Full premium theme for CMS
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর : নির্বাচিত ৫০ প্রযোজনা।। প্রসঙ্গ: অ্যাম্পিউটেশন
Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..
নাটক: অ্যাম্পিউটেশন। রচনা: ইয়ংস বিয়র্নবো।। অনুবাদ: রায়হান আখতার। মঞ্চপরিকল্পনা ও নির্দেশনা: কামালউদ্দিন নীলু। আলোকপরিকল্পনা: কুর্ট হারমেনশেন। পোশাকপরিকল্পনা: আনোয়ার হোসেন চৌধুরী। আবহসংগীতপরিকল্পনা: আহসান রেজা খান (তুষার)। প্রথম মঞ্চায়ন-বর্ষ: ২০০৮। একটি ‘সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটার’ প্রযোজনা
[নাট্য-অবলোকন অনেকান্ত-অন্যতম এক পর্যবেক্ষণ- শিরোনামে একটি সালতামামি ছাপা হয় ‘থিয়েটারওয়ালা’র ২৫তম সংখ্যায় (২০০৮ সালে প্রকাশিত)। সেখান থেকে অ্যাম্পিউটেশন নাটকের অংশটুকু এবারের বিশেষ সংখ্যায় পুনঃপ্রকাশ করা হলো]
দেশ-কালে বাঁধা থাকে তো মানবসমাজ, তাবৎ সৃজন-মনন বাঁচন-মরণ তার। সরল-সিধা বাস্তবিকরূপে তার প্রকাশ-পরিচয় সর্বদা তবে মেলে না। শিল্প-নন্দনকলায় তার আদল বহুবিচিত্র রূপে-বিরূপে সদা রূপান্তরিত। টেকনিকের সেই বিচিত্রবীর্য বহুরূপ রূপায়ণে সৃজনের মাহাত্ম্য। স্বয়ং বিষয় বা ভাব-আখ্যানও এমত পুনর্নবায়নশীল হয়ে ওঠে। ‘অপূর্ব’ নব বা নবীনতা সৃজনকলার মৌল বা সামান্য লক্ষণ বলে চিহ্নিত হয় অবিসম্বাদিতভাবেই। কোনো দেশ-কালেই তা নিয়ে মতদ্বৈধতা নেই।
বাংলাদেশের থিয়েটারে দেশ-কালসংলগ্নতা প্রাথমিক সরল পর্ব পার হয়ে ক্রমে জটিল অসরল হয়ে ওঠে। রাজনীতির সরব ঘোষণা অবসিত হয়ে নিরালম্ব নন্দন-দোলায় দিশেহারা আজ তা। ‘শিল্পের জন্য শিল্প’ একদা ভুলভাবে যেমত কদর্য হয়ে উঠেছিল, এতদিনে তা-ই যেন সত্য হয়ে উঠেছে। দেশ-কালের কোনো সম্পর্ক-দায়ও অগ্রাহ্য করা যেতে পারে যেন শিল্প-নন্দনের স্বাধীকারের দোহাই দিয়ে। বাজারের মুক্ততা এমন এক বিমুক্ততা সূচিত করেছে বুঝি। সকলেই আর সবকিছু আজ বিচ্ছিন্ন একক। তবে এর বিপরীত এক এষণা, বলা যায় বিনির্মাণের বিনির্মাণও দানা বাঁধছে- নেগেশন অব দ্য নেগেশন-এর প্রক্রিয়ায় বুঝি।
২০০৮ সালে কয়েক প্রযোজনার কথা বলা যায় সবার আগে। ‘সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটার’ (সিএটি)-র অ্যাম্পিউটেশন প্রাসঙ্গিক-প্রযোজনা এ বিবেচনায়।
‘সিএটি’ বৈদেশী-অনুদান-নির্ভর দল। তাদের ঘোষণা যদিও থিয়েটারের পেশাদারিত্ব। ইবসেন-প্রযোজনার পাশাপাশি ইউরোপীয় নানা রূপরীতি-ধারার নাটক করে তারা। সংস্কৃত নাট্য-উৎসব-সেমিনার, রবীন্দ্রনাটক এবং সেই সঙ্গে গোটা দুই ‘লোকনাট্য’ও করেছে। দেশ-কাল-সংলগ্নতার চেয়ে হাইব্রিড এক ক্রস-কালচারের কথা বলে তারা। তাতে যদিও স্বদেশীয় সত্তা তত লক্ষ্যগোচর হয় নাÑইউরো নানা মুদ্রাই উচ্চকিত হয়ে ওঠে। দেশ-কালের দেখা তেমন মেলে না। অ্যাম্পিউটেশন তার একমাত্র ব্যতিক্রম।
বর্তমান এক বিশ্বকাল রূপায়িত এ নাট্যে। বিশেষত বাংলাদেশে ঘটমান বছর দুই, অনূদিত এই নাটকেও এমন দৃশ্যকাব্যে বিন্যন্ত যার রগরগে অমানুষিক ‘ওপেন সিক্রেট’ দুঃস্মৃতি দুঃসহ অনুপুঙ্খতায় বিধৃত। ক্ষমতার তাণ্ডব-বীভৎসা ক্ষিপ্রগতির প্রলয়বিধ্বংশী নাট্যভাষায় রূপ পেয়েছে। জাতীয় নাট্যশালার বড় মঞ্চটির সহায়তায় মঞ্চেও লং-মিড-ক্লোজ শটের বিচিত্র মুহুর্মুহু গতিপ্রাবল্যে, স্থিতি-চলমানতার পয়েন্ট কাউন্টার-পয়েন্টে নাট্যক্রিয়া অমোঘ হয়ে উঠেছে। ক্ষমতার নৃশংস উন্মাদনায় আদিম পশুশিকারী মানুষ যেন উলট এক নবপুরাণে রূপান্তরিত। বিরুদ্ধাচারী ভিন্নমতালম্বী ধরে ফেলার অপারেশন সার্চলাইট বা ক্লিনহার্ট পুনার্ভিনীত হয় বিচিত্র নাট্যক্রিয়ায়, থিয়েটারি ইডিয়মে। ‘রিমান্ড’- যা কিনা স্বদেশীয় ক্ষমতার মৌল ক্রিয়াকল্প হয়ে উঠেছে তারই অতিরেক অনুপুঙ্খতা দমচাপা সত্তাচেরা গোঙানিতে উচ্চকিত। তাতে কিছুটা মাত্রাতিরিক্ততা যদিও ঘটে, নাট্যের জ্যাবদ্ধ ছিলা যাতে করে ঢিলা হয়ে যায়। অত্যাচারের পুনরাবৃত্তি একটু যেন বেশি-ই মনে হয়। কোনো বাস্তবিকতার কথা বলেও তার বিপত্তি ঠেকে না। নারীকে যৌনপীড়ন আরও লাগসই মাত্রায় না হলে তো বিপরীত ফল দেয়। দর্শকের অভ্যস্ত সংস্কারকে আঘাত করা চাই নিশ্চয়ই, তবে তারও দেশ-কালভেদ আছে- কোনো আন্তর্জাতিকতার দোহাই দিলেই চলবে না। এরকম কিছু অতিরেক সত্বেও অ্যাম্পিউটেশন বাংলাদেশের মঞ্চে বিশ্বমানের এক নাট্য-অভিজ্ঞতা। স্পেস ব্যবহার, কম্পোজিশন, কোরিওগ্রাফির ক্ষিপ্র চলন-বলন, খরতর আলোকপ্রক্ষেপণ আর আবহ-ধ্বনির আতীব্র ধাতব অর্কেস্ট্রাযোগে আখ্যান লাগসই নাট্যক্রিয়ায় একেবারে আজকের বিশ্ববাস্তবতার প্রতিস্পর্ধী থিয়েটার হয়ে ওঠে। ‘সিএটি’ এবং কামালউদ্দিন নীলুর সম্ভবত শ্রেষ্ঠ অর্জন-নাট্য বলা চলে অ্যাম্পিউটেশন।
ড. বিপ্লব বালা ( This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it. ): নাট্যশিক্ষক, সমালোচক