Full premium theme for CMS
পশুবাদ
Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..
[ভাবনা উৎস জর্জ অরওয়েলের ‘এনিমেল ফার্ম’ উপন্যাস]
চরিত্রলিপি
মানুষ: ভুট্টা, উর্দি, হেমলার। শুয়োর: গর্বর, মুস্তান, তোজো, লোফা, নসু। কুকুর: জার্নেল। ঘোড়া: ফিদা, জিনান। মুরগি, পায়রা, গাধা, কাক, গরু, বিড়াল, ক্যাঙ্গারু, শিয়াল, ছাগল, ভেড়া।
দৃশ্য- এক
[খামারের একদিকের অংশবিশেষ দেখা যায়। শুয়োর, ঘোড়া, গরু, ভেড়া-জাতের পশুসকলকে আলাদা আলাদা খোয়াড়ে রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। খড়ের গাদা গাছপালা মাচা ইত্যাদি পশুখামারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেখা যাচ্ছে। খামারটা লোকালয় থেকে বেশ দূরে। বনভূমির কাছাকাছি। গাছে গাছে নানাবিধ পাখি এবং মাঝে মাঝেই হৃষ্টপুষ্ট বিড়াল ঘোরাফেরা করে। খামারের উপর দিকে নাম লেখা ‘চাঁদ তারা খামার’।
পশুসকল কয়েকটা কোরাস দলে ভাগ হবে। কোরাসদল কোরিওগ্রাফিসহ গান করবে।]
১ম কোরাস দল
গরু-ঘোড়া-শুয়োর-ভেড়া
গান
টকবগ টকবগ ধাবমান অশ্বখুরে
প্রান্তরে ধুলি ওড়ে
নীল আকাশে মেঘের পানে
বুনো হাঁসের পাল্লা দূরে।
কোন সে মায়াবী দেশ কিবা তার নাম
বিস্ময়ে শুধাও তুমি
গর্ব ভরে বলবো তোমায়
সে যে আমার জন্মভূমি।
২য় কোরাস দল
পাখি-পায়রা-গাধা-মুরগি
গান
নদীতে থাকে না নদী, পাহাড়ে পাহাড়
জলের ভূগোল সরে সরে যায়
মাটির ভূগোল সরে সরে যায়
চারপাশ তোমার আমার।
গাছের পাখিরা সব জানে
এক গাছে ডিম রেখে
যায় চলে যায়
অন্য বনে অন্য কোনোখানে।
রাজা বা রাজত্ব বলে
কোনো কিছু নেই প্রকৃতির
পায়ের নিচের মাটি
চির অস্থির।
৩য় কোরাস দল
অন্যান্য দলবদ্ধ পশুরা
গান
লড়াই কর, লড়াই কর, লড়াই কর, লড়াই
যতদিন না বিজয়ী হও।
যদি একবার হারো লড়ো বারবার লড়ো বারবার
যতদিন না বিজয়ী হও।
কিসের ভয় হবেই জয় দূর করে ভোলো যত সংশয়
এবার তৈরি হও।
এইতো যুক্তি পশুদের
এ পথে মুক্তি পশুদের
তুমিতো তাদেরই একজন
তুমি নও একাকি কখনও
সকলের সঙ্গে এক হয়ে মুক্তির শপথ নাও
লড়াইয়ে সামিল হও আজ
লড়াইয়ে সামিল হও আজ
[পশুরা নিজ নিজ অঙ্গ ভঙ্গি করতে করতে যার যার খাঁচায় চলে যায়।]
[মঞ্চে প্রবেশ করে ভুট্টা আর উর্দি। এই খামারের মালিক। তাদের হাতে মদের বোতল। একটা জায়গা বেছে নিয়ে আয়েশ করে বসে তারা পান করতে করতে কথা বলে।]
ভুট্টা
উর্দি। উর্দি। (জোরে)
উর্দি
ভুট্টা। সরি। জ্বি-স্যার। [উঠে গিয়ে স্যালুট করে]
ভুট্টা
আমি কে? কে আমি?
উর্দি
দার্শনিক প্রশ্ন স্যার। আমি- আমি- আমিটা যে আসলে কে? গুগল সার্চ দিলেই হবে।
ভুট্টা
এখনো এক পেগও পেটে যায়নি তাতেই এই অবস্থা।
উর্দি
কী করেছি আমি?
ভুট্টা
কী করেননি আপনি? শ্রেফ চল্লিশ বছর পরে চলে গেছেন।
উর্দি
কী করে- কী করে-
ভুট্টা
গুগল তো পরের কথা। এখনও তো কম্পিউটারই আবিষ্কার হয়নি।
উর্দি
কেনো কেনো?
ভুট্টা
আমরা এখন থেকে ষাট বছর পিছনে আছি, বুঝেছিস।
উর্দি
আচ্ছা তাহলে কাউকে ফোন করেই জেনে নেই। হ্যালো-হ্যালো-হ্যালো- ফোনের তারে কোথাও গোলমাল মনে হচ্ছে।
ভুট্টা
আমি কাছে থাকতে তুই অন্য কোথাও ফোন দিচ্ছিস কেন? আমাকে ফোন দে-
উর্দি
হ্যালো- হ্যালো- আরে ধেত্তেরি দেখছো না নেটওয়ার্ক নাই- ধরে ফেলো না ধরে ফেলো-
ভুট্টা
বলছি- প্রশ্নটা বলো-
উর্দি
প্রশ্ন বলবো কে বলল?
ভুট্টা
আচ্ছা বলো বলো-
উর্দি
বলোতো আমি কে?
ভুট্টা
তুমি কে? তুমি- ও না না- আমি, না না তুমি। না কি আমি- আমি হলাম গিয়ে- ভুট্টা। আমি ভুট্টা। কালা কুত্তা। এই পশু খামারের মালিক। ধেত্তরি নেশা কেটে যাচ্ছে। ঢালো তো- আচ্ছা তুই হলি গিয়ে আমার সহকারী তোর খাতা পত্তর কই?
উর্দি
থামলে কেনো বলো, বলে যাও আমি সব কপি করছি।
ভুট্টা
ডিম না দিলে একটা মুরগিও আর রাখবি না। সবকটাকে বিক্রি করে দিবি। বুড়া গরু আর শুয়োরগুলিকে কসাইখানায় পাঠিয়ে দিবি। শুধু মায়া দেখিয়ে ওদের আর বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াতে পারব না। [খোয়াড় থেকে বিভিন্ন পশুর আওয়াজ আসে।] দেখতো রাত কত হলো। এখনো ওগুলো ঘুমাতে গেলো না। সকালে উঠে আর এনার্জি পাবে না। চলতো বাতিগুলি বন্ধ করে দেই। [লাইট বন্ধ করে এসে আয়েশ করে পান করতে বসে।] খামারটা এবার বেচেই দেব।
উর্দি
নেশার ঘোরে বলছোতো?
ভুট্টা
আবে না হালায়- পশুগো কাম মেশিনই করা পারে।
উর্দি
পশুদের ভাগ্যে তবে খারাপি আছে।
ভুট্টা
আছে মানে! বইয়া বইয়া অগো শিং আর লেনজা দেখুম নিহি- সব হালারে ধর মার কাট খা- এই এইটা হইতাছে কী? সব তো শেষ কইরা ফালাইলি- শেষমেষ একজারাসা দে-
উর্দি
আর মাদামের বকা খাই- না? আর এক ফোটা গিললেও এখানেই পইরা থাকবা- মাদাম পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবা না।
ভুট্টা
রাখো তোমার মাদাম। লোম নাই কুত্তার বাঘা ছাল। দাও-
[ভুট্টা আর উর্দি হল্লা করে। দু’জন দুই ধরনের গান গাইতে থাকে। একজন গায়- ‘এক তু হে ধনবান হ্যায় বাকি সব কাঙাল’ আরেকজন ধরে- ‘আমাকে পোড়াতে যদি এত লাগে ভালো’। এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে।]
দৃশ্য- দুই
[রাত। চাঁদের আবছা আলোয় কিছু কিছু বোঝা যায়। বুনো শিয়াল বা বানর এসে শুয়োরদের দরজা খুলে দেয়। এরা বেরিয়ে এসে অন্যদের এভাবে বের করে। একটা গাছতলায় সামান্য উঁচুতে শুয়োরদের প্রতিনিধি গর্বর বসে। গর্বরকে ঘিরে বাকি পশুরা। বিড়ালরা একটু দূরত্বে দাঁড়িয়ে উঁকি দেয়। আবার লুকিয়ে যায়। পাখিরা মাঝে মাঝে পাখা ঝাপটে এক ডাল থেকে আরেক ডালে যায়। নিজেদের মধ্যে অনর্গল কথা বলে। গর্বর হাত উঠিয়ে থামানোর চেষ্টা করে। ব্যর্থ হয়ে শুয়োরের ভাষায় কিছু শব্দ করে। উচ্চস্বরে মন্ত্র পাঠের মতো করে বলে।]
গর্বর
ঘ্যোৎ ঘ্যোৎ ওতং চোতং
কার্ফা ফার্দিং ঘ্রোৎ ঘ্রোৎ
[ধীরে ধীরে অন্যান্য কথা থেমে যায়।]
প্রিয় পশু ভাইরা- তোমরা যদি নিজ নিজ ভাষায় কথা বলতে থাক তবেতো আমরা পরস্পর স্বার্থসংশ্লিষ্ট কথা বলতে পারব না। আমরা একে অপরের ভাষা বুঝতে না পারলে মানুষেরা আমাদের অতি সহজেই শোষণ করতে পারবে।
প্রিয় বন্ধুগণ- আমরা আজ এখানে এই চমৎকার জ্যোৎ¤œা রাতে মিলিত হয়েছি- আমি আমার স্বপ্নের কথা বয়ান করতে চাই। না- পশুরা যা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখে তা স্বপ্ন নয়। স্বপ্ন হলো জেগে স্বজ্ঞানে যা দেখা যায়। তোমরা জানো অধিকারের কথা বলতে গিয়ে জীবনে বহুবার আমাকে পশু কারাগারে থাকতে হয়েছে। মৃত্যুর ভয়ে আমি ভীত হইনি। কোনো কিছুতেই আমি থামিনি। তোমরা যদি আমার সাথে থাকো তবে কেউ আমাদের দমাতে পারবে না। মনে রেখো আমাদের ভূমির একইঞ্চি জায়গাও আমরা মানুষের ভাগে দেব না। আজ দুঃখভারাক্রান্ত মনে তোমাদের সামনে হাজির হয়েছি। আমার কথা শুরু করার আগে তোমাদের কোনো পরিকল্পনা থাকলে তা শুনতে চাই। যদিও আমি শুয়োরদের প্রতিনিধিত্ব, করি তবু মনে রাখবা সমস্ত পশুই আমার ভাই। সব পশুই আমার কাছে সমান।
গরু
হাম্বা- হাম্বা- হাম্বা- এই নাটকে আমি গরু। আমার নাম দংসা। কেউ কেউ সংসাও ডাকে। বুঝছেন না গরুতো, একটা ডাকলেই হইলো। আমরা অনেক কাজ করি। হাল দেই। দুধ দেই। খাওয়ার মধ্যে কেবল শুকনা খড় আর ঘাস পাই। তা-ও যদি মাটি চাপড়ানো সবুজ দুর্বা ঘাস হয় তবু খেয়ে বড় স্বাদ পাই। তা-ও ঠিক মতোন জোটে না। আপনারা সিনিয়র হইলে কী দাপট! আর আমাগো একজন সিনিয়র বলদের অবস্থাটা চিন্তা করেন- কাজ করতে অক্ষম হইলে কসাই ঘরে বেইচা দেয়। আমাগো শরীরের চামড়া দিয়া মানুষরা স্যুটেট বুটেট হয়। পায়ে জুতা পরে। কোমরে বেল্ট বান্ধে। প্যান্টের পকেটে মানিব্যাগ, কাঁধে ভ্যানেটি ব্যাগ রাখে। কি রাখেন না? তারপর শীতাতপ রেস্টুরেন্টে বইস্যা আমার মাংসের কিমা করা কাবাব খান। কি খান না?
মুরগি
কুকুরুক কুক কক্। কুকুরুক কুক কক্। আমরা মুরগির দল। যদিও আমরা দু’পায়া- তবু এই চারপায়া পশুগো একপাশে আমাগো খাঁচা।
ছাগল
ব্যাহএ... ব্যাহএ... ব্যাহএ...। মুরগি কর্করায় কর্করায় ডিম পারে না।
গর্বর
এই ছাগু ওদের কথা বলতে দাও।
জার্নেল
ঘেউ... ঘেউ... ঘেউ। ব্যাপারটা আমরা দেখছি- হ্যাঁ মুরগির দল বলো-
মুরগি
আমরা ভুইলা গেছি। গরুরা আমাগো কথা কইয়া দিছে।
জার্নেল
এই ঘোড়া- জিনান-
জিনান
চিঁ-হিঁ... চিঁ-হি... চিঁ-হিঁ। আমি জিনান আর আমার ঘোটকিনী বিদি আর আমার ভাই ফিদা। আমরা এই খামারে আছি মাউন্টব্যাটনের আমল থেকে। চাবুক খেতে খেতে পিঠের চামড়ায় তামা তামা দাগ হয়া গেছে। তবু রেহাই নাই।
জার্নেল
এবার গাধারা বলো-
গাধা
আমরা গাধা। গাধার গাধা। পিঠে থাকে বস্তা বাঁধা। মরুভূমিতে টিলায় টিলায় সমতলে মানুষের সাহায্যে আছি দীর্ঘকাল। বিনিময়ে যা খাওয়া-খাদ্য আর আচরণ পাই মানুষের- তা এই মানুষদের সামনে বলতে কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে। এই ফার্মের অবস্থা কখনও খারাপ হয় আবার কখনও ভালো হয়। কিন্তু আমাদের অবস্থা পাল্টায় না। আমরা গাধার ভূমিকায় অভিনয় করেই চলেছি।
গর্বর
বন্ধুগণ- আমরা এক ঊর্বর পৃথিবীতে বাস করি। ধরণি আমাদের যে খাদ্য দেয় তা যদি সমান বন্টন হয় তবে আমাদের কাউকে অনাহারে থাকতে হয় না। প্রকৃতি খাদ্য দেয় সকলের জন্য। কিন্তু কেনো পশুরা ঠিক মতো খাবার পায় না?
সকলে
মানুষের জন্য।
গর্বর
অথচ মানুষরা বড়াই করে। মানুষরা নিজেদের সম্পর্কে বলে।
সকল পশু
আমরা সৃষ্টির সেরা জীব!
গর্বর
অন্য পশুরা বললে পরে ঠিক ছিল। অথচ মানুষরা-
মোর্গা
আমাদের ডিম খেয়ে ফেলে- বাচ্চা ফোটাবার আগেই।
ছাগল
আমাদের মাংস খেয়ে ফেলে।
গরু
আমাদের দুধ নিয়ে যায়।
ঘোড়া
আমাদের পিঠের উপর বসে আমাদের-ই চাবুক মারে- লোম ধরে টানে।
সকল পশু
আমাদের কোনও স্বাভাবিক মৃত্যু নাই। মানুষের নিষ্ঠুর আচরণ আমাদের পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত করে দিচ্ছে।
গর্বর
আমরা পরিশ্রম করি। আমাদের ঘাম ঝরে। আর ফসল চলে যায় মানুষের আড়তে। মানুষ কোনও কিছুই উৎপাদন করে না। অথচ তারা সব কিছু ভোগ করে। বন্ধুগণ- সকলেই জানো আমাদের জীবন খুব দীর্ঘ নয়। আমাদের শৈশব বলে কিছু নেই। জন্মের পর থেকেই আমরা মানুষের প্রয়োজনে লেগে পড়ি এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষের জন্য খেটে মরি।
গরু
আমরা কিভাবে নিজেদের রক্ষা করবো?
গর্বর
বলছি- দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মধ্যদিয়ে আমি যা জেনেছি তা তোমাদের মধ্যে দিয়ে যেতে চাই। বুদ্ধিতে আমরা হয়তো অন্য পশুদের চেয়ে সামান্য আলাদা। কিন্তু আমাদের অবস্থা অন্য পশুদের মতোই। ভুট্টা এবং তার বসংবদ উর্দির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে হয়। তা না হলে বহু আগেই আমাকে মেরে হাড় দিয়ে চিরুনি বানিয়ে মাথা আচড়াতো। কিন্তু শুধু ভালোবাসার জন্য আমাকে বেশি দিন বাঁচিয়ে রাখার কোনো কারণ নেই। তাই আমার অন্যরকম পৃথিবীর স্বপ্নের কথা তোমাদের বলে যেতে চাই। একদিন দুদিনে হয়তো হবে না কিন্তু একশো বা দেড়শো দিনে নিশ্চয়ই হবে। একদিন না একদিন পশুরা স্বাধীন হবে।
ভেড়া
ভ্যাএ... ভ্যাএ... ভ্যাএ... কি করে তা সম্ভব!
গর্বর
মানুষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে হবে।
পাখিরা
বিদ্রোহ... বিদ্রোহ... বিদ্রোহ...
গর্বর
হ্যাঁ বিদ্রোহ- বিদ্রোহ। জানি না সেই দিন কবে আসবে। তবে আজ না হোক কাল সেই দিন একদিন আসবে- আমাদের স¦প্ন একদিন পূরণ হবে। সেইদিন পশুদের হাতে থাকবে সকল ক্ষমতা।
স্লোগান
পশুতন্ত্র মুক্তি পাক
মনুষ্যবাদ নিপাত যাক।
গর্বর
মনে রাখবা বন্ধুরা- কোনোও প্রলোভন যেন তোমাদের লক্ষ্য থেকে সরাতে না পারে। স্বপ্ন ছড়িয়ে দাও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। লড়াই কর যতদিন না আমাদের জয় আসে। ভাইয়েরা আমার- মনে রাখবা মানুষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আমরা যেন মানুষের অনুকরণ না করি।
স্লোগান
ভুট্টা খাইবে ভুট্টার গুড়া
চাউল খাবার দিব না
পশুর হাতে ক্ষমতা আইবো
আর কিসের ভাবনা।
গর্বর
পশুরা আমার- মনে রাখবা পশুরা মানুষের মতো অযথা ঘর বানাবা না। পশুরা খাটে শোবে না। মদ খাবে না। কাপড় পড়বে না। মানুষের মতো পশুদের টাকা জমবে না। আর সবচেয়ে বড় কথা একজন পশু অন্য পশুকে হত্যা করবে না। এমনকি অত্যাচার করবে না। পৃথিবীকে সকল পশুর জন্যে বাসযোগ্য করে তুলবা। মনে রাখবা সকল পশুই সমান। সকল পশু ভাই ভাই। আমি আমার বক্তব্য শেষ করে এনেছি। আমি যদি আর তোমাদের সামনে এসে দাঁড়াতে নাও পারি- মনে রাখবা- আমি সেই পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেছি- সেই পৃথিবী- যেই পৃথিবী হবে মনুষ্যহীন।
স্লোগান
ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ো
পশু খামার মুক্ত করো।
গর্বর
আমরা আমাদের পশুনীতি ভুলে গেছি তাই আজ আমাদের এই দুর্দশা। আমাদের সাতদফা আমরা যেন ভুলে না যাই। আমরা যারা পড়তে লিখতে জানি না তারা বারবার শুনে শুনে মুখস্ত করে ফেলবো। আমাদের একটা পশুসঙ্গীত ছিল। তা আজ আমার পুরোপুরি মনে নাই। আমি বক্তৃতা দিতে পারি কিন্তু গাইতে পারি না। আমি গানটা শুরু করি- তোমাদের মধ্যে যাদের কথা আর সুর মনে আছে তারা গেয়ে যাও।
গান
আমরা করবো জয়
আমরা করবো জয়
আমরা করবো জয় নিশ্চয়
বুকের গভীরে আছে প্রত্যয়।
আমাদের নেই ভয়
আমাদের নেই ভয়
আমাদের নেই ভয়
আজ আর
আহা বুকের গভীরে আছে প্রত্যয়।
দৃশ্য- তিন
[কয়েকদিন পরের সন্ধ্যা। পশুরা ক্লান্ত হয়ে একে একে ফিরছে। গোধূলি লগ্ন।]
গরু
ইস্ ক্ষুধায় আমি আর হাঁটতে পারছি না। দিনে দিনে খাবার কমিয়ে দিচ্ছে। কী করে বাঁচবো?
ছাগল
আমরা কি চাকা ঘুরাতে পারি বলো! চাকা ঘুরাতে পারি!
গাধা
আমরা আর মোট বইব না।
ভেড়া
কিন্তু বেঁচেতো থাকতে হবে! এভাবেতো না খেয়েই মরে যাবো।
ঘোটকী
কী যে করা যায়- সব ভাঁড়ার ঘরের চাবিই মানুষের হাতে!
তোজো
এত চিন্তা করতে ভালো লাগে না। চলো দরজা ভাঙি।
গরু
বলছো কী হে তোজো! আমার কেমন ভয় ভয় লাগে।
ছাগল
আমাদের কি দরজা ভাঙার যন্ত্র আছে- কী করে ভাঙবো?
তোজো
কেন-রে ছাগু তোর শিং আছে কী কাজে?
ছাগল
দেখ তোজো খোঁচা দিবি না কিন্তু।
মুরগি
ছাগল দিয়া হাল চাষ হয় না- হয় না-
ছাগল
তুই চুপ থাক দুই পায়া পাখি।
পায়রা
খেতে চাই- খেতে চাই- পেট ভরে খেতে চাই-
ভেড়া
এই কৈতর পোষ্ট অফিসের পিয়ন- লাফাস ক্যান- খবর আছে কোনো?
[কবুতর ঘোড়ার কানে কানে কিছু বলে। ঘোড়া শুয়োরের কানে বলে।]
ঘোড়া
চিন্তার বাইরে- মানুষগুলা ভাঁড়ার ঘরে তালা দিয়া কুঞ্জ ছাউনিতে বসে মদ খাচ্ছে। এদিকে ক্ষুধায় আমরা অন্ধ হয়ে যাচ্ছি।
শুয়োর
চলো সব আমার সাথে। বাঁচতে হলে ভাঙতে হবে। ভাঙতে হবে। ভাঙতে হবে। বাঁচতে হলে ভাঙতে হবে।
[সব পশুদল মিলে ভাড়ার ঘর ভাঙার চেষ্টা করে। কেউ লাথি দেয়। কেউ শিং দিয়ে গুতো দেয়।]
পশুরা
ভাঙ হেইয়া কী ভাঙ ভাঙ।
পশুরা
জোরসে ভাঙ- হেইয়ো।
পশুরা
মার গুতো- হেইয়ো।
পশুরা
খুরের লাথি- হেইয়ো।
পশুরা
ঠোঁটের ঠোকর- হেইয়ো।
পশুরা
পাছার ধাক্কা- হেইয়ো।
[উর্দি মদ্যপ অবস্থায় বোতল হাতে ঢুকতে গিয়ে পশুদের কীর্তি দেখে ফেলে। একপাশে লুকিয়ে যায়। পশুরা ভাড়ার ঘর ভেঙে ঢুকে পড়ে। উর্দি চিৎকার করে মানুষদের ডাকতে থাকে। মানুষরা মদের আড্ডা থেকে উঠে আসে।]
উর্দি
ক্যাপ্টেন ক্যাপ্টেন পশুরা সব ভেঙে ফেললো। বেল্লিক পশুর দল সব নষ্ট করে দিল। কোথায় সব- স্যার- ক্যাপ্টেন- মেজর-
ভুট্টা
কী! এতবড় সাহস! আমার বন্দুকটা নাওতো- ব্যাটালিয়ান নাইন ফোর্সকে খবর পাঠাও- ফায়ার। ফায়ার করো- উল্লুকা পশুকো বুঝায়ে দো- মানুষকা ক্ষমতা হ্যায়-
[একটা যুদ্ধ অবস্থা তৈরি হয়। মানুষরা এলোপাথাড়ি গুলি করে। পশুরা প্রতিহত করে। কয়েকটা পশু নিহত হয়। পশুরা গেরিলা কায়দায় আক্রমণ করে। মানুষরা পিছু হটতে হটতে এক সময় পালিয়ে যায়।
পশুরা চিৎকার করে। ডিগবাজি খায়। বিভিন্নভাবে উল্লাস প্রকাশ করে।]
পশুরা
লড়াই লড়াই লড়াই কর
জীবন দিয়ে লড়াই কর
এ লড়াইয়ে জিতল কারা
মানুষ বাদে সব পশুরা।
(গদ্য) পালিয়েছে পালিয়েছে সাতশ মাইল দূরে পালিয়েছে।
ঘোড়া
সারা খামার তন্ন তন্ন করে দেখতে হবে- ওরা কোথাও ঘাপটি মেরে বসে আছে কি না। হিং¯্র পশু আর বিষধর সাপকে বিশ্বাস করা যায় কিন্তু মানুষকে বিশ্বাস করা যায় না।
[কিছু পশু এদিক সেদিক ভালো করে খুঁজে দেখে।]
পশুরা
না কোথাও নাই- আমরা এখন মুক্ত- স্বাধীন- হুররে-
গর্বর
বন্ধুগণ- আমরা অবশ্যই উল্লাস করবো কিন্তু মনে রাখতে হবে সামনে আমাদের অনেক দায়িত্ব। এখন আমরা নিজেরাই নিজেদের প্রভু। এই খামারের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আমাদের কর্ম পরিকল্পনার উপর। এখন থেকে আমাদের সংবিধিবদ্ধভাবে চলতে হবে। শিক্ষার জন্য স্কুল, চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল বানাতে হবে। আমরা যদি সকল পশু কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করি তবে একদিন আকাশ সড়ক বানানোও আমাদের পক্ষে অসম্ভব নয়।
[কিছু পশু একটা ব্যানার নিয়ে আসে। আগের ‘রিপাবলিকান খামার’ ব্যানার খুলে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী পশু খামার’ লাগিয়ে দেয়।]
হ্যাঁ বন্ধুরা- এখন থেকে আমাদের এই খামারের নাম হবে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী পশু খামার’। আর একটা খামার আমাদের চালাতে হলে কিছু নিয়ম কানুন বানাতে হবে। আমাদের একটা পশুসঙ্গীত লাগবে। প্রতি মাসে এই বিজয়ের দিনে আমরা দলবদ্ধভাবে সেই সঙ্গীত পরিবেশন করবো। আমাদের এই বিজয়ের লড়াইয়ে বীরত্ব দেখানোর জন্য কোনো কোনো পশুকে আমরা জাতীয় বীর উপাধি দেব। সে জন্যে ইতিমধ্যেই আমরা একটা কমিটি করেছি। তারা চার ধাপে পুরস্কারের সুপারিশ করবে। আমরা আমাদের অনেক বন্ধুকে হারিয়েছি। তাদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েই বলছি- শোককে শক্তিতে পরিণত করতে হবে। শোক ভুলে আমাদের কর্মে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আসুন আমরা আমাদের পশুনীতি স্থির করে নেই। মনে রাখবা এই পশুনীতির সপ্তবিধির মধ্যেই নিহিত আছে পশু সমাজের মুক্তি। সবাই আমার সঙ্গে বলো-
এক. দুপায়া প্রাণীরা শত্রু।
দুই. চার পা এবং পাখাওয়ালারা বন্ধু।
তিন. পশুরা পোশাক পরবে না।
চার. পশুরা খাটে ঘুমাবে না।
পাঁচ. কোনো পশুই মদ্যপান করবে না।
ছয়. কোনো পশু অন্য পশুকে হত্যা করবে না।
সাত. পশুবাদের মূলকথা- সব পশুই সমান।
[সবাই শপথের ভঙ্গিতে সপ্তনীতি পাঠ করে।]
আমাদের একটি নিজস্ব ঝা-া থাকবে। তাতে শিং আর লেজের প্রতীক থাকবে। বিশেষ বিশেষ দিনগুলিতে আমরা সেই ঝা-া উড়িয়ে দেব। সেই দিন আমাদের কাজ করতে হবে না। আমরা ছুটি ভোগ করবো। শুধু আনন্দ করবো। বন্ধুরা তোমরা ক্লান্ত- তোমাদের এখন বিশ্রামে যাওয়া দরকার।
ঘোড়া
আমাদের তবে নতুন জীবন শুরু হচ্ছে।
গরু
দুধের কী ব্যবস্থা হবে? আমাদের বালতি ভরতি দুধ পড়ে আছে। কে ব্যবস্থা নেবে?
মুরগি
মানুষের সাথে যুদ্ধে আমাদের অনেক ডিম ভেঙে গেছে। কিছু এখনো পড়ে আছে খড়ের গাদায়।
গাধা
মানুষদের ফেলে যাওয়া সবকিছু পড়ে আছে।
শুয়োর
ওসব নিয়ে তোমাদের আর ভাবতে হবে না। ওসব আমরা দেখছি। লিডারকে এসব ছোট ছোট বিষয়ে জানাতে হয় না। আমরাই ওসবের ঠিক ঠিক ব্যবস্থা করে নেব।
[শুয়োরদের মধ্যে লোফা কুকুরের সাথে চোখাচোখি করে। তাতে দুধের ব্যবস্থা সম্পর্কে একটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়। সবাই ধীরে ধীরে ফিরে যায়। রাত্রি নেমে আসে। গভীর রাত্রি।]
দৃশ্য- চার
[গর্বর একটা উঁচু ঢিবির উপর শুয়ে আছে। অন্ধকারে বিভিন্ন ছায়ামূর্তি দেখা যায়। তোজো বাদে কয়েকটা শুয়োর আর কুকুরের দল গর্বরকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। কয়েক মুহূর্ত ইতস্তত করে পরে গুলি করতে শুরু করে। এলোপাথাড়ি গুলির শব্দে পশুদের কেউ কেউ ঘুম থেকে জেগে ওঠে। প্রতিবাদ করতে এগিয়ে এসে ভয়ে পিছিয়ে যায়। ধীরে ধীরে গুলির শব্দ কমে আসে। আজানের ধ্বনি শোনা যায়। ভোরের আলো ফুটতে থাকে। ছায়ার মধ্যেই কুকুরেরা লাশ নিয়ে সরে যায়। ধীরে ধীরে পশুরা এসে জড় হয়।
মুস্তান পশুদের মধ্যে শুয়োর প্রজাতির। ওর মাথায় জিন্নাহ টুপি। ভাষণের সময় ঘিয়ে রঙের সাফারির পকেট থেকে ঘন ঘন রুমাল বার করে চোখ মুছবে। কান্না আনার চেষ্টা করবে কিন্তু পারবে না।]
মুস্তান
প্রিয় পশু বন্ধুরা- দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি। শোক প্রকাশের ভাষা আমার জানা নেই। আমি বেদনার্ত-মর্মাহত-শোকার্ত। আপনারা জানেন আমাদের প্রিয় নেতা মহামান্য লিডার গর্বর ভাই কিছু সংখ্যক উচ্ছৃঙ্খল তরুণ কুকুরের হাতে নিহত হয়েছেন। কিন্তু পরিস্থিতি এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে। মহান নেতা নিহত। কিন্তু তার স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব নিতে হবে আমাদের। তোমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে ইনশাল্লাহ আমরা স্বপ্নকে সফলতায় নিয়ে যেতে পারব।
[পশুদলের মধ্যে একমাত্র ক্যাঙ্গারু লাফ দিয়ে উঠে কবিতা পড়ে।]
ক্যাঙ্গারু
যার উচ্চতা ছিল জিরাফের কানের চেয়েও উঁচুতে
যার গভীরতা ছিল কাল কেউটের গোপন গভীর কোটরে
শকুনের দৃষ্টি আজ তার মাংস আর চোখের গভীরতায়
হন্তারকের উল্লাস ভুলেছে সাধারণ আদব লেহাজ।
নিহত জনক আগামেমনন কবরে শায়িত আজ।
দুপাশে ঘুরছে খুনেদের দল আর শিং ছাড়া গুপ্তচর
জ্যোৎ¯œার দুধ চুষে নেয় বশংবদ শিকারি কুকুর
আস্তাবলে গুমরে কাঁদে প্রিয়তম ঘোড়ার আর্তনাদ
যখন বিপন্ন পশুতন্ত্র উটের গ্রীবায় নিষ্ঠুর স্বরাজ
নিহত জনক আগামেমনন কবরে শায়িত আজ।
মুস্তান
হে কবি ক্যাঙ্গারু- থাম থাম। তোমার শোক আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু শোক প্রকাশের সময় এটা নয়।
ছাগল
আমার এট্টা কথা ছিল। নেতার অবর্তমানে কে আমাদের পথ দেখাবে?
মুস্তান
পশু জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে আমি স্বেচ্ছায় এই গুরু দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছি।
ফিদা
কিন্তু তোমারতো মানুষদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল।
মুস্তান
বোকার মতো কথা বলো না ফিদা। ক্ষমতায় যারা থাকে তারা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের আত্মীয়। আর তাছাড়া মানুষ একসময় আমাদের প্রভু ছিল। তাদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকতেই পারে- তাই বলে আমরা আর তাদের দাস হতে পারি না।
গরু
আমরা কেনো খেটে খেটে সম্পদের পাহাড় বানাব। আমরাতো বেশিদিন বাঁচব না।
পাখি
আমাদের শ্রমের ফসল কারা ভোগ করবে! কারা ভোগ করবে!
কুকুর-১
ঘেউ-ঘেউ-ঘেউ। এত কথা কিসের। কথা কম। যাও যাও কাজ কর। কাজ কর।
তোজো
কিন্তু আমাদের সংবিধান...
কুকুর-২
স্যার- আর কথা নয়। [স্যালুট করে]
[সব কুকুর একসঙ্গে ঘেউ ঘেউ করে উঠে। সবাই ভয় পেয়ে নিশ্চুপ হয়ে যায়। সবাই পায়ে পায়ে মাঠের কাজে ফিরে যায়। কুকুর দলের জার্নেল ঘোড়ার পিঠে উঠে বসে। কাজ তদারকি করতে থাকে।]
গাধা
যাই বলো ভাই- ভুট্টার আমল থেকেই খেটে আসছি- কিন্তু এখন আমরা যতই পরিশ্রম করি না কেনো সত্যি বলতে কী ক্লান্ত লাগে না।
ঘোড়া
এখনতো নিজেদের জন্য খাটি। সপ্তাহে একদিন বিশ্রামের সময় পাই। সেই সব মানুষের দিন প্রায় ভুলতে বসেছি।
গরু
তাহলে আমরা ভালই আছি কি বলো?
ছাগল
কিন্তু- ঐ পড়াশুনাটাইতো মনে থাকে না। ত থ এর লাইনে গেলেই ক জ এর লাইন ভুলে যাই।
পায়রা
শুয়োরদের মনে থাকে। শুয়োরদের মনে থাকে। [উড়ে উড়ে বলে।]
ঘোড়া
সারাদিন পরিশ্রমের পর ঐ সপ্তবিধিটা কিছুতেই মনে রাখতে পারি না। লিডার বলেছিল সপ্তবিধিটা মুখস্ত রাখা সব পশুর অবশ্য কর্তব্য।
বিড়াল
মিউ-মিউ- আমারও একই অবস্থা।
শিয়াল
চুপ থাক ছোচা বিলাই- ধইরা কিলাই। হাটে নিয়া বেইচ্চা ফালাই।
[সবাই একসঙ্গে হেসে ওঠে।]
জার্নেল
কাজের সময় এত হাসাহাসি কিসের? কাজ করে যাও। হাত চালাও।
[জার্নেল অন্যদিকে চলে যায়। পশুরা কাজ শেষ করে কথা বলতে বলতে ফিরতে থাকে।]
গাধা
ফিদা- তুমিতো কিছুটা পড়তে পার- না?
ফিদা
খুব সামান্যই।
গাধা
তোমাকেতো কিছুই পড়তে দেখি না। অনেকের হাতে ছেঁড়া কাগজ, মুড়ির ঠোঙা, বইয়ের পাতা দেখি।
ফিদা
পড়ার মতো কিছু পাই না তাই পড়ি না।
গাধা
তুমি কি এখনকার অবস্থায় খুশি নও?
ফিদা
কেনো? লেজ নাড়ি না তাই?
গাধা
ঠিক তা নয়। আবার-
ফিদা
শোনো এক সময় মাছি ছিল তাই লেজ নাড়াতাম। এখন মাছিও নেই লেজও নেই।
গাধা
যা বলো না ভাই। আজ সন্ধ্যায় সভা আছে। যাবে তো?
ফিদা
যাবো, তবে লেজ নাড়ব না।
[একটু উঁচু ঢিবির উপর শুকর দল। তাদের ঘিরে অন্যান্য পশুরা।]
তোজো
বন্ধুগণ- বছর ঘুরে সমন্ত ফসল আমরা ভাড়ারে তুলতে সফল হয়েছি। যদিও বলবো না আমাদের মধ্যে হানাহানি মারামারি পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে। বিশেষ করে শুয়োরদের মধ্যে সবসময় একটা ঠা-া লড়াই চলে। তবু আমাদের অর্জন কম নয়। আরও সাফল্যের লক্ষ্যে আমরা বিভিন্ন কমিটি গঠন করব। তোমাদের মধ্যে সকল পশুরা সেইসব কমিটিতে যুক্ত থাকবে।
লোফা
আমার দুই একটা কথা আছে। আমি অত গুছিয়ে কথা বলতে পারি না। ঐ সব কমিটি-ফমিটির মধ্যে আমি নাই। আমি বিশেষভাবে তরুণদের দায়িত্ব নিতে চাই। এখন থেকে কুকুর শাবকদের আমার তত্ত্বাবধানে লালন পালন করা হবে। জার্নেল- তোমার যে সাতটা কুকুর ছানা জন্মেছে ওদেরকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিও। আমি তাদের খাঁটি দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব নিলাম। তাদের তৈরি করার সমস্ত খরচ রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ব্যয় হবে। সবাই এগিয়ে আসুন। সবাই মিলে পশুসঙ্গীত গাইতে গাইতে আজকের মতো সভা শেষ করি।
পশুসঙ্গীত
আফগানের পশু আর উগা-ার পশু
সাদা কালো সব পশুরা শোনো
পশুদের জয় আসবেই একদিন
দুঃখ রবে না কোনো।
শুয়োর গাধা ঘোড়া আর গরুরা
এসো একসাথে সবে চলি
এসো পশুদের শ্রমে গড়া
এক খামারের কথা বলি।
নসু
পশুগণ- আমরা শুনেছি তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছো- রোজ রোজ বালতি ভরা দুধ কোথায় যায়। বাগানের ফল কেনো সকলের মধ্যে সমান ভাগ করে দেয়া হয় না। হ্যাঁ, বন্ধুরা তোমরা ঠিকই ধরেছ- পশুনীতি অনুযায়ী এই খাদ্য সকলকে ভাগ করে দেয়ার কথা। কিন্তু তোমাদের ভেবে দেখতে বলি- পশু খামার সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে হলে শুয়োরদের কী পরিমাণ মাথা খাটাতে হয়। আমরা শুয়োররা দুধ এবং ফল খাওয়া মোটেই পছন্দ করি না। কিন্তু বিজ্ঞান বই থেকে আমরা জেনেছি মাথার কাজ করতে হলে দুধ এবং ফল খাওয়া অত্যাবশ্যক। তাই... আর তাছাড়া আমাদের সব সময় সজাগ থাকতে হয়। আমরা হলাম অতন্ত্র প্রহরী। যেকোনো সময় মানুষের মিত্র বাহিনী আমাদের উপর আক্রমণ করতে পারে। তোমরা কি তাই চাও?
সকলে
না-না, আমরা তা চাই না।
স্লোগান
জয়- পশু জাতির জয়
জয়- পশুর নাতির জয়।
শুয়োর তোমরা এগিয়ে চলো
সব পশুরা তোমার সাথে
শুয়োর করে ঘ্যোৎ ঘ্যোৎ
রাতের বেলায় মিঠা রোদ।
[স্লোগান চলাকালে লোফা জার্নেলকে কিছু বলে। জার্নেল অন্যদেরকে। কয়েকজন লুকিয়ে বাইরে চলে যায়।]
পায়রা
দুঃসংবাদ- বন্ধুগণ- দুঃসংবাদ দুঃসংবাদ। মানুষরা লাঠি রাইফেল নিয়া এই দিকে আসছে।
তোজো
আপনারা ভয় পাবেন না। মনোবল দৃঢ় রাখুন। লড়াই ছাড়া এক ইঞ্চি জায়গাও আমরা ছাড়ব না।
লোফা
তোজো তুমি থাক- ব্যাপারটা আমি দেখছি।
[তোজো জার্নেলদেরসহ এগিয়ে যায়। গাধা-ঘোড়া ও কিছু পশু তাদের সাথে এগিয়ে যায়। ঘোড়া অতর্কিতে এক লাথি দিয়ে একজন মুখোশধারী মানুষকে মাটিতে ফেলে দেয়। তাই দেখে মানুষরা ভয় পেয়ে পিছিয়ে পড়ে। কেউ কেউ পালায়।]
লোফা
ফিদা তুমি আইন হাতে তুলে নিতে পার না। লড়াইয়ের আগে তোমার অনুমতি নেয়া উচিত ছিল।
ফিদা
আমি ঠিক মানুষটাকে মেরে ফেলতে চাইনি। আমার যে পায়ের তলায় লোহার নাল আছে তা ভুলেই গিয়েছিলাম।
তোজো
লড়াই লড়াই-ই। লড়াইর মাঠে অত ভেবেচিন্তে লড়াই করা যায় না। একজন মানুষ যেমন মারা গেছে তেমনি আমাদের তিনটা ছাগুর অবস্থাও খারাপ। হয়তো মারা যাবে।
লোফা
কিন্তু যুদ্ধে কূটনীতি বলে একটা কথা আছে।
নসু
যা হবার হয়ে গেছে- এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব করে লাভ আছে?
মুরগি
দশ কথার এক কথা- দশ কথার এক কথা।
[এদের কথাবার্তার মাঝখানে মানুষটা উঠে দৌঁড়ে পালায়।]
গরু
আরে এ-তো মরেনি।
পাখি
মানুষ ম-রে-নি। মানুষ ম-রে-নি। মানুষ ম-রে না। মানুষ ম-রে না।
তোজো
বন্ধুগণ- আমরা ধীরে ধীরে আমাদের স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা আকাশ সড়ক নির্মাণের কথা ভাবছি। আমাদের পরিকল্পনা প্রায় শেষের দিকে। আপনারা অনুমানও করতে পারবেন না সেই সড়ক নির্মাণ হলে আমাদের পরিবহন ব্যবস্থা কতটা সহজ হয়ে যাবে- আমাদের সমৃদ্ধি আসবে। আমরা তখন বেশি বেশি ছুটি ভোগ করতে পারব। সপ্তাহে তিনদিন কাজ করলেই তখন চলবে। বাকি দিনগুলিতে আমরা আনন্দ অবসর যাপন করবো। যেদিন এই সড়ক নির্মাণ হবে- সেদিন থেকে আমরা দ্রুত গতিতে এগিয়ে যেতে পারব।
লোফা
বন্ধুগণ- আমি মনে করি একটা আকাশ সড়কের চেয়ে অনেক বেশি জরুরি উৎপাদন বৃদ্ধি করা। এই আকাশ সড়ক নির্মাণ করতে হলে আমাদের অন্য পশু খামারের কাছে হাত পাততে হবে। ধার করতে হবে। আর সেই ধার শোধ করতে আমাদের ফসল বিক্রি করে দিতে হবে।
সকলে
ঠিক ঠিক- আমরা কি না খেয়ে থাকব নাকি?
তোজো
বন্ধুরা- লোফার কথায় কিছুটা সত্য আছে। আকাশ সড়ক নির্মাণ করতে গেলে আমাদের খাদ্য-শস্য খনিজ পদার্থ বিক্রি করতে হবে। অনেক যন্ত্রপাতি কিনতে হবে। পাশের খামার থেকে ঋণ নিতে হবে। কিন্তু ভেবে দেখো বন্ধুরা- কিছুদিন কষ্ট করার পর আর আমাদের কোনো কষ্টই থাকবে না। আমরা তখন অন্য খামারের উৎপাদিত পণ্য আমাদের ভোগে আনতে পারব। আমরা মানুষের হাত থেকে মুক্তি চেয়েছিলাম- কিন্তু কেনো? আমরা যাতে নিজেদের মতো বাঁচতে পারি। সুন্দর জীবন গড়তে পারি। তোমরা জানো- শিল্প এবং কৃষি ছাড়া উন্নত সমাজ গড়া সম্ভব নয়। আমরা যদি সারাজীবন অন্যের উপর নির্ভর করে থাকি তবে সুন্দর জীবন-যাপন করতে পারব না। ভবিষ্যৎ সুন্দর হবে না। আমরা সর্বসম্মতিভাবে সিদ্ধান্ত নিতে চাই যে-
লোফা
না। আমার মনে হয় নিজেদের আরও শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। মানুষরা হেরে গেছে মানে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। আমাদের সাথে উর্দিরা হেরে গেলেও অন্য মনুষ্য খামারগুলি এখনো পুরোপুরি সমর্থন করেনি। অন্য খামারগুলির সমর্থন না পেলে যেকোনো সময় আবার আমাদের এই খামার দখল হয়ে যেতে পারে। আপনারা ইতোমধ্যে জেনে গেছেন- মানুষদের সাহায্য করতে সপ্তম নৌবহর রওনা হয়েছিল। ওদের পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় আর পাশের খামারের ইন্দু ঠাকরুন ইদারার জল দিয়ে সাহায্য করায় আমরা দ্রুত জয়ী হতে পেরেছি। কিন্তু মানুষের দল আবার নতুন অস্ত্র নিয়ে নতুনভাবে যে আমাদের আক্রমণ করবে না এমন ভাবা যায় না। আমাদের সব সময় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। গোলা বারুদ অস্ত্র কিনতে হবে। সেনা পশুর চৌকস দল গড়তে হবে। শারীরিকভাবে তাদের বেশি শক্তিশালী করতে হবে। সুদূর ভবিষ্যতের স্বপ্নের চেয়ে আমাদের বর্তমানে বেঁচে থাকাটা বেশি জরুরি।
তোজো
বেঁচে থাকা! কাকে বলবো বেঁচে থাকা? সারাজীবন শুধু দিন-রাত খেটে খেটে মরে যাওয়া- এর নাম বেঁচে থাকা? গর্বর ভাই আমাদের যে স¦প্নের কথা বলতেন- তা একজন মানুষের হাত থেকে একজন পশুর মুক্তি নয়- সমস্ত মানুষের হাত থেকে সমস্ত পশুর মুক্তি। আমরা একদিন সমস্ত পশুর মুক্তি দেখতে চাই। আর এর জন্য আমাদের গোলা-বারুদ নয় চিন্তা-চেতনা শিক্ষা-চিকিৎসা উন্নতি করতে হবে। কৃষি এবং বিজ্ঞানে মানুষের চেয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমরাও যদি মানুষের মতোই অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সবকিছু দখলে নিতে চাই তবে আমরা ধ্বংস হয়ে যাব। পশুগণ- সরলমতি পশুগণ- মুক্ত বুদ্ধির পশুগণ- তোমাদের শুভবুদ্ধি হোক। আমরা সকল পশুরা এক হলে সারা পৃথিবী পাল্টে দিতে পারি। আমাদের এক অন্যরকম লড়াই শুরু করতে হবে।
[হঠাৎ লোফা ইঙ্গিতবহ শব্দ করে। ছয় সাতটা কুকুর তোজোকে আক্রমণ করে। সবাই হতভম্ব হয়ে চুপ করে সরতে থাকে। কুকুরগুলো বিভৎস চিৎকার করতে করতে তোজোকে বাইরে নিয়ে যায়। কুকুরগুলো ফিরে এসে লোফার চারিদিকে লেফট রাইট করতে থাকে।]
লোফা
এখন থেকে মানবিক আইন ঘোষণা করা হলো। পরবর্তি ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত সমস্ত ধরনের সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। যূথবদ্ধভাবে কোনো অলোচনায় অংশগ্রহণ করা যাবে না। শুয়োরদের উচ্চ পর্যায়ের একটা কমিটি করা হবে। যার প্রধান আমি নিজে। এছাড়া অন্য সকল ধরনের সংগঠন বা কমিটি নিষ্ক্রিয় করা হলো। তবে ধর্মীয় সভায় কোনো বাধা নেই। বিশেষ বিশেষ দিন ছাড়া সর্বসাধারণ পতাকার ব্যবহার করতে পারবে না। পশুসঙ্গীতের উপর আপাতত কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
শুয়োর ১
আমাদের যে সাত দফা- পশুনীতি-তাতেই আমাদের মূল কথা।
[কুকুরগুলো গর্জে উঠে। ভয় পেয়ে অন্য শুয়োরগুলি বসে পড়ে। কুকুররা গার্ড দিয়ে লেফট রাইট করতে করতে লোফাকে নিয়ে যায়।]
[বিউগল বাজতে থাকে। সৈনিক পশুরা সশস্ত্র প্যারেড করে।]
রণসঙ্গীত
বল্ বল্ বল্
বল্ বল্ বল্
উচ্চ আকাশে নাচে ঈগল
নিচে পশুরা করে কোলাহল
নয়া দেশের তরুণ দল
বলরে বলরে বল।
বল্ বল্ বল্
বল্ বল্ বল্।
দৃশ্য- পাঁচ
[পরিশ্রান্ত পশুরা ধীরে ধীরে বাইরে থেকে খামারের দিকে ফিরতে থাকে। নিজেদের মধ্যে ফিসফাস করে কথা বলে। কুকুর পরিবেষ্টিত হয়ে একটা জিপে করে লোফা আসে। ‘প্রথম পশুখামার আমার শেষ পশুখামার’ গানটির সুর বিউগলে বাজতে থাকে। ঐতিহাসিক টিলায় দাঁড়িয়ে লোফা লেখা পাতা দেখে ভাষণ দিতে শুরু করে। কুকুররা সতর্ক পাহারা দেয়।]
লোফা
প্রিয় খামারবাসী। বন্ধু শুকরগণ। বিশ্বস্ত কুকুর পাল। অন্য খামারের পরামর্শদাতা এবং সাধারণ পশুবৃন্দ। শুভসন্ধ্যা। আমি এই পশুখামারের দায়িত্ব নিয়েছি তিরিশ দিবস পূর্ণ হলো। এর মধ্যে প্রায় সকল সেক্টরে আমরা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছি। আপনারা জানেন এই খামারের জন্যে আমি সশস্ত্র যুদ্ধ করেছি। তাই আমার দেশপ্রেম নিয়ে কারও মনে প্রশ্ন থাকা উচিত নয়। আপনাদের মতো আমিও এই খামারকে ভালবাসি। আর তাই আমার সিদ্ধান্ত আমরা আকাশ সড়ক নির্মাণ করতে চাই। আর এই জন্যে যদি খনিজ পদার্থ তেল-গ্যাস এমনকি চামড়া, পাশের খামারে বিক্রি করতে হয় তবে আমরা তাই করব। আমাদের প্রচুর পুঁজির প্রয়োজন। আমি অন্যান্য খামারের সাথে কথা বলেছি। তারা আমাদের খামার থেকে শ্রমিক নিতে রাজি হয়েছে। এর ফলে একদিকে আমরা যেমন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবো তেমনি অপরদিকে আমাদের আর বেকারত্ব থাকবে না। সমস্ত উন্নয়ন যাতে বাধাবিঘœহীন গতিতে এগিয়ে যায় তা আমার এই চৌকস কুকুরের দল নজর রাখবে। পশুখামার দীর্ঘজীবী হোক। পশুবাদ দীর্ঘজীবী হোক।
[লোফা সোজা বেরিয়ে যায়। কুকুররা গার্ড দেয়।]
নসু
ভাইয়েরা আমার- সবতে এমন ভ্যাবলা মাইরা গেছেন ক্যান? লোফা আকাশ সড়ক নির্মাণ করবে বলে আপনারা অবাক হইছেন? আরে মেঝর লোফাতো কোনোদিন আকাশ সড়কের বিরোধী নয়।
গাধা
লিডার তোজো যখন আকাশ সড়ক নির্মাণ করতে হলে খনিজ বিক্রির কথা বলেছিল- তখনতো তোমরা বিরোধীতা করছিলে।
নসু
আসলে তোজো ছিল একজন প্রতিক্রিয়াশীল। মানুষের দালাল। একটা জোচ্চোর পশু। তাকে সরানোর জন্য তার বিরোধীতার কৌশল দরকার ছিল। আসলে আকাশ সড়কের স্বপ্ন দেখেছিল মহান নেতা গর্বর রিং। যাও বন্ধুরা রাতটুকু বিশ্রাম কর- কাল থেকে আবার কাজে নেমে পড়তে হবে।
[সবাই ঘুম পাড়ানি গান শুরু করে। গাইতে গাইতে ঘুমে ঢলে পড়ে।]
গান
কাক বলে কাকুনী
আউলা চুল বেঁধে নি
সেই চুলে দেব ফুল
গাধার কানে ঘোড়ার দুল।
কাট্টুস কুট্টুস মট্টর ভাজা
খায় আমাদের সুখী রাজা
কুকুর ঘুমায় লোহার খাঁচায়
শুয়োর থাকে ইটের পাঁজায়।
আয়রে পিঁপড়ে ঘরে যাই
চিনির দানা কিনে খাই
আসবে না আর মাইনষের পো
ভ্যাপ্পোর ভোপ্পোর ভোপ্পো পো।
[মোরগের ডাকের সঙ্গে সঙ্গে সবাই উঠে পড়ে। আবার সবাই কাজ করতে শুরু করে। কেউ পাথর টানছে। কেউ মোট বইছে। কেউ পানি আনছে। সবাই খুব পরিশ্রম করছে। কুকুররা ঘুরে ঘুরে মাতব্বরি করছে]
গরু
ফিদা তোমার এতটা পরিশ্রম করা ঠিক না। যেকোনো সময় তোমার হার্ট বিকল হতে পারে। সেই ভোর বেলা উঠে শুরু কর আর রাত অবধি পরিশ্রম কর। মোটে চার ঘন্টা ঘুমাও। এটা কি ঠিক বল?
ফিদা
আমাকে পারতেই হবে। একবার যদি আকাশ সড়ক নির্মাণ হয়ে যায়! আর আমাদের কেউ ঠেকাতে পারবে না। আমাদের প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে যাবে।
গরু
কী জানি বাপু- আমি অতশত বুঝি না। আমার কেনো জানি মনে হয় কেবল অন্যের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। নিজেই যদি মরে যাই এত কাজ করে কী লাভ?
কুকুর
কী হলো- এত কথা কিসের- কাজ কর- কাজ কর।
[তারা পুনরায় কাজ করতে থাকে। লোফা প্রবেশ করে।]
লোফা
তোমাদের এখন লাঞ্চ ব্রেক। তোমরা বিশ্রাম নিতে নিতে কয়েকটা জরুরি কথা শুনে নাও। আমাদের সড়ক নির্মাণের কাজ যে গতিতে এগোচ্ছে তাতে হিসাব করে দেখেছি- যদি ছয় মাসের মধ্যেও কাজটি শেষ করতে চাই- তবে এখন থেকে শুক্রবারও আমাদের কাজ করতে হবে। তবে হ্যাঁ- এর জন্যে তোমাদের উপর কোনো জোর নেই। তোমরা যার যার ইচ্ছা মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তবে যে কাজ না করবে সে তার বরাদ্দ খাবারের অর্ধেক পাবে। পশু খামারের স্বার্থেই আমাদের এই নিয়মটা করতে হচ্ছে। এই নিয়ে কোনো ধরনের পোস্টার, ব্যানার, ফেইজবুক পোস্ট বরদাশত করা হবে না।
[লোফা চলে যেতে যেতে আবার ফিরে আসে। সবাই খাবার জন্য তৈরি হয়ে আবার স্থির হয়।]
আরেকটা কথা- সড়ক বানানোর সকল উপাদান আমাদের নেই। তাই অন্যান্য খামার মালিকদের সাথে আমাদের পণ্য বিনিময় করতে হবে। এমন কী কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের চাল ডাল বিক্রি করতে হতে পারে।
ঘোড়া
কিন্তু আমাদের সংবিধানে ছিল- পুঁজিবাদী মানুষের সাথে আমরা ব্যবসায় লিপ্ত হবো না।
লোফা
সংবিধান কোনো ধর্মীয় পুস্তক না যে তা পরিবর্তনযোগ্য নয়। তবু আমি কথা দিচ্ছি- সংবিধানে সংযোগ করা হবে। কিছুই কাটাকাটি করা হবে না।
গরু
আমরা এখনই প্রায় আধপেটা খেয়ে জীবন ধারণ করি।
কুকুর
এত কথা কেনো? সুযোগ পেলেই সব কথা সব জায়গায় বলা যায় না।
[সব কুকুর একসঙ্গে ঘেউ ঘেউ করে গর্জে উঠে।]
লোফা
এই থাম। থাম। আমি বুঝিয়ে বলছি। এখন বিতর্কের সময় নয়। সময়ের সাথে তাল রাখতে গেলে অনেক কিছু পাল্টে নিতে হয়। তোমরা কাজ কর খাও দাও ঘুমাও- তোমাদের আর ভাবনা কিসের? আমার বুদ্ধি পরিষদের সাথে পরামর্শ করে- আমি মানুষদের মধ্য থেকে একজন আইনজীবী নিয়োগ করেছি। সে আমাদের অসামান্য সব বুদ্ধি দিয়ে সাহায্য করবে। এ নিয়ে যাতে আর জল ঘোলা না হয় সেদিকে সবাই নজর রাখবে।
[কুকুরদের নিয়ে লোফা চলে যায়।]
নসু
বন্ধুগণ- আমার মনে হয় তোমাদের কেউ বিভ্রান্ত করছে। আমাদের মধ্যে এমন নিয়ম কী ছিল যে মানুষের সাথে ব্যবসা করা যাবে না? আমার মনে হয় তোজোর লোকজন গুপ্তচর হিসেবে কাজ করছে।
ঘোড়া
কিন্তু আমার যত দূর মনে পড়ে আমাদের মহান নেতা গর্বর রিং বলেছিলেন-
নসু
ছি-ছি-ছি কী ভয়ানক কথা! উনি ছিলেন একজন মহান পশু। ওনার নামে কী বলছো হে- উনি যদি বলতেন তবে আমাদের সাত দফার নীতিমালাতেই তার উল্লেখ থাকতো। না না তোমরা যদি এরকম ভুল ব্যাখ্যা কর তবে আমরা তার বিরুদ্ধে কথা না বলার আইন পাশ করবো।
গাধা
হয়তো আমাদেরই ভুল হচ্ছে। আমাদেরতো আবার কিছুই মনে থাকে না।
নসু
এইতো! এই হলো আনুগত্যের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। শেখো শেখো। জিননের কাছ থেকে বিশ্বস্ততা কাকে বলে শেখো। তোমাদের মাথা মোটা- না হলে তোমরা সহজেই বুঝতে পারতে সময়টা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। এখন শৃঙ্খলা বিশ্বস্ততা আনুগত্য অত্যন্ত জরুরি। এখন সকলে মিলে কাজ কাজ শুধু কাজ করে যাও।
[সকলে কাজ করতে থাকে। লোফা এবং ডঃ হেমলার একপাশে দাঁড়িয়ে আলোচনা করছে।]
হেমলার
মুগ্ধ! রিয়্যালি আমি একেবারে অভিভূত হয়ে গেছি। এই সুজলা সুফলা পশু খামারের সাথে যতদিন নিজেকে যুক্ত রাখতে পারব সে দিনগুলো আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
লোফা
আমরা চেষ্টা করছি আপনাদের সমকক্ষ হওয়ার।
হেমলার
ধন্যবাদ। আপনাদের এখন আর কেউ তলাবিহীন ঝুড়ি বলতে পারবে না। আপনাদের দেখে কার সাধ্য বুঝবে, আপনারা শত শত বছর অন্যের অধীনে ছিলেন?
লোফা
ধন্যবাদ। অনেক ধন্যবাদ- মি. হেমলার।
হেমলার
মি. লোফা- অনেকেই আপনাদের সাথে দীর্ঘস্থায়ী চুক্তি করতে আগ্রহী। মাটির নিচে সম্পদ রেখে কী লাভ- এগুলো বিক্রি করে উন্নয়নমূলক কাজ করুন। অবকাঠামোগত চেহারা পাল্টে দিন। আমরা সব সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে রেখেছি।
লোফা
চলুন- চলুন- আমরা শীতঘরে ঢুকে কর্মপন্থা ঠিক করে নেই।
[কাজ সেরে সবাই ফিরতে থাকে। লোফা এবং ডঃ হেমলার একটা কাচ ঘরে বসে মিটিং করছে। চুপিচুপি অন্য পশুরা এসে লুকিয়ে দূর থেকে দেখে।]
গরু
ভুট্টার পুরো প্রাসাদটায় এখন লোফা বসবাস করে।
ফিদা
নসু যে বলল- ওদের মাথার কাজ করতে হয়। তাই ওদের একটু নিরিবিলি শান্ত জায়গা না হলে কাজের অসুবিধা হয়।
ছাগল
আমি জানি লেডি সাজেনা এখন কোথায় থাকে। দশটা এ.সি লাগানো ঘরে। উর্দি যে ঘরটায় থাকতো সে ঘরটা এখন সাজেনা দখল করেছে।
মুরগি
আমি যে শুনেছি ওরা এখন খাটে ঘুমায়।
গাধা
খাটে না ঘুমালে কি নেতা হওয়া যায়? নেতাদের গোপনে ভোগ বিলাস করতে হয়- বেনামে সম্পদ বানাতে হয়- কন্যা পুত্রের নিরাপত্তার জন্য নিরাপদ দেশে পাঠাতে হয়- তা না হলে কিসের নেতা!
ঘোড়া
কিন্তু পশু সংবিধানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে কোনো পশু খাটে ঘুমাবে না।
গাধা
লিডাররা কখনও ভুল করতে পারে না। গাধা যতই পরিশ্রম করুক কোনোদিন ঘোড়া হতে পারে না।
ঘোড়া
নাহে আজ উঠি। এই মুরগি বন্ধু কাল আধ ঘন্টা আগে ডেকে দিও তো অনেক কাজ বাকি।
গরু
চলো- আমিও যাব-
ভেড়া
এই চল না-গো সপ্তবিধিটা একটু পড়ি। আমিতো পড়তে জানি না। কেউ যদি একটু পড়ে শোনাও।
গাধা
কে আর পড়ে শোনাবে- ঐ ফিদাই যা একটু পড়তে পারে। চল দেখি-
[অন্যদিকে সাতনীতির উপর আলো জ্বলে। ফিদা বানান করে করে পড়তে থাকে।]
গরু
দেখতো দেখতো ৪ নং বিধিটা যেন কী ছিল?
ফিদা
পশুরা খাটে ঘুমাবে না- চাদর দিয়ে-
পাখি
চাদর দিয়ে- চাদর দিয়ে- চাদর দিয়ে-
গরু
চাদর দিয়ে- কথাটা আগে শুনেছি বলে মনে পড়ছে না। ফিদা- তোমার কি মনে আছে?
[পশুরা একজন আরেকজনের সঙ্গে সমস্যাটা নিয়ে কথা বলে। কিন্তু কিছুই স্মরণ করতে পারে না। নসু তার দলবল নিয়ে এই পথে যেতে যেতে থামে।]
নসু
কী ব্যাপার? এই অসময়ে এখানে কী হচ্ছে? গুপ্তচরবৃত্তি নয়তো?
গরু
আরে না- না- ঐ সাতদফার নীতিগুলি পড়ার চেষ্টা করছিলাম।
নসু
তা কী পড়লে?
ফিদা
ঐ ৪ নম্বর বিধিটা-
নসু
ওহো- ভেবেছ আমরা সংবিধান লঙ্ঘন করে খাটে ঘুমুচ্ছি- তাই না? আরে বোকারা আমাদের চেয়ে বেশি আর কারা সংবিধান সংরক্ষণ করবে বলো- সংবিধানের একচুল এদিক সেদিকে আমরা যাই না। সংবিধানে খাটে শোয়া নিয়ে কোনো নিষেধ নেই- নিষেধ হলো চাদর বিছিয়ে শোয়ার মধ্যে। যাও যাও যার যার খোঁয়াড়ে যাও- আদিখ্যেতা- রাত হচ্ছে ঘুমাতে যাবে তা নয়- রাজনীতি হচ্ছে- রাজাদের ভাবনাটা রাজাদের ভাবতে দে- সকালে উঠে আবার ঝিমাতে থাকবে।
[তারা চলে যাওয়ার আগেই অন্য উইংস দিয়ে প্রবেশ করে কুকুরের দল ও অন্য শুয়োর।]
কী ব্যাপার তোমরা আবার কোত্থেকে?
শুয়োর
আকাশ সড়কটা দেখতে গিয়েছিলাম। আহা- দেখলে বুক ভরে যায়। এমন একটা জিনিস নিজেরাই তৈরি করছি, নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারি না।
কুকুর
আমরা যে এটা বানাতে পারি শুরুতে আমি এটা ভাবতেই পারিনি।
নসু
অনেক বুদ্ধি খরচ করে কাজটা এগিয়ে নিতে হচ্ছে।
গরু
তার জন্যে ফিদার তারিফ করতে হয়। ফিদা বেচারা অনেক পরিশ্রম করছে।
নসু
পরিশ্রম মেশিনও করতে পারে। আসল প্রশংসার অধিকারী হলো যে স্বপ্নটা দেখে।
ছাগল
যাই বলো সড়কটার দিকে তাকিয়ে আমার মন ভালো হয়ে যায়। মনে হয় সত্যি সত্যি আমরা একদিন সুখি হবো।
[বাইরে থেকে ভারি শব্দ হয়। সবাই কান পাতে। ধ্বংসের শব্দ বাড়ে। এক পর্যায়ে বিকট শব্দ করে সব কেঁপে ওঠে। কেউ কেউ দৌঁড়ে বাইরে দেখতে যায়। চোখে মুখে আতঙ্ক।]
গরু
কী ব্যাপার?
গাধা
কী হলো?
ফিদা
কী হচ্ছে?
ভেড়া
কেয়ামত- কেয়ামত হচ্ছে।
কুকুর
আকাশ সড়কটা ভেঙ্গে পড়ল।
নসু
স্যাবোটাইজ- নির্ঘাত স্যাবোটাইজ- শ্রমিক মালিকের বিবাদ- রাজনৈতিক কলহ- অন্তর্ঘাত- নিশ্চিত প্রতিপক্ষের কারসাজি- আপনারা জানেন কোন অদৃশ্য শত্রু আমাদের এত বড় ক্ষতি করতে পারে- যারা এই পশু খামারের উন্নয়ন চায় না- তারাই রাতের অন্ধকারে এই সর্বনাশ করেছে।
[লোফা প্রবেশ করে ঘুম ঘুম চোখে।]
লোফা
নসু- এর প্রতিশোধ আমরা নেবই নেব। বিশ্বাসঘাতকতা করে উন্নয়ন বন্ধ করা যাবে না। আমরা আবার নতুন উদ্যম নিয়ে কাজ শুরু করব-
স্লোগান
মানুষের দালালেরা
নিপাত যাক নিপাত যাক
ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও
গুপ্তচরের কালো হাত
চলছে লড়াই চলবে
শুয়োরের দল লড়বে।
দৃশ্য- ছয়
[আবহাওয়া ভালো নয়। কখনও ঝিরঝির বৃষ্টি। কখনও অন্ধকার হয়ে আসছে। কখনও বাতাস বইছে। তবু পশুরা কষ্ট করে কাজ করে যাচ্ছে। কাজ করতে করতেই মাঝে মাঝে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে।]
গাধা
এমনিতেই কাজ করে আর আনন্দ পাই না। তার মধ্যে এরকম আবহাওয়া-
গরু
তবে কি বাবুর ঘরের দোরে বসে গরম গরম চা খেতে ইচ্ছে হচ্ছে?
ভেড়া
যা বলেছো ভায়া-
ঘোড়া
একবার এই আকাশ সড়ক উদ্বোধন হলে আর আমাদের কষ্ট থাকবে না।
ছাগল
আর কত! সেই কবে থেকেই শুনে আসছি। অতদিন বেঁচে থাকলে হয়-
গাধা
বাঁচবো রে- বাঁচবো। গাধারা কোনোদিন মরে না।
মুরগি
জানো- তোজোর লোকজন সড়ক ধ্বংস করেনি। কৈতর বাইরে থেকে জেনে এসেছে।
গাধা
তবে-
কাক
এর মধ্যে এত দুইনম্বর মাল ছিল যে নিজেই ভেঙ্গে পড়েছে।
গাধা
লোফা কি এরকম ডাহা মিথ্যে কথা বলবে?
গরু
শুধু তাই নয়- আমিতো শুনেছি- এর মধ্যে যত খরচ দেখানো হয়েছে আসলে তত খরচ হয়নি। টাকা পয়সা নাকি বাইরে পাচার হচ্ছে।
গাধা
কী সব হচ্ছে- আর এদিকে আমরা পরিশ্রম করছি ডাবল ডাবল।
গরু
আমাদের সামনে মুলো ঝুলিয়ে রেখেছে- আসলে এ কাজ কোনোদিন শেষ হবে না।
গাধা
কিন্তু তোমাদের মনে নেই- নসু কত আন্তরিকভাবে বলল- আমাদের শ্রমেই একদিন পৃথিবী পাল্টে যাবে?
ভেড়া
রাখো তোমার বড় বড় কথা। আধপেটা খেয়ে কি কাজ করা যায় নাকি? আমরা সবাই আলুসিদ্ধ খাবো আর ওনারা খাবেন ঘি মাখন।
গরু
কী জানি বাপু- আমাদের অবস্থা হয়তো কোনোদিনই পাল্টাবে না।
গাধা
স্বপ্ন দেখো বন্ধু স্বপ্ন দেখো-
[সবাই মিলে গান ধরে]
গান
পণ করে সব লাগরে কাজে
খাটবো মোরা দিন কি রাত
খামার যখন নিজের হাতে
কিসের মান আর কিসের জাত।
[নসু ঢুকে গানের তালে তালে দুলতে থাকে। গান শেষ হলে আন্তরিকভাবে বলতে শুরু করে।]
নসু
পশু বন্ধুরা তোমরা জানো- খাদ্য বিক্রি করে দেয়ায় এখন আমাদের খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। তাই আমাদের খামার প্রধান মানুষের সাথে একটা ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে। এখন থেকে আমাদের সব মুরগির ডিম আমরা বিক্রি করে দেব। সেই টাকার বিনিময়ে আমরা প্যাকেট খাবার কিনে আনবো। হাতে নগদ টাকা পাবো। এতে করে আমরা আমাদের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবো।
মুরগি দল
সে কী কথা! [আতঙ্কিত]
মুরগি ১
আমরা ডিমে তা দেব। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাবো।
মুরগি ২
ডিম বিক্রি করা মানে আমাদের বাচ্চা হত্যা করা।
মুরগি ৩
আমরা নির্বংশ হয়ে যাবো। আমরা জীবিত থাকতে এ হতে দিতে পারি না।
স্লোগান
ডিম বিক্রি বন্ধ কর
করতে হবে
ডিম বিক্রির নামে হত্যা করা
চলবে না চলবে না।
নেতা তোমার ছলা কলায়
ভুলছি না ভুলবো না
নেতা তোমার অন্যায় আদেশ
তুলে নাও নিতে হবে।
[লোফার প্রবেশ ]
লোফা
কী ব্যাপার- এতো হৈ চৈ কেনো?
মুরগি ৩
মহান মান্যবর- আমরা আমাদের বাচ্চাদের হত্যা করতে পারবো না।
লোফা
কে তোমাদের বাচ্চাদের হত্যা করবে?
মুরগি
নসু যে বলল- সব ডিম বিক্রি করে দেবে-
লোফা
শুধু তাই নয়- এখন থেকে আমাদের চেষ্টা থাকবে বড় বড় আর বেশি বেশি ডিম দেয়ার।
মুরুগি
পর্যাপ্ত এবং পুষ্টিকর খাবার ছাড়া বড় বড় ডিম সম্ভব নয়। ক্ষুধা পেট থাকলে কি প্রজনন বাড়ে?
লোফা
অবশ্যই। ক্ষুধার্তের মধ্যেই বেশি বেশি প্রেম ভালোবাসা জাগে- ক্ষুধার্ত থাকলে প্রজনন ক্ষমতা বাড়বে ছাড়া কমবে না- হা হা-
মুরগি ২
মাননীয় প্রধান এই চুক্তি বাতিল করুন-
লোফা
বাজে বোকো না- আমার উপর ভরসা রাখো- একটা বড় কাজ করতে গেলে অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
মুরগি
দোহাই আপনার আমাদের কথাটা একবার ভাবুন- আমরা নির্বংশ হয়ে যাব।
লোফা
সকলের কথা ভাবতে গেলেতো আমাদের চলবে না। আমাকে দেখতে হয় সার্বিক উন্নয়ন। এই মুহূর্তের সমস্যা কাটিয়ে উঠার জন্য যা করা উচিত আমি তাই করছি।
নসু
জাতীয় স্বার্থে এই সামান্য ত্যাগ তুমি করতে চাও না!
মুরগি ১
কাকে সামান্য ত্যাগ বলছো- আমার সন্তানদের পৃথিবীর আলো দেখার আগেই খুন করে ফেলছো আর বলছো সামান্য ত্যাগ- পশুবাদ কি আমাদের এই শিক্ষা দেয় মাননীয় প্রধান?
লোফা
তোমাদের সাথে বাজে তর্ক করে সময় নষ্ট করার মতো সময় আমার নাই। তোমরা যদি স্বেচ্ছায় রাজি না থাকো তবে আমাকে অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে-
মুরগি
তোমরা যেই ব্যবস্থাই নাও, আমাদের জীবন থাকতে আমরা আমাদের সন্তানদের হত্যা করতে দেবো না।
স্লোগান
মাননীয় প্রধান তোমার কথা
শুনছি না শুনবো না
মাননীয় প্রধান তোমার মত
মানছি না মানবো না
কুকুর
এ-ই বেশি হয়ে যাচ্ছে। চুপ। একদম চুপ। আর একবার চিৎকার করলে গলা কামড়ে ধরবো।
লোফা
বেশ যতদিন না ওরা কথা শুনছে ওদের খাবার বন্ধ থাকবে। অন্য কোনো পশু যদি ওদের সাহায্য করে, তবে ওদেরও উচিত শিক্ষা দেয়া হবে। এখন থেকে আমার প্রিয় কুকুরের দল পুরো ব্যাপারটার উপর নজর রাখবে। যাও- ওদেরকে একা রেখে সকলে নিজ নিজ খাঁচায় যাও।
[সবাই নীরবে চলে যায়। মুরগিরা একে অপরের কাছাকাছি ঘেঁষে বসে। সবাই আলোর একই জোনের মধ্যে এসে পড়ে। সবাই মিলে একটা দুঃখের গান ধরে।]
গান
জননী কাঁদে জননী কাঁদে
জননী কেঁদে যায়
শত শহীদের মা
হিমালয়ের বুক থেকে
কান্নার রোল ওঠে
শত শত শহীদের মা।
কেটে যায় রাত্রি
কেটে যায় ভোর
শত জননীর হাহাকার
কত শত রক্ত
আর ঘাম বেঁচে খাই
তবু আমাদেরই উপর অবিচার।
[গানের শেষের দিকে ধীরে ধীরে আলো নিভে যায়। অন্য জোনে আলো জ্বলে। সেখানে অন্যান্য পশুরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে।]
গাধা
প্রায় দশ প্রহর পার হয়ে গেলো মুরগিগুলো কিছু খাচ্ছে না। এরমধ্যে কয়েকজন মারাও গেছে।
গরু
নসু বলল- না খেয়ে মারা যায়নি- কী একটা রোগে নাকি মারা গেছে। না খেয়ে কেউ নাকি মারা যায় না।
ছাগল
হবে হয়তো-
পায়রা
হার মেনে গেছে- হার মেনে গেছে। মুরগিরা হার মেনে গেছে- সমস্ত শর্ত মেনে নিয়েছে।
ঘোড়া
এ ছাড়া আর কী-বা করতে পারতো-
গাধা
কেমন জানি সব ভেঙ্গেচুরে আসে- ক্লান্তি আর অবসাদ মনে হয়-
[নসু প্রবেশ করে।]
নসু
আরে- এখানে সকলেই আছো দেখছি- তোমরাতো জানতেই- আমরা একটা এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলাম। সেই তদন্ত কমিশন অতি দ্রুত রিপোর্ট দিয়ে দিয়েছে- আকাশ সড়ক ভাঙার পিছনে তোজোর সুস্পষ্ট হাত রয়েছে। সে এখনো মানুষের সাথে মিলে আমাদের আক্রমণ করার ষড়যন্ত্র করছে। আবার তারা পশু খামার দখলে নিতে চায়। আমার হাতে আরেকটি তদন্ত রিপোর্ট আছে যা শুনলে তোমরা বোকা বনে যাবে। তোজো ছিল আসলে ভুট্টার গুপ্তচর।
গাধা
তা না বোধহয়- কারণ মানুষের সাথে যুদ্ধে আমরা তাকে আহত হতে দেখেছি- তার বা হাঁটু থেকে রক্ত ঝরতে দেখেছি- চিরদিনের মতো তার-
নসু
ওসব মিথ্যাচার- সব মিথ্যাচার- সব রটনা। বন্ধুগণ- আসলে সেসব ছিল সাজানো ঘটনা- তোমাদের চোখে মুখে ধুলো দেয়ার ব্যবস্থা। আসলে ঐ ঘটনা ঠিক ঐভাবে সাজানো হয়েছিল। তোজো ছিল আসলে চাঁদ তারার পক্ষে- বিশ্বাসঘাতক-
ঘোড়া
না- আমি বিশ্বাস করি না- তোজো বিশ্বাসঘাতক ছিল।
নসু
মাননীয় প্রধান স্পষ্ট ভাষায় বলেছে তোজো মানুষের গুপ্তচর ছিল।
ছাগল
উনি বলেছেন- উনি বলেছেন- তবেতো কোনো কথাই নেই।
নসু
এইতো একজন বিশ্বাসীর মতো কথা। বিশ্বাস হারানো পাপ। আনুগত্য- আনুগত্য না থাকলে অগ্রগতি আসে না। আমরা ইতোমধ্যেই খবর পেয়েছি তোজোর কিছু গুপ্তচর আমাদের মধ্যে আছে। তারা উন্নয়ন চায় না। তারা পিছন থেকে ছুরি মারার সুযোগে থাকে। আমাদের গোপন পরিকল্পনা তারা বাইরে ফাঁস করে দেয়। তাই আমাদের সকলের- সকলের চোখ কান খোলা রাখা উচিত-
[কুকুরগুলো একটা শুয়োরকে বাঁশে ঝুলিয়ে নিয়ে আসে। সাথে আসে লোফা। ফিদা তেড়ে যেতে চায়। লোফা তাকে থামায়।]
লোফা
নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছো। আমারই-তো জাত ভাই- তবু তাকে এ অবস্থায় আনতে হলো- কেনো? আমরা আজই খবর পেয়েছি আমাদের মধ্যে কিছু গুপ্তচর আছে। এ হলো সেই বিশ্বাসঘাতকদের মধ্যে একজন। কিন্তু আমি চাই- সে নিজের মুখেই নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করুক।
[লোফা কুকুরদের ইঙ্গিত করে। কুকুররা শুয়োরকে লাল আলোর নিচে নিয়ে যায়। নানা ধরনের টর্চার করে।]
কুকুর ১
তুই কি তোজোর লোক? আমাদের কথা পাচার করিস?
শুয়োর
না- না-না-
[প্রথম কুকুরকে সরিয়ে দ্বিতীয় কুকুর আসে। অত্যাচারের মাত্রা বাড়ায়।]
কুকুর ২
বল- বল তুই আকাশ সড়ক ধ্বংসের সাথে জড়িত।
শুয়োর
না- এ তোদের প্রভুরা করেছে- তাদের সীমাহীন লোভের কারণে।
[দ্বিতীয় কুকুরকে সরিয়ে তৃতীয় কুকুর আসে। দ্বিতীয় কুকুর স্যালুট দিয়ে সরে যায়। অত্যাচারের মাত্রা বাড়ে।]
কুকুর ৩
একটা ব্লেড আর লবন দাও। তুই একজন বিশ্বাসঘাতক- এই খামারের স্বাধীনতা নিয়ে ষড়যন্ত্রকারী-
[প্রথমে না না বললেও পরে অত্যাচারের মুখে না-হ্যাঁ বলতে বলতে মরে যায়।]
কুকুর
স্যার- এখানে আরও কয়েকজন তোজো ও ভুট্টোর সমর্থক লুকিয়ে আছে। এই দুজনের প্রমাণ পেয়েছি। [ছবি দেখায়] বাকিদের প্রমাণ পাওয়ার পর হাজির করবো।
[অন্য কুকুরদের ইঙ্গিত করে। কুকুররা মুরগিদের মধ্য থেকে যে দুই মুরগি তীব্র প্রতিবাদ করেছিল তাদের ধরে নিয়ে আসে। মুরগিদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্যভাবে পিটিয়ে শেষে মাথায় গুলি করে মেরে ফেলে। হত্যাপর্ব শেষ করে লোফা কুকুরসহ চলে যায়। পশুদের লাশ পড়ে থাকে। জায়গাটা রক্তাক্ত এবং ভীতিকর হয়ে ওঠে।]
গাধা
মানুষদের তাড়ানোর পর একটা ইঁদুর পর্যন্ত এখানে হত্যা করা হয় নি!
ঘোড়া
ওরা যদি বিশ্বাসঘাতক হয় তবে--- অবশ্য মাননীয় প্রধান যখন বলেছেন-
গাধা
তাই বলে এ রকম হত্যা! এ রকম দিনের স্বপ্ন আমরা দেখিনি- আমাদের যে বন্ধুরা যুদ্ধ করেছিল- তারা এরকম ভবিষ্যতের কথা ভেবে যুদ্ধে নামেনি- আমাদের শত শত যুবক পশুরা যারা দূরদূরান্তের পশু খামারে শ্রমিক হয়ে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠায়- তা কি এই জন্য?
গরু
সেই মুদ্রার কী অমায়িক ব্যবহার! কে বা কারা নাকি সাতশ মুদ্রা গায়েব করে দিয়েছে-
ভেড়া
এ অতি সামান্য- অতি সামান্য-
গরু
মুদ্রারক্ষক এ নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন।
গাধা
আমাদের শ্রম-ঘামের মুদ্রা অন্য খামারে চালান হয়ে যায়! এই জন্যে কি আমরা জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছিলাম? বয়সের দিকে তাকাই না- সারাদিন পরিশ্রম করি।
[সবাই মিলে গান ধরে।]
গান
আফ্রিকার পশু আর আর্মেনিয়ার পশু
কালো সাদা সব পশুরা শোনো
পশুদের এমন একদিন আসবেই
থাকবে না আর দুঃখ কোনো।
[নসু দলবলসহ ঢোল বাজাতে বাজাতে প্রবেশ করে। ঢোলের আওয়াজে পশুদের সঙ্গীত চাপা পড়ে যায়।]
নসু
খামার প্রধানের নির্বাহী আদেশ বলে ঘোষণা করা যাচ্ছে যে- পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত- যেকোনো ধরনের মরমি সঙ্গীত নিষিদ্ধ করা হলো। আর সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে- পশুসঙ্গীত এবং বিপ্লবগীতির প্রয়োজনীয়তা আমাদের ফুরিয়েছে। আমরা যে পশুবাদের জন্য এতদিন লড়াই করেছি- তা-তো আমরা অর্জন করেই ফেলেছি। ঐ সব স্লোগানধর্মী গান-কবিতা-নাটক উপযোগিতা হারিয়েছে, তাই নিষিদ্ধ। তবে- তবে কারও যদি সৃজনশীলতা বিশেষ চাগান দিয়ে ওঠে- তবে ভক্তিগীতি রচনা করতে পারে- কোনো বাধা নেই- না কোনো বাধা নেই। উন্নয়নের জোয়ার নিয়ে গান করলে বরং তাকে পুরস্কৃত করা হবে। হা-হা-হা-
[নসু দলবলসহ চলে যায়।]
গাধা
তোমরা কি কেউ কোনোদিন মৃত গাধা দেখেছো- মৃত গাধা- মৃত গাধা?
[গাধা নিজের বুক চাপড়ে হাহাকার করে।]
দৃশ্য- সাত
[সপ্তবিধির ব্যানারের উপর আলো। প্রত্যেক পশুর প্রতিনিধিরা উপস্থিত। তার সপ্তবিধির বাক্যগুলি পড়ার চেষ্টা করছে। বাক্যের প্রথমে বা শেষে কিছু কিছু শব্দ সংযোজন করা। সে জায়গাগুলো চকচক করছে বা চোখে লাগে।]
ঘোড়া
কোনো পশুই অন্য পশুকে হত্যা করবে না। কোনো কারণ ছাড়া।
ভেড়া
কোনো কারণ ছাড়া... কোনো কারণ ছাড়া...
গরু
ফিদা- এটা কি আগে ছিল?
ফিদা
কী জানি মনেতো করতে পারছি না।
ছাগল
পশুরা খাটে ঘুমাবে না- বিছানা পেতে-
পায়রা
বিছানা পেতে- বিছানা পেতে-
গাধা
বিছানা পেতে কথাটা কি আগে ছিলরে ছাগু?
ছাগল
কী জানি আমারতো কিছুই মনে পড়ছে না।
গরু
আমরা যে কেনো কিছুই মনে করতে পারি না।
[বিউগল বাজাতে বাজাতে লোফা প্রবেশ করে। সঙ্গে কুকুরের দল আছেই।]
লোফা
প্রিয় খামারবাসী- আপনারা ইতিমধ্যেই প্রচার মাধ্যমে জেনেছেন- আমাদের আকাশ সড়কের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। আন্তর্জাতিক পশুসংঘ থেকে প্রায় বিনা সুদে যে ঋণ আমরা পেয়েছিলাম তা শেষ হয়ে গেছে। এখন বাকি কাজটুকুর জন্য বাধ্য হয়ে আমাদের তিনটি গ্যাসকূপ এবং অদরকারি কাঠের গোলা অর্থাৎ মরা গাছ বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। কিন্তু- কিন্তু এই সমস্ত কাঠ আমি ঐ পশু বিদ্বেষী পদির কাছে বিক্রি করবো না। প্রয়োজনে আরও উত্তরে গিয়ে পতিনের কাছে বিক্রি করব। আর তাছাড়া ঐ পদি সবসময় আমাদের জলপ্রপাত বন্ধের চেষ্টায় আছে। জেনে শুনে এ রকম একজন পশু ঘাতক মানবিক মানুষের সঙ্গে আমি ব্যবসা করতে পারি না।
স্লোগান
জয়
খামার প্রধানের জয়
জয়
পশু রাজের জয়
[লোফার বক্তৃতার মধ্যেই একে একে বাকি পশুরা মঞ্চে আসে। কেউ ক্যামেরা বসায়, কেউবা ফটোগ্রাফি তোলে, কেউ নোট নেয়, কেউ রেকর্ড করে।]
নসু
আমার প্রিয় সাংবাদিক এবং সাংস্কৃতিক পশুরা- আপনারা শুনে আনন্দিত এবং আপ্লুত হবেন যে- আমাদের পশুরাজ এখনো পর্যন্ত সম্পদ বিক্রির টাকা হাতে না পেয়েই আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মকা- অব্যাহত রাখার জন্য থোক বরাদ্দ দিয়ে দিয়েছেন এবং সেই সঙ্গে আমি আরও জানাতে চাই- সকল সৃজনশীল পশুকে আজ আমরা একই প্লাটফর্মে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছি- এবং তাদের রাজভক্তির সম্মান স্বরূপ পশু পদক এবং পশু সনদের ব্যবস্থা করেছি। আপনাদের আর ধৈর্যচ্যুতি ঘটাব না। আপনাদের সামনে এখন স¦রচিত কবিতা আবৃত্তি করবেন আমাদের সর্বজান্তা প্রধান বুদ্ধিভ্রষ্ট কবি ছৈয়াল কুদকুদ। দীর্ঘ সাত বছর দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে কুদকুদ করতে করতে আজ এই স্থায়ী আসন তৈরি করেছেন তিনি- এগিয়ে আসছেন কবি ছৈয়াল কুদকুদ-
[শুয়োর প্রজাতির কবি কুদকুদ মঞ্চে উঠে আসে। বেশ একটা ভাব নিয়ে আবৃত্তি শুরু করে।]
কবিতা
হে পশু নেতা মহান লোফা
তুলনা তোমার নেইকো তোফা
সব শিয়ালের এক রা
তোমার দয়ায় আহার জোটে
আহা, বেঁচে আছে পশুরা।
তুমি আমাদের লাট বাহাদুর
ইরান তুরান রাজা
তুমিই আমাদের মহান শুয়োর
আমরা তোমার প্রজা।
[অনুষ্ঠান চলতে চলতে এই জোনে আলো ফেইড হয়ে আসে। অন্য জোনে দেখা যায় লোফা ও হেমলার পরামর্শ করছে।]
লোফা
পরিস্থিতি বুঝতেই পারছেন। আমাদের শত্রুরতো অভাব নেই। এই উৎসবের ডামাডোলের মধ্যেই কাজটা সেরে ফেলতে হবে। আমাদের বুদ্ধিভ্রষ্ট পশুরা একসঙ্গে খুব বেশি বিষয়ে মাথা ঘামাতে পারে না। আপনি পতিনের সঙ্গে ব্যাপারটা ফাইনাল করে ফেলেন। যত দ্রুত সম্ভব-
হেমলার
কিন্তু মি.লো আমারতো মনে হয় পইদ্যার প্রস্তাবে আপনার রাজি হওয়া উচিত।
লোফা
কিন্তু লোকটার নাম শুনলেই যে- কেমন পৈতে পৈতে ধর্ম গন্ধ-
হেমলার
তাতেতো আপনারই সুবিধা- জুজুর ভয়- পৈদ্দা এলো পৈদ্দা এলো ভয় দেখিয়ে খেলতে পারবেন। আর তাছাড়া পদির একটা প্রস্তাব আছে- [হেমলার অত্যন্ত গোপন কথা বলার ভঙ্গিতে বলছে।] টাকাগুলো দেশে আনার দরকার নেই। আপনার এবং আপনার প্রতিনিধিদের হিস্যা আপনাদের পছন্দনীয় অন্যদেশের ব্যাংকে ঢুকে যাবে।
লোফা
কিন্তু আমরা কীভাবে এর ব্যবহার করবো?
হেমলার
আপনাদের স্ত্রী ছেলে মেয়েদের শিক্ষা চিকিৎসার খরচ ঐখান থেকে চলে যাবে। আর আপনাদের আত্মীয়ন্বজন বা আপনারা যখন বিনোদন ভ্রমণে যাবেন ইচ্ছে মতো ভোগ করবেন।
লোফা
বাহ্! চমৎকার- আমি বুঝেছি- বুঝেছি- আসলে পদিকে যা ভেবেছিলাম সে আসলে তা নয়। উনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান দেখছি- তাকে আমার গণতান্ত্রিক অভিনন্দন।
হেমলার
আমি তাহলে টাকাটা জমা করার ব্যবস্থা নিচ্ছি।
লোফা
অবশ্যই- শুভ রাত্রি।
[হেমলার বেরিয়ে যায়। লোফা ইশারায় নসুকে ডেকে নেয়।]
লোফা
নসু- সবকিছু হিসাব করে পদিকেই তেল গ্যাস দেয়া ঠিক করলাম। পতিনের প্রস্তাব ভালো ছিল তবে- তোমার আমার কোনো আর্থিক লাভ হত না। আর আজকাল যে সমস্ত অত্যাধুনিক ক্যামেরার কথা শুনছি তাতে ফি বছর নির্বাচনে গেলে কারচুপি করাটা কঠিন হয়ে যাবে। তুমি একটু এদিকটা দেখ- সবাইকে বুঝিয়ে দিতে হবে- পদির সঙ্গে ব্যবসা করাটাই আমাদের জন্যে সবচেয়ে লাভজনক।
নসু
এ নিয়ে ভাববেন না। এমন নাচ গানের ব্যবস্থা করবো- সারাক্ষণ ওদিকেই তাকিয়ে থাকবে- অন্যদিকে তাকানোর সুযোগই পাবে না।
[এই জোন ফেইড হয়ে অন্য জোনে আলো জ্বলে ওঠে। অশ্লীল ধরনের গান নৃত্য চলতে থাকে। মুগ্ধ হয়ে সবাই মজে থাকে। অপর দিকে আলো আঁধারে কাঠ পাচার এবং পাইপ বসানো হতে থাকে। দু’জন মানুষ এসে লোফা আর নসুর সাথে ব্রিফকেস বদল করে। তাদের মধ্যে খুব উৎফুল্ল ভাব। নসু বেশ কিছু মুদ্রা নিয়ে অনুষ্ঠান মঞ্চে এগিয়ে যায়।]
নসু
বন্ধুগণ- উন্নয়নের পথে আমরা আরেক ধাপ এগিয়ে গেলাম। এতদিন যে সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন আমরা দেখতাম- এখন তা আমাদের হাতের মুঠোয়। এর জন্যে আপনারা যে রাতদিন পরিশ্রম করেছেন তার জন্য খামার প্রধানের পক্ষ থেকে আপনাদের জানাই অভিনন্দন। আর কয়েকদিনের মধ্যেই আমাদের আকাশ সড়ক উদ্বোধন হবে। আমি প্রস্তাব করছি- এই সড়কের নাম মহান নেতা লোফার নামে নামকরণ করা হোক।
[মৃদু কণ্ঠে এখান ওখান থেকে সমর্থন অসমর্থন আসে।]
জনৈক
হোক- হোক-
জনৈক
ঠিক নয়- ঠিক নয়- অন্য কেউ- অন্য কেউ-
ছৈয়াল
আমি এই প্রস্তাব আনন্দের সঙ্গে সমর্থন করছি।
স্লোগান
লোফা তুমি এগিয়ে চলো
আমরা আছি লেজের সাথে
নসু
ধন্যবাদ- সকলকে ধন্যবাদ। আমরা ইতিমধ্যেই ভোগ্য পণ্য আমদানি- [কুকুর এসে একটা চিরকুট দেয়।] কী! নোটগুলো জাল!
কুকুর
ইয়েস- নোটগুলো জাল। লোফা এবং হেলমার এদিকেই আসছে।
নসু
এ কী করে সম্ভব- যাক- বন্ধুগণ আমরা আবার এক ষড়যন্ত্রের মধ্যে পড়েছি। এসব তোজো এবং তার অনুসারীদের কাজ। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমাদের সমস্ত প্রচার মাধ্যমকে এই ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ খুলে দেয়ার আহ্বান জানাই।
[তাদের বশংবদ কিছু পশু কথার মাঝে মাঝে স্লোগান দেয়]
স্লোগান
সা¤্রাজ্যবাদের দালালেরা হুশিয়ার সাবধান
হুশিয়ার সাবধান সা¤্রাজ্যবাদের দালালেরা।
[লোফা তার প্রটোকলসহ হাজির হয়।]
লোফা
ওরা আমাদের ঠকিয়েছে। আমি আগেই বলেছিলাম- ওরা খুব একটা সুবিধার নয়। ওদের গায়ে ধর্মগন্ধ লেগে আছে- তবে যাই হোক আমরা হতাশ হয়ে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবার পশু নই। আমাদের মনে জোর আছে- পেশিতে বল আছে- আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এই সামান্য অর্থ আমাদের জাতীয় বাজেটের তুলনায় খুবই সামান্য। আমরা যদি আর এক ঘন্টা করে আমাদের পরিশ্রম বাড়িয়ে দেই তবে- এ ক্ষতি আমরা অল্প সময়ের মধ্যেই কাটিয়ে উঠতে পারবো।
[একটা পায়রা উড়ে এসে খবর দেয়।]
পায়রা
চ্যাংদোলা- চ্যাংদোলা করে ঝুলিয়ে রেখেছে- চ্যাংদোলা করে ঝুলিয়ে রেখেছে- আমাদের একজন গরুকে- খামারের সীমান্তে- খামারের সীমান্তে চ্যাংদোলা।
[লোফার কানে কানে নসু কথা বলে।]
লোফা
হ্যাঁ বন্ধুরা- ওরা যেকোনো সময় আমাদের উপর হামলা করতে পারে। যদিও আমাদের কুকুর বাহিনী ওদের সঙ্গে তিন ঘন্টাও লড়াই করার ক্ষমতা রাখে না, তবু আমার সকল বাহিনীকে সতর্ক অবস্থান নেয়ার ঘোষণা করছি। সেই সঙ্গে আমরা কূটনৈতিক তৎপরতাও চালিয়ে যাব। আপনারা আমাদের উপর আস্থা রাখুন একমাত্র আমরাই সংবিধানের মর্যাদা অক্ষুণœ রাখব। একমাত্র আমরাই- একমাত্র- মনে রাখবেন একমাত্র- আস্থা রাখুন- একমাত্র আমরা-
[সবাই চলে যায়। লোফার নিজের লোকজন থাকে। হেমলারের দিকে তাকিয়ে বলে-]
মি. হেমলার এইসব সামান্য বিষয় যদি আপনি ঠিকমত ডিল করতে না পারেন- তবে আপনাকে আমরা-
হেমলার
স্যার- আমাকে বাহাত্তর ঘন্টা সময় দিন সব সমস্যা সমাধান করে দিচ্ছি।
কুকুর
মাননীয় প্রধান- আমাদের শুধু দুই দিনের রিমা- মঞ্জুর করে দিন- দেখবেন যেকোনো পশুর মুখ দিয়ে স্বীকার করিয়ে ছাড়ব এই ঘটনার জন্য সে দায়ী।
লোফা
নসু- বিনোদনে আরো টাকা ঢালো- নাচ গান নাটকে ছয়লাপ করে দাও। বুঝছ না- হিট আইটেম আনো- হিট- পাশের খামার থেকে হায়ার করো- চোখ ধাঁধানো খেলায় রাখো- যাতে দম ফেলতে না পারে। সবকয়টাকে অনুদান দিয়ে কিনে ফেলো- কিনতে আর কয় টাকা লাগে- হা হা হা-
নসু
উৎসব তাহলে আসন্ন নবান্ন পর্যন্ত চালিয়ে যাই-
লোফা
চালাও- চালাও- যতক্ষণ না মুদ্রাগুলি আসল না নকল এটা ভুলে না যায়।
[আলো ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এর মধ্যেই কয়েকজনের একটা দল ঢোল বাজিয়ে গান করে। পরের দৃশ্যের জন্য কিছু পরিবর্তন হতে থাকে।]
গান
হেই-
ঢাক ঢাক ঢাক বাদ্য বাজে
বেয়াইর বাপের শ্রাদ্ধ
লাগ ভেল্কি চোখে মুখে
তবুও কেউ ক্রুদ্ধ।
কারও ভাগে কম পড়লেই
নানান রকম গোস্বা
সন্ধ্যা রাতেই সাজিয়ে বসে
গভীর রাতের জলসা।
হেই
ঢাক ঢাক ঢাক বাদ্য বাজে
বেয়াইর বাপের শ্রাদ্ধ
শুয়োর ছানা বার্লি খাবে
ভূসি তোদের বরাদ্দ।
দৃশ্য- আট
[বেশ কিছুদিন পরের এক রাত্রি। হেমলার বেশ জাঁকজমকভাবে দু’জন মানুষকে কুকুরসমেত গার্ড অব অনার দিয়ে নিয়ে আসে। তারা লোফার কাঁচ দিয়ে ঘেরা বাড়িতে চলে যায়। সেখানে আলো জ্বলে। কোনো এক পশু বিয়ারের কেস বহন করে নিয়ে যায়। রাত জাগা কোনো এক পশু এগুলো দেখে ফেলে। সে গিয়ে একজনকে ডেকে নিয়ে আসে। এভাবে একজন একজন করে পশুদের প্রতিনিধিরা জড় হয়। তাদের মধ্যে কিছুটা ক্লান্তি কিছুটা বয়সের ভার। তারা বেশ খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখে হেমলারদের পরখ করতে থাকে।]
ঘোড়া
এত রাতে হেমলার কেনো আসে- আচ্ছা সাথের লোকগুলোকে পাশের খামারের বলে মনে হচ্ছে না?
গাধা
হ্যাঁ ওরাতো মদির প্রতিনিধি- ওরাতো প্রায়ই আসে। না রে কৈতর?
গরু
ভিতরে বেশ হৈ চৈ হচ্ছে- ওরা মনে হয় মদ খাচ্ছে-
ঘোড়া
তোরও মনে হয় ইচ্ছা করে- যা না একটু চেয়ে চেখে আয়-
ছাগল
কয়েকজনকে দেখলাম ইয়া ভারী ভারী বাক্স বয়ে নিয়ে যেতে।
ঘোড়া
আচ্ছা কেউ কি বলতে পারিস- ওরা আমাদের পানি পথ বন্ধ করে দিচ্ছে- আমাদের শ্রম বাজার দখল করছে- আমাদেরকে সস্তা পণ্য দিয়ে বেশি দাম নিয়ে যাচ্ছে- তারপরও ওদের সাথে আমাদের এত খাতির কিসের?
গাধা
এটা নিশ্চয়ই কোনো কূটনৈতিক ব্যাপার- আমাদের মাথায় ঢুকবে না।
[একটা ছাগল হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে লাফাতে লাফাতে আসছিল। তার শিংয়ের সাথে বেধে একটা কাপড়ের আড়াল সরে যায়। সেখানে দেখা যায় নসু আর একটা কুকুর। নসু সপ্তবিধির বাক্য পরিবর্তন করছে। কুকুর রঙের কৌটা ধরে আছে। ছাগলের কারণে তাদের উল্টে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। সবাই অবাক হয়ে এগিয়ে যায়।]
ভেড়া
আরে এ দেখি নসু ভায়া- এত রাতে রঙ তুলি হাতে-
শিয়াল
সামনে আনন্দ উৎসব আসছে তাই মনে হয় লেখাগুলি রঙ করছে।
গাধা
বুঝেছি বুঝেছি- সেই যে বলেছিলাম না- লেজও নেই- মাছিও নেই-
গরু
ফিদা একটু পড়তো- আহা- বহুদিন পর সংবিধানটা একটু শুনি-
গাধা
মদ্যপানের বিষয়টা পড়- কী যেন ছিল বিধিটা-
ঘোড়া
কোনো পশুই মদ্য পান করবে না- অতিরিক্ত পরিমাণে।
[অতিরিক্ত পরিমানে কথাটা নতুন লেখা বোঝা যাচ্ছে।]
গাধা
অতিরিক্ত পরিমানে- অতিরিক্ত পরিমানে। যা আমরা ভুলে যাই- মনে রাখতে পারি না। এভাবেই হয়তো লিপিবদ্ধ হয়।
[কয়েকজন কুকুর এসে নসুকে সাহায্য করে।]
কুকুর
এখনও সেই সমস্ত বিধিবিধান নিয়ে পড়ে আছ তোমরা- দুনিয়া চলে যাচ্ছে কোথায় আর তোমরা-
[একটা ভেড়া কাঁদতে কাঁদতে আসে।]
ভেড়া
বাঁচাও- বাঁচাও- আমার জিসানরে বাঁচাও-
কুকুর
এই ভেড়ার বাচ্চা- কী হইছে আগে বুঝাইয়া বল-
ভেড়া
আমার জিসান ঘুমের মধ্যে হাঁটতে গিয়া পাইপের মধ্যে ঢুইকা পড়ছে- আমার জিসান- জিসানরে...
ঘোড়া
চল চল দেখি- সবাই চল- দেখি কী করা যায়-
[সবাই এক উইংস দিয়ে বের হয়ে আরেক উইংস দিয়ে ঢুকে। সবাই গোল হয়ে পাইপের মুখটা ঘিরে দাঁড়ায়। দড়ি লাইট ক্যামেরা ইত্যাদি ফেলে দেখার চেষ্টা করে। দেখতে দেখতে বিভিন্নজন বিভিন্ন সংলাপ দেয়।]
ক. দেখা যায়? কিছু কি দেখা যায়? ওটা- ওটা কী?
খ. আরে না একদম পরিষ্কার
গ. পাইপের ওপাশে একটা ক্ষীণ আলো দেখা যাচ্ছে-
ঘ. মনে হয় কিছু একটা নড়ছে-
ঙ. আরে কিসের- এতক্ষণ কি জীবিত থাকে নাকি?
চ. আগে তো উদ্ধার হোক-
ছ. কাউকে নামতে হবে এভাবে হবে না-
জ. কেউ নামলে আর উঠতে পারবে না। সাংঘাতিক রিস্ক।
[অবশেষে ফিদা নামার সিদ্ধান্ত নেয়।]
ফিদা
দেখি আমি নামব-
ছাগল
বলছ কী হে- তুমি!
গাধা
তোমার কি আর সেই বয়স আছে?
ফিদা
কাউকে না কাউকেতো দায়িত্বটা পালন করতে হবে।
[ফিদা ধীরে ধীরে নেমে যায়। নানানজন নানান কথা বলতে থাকে।]
ক. আস্তে আস্তে সোজা হয়ে-
খ. এই আপনারা একটু দূরে ব্যারিকেট করুন।
গ. আর মনে হয় নামতে পারছে না। দড়িটা ধীরে ধীরে ছাড়–ন।
ঘ. কিছু শুকনা খাবার ফেলা দরকার।
ঙ. এই দড়িতে টান পড়েছে।
চ. উঠে আসছে- উঠে আসছে আর একটু- আর একটু-
ছ. ফিদা শুধু দড়ি ধরে রাখো- আমরা টানছি- তোমাকে কিছু করতে হবে না-
শুধু দড়ি ধরে থাক।
[অনেক চেষ্টার পর ফিদা মৃত ভেড়াসহ উপরে উঠে আসে। কিন্তু সে নিজে অসুস্থ হয়ে পড়ে। নিস্তেজ হয়ে যায়। মৃত ভেড়াটি নিয়ে সবাই চলে যায়। ফিদার কছে কয়েকজন থেকে যায়।]
গাধা
ফিদা খুব বেশি খারাপ লাগছে?
গরু
দেখতো শ্বাস নিতে পারছে কিনা?
গাধা
আমার কিন্তু ভালো মনে হচ্ছে না।
গরু
হাসপাতালে নিতে হবে- না হলে বাঁচানো যাবে না।
ফিদা
মরে যাওয়া অত সহজ নয় বলেই বেঁচে থাকব। তোমরা কিছু ভেবো না।
[নেপথ্যে ঘোষণা ভেসে আসে।]
ঘোষণা
জাতীয় সংবাদ। জাতীয় সংবাদ। আমাদের তিনজন ফার্স্ট লেডি তথা শূকরী একসঙ্গে একত্রিশটি শূকর ছানা প্রসব করেছে। পশ্চিমা খামারের একটি ক্লিনিকে বাচ্চাগুলো সুস্থ এবং নিরাপদ আছে। সকলকে বর্তমান খামারের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারীদের- কল্যাণ কামনা করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
লোফা
বুঝলে হে সব কয়টা আসলে লোফার সন্তান।
ঘোড়া
তা নাও হতে পারে-
[হাসার চেষ্টা করে কিন্তু কষ্ট হয়।]
গরু
নব্য শুয়োরদের খরচের জন্যে- আবার লুটপাট বাড়বে।
গাধা
লুটপাটের কী দরকার! সব খরচতো খামারের কোষাগার থেকেই হয়।
ছাগল
আস্তে কও- আস্তে কও- গুপ্তচর কইয়া ধইরা নিয়া জবাই দিয়া দিব।
[সবাই উৎসবের আমেজে ঢোল বাজাতে বাজাতে এদিকে আসে।]
নসু
বন্ধুজন- এ বছর গরম যেমন বেশি পড়েছিল শীতও তেমনি জাঁকিয়ে বসেছে। গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় অনাবৃষ্টি শুরু হয়েছে। দিনে দিনে আমাদের আবহাওয়ায় অক্সিজেন কমছে আর কার্বন ডাই অক্সাইড বাড়ছে। যদিও আমরা সবসময় আগের আমলের চেয়ে বেশি উৎপাদন করে থাকি। তাছাড়া ইতিমধ্যেই তোমরা জেনেছো- একত্রিশটা শুয়োর ছানা জন্ম লাভ করেছে। যদিও তারা এই খামারের বংশদ্ভূত তবুও তাদের যথাযথ শিক্ষা-নিরাপত্তার জন্য পশ্চিমা খামারে মোটা অঙ্কের রসদ জোগান দিতে হবে। তাই এখন থেকে আপনাদের খাদ্য তালিকায় কিছু পরিবর্তন আসবে। যেমন সর্বসাধারণের খাদ্য তালিকা থেকে বার্লি এবং দুধ বাদ দেয়া হচ্ছে।
গাধা
এমনিতেই আমরা এসব খেতে পাই না আবার ঘটা করে ঘোষণা কেনো?
কুকুর
তোমাদের বুঝতে হবে- সেসব শুধুমাত্র শুয়োরদের জন্য- মাথা-মোটাদের জন্য নয়।
[বিউগল বাজিয়ে লোফা আসে।]
লোফা
আনন্দ কর! আনন্দ কর! আনন্দ ধ্বনি কর। তোমাদের আনুগত্যে আমরা মুগ্ধ এবং আপ্লুত। এই আনুগত্যই খামারের উন্নতির মূল উৎস। আমাদের উন্নতি দেখে অন্যান্য খামার প্রধানরা আশ্চর্য। তারা এখন আমাদের সমীহ করে কথা বলে। আমাদের কেহ আর এখন তলাবিহীন ঝুড়ি বলার সাহস করে না। ভবিষ্যতেও করবে না। আমাদের অদম্য পরিশ্রমের ফলেই আমরা আজ মর্যাদা পাচ্ছি। তাই আপনাদের সম্মানে এখন থেকে এই খামারের নাম প্রজাতান্ত্রিক পশুখামার ঘোষণা করছি।
স্লোগান
জয়
খামার প্রধানের জয়
জয়
প্রজাতন্ত্রের জয়
জয়
শুয়োর রাজের জয়
মুরগি
বাহ- কী চমৎকার বক্তৃতা দেয়- না?
গাধা
আমরা কি সত্যি সত্যি খুব উন্নতি করে ফেলেছি? কিন্তু কিন্তু-
গরু
কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছি না কেনো?
লোফা
অচিরেই তোমরা খাটে শোবে- পোশাক পরবে- লেজে রঙিন ফিতা বাঁধবে- এমন কী মদ্য পান করবে- উড়তে পারে না কিন্তু দু’পায়া এমন প্রাণীরা তোমাদের বন্ধু হবে। সেই দিনের জন্যে চাই আরও কাজ- কাজ আর কাজ-
গাধা
আমরা যেন কী হরিয়ে ফেলেছি- কী যেন হারিয়ে ফেলেছি-
পায়রা
দর্শন- দর্শন- দর্শন।
মুরগি
ধর্ষণ- ধর্ষণ।
ছাগল
আরে হালায় মোর্গা- ধর্ষণ না দর্শন।
ভেড়া
ফিদার খুব কষ্ট হচ্ছে। নসুকে বলে একটা ব্যবস্থা- অন্তত একটু উন্নত চিকিৎসা যদি-
[কয়েকজন মিলে নসুকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলে। নসু আশ্বাস দেয় এরা চলে গেলে একটা ব্যবস্থা নেয়া হবে।]
ফিদা
আমার ফুসফুসে কষ্ট হচ্ছে।
গাধা
চিন্তা কোরো না বন্ধু- তুমি ভালো হয়ে যাবে- নসুকে বলেছি সে তোমাকে ভালো হাসপাতালে নিয়ে যাবে- উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে।
ফিদা
আমাকে একটু ধরে ধরে হাঁটাও- শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে- মরে যেতে আমার ভয় নেই- কিন্তু তোমাদের জন্য কেমন মায়া হয়। আর কিছুদিন যদি বেঁচে যাই- তবে তবে এবার তোমাদের কিছু পড়ালেখা শেখাবো- এটা খুব জরুরি- বুঝলে খুবই জরুরি।
গাধা
কথা বোলো না তো- চুপ করে থাক- বিশ্রাম নাও।
[নসু এদিকে এগিয়ে আসে।]
নসু
কী হয়েছে ফিদা- কেমন লাগছে? লিডারতো তোমার কথা শুনে খুবই চিন্তিত- উনি বলেছেন প্রয়োজনে পশ্চিমা খামারের সেরা হাসপাতাল এলিবেলিতে নিয়ে যেতে-
গরু
না না ফিদা এখানেই থাক- এখানেই যদি একটু যতœ নিয়ে- ঐ মানুষদের হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে শেষে-
নসু
বোকার মতো কথা বোলো না- সঠিক চিকিৎসার জন্য সঠিক জায়গায় যেতে হবে।
[নসু ইশারা করে। তার দলবল ফিদাকে মাচায় ঝুলিয়ে কাঁধে করে নিয়ে যায়।]
ফিদা
আমার এই অবস্থার জন্য তোমরা দুঃখ পেও না। আমি ভালো হয়ে আবার ঠিকই ফিরে আসব- আর এবার যদি ফিরে আসি তোমাদের স্বরবর্ণ থেকে ব্যঞ্জনবর্ণে নিয়ে যাব। একদিন না একদিন তোমরা বর্ণ থেকে শব্দ- শব্দ থেকে বাক্যে যেতে পারবে- বাক্য পড়তে পারবে- মর্মার্থ বুঝতে পারবে- সেদিন হয়তো আমি থাকব না-
[ফিদা চলে যেতে যেতে শেষ বাক্য বলে।]
ভেড়া
ফিদা কি সুস্থ হয়ে আবার ফিরে আসবে?
গরু
ওর যে মনের জোর- ও ঠিকই আবার ফিরে আসবে।
গাধা
লিডার যখন উন্নত চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে- তবে এ যাত্রা হয়তো বেঁচে যাবে।
[মুরগি দল, পায়রা দল ভেড়ার দল এলোপাথাড়ি ছুটোছুটি করে।]
মুরগি
দেখো দেখো ফিদাকে নিয়ে যাচ্ছে- নিয়ে যাচ্ছে।
ছাগল
সবাই এসো- সবাই এসো- ফিদাকে হাসপাতাল নিয়ে যাচ্ছে।
[একটা গাড়িতে করে ফিদাকে নিয়ে যাচ্ছে। ফিদা ঘাড় গুজে বসে আছে। সবার হৈ চৈ শুনে ফিদা জানালা দিয়ে অসহায়ের মতো মুখ তোলে।]
গাধা
বোকার হদ্দ- সব বোকার হদ্দ- আমরা সব বোকা- দেখতে পাচ্ছ না গাড়িটার গায়ে কী লেখা?
ভেড়া
কী? কী লেখা?
গাধা
চ-প-য়ে আকার ব-য়ে শূন্য র চ-পা-র। চপার। মানে বোঝো ? মানে বোঝো তোমরা?
গরু
চপার চপার এরা-তো পশু হাড়ের ব্যবসা করে। পশু হাড় দিয়ে আঠা বানায়। তার মানে ফিদাকে কসাইখানায় নিয়ে যাচ্ছে।
ভেড়া
সে কী? কী বলছো তোমরা?
গরু
ভেবে দেখ- একবার ভেবে দেখ- এটা হাসপাতালের গাড়ি নয়?
গাধা
এটা কসাইখানার গাড়ি।
গরু
ফিদা বেরিয়ে এসো- বেরিয়ে এসো- ওরা তোমাকে মেরে ফেলবে।
[ফিদা মলিন মুখে তাকিয়ে থাকে। গাড়ি চলতে থাকে।]
ভেড়া
তোমাকে জবাই করবে।
ছাগল
তোমার চামড়া ছাড়িয়ে নেবে।
মুরগি
তোমার হাড় গুড়িয়ে দেবে।
গরু
ফিদা- ফিদা- দরজায় জোরে লাথি দাও- ভেঙ্গে ফেলো।
[তারা গাড়ির পিছন পিছন যাবে আর বলবে। গাড়ি বেরিয়ে যায়। কেউ কেউ গাড়ির পিছন পিছন চলে যায়। গাধা হতাশ ভঙ্গিতে ভেঙ্গে পড়ে।]
গাধা
ওরা মিথ্যা কথা বলেছে। ওরা হাসপাতালের কথা বলে কসাইখানায় নিয়ে যাচ্ছে।
[গাধা চিৎকার করে বলতে থাকে। তার পুরো শরীর প্রতিবাদ করতে থাকে। কুকুরের দল এসে ভয় দেখায়। হাত ধরে- ঘাড় ধরে- মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করে। শেষে টেনে বের করে নিয়ে যায়।]
দৃশ্য- নয়
[শুয়োরদের ঘরগুলোতে আলো জ্বলে ওঠে। সেখানে ভীষণ হৈ চৈ। নেপথ্যে ড্রাম বাজানোর শব্দ। কয়েকজন শুয়োর ব্যানার টানাচ্ছে। উপলক্ষ্য বিপ্লবের দশ বছর পূর্তি। গানের সুর ভেসে আসে। পায়ে পায়ে দু-একজন করে পশু এসে জমতে থাকে।]
গান
নিঝুম এই সন্ধ্যায়
শুয়োরে গান গায়
বানরে তবলা বাজায়---
গাধা
বুঝলে হে ছাগু- বিপ্লবের দশ বছর হয়ে গেলো। কিন্তু এখনকার পশুরা জানেই না এর প্রকৃত অর্থ কী? আমরা কী চেয়েছিলাম- কী স্বপ্ন দেখেছিলাম! কী বোকাই আমরা! এখনকার পশুদের বোঝানো হচ্ছে শুয়োররা একাই সফলতা এনেছে। একটা বিপ্লব করেই ভেবেছিলাম সব সমস্যার সমাধান করে ফেলেছি। না- না- ভুল ভেবেছি আমরা। সাধারণ পশুদের কোনো পরিবর্তন আনতে পারিনি। মানুষদের হাত থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে শুয়োরদের হাতে দিয়েছি কেবল।
ছাগল
না- না- এভাবে বোলো না। বিশ্বাস রাখো- বিশ্বাস হারানো পাপ। বিশ্বাস না থাকলে সব কিছু অন্ধকার হয়ে যায়।
গাধা
অপাত্রে বিশ্বাস রাখা যে নিশ্চিত ধ্বংস- এ আর তোমরা কবে বুঝবে- কবে বুঝবে? সব ধর্মবয়ান শোষকের পথ ধরে হাঁটে।
[টেলিভিশন বাক্সের ভিতর একজন হরিণীকে উপস্থাপিকা হিসেবে দেখা যায়।]
উপস্থাপিকা
প্রজাতন্ত্রের দশ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান মান্যবর লোফা- সকল সাধারণ পশুকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আমরা এখন উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দশ বছরের অর্জনগুলো তুলে ধরছি। সাক্ষাৎকারভিত্তিক রিপোর্টটি তৈরি করেছেন পঙপঙ। দেখুন পঙপঙের রিপোর্ট।
[একেকজন এসে উন্নয়নের কথা বলে যায়। বোঝা যায় তারা বেশ হোমরাচোমরা লোক।]
ক. এখন আর কোনো পশু ক্ষুধা কষ্টে মারা যায় না এবং তাদের জন্য পর্যাপ্ত বিজলির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
খ. নদী ভরাট করে আমরা কলকারখানা তৈরি করছি।
গ. খাবার প্রধানের খাবারে বিষ পরীক্ষা এবং শোবার ঘরে পাহারার জন্য পর্যাপ্ত অস্ত্রধারীর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঘ. শুকোরদের এখন আর খাটে শুতে এবং রঙিন পোশাক পরতে বাধা নেই। আর কিছুদিন পর সকল পশুই এই সুবিধা ভোগ করবে। শুধু তাই নয়- আমরা এতই উন্নতি করছি যে- আমরা খোয়াড়ে খোয়াড়ে ইডিয়ট বাক্স দেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছি।
[এই জোনে আলো চলে যায়। অন্য জোনে খামার প্রধানের ঘর। সেখানে তুমুল হৈ চৈ। মদ্য পান। নাচ। চিৎকার। ফূর্তি সমানে চলছে।]
লোফা
ধন্যবাদ সকলকে- মানুষের সাথে শুয়োরদের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হওয়ায় আমরা আনন্দিত। শুধু তাই নয়- আমাদের সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ধারণারও অবসান ঘটেছে। আমরা আসলে মানুষের প্রজাতি ধ্বংস করতে চাই না। এটা ভুল ধারণা। আমরা চাই পুঁজিবাদের পথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক।
পদি
কৌশলে শ্রমিক ঠকিয়ে- সুনিয়ন্ত্রিতভাবে শ্রম আদায়- তা সত্যিই আমাদের শিক্ষার বিষয়।
হেমলার
শুধু কি তাই- বামদের ডাইনের লাইনে ঢুকিয়ে- সোজা ঢাক্কা টু মক্কা।
পদি
অতপর হুক্কা- হুক্কাহুয়া- ওরে বাপরে বাপ- নমঃ নমঃ নমঃ- কী মুলোটা যে ঝুলিয়ে রেখেছো-
লোফা
আমরা পবিত্র সংবিধানের একটি শব্দও বাদ দেইনি। বরং প্রয়োজন মতো কিছু শব্দ শুধু যোগ করেছি।
হেমলার
যেমন ‘সব পশুই সমান’- এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে- কিছু কিছু পশু আলাদা। এরকম ছোট ছোট কিছু পরিবর্তন-
[লাল নীল আলো খেলা করে। শুয়োররা মানুষের মতো হাঁটতে গিয়ে গর্ব করে। মানুষরা কিছু একটা ভঙ্গি দেখায় অন্যরা সেটা নকল করার চেষ্টা করে। সবাই মিলে স্লোগান দিয়ে চিয়ার্স করে।]
স্লোগান
চার পায়ারা ভালো
দুপায়ারা আরও ভালো
[দূরে দাঁড়িয়ে অন্য পশুরা ভয়ে ভয়ে দেখে।]
গাধা
আমি কি ঠিক দেখছি? কেমন যেন সব ঘোলা ঘোলা- কোনটা মানুষ কোনটা শুয়োর কিছুই বুঝতে পারছি না। লোফার মুখটা কেমন মানুষের মতো মনে হচ্ছে না? আর ঐ যে মানুষ নাকি শুয়োর ঠিক ঠাওর পাচ্ছি না। শুয়োর মানুষ- মানুষ শুয়োর-শুয়োর শুয়োর- মানুষ মানুষ। আমাদের কি একটা বিধি ছিল না- সপ্তবিধি না কী যেন-
[উপরে একদিকে বিধিগুলো জ্বলছে নিভছে। সংশোধন সহ।]
ক. দুপায়া প্রাণীরা শত্রু নয় বন্ধু
খ. চার পা এবং পাখাওয়ালারা বন্ধু দুপায়ারা বড় বন্ধু
গ. পশুরা পোশাক পরবে না কখনও কখনও
ঘ. পশুরা খাটে ঘুমাবে না- চাদর পেতে
ঙ. কোনো পশু মদ্যপান করবে না- অতিরিক্ত পরিমানে
চ. কোনো পশু অন্য পশুকে হত্যা করবে না- বিনা প্রয়োজনে
ছ. পশুবাদের মূলকথা- সব পশুই সমান। তবে কিছু কিছু পশু আলাদা
[সপ্তবিধি যখন দেখানো হচ্ছে পশুরা করুণভাবে সংলাপ দেয়।]
গরু
বেঁচে থাকা ভীষণ আনন্দের-
গাধা
যদি পথ হারাও- হাতড়াও অন্ধকারেই হাতড়াও- বসে না থেকে হাতড়াতে থাকো-
ছাগল
এত আলো তবু কিছু দেখি না-
[একজন গান ধরলে অন্য পশুরা এসে যোগ দেয়। একেক স্তবক একেক সুরে গাইতে থাকে।]
গান
তারা হাট্টিমাটিম টিম
তারা সভায় পাড়ে ডিম
তাদের মাথাতে নাই শিং
তারা পশু জাতির কিং।
আমরা সবে পশুর
মানুষরা সব বিষ্ণু বসু
চামড়া তুলে মাংস খেয়ে
মানুষরা সব বীর
আমরা পশু তাদের পরে
নত করি শির।
চল চল চল
চল চল চল
পালিয়ে গেছে হায়েনার দল
তাদের সরিয়ে বন্দুকের নল
করছে কোলাহল।
এতদিন ছিল তবু স্বপ্ন
চোখের নীচে আজ শুধুই নরক
পচে গলে ছারখার চারপাশ
ন্যায় নীতি আর বিধিতে
লেগেছে মড়ক।
অপু শহীদ: নাট্যকার, গল্পকার। সদস্য- এথিক।