Full premium theme for CMS
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর : নির্বাচিত ৫০ প্রযোজনা।। প্রসঙ্গ: রাঢ়াঙ
Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..
নাটক: রাঢ়াঙ। রচনা ও নির্দেশনা: মামুনুর রশীদ। মঞ্চ-পোশাক-আলোকপরিকল্পনা: ফয়েজ জহির। আবহসংগীতপরিকল্পনা: পরিমল মজুমদার। রূপসজ্জা: নূরুল হক। পোস্টার ডিজাইন: হাশিম মাসুদ। প্রথম মঞ্চায়ন-বর্ষ: ২০০৪। একটি ‘আরণ্যক নাট্যদল’ প্রযোজনা
[রাঢ়াঙ নাটকের এই নাট্যসমালোচনাটি আরণ্যকের রাঢ়াঙ : ‘তাহাদের’ উৎকণ্ঠার কথা, উৎখাতের কাহিনি- শিরোনামে আবুল হাসনাত সম্পাদিত ‘কালি ও কলম’ পত্রিকায় ছাপা হয় বৈশাখ ১৪২৬ সংখ্যায়। ‘থিয়েটারওয়ালা’র এবারের বিশেষ-সংখ্যায় নাট্যসমালোচনাটি পুনঃপ্রকাশ করা হলো]
দলের নাম ‘আরণ্যক’ হলেও অরণ্যের দিনরাত্রি নিয়ে নাটক তৈরি করতে প্রায় সাড়ে তিন দশক সময় লেগেছিল ‘আরণ্যকে’র। ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে আত্মপ্রকাশ করেছিল রাঢ়াঙ। মামুনুর রশীদের রচনা ও নির্দেশনায়। পনের বছর হতে চললো। মাঝেমাঝে থমকে গেলেও রাঢ়াঙ-এর পথ চলা থামে নি। পঞ্চাশ, একশ’, দেড়শ’ মঞ্চায়নের ধাপ ছাড়িয়ে দুশ’র নিশানায় জোর কদমে এগিয়ে চলেছে রাঢ়াঙ। এই সমালোচক এ নাটক প্রথম দেখেছিলেন ২০১১’র ডিসেম্বরে কলকাতার অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে, ‘নান্দিকারে’র জাতীয় নাট্যমেলায়। এরপর ২০১৫’র ৩১ জুলাই ঢাকায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল হলে, ‘আরণ্যক নাট্যদলে’র আয়োজনে রাঢ়াঙ উৎসব ২০১৫-এর মঞ্চে। সেদিন এই নাটক দেড়শ’ মঞ্চায়নের মাইলফলক ছুঁয়েছিল। তৃতীয়বার দেখা হলো ২০১৯-এর ১৭ ফেব্রুয়ারি কলকাতার তপন থিয়েটারে, ‘অনীকে’র গঙ্গা যমুনা নাট্য উৎসবের সমাপনী সন্ধ্যায়।
মনে হলো যত দিন যাচ্ছে, তত ধার বাড়ছে রাঢ়াঙ-এর। ভারেও কাটছে। নগরসভ্যতা যাদের আদিবাসী বলে, মূলবাসী বলে, বনবাসী বলে, উপজাতি বলে বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলে আলাদা করে দেয়, নিজের অজান্তেই অপর নির্মাণের খেলায় নামিয়ে দেয়, সেই তাহাদের কথা নিবিড় উষ্ণতায় মুড়ে ও সামাজিক প্রজ্ঞায় জুড়ে মঞ্চে এনেছে ‘আরণ্যক’। যে সমাজসম্পৃক্তি এই দল তো বটেই, দলের কর্নধার মামুনুর রশীদের নাট্যনির্মাণের মোহরছাপ, সেই বোধের এক প্রার্থিত মাত্রায় পৌঁছতে পেরেছে রাঢ়াঙ।
বলা ভালো যে রাঢ়াঙ এর ভরকেন্দ্রে আছেন বাংলাদেশের বরেন্দ্র অঞ্চলের সাঁওতাল আদিবাসীরা। ভুল হলো। শুধু তো বাংলাদেশ নয়। এমনকি পশ্চিমবঙ্গও নয়। ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে যেসব অরণ্যচারী জনজাতি বসবাস করেন, পৌরাণিককালে যাদের ওপর খবরদারি কায়েম করতে অযোধ্যার জনৈক যুবরাজকে নানান কায়দাকানুন থেকে রকমারি জোরজুলুম কী না করতে হয়েছিল, ঔপনিবেশিককালে যাদের দাপুটে প্রতিরোধে বারেবারে কেঁপে গেছে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের অশ^মেধের ঘোড়া, সেই তারা আজও লড়ে চলেছেন অরণ্যের অধিকারের জন্য। ওড়িশা ছত্তিশগড় মহারাষ্ট্রে। শোনা যায় সাঁওতাল তো বটেই, গারো প্রভৃতি উপজাতির মানুষ খুব সুখে নেই বাংলাদেশে। নগরসভ্যতা যাদের ধামসা মাদল আর পলাশ মহুয়ার ইজারাদার ঠাউরে খালি তাদের জমিজিরেত নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, যাদের চাষের মাঠ বনের কাঠ নরম নদী সবুজ পাহাড় সব লুটপাট করে নিচ্ছে শিল্পসভ্যতা, যাদের ঠেলতে ঠেলতে অস্তিত্বের কিনারায় পাঠিয়ে দিয়েছে রাষ্ট্র, যাদের তাঁবে আনতে ভারী জুতো মশমশিয়ে ছুটে আসছে শত সহস্র বন্দুকের নল, তাদের হয়ে তাদের কথা বলতে চেয়েছে রাঢ়াঙ। যে বিশ্বাসের ভিতে দাঁড়িয়ে ‘আরণ্যক নাট্যদল’ একদিন বলেছিল ‘নাটক শুধু বিনোদন নয়, শ্রেণী সংগ্রামের সুতীক্ষ্ম হাতিয়ার’ তাতে যে ফাটল ধরেছে তা বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। রাঢ়াঙ ঐ ফাটলের কথা মাথায় রেখেও মৌল ঐ আদর্শকে শিকেয় তুলে রাখে নি। বহুত্ববাদকে সামনে রেখে যে বাংলাদেশ এগোনোর কসম খেয়েছে সেখানে আদিবাসী সংস্কৃতির বিকাশ কোন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে তাকে যুক্তি দিয়ে বুঝতে চেয়েছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের সাঁওতালদের হালফিলের অভিজ্ঞতাকে প্রতিপাদ্য করলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম, উত্তর-পূর্ব মধ্য-পূর্ব বাংলাদেশের পাহাড়িয়া এলাকার আদিবাসীদের মুখপাত্র হয়ে উঠেছে রাঢ়াঙ।
রাঢ়াঙ- এর গতি পাহািড় ঝোরার মতো। চেনা ছকে বাঁধা নয়। এঁকেবেঁকে পথ কেটে চলেছে। দৃশ্য ও সংলাপ রচনার যে পশ্চিমিছাঁদ মামুনুর রশীদের আর পাঁচটা নাটকে থাকে রাঢ়াঙ তার থেকেও আলাদা। সত্যি বলতে কী, কথা নয় আজকালকার কেতায় যাকে সিনোগ্রাফি বলি সেটাই এ নাটেকর তুরুপের তাস। থার্ড বেল পড়তেই তার খেল শুরু। এরই মধ্যে তাদের পেছনে ধামসা মাদল নিয়ে, হারমোনিয়াম নিয়ে গুছিয়ে বসে গেছেন একদল বাজানদার। আলগোছে। তাদের মধ্যমণি পরিমল মজুমদারÑএ নাটকের সংগীতকার। তমালিকা কর্মকার, এ নাটকের কোরিওগ্রাফার। অনুমান করি তিনিই ‘আরণ্যকে’র কুশীলবদের শরীরে আদিবাসী জীবনের হিল্লোল বুনেছেন। তাতে ভর দিয়ে তুরীয় মেজাজে মঞ্চে ঢুকে পড়েন একদল নারীপুরুষ। সোমত্ত। মেয়েদের পরনে হলুদ-সবুজ-সাদা কাপড়। আঁটো করে বাঁধা চুলে জংলি ফুলের বাহার। মরদদের সাদা খেটো ধূতি আর ফতুয়া। তাদের গলায় ঝিম ধরানো সুর, দেহে মাতাল ছন্দ। লেগেদ লেগেদ মেনা বোনা/জুয়ানকো জুয়ানকো/লেগেদ লেগেদ বাহাকো/লেকাগে ঢাড়তিমা/ঢাড়তিমা বাগান তালারে। এ কোনো প্রমোদগীতি নয়। দৈনন্দিনজীবনের সংগীত। আক্ষরিক অর্থে গণসংগীত। কাদের? সে কথা শোনা যায় খঞ্জনীর তালে তালে ফুটে-ওঠা কথকের বয়ানে। আত্রাই মহানন্দা আর পদ্মা যেখানে বয়ে চলে নিরন্তর, তার পাশে ছোট ছোট মাটির ঘরে প্রদীপ জ¦লে, সেও মাটির প্রদীপ। সেখানে কালো খোদাই করা চোখের, ঘন কোঁকড়া চুলের, মেদহীন, রুক্ষ কিছুটা যাদের বাস, যারা আবাদে আবাদে ফসল ফলায় কিন্তু ঘরে আনতে পারে না, জমিদার-জোতদারদের এঁটোকাঁটাতেই যাদের দিন গুজরান, যাদের নেশা জোগায় হাড়িয়া আর মহুয়ার রস, সেই তারা একদিন তির-ধনুক হাতে গর্জে উঠে লড়াই করেছে বারেবারে, কামানের গোলার সামনে জান কবুল করেছে। হেরেছে। মার খেয়েছে। মরে নি। সেই তাহাদের উৎকণ্ঠার কথা, উৎখাতের কাহিনি রাঢ়াঙ।
ঠিক কোন তাহাদের কথা? মামুনুর রশীদ চিহ্নিত করেছেন আত্রাই মহানন্দা পদ্মা বিধৌত বরেন্দ্রভূমিকে। এই এলাকার সাঁওতালদের আদিবাসী বলতে কারো কারো বাধে। সিধু কানু বিরসার বীরভূমি থেকে একটু দূরে বলে তো বটেই, পৌনে দুশো বছর আগে ইংরেজদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে ছোট নাগপুর থেকে উচ্ছেদ হবার আগে সাঁওতালদের পা পড়ে নি বলেও বটে। তবু এখানে দানা বেঁধেছিল তেভাগা আন্দোলন। ইন্ধন জুগিয়েছিল কমিউনিস্ট পার্টি। সঙ্ঘবদ্ধ হয়েছিল নাচোল বিদ্রোহ। হেই সামালো হেই সামালো করে রক্তে বোনা ধান- এর তিন ভাগের দুভাগের হক শুধু রাম-রহিমের বাছারাই চায় নি, চেয়েছিলেন কৃষিজীবী সাঁওতালরাও। সেটা ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ। রাঢ়াঙ শুরু হয়েছে সাদা হাতির কালা মাহুত হয়ে ওঠা রাষ্ট্রের নির্মম হাতে ঐ প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে যাবার কবছর বাদে। নাচোলে এই গ্রামের নাম তানোর। লুনকু রাম, শেফালি রানি, বাবু রাম, সুমতি রানি টুডু, সোনা হেমব্রম, পূন্য চন্দ্র মারাণ্ডি, রামচাঁদ মুর্মু, দীনেশ সরেন, রবীন সরেন সমেত আরও অনেকের সাঁওতালের সামনে শ্যামলী টুডু (তমালিকা কর্মকার/নিকিতা নন্দিনী) বলে উঠছেনÑসবাই চলে গেল তো রানি মা-ও চলে গেছে। রানি মা কথাটা বীজমন্ত্রের মতো আমাদের কানে ঢোকে। তৎক্ষণাৎ মনে পড়েন ইলা মিত্র (১৯২৫-২০০২)। নাচোল বিদ্রোহ আর যিনি সমার্থক। পাকিস্তান পুলিশের নৃশংস অত্যাচারে ভেঙে চুরমার ইলাকে কলকাতায় পাঠাতে হয়েছিল ১৯৫৪ তে। ইলা আর ফিরে আসতে পারেন নি স্বদেশে। সাঁওতালদের কেউ সংঘর্ষে প্রাণ দিয়েছিলেন, কেউ রাজশাহীতে জেল খাটছিলেন। বাদবাকিদের জমিজিরেতসহ উৎখাত করেছিল। কোথায় যাবেন? প্রশ্নের উত্তর পেতে মালদা হয়ে কলকাতায় পৌঁছানো সম্ভব ছিল না। নাচোলের তানোর ছেড়ে নওগাঁর ভীমপুরে গিয়ে নয়া আবাদ গড়ে বিশ^ম্বর জোতদারের বাড়িয়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতির হাত ফেরানো। এই স্্েরাতের বাঁকে শুরু হয় রাঢ়াঙ।
কথার পিঠে কথা চলে। পথ চলা শুরু হয়। বাদ্যি বাজে। পথে সাঁকো আসে। কেউ এক লাফে পেরোয়। কেউ কেঁদে-ককিয়ে। অন্তঃসত্ত্বা সুমতি টাল সামলাতে পারে না। তরিয়ে দেয় আরেকজন। কুশীলবদের নিপুণ নড়াচড়ায় ছবির পর ছবি তৈরি হয়। আবার পথ চলা। ট্রেন চলার ঝমাঝম আওয়াজ করে বাজানদারের দল। নড়ে ওঠে সারবদ্ধ শরীর। নিপুণ ছন্দে বাক্সময় হয়। তারপর এক সময় হইহই করতে করতে দুলতে দুলতে পৌঁছে যায় গন্তব্য ভীমপুরে। আমাদের চিত্রার্পিত রেখে দেশান্তরী হয় একদল সাঁওতাল। আধিয়ারির জুলুম ছেড়ে কাগজ-খাজনায় বাঁধা নিজের জমাজমি চাষের নেশায় বুঁদ হয়।
আমরা যারা তেভাগা আন্দোলনের কথা একটু আধটু জানি, নাচোলের কৃষিবিদ্রোহের কদর করি, অথবা গোলাম কুদ্দুসের ইলা মিত্র পড়েছি, জেনেছি ইলা মিত্র রাজশাহী জেলে।/স্বামী তাঁর শান্ত ঋজু দৃঢ়/ফেরারী এখনও পাকিস্তানে,/উভয়ের শিশুপুত্র কোথা/মাতাপিতা সঙ্গহীন বাড়ে। এই তীব্র উচ্চারণ কিংবা সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামানের নাচোলের রাণী দেখেছি, তাদের কাছে এমন নাটকের আবেদন অনিবার্য। আর যারা আদিবাসী মূলবাসী বনবাসী জনজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের প্রান্তিকতা নিয়ে জানেন বা পড়েন, তাদের কাছে রাঢ়াঙ মেহনতি মানুষের সংগ্রামী ইশতেহারের মতো।
প্রায় দুঘণ্টার নাটকের বাদবাকি অংশ ঐ ভীমপুরে। বিচিত্র চরিত্রের সমাবেশ সেখানে। একদিকে জমির মালিকানা নিয়ে সেয়ানে সেয়ানে লড়া বিশ^নাথ জোতদার (কাজী আল আমিন) আর হাতেম আলী (দিলু মজুমদার)। এ জমি আসলে বলিহারের জমিদারের ছিল। দেশভাগের ধাক্কায় কুপোকাত জমিদার ১২০০ একরের সম্পত্তি কার্যত ছেড়ে ভারতে থিতু হয়েছেন। ঐ জমির পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি নিয়ে সাঁওতালদের বসাচ্ছেন বিশ^ম্ভর। ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হাতেম আলী এক কথায় খবরদারি ছেড়ে দেবার বান্দা নন। তাঁর সাফ কথা, হিন্দুর সম্পত্তি যদি হিন্দুই নেয় তাহলে লাভটা কী হলো? হিন্দুস্থান-পাকিস্তান করে কী হলো? তাদের দিকে হেলে আছেন তফিজ দারোগা (চঞ্চল চৌধুরী/রেজওয়ান পারভেজ) আর মুনশি আবু বকর (আ খ ম হাসান/কৌশিক সাহা)। তাদেরকে রাষ্ট্রের কলের পুতুল করে গড়েছেন নাট্যকার। বিউগল বাজিয়ে মার্চপাস্ট করিয়ে তাদের হাসির খোরাক জোগানোর পাশাপাশি এই উপমহাদেশে পোলিসিং সিস্টেমের দিকে নাট্যকারের তীব্র কটাক্ষ আমাদের চোখ এড়ায় নি। এড়ায় নি বিশ^ম্ভরের পিছে ঝুলতে থাকা হলদে লেজ বা তার সাগরেদ গদাইয়ের (আরিফ হোসেন আপেল) ওপর-চালাকি। এই দুই হুজুরের মধ্যে সূঁচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরোনোর চেষ্টা সাঁওতালদের। শ্রেণিসংগ্রামের দরবারি বয়ান।
না। জয় করার জন্য সারা দুনিয়া পড়ে থাকলেও সর্বহারা সাঁওতালদের জন্য কোনো অলীক পৃিথবী গড়েন নি নাট্যকার। পাকিস্তান জমানা গেছে। বাংলাদেশ হয়েছে। জমির পাট্টা পাবার সম্ভাবনা মরীচিকার মতো তাড়া করে ফিরেছে সাঁওতালদের। এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে। যে সুমতি রানি (শামীমা শওকত লাভলী) মরদের মৃত্যুশোককে বুকে চেপে অনাগত সন্তানকে গর্ভে নিয়ে কতক বের্টোল্ট ব্রেখশটের ককেশিয়ান চকসার্কেল-এর নায়িকা গ্রুশার মতো নয়া আবাদে এসেছিলেন, তিল তিল করে বড় করেছিলেন বাপ-হারা সন্তানকে, এই সন্তান অর্থাৎ আলফ্রেড সরেনকে (আবু হাশিম মাসুদুজ্জামান) সামনে রেখে অধিকার লাভের লড়াই গড়ায় আইনি পথে। ঢাকায় এসে ব্যারিস্টারের (মামুনুর রশীদ/তুষার খান) শরণাপন্ন হয় সাঁওতালরা। জাতিসংঘের সনদে ধারামাফিক আদিবাসীদের দখলি স্বত্বের স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা চলে। তাতেও ফুরোয় না লড়াই। পাকা ধানে মই দেবার শোধ তুলে আলফ্রেডকে নিকেশ করে জোতদার, প্রেসিডেন্টের উত্তরপুরুষ।
নওগাঁতে এক দল দুষ্কৃতির হাতে আলফ্রেড সরেনের মৃত্যু বেশিদিন আগেকার ঘটনা নয়। গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডারের থার্ড মিলেনিয়ামের সূচনাবর্ষে। এ নাটকের ক্লাইমেক্সই যে এর স্টার্টিং পয়েন্ট এ-ও বুঝতে দেরি হয় না। কিন্তু এটুকু রসদ নিয়ে মামুনুর রশীদ যা করেছেন তা কেবল সাঁওতাল বা অপরাপর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দাবিদাওয়ার দিকে ঝোল টানা নয়, সাংস্কৃতিক-আধিপত্যবাদ ও নিম্নবর্গীয় অস্মিতার বিরোধভাস চেনানো নয়, এমনকি শ্রেণিসংগ্রামের এক আপাত মামুলি ছককে মহত্তর ব্যঞ্জনায় তুলে ধরা নয়। বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী ইতিহাসের গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ যে কত কত স্মল ন্যারেটিভকে পিষে মারছে সেদিকে আমাদের নজর ঘুরিয়েছে রাঢ়াঙ। এক বহুত্ববাদী সমাজে আদিবাসীদের সমানাধিকারের পক্ষে সওয়াল করছে। মামুনের নাট্যকৃতির এ এক বিরল শীর্ষ।
তাঁর সমাজমনস্কতার অভিজ্ঞান এ নাটকের ছত্রে ছত্রে। দু-তিনটে উদাহরণ এত সুক্ষ্ম অথচ এত অমোঘ যে সমালোচনায় না এলে অসম্পূর্ণতার দায়ে পড়তে হবে। নওগাঁর বুকে নয়া আবাদ গড়ে তোলার পর জোতদারের খাতায় নাম উঠছে সাঁওতালদের। টিপসই দিয়ে টাকা নিচ্ছেন তারা। একে জিভে আটকাচ্ছে, তায় মানে বাধছে, তাই সোনা হেমব্রমের নাম ইচ্ছে করে বেঁকিয়েচুরিয়ে বলছেন জোতদারের ভাগ্নে গদাই। চোয়াল শক্ত হচ্ছে সোনা’র (সাঈদ সুমন)। বুক চিতিয়ে বারেবারে জানান দিচ্ছেন ঠিক উচ্চারণ। টিপসই নয়, স্বাক্ষর দিচ্ছেন। সই করতে গিয়ে পূন্য (সাজ্জাদ সাজু) জিজ্ঞেস করছেন বাংলা ইংরেজি কোনটায় দেবো? উত্তর-ঔপনিবেশিককালে সাঁওতালরা যে শিক্ষাকে ক্ষমতায়নের হাতিয়ার করতে চেয়েছেন এমন অহংকার তারই সূচক। ঐ শিক্ষাকে অন্ধের ষষ্ঠি বানিয়ে ক্ষমতায়-কায়েম-ধারার সঙ্গে তার টক্কর বাধা অস্বাভাবিক নয়। সাংস্কৃতিক-সংঘর্ষের এমন আরও অনেক চোরা ইশারা ছড়ানো আছে এ নাটকের দৃশ্যে দৃশ্যে। খ্রিস্টান মিশনারিদের কার্যকলাপ নিয়ে নাট্যকারের অবস্থান একটু একপেশে হলেও সাঁওতালদের মধ্যে জানগুরু (হাবিব আহমেদ সঞ্জীব) বলে এক বিকলাঙ্গ চিকিৎসককে রেখেছেন মামুনুর যিনি পারস্পরিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মাচারের মিলজুল ঘটিয়ে টিকে থাকা এক অদ্ভুত লোক। প্রান্তিকদের মধ্যে ইনি প্রান্তিক। সাঁওতাল হয়েও যেন সাঁওতাল না। নাটকের একরৈখিক চলনে এ এক স্বকৃত ব্যাঘাত। এক পর্যায়ে সেই জানগুরু কীভাবে যৌন ঈর্ষায় কাতর হয়ে শ্রেণিশত্রুর দলে ভিড়ে পড়েন তা দেখাতে গিয়ে কোনো পক্ষপাত করেন নি মামুনুর। এই সূক্ষ্ম ভারসাম্য এই নাটককে যেমন জটিল করেছে, তেমন করেছে গতিময়। নাটকের একেবারে শেষ দিকে ঢাকায় এক রইস উকিলের দফতরে এসে বিশ্বরূপ-দর্শন হচ্ছে আলফ্রেড আর রবীনের (মোঃ মুজফফর হোসেন/তাজউদ্দিন তাজু)। ব্যারিস্টারের তরুণ অ্যাসিস্টেন্ট কস্মিনকালে রানি মা’র নাম শোনে নি। রানি বলতে সে দ্বিতীয় এলিজাবেথকেই সার বোঝে। তাকে মুখ ঝামটা দিয়ে ব্যারিস্টার বলে ওঠেন, তোমরা মনে করো তোমাদের জন্মের আগে পৃিথবীটা ছিল না? দেশটা ছিল না? তার ইতিহাস জানতে হবে না? নাটকের শুরুতে সিপাহী বিদ্রোহের ইতিহাস না জানার জন্য মুনশিকে এক হাত নিয়েছিল দারোগা। ইতিহাস বিমুখতার সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। এভাবেই জাতীয়তাবাদী ইতিহাসের মহাসড়ক বাঁধতে গিয়ে কীভাবে চাপা পড়ে যায় প্রান্তিকতার অগুনতি উপাখ্যান তা খুব কম কথায় অথচ খুব কড়া সুরে বলতে পেরেছেন মামুনুর।
এ নাটকে গান আছে কিছু। সাঁওতালদের জীবন থেকে নেয়া। আর আছে চেনাশোনা বাংলাগানের অনুষঙ্গ। মামুনুর সেসব গুঁজে দিয়েছেন সংলাপের ভেতরে। ইন্টারটেক্সচুয়ালিটির গভীরে শিকড় গেড়েছে এমন প্রয়োগ। একটা নমুনা দিই। ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্টের পা পড়েছে ভীমপুর পুলিশ চৌকিতে। দারোগা বলছেন, ঐ আসে/ঐ অতি ভৈরব হরষে। জলসিঞ্চিত ক্ষিতিসৌরভরভসে/আসেন প্রেসিডেন্ট সাহেব/আসেন। এ যেন রবীন্দ্রনাত ঠাকুরের ঋতুসংগীতের চমকপ্রদ উদ্ধৃতি নয়, এর দৌলতে এক ঢিলে দুই পাখি মারছেন নাট্যকার। গলদঘর্ম হাতেম আলীর আগমনের এক মজাদার ধারাবিবরণী দেবার পাশাপাশি কতক উৎপল দত্তের কায়দায় পপুলার কালচারের কাছে না পেতে এক ধরনের কালচারালএলিটিজমের ইশারা দিচ্ছেন সামাজিকস্তরের তরবেতর ঘটিয়ে দিচ্ছেন। অন্যত্র রামপ্রসাদী গান ‘চাই না মা গো রাজা হতে, কথার সামান্য অদলবদল ঘটিয়ে পুলিশ সিস্টেমের ভেতরকার পচনকে বিদ্রুপ করেছেন মামুনুর। বাংলার সমন্বয়ী চেতনা ও কৌমজীবনের বুক থেকে ঢুঁড়ে আনা এমন সাংগীতিকতা এ নাটককে আরও আদরণীয় করেছে।
এমন নাটককে ধারণ করা চাট্টিখানি কথা নয়। আদিবাসীদের হয়ে কথা বলা আর আদিবাসী হয়ে ওঠায় ফারাক আছে অনেক। কালচারাল রেপ্রেজেন্টেশনের মাপে উনিশ-বিশ ঘটলে কত কুৎসিত অশ্লিল স্টিরিওটাইপ পয়দা হয় তা চক্ষুষমান ব্যক্তিমাত্রেই জানেন। ‘আরণ্যকে’র কুশীলবকুল মঞ্চে এসেছেন সাঁওতালদের প্রতিনিধি হয়ে, সাঁওতাল হয়ে নয়। আর পাঁচটা সিনেমা-থিয়েটারের মুখে কালো রঙ মেখে বা মেকি ঢঙ রেখে সাঁওতাল সাজেন নি তারা। সংখ্যাগুরুর সংস্কৃতির শর্তে সংখ্যালঘুকে গড়েন নি। নি¤œবর্গীয় সংস্কৃতির অস্মিতার পক্ষে সওয়াল করেছেন, তার দোসর হতে চেয়েছেন। তাদের আপাত প্রাকৃত-লোকাচারের মধ্যে যে পারফরমেন্স স্টাডিজের মালমশলা আছে তাকেও মর্যাদা দিয়ে মঞ্চে এনেছেন। যে রাতের দৃশ্যে শ্যামলী আর পূন্য সংসার পাতছেন তার তুল্য প্রেমবিহ্বল মুহূর্ত পনেরো আনা প্রেমের নাটকে বিরল। আদিম কৌমদাম্পত্যে নারীর সক্রিয় ভূমিকা ফুটিয়ে তুলতে ‘আরণ্যকে’র ঝানু অভিনেত্রী তমালিকা খুবই আবেদনময়ী হতেন। এখন তাঁর জায়গা নিয়েছেন নিকিতা নন্দিনী। পূর্বসূরির কেটে রাখা পথেই পা ফেলেছেন তিনি। সাজ্জাদ রাজু এ দৃশ্যে যোগ্য সঙ্গত করেছেন। এ নাটকের আলোর নকশা করেছেন সহকারী নির্দেশক ফয়েজ জহির। আধো আলোছায়াতে ঐ প্রেমের দৃশ্যায়নে নীলচে আভার অমন মন-কেমন-করা প্রয়োগ যে কী আশ্চর্য রসায়ন সৃষ্টি করেছে তা শব্দে বোঝানো অসম্ভব। আরও অসম্ভব সুমতির ছেলে আলফ্রেডের ভ্রুণাবস্থা থেকে ঝাঁকরা চুলের বাবরি জোয়ান হয়ে ওঠার অবিশ্বাস্য দৃশ্যকল্প। দ্রিম দ্রিম রব ভেসে আসছে। পাশাপাশি ব্যাপটিজম চলছে। মা আর ছা দুজনকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে সাঁওতাল পল্লী। মাত্র কয়েক মিনিট। ওরই মধ্যে বড় করে তোলার আর বড় হয়ে ওঠার বিভিন্ন পর্যায়ের শরীরী অভিনয় করে চলেন লাভলী আর মাসুদ। প্রতি পল অনুপল বাঁধা অনুশীলনের ছন্দে। পতন হয় না। দৃশ্যের শেষে আলফ্রেডরূপী মাসুদ যখন বুক চিতিয়ে ধনুকের ছিলা টানটান করে জ্যাবদ্ধ তির হাতে আমাদের দিকে তাকান, আমাদের রোমহর্ষণ হয়। শিহরণ জাগে নাটকের একেবারে শেষে চক্রব্যূহে অভিমন্যুর মতো আলফ্রেডের একলা লড়াই দেখে। এমন স্মৃতিধার্য সিনোগ্রাফি রাঢ়াঙ কে অতুলনীয় করে তুলেছে।
এ নাটকে মঞ্চ বলতে দিগন্তপ্রসারী এক পরিসর। মঞ্চসামগ্রীর বাহার নেই। অনেক তির আর ধনুক। দুটো ভাঁজ করা কাঠের তক্তা যাদের আড়াআড়ি সাজালে খ্রিস্টান ক্রস হয়ে যাচ্ছে। আর আছে সেই হলদে লেজ। অবমানবের পিছনে লেজ গুঁজে দেবার রেওয়াজ এমনিতে চালু আছে। রাঢ়াঙ-এ লেজ ঝুলছে জোতদার আর ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্টের পেছন থেকে। ক্ষমতার সঙ্গে লেজ গজানোর যে সম্বন্ধ আমাদের প্রবাদবচনে চলে এসেছে তাকেই চাক্ষুষ করিয়ে ছেড়েছেন মামুনুর।
দেখেশুনে মনে হতে পারে থানার ভেতরে তো বটেই, থানার বাইরেও এত কৌতুকের আমদানি করায় নাটকের গেরামভারী-চাল মাটি হলো না তো? হলো না। কারণ, নির্দেশক মামুনুর রশীদের পরিমিতিবোধ। ‘আরণ্যকে’র শ্রেণিগত অবস্থান থেকে যে ধরনের মানুষকে শ্লেষে বিদ্ধ করতে চেয়েছেন নাট্যকার তাদের মতিগতির নানান অসঙ্গতিকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর জন্যই কৌতুকের আয়োজন হয়েছে। নচেৎ নয়।
শ্লেষবিদ্ধ হয়েছেন ধর্মব্যবসায়ীরাও। রাঢ়াঙ-এ দু-দুবার এক পাদ্রির (আমানুল হক হেলাল) আগমন ঘটেছে। সাঁওতাল মহল্লায় খ্রিস্টান মিশনারিদের আনাগোনা অনেক দিনের। নতুন কিছু নয়। নতুনত্ব ‘আরণ্যকে’র উপস্থাপনায়। পাদ্রি আসছেন নাসিক্যীভবন-প্রসূত এক দুর্বোধ্য অব্যয় সহযোগে। তীব্রগ্রামের সেই উচ্চারণ যেন সম্মোহনে বাঁধছে সাঁওতালদের। তার কথা কম। কাজ বেশি। খটাং করে কাঠের তক্তাদুটোকে আড়াআড়ি করে মুড়ে ঘটাং করে এক সাঁওতালের দুহাতে গজাল গেঁথে দেবার মধ্যে যে সমীহজনক-দৃশ্যের প্রবর্তন হয়েছে তা কেবল গির্জার সানডে প্রেয়ার সার্ভিসের দুরন্ত ছবি নয়, তা বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্ট থেকে দু-তিন অনুচ্ছেদ আউড়ে নেবারও ফিকির। ধর্মকে আফিমের সঙ্গে মিলিয়েছিলেন কার্ল মার্কস। এই আফিমওয়ালা এসেছেন ভোলাতে। খ্রিস্টান মিশনারি-মাত্রেই ধর্মান্তরকরণে উঠেপড়ে লেগেছেন এমন সাধারণীকরণ সব সময় কাম্য নয়। সাঁওতালদের জীবনযাত্রায় তাদের অবদান নেহাৎ তাচ্ছিল্যজনক নয়। ‘আরণ্যক’ ও রাঢ়াঙ ক্ষুরস্য ধারায় চলছে।
১৯৪৭-এর পর থেকে পূর্বপাকিস্তানে ও বাংলাদেশে হিন্দু-সম্প্রদায়ের মানুষের দাপট আর দেমাকের ফিকে হয়ে আসার পাশাপাশি তাদের প্রান্তিকতা নিয়েও ভেবেছে এবং ভাবিয়েছে রাঢ়াঙ। পাকিস্তান আমলে মুসলমানদের একাংশের কাছে তারা যে পবিত্র আমানত এ কথা থানার অন্দরে চাপা থাকে নি। আর সংখ্যাগুরুর সঙ্গে আপোষ করে, পুলিশ-প্রশাসনের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে প্রান্তিকদের শোষণ করে ছিবড়ে বানানোর তাল করাই যে নতুন প্রজন্মের হিন্দু-জোতদারদের কপালে লেখা আছে তা পড়তে ভুল করেন নি গদাই। সমাজবাস্তবতার এই রুক্ষ বদলকে নিজের মধ্যে এনে ফেলেছেন অভিনেতা আপেল।
যূথবদ্ধতায় যে সিদ্ধি অর্জন করেছে ‘আরণ্যক’ তাতে ব্যক্তিগত স্ফূরণ এ ধরনের সমালোচনায় উহ্য রাখাই শ্রেয়। তবু হাতেম আলীর জটিল চরিত্রায়নে বর্ষীয়ান দিলু মজুমদার যে আজও স্তম্ভিত করে চলেছেন এ কথা না বললেই নয়। আর বলতেই হয় যন্ত্রীদের কথা। তুরুপের সব তাস দেখিয়েই ময়দানে নেমেছে ‘আরণ্যক’। এই যিনি মঞ্চে দাপাচ্ছেন তিনিই ফিরে ফিরে বাদ্যি বাজাচ্ছেন। লাইভ মিউজিকের হদ্দমুদ্দ হচ্ছে। প্রসেনিয়ামের আড়াল থাকলে আমাদের আস্থা অর্জনের সুবিধের চাইতে অসুবিধেই হতো বেশি। খুবই তাৎপর্যপূর্ণভাবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল হলের নমনীয় স্থাপত্যকে উশুল করে এরিনা থিয়েটারের পরিসরে রাঢ়াঙ-কে গড়েছেন মামুনুর রশীদ। সেখানে এ নাটক দেখা এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। আবার প্রসেনিয়াম ছাড়া যেখানে গতি নেই, সেখানেও অপ্রতিভ লাগে না ‘আরণ্যকে’র কুশীলবদের। এই অনায়াস পটুতার জন্য কোনো সাধুবাদই যথেষ্ট নয়।
তবে হিন্দু-মুসলমান-খ্রিস্টান নয়, জমিদার-জোতদার আঁতাত বা রাষ্ট্রযন্ত্র নয়, সাঁওতাল বিদ্রোহের পর থেকে ক্রমশ জলজঙ্গল হারিয়ে, ভিটেমাটি খুইয়ে আজ প্রান্তিকতার কোন গভীর খাদের ধারে এসে দাঁড়িয়েছেন এ নৃতাত্ত্বিক বিচারে এ তল্লাটের খাস বাসিন্দারা, তাদের আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন নয়, এতটুকু, একচিলতে স্বপ্ন কীভাবে ভেঙ্গে খানখান হয়ে যাচ্ছে তার বেদনার্ত উচ্চারণ রাঢ়াঙ। ‘আরণ্যক নাট্যদল’ তথা মামুনুর রশীদের নন্দনযাত্রার উজ্জ্বল এক নীলমণি।
অংশুমান ভৌমিক ( This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it. ): ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক। ভারতের প্রথমসারির দৈনিক ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ আর বাংলা মাসিক ‘কৃত্তিবাস’ এর নাট্যসমালোচক