Full premium theme for CMS
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর : নির্বাচিত ৫০ প্রযোজনা।। প্রসঙ্গ ইডিপাস
Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..

নাটক: ইডিপাস। মূলরচনা: সফোক্লিস। অনুবাদ: সৈয়দ আলী আহসান ও শম্ভু মিত্র। মঞ্চ-আলোকপরিকল্পনা ও নির্দেশনা: আহমেদ ইকবাল হায়দার। পোশাকপরিকল্পনা: নায়লা আজাদ নুপুর। আবহসংগীতপরিকল্পনা: সুজিত চক্রবর্তী। পোস্টার ডিজাইন: বিশ^জিত তলাপাত্র। প্রথম মঞ্চায়ন-বর্ষ: ১৯৯৫। একটি ‘তির্যক’ প্রযোজনা
[নিয়তির এক নির্মম আখ্যান ইডিপাস- শিরোনামে নাট্যসমালোচনাটি ছাপা হয় চট্টগ্রামের দৈনিকে। এবারের বিশেষ-সংখ্যায় নাট্যসমালোচনাটি পুনঃপ্রকাশ করা হলো]
মানুষ কি সর্বতোভাবে তার ভাগ্যের নির্মাতা, নাকি নিয়তির হাতে সে অসহায় এক পুতুল-মাত্র? এবং যদি দুটোর মধ্যে অর্ধসত্য লুকানো থাকে, তবে জীবনের প্রকৃত রূপ কী? তা কি সুখ ও আনন্দের, নাকি ব্যথা ও বেদনার? তাইত পুরাণকথায়-ইতিহাসে আমরা ভাগ্যকে দেখি অপ্রতিরোধ্য, নিয়তি সেখানে সর্বশক্তিমান। যদিও, মোটেই দুর্বল নন, তেমন মানুষের সাক্ষাৎও আমরা সেখানে পাই। বুদ্ধি, সাহস ও মমত্ববোধে সে পরম গৌরবদীপ্ত। তেমনি একজন ইডিপাস। গ্রিক-উপকথার থিবসের রাজা, যিনি নিষ্ঠুর নিয়তির ঘূর্ণিপাকে পতিত হয়ে ভোগ করেছিলেন তীব্র মানসিক-যন্ত্রণা। বিবেকের তাড়নায় নিজেকে অন্ধ করে ফেলেছিলেন। প্রাচীন গ্রিকরা বিশ^াস করত যে, কোনো কোনো মানুষ না চাইলেও অন্ধ নিয়তির ইঙ্গিতে পাপে লিপ্ত হয় এবং দেবতা সেই পাপাচারের শাস্তিও দেন। ইডিপাসের বিয়োগান্তক কাহিনি যেন তারই উজ্জ্বল নিদর্শন। ইডিপাসের এই বিয়োগান্তক কাহিনির আকর্ষণ এতই তীব্র যে, প্রাচীন গ্রিক নাট্যকার সফোক্লিস থেকে শুরু করে বিংশ শতকের মনঃবিশ্লেষক সিগমন্ড ফ্রয়েড অবধি এই অমর আখ্যানটি ব্যবহার করেছেন।
চট্টগ্রামের ‘তির্যক’ নাট্যদল মঞ্চে এনেছে প্রাচীন গ্রিক ট্র্যাজেডি সফোক্লিসের ইডিপাস নাটকটি। তির্যকের এই প্রযোজনাটির প্রথম মঞ্চায়ন হয় ১৯৯৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর, চট্টগ্রাম মুসলিম হলে। ২০০৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর কলকাতায় প্রদর্শনীর মাধ্যমে নাটকটির ৯২তম প্রদর্শনী সম্পন্ন হয় এবং নাটকটির নিয়মিত মঞ্চায়নের প্রথম পর্যায়ের প্রদর্শনীর সমাপ্তি হয়।
এ বছর তির্যক নাট্যদলের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে নাটকটি নব-কলবরে পুনর্নির্মাণ করে মঞ্চে আনল।
গ্রিক ট্র্যাজেডিতে মানুষের অপরিসীম হতাশা আর অসহায়ত্ব চিত্রিত হয়েছে। এরকম অব্যক্ত চিত্তদহনের ছবি পৃথিবীর অন্য ভাষার সাহিত্যে আগে দেখা যায় নি। গ্রিক ট্র্যাজেডির অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাহিনি ইডিপাস। যেখানে জীবন একই সঙ্গে নিষ্ঠুর এবং মহিমান্বিত। ভাগ্যাহত ইডিপাস, বিপর্যস্ত জীবনের মধ্যে তার বিধাতাকে প্রত্যক্ষ করেছেন, যে বিধাতা ভয়ঙ্কর। সত্যান্বেষণের পাশাপাশি অনিশ্চয়তার বিপুল তরঙ্গে ভেসে চলেন ইডিপাস তৃণখণ্ডের মতো।
মঞ্চসজ্জা, আলোকপাত, মুখোশের ব্যবহার সর্বোপরি অসাধারণ অভিনয়গুণ দর্শককে কিছুক্ষণের জন্যে হলেও নিয়ে গিয়েছিল সেই পুরাণের যুগে, ট্র্যাজিক চরিত্রগুলোর কাছাকাছি। এই নাটকে অভিনয়ে ও নেপথ্যে রয়েছেন- রমিজ আহমেদ, সুজিত চক্রবর্তী, শায়লা শারমিন, মাহবুবুল ইসলাম রাজিব, সুমন দে, শ্যামল বড়ুয়া, তন্ময়, শুভ রক্ষিত, রিপন বড়ুয়া, লাবনী বিশ্বাস, অমিত চক্রবর্তী, আহমেদ ইকবাল হায়দার, নঈম হাসান রণক, আবদুল্লাহ আল মামুন, মোহাম্মদ নুরুন্নবী ও প্রিয়তোষ দাশ।
আসমা বিথী: নাট্যসমালোচক