Full premium theme for CMS
জবর আজব ভালোবাসা
Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..

[আন্তন চেকভের ‘দ্য বিয়ার’ অবলম্বনে]
বিধবা যুবতী নারী প্রভা। বেশ কিছুদিন হয় প্রভার স্বামী গত হয়েছেন। সেই শোকে মগ্ন এখনো সে। প্রায়ই স্বামীর একটা ছবির সামনে সে বিলাপ করে গান করে। তার বাড়ির হাউজ ম্যানেজার সবুর ঘরের কাজ করছে- আর কানে মোবাইলের হেডফোন দিয়ে এফএম রেডিও শুনছে। সবুর প্রভার উপর খুবই বিরক্ত।
প্রভা
সমাজ সংসার মিছে সব
মিছে জীবনের কলরব
কেবলই আঁখি দিয়ে
আঁখির সুধা পিয়ে
হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব
আঁধারে মিশে গেছে আর সব...
সবুর
এইসব আর ভাল্লাগে না, সবকিছুর একটা শেষ আছে নাকি-
প্রভা
তাহাতে এ জগতে ক্ষতি কার
নামাতে পারি যদি মনভার
তাহাতে আসে যাবে কে বা কার...
সবুর
না না বৌমা, ছয় মাস তো হবেই যে তুমি গায়ে বাইরের একটু বাতাসও লাগাওনি। সন্ন্যাসিনী সেজে শুধু বিলাপ করে যাচ্ছো। আরে মানুষতো মারা যাবেই, তাই বলে যারা বেঁচে থাকবে তাদের সব ছেড়ে দিয়ে সন্ন্যাস সাজা লাগবে নাকি? এইজন্যই আমি সংসার করিনি। সংসার হচ্ছে গ্যাঞ্জামের জায়গা, মানুষ জেনেশুনে কেনো যে এই গ্যাঞ্জামের মধ্যে জড়ায় বুঝি না। এই জীবন-জগৎ খুব কঠিনগো মা, খুব ক... ইয়ে বৌমা আমি বলি কি তুমি তোমার জীবনটাকে একটু সাজাও-রাঙাও, নইলে যে মানুষ হিসেবে তুমি তুচ্ছ হয়ে যাবে। যদি তোমার সুখ-দঃুখের ভাগীই কেউ না থাকে তবে তো বেঁচে থাকাই বৃথা।
প্রভা
তুমি চুপ করবে? আমি বলেছিনা আর কোন দিন বাইরে যাবো না। কেন যাবো? কার জন্য যাবো? কার সাথে যাবো? আমার তো সব শেষ। ও শুয়ে আছে কবরে আর আমি এই ঘরে। আমরা দুজনেই মৃত।
সবুর
ছি ছি বৌমা, তুমি একটা শিক্ষিত মেয়ে। তোমার মনটা থাকবে কতো খোলা, বড়, উদার। আর তুমি কিনা এইভাবে নিজে নিজেকে বিনাশ করে দিচ্ছো। শোন, প্রত্যেকটা মানুষই সুখে থাকতে চায় । সেই সুখের খোঁজে মানুষ কই কই চলে যায়, কী কী করে! আর প্রকৃত সুখটা পাওয়া যায় জীবনকে পুরোপুরি উপভোগ করার মাধ্যমে। সে জন্যই বলছি, বাঁচো মা বাঁচো, বাঁচতে যে কী সুখরে বাঁচতে যে কী সুখ...
প্রভা
সবুর ভাই, তোমার এইসব উপদেশবাণী না সব সময় ভালো লাগে না।
সবুর
তা তো লাগবেই না। কিন্তু যখন লাগবে তখন আর করার কিছু থাকবে না। শোন, রূপ-যৌবন চিরস্থায়ী না। আর দশটা বছর পরেই ময়ূরের মতো পেখম মেলে উড়তে চাইলেও পারবে না। দেখবে কালের চাকা বহু দূর এগিয়ে গেছে। তাই বলি কী, একজন ভালো পাত্র দেখে বিয়েটা-
প্রভা
অমন কথা আমি আর কোনোদিন তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই না। তুমি খুব ভালো করেই জানো, ওর মৃত্যুর পর থেকে জীবনের মূল্য আমার কাছে সম্পূর্ণভাবে মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। হয়তো দেখে তোমার মনে হবে আমি বেঁচে আছি, সেটুকু ছাড়া আর কিছুই না। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, কোনোদিন আমার এই শোক পালন শেষ করবো না। আমার মৃত্যুর দিন পর্যন্ত কখনো দিনের আলো দেখবো না। তার বিদেহী আত্মা দেখুক আমি তাকে কত ভালোবাসি।
সবুর
ঢং। কী...না আমার সাধু পুরুষ ছিল, খুব ভালো জানা আছে!
প্রভা
হ্যাঁ জানি তো, এ কথাই বলবে, ও আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে- এটা সত্যি। সব সময় আমার সাথে দুর্ব্যবহার করতো, গালিগালাজ করতো, এমন কী... তুমি তো সব জানোই। সে যাই হোক আমি তার প্রতি অনুগত ছিলাম, থাকবো।
সবুর
থাকো না থাকো, কিন্তু আমাকে- বাড়ির চাকর-বাকরকে একটু মুক্তি দাও। বাড়িটাতে একটু স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনো। বৌমা, গাড়ি বের করতে বলি, একটু ঘুরে আসো, বাইরের একটু বাতাস গায়ে লাগাও, হাতিরঝিল- খুব সুন্দর জায়গা, সন্ধ্যার পর নাকি রঙ্গিন পানি বের হয়। একটু ঘুরে আসো, ভালো লাগবে। আর শোনো যাওয়ার সময় টবি কে সাথে নিয়ে যেয়ো।
প্রভা
ওহ্...(কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে)
সবুর
আবার কী হলো?
প্রভা
টবিকে ও খুব পছন্দ করতোওওওওও
সবুর
অবুঝরে বুজাবো কত, বুজ নাহি মানে। ঢেঁকিরে বলিব কত তবু বাড়া বানে-
প্রভা
টবিটাও সারাক্ষণ ওর পেছন পেছন ঘুরঘুর করতো। আমরা যখনই লং ড্রাইভে বা কোথাও বেড়াতে বের হতাম- কখনোই ও টবি কে ছাড়া যেতো না। আমার প্রতি যতটা না কেয়ারিং ছিল তার থেকেও বেশি ছিল টবির প্রতি। সবুর ভাই টবি কে আজ কিছু এক্সট্রা ফুড দাও।
সবুর
আচ্ছা তা দেওয়া যাবে- (কলিং বেল বাজে)
প্রভা
কে এলো? আমি কিন্তু কারো সঙ্গে দেখা করবো না।
সবুর
ঠিক আছে, তুমি অস্থির হয়ো না , বাবুর্চি বা মালি কেউ হবে বোধ হয়, আমি দেখছি।
প্রভা
(স্বামীর ছবির কাছে এগিয়ে যায়) আমিতো তোমার সবকিছুই মেনে নিয়েছিলাম...তাহলে কেনো, কেনো আমাকে ফেলে তুমি চলে গেলে?
(সবুর দরজা খুলে। নেপথ্যে শোনা যাচ্ছে।)
সবুর
কাকে চাই?
নাভিদ
এটা কি মোফাজ্জল সাহেবের বাসা?
সবুর
হ্যাঁ মোফাজ্জল সাহেবের বাসা।
নাভিদ
সরি, ওনার মৃত্যু সংবাদ আমি জেনেছি কিন্তু আসতে পারিনি। উনার মিসেসকে একটু ডাকুন।
সবুর
না না বৌমা কারো সাথে দেখা করেন না... এটা কেমন ব্যাপার, আরে আরে আপনি ডাকাতের মতো ভেতরে ঢুকে যাচ্ছেন কেনো?
নাভিদ
কী আমি ডাকাত! মুখ সামলে কথা বলো। আমাকে চেনো? ডাকো ডাকো তোমার বৌমাকে-
সবুর
বললামতো...এই এই আপনি কোথায় যাচ্ছেন...এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে...
নাভিদ
স্টুপিড, গর্দভ... একজন ভদ্রলোকের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় জানে না...
(বলতে বলতে নাভিদ ভেতরে প্রবেশ করে। পেছন পেছন সবুর। ঢুকেই নাভিদ-প্রভা মুখোমুখি। মোর বীণা উঠে কোন সুরে বাজি....)
নাভিদ
সরি, আপনার কাজের লোকটার ব্যবহার খুবই বাজে ধরনের।
সবুর
কী!
প্রভা
উনি আমাদের হাউজ ম্যানেজার। আপনি?
নাভিদ
হ্যাঁ আমি...ইয়ে...আমার নাম নাভিদ খান- একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
প্রভা
তো?
নাভিদ
কাঁটাবনে আমার একটা এ্যনিম্যাল ফুডের দোকান আছে। আমি নেহায়েতই উপায়ান্ত না দেখে আপনার কাছে আসতে বাধ্য হয়েছি।
প্রভা
কী ব্যাপার বলুন?
নাভিদ
কুকুর।
প্রভা
মানে?
নাভিদ
কুত্তা-
প্রভা
কী?
নাভিদ
আপনার হাজব্যান্ড-
প্রভা
হোয়াট!
নাভিদ
না মানে আপনার স্বামীর কুকুর... উনি আমার বাধা কাস্টমার ছিলেন। উনি সুদর্শন, ভালো মানুষ- মেয়েরা খুবই পছন্দ করতো আর উনি পছন্দ করতেন কুকুর। তার কাছে আমার লাখ দেড়েক টাকা পাওনা আছে।
প্রভা
লাখ দেড়েক টাকা! কী হিসেবে এই ঋণটা করেছিলেন শুনি?
নাভিদ
তিনি আমার কাছ থেকে কুকুরের খাবার কিনতেন।
প্রভা
সবুর ভাই, টবিকে এক্সট্রা ফুডটা দিয়েছো?
সবুর
না যাচ্ছি, বৌমা তবে সাবধান, কাটাবনে কিন্তু সব ক্যাডার আর গাজাখোর।
প্রভা
ওমা তাই নাকি!
নাভিদ
এই কী বল্লি?
সবুর
না না কেউ কেউ।
প্রভা
আ..ইয়ে.. শুনুন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে জাগতিক কোনো বিষয়ে মনোযোগ দেয়ার মতো আমার মনের আবস্থা এখনো তৈরি হয়নি। তাছাড়া অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে নিজে আমি কখনোই জড়াইনি। আমার স্বামী যদি আপনার কাছে ঋণী হয় তবে সে টাকা অবশ্যই আপনি পাবেন-
সবুর
কিন্তু উনি যে আপনার কাছ থেকে ঋণ করেছেন তার প্রমাণ কী?
নাভিদ
কী! আমি জোচ্চোর? ঐ ব্যাটা... (প্রভাকে ব্যাগ থেকে রশিদ বের করে দেখায়) দেখুন তো এগুলো, আমাকে দেখে কি আপনার তাই মনে হয়?
সবুর
মুখের মধ্যে তো টাউট-বাটপারের সিল মারা থাকে না। যে দিনকাল পড়েছে... (চলে যায়)
নাভিদ
কী...আমি...আমি-
প্রভা
না শুনুন, যাই হোক না হোক, আজ আমাকে মাফ করবেন। টাকা-পয়সার ব্যাপারটা আমাদের ম্যানেজার দেখে। উনি নতুন বিয়ে করেছেন তো, হানিমুনে গেছেন, দুদিন পরে আসবেন। আপনি নেক্সস্ট উইকে আসুন দিয়ে দেবো।
নাভিদ
নেক্সস্ট উইক? আগামীকালের মধ্যে ব্যাংকের কিস্তি দিতে না পারলে আমার ব্যবসা বন্ধ করে দেবে।
প্রভা
ও আচ্ছা ঠিক আছে, আপনি আগামী পরশু আসুন আমি দিয়ে দেবো।
নাভিদ
পরশু দিনের গুষ্টিটা আমি কিলাই! আজকেই আমার টাকা দরকার।
প্রভা
সরি, বললাম না আজকে টাকা দিতে পারবো না।
নাভিদ
এবং আমিও পরশু পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারবো না।
প্রভা
কিন্তু টাকা না থাকলে আমি দেবো কোত্থেকে?
নাভিদ
তারমানে এখানেও একই ঘটনা...আপনি টাকা দেবেন না?
প্রভা
না সেটাতো বলিনি। তবে এই মুহূর্তেতো নয়ই।
নাভিদ
এটাই তাহলে আপনার শেষ কথা?
প্রভা
হ্যাঁ।
নাভিদ
হ্যাঁ?
প্রভা
হ্যাঁ।
নাভিদ
(চিৎকার করে) হ্যাঁ?
(নাভিদের চিৎকার শুনে সবুর ভেতর থেকে হাতে দা নিয়ে দৌঁড়ে প্রবেশ করে।)
সবুর
কী হইলো?
প্রভা
আপনি উল্লুকের মতো চেঁচাচ্ছেন কেনো?
নাভিদ
কী! আমি...ওকে। ওকে। থ্যাংকস। আপনিও একই আচরণ করলেন, আপনার কথাও মনে থাকবে। তবে মনে রাখবেন, শান্ত পুকুরের জলে ঢিল দিলে জলেতো তরঙ্গ তৈরি হবেই-
প্রভা
মানে?
নাভিদ
মানে, মেজাজটা ঠিক কিভাবে রাখবো বলুন? আমার আগের রূপটা আমি আবার ফিড়িয়ে আনতে চাই না। কিন্তু আপনারা আমাকে ভালো থাকতে দেবেন না বোধ হয়।
প্রভা
মানে?
নাভিদ
আরে কী এতো মানে মানে করছেন? ধানম-ি থেকে গুলশান আসতে দুই ঘণ্টা লাগলো। আমার টাকার খুব দরকার। সেই সকাল থেকে আমি ঢাকার এই প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্ত পর্যন্ত সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। সারাদিন ঠিকমত খাওয়াও হয়নি। আমি সবার কাছে টাকা পাই আর সবাই কিনা আমার সাথেই দুর্ব্যবহার করছে? বাসায় থেকেও বলে দেশের বাইরে গেছে-
সবুর
ঠিকই তো আছে, বাকির ব্যবসা করেন কেন, জানেন না বাকির নাম ফাঁকি।
নাভিদ
ঐযে ভালো মানুষীর দাম নাইতো এই সমাজে। কারো উপকার করতে গেলেন তো ফেঁসে গেলেন মাইনকা চিপায়, মানে মানিকের চিপায়। একেকজনের ছলচাতুরি দেখতে দেখতে আমি ফেডাপ। এরপরেও আমার মেজাজ ঠা-া রাখতে বলবেন?
প্রভা
না, টাকাটা দুদিন পরে নিতে বলবো। কিছু মনে করবেন না, আপনার এসব পেনপেনানি শুনে আমার ধ্যান ছুটে যাচ্ছে। আমার যা বলার বলে দিয়েছি আমি আর কোনো কথা শুনতে রাজি নই। আপনাকে যেন আমি এসে আর না দেখি। (হনহন করে বের হয়ে যায়)
নাভিদ
আপনাকে যেন আমি এসে আর না দেখি...ভালোইতো লাগলো...হায়রে নারী আবার আমাকে ছলনায় ভাসাবি! ভালোবেসে দেখিয়াছি মেয়ে মানুষেরে...অবহেলা করে আমি দেখিয়াছি মেয়ে মানুষেরে...ঘৃণা করে দেখিয়াছি মেয়ে মানুষেরে...
সবুর
শুধু বিবাহ করিয়া মেয়ে মানুষেরে দেখেননি বোধ হয়!
নাভিদ
কিভাবে বুঝলেন?
সবুর
বয়সতো একরাতে বেড়ে এখানে এসে ঠেকেনি!
নাভিদ
হুম তা ঠিক। আচ্ছা ওনার স্বামীতো পুরুষ?
সবুর
মানে?
নাভিদ
মানে মানুষ, সে তো মারা যেতেই পারে। তাই বলে...মেয়েদের এসব ন্যাকামি না আমি সহ্যই করতে পারলাম না। অমি এখন কী করবো? ব্যাংকওয়ালার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াবো? এখানে ঘরজামাই হবো? নাকি দেওয়ালে মাথা ঠুকে মরবো?
সবুর
আহ্হা চিৎকার করবেন না।
নাভিদ
না আপনি বলুন, এটা কেমন যুক্তি! একটা মানুষের টাকার দরকার, প্রয়োজনটা গলায় ফাঁস লেগে আছে অথচ উনি টাকা দেবেন না। কারণ, তিনি অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে নিজে জড়াবেন না। একেই বলে মেয়েলি যুক্তি। আর সেজন্যই কোনোদিন মেয়েদের সাথে কোন সম্পর্কে জড়াইনি-
সবুর
আপনি বুদ্ধি চাইলে আমি একটা বুদ্ধি আপনাকে দিতে পারি-
প্রভা
(ভেতর থেকে) সবুর ভাই।
সবুর
আসি।
নাভিদ
আ...হ্ , অকর্মণ্য স্ত্রীলোক- কল্পনাপ্রবণ প্রাণী। দেখলেও গা জ্বলে যায়।...ইস আমার চেহারার দশা কী হয়েছে। সারাদিন হাত-মুখ ধোয়া হয়নি, চুল আঁচরানো হয়নি। কেমন একটা শার্ট পড়ে আজ বের হলাম! এই বেশভুশা দেখেই বোধ হয় আমাকে পাত্তা দিচ্ছে না...না না আমি ভিক্ষা চাইতে এসেছি নাকি? আমি পাওনাদার, পাওনাদারের পোশাক-আশাক কেমন হবে তার তো কোন নিয়ম কানুন নেইÑ
সবুর
এই যে শুনুন, বৌমা অসুস্থ হয়ে গেছে, আপনাকে যেতে বলছে।
নাভিদ
অসুস্থ না ভং! এগুলো আমার জানা আছে অনেক ব্যাক ডেটেড কৌশল। ওকে, খুব ভালো। আমিও দেখিয়ে দেবো পাওনা টাকা কিভাবে আদায় করতে হয়। (চেঁচিয়ে) যতক্ষণ না টাকা পাচ্ছি ততক্ষণ পর্যন্ত আমি যাচ্ছি না। যদি সারাদিন বসে থাকতে হয় তাও বসে থাকবো। এক সপ্তাহ বসতে হয় তবুও, যদি এক মাসও হয় তবুও। এই এখানেই বসলাম। আপনার ওই শোক দেখে আমার চিড়া ভিজবে না। কিংবা আপনার টোল পড়া চিবুকও আমাকে টলাতে পারবে না... ঐ রহস্যময়ী টোলের কথা আমার খুব জানা আছে। আমি কিছুতেই টলবো না। যদিও আমার কেমন কেমন যেনো লাগছে। না না গলে যাওয়া যাবে না।
সবুর
কেমন বেহায়া মানুষরে বাবা! সাক্ষাৎ শয়তান ওকে এখানে নিয়া এসেছে মনে হয়!
নাভিদ
সবুর ভাই আপনি কি কিছু বললেন?
সবুর
বলছি, বৌমা আপনেকে যেতে বলেছে।
নাভিদ
এবার কিন্তু সত্যি সত্যি আমি ক্ষেপে যাচ্ছি। ভয়ঙ্কর ক্ষেপে যাচ্ছি। আমি ক্ষেপে গেলে কিন্তু সমস্ত পৃথিবীটাকে গুঁড়িয়ে দিতে পারি!
সবুর
এই বাড়িতে বসে পুরো পৃথিবী গুড়া না করে একটু বাইরে গিয়ে করলে হয় না?
নাভিদ
আমি যাচ্ছি না, যাচ্ছি না এবং যাচ্ছি না- এই বাড়ির বাইরে আমি কোত্থাও যাচ্ছি না। এই ঘরে এইখানে বসেই আমি সারা পৃথিবীটাকে... নাহ্ ক্ষুধা লেগে গেলতো। অনেকক্ষণতো হলো এসেছি, না! এটা কেমন ব্যাপার, আচ্ছা আপনাদের বাসায় গেস্টদের আপ্যায়নের রীতি নেই? অন্তত চা-পানি!
সবুর
আছে সেটা গেস্ট বুঝে।
নাভিদ
এই তোমার বাড়ি কোথায়?
সবুর
হোয়াই, এনি প্রবলেম?
নাভিদ
পুরাটাই প্রবলেম আর বলতে হবেনা বুঝে গেছি। কিন্তু আমাকে তোমরা এখনো বুঝতে পারছো না। একসময় এই আমার কথায়...এই তুমি না কী বুদ্ধির কথা বলছিলে।
(প্রভা পোষাক পরিবর্তন করে প্রবেশ করে।)
প্রভা
দেখুন আপনি কিন্তু আমার বাড়ির শান্ত নিবিড় পরিবেশটাকে উত্তপ্ত করে তুলছেন।
সবুর
(অবাক) বৌমা তুমি কি বাইরে কোথাও যাচ্ছো?
প্রভা
না তো! আপনি এখনো যাননি কেনো?
নাভিদ
আমার পাওনা পরিশোধ করে দিন, আমি বিদেয় হই।
প্রভা
আমি তো আপনাকে বলেছি, এই মুহূর্তে আমার হাতে টাকা নেই। দুটোদিন আমাকে সময় দিন।
নাভিদ
এবং আমিও আপনাকে বলেছি, টাকাটা আজই আমার চাই। আর যদি আজ দিতে না পারেন তাহলে বাধ্য হয়ে আমাকে এখানেই থেকে যেতে হবে। কারণ টাকা ছাড়া আমি বাইরে বেরুতে পারবো না।
সবুর
হালায় একটা বিটিশ। (চলে যায়)
প্রভা
আমিও আপনাকে টাকাটা এখন দিতে পারবো না।
নাহিদ
কি ভাবছেন আমি আপনার সাথে ঠাট্টা করছি?
প্রভা
আপনি কি ভাবছেন আমি আপনার সাথে ঠাট্টা করছি?
নাভিদ
ও...হ্ আমি কিভাবে বোঝাই!
প্রভা
চেঁচাবেন না প্লিজ! ওর আত্মা কষ্ট পাবে।
নাভিদ
ন্যাকা।
প্রভা
আপনি একটা...একজন ভদ্রলোক কখনোই একজন ভদ্রমেয়ের সাথে এভাবে কথা বলে না।
নাভিদ
তা ম্যাডাম আপনার সাথে আমার কিভাবে কথা বলতে হবে? হে মহীয়শি নারী, আমি শুনে অতীব আনন্দিত হলাম যে আপনি আমার পাওনা টাকা পরিশোধ করতে অপারগ! আপনার কাছে টাকা চেয়ে আপনাকে বিপদে ফেলার জন্য করজোড়ে ক্ষমা চাইছি। আপনাকে এই শাড়িটায় ভীষণ সুন্দর লাগছে!
প্রভা
আপনি...আপনি না খুবই অভদ্র একটা লোক!
নাভিদ
আমি না মেয়েদের সাথে ভদ্র ব্যবহার করতে জানি না। কারণ জীবনের বহু চড়াই-উৎড়াই আমি পার করেছি। বহু মেয়েদের সাথে মেশার অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে। এপর্যন্ত বারোজন মেয়েকে আমি ত্যাগ করেছি আর নয়জন মেয়ে আমাকে ত্যাগ করেছে। সত্যি বলছি, একসময় আমি বেকুবের মতো মেয়েদের পেছনে দৌঁড়েছি। মেয়েদের দেখলেই আমি তাদের গায়ে পড়ে আলাপ করতাম, ভাবপ্রবণ হয়ে উঠতাম এবং তাদের তোষামোদ করতাম। ওরা পছন্দ করতো আর আমিও ওদের গুনকীর্তন মুখরিত হয়ে উঠতাম...আমি ভালোবেসে ছিলাম...আমি গলে গলে গিয়েছিলাম...আমি খ- খ- হয়ে গিয়েছিলাম, আমি উন্মত্তের মতো প্রগাঢ় ভালোবেসে ছিলাম। আমি দীঘল কালো চুল দেখেছি, শালিকের মতো চোখ দেখেছি, জ্যোৎস্নার মতো স্নিগ্ধ রূপ দেখেছি, আমি...আমি অনেক দেখেছি। কিন্তু‘ সব নারী, যুবতী হোক আর বৃদ্ধই হোক, সবাই সমান। সবাই অস্বাভাবিক, কপট, ঈর্ষাপরায়ন আর ডাহা মিথ্যুক। তারা অহংকারীও বটে। তারা দারুণ যুক্তিহীন, নীচুমনা, নির্দয়। (নিজের গালে চড় দিয়ে) আর আমি কিনা বেকুবের মতো এই নিচুমনের প্রাণীদের পেছনে আমার ভালোবাসাপূর্ণ হৃদয়টা ঢেলে দিয়েছি, আমার অর্ধেক সম্পদ নষ্ট করেছি! আপনি এই সকল কল্পনাপ্রবণ প্রাণীদের দিকে তাকান, দেখবেন কী সুন্দর... যেন অর্ধেক দেবী অর্ধেক মানবী! আপনি মহা আনন্দ অনুভব করবেন। কিন্তু আপনি তাদের হৃদয়ে উঁকি দিন, দেখবেন- অতি সাধারণ একটা কুমির। একটা চড়–ই পাখিও ওদেরকে একশতে দশ নম্বরের বেশি দেবে না। অথচ ওরা দাবি করে ওদের হৃদয় নাকি কোমল, সরল, বিশ্বস্ত, প্রেমময়। মিথ্যে কথা! ওরা কেবল পুতুপুতু করতে জানে আর জানে কেঁদে চোখ ফুলাতে। ওরা পুরুষকে বাধ্য করে অতিভালোবাসা গদগদ হয়ে ওদের পেছন পেছন ঘুরঘুর করাতে। আপনি হয়তো শিংওয়ালা বিড়াল পেতে পারেন কিন্তু বিশ্বস্ত নারী? দুর্লভ। তবে অবলা নারী অনুগত ও বিশ্বস্ত হয়! আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, আমার কথা যদি বিন্দু পরিমান মিথ্যে প্রমাণ করতে পারেন তাহলে আমি আমার মাথা নিচের দিকে ঝুলিয়ে আমাকে ঐ পেরেকে টাঙিয়ে রাখবো।
প্রভা
শেষ?
নাভিদ
কী?
প্রভা
আপনার দার্শনিক ভাষণ!
নাভিদ
কেনো? আপনার কি আমার কোনো কথায় দ্বিমত আছে?
প্রভা
যদি কিছু মনে না করেন তবে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?
নাভিদ
প্লিজ!
প্রভা
প্রেমে আপনি কাকে বেশি বিশ্বস্ত মনে করেন, নিশ্চয়ই পুরুষ জাতিকে নয়?
নাভিদ
হ্যাঁ নিশ্চিত ভাবে পুরুষজাতিই বিশ্বস্ত।
প্রভা
পুরুষ জাতি? (ক্রোধযুক্ত হাসি) নিঃসন্দেহে এটা খবর বটে, পুরুষরা বিশ্বস্ত! আচ্ছা তাহলে উদাহরণ দিয়েই বলি। অবশ্য সেজন্য বেশি দূর যেতে হবে না। এইযে উনি আমার স্বামী, উনিই যথেষ্ট। আমি তাকে গভীরভাবে ভালবেসে ছিলাম। সমস্ত মন-প্রাণ ঢেলে তাকে আপন করে নিয়েছিলাম। আমি তাকে দেবতার মতো পূজা করতাম। অথচ সে...সে আমার সাথে প্রতিটি পদে পদে প্রতারণা করেছে। আমাকে দিনের পর দিন সপ্তাহের পর সপ্তাহ একাকী রেখে আমারই নাকের ডগার সামনে দিয়ে তার অফিসের কলিগকে নিয়ে প্রেম করে বেরিয়েছে, এমনকি দেশ-বিদেশে পর্যন্ত ডেট করতে যেতো! তার প্রতি আমার ভালবাসার ঢল দেখে মনে মনে হেসেছে। তা সত্ত্বেও আমি তাকে ভালোবেসেছিলাম এবং তার প্রতি অনুগত ছিলাম। তিনি যদিও এখন মৃত তবুও বলি, উনি মারা যাবার পর উনার মোবাইলে যে যে ছবি আর টেক্সস্ট পেয়েছি এটা দেখলে আপনি নিজেই একজন পুরুষ হিসেবে লজ্জা পাবেন। যাক, এ পর্যন্ত আমি তার প্রতি অনুগত ও বিশ্বস্ত রয়েছি। আমি নিজেকে এই চার দেওয়ালের মধ্যে সমাধিস্ত করে রেখেছি এবং আমৃত্যু শোক ধারণ করে রাখবো বলে ঠিক করেছি-
নাভিদ
আমৃত্যু শোক ধারণ! হুম্, এসব টেকনিক আমার খুব জানা আছে। এগুলো হচ্ছে স্ট্যান্ডবাজি, ভং।
প্রভা
কী!
নাভিদ
হ্যাঁ। এগুলো অনেক পুরোনো, অচল টেকনিক। নিজেকে বিশাল প্রেমী হিসেবে জাহির করছেন। জাস্ট শো-আপ। সবাই যাতে দেখিয়ে বলে, ঐযে প্রেমিক পীর, যে স্বামীর প্রেমে অন্ধ হয়ে নিজেকে চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি করে রেখেছে। আসলে ওসব খোলস। নিজের নিশ্চিত নিরাপদ ভবিষ্যৎ সাজিয়ে রাখার কৌশল। ওসব সস্তা কৌশল আমার খুব জানা আছে।
প্রভা
কী! আমাকে এধরনের বাজে কথা বলার সাহস আপনার হলো কিভাবে?
নাভিদ
সত্য চিরকালই সত্য। সত্য কথা বলতে আমার বিন্দুমাত্র সাহসের অভাব হয় না। আপনি নিজেকে জীবন্ত কবর দিয়ে রেখেছেন অথচ সাজগোজেরতো কমতি নেই।
প্রভা
আপনি...আপনি একটা ছোটলোক, বদ, নচ্ছারÑ
নাভিদ
গালাগাল দেবেন না, আমি আপনার বাড়ির চাকর নই।
প্রভা
চেঁচাবেন না বলছি। ইতর, ছোটলোক কোথাকার, মেয়েদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটা আপনি জানেন না...আপনি অনেক কিছুই জানেন না। প্লিজ আপনি এখন যান।
নাভিদ
আমি নই আপনি চেঁচাচ্ছেন। আমার পাওনা টাকা দিয়ে দিন আমি চলে যাচ্ছি।
প্রভা
আমি আপনার টাকা দেবো না।
নাভিদ
টাকা আপনাকে দিতেই হবে।
প্রভা
এক কানা-কড়িও দেবো না। আপনি চলে যান বলছি। নইলে...নইলে-
নাভিদ
দেখুন, আপনি যতই রেগে যাচ্ছেন আমি ততই গলে যাচ্ছি। অতএব আমার উপকারার্থে কোনো সিন ক্রিয়েট করার প্রয়োজন নেই। (বসে পড়ে)
প্রভা
বসলেন যে?
নাভিদ
হ্যাঁ বসলাম।
প্রভা
আমি আপনাকে বেরিয়ে যেতে বললাম না?
নাভিদ
আমার টাকা।
প্রভা
ভালো মানুষের মতো বেরিয়ে যান বলছি।
নাভিদ
না।
প্রভা
না!
নাভিদ
না।
প্রভা
তাহলে...তাহলে... সবুর ভাই... সবুর ভাই (সবুর আসে) এই লোকটাকে এক্ষুণি বের করে দাও।
সবুর
দেখুন একজন মানুষ হিসেবে অন্য একজন মানুষের শান্তি বিনষ্ট করা উচিৎ নয়। তাছাড়া জোড়পূর্বক কিছু আদায় করা সুখকর হয় না।
নাভিদ
বিদ্যা ঝাড়বেন না বললাম-
সবুর
ও সোজা কথায় কাজ হবে না, ভালোয় ভালোয় চলে যান, নইলেÑ
নাভিদ
চুপ! তুমি কার সাথে কথা বলছো যানো? পিটিয়ে তোমার চামড়া তুলে নেবো।
সবুর
ও আল্লাহ...আমি একজন শান্তিপ্রিয় নিরামিষভোজি মানুষ...আমার সঙ্গে এমন দুর্ব্যবহার...আমার কেমন যেন লাগছে... আমার দম বন্ধ হয়ে গেলো...আমি মনে হয় মরে যাচ্ছি... (মাটিতে পড়ে যায়)
প্রভা
বাবুর্চি...গার্ড...
সবুর
ওরা কেউ নেই। পানি... একটু পানি-
প্রভা
আপনি এর পরেও যাবেন না?
নাভিদ
পানি, ওকে পানি দেন।
প্রভা
আপনি বেরিয়ে যান বলছি।
নাভিদ
আপনি একটু ভদ্রভাবে কথা বলতে পারেন না?
প্রভা
আপনার মতো ছোটলোক, ইতর, জংলী, দানব, ভল্লুক-
নাভিদ
কী আমি ভল্লুক, দানব? এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। আমি কিন্তু ছাড়বোনা। আপনি আমাকে চেনেন না।
প্রভা
কী করবেন আপনি? আপনি কি ভেবেছেন আপনার ভয়ে আমি ভীত?
(দুজনের ধরাধরি অবস্থা দেখে সবুর কোনমতে উঠে দুজনের মাঝখানে দাঁড়ায়।)
নাভিদ
রূপের দেমাগে মাটিতে পা পরে না! ধরাকে সরা জ্ঞান করেন সব কিছুকে? আপনার মতো মেয়েকে আমি এক ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিতে পারি।
প্রভা
কী! আমি... আমাকে কী মনে করেছেন...
নাভিদ
একজন সুন্দরী ঠুনকো নারী।
প্রভা
আমার পিস্তল, পিস্তল কোথায়?
সবুর
হায় খোদা... কী কা-...আমি এখন কী করি...দুইজনই পাগল হয়া গেলো...
নাভিদ
এ্যাহ্...আমাকে পিস্তলের ভয় দেখায়! পিস্তল দেখেছেন কখনো? এই নাভিদ এক সময় পাছায় পিস্তল ছাড়া টয়লেটেও যেতো না।
প্রভা
কী! আমার স্বামীর দুইটা পিস্তল আছে। দাঁড়ান, আমি এক্ষুণি নিয়ে আসছি। (যেতে গিয়েও ফিরে এসে) আপনি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হন। আপনার এই উদ্ধত মস্তকটা গুলি করে যদি ফুটো না করতে পারি তবে আমি মরেও শান্তি পাবো না। (চলে যায়)
নাভিদ
আরে যান যান কতো দেখলাম...আমাকে পিস্তলের ভয় দেখায়। আমার নামে পুরো কাঁটাবন একসময় দৌঁড়াতো। আর আমাকে কিনা... (সবুরকে) আপনি বলুন ওকে কব্জায় আনতে আমার এক হাতই যথেষ্ট কিনা?
সবুর
নিশ্চয়ই স্যার, স্যার দয়া করুন, আপনি চলে যান। উনি স্বামী শোকে হিতাহিত জ্ঞান হরিয়ে ফেলেছে। আপনি বুদ্ধিমান মানুষÑ
নাভিদ
এই তো আপনি বুঝলেন, আর উনি তো চিংড়ি মাছের মতো লাফাচ্ছেন। আপনার এই উদ্ধত মস্তকটা গুলি করে যদি ফুটো না করতে পারি তবে আমি মরেও শান্তি পাবো না...অদ্ভুত মেয়েরে বাবা! কথা গুলো বলার সময় মুখটা কেমন লাল হয়ে গেল। চোখ দুটো থেকে কেমন স্ফুলিঙ্গ বের হয়ে আসছিল। সত্যি বলছি ওর মতো মেয়ে আমি এর আগে দেখিনি।
সবুর
আপনি দয়া করে চলে যান স্যার- এই বুড়ার দিকে একটু মায়া কইরা হইলেও যান স্যার-
নাভিদ
ঠিক এই ধরনের মেয়েই আমার জন্য উপযুক্ত। সত্যিকারের নারী। দুর্বলচিত্ত অবলা নয়- অগ্নিদীপ্ত।
সবুর
স্যার আপনি যান, যান স্যার- আমি সারা জীবন আপনার জন্যে প্রার্থনা করবো-
নাভিদ
না, ওকে আমার পছন্দ হয়েছে। ওকে আমি...ওকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি। তার টোল পড়া হাসি, তার অগ্নিমূর্তির রূপ সব সব আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আমি তাকে ঋণমুক্ত করে দিতেও প্রস্তুত। আমার রাগ পড়ে যাচ্ছে... চমৎকার নারী। আচ্ছা ভালো কথা, আপনি না আমাকে কী বুদ্ধি দিতে চাইলেন। দেন না প্লিজ।
সবুর
বুদ্ধিটা আপনি সত্যিই চান?
নাভিদ
নিশ্চয়ই চাই।
সবুর
আপনি কি রাতে একলা থাকতে ভয় পান?
নাভিদ
না তো, কিন্তু কেন?
সবুর
তাইলে বিয়ে করতে চান কেন?
নাভিদ
হুম তাওতো ঠিক। সবাইতো করে। এক্সপেরিমেন্ট। না একবার দেখিনা কী হয়-
প্রভা
এইযে পিস্তল, (উল্টে দিকে ধরে তাক করে)
নাভিদ
হা হা হা অবুঝ নারী!
প্রভা
শেষ হাসি হেসে নিন বদের হাড্ডি-
সবুর
হায় হায় আমি এখন কী করি! কাকে ডাকি! বাসার সবগুলাই তো একসাথে মরতে গেছে, দেখি কাওকে পাই কিনা
নাভিদ
হা হা হা... পিস্তলটা ঠিকভাবে ধরুন তানাহলে তো নিজেই মারা পরবেন।
প্রভা
ইয়ে...আমি এর আগে কখনো পিস্তল হাতে নিইনি, চাইলে আপনি একটু ধরাটা শিখিয়ে দিতে পারেন।
নাভিদ
হুম, পিস্তল ধরার কৌশল আছে। না জেনে এটা ব্যবহার করতে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
প্রভা
সেটাই তো বললাম, একটু হেল্প করুন না প্লিজ।
নাভিদ
(স্বগত) আমি তো সেটাই করতে চাই, আহা কি সুন্দর চোখ...হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে...
প্রভা
ও আমার অসহায়ত্ব দেখে খুব খুশি লাগছে?
নাহিদ
ছি ছি কেউ কিছু শিখতে চাইলে তাকে অবশ্যই সাহায্য করা উচিৎ। দিন আমি দেখিয়ে দিচ্ছি। এই মালটা- সরি, মেশিনটা তো পুরোনো মডেলের। আমি যেসব মেশিন চালিয়েছি সেগুলো দেখলে আপনি ফিট হয়ে যাবেন। না ভয় পাবেন না, এখন কিন্তু আমি অন্য আমি। হ্যাঁ আসুন, এইভাবে ঠিক এইভাবে পিস্তলটা ধরতে হয়।
প্রভা
এইভাবে?
নাভিদ
না না এতো সহজ না বুঝলেন...হ্যাঁ ধরুন...এইভাবে, ঠিক এভাবে...(পিস্তলটা হাতে দিয়ে প্রভার হাত ধরে) তারপর লক্ষ স্থির করবেন, মাথাটা একটু কাৎ করে হাতটা লম্বা করে প্রসারিত করুন... হ্যাঁ ঠিক হচ্ছে, তারপর আঙ্গুলটা দিয়ে ঐ ছোট্ট জিনিসটাকে চাপ দেবেন ব্যস হয়ে গেল। (বেশ ঘনিষ্ঠ ভাবে ধরে আছে, প্রভা সম্বিত ফিরে পায়) কিন্তু মনে রাখবেন, বিন্দুমাত্র উত্তেজিত হলে চলবে না আর তাড়াহুড়া করে লক্ষ স্থির করবেন না।
প্রভা
এতো খুবই ইজি, আমার খুব ভাল লাগছে-
নাভিদ
আমারও...
প্রভা
এ্যাই-
নাভিদ
আজকের আবহাওয়াটা কি চমৎকার না!
প্রভা
উহু পিছলে গেলে চলবে না। সুবোধ বালকটির মতো আমাকে অনুসরণ করুন। আমরা বাগানে যাবো-
নাভিদ
হ্যাঁ সেটাই ভালো।
প্রভা
আপনাকে মেরে আমার ঘর নোংরা করতে চাই না। আপনার ঐ কপালে একটা ফুটো না করা পর্যন্ত আমি দুচোখের পাতা এক করতে পারবো না।
নাভিদ
আমিও!
প্রভা
উহু কোন চালাকি করার চেষ্টা করবেন না। আপনি কৌশলে হটে যেতে চাইছেন!
নাভিদ
সত্যি তাই!
প্রভা
ভয় পেয়ে গেছেন বীরপুরুষ!
নাভিদ
হ্যাঁ, আপনাকে আমার ভালো লেগে গেছে!
প্রভা
(চিৎকার করে) কী? আপনার সাহস তো কম নয়!
নাভিদ
প্রেমে পড়লে সব পুরুষই সাহসী হয়ে যায়।
প্রভা
আপনার মাথা খারাপ!
নাভিদ
আপনাকে দেখলে কোনো পুরুষের মাথা যদি খারাপ না ই হয় সে পুরুষই না।
প্রভা
না। এসব কথা বলবেন না, এসব বাহানার কথা আমি বহু শুনেছি। শুনে শুনে বিশ্বাস করে নিজের জীবনটা তছনছ করে দিয়েছি। আপনারা পুরুষরা একেকটা প্রতারক, বদের হাড্ডি। আপনারা শুধু মেয়েদের ব্যবহার করতে জানেন। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে ডাবের খোসার মতো ছুঁড়ে ফেলে দেন। আমাদেরও যে একটা মন আছে, ভালো লাগা মন্দ লাগার ব্যাপার যে আমাদের মনেও আসতে পারে সেটা আপনারা কখনই বুঝতে চান না। আপনি যান।
(এরপর দুজন দুজনের দিকে নিরবে তাকিয়ে রইলো বেশ কিছুক্ষণ।)
নাভিদ
আপনি কি এখনো রেগে আছেন? আমি কেমন করে আপনাকে বুঝাবো? আসলে...ঘটনাটা ঘটে গেছে। আপনাকে আমার ভালোলেগেছে এটা তো আমার দোষ না! আমি তোমার প্রেমে পড়ে গেছি।
প্রভা
দূরে থাকুন...নইলে গুলি করে দেবো।
নাভিদ
করো গুলি। তুমি কল্পনা করতে পারবে না তোমার ঐ অপরূপ দৃষ্টির সামনে মরতে পারলে আমি কত সুখি হবো। তোমার ঐ ছোট্ট কোমল মসৃণ হাত থেকে গুলি এসে যদি আমার মৃত্যু হয় তাহলে আমার জন্ম সার্থক।
প্রভা
আমি...আমি কিছুই বুঝতে পারছি না...আপনি বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়েছেন।
নাভিদ
নিশ্চয়ই আমি বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়েছি, নইলে একটা নির্বোধের মতো একটা তরুণের মতো কেনো প্রেমে পড়ি... আমি তোমাকে ভালোবাসি (হাঁটু গেড়ে বসে) আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছি। এত ভালো জীবনে আর কাউকে বাসিনি। বারোজন নারীকে আমি ত্যাগ করেছি, নয়জন নারী আমাকে ত্যাগ করেছে কিন্তু তোমার মতো তাদের কাউকেই ভালোবাসিনি... আমি কেমন যেন কোমল সিক্ত হয়ে পড়েছি... এই দেখো, তোমার সামনে নতজানু হয়ে নির্বোধের মতো, একটা স্কুলের ছেলের মতো তোমাকে আমার প্রেম নিবেদন করছি। গত পাঁচ বছর যাবৎ আমি মাস্তানি জীবন ত্যাগ করেছি, গত দুই বছর আমি কোনো প্রেমে পড়িনি। প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আর প্রেমে পড়বো না। কিন্তু হঠাৎ আজ কিনা আমার এই দশা! গলা পর্যন্ত প্রেমে নিমগ্ন! আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। হ্যাঁ কি না বলো...
(কোন উত্তর না দিয়ে একটু দূরে সরে যায় প্রভা।)
নাভিদ
ঠিক আছে তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না। (সব কিছু গুছিয়ে চলে যাওয়ার জন্য দরজার কাছে যেতেই)
প্রভা
শুনুন।
নাভিদ
বলো।
প্রভা
না কিছু না...আপনি যান...শুনুন...ওফ! পিস্তলটা হাতে রাখতে রাখতে আমার আঙ্গুলগুলো কেমন অবশ হয়ে গেছে (পিস্তলটা রেখে দেয়)...না আপনি যান।
(নাভিদ আবার যেতে উদ্ধত হলে)
প্রভা
কোথায় যাচ্ছেন...ইস্ নিজের উপর যা রাগ হচ্ছে না! না না আমার কাছে আসবেন না, কাছে আসবেন না।
নাভিদ
(কাছে আসে) আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
(কাছে এসে প্রভাকে জড়িয়ে ধরে। কোলে তুলে নেয়। সবুর হাঁপাতে হাঁপাতে হাতে একটা শাবল নিয়ে প্রবেশ করে। ওদের দেখে খানিকটা হতভম্ব হয়ে যায়। তারপর হেসে ফেলে।)
সাইফ সুমন: অভিনেতা-নির্দেশক। সদস্য- থিয়েটার আর্ট ইউনিট। সহযোগী সম্পাদক- থিয়েটারওয়ালা।