Bookmaker Bet365.com Bonus The best odds.

Full premium theme for CMS

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর : নির্বাচিত ৫০ প্রযোজনা।। প্রসঙ্গ: সে রাতে পূর্ণিমা ছিল

Written by মাসুম রেজা.

Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..

নাটক: সে রাতে পূর্ণিমা ছিল। উপন্যাস: শহীদুল জহির। নির্দেশনা: রেজা আরিফ। মঞ্চপরিকল্পনা: সামিউল হক, লিমন কবীর। আলোকপরিকল্পনা: শাহীন রহমান। পোশাকপরিকল্পনা: শারমিন ডেইজি। আবহসংগীতপরিকল্পনা: নির্ঝর অধিকারী, শারমিন রূপা। পোস্টার ডিজাইন: জুম্মন হোসাইন। প্রথম মঞ্চায়ন-বর্ষ: ২০১৩। একটি ‘আরশিনগর’ প্রযোজনা

[শহীদুল জহিরের উপন্যাস অবলম্বনে সে রাতে পূর্ণিমা ছিল নাটকের এই নাট্যসমালোচনাটি পূর্ণিমার আলোয় দেখা- শিরোনামে ৩ জুলাই ২০১৪ তারিখে ‘দৈনিক সমকাল’ পত্রিকায় ছাপা হয়। ‘থিয়েটারওয়ালা’র এবারের বিশেষ-সংখ্যায় নাট্যসমালোচনাটি পুনঃপ্রকাশ করা হলো]

প্রায় বছর দশেক আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের একটা প্রযোজনা দেখেছিলাম। সেলিম আল দীনের তত্ত্বাবধানে সৈয়দ ওয়ালীউল্লার কাঁদো নদী কাঁদো উপন্যাসনির্ভর সেই প্রযোজনার মূল-উদ্দেশ্য ছিল উপন্যাসকে মঞ্চে স্থাপন। তাই প্রযোজনাটির শিরোনাম ছিল ‘উপন্যাসের মঞ্চভ্রমণ’। উপন্যাসকে নাট্যরূপ না দিয়ে মোটামুটি উপন্যাসের স্বাদ বজায় রেখে মঞ্চে স্থাপনের কাজটা সবাই উপভোগ করেছিল সে রাতে। আর আজ লিখছি যে রাতের কথা সে রাতেও আমরা পূর্ণিমায় ভিজে একটি উপন্যাস-আশ্রয়ী নাটকের আস্বাদ নিলাম শিল্পকলার এক্সপেরিমেন্টাল হলে। সে রাতে পূর্ণিমা ছিল। শহীদুল জহিরের উপন্যাসনির্ভর ‘আরশিনগর’ প্রযোজনা। উপন্যাসের এ মঞ্চভ্রমণের কাজটি অত্যন্ত সফলভাবে করেছেন রেজা আরিফ, যিনি সেলিম আল দীনেরই ছাত্র। শহীদুল জহিরের জাদুবাস্তব গল্প প্রথম মঞ্চে এনেছেন ‘দেশ নাটকে’র নাসিরুদ্দিন শেখ। জহিরের কাঠুরে ও দাঁড়কাক গল্পের নাট্যায়ন করেছেন নাসির নিজেই। শহীদুল জহিরের গল্প-উপন্যাসে বাস্তবতা কখনোই পূর্ণবাস্তবরূপে আসে না। তিনি কুহক বা জাদুবলে তাঁর গল্প বলেন। ফলে তাঁর গল্প হয়ে ওঠে কুহকীসত্য বা জাদুবাস্তব প্রকাশ। তাঁর লেখার ধরন একান্ত তাঁর নিজের। তবে তাকে পাঠ করলে ল্যাটিন ও ক্যারিবীয় লেখকদের স্মরণে আসে। বোর্হেস কারপেনতিয়ার বা মার্কেজের লেখায় ম্যাজিকরিয়ালিটির প্রভাব অত্যন্ত প্রকট যা ব্যাখ্যা করা পাঠকের জন্য সময় ও শ্রমসাধ্য। শহীদুল জহিরের জাদুবাস্তবতা তার থেকে ভিন্ন। তাঁর গল্পে অবিশ্বাস্য চমকের উপস্থিতি থাকে, তবে তা ব্যাখ্যায় ততটা বেগ পেতে হয় না, যেমন সে রাতে পূর্ণিমা ছিল উপন্যাসে মফিজউদ্দিনের কুকুর প্রহার কিংবা গঞ্জের দরিদ্র গণিকা নয়নতারার আহ্বানে উপর্যুপরি সঙ্গমে হালাকুদের মৃত্যু অথবা মফিজউদ্দিনের পুত্র নাসিরউদ্দিনের পেশা হিসেবে একদিনে শতকের উপর মোরগ খাসি করা অথবা একবার নাসিরউদ্দিনকে দেখার জন্য জোলার মেয়ে দুলালীর অক্লান্ত আকুতি অসংখ্য চিঠির ভিতর দিয়ে প্রকাশ পাওয়া এবং সূর্যের লাল আলো খেয়ে তার আত্মহত্যা। এরকম ছোট ছোট জাদুময় গল্পজাল দিয়ে গাঁথা সে রাতে পূর্ণিমা ছিল। নাসির উদ্দিন ইউসুফ নির্দেশিত সেলিম আল দীনের বনপাংশুল নাটকে গুণীনের বৃক্ষেপ্রবেশ দৃশ্যটা আমার দেখা ঢাকার মঞ্চে সেরা দৃশ্য হিসেবে বিবেচিত। তার কাছাকাছি আরেকটি দৃশ্য আমি দেখেছি সে রাতে পূর্ণিমা ছিল নাটকে। জোলার মেয়ে দুলালীর এক লাইনের সংক্ষিপ্ত চিঠি ‘নাসিরভাই আপনেরে দেইখপার মন চায়’। দুলালীর এই বাসনা প্রথমে একটি চিঠি অতঃপর অসংখ্য চিঠির ভেতর দিয়ে এক বৃহৎ আবেদন তৈরি করে। দুলালীর মনোবেদনায় সর্বাঙ্গসিক্ত হন দর্শক। তারা কামনা করতে থাকেন অন্তত একবার নাসিরউদ্দিনের সঙ্গে দেখা হোক দুলালীর। এরকম আরও অনেক বর্ণনাময় দৃশ্যের অবতারণা করে রেজা আরিফ আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি আসছেন ঢাকার মঞ্চকে আরও ঋদ্ধ করতে। দুলালীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন রূপা। দুলালীর আকুতিতে প্রকৃত-প্রেমের আকুতি করে তিনি দর্শকের মন জয় করেছেন। রূপার অভিনয়ে আমি মুগ্ধ। মুগ্ধ নাসিউদ্দিন চরিত্রের আতিক ও গঞ্জের গণিকা নয়নতারা চরিত্রের অভিনেত্রী মৃন্ময়ীর অভিনয়েও। নাসিরউদ্দিনের সরলতা, জীবনবোধ ও গভীরতা সবকিছুই মর্মে অনুভব করে অভিনয় করেছেন আতিক। আর গণিকার জটিল-জীবনের ভেতরে এক অসাধারণ মানবিকবোধের উপস্থাপনে মৃন্ময়ী অনবদ্য।

ফাহিম মালিক ইভান দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ অভিনেতা। ইভানের অভিনয়ের আমি ভক্ত। নাটকের তিনটি চরিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন। তিনটির তিন রকম চরিত্রায়ন তিন রকম স্বাদ। আরও বেশি ভক্ত হয়ে গেছি ইভানের।

মাসুম রেজা ( This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it. ): নাট্যকার, নির্দেশক