদ এবং মজুরের দল। ওদের জীবনের ফিলসফি মরাকে মরার ভয় দেখিয়ে আপনাদের ফায়দা কী? এ ছাড়া এক গোঁয়ারগোবিন্দ সূত্রধরÑমাঝে মধ্যেই মঞ্চে আবির্ভূত হয়ে এমন সব কথা বলে যে, নিশ্চিন্তে-নির্বিঘ্নে দুধে-ভাতে লালিত আমাদের পিলে চমকে দেয়।

মাঝের দরজাটা মাঝে মধ্যে একটু ফাঁক হয়। তখন দেওয়ান গাজী নেশায় টই-টুম্বর। আর ঐ ফাঁক দিয়ে মাখন, সকিনা, চামেলী, লতা, কুসুম দেওয়ান গাজী নামে মানুষটার সাক্ষাৎ পায়। মনে আশা জাগে...কিন্তু এ-তো হবার নয়। মাঝের দরজাটা যে বড্ড মজবুত আর দেওয়ান গাজীর নেশাটাও যে ক্ষণস্থায়ী।

‘চিত্রালী’ পত্রিকায় নাটকের সুবর্ণ জয়ন্তী পালন উপলক্ষে নির্দেশক ও রূপান্তরকারী এক সাক্ষাৎকারে নাটকটির পরিচ্ছন্ন বিনোদন ও জোরালো বক্তব্য বিষয়ে বলেন:
‘নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে’র সুবর্ণ জয়ন্তী পালিত নাটক দেওয়ান গাজীর কিসসার নির্দেশক ও অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরের কাছে প্রশ্ন রেখেছিলাম পঞ্চাশতম প্রদর্শনীর প্রেক্ষিতে নাটকের কোন দিকটা দর্শককে বেশি আকর্ষণ করেছে?

উত্তর:
দেওয়ান গাজীর কিসসা নাটকের মূল আকর্ষণ হলো এর বক্তব্য। সহজ উপস্থাপনা, বিশেষ করে নাটকের বক্তব্য নির্মল হাস্যরসের মধ্যে দর্শকের কাছাকাছি চলে গেছে। পরিচ্ছন্ন বিনোদন আছে এ নাটকে। কিন্তু বিনোদনের মাঝে যে জোরালো বক্তব্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে তা সমাজের চেনা চেহারাকে প্রতিফলিত করে। একটি ভালো ছবি যেমন দর্শক বারবার দেখে, তেমনি নাটকের বক্তব্য যদি দর্শককে আকৃষ্ট করে সে নাটকও একাধিকবার দর্শক দেখে। দেওয়ান গাজীর কিসসার বেলায়ও তাই হয়েছে।

নাটকটির দ্বিশততম মঞ্চায়ন অনুষ্ঠানে ‘নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়’ মুদ্রিত স্মরণিকায় আতাউর রহমান দেওয়ান গাজীর কিসসার নাট্যকার সম্বন্ধে লেখেনÑ ‘প্রধানত খাঁটি শিল্পী গভীর সমাজ ও রাজনীতি চেতনা জীবন ও শিল্প পরস্পর সম্পর্কিত তাঁর নাট্য বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য’:
ব্রেশটের নাটক ও তাঁর উপস্থাপনা আঙ্গিক নিয়ে নানা বিতর্ক ও তত্ত্বের বুলি প্রায় শোনা যায়। তাঁর এপিক থিয়েটার, বিযুক্তিকরণ পদ্ধতি, মার্কস-লেনিন মনস্কতা, পোলিটিক্যাল থিয়েটারের প্রতি আনুগত্য, নাটকে জুড়ে দেয়া প্রস্তাবনা ও উপসংহার ইত্যাদি নিয়ে দেশে বিদেশে নাট্যকর্মীরা চায়ের কাপে তুফান তোলেন। ব্রেশটের নাটকের প্রযোজনা কতটুকু ব্রেশটীয় হলো, তিনি কতখানি অ্যারিস্টেটলিয়ান থিয়েটারের বিরুদ্ধে, কতখানি স্তানিস্লাভস্কির পক্ষে-এসব নিয়েও বাগ-বিতণ্ডার অন্ত নেই। এই সব তত্ত্বকথা ও ব্যাকরণের বেড়াজাল ভেদ করে যে সত্যটি বড় হয়ে দাঁড়ায় তা হলো, ব্রেশট হলেন দেশ, কাল ও ভৌগলিক সীমারেখার ঊর্ধ্বে বিশ্বমানবের শিল্পী। শিল্পীকে জীবন ও জগতকে জানতে হয় ও জগৎ বিষয়ে ব্রেশট ছিলেন অনেক বেশি অগ্রণী। তিনি বিশ্বাস করতেন গভীরভাবে সমাজ ও রাজনীতি সচেতন না হলে কোনো শিল্পীই দেশের জন্যে, মানুষের জন্যে কোনো অর্থবহ কাজ করতে পারেন না। সেই কারণেই নাট্যকার ও নাট্যনির্দেশক হিসেবে ব্রেশটকে একেবারে আলাদা করে চেনা যায়। তবে গভীর সমাজ ও রাজনৈতিক সচেতনতার কারণে ব্রেশটের নাটক বা নাট্য প্রযোজনাকে প্রপাগান্ডা, পোস্টার বা বক্তৃতাধর্মী মনে করলে ভুল হবে। তিনি প্রথমত ও প্রধানত একজন খাঁটি শিল্পী এবং তাঁর সৃষ্টি হিসেবে ঋজুভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেন তাঁর নাটক ও প্রযোজনার বিশ্বজনীনতার কারণে।

দর্শক-সমালোচকের মতামত

বাংলাদেশের নাট্যভাবুক কবীর চৌধুরীর মতামতও মুদ্রিত হয় স্মরণিকায়:
আধুনিক নাটককে বের্টল্ট ব্রেশটের মতো এত বিপুল উদ্দীপনাময় ও সৃষ্টিশীলভাবে আর কেউ প্রভাবিত করেন নি। তাঁর নাট্যকর্মের বৈপ্লবিক সংগ্রামী উপাদান, জীবনঘনিষ্ঠতা, ইতিহাসবোধ ও মার্ক্সীয় দৃষ্টিকোণ যেমন দর্শক-পাঠককে আকৃষ্ট করে, তেমনি আকৃষ্ট করে তাঁর ব্যতিক্রমী নাট্যতত্ত্ব, বিযুক্তিকরণ বা এলিয়েনেশন নামে যা সুপরিচিত, এবং তাঁর এপিক থিয়েটারের নাট্যকৌশল। পাশ্চাত্য ও প্রাচ্য উভয় নাট্যজগতেই তাঁর নাটক, মূলে কিম্বা অনুবাদে, শুধু ব্যাপক হারে পঠিতই হয় না, গভীর অনুসন্ধিৎসা ও উৎসাহের সঙ্গে অভিনীত ও আলোচিত-বিশ্লেষিতও হয়। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের নব নাট্যান্দোলনে ব্রেশটের সুস্পষ্ট প্রভাব পড়েছে। এ প্রভাব যেমন তাঁর বেশ কয়েকটি রূপান্তরিত অনূদিত নাটকের সফল মঞ্চায়নের মধ্যে, তেমনি আমাদের একাধিক নাটকের রচনা ও পরিবেশন কৌশলের মধ্যে লক্ষণীয়।...

অল্প বয়স থেকেই ব্রেশ্টের স্বাধীন চিন্তাশক্তি বিকশিত হয় এবং সমকালীন বৈপ্লবিক ডামাডোলের পরিবেশে তাঁর তীক্ষ্ণবুদ্ধি, বিশ্লেষণপ্রবণ দৃষ্টিকোণ এবং দরদী চেতনা তাঁকে মার্ক্সিজমের প্রতি আকৃষ্ট করে। তবে তিনি কখনোই নিজেকে কোনো গোঁড়া মতবাদের বজ্রকঠিন শৃঙ্খলে আবদ্ধ হতে দেন নি, যদিও এজন্য তাঁকে মাঝে মাঝে কম্যুনিস্ট ও অ-কম্যুনিস্ট উভয় শিবির থেকেই তিরস্কারের সম্মুখীন হতে হয়।...

তিনি গোঁড়ামিকে কখনো প্রশ্রয় দেন নি, না বক্তব্য উপস্থাপনের সময়, না প্রযোজনার ক্ষেত্রে আঙ্গিক-কৌশল প্রয়োগের সময়। তাঁর কল্পনার শক্তি ছিল যেমন বিস্তৃত, মঞ্চভাষার উপর নিয়ন্ত্রণও ছিল তেমনি নিপুণ ও সহজাত। তাঁর নাট্যকর্মকে একই সঙ্গে শিল্পগুণ সমৃদ্ধ ও সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে ফলপ্রসূ হাতিয়ারে পরিণত করার জন্য ব্রেশট বহু স্থান থেকে বহু কিছু গ্রহণ করেছেন, কিন্তু সবই তিনি আত্মস্থ করে নিয়েছেন অসামান্য দক্ষতার সঙ্গে।

গোঁড়ামিমুক্ত, শিল্পসমৃদ্ধ ও সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে ফলপ্রসূ হাতিয়ার তাঁর নাটক, সমালোচকের এই হলো বিবেচনা।

‘পূর্বাণী’ পত্রিকায় নাট্যসমালোচনায় বলা হয়:
মালিক যদি হতে চাও, নিজের মালিক নিজে হও, নইলে যে ভাই পাওনা তোমার মিলবে না। পাওনা যদি পেতে চাও পাওনা তোমার বুঝে নাও, নইলে যে ভাই পাওনা তোমার মিলবে না।

‘নাগরিকে’র প্রাক্তন ও বর্তমান প্রযোজনা যথাক্রমে সৎ মানুষের খোঁজে ও দেওয়ান গাজীর কিসসার মূল সুর এই-ই।...

বলা যায়, দেওয়ান গাজীর কিসসায় প্রভাবশালীদের হাতে নির্ধনদের বঞ্চনার রূপটি যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। বলে রাখা ভালো, আলোচ্য পল্পের পুরোপুরি বিস্তার না থাকলেও ঘটনাপ্রবাহ ও চরিত্রের বুনন, সব মিলে একটা কাহিনির অবয়ব নিয়েছেÑযেখানে ব্রেখ্ট বিশ্বস্ততার সাথে উঠে এসেছে, সাধারণ দর্শকরাও খুশি হয়েছে-‘নাগরিক’ নাটক মঞ্চায়নের ক্ষেত্রে মাইলপোস্ট হিসেবে নিজেকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে।

‘হলিডে’ পত্রিকায় শ্রেণিসংগ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে নাটকটির বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। তাতে বিশেষ এক রাজনৈতিক শিল্পবিচার প্রত্যক্ষ করা যায়:

History reveals that the struggle for existence of mankind is two-fold-the struggle against natural calamities and the class struggle among themselves. Class struggle is the struggle between the contesting classes. These classes may be divided into two distinct classes- the oppressors and oppressed. In certain classics attempts were made and are being made to misinterpret the concept of class struggle by showing union of two distinct classes as a solution to this struggle. The only conclusion to the class struggle is the defeat or the oppressors and the establishment of the rule of the oppressed masses. Dewan Gazir Kissa (The Story of Dewan Gazi) that 10th production of `Nagarik Natya Sampraday’ deals with class conflict and shows that there is an invisible barrier between two distinct classes which neither of the classes can cross.

Gazi has a two fold character-remains stiff with all the qualities of an oppressor when normal and acts as a humanitarian in a drunken mood, this representing the universal character of pseudo-leaders of society.

The apparent behavior of pseudo-leaders has been shown in the gentle behavior of a drunk Gazi while the egocentric activity of the normal Gazi exposes their real face. The two faces of Dewan Gazi actually represent the only face of an oppressor of all ages that appears with various looks. Makhon, the servant of Gazi, belongs to the class of oppressed. The oppressor with his two-fold behavior balances the impact of oppression and reduces the internal combustion of the oppressed. In this way the demands are suppressed and radical change are delayed. But finally the conscience of the masses is inspired to rebellion.

We notice only the slogans and dialogues disclosing the desire of the oppressed class to change the system but no violence against the oppressors take places. The violence has not been taken into consideration because the playwright's object of interest is the pre-revolution perspective of society and therefore, he has simply indicated the forthcoming revolution.

Without visual violence the director has more or less successfully created the impression of forthcoming violence in the viewers' mind in the final sequence and as a result finally the viewers leave the hall with due seriousness and with-out any felling of perversity. Directly challenged are the norms of our existing social senses by the irrational dialogues thrown by the different characters of the play. The evaluation of the play in the context of society reveals that the play is actually a mirror which reflects the reality, the typical characters belonging to two distinct class or our society and class struggle between two classes.

দেওয়ান গাজীর কিসসার হীরক জয়ন্তী উপলক্ষে ‘পূর্বাণী’ পত্রিকায় ‘নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়’-এর তৎকালীন সভাপতি জিয়া হায়দার এবং সম্পাদক আতাউর রহমান দলের শিল্পাদর্শ ও দায় সম্বন্ধে বলেন, ‘নাগরিক’ নাটক প্রযোজনায় বিচিত্রতায় বিশ্বাসী। ‘নাগরিক’ সভাপতি জিয়া হায়দার এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেন, যেকোনো ভাষাতে অথবা যেকোনো নাট্যকারের রচনা হোক না কেন, ভালো নাটক দেশ-কালের ঊর্র্র্ধ্বে; নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমারেখায় আবদ্ধ নয়। বিশেষ কোনো মতবাদ বা দর্শনে ‘নাগরিক’ বিশ্বাসী নয় বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনো বিশেষ ধরনের নাটকে আমাদের আগ্রহ শূন্য। আমাদের লক্ষ্য, দেশি বা বিদেশি ভালো নাটক এবং সেটা ভালোভাবে উপস্থাপন করা।

‘নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়’ অব্যবসায়িকভিত্তিতে সৎ ও সুস্থ নাট্যচর্চা গড়ে তোলায় বিশ্বাসী। ‘নাগরিকে’র বিশ্বাস নাটক হলো মানুষের জীবনের অত্যন্ত কাছাকাছি এক শক্তিশালী বেগবান জীবননিষ্ঠ ও মঙ্গলময় শিল্পকর্ম এবং এই শিল্পের প্রতিষ্ঠায় ও প্রসারে ‘নাগরিক’ আন্তরিকভাবে সচেষ্ট।

‘নাগরিক’ সম্পাদক জনাব আতাউর রহমান এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা লক্ষ রাখতে চেষ্টা করেছি, দর্শকরা যেন নাটকে আনন্দই লাভ না করেন, তাঁদের সংস্কারাবদ্ধ ও সীমিত রুচির যেন উন্নতি হয়। শখের দর্শক যেন উন্নীত হয় চিন্তাশীল দর্শকে। আতাউর রহমান বলেন, আমরা সচেষ্ট থাকি যেন আমাদের নাটক হয় জীবনের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন। অবশ্য সে জীবনের স্বরূপ ও ব্যাখ্যা আমাদের নিজেদের। অন্যের ধারণা বা ব্যাখ্যার সঙ্গে তা নাও মিলতে পারে। ‘নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে’র কার্যক্রমের মধ্যে ঢাকার বাইরে এবং বাংলাদেশের সর্বত্র গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনকে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।

বিশেষ কোনো মতবাদ-দর্শনে বিশ্বস্ত নন তাঁরা। দেশকাল ও ভৌগলিক সীমার বাইরে ভালো নাটক ভালোভাবে অভিনয় করতে চান, তার ফলে রুচির প্রগতিতে শখের দর্শক পরিণত যেন হতে পারেন চিন্তাশীল দর্শকে। কেবল আনন্দদান লক্ষ্য নয় ‘নাগরিক’-এর। নান্দনিক অবস্থানের একটা চরিত্র স্পষ্ট হয় এভাবে।

দেওয়ান গাজীর কিসসার শততম মঞ্চায়ন উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে নাটকটি নিয়ে একটি সেমিনার ও মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। তাতে ‘নাগরিকে’র পক্ষ থেকে দেওয়ান গাজীর কিসসার নির্দেশক আসাদুজ্জামান নূর ও অভিনেতা আলী যাকের প্রশ্নোত্তরে অংশ নেন। ‘চিত্রালী’ পত্রিকায় এর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে নাটকটি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন নান্দনিক অবস্থান দেখতে পাওয়া যায়:
বের্টল্ট ব্রেশট ছিলেন বিপ্লবী, পরিবর্তনের সংগ্রামী সৈনিক। বিপ্লবের চারণ কবি। ব্রেশটীয় আঙ্গিক নিয়ে কলাকৌশল নিয়ে যত কুয়াশাময় আলোচনা হয়েছে, বিষয়বস্তু নিয়ে ততটা নয়। ব্রেশটের পরিচয় তার নাট্যবস্তুতে। এই মূল কথা মনে রেখে ‘নাগরিক’ ব্রেশটীয় নাটকের রূপান্তর দেওয়ান গাজীর কিসসা মঞ্চায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। আধাসামন্তবাদী সমাজে লোভের বিশাল বিস্তার দেওয়ান গাজী।...নাটকের পটভূমিও সামন্তবাদী সমাজ। চরিত্রগুলোও মূলানুগ। পারস্পরিক দ্বন্দ্বমুখর। ক্ষয়িষ্ণু সমাজের প্রতিভূ। মঞ্চসজ্জায়, আলোকসজ্জাতে ও প্রয়োগ ব্যাপারে ব্রেশটীয় নির্দেশ অনুসরণ করা হয়েছে। ব্রেশটের নাট্যতত্ত্বের পরিচয় জানা থাকলেও প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাস্তব অভিজ্ঞতা ছিল না। নাট্যপ্রযোজনা যদি হয় বিষয়বস্তুর সঠিক রূপায়ণ, তবে ‘নাগরিকে’র দেওয়ান গাজীর কিসসার প্রযোজনা ব্রেশটীয় নাট্যধর্মের অনুগত। গত সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত ‘নাগরিকে’র দেওয়ান গাজীর কিসসা নাট্যপ্রযোজনা সম্পর্কে একটি সেমিনারে এই নাটকের নির্দেশক ও অনুবাদক (রূপান্তরক) জনাব আসাদুজ্জামান নূর উপরের কথাগুলি বলেছেন। মূল আলোচনার পরে প্রসঙ্গ ধরে আলোচনা করেন সর্বজনাব আতিকুল হক চৌধুরী, ম. হামিদ, মাসুদ আলী খান, ও মুস্তাফা আনোয়ার। আলোচকদের উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব দেন ‘নাগরিকে’র পক্ষ থেকে জনাব আলী যাকের।

জনাব আতিকুল হক চৌধুরী বলেন: স্বাধীনতার ভালো উপহারের অন্যতম মঞ্চের নাটক। দর্শনীর বিনিময়ে নাটক দেখার প্রয়াসের উদ্যোক্তা ‘নাগরিক’ ধন্যবাদার্হ। তবে, দেওয়ান গাজীকে মাঝে মাঝে পশ্চিমি কোনো কেতাদুরস্ত ক্যাপিটালিস্ট মনে হয়, গাঁয়ের পরিচিত মানুষ নয়। বারবণিতার উপস্থাপনার স্টাইল আকর্ষণীয়, তবে কোনো উদ্দেশ্য তাতে পরিষ্কার নয়। অনেকটা যেন চকোলেটের কোটিং-এ অ্যালকোহল লাগে। বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশে সেক্স ও সোশিয়ালিজম একসাথে চলতে পারে না। চলা উচিত না। লাকী খানের নাচ ও সুকান্তের কবিতা যেমন এক সাথে চলতে পারে না। যা এই নাটকে আছে তা প্রোগ্রেসিভ কমার্শিয়াল টার্ম। ‘নাগরিকে’র মতো উজ্জ্বল নাট্যকর্মীদের কাছে যা কাম্য নয়। কম্প্রোমাইজ নয়, টোটাল কমিটমেন্ট চাই।

দেওয়ান গাজী কিসসাতে বাঘের গর্জন আছে, তার প্রতিবাদে সিংহের উপস্থিতি নেই। এই প্রসঙ্গে জনাব আলী যাকের বলেন: ব্রেশটের নাটকে বাঘ গর্জায়, নাট্যকার সিংহকে আহ্বান করেন দর্শকের মধ্যে। সমাজের মধ্যে। পোস্টার নাটক থেকে বাঘ-সিংহের সম্পর্কের ব্রেশটের নাটক আলাদা বলে আমরা মনে করি। সমাজতন্ত্র নির্বীর্য দর্শন নয়। সেক্স থাকবে না হয় সমাজতন্ত্র থাকবে এমন হতে পারে না। বারবণিতার উপস্থিতি প্রতীকী। তারাও মজুর। দেহ বিক্রি করে। আমরাও দেহ বিক্রি করি। শ্রম বেচি। এদেশে বারবণিতারা অব্যক্ত। বিদেশে তাদের ফোরাম আছে। সমিতি আছে। প্রসঙ্গটি মূল নাটকেও আছে। এখানে অন্য প্রেক্ষিত। আমরাও সম্পূর্ণ বিশ্বাস করি টোটাল কমিটমেন্টে। তাছাড়া কোনো শিল্পই বাড়তে পারে না। আমরা অনেক বাধা-নিষেধের মধ্যে কাজ করি।

জনাব ম. হামিদ বলেন: ক্ষুধার জ্বালা বইয়ে পড়ে জানা আর অনুভব করার মধ্যে পার্থক্য আছে। নাটকের প্রযোজনায় তা লক্ষ করা গেছে। অভিনয়ে শোষকদের কৌশল এসেছে শোষিতদের মধ্যে বিশ্বাসের ঘাটতি পড়েছে। দেওয়ান গাজীর চরিত্রও বিপরীতধর্মী। মাতাল অবস্থায় ভালো মানুষ। সচেতন অবস্থায় দমনশীল। এটা বক্তব্য বিরোধী। সত্য বিরোধী। প্রযোজনায় বিশ্বাস ও প্রকাশের এই বৈপরীত্য দুর্বলতার দিক। যা বিশ্বাস করি না তাই নিয়ে নাটক করবো? ‘নাগরিকে’র কাছে এই প্রশ্ন।

এই প্রসঙ্গে জনাব আলী যাকের বলেন: আমরা পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন। মঞ্চ সমাজের দর্পণ। সেই চিত্র দেখে সমাজ বদলাবার কাজ সমাজ সংস্কারকের, নাট্যকর্মীর নয়। মূল নাটকে পন্টিলা মদ খেলে রঙ্গিন চশমা ধারণ করত। মানুষ সচেতন থাকলে আসল রূপ বেরিয়ে আসে। মদ এখানে রূপক। বর্তমানে আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য নাটককে নিয়মিত শিল্প মাধ্যম করে তোলা। তারপরই এটি হাতিয়ার হয়ে উঠবে। অনিয়মিত হলেই এটি বিনোদন মাধ্যম।

জনাব মাসুদ আলী খান জানতে চান, দেওয়ান গাজীকে শারীরিকভাবে পঙ্গু দেখানো হয়েছে, এটি মূলে আছে কিনা। পঙ্গু না দেখালেই ভালো হতো। এই প্রসঙ্গে জনাব আলী যাকের বলেন, মূল নাটকে পন্টিলা পঙ্গু ছিলেন না। এটা নিজস্ব সংযোজন। অবক্ষয়ী সমাজকে পঙ্গু দেখানো হয়েছে।

জনাব মুস্তাফা আনোয়ার বলেন, কনটেন্টের দিক দিয়ে ব্রেশ্টের নাটক দুর্বল। এই কনটেন্ট নিয়ে প্রচুর নাটক হয়েছে। শিল্পের তিন দিক। কনটেন্ট। এক্সপ্রেশন। ডেকোরেশন। ব্রেশটে এই ত্রিভুজের সমন্বয় ঘটেছে। ‘নাগরিকে’র প্রযোজনায় ডেকোরেশন কিছু অতিরিক্ত হয়েছে। সস্তা প্রশংসা পাবার জন্যে, আঙ্গিক সম্পর্কে ভুল ধারণার জন্যেই এটা হয়েছে। মঞ্চে সিম্বলিক সেট। দরিদ্রতার লক্ষণ। সেটে, আলোয় বহু কিছু করার আছে। এখন যে পর্যায়ে নাটক এগুচ্ছে তাতে কোনোরকম ম্যানেজ করা আর চলবে না। জনাব আলী যাকের এ প্রসঙ্গে মঞ্চসজ্জার ব্যাপারে আর্থিক সংগতিহীনতার কথা মেনে নিয়ে বলেন যে, শিল্পকলা একাডেমি সাহায্য না করলে মঞ্চায়নে সেটে আলোর ব্যবহারে কোনো বৈপ্লবিক পরিবর্তন সম্ভব নয়।

আলোচনাপর্বের শেষে প্রশ্নোত্তর পালায় উপস্থিত শ্রোতাদের প্রাসঙ্গিক জিজ্ঞাস্যের উত্তর দেন ‘নাগরিকে’র পক্ষ থেকে দেওয়ান গাজীর কিসসার নির্দেশক জনাব আসাদুজ্জামান নূর।

বিশিষ্ট সমালোচক ধরণী ঘোষ দেওয়ান গাজীর কিসসা নাটকে রূপান্তর ও নির্দেশনায় এক দ্বৈততা, দ্বৈধ প্রত্যক্ষ করেন মূলের হুবহু অনুসরণ এবং স্বকীয়তার পুনর্বিন্যাস করার ক্ষেত্রে। তিনি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন নাটকটির প্রথম পর্ব ও দ্বিতীয় পর্বের চরিত্র ও ঘটনাক্রম অনুসারে:

One reason why major international directors like Peter Brook, Luca Ronconi or Jerzy Grotowski avoids Brecht is that his plays have to be staged on his own terms. The only other ‘Permissible’ (one of Brecht's favorite words) approach consists in doing the exact opposite of what he has done, a procedure exemplified by Brecht himself while transforming John Gay's The Beggar’s Opera into The Three penny Opera. This is the secret of Jabbar Patel's (and P.L Deshpande's) success in the Theatre Academy's (Pone) Tin Paisacha Tamasha. In Dewan Gazir Kissa, Presented as part of the `Bohurupee festival’ at the Academy of Fine Arts on May 2, Asaduzzaman Noor or `Nagarik’ (Dhaka) falls between the two stools of acceptance and rejection.

This version of Mr. Puntila and his Man Matti is a rollicking farce till the intermission, comparing not unfavorably with Sekhar chatterjee's memorable Pontu Laha and making, as always happens when Brecht's text suffers very few distortions, all the necessary political points. Of course, the Mukhtiar (Judge) does not slip drunkenly off his chair or, waking up, rings a nonexistent bell. Dewan Gazi-Puntila is spared crashing his Studebaker into a telegraph pole. Chameli lacks the verve of Sly-Grog Emma, an inevitable consequence of cutting her lines Dewan Gazis two fiancees (The Telephonist has been serapped)- Lata (Chemist's Assistant) and Kusum (Milkmaid) - are not given rings off a curtain rod to serve as engagement rings. There is no ‘hiring fair’ skene to show Dewan Gazi outbidding a fat ‘capitalist’ over labourers' wages and mere narration of the event hardly sharpens the contrast with Dewan GAZI acting true to his class character when sober, Unlike Eva haughtily accepting suggestions from Mati to infuriate the Attache, Leili almost throws herself into Makhan's arms: neither do they play cards while making erotic noises for the police inspector's benefit. For all these debatable innovations, however, the basic fable emerges with commendable clarity and is what Brecht prizes most in theatre.

In the second half, Noor unaccountable introduces psychological motivation. The inspector threatens to kill Makhan and frame Dewan Gazi in a murder case if Leili declines to marry him, Noor does not seem to know the Brecht would not take his own daughter Barbara into the berliner Ensemble until she could cook meat broth well, or else Leili would not have been so casual about the tests to prove her eligibility as a poor man's wife. The rebuff to Dewan Gazi's fiancees, who wanted no more than a decent meal, is equally devoid of poignance. Noor gains little by sacrificing the strange poetry of Nocturne (Puntila and Matti making water in the yard at night) and by keeping Dewan Gazi on the groand while the old sozzler rhapsodizes about ‘the sky, the laks, the people and the forests’. Even if it would not have been practicable to kick a grandfather clock and a gun locker to pieces, and to use the wreckage together with a number of chairs to build Mount Hatelma on top of a big billiard table, surely Dewan Gazi could have stood on a chair on top of a table, the most devastating blow comes in the end when Sakina (a combination of the cook Laina and the parlourmaid Fina) delivers a Shen Testyle tirade against social oppression. Compared to this bit of politicization, the garrulous Sutradhar and the ‘Communist’ touch to Abed (Red Surkkala) are minor irritations.

Noor’s directorial vagaries are all the more regrettable because Ali Zaker’s Dewan Gazi and Nima Rahman’s Leili (a marvelous contralto) provide object lessons in serious chowning, Abul Hayat’s poker face sets off Makhan’s dry wit. The dancing one the other hand, is rather amateurish and the incidental music appears to have been borrowed from Tin poisar pala.

ব্রেশট নিয়ে প্রচলিত বিতণ্ডা ও দৃষ্টিকোণ এবং নান্দনিক অবস্থানসমূহ দেওয়ান গাজীর কিসসা নাটকের সূত্রেও উঠে এসেছে। দেওয়ান গাজীকে উপলক্ষ্ করে বাংলাদেশে ‘ব্রেশট’ নিয়ে নানা নান্দনিক অবস্থান প্রত্যক্ষ হয়ে ওঠে।

ড. বিপ্লব বালা ( This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it. ): নাট্যশিক্ষক, সমালোচক