Bookmaker Bet365.com Bonus The best odds.

Full premium theme for CMS

শাইলক এ্যান্ড সিকোফ্যান্টস

Written by হাসান শাহরিয়ার .

Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..


[শাহযাদ ফিরদাউসের ‘শাইলকের বাণিজ্য বিস্তার’ উপন্যাস অবলম্বনে]
(একটি ট্রেন এইমাত্র ছেড়ে যাচ্ছে স্টেশন। একজন মধ্যবিত্ত প্যাসেঞ্জার, নাম নসীব সেকান্দর, ট্রেনটি ধরার জন্য আপ্রাণ দৌঁড়াচ্ছে। ট্রেনের একটি কামরা দেখা যায়। দরজায় দাঁড়িয়ে আছে একজন, আন্তোনিও, শাইলকের সহকারী। ভেতরে শাইলক, তাবৎ দুনিয়ার নিয়ন্ত্রণকারী, তাবৎ ক্ষমতার স্বত্ত্বাধিকারী। সাথে আছে শাইলকের আরও দুজন সহকারী। কামরাটি তাদেরই দখলে। কোনো কামরায় উঠতে না পেরে নসীব সেকান্দর এই কামরার দিকেই ছুটছে। প্রায় ধরে ফেলে ধরে ফেলে অবস্থা। কিন্তু আন্তোনিও নির্বিকার দাঁড়িয়ে সেকান্দরের ছুটে আসা দেখছে।

যখন শাইলকের ইতিবাচক ইশারা পায়, ঠিক তখনই এক ঝটকায় সেকান্দরকে কামরায় টেনে তোলে আন্তোনিও।  সেকান্দর ট্রেনের কামড়ায় ঢোকে এবং একটা সিট খালি পেয়ে বসে পড়ে)

সেকান্দর
সেই তো তুললেনই, মাঝে শুধু শুধু হয়রানি করালেন।

শাইলক
এটাকে হয়রানি বলা ঠিক হবে না। এই কামরায় আপনার ওঠার অধিকার নেই। তবুও বিপদে পড়েছেন বলে তুলতে হলো। এটা আপনাকে একটা উপকার করা, ঠিক?

সেকান্দর
তা ঠিক।

শাইলক
কাউকে উপকার করার আগে, তাকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দিতে হয় যে, সে যা পাচ্ছে সেটা সুলভ নয়। তাহলে কিছুকাল অন্তত সে উপকারটা মনে রাখে। (সহকারীকে) কফি দাও।

সেকান্দর
(কফি আনতে দেখে) রাত-বিরাতে এ কার পাল্লায় পড়লাম! ভুল কামরায় উঠে পড়লাম নাকি? নাহ্, এদেরকে তো ভালো মানুষের মতই লাগছে। (কফি হাতে নিতে গিয়ে নেয় না) কিন্তু তাতেই বা বিশ্বাস কী, চোর-ডাকাত হতে আবার চেহারা লাগে নাকি? শুনেছি অপরিচিত লোকের হাত থেকে কিছু খেতে নেই। কফি খাওয়া ঠিক হবে না।

শাইলক
আরেক কাপ কফি।

(সহকারী আরেক কাপ কফি দেয়। এবার কফি নেয় সেকান্দর)

শাইলক
এবার খান। চিন্তার কিছু নেই, এটা নির্ভেজাল কফি।

সেকান্দর
(সাথে সাথে আবার রেখে দেয়) হু, চিন্তার কিছু নেই। বললেই হলো। কাপটা তো আর আমার না। আগে থেকেই কিছু মেশানো আছে কিনা কে জানে।

(ইশারা পেয়ে সহকারী এই কাপটি শাইলককে দেয়। শাইলক চুমুক দেয়। সেকান্দর এবার সহকারীর বাড়ানো কাপটি হাতে নিয়ে নেয়)

শাইলক
বেশ, এবার নিশ্চিন্ত মনে খান। আপনি খুব সতর্ক লোক। (শাইলক ও সেকান্দর একসাথে) সতর্কতা ভালো। আমরাতো চোর-ডাকাত নই, ব্যবসায়ী, খান।

সেকান্দর
(জনান্তিকে) এতো দেখছি রীতিমতো অন্তর্যামী! ভাবার আসেই সব বুঝে ফেলে। জ্ঞানী-গুণীই হবে বোধহয়। (খুব শব্দ করে চুমুক দেয়, তারপর বলে) খুব দামী, না? (জনান্তিকে) এই যাহ, এটা কী বললাম! এত বড় মানুষদের সামনে কথা বলাটা কি ঠিক হলো? আমার জিভটাই আমাকে খাবে। এই জিভটার জন্যই কিছু করতে পারলাম না। (আরেকটা চুমুক দিয়ে কাপটি রাখে। প্রকাশ্যে) কিসের ব্যবসা আপনার?

(বলেই জিভে কামড় দেয়, জিজ্ঞাসা করাটা ঠিক হলো কিনা বুঝতে পারছে না)

শাইলক
কেনা-বেচা।

সেকান্দর
(জনান্তিকে) যাক বাবা, কিছু মনে করেনি। আর মুখ ফসকে কিছু বলছি না।

(সেকান্দর একটা পকেট থেকে কমদামী একটা সিগারেট বের করে ধরাবে কিনা ভাবছে। শাইলক আন্তোনিওকে ইশারায় এক প্যাকেট বেনসন সিগারেট দিতে বলে। আন্তোনিও এসে ট্রে থেকে বেনসন প্যাকেট দিয়ে আবার চলে যায়)

সেকান্দর
বাব্বা, একেবারে বেনসন! আজ কার মুখ দেখে যে উঠেছিলাম।

(একটা সিগারেট শাইলককেও অফার করে)

শাইলক
আপনার কাছেই রাখুন। আমি সিগারেট খাই না।

সেকান্দর
সে কি, আপনি খান না অথচ সঙ্গে রাখেন?

(প্যাকেটটা ট্রেতে রাখে)

শাইলক
ব্যবসায়ীদের এমন অনেক কিছুই সঙ্গে রাখতে হয় যা তারা নিজেরা ভোগ করে না।

সেকান্দর
ও, আপনি বুঝি ট্রেডার- ব্যবসায়ী, ঐ যে ... কী বলে ... ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট ... শিল্প-কারখানা ...

শাইলক
সব- ট্রেডার, ম্যানুফ্যাকচারার, মার্চেন্ট, ফিনান্সার, সব। দাদন, লগ্নি, মহাজনি, বন্ধকী এমন ব্যবসা নেই যা আমরা করি না।

সেকান্দর
তবে তো আপনার বিশাল ব্যাপার!

শাইলক
তা বলতে পারেন। বিরাট তো বটেই। বিশাল বলতে ঠিক কতোটা বোঝায় বলতে পারছি না। তবে সারা পৃথিবী জুড়ে আমাদের কারবার চলে।

সেকান্দর
তাই?

শাইলক
তাই।

(সেকান্দর আশ্চর্য হয়ে সবাইকে দেখে। ভাবে কারা এরা! কোন দেশের! ঘুরে আন্তোনিও-কেও দেখে)

সেকান্দর
আপনারা কোন দেশের লোক? ঠিক এ দেশের লোক বলে মনে হচ্ছে না। আর ইউ ফরেনার?

আন্তোনিও    
সে-অর্থে আমাদের কোনো দেশ নেই।

সহকারী ১
যেখানে যখন ব্যবসা জমাট বাঁধে সেখানে তখন কিছুকাল থাকতে হয়।

সহকারী ২
বিশেষ করে বড় কিছু শুরু করার আগে ঝোপ-খোপ স্বচক্ষে দেখে নিতে হয়।

সেকান্দর
তার মানে এদেশে বড় কিছু শুরু করতে যাচ্ছেন?

আন্তোনিও
শুরু করে দিয়েছি।

সেকান্দর
(চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ে, যেনো বুঝতে পারে) ঐ যে টাটা, ইউনিকোল, কনকোফিলিপস?  ... মানে ...  সমুদ্রের গ্যাস-ট্যাস তুলবেন ... ঐ ধরনের?
 
সহকারী ১
না, আমাদের ব্যবসা কেনা-বেচা।

সেকান্দর
সে তো আসেই বললেন। মানে, কী ধরনের কেনা-বেচা?

আন্তোনিও
সব ধরনের। যে-কোনো জিনিস কিনতে অথবা বেচতে পারি।

সহকারী ২
যা কিছু আপনি ভাবতে পারেন। বলুন, যে-কোনো বস্তুর নাম বলুন-

আন্তোনিও
আপনার লাগলে আমরা আপনার কাছে বেচবো, আপনি বেচলে আমরা কিনবো।

শাইলক
আমরা এখনই একটা ব্যবসা করে ফেলতে পারি। আপনি ভাবুন। আমরা একটু নিজেদের মধ্যে কথা সেরে নিই।

(শাইলক, আন্তোনিও আর ২ সহকারী একসাথে হয়। নিজেদের মধ্যে ল্যাপটপে বিজনেস পলিসি দেখে। সেকান্দর যেনো বিড়বিড় করে)

সেকান্দর
(জনান্তিকে) জমির কথাটা বলবো নাকি? বাবা, বউ-মেয়ে নিয়ে আমার টানাটানির সংসার। ছোট্ট একটা ব্যবসা না করলেই না। তাই তো বন্ধু মলয়ের কাছে যাচ্ছি ঐ এক টুকরা জমিটা বিক্রি করার ব্যাপারে। মলয় বলেছে কিনবে, ইদানিং সে আবার একটু-আধটু পয়সাওয়ালা হয়েছে কিনা, তাই বললো একটু বেশি দাম দিয়েই জমিটা কিনতে চায়। এতে যদি আমার একটু উপকার হয়। ... কিন্তু আজ নিয়ে তিনদিন যাচ্ছি, ওকে তো বাসায় পাওয়াই যায় না। এখন এরা এতো বড় ব্যবসায়ী, যদি জমিটা এদের কাছে বিক্রি করি তো নিশ্চয়ই লাভ হবে। দেব নাকি বেচে? না, এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না, দেখি আরেকটু সময় নিয়ে দেখি।

শাইলক
কী হলো, কিছু একটা বলুন? যে-কোনো কিছু আপনি বেচলে বলুন, কিনলেও বলুন।

সেকান্দর
দেখুন, আমি সামান্য মানুষ। ছোট্ট একটু জমি ... আমার এমন কিছু নেই যা ...

শাইলক
দেখুন, আপনি যে অর্থবান নন তা যে কেউ দেখেই বুঝবে। তারপরও যদি কিছু বিক্রি করতে চান তো বলুন।

সেকান্দর
তার আগে আমাদের পরিচয়টা ভালো করে হোক। (হাত বাড়ায়) আমার নাম নসীব ... ছোট্ট একটা চাকরি করি, ইদানিং ব্যবসা করার কথা ভাবছি, নসিব সেকান্দর।

শাইলক
আমি শাইলক।

সেকান্দর
শাইলক! শাইলকটা যেন কে? কোথায় পড়েছিলাম ...শা-ই-ল-ক, শেক্সপীয়র না?

শাইলক
হ্যাঁ। শেক্সপীয়রের শাইলক অর্থের বিকল্প হিসেবে মানুষের বুকের মাংস কেটে নিয়ে তৃপ্ত হতে চেয়েছিল।

সেকান্দর
হ্যাঁ হ্যাঁ, মনে পড়েছে।

(ওরা শেক্সপীয়রের ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস’ থেকে কিছু সংলাপ বলতে থাকে। সেকান্দর আগা-মাথা কিছুই বোঝে না)

শাইলক
Oh father Abram! what these Christians are,
Whose own hard dealings teaches them suspect

আন্তোনিও        

The thoughts of others!–
pray you, tell me this

সহকারী ১
If he should break his day, what should I gain
By the exaction of the forfeiture?

 সহকারী ২
A pound of man’s flesh, taken from a man,
Is not so estimable, profitable neither,
As flesh of muttons, beefs or goats. I say

সবাই
To buy his favour, I extend this friendship;
If he will take it, so; if not, adieu;
And, for my love, I pray you wrong me not.

শাইলক
কিন্তু আমি তেমন নই। আমি ব্যবসা করেই তৃপ্ত।
 
সেকান্দর
ও, আপনারাও কি Jew..w..w ইহুদী!

শাইলক
না, আমরা ব্যবসায়ী।

সেকান্দর
সে-তো হলোই, আপনার ধর্মটা জানতে চাচ্ছি।

শাইলক
সত্যি বলছি, যারা খাঁটি ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা ছাড়া আর কোনো ধর্ম থাকতে পারে না। আগে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ ব্যবসা করতো। এখন ব্যবসায়ীরা ধর্মান্তরিত। বাণিজ্যই তাদের ধর্ম। যাই হোক- বলুন, আপনি কী বিক্রি করবেন?

সেকান্দর
(জনান্তিকে) এবার জমির ব্যাপারটা বলা যায়। শালা মলয় ব্যাটা, বন্ধু হয়ে কতদিন ধরে ঘোরাচ্ছে। (হঠাৎ মনে হবে) ঘোরাচ্ছে মানে? ও তো কিনবেই না। বাসায় তো থাকেই না, একটা কিছু বলে পর্যন্ত যায় না। ওর বউটাও, দরজায় এমনভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, ভেতরে ঢোকা তো দূরের কথা, যেনো এক গ্লাস পানিও চাইতে না পারি। যা ব্যাটা, জমি বেচার লোকের অভাব আছে নাকি। দেখে যা কারা আমার সামনে বসা। (ইতস্তত) কিন্তু জমির দাম কত চাইবো ... মলয়ের কাছে দাম চেয়েছিলাম ৬০ হাজার টাকা। এখানে যদি ৮০ হাজারও পাই ... নাহ, দেখি, ১ লাখ চেয়ে দেখি। (হঠাৎ চিন্তিত) নাকি আরেকটু বাজিয়ে দেখবো। শয়তানের খপ্পরে পড়লাম নাতো?

শাইলক
কী হলো বলুন। যে-কোনো কিছুর নাম বলতে পারেন। দামে বনলে কিনে নেব।

সেকান্দর
আমি তো বললামই আমার কিছু নেই। দিনই চলে না, যতই দিন যায়, মনে হয়- যায় দিন ভালো ছিল। অতীতই
মনে হয় যেন আশির্বাদ।

শাইলক
অতীতকে আশির্বাদ মনে হয়?

সেকান্দর
জ্বি।

শাইলক
তাহলে তো আশির্বাদের একটা দাম আছে।

সেকান্দর
তা হয়তো আছে।

শাইলক
তাহলে তো অতীতেরও একটা দাম আছে?

সেকান্দর
হয়তো আছে।

শাইলক
ঠিক আছে, আমরা আপনার অতীত কিনতে পারি।

সেকান্দর
(আকাশ থেকে পড়ে) কী বলছেন!

শাইলক
আপনার অতীতই কিনবো। বলুন, আপনার অতীতের দাম কত চান?

সেকান্দর
আশ্চর্য! তামাশা করছেন? ধ্যৎ, আমি ভাবলাম আপনি সত্যিই ব্যবসায়ী, এখন দেখছি তামাশা করছেন।

শাইলক
তামাশা না মিস্টার সেকান্দর। আপনি আপনার অতীত বেচবেন কিনা বলুন, আমি দাম মিটিয়ে দিচ্ছি।

সেকান্দর
আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

আন্তোনিও
এখানে না বোঝার তো কিছুই নেই। আপনি বেচবেন-

শাইলক
আমি কিনবো-

সেকান্দর
আপনি আমার অতীত কিনে কী করবেন?

শাইলক
ব্যবসা করবো।

সেকান্দর
(বিস্ময় প্রকাশ করে) আশ্চর্য!

সহকারী ২
আপনি অকারণে পরপর বিস্মিত হয়েই চলেছেন।

সহকারী ১
অতীত কিনে আমরা ব্যবসা করবো।

সেকান্দর
কী ব্যবসা?

আন্তোনিও
কেনা-বেচা।

সেকান্দর
আমার অতীত নিয়ে আপনারা কার কাছে বেচবেন!

শাইলক
আমি কার কাছে বেচবো সেটা তো আমার ব্যাপার। আপনি আপনার ব্যাপার নিয়ে ভাবুন।

সেকান্দর
কেমন উল্টাপাল্টা কথা বলছেন।

শাইলক
না, একেবারেই সোজা কথা। লোকেরা রক্ত বিক্রি করে না? কিডনী বিক্রি করে না?

সেকান্দর
হ্যাঁ, তা করে। কিন্তু এগুলোর তো ব্যবহারিক মূল্য আছে।  চোখে দেখা যায়। অতীত তো-

শাইলক
চোখে দেখা যায় না। চোখে দেখা না গেলে কি ব্যবহারিক মূল্য থাকে না? আচ্ছা রুগীকে যদি অক্সিজেন দিতে হয়, সেই তো অক্সিজেন কেনা-বেচা হয়। অক্সিজেন আপনি দেখতে পান?

সেকান্দর
কিন্তু এর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াতো দেখা যায়। রুগী বেঁচে উঠছে, নিঃশ্বাস নিচ্ছে।

শাইলক
তাই?

সহকারী ১
আপনি কি জানেন চাঁদের মাটি এখন কেনা বেচা হয়? সমুদ্রের পানি কিনে নিচ্ছে, আকাশপথ কিনে নিচ্ছে জানেন? প্রকৃতি এখন কেনা-বেচা হচ্ছে। জানেন?

সেকান্দর
আসলে আমি এমন একটা দেশে বাস করি ...

শাইলক
নানান দেশের বীরদের জন্য যে অত টাকা খরচ করে সৌধ বানানো হয় ... কেন আপনাদের একটা জায়গায় ...

আন্তোনিও
সাভার।

শাইলক
হ্যাঁ হ্যাঁ, তো সেগুলো অত টাকায় বানানোর কোনো মানে হয়? এসবের কী কোনো ব্যবহারিক মূল্য আছে?

সেকান্দর
তা কিছুটা কি নেই? ধরুন স্মৃতি আছে, এর পেছনে ঐতিহ্য আছে,  ইতিহাস আছে ...

শাইলক
that’s the point, তা হলে তো বলবো, আপনারও স্মৃতি আছে, আপনারও ইতিহাস আছে- আমরা আপনার সমস্ত স্মৃতি, ইতিহাস কিনে নিতে চাই।

সেকান্দর
কিন্তু আমার মতো নগণ্য মানুষের ইতিহাস-স্মৃতি কোথায় বেচবেন, কে কিনবে?

শাইলক
আপনি কিন্তু আমার কাজ নিয়েই বেশি ভাবছেন? কোথায় বেচবো সেটাতো সম্পূর্ণ আমার ব্যাপার। আমি কোথায় বেচবো সেটা আমার বিজনেস পলিসি ধং বিষষ ধং বিজনেস সিক্রেসি, তাই না?

সেকান্দর
আমি আসলে বুঝতে ...

শাইলক
পারছেন না, এই তো? আমি আপনাকে বুঝিয়ে বলছি ...

আন্তোনিও
বস আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি। (সেকান্দরকে বোঝায়) মালিকানার প্রধান শর্ত, দখল করতে পারা, দখলে রাখতে পারা। আগে আপনার অতীতের মালিক হই, আপনি টাকার মালিক হোন, তারপর ...

শাইলক
বলুন, আপনার অতীতের দাম বলুন- কত হলে বেচবেন?

সেকান্দর
তাহলে আপনি গো ধরেছেন, কিনবেনই! ঠিক আছে, আমি আমার পরিবারের সাথে কথা বলে নিই, ওরা আবার  আমাকে পাগল-ছাগল ভাবে কিনা দেখে নিই।

শাইলক
অবশ্যই।

সেকান্দর
থ্যাঙ্ক ইউ।

শাইলক
কিন্তু মুশকিল হলো, এখন আপনার কাছে পাগলামী মনে হচ্ছে তো, এখন যদি বিক্রি করেন তো পাগলামীর দামসহ পাবেন। পরিবারের সাথে আলাপের পর যদি ভাবেন কোনো পাগলামী, মানে রিস্ক নেই, তখন কিন্তু আবার এই রিস্ক না থাকার মতো দামই পাবেন।

সেকান্দর
অ!

শাইলক
হ্যাঁ, এখন বলুন আপনার অতীত এখনই বেচবেন কিনা। নাকি পরে রিস্ক ফ্রি হয়ে আরও সস্তায় বেচবেন?

(খুব দ্রুত ওরা চারজন স্টেজে মিলিত হয়। একজন ল্যাপটপ নিয়ে হিসাবে বসে যায়। সবাই সেটা দেখে)

সেকান্দর
(জনান্তিকে) মহাবিপদে পড়া গেল দেখি। (তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নেয় যেনো) না বিপদ কী? আমার মতো ছাগল-পাগলের একটা অতীত সেটা এক গর্দভ-বোকা ব্যবসায়ী কিনতে চাইছে, দেরি করার তো কোনো মানে হয় না। তা ছাড়া সত্যিই তো পরে পানির দরে বিক্রি করতে হবে। না, রাজি হয়েই যাই। (দ্রুত শাইলকের সামনে আসে) হ্যাঁ, আমি রাজি। এখনই বেচবো।

শাইলক
গুড, ভেরি গুড। আপনার এই তড়িৎ সিদ্ধান্তের ... মানে পাগলামীর কারণে একটু বেশি দামই পাবেন। বলুন এবার আপনার অতীতের দাম বলুন।

সেকান্দর
(আবার যেনো বিপদে পড়ে) আমাকে জিজ্ঞেস করছেন! কী মুশকিল। এর দাম আমি কী করে বলবো? আপনি কত করে কিনেন সেই দরেই দিয়ে দিন।

শাইলক
সবার অতীত কি একই দরের? একেকজনের অতীতের দাম একেক-রকম, একেক সময় কিনলে একেক রকম। এমনও হতে পারে আপনার চেয়ে একজন চাকমা বা হাজং-এর অতীতকে আরো বেশি টাকা দিয়ে কিনবো। আপনিই বলুন কত চান।

সেকান্দর
(জনান্তিকে) নাহ, আসলেই তামাশা দেখছি। আমি কী করে বলবো দাম কত। নাকি একটা দাম বলে দেখবো! তামাশা কদ্দুর যায় দেখি। কত বলবো? জমিটা যেহেতু ১ লাখে বিক্রি করতে চেয়েছিলাম, অতীতের দামও অতই চাইবো নাকি? ধুর, পাগল-ছাগলের দাম অত হয় নাকি! কোথায় জমি আর কোথায় আমি! ১ লাখ না, ৫০ হাজার বলি। (প্রকাশ্যে) হ্যাঁ, আমাকে ...

শাইলক
না থাক। আপনি হয়তো দাম ঠিক করতে পারছেন না।

(সেকান্দর ভাবে বিক্রি বোধহয় হলো না। সে চিৎকার করে আবদার জানায়)

সেকান্দর
আমি বেচবো তো-

শাইলক
আপনার দেশে আপনি শুরুর ক্লায়েন্ট। সেজন্য আমি চাই না আপনি ঠকে যান। আমি আপনাকে একটা দাম ধরে দিচ্ছি দেখুন পছন্দ হয় কিনা।

(সেকান্দর দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ইতস্তত)

শাইলক
৮০ ... ( ৮০ হাজার ভেবে সেকান্দর খুশি হয় হয় এমন সময় শাইলক বলে) ৮০ লক্ষ টাকা।

সেকান্দর
(অবিশ্বাসে হতাশ হয়) ৮০ লক্ষ টাকা! আবারও তামাশা করছেন?

শাইলক
অ, স্যরি। আপনি বলছিলেন না, সে জন্য একটু চেপে দামটা বলছিলাম। যা হোক, যদি কম মনে হয় বাড়িয়ে দিচ্ছি, আপনার সাথে একটা ব্যবসা করার নিয়ত যেহেতু করেই ফেলেছি, সেটা ভাঙতে চাই না। ঠিক আছে রাউন্ড ফিগার ১ কোটি টাকা।

সেকান্দর
(উচ্ছ্বসিত হয়ে আবোল তাবোল বলতে থাকে) ১ লক্ষ, ১ কোটি, চিচিং ফাঁক ...

শাইলক
আপাতত আর বাড়াতে পারছি না। তবে ...

(সেকান্দর দ্রুত ওদের কাছে চলে আসে)

সেকান্দর
না না, বাড়াবার দরকার নাই। আমি ওতেই রাজি। ১ লক্ষ .. না না ... ১ কোটি ... ওই যা বললেন তাতেই রাজি।

শাইলক
রাজি? তাহলে কাগজপত্র তৈরি করে ফেলি।

সেকান্দর
এখানেই?

শাইলক
হ্যাঁ, এখানেই। আর আপনি চাইলে এখনই পেমেন্ট করে দিতে পারি।

সেকান্দর
এখন, এখানেই?

শাইলক
এখন, এখানেই।

(সাথে সাথেই বিদ্যুৎ চলে যায়। একটা হৈ চৈ পড়ে যায়, অন্ধকারের মধ্যে কিছু কথা শোনা যায়)

ওরা
শীট, ট্রেনেও লোড শেডিং। অর্ধেক চেকে আর অর্ধেক ক্যাশে।

সেকান্দর
এত টাকা সব আমার?

শাইলক
আপনার সাথে আন্তোনিও যাবে। ও আপনার সাথেই থাকবে।

সেকান্দর
না না, ওনার থাকার দরকার নেই। আমি বাড়ি যেতে পারবো।

শাইলক
আন্তোনিও চৌকস লোক। দক্ষ শুটার। ওর কাছে সব সময় অত্যাধুনিক অস্ত্র থাকে।

সেকান্দর
আমি বলছি তো তার দরকার হবে না। আমি নিজেই বাড়ি যেতে পারবো।

শাইলক
কিন্তু আমার তো দরকার আছে। আপনি যা বিক্রি করেছেন, আপনি নিজেই তো বললেন, তা দেখা যায় না। ওকে বন্ধু ভাবলেই আর কোনো সমস্যা হবে না।

সেকান্দর
আচ্ছা, বেশ তাই হবে।  

শাইলক
চেইন টানো।

সেকান্দর
আরে আরে চেইন টানলেন কেন?

শাইলক
২/১’শ টাকা ফাইন। দিয়ে দেব। বাই।

(সবাই চলে যায়। লাইট আসে। সেকান্দর আর আন্তোনিও গাড়িতে ওঠে। গাড়ি যাচ্ছে। সেকান্দর গাড়ির ভেতর ও বাইরে তাকাচ্ছে। গুটিসুটি হয়ে বসে থাকে, যেনো কোনো পূর্ব-অভিজ্ঞতা নেই। আন্তোনিও তার ল্যাপটপ নিয়ে মহাব্যস্ত। সেকান্দর আলাপ করতে চায় আন্তোনিওর সাথে)

সেকান্দর
আচ্ছা ... (নিজে নিজে, বিড়বিড়) যাহ, নামটাই তো ভুলে গেলাম ... শাইলক ... না না উনি তো শাইলক না, মনে পড়েছে এন্টিনিও ... আচ্ছা এন্টিনিও-

আন্তোনিও
আন্তোনিও, স্যার।

(সেকান্দর থতমত খায়। সে কোনোদিন স্যার সম্বোধন শুনেনি)

সেকান্দর
(জনান্তিকে) স্যার! আমাকে স্যার বলছে! যা বাবা, এক রাতের মধ্যেই কী হয়ে গেলাম! ও, হ্যাঁ, স্যার তো বলবেই, কোটিপতি বলে কথা। (প্রকাশ্যে) আন্তোনিও what is your country? আপনি কোন দেশের লোক, ইউরোপ?

আন্তোনিও
আমার কোনো দেশ নেই। পৃথিবীর সর্বত্র আমার দেশ। যেখানে শাইলক এ্যান্ড সিকোফ্যান্টস সেখানেই আমি।

সেকান্দর
ও, আপনারা শাইলকের ফ্রেন্ডস?

(আন্তোনিও মাথা নাড়ে- ‘না’)

সেকান্দর
ও, ফ্রেঞ্চ, মানে ফ্রাঞ্চ?

(আন্তোনিও মাথা নাড়ে- ‘না’)

সেকান্দর
কিন্তু একটা ফ্রেন্ডস না কী যেনো বললেন?

আন্তোনিও
সিকোফ্যান্টস, মানে স্তাবক। শাইলকের স্তাবক।

সেকান্দর
স্তাবক। বাহ, you speak fine bangla. একটু বিদেশি টান আছে, তবুও আপনি অনেক বাঙালির চেয়েও ভালো বাংলা বলেন।

আন্তোনিও
আমি এগারোটা ভাষা জানি।

(সেকান্দর অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, আন্তোনিও বলেই যায়)

আন্তোনিও
এবং প্রত্যেকটাই এমনভাবেই বলতে পারি।

সেকান্দর
আপনার মাদার টাঙ, মানে- মাতৃভাষা কোনটা?

আন্তোনিও
প্রত্যেকটাই আমার মাতৃভাষা।

সেকান্দর
(অবাক, বিড়বিড়) বাবার পরিচয় না-ও জানা থাকতে পারে, তাই বলে এতোগুলো মা! মানে কী! (প্রকাশ্যে) আপনার বন্ধু, শাইলকের মাতৃভাষা কোনটা?

আন্তোনিও
বন্ধু না বস। (গর্ব) অনেক, বিশ-পঁচিশটা।

সেকান্দর
বলেন কী!

আন্তোনিও
আমাদের কোম্পানীতে এখন পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ আর গুরুত্বহীন মিলিয়ে মোটামুটি ছ’শর বেশি ভাষায় কাজ করা হয়।

সেকান্দর
ছ’শ! বলেন কী!

আন্তোনিও
আরো শেখানো হচ্ছে। আশা করা যায়, আগামী দু’বছরের ভেতর পৃথিবীতে এমন কোনো ভাষা থাকবে না যে ভাষায় আমাদের কাজ-কর্ম চলবে না।

সেকান্দর
সে-তো হাজার হাজার।

আন্তোনিও
হ্যাঁ, তাই। তবে একই সঙ্গে অন্য একটা প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে, সেটা অনেক বেশি আধুনিক, more scientific.

সেকান্দর
কী রকম?

আন্তোনিও
পৃথিবীতে কেবল একটাই ভাষা থাকবে।

সেকান্দর
কী ভাষা?

আন্তোনিও
ইংরেজি।

সেকান্দর
(জনান্তিকে) ইস, ইংরেজিতে তো আমি একেবারেই কাঁচা। (মনে পড়ে) ও, আমি তো অঙ্কেও কাচা ছিলাম।

আন্তোনিও
একটাই ভাষা থাকবে ইংরেজি। আর সেই প্রক্রিয়াটা এমন দ্রুত আর ব্যাপকভাবে চালানো হচ্ছে, আশা করা যায় খুব কম সময়ের মধ্যেই পৃথিবীর অন্য সমস্ত ভাষাকে বিলুপ্ত করে দেয়া সম্ভব হবে।

সেকান্দর
দুটো ব্যাপার তো পরস্পরবিরোধী হয়ে গেল। একদিকে হাজার হাজার ভাষা শিখছেন, অন্যদিকে সমস্ত ভাষা বিলুপ্ত করছেন, উল্টাপাল্টা হয়ে গেল না?

আন্তোনিও
আপাতদৃষ্টিতে। এখানে একটা উদ্দেশ্য আছে।

সেকান্দর
উদ্দেশ্যটা কী!

(সেকান্দর গাড়ির বাইরের দিকে নজর দেয়। বাইরের অনেক দৃশ্য দেখে। বড় বড় বাড়ি আছে রাস্তার দুধারে। কখনো গাড়িতে বসে এসব দৃশ্য তার দেখা হয়নি। কিন্তু কান খোলা রাখে। আন্তোনিও-র সব কথা সে খেয়াল করে)

আন্তোনিও
পৃথিবীকে একটা ভাষাভাষী দেশ করে তোলা। আমরা সবার ভাষা শিখছি, তাদের সাথে সহজে কমিউনিকেট করার জন্য। কিন্তু তারা যদি লেনদেন করতে চায়, তা করতে হবে ইংরেজি ভাষায়। আমরা শিখছি সবারটা, কিন্তু সবাই শিখবে আমাদেরটা। দারুণ না?

সেকান্দর
(প্রশ্নটা ধরতে পারে না) কী জানি! হু, হয়তো বা...

আন্তোনিও
লেনদেনের প্রথম শর্ত হলো কোনো কিছুকে পণ্যে রূপ দেয়া। ইতিহাস-অর্থনীতি-দর্শন-বিজ্ঞান, সবকিছুকে পণ্যের মানে উন্নীত করতে পারলে তবেই না তার বিক্রি-বাট্টা সম্ভব।

সেকান্দর
কিন্তু সব কিছুকে তো আর আপনি পণ্যে পরিণত করতে পারবেন না। তাই না?

আন্তোনিও
কেন না? আপনি যে অতীত বিক্রি করলেন, আপনি জানতেন, আপনার মতো মানুষের অতীতও পণ্য হতে পারে?

সেকান্দর
না, মনে করিনি এবং এখনও যে করছি তা-ও না। আমার মনে হয় না, আপনারা আমার অতীতকে কোথাও বিক্রি করতে পারবেন। (ঠা-ায়) উহ!

আন্তোনিও
এনিথিং রং স্যার?

সেকান্দর
খুব ঠাণ্ডা।

আন্তোনিও
ড্রাইভার (এতেই কাজ হয়) ... স্যার, আপনার অতীত বিক্রি করতে পারবে কিনা সেটা একেবারেই শাইলকের লাভ-লোকসানের ব্যাপার। এখন আপনার কাছে টাকা আছে। এখন থেকে আপনার পরিবারের তো বটেই, আপনার মতামত ছাড়া দেশেরও কোনো ব্যাপারে কিছু করা হবে না।

সেকান্দর
তাই! হ্যাঁ হ্যাঁ, তাইতো। আচ্ছা- মানে আমি একটু বুঝে নিতে চাচ্ছি, একটা প্রশ্ন করবো?

আন্তোনিও
অবশ্যই স্যার। আপনার যেকোনো প্রশ্নের জবাব দিতে আমি বাধ্য। সব সময় মনে রাখবেন আমি আপনার সহকারী।

সেকান্দর
তা ঠিক। বলছিলাম যে, ভাষার কীভাবে বিক্রি-বাট্টা সম্ভব? মানুষের মুখের ভাষা কেড়ে নিয়ে নতুন ভাষায় তাকে কথা বলাবেন? পৃথিবীকে একটাই ভাষাভাষী দেশে রূপান্তরিত করবেন? এটা তো আজগুবি, অবৈজ্ঞানিক চিন্তা-ভাবনা।

আন্তোনিও
কমিউনিকেট করতে না পারলে পিছিয়ে যাবে, তাই টিকে থাকার জন্যই সবাই ইংরেজি শিখছে। ইংরেজি ভাষা
একটা পণ্য। আর পণ্য হিসেবে বাজারে আর সব ভাষার উপরে টিকে থাকার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। অচিরেই
অন্য সব বর্ণমালা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

সেকান্দর
বর্ণমালা বিলুপ্ত হবে মানে! কী বলছেন!

আন্তোনিও
স্যার, ইন্টারন্যাশনালি কেবল একটা ভাষা থাকবে।

সেকান্দর
(কাহিল হয়ে পড়ে) গরম লাগছে।

আন্তোনিও
ড্রাইভার (এতেই কাজ হয়)। স্যার, যা বলছিলাম, ইন্টারন্যাশনালি কেবল একটা ভাষা থাকবে, আর সেই ভাষায় যদি আপনি কথা বলতে পারেন, তাহলেই যথেষ্ট। এখানে আমার আপনার- এভাবে আলাদা করে দেখার দরকারই-বা কী? ভাষার উৎপত্তি হয়েছে কমিউনিকেট করার জন্য, সেই পারপাস সার্ভ করতে পারলেই তো ইনাফ।

সেকান্দর
আপনার কথাবার্তা এতো কর্কশ কেন? আপনি নি®প্রাণ, হৃদয়হীন লোকের মতো কথা বলছেন কেন?

আন্তোনিও
স্বাভাবিক স্যার। শাইলক এ্যান্ড সিকোফ্যান্টস-এর চাকরিতে ঢোকার সময় আমার হৃদয় বন্ধক রাখতে হয়েছে স্যার।

সেকান্দর
সে কী!

আন্তোনিও
হ্যাঁ, আমার হৃদয় বন্ধক দিয়ে আমি আমার ক্যারিয়ারের ব্যবস্থা করেছি। হৃদয়ের চেয়ে জীবন অনেক বড় স্যার (সেকান্দর এটা রিপিট করে)। শাইলক আমাকে জীবন দিয়েছে, আপনাকেও দিয়েছে। এসব নিয়ে আপনি মোটেও ভাববেন না স্যার। অতীত নিয়ে ভাবাটা বোকামী (সেকান্দর এটা রিপিট করে)। বেটার, আমরা জীবন নিয়ে ভাবি, সামনের দিকে তাকাই (সেকান্দর এটা রিপিট করে)। এগিয়ে যাই। স্যার আমাদের এখন নামতে হবে। আপনার বাড়ি এসে গেছে।

(সেকান্দর আলস্য কাটিয়ে দেখে বাড়িতে পৌঁছে গেছে। সে উল্লসিত হয়ে গাড়ি থেকে নামে)

সেকান্দর
মামনি, বাবা, সুরাইয়া। আরে কে কোথায় আছ, বেরিয়ে আস। আন্তোনিও, এটা আমার বাড়ি।

(বাবা বেরিয়ে এসে বসে। সেকান্দর আর আন্তোনিও দেখতে পায় না। বাবা একটা চেয়ারে বসে। বাবাও ওদের দেখতে পায় না। স্বভাবসুলভ পত্রিকা পড়ে)

আন্তোনিও
স্যার, আপনি আপনার পরিবারের সাথে সময় কাটান, প্রয়োজনে আমাকে ডাকবেন।

সেকান্দর
দেখুন আমার ছোট্ট দুটো ঘর। ঐ যে বাইরের ঘরটি, সেখানে আপাতত থাকতে হবে। আপনার কষ্ট হবে, কিন্তু কালই আমি লোক এনে ঘরটা ঠিক করে দিচ্ছি।

আন্তোনিও
আপনি কিছু ভাববেন না, আমরা এসব ব্যাপারে অভ্যস্ত। আপনি অনুমতি দিলে আমি ঐ ঘরটাতে গিয়ে বসি।

সেকান্দর
জ্বী, আমি চা পাঠিয়ে দিচ্ছি।

(চলে যায় আন্তোনিও। সেকান্দর বাবাকে দেখতে পায়, কাছে আসে, সালাম করে)

সেকান্দর
আমাদের দুঃশ্চিন্তার দিন বোধহয় শেষ হলো বাবা। আপনি দোয়া করবেন।
 
বাবা
এক টুকরো জমি, শেষ পর্যন্ত বিক্রি করেই দিলে! যাক, এখন যা করবে সাবধানে করবে। আর তো কিছু হাতে রইলো না।

সেকান্দর
হাতে রইলো না মানে! আমার হাতেই তো এখন সব। এই দেখুন (টাকার থলে খুলে দেখায়) এই দেখুন কত টাকা!

বাবা
(শঙ্কিত) এত টাকা কোথায় পেলে?

সেকান্দর
এত টাকা বলছেন! এত টাকা যে কত টাকা সেটা আন্দাজও করতে পারবেন না বাবা।
 
বাবা
এটুকু জমিতে ...

সেকান্দর
(নেপথ্যে) সুরাইয়া। সুরাইয়া, দেখে যাও।

বাবা
আমি ভেতরে গেলাম। পরে কথা বলবো।

(বাবা চলে যায়)

সেকান্দর
সুরাইয়া। এই সুরাইয়া।

(সুরাইয়া কোনো কাজ করছিলো, সে আসে, ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে)

সুরাইয়া
কী?

(সেকান্দর উল্লসিত হয়ে সুরাইয়াকে জড়িয়ে ধরতে যায়, সুরাইয়া ধাক্কা দেয়। সেকান্দর থলিটার ভেতরে টাকা দেখায়। সুরাইয়ার যেনো মাথা ঘুরে যায়)

সুরাইয়া
পা-পা-পানি।

(সেকান্দর পানি খাওয়ায়)

সুরাইয়া
এত টাকা!

সেকান্দর
হ্যাঁ, এত টাকা, আর এই সব টাকাই এখন আমাদের।

সুরাইয়া
কী বলছো? কোথায় পেলে? মলয় দা, এত টাকা দিল? কথা বলছো না কেন?

সেকান্দর
চুপ চুপ- দরজা জানালা বন্ধ কর। (সুরাইয়া বন্ধ করতে যায়) কথা বলার ফাঁকটা দিচ্ছ কোথায়? তোমার প্রশ্নই
তো শেষ হচ্ছে না। আমার মামনি কোথায়? মিনি, মিনি (তারপর উঠে দরজার দিকে তাকিয়ে একবার বলে)
মামনি-

সুরাইয়া
ওর মামা নিয়ে গেল। কয়েকদিন থাকবে।

সেকান্দর
কে? ওর মামা! শালা, নেয়ার আর সময় পেল না। এমন একটা সুখের দিনে ... সুখ না সুরাইয়া?

(সেকান্দর উন্মাদের মতো হাসে। সুরাইয়া সেকান্দরের কাছে আসে)

সুরাইয়া
হাত মুখ ধুয়ে নাও। খেয়ে দেয়ে সব শুনবো।
 
সেকান্দর
(হাত টেনে ধরে) খাওয়া দাওয়া পরে হবে। আগে তোমাকে মন ভরে একটু দেখি।

সুরাইয়া
ইস, ছাড়ো। কেউ দেখে ফেলবে?

সেকান্দর
দেখুক, যে যেখানে আছে, সবাই দেখুক। কষ্টের দিনে যারা ফিরেও তাকায় নি, দুঃখের দিনে যারা ফিরেও তাকায়নি, তারা দেখুক (সুরাইয়াকে জড়িয়ে ধরে) আজ আর আমাদের কষ্ট নেই, দুঃখ নেই- কেবল সুখ, কেবল সুখ আছে গো সুরাইয়া, কেবল সুখ।

সুরাইয়া
পাগলের দেখি পাগলামীতে পেয়েছে।

সেকান্দর
যা ঘটে গেল, তারপর যে পাগল হবে না, তার চেয়ে বড় পাগল আর কে আছে এই বিশ্বসংসারে সুরাইয়া?

সুরাইয়া
যাও তো, কাপড় ছেড়ে আস।

(সেকান্দর উন্মাদের মতো সুরাইয়াকেও কাপড় খুলতে ইশারা করে। হাত ধরে টানাটানি করে। সুরাইয়া ছাড়িয়ে নিতে চায়। বাবার ডাক শোনা যায়)

বাবা
(নেপথ্যে) সেকান্দর।

সুরাইয়া
ইস্, ছাড়ো।

(সেকান্দর ছাড়তে চায় না। তবুও জোর করে সুরাইয়া ছাড়িয়ে চলে যায়। বাবা ঢোকে)

বাবা
সেকান্দর।

সেকান্দর
আমি তো আসছিলামই বাবা।

বাবা
তোমার কখন না কখন সময় হবে।

সেকান্দর
সারারাত বেশ ঝক্কি গেল তো, ভাবলাম একটু রেস্ট নিয়ে কথা বলি।

বাবা
ও, তাহলে রেস্ট নিয়েই এসো, তোমার সাথে কথা আছে।

সেকান্দর
কিছু হবে না, রেস্ট পরে নিলেও হবে। আপনি কিছু জানতে চাচ্ছেন?

বাবা
তুমি বুঝতে পারছ না? আমার মনে হচ্ছে তুমি মারাত্মক কিছু করেছ, মারাত্মক অন্যায় কিছু, হয়তো তার চেয়েও বেশি কিছু।

সেকান্দর
বিশ্বাস করুন আমি কোনো অন্যায় করিনি।

বাবা
তুমি বিশ্বাস কর সেকান্দর, আমি সেটাই বিশ্বাস করতে চাই। কিন্তু ... সেকান্দর তুমি মারাত্মক কিছু করেছ। তুমি আমাকে বলো, এত টাকা তুমি কোথায় পেলে?

সেকান্দর
আপনি ঠিক মতো বুঝতে পারবেন না বলেই, ভাবলাম পরে বুঝিয়ে বলি। মানে ... বিষয়টা একেবারে নতুন, আধুনিক, একেবারে মডার্ন।

বাবা
সেকান্দর, আমি তোমার বুঝদার বাবা, শিক্ষিত বাবা। বুঝিয়ে বললেই বুঝব, বলো।

সেকান্দর
তা বুঝবেন। মুশকিলটা কোথায় জানেন, পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেছে। এখন দুনিয়ার প্রায় সব কিছুই কেনা-বেচা হয়, কেনা-বেচা সম্ভব।

বাবা
তা বেশ তো। কেনা-বেচা করা গেল, তারপর?

সেকান্দর
আমি কীভাবে বোঝাই, কী বলি- আমি আমার অতীত বিক্রি করে দিয়েছি।

বাবা
অতীত! মানে ইওর পাস্ট? হোয়াট ডাজ ইট মিন?

সেকান্দর
ইট মিনস ... সেজন্যই তো বললাম আপনি বুঝবেন না। আমার যে একটা তুচ্ছ অতীত জীবন ছিল, অভাবের অতীত ছিল, সেটা অনেক বেশি টাকায় একজন বোকা ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছি।

বাবা
কী বলছ সেকান্দর! অতীতও বিক্রি করা যায়!

(সেকান্দর তড়িৎ বাবাকে বোঝায়)
 
সেকান্দর
তবে আর কী বলছি বাবা। ইচ্ছা করলে আপনি, সুরাইয়া, মিনি ...
 
বাবা
তোমার অতীত কিনে ওরা কী করবে?

সেকান্দর
সেটা তো তাদের ব্যাপার। আপনি আমাদের কথা ভাবুন। আমাদের তো টাকা হলেই হয়।

বাবা
তা হয়, কিন্তু বিষয়টা এতটাই নতুন লাগছে যে, আমার বুঝে উঠতেই...

সেকান্দর
কষ্ট হচ্ছে? (উত্তেজনায় বাবার কাঁধে/হাটুতে চাপড় মারে, মেরেই আরও বোকা হয়ে যায়) আমারও প্রথম কষ্ট হচ্ছিল। এক সময় মনে হলো তামাশা। পরে দেখি না, তামাশা না। ওরা সত্যি সত্যিই আমার অতীত কিনে, স্ট্যাম্প দলিল করে, এতগুলো টাকা দিয়ে দিল।

বাবা
মানুষ অভাবে পড়লে অনেকে এর সুযোগ নেয় সেকান্দর।

(নেপথ্যে সুরাইয়া ডাকে)

সুরাইয়া
এই শোন-

(সেকান্দর ইশারায় না করে- বাবা ইতস্তত খেয়াল করে। কথায় ফেরে)

বাবা
বলছিলাম, মানুষ অভাবে পড়লে অনেকে এর সুযোগ নেয় সেকান্দর। ওরা তোমাকে কোনো বিপদে ফেলবে নাতো?

সেকান্দর
কী যে বলেন না বাবা। বিপদের কী আছে? আমি আমার অতীতের সব যন্ত্রণা, কষ্ট, বিক্রি করে দিয়েছি।

বাবা
যন্ত্রণা বলো কষ্ট বলো সবই তো জীবনের অংশ। জীবনকে বিক্রি করা ... আমি বুঝতে পারছি না, তুমি কোনো
ভুল করো নি তো?

সেকান্দর
এখানে ভুলের কোনো সুযোগ নেই। (নেপথ্যে) সুরাইয়া-

বাবা
তুমি যা বিক্রি করেছ, সেখানে তো তোমার স্মৃতি আছে, অনুভূতি আছে। সেই অনুভূতি বিক্রি করলে তো মুশকিল সেকান্দর। তোমার যদি অনুভূতিই বিক্রি হয়ে যায়, তবে সব সম্পর্কও বিক্রি হয়ে গেল। (সেকান্দর ইতস্তত, কিছুটা বিরক্ত) তোমার আনন্দ বেদনার সাথে তো তুমি একা জড়িত নও। সেখানে আমি আছি, তোমার মেয়ে আছে, সুরাইয়া আছে ... তোমার মা- তোমাকে জন্ম দিতে গিয়ে যে চলেই গেল চিরতরে, সে-ও তো জড়িত। (বাবাও খেয়াল করে, সেকান্দর বিরক্ত) তুমি আমার কথায় রাগ করছো নাতো সেকান্দর?

সেকান্দর
না বাবা, রাগ করবো কেন? মানে ...

বাবা
না, আমি বলতে চাচ্ছি তোমার অতীত যদি তোমার একার না হয়, তবে তো সেটা তোমার একার সিদ্ধান্তে বিক্রিও করতে পারো না। তুমি বরং একটু সময় নাও, ভাবো। তারপর যা ভালো মনে হয় করো।

সেকান্দর
(আর কিছু ভাবতে চায় না) আমি অনেক ভেবেছি। ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। (নেপথ্যে)- সুরাইয়া-

বাবা
তবু, তাদেরকে বোঝাও যে, তোমার অতীতের সাথে আরো অনেকে জড়িত, তারা যদি রাজি না হয় তাহলে তুমি তোমার অতীত বিক্রি করতে পার না।

সেকান্দর
অতীত এত কিছু না বাবা। আপনি এমন করবেন না। এটা কি আমি কেবল আমার জন্য করেছি, আপনাদের জন্যও করিনি? (বাবাকে এড়িয়ে যাবার জন্যই যেনো বারবার সুরাইয়াকে ডাকে) সুরাইয়া গামছাটা দাও।

বাবা
এটার সাথে কি কেবল আমরাই জড়িত? তোমার ছোটবেলা-কৈশর, কৈশরের উচ্ছ্বাস-আনন্দ-বেদনা-হাসি-কান্না এগুলো কি তোমার একার সম্পত্তি যে তুমি বিক্রি করে দেবে?

সেকান্দর
অতীতকে আপনি যেভাবে দেখছেন, অতীত অত বড় কিছু না। অতীত তো অতীত, তুচ্ছ, তুচ্ছ এক জিনিস। সেটা থাকলে কী, না থাকলেই বা কী। সেই অতীত এত দামে বিক্রি করে দিতে পারলাম, সেটা শুনে কোথায় খুশি হবেন, তা না, মিছি মিছি সংশয় করছেন। (নেপথ্যে) সুরাইয়া কলে পানি আছে?

বাবা
তুচ্ছ! অতীত মানে তো আমারও আশা-আকাক্সক্ষা, কামনা-বাসনা। তোমাকে নিয়ে আমার যে স্বপ্ন ছিল সেটাও তো অতীত, তোমার মেয়ের প্রতি তোমার যে স্নেহ, সেটাও তো অতীত। সুরাইয়ার প্রতি তোমার যে ভালোবাসা সেটাও তো অতীত, সেটা বিক্রি করে দিয়েছ, আর বলছো তুচ্ছ? না না, আমি বোধহয় কিছুটা বুঝতে পারছি। মনে হয় তুমি ভয়ঙ্কর কিছু করেছ। (সেকান্দরের কাছে আসে) হয়তো তুমি আমাকেও বিক্রি করে দিয়েছ।

সেকান্দর
আপনাকে না, আমাকে, তাও আবার পুরোটা না। কেবল একটা অংশ, বর্তমান আর ভবিষ্যৎ তো রয়েই গেল।
 
বাবা
যার অতীত নেই, তার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ কী সেকান্দর? আর আমাকে বিক্রি করনি মানে? তোমাকে আমি কোলে করে মানুষ করেছি, স্কুলের বাইরে রোদে দাঁড়িয়ে থেকেছি দিনের পর দিন। ছুটির ঘন্টার সাথে সাথে দৌড়ে আসা আমার সেকান্দরকে দুহাতে তুলে ধরেছি আকাশমুখি করে। ভেবেছি আমার সেকান্দরও হবে আকাশ-সমান। এ কি কেবল তোমার অতীত, এখানে তোমার বাবার কোনো অতীত নেই, স্মৃতি নেই, অনুভূতি নেই? সেই অতীত, স্মৃতি, অনুভূতি, আশা-আকাঙ্ক্ষা বিক্রি করে, ভবিষ্যতের কোন স্বপ্ন পূরণ করবে তুমি?

(ঢোকে আন্তোনিও। তার হাতে ল্যাপটপ। সেকান্দর যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়)

সেকান্দর
আন্তোনিও, আমার বাবা। বাবা, উনি হলেন আন্তোনিও।

আন্তোনিও
গুড ইভনিং স্যার। আসসালামুআলাইকুম।

(বাবা সালামের জবাব দেয়, আন্তোনিওকে দেখে, কিন্তু কিছু বলে না। চলে যায়। সেকান্দর কিছুটা যেনো বিব্রত)

সেকান্দর
আপনার খাওয়া রেডি হচ্ছে। এখানে আসলে আপনার অসুবিধা হচ্ছে বোধহয়।

আন্তোনিও
না স্যার। আমি এসেছি আপনাকে কিছু প্ল্যান দেখাতে।

সেকান্দর
প্ল্যান!

আন্তোনিও
জ্বী স্যার। (ল্যাপটপে পটাপট সাইট খোলে) এই যে, এগুলো হলো বাড়ির প্ল্যান, এগুলো হাসপাতালের, এগুলো স্কুলের আর এই যে এইগুলো নদীর প্ল্যান।

সেকান্দর
বাহ ভালোই তো। (হঠাৎ মনে মনে হয়, এগুলো দিয়ে সে কী করবে) হাসপাতাল, স্কুল, নদীর প্ল্যান দিয়ে আমি কী করবো? আমার টাকা কি আমি দান খয়রাত করে উড়িয়ে দেব নাকি?

আন্তোনিও
অবশ্যই না স্যার। আমাদের মনে হয়েছে- এখন হাসপাতাল আর স্কুলঘরটা যেখানে আছে (সেকান্দর চোখের সামনে হাসপাতাল আর স্কুল ঘর দেখতে পায়) সেখানে সুন্দর দুটি বাড়ি হয়। সেই বাড়ি থেকে নদীটি বেশ লাগবে (সেকান্দর চোখের সামনে নদী দেখতে পায়) তাই হাসপাতাল আর স্কুলঘরটি ভেঙে ফেলা হবে।

সেকান্দর
(হুশ হয় যেনো) কী বলছেন? এগুলো কি আমার বাপ-দাদার তালুক নাকি যে, আমি ইচ্ছা করলেই ভেঙে ফেলবো? গ্রামের মানুষ আমাকে আস্ত রাখবে নাকি!

আন্তোনিও
গ্রামের মানুষ যেন কিছু বলতে না পারে, সেজন্য ... (আবারও ল্যাপটপে সাইট খোলে) এই যে, এখানে যে ধানী জমিগুলো আছে, সেগুলো আপনি কিনে নেবেন।

সেকান্দর
ধানী জমি কিনে নেব! মানুষ খাবে কী?

আন্তোনিও
মানুষের সাথে সম্পর্কটা এখন আপনার স্মৃতির অংশ স্যার।

(সাথে সাথে সেকান্দর আন্তোনিওকে চুপ করতে বলবে। ভেতরে বাবা আছেন, তাই। আন্তোনিও কানে ফোন লাগায়, এমন সময় ল্যাপটপ থেকে বাবা আর আন্তোনিওর একটু আগের কথোপকথন ভেসে আসে। সেকান্দর অবাক ও অসহায় হয়ে পড়ে। বুঝতে পারে, সব কিছু রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে)
 
আন্তোনিও
আপনি-আমি শাইলকের সিকোফ্যান্টস। শাইলক জনগণকে যেভাবে দেখতে চায়, সেটা ভাবাই আমাদের কর্তব্য। আপনার একাউন্টের বিপরীতে কিছু চাল ইম্পোর্টের এল.সি খোলা হয়েছে। সেগুলো বাজারে ছেড়ে দেবেন। চাল কোনো সমস্যা না স্যার।

সেকান্দর
সমস্যাটা তাহলে কী আন্তোনিও?

আন্তোনিও
সমস্যা হলো সময়ক্ষেপণ। যত দেরিতে সিদ্ধান্ত নেবেন, প্রফিট থেকে ততই আপনি পিছিয়ে যাবেন। আপনার স্বপ্নপূরণ ততই অন্যদের দখলে যাবে। আমাদের ইনফরমেশন অনুযায়ী নদী খননে ৪ হাজার লোক নিয়োগ করা যাবে। বাড়ি, হাসপাতাল আর স্কুল নির্মাণে আরও ২ হাজার। তারা মজুরী পাবে, চাল কিনে খাবে। আপনি কাজ দিচ্ছেন, শোষণ তো করছেন না স্যার।

(তারপরও সেকান্দর ইতস্তত। আন্তোনিও সময় দেয় না)

আন্তোনিও
আপনি শুধু বাড়ির প্ল্যানটা পছন্দ করে আমাকে জানাবেন।

সেকান্দর
আপনি গ্রামের মানুষ চেনেন? মেম্বার চেনেন, চেয়ারম্যান চেনেন? হাসপাতাল-স্কুল ভাঙার সাথে সাথে ওরা আমাকে টুকরো টুকরো করে ফেলবে? পাগলের মতো কী-সব বক বক করে যাচ্ছেন।

আন্তোনিও
(অবলীলায় বলে যাচ্ছে) আমরা ঠিক করেছি স্যার, আপনার যে জমিটা এখন আছে (ল্যাপটপে গুগোল আর্থ-এ জমিটা দেখায়) এটাই তো স্যার, দেখুন তো।

(সেকান্দর দেখে, সায় দেয়)

আন্তোনিও
আমরা ঠিক করেছি, এই জমিটা এতিমখানার জন্য দান করে দিবেন স্যার। দান দিয়ে শুরু করলে পরে গ্রহণ করতে আর কোনো অসুবিধা হবে না।
 
সেকান্দর
আপনারা ঠিক করে ফেলেছেন! জমি-টাকা কি আপনাদের না আমার?

আন্তোনিও
অবশ্যই আপনার। তবুও আপনার অতীত বিক্রি করা টাকা, সেটা দিয়ে ভবিষ্যতে কী করবেন, সেই ভাবনাগুলো আমরা ভেবে নিয়ে আপনাকে সহযোগিতা করছি। আপনার টাকার সঠিক বিনিয়োগটা আমরা ঠিক করতে চাচ্ছি। আপনার সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার দায়িত্ব নিচ্ছি কেবল। (বিজ্ঞাপনের ভাষার মতো বলে) ‘স্বপ্ন আপনার, বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমাদের’। (কৌশলী সময় নেয়) আচ্ছা ঠিক আছে- আপনি যদি এ বাড়ি ছাড়তে না চান, তাহলে অন্য প্ল্যান নিয়ে আসছি।

সেকান্দর
না থাক। দেখি, পরিবারের কোনটা পছন্দ হয় দেখি।

আন্তোনিও
থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। (চলে যেতে নিয়ে থামে) একটা প্রাইভেট কথা বলবো স্যার?

সেকান্দর
কী কথা?

আন্তোনিও
আপনি আপনার বাবা আর স্ত্রীর সাথে যেভাবে কথা বলছেন, সেখানে কিছু আবেগ আর অনুভূতি প্রকাশ পাচ্ছিল। আমাদের এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী স্মৃতি, আবেগ-অনুভূতি এসব প্রকাশ করলে আপনার একাউন্ট থেকে নির্দিষ্ট রেটে টাকা কাটা যাবে।
 
সেকান্দর
তো!
 
আন্তোনিও
না স্যার, এক্ষুণি আমরা টাকা কাটছি না। আপনি কিছু ফ্রি আওয়ার পাচ্ছেন। (কৌশলী) আমি কি আপনাকে একটা পরামর্শ দেব স্যার?

সেকান্দর
কী?
    
আন্তোনিও
আপনি ওনাদেরকে আগের পরিচয়ে না ভেবে ক্লায়েন্ট ভাবতে চেষ্টা করুন।

(চলে যায় আন্তোনিও। সেকান্দর বিড়বিড় করে- ক্লায়েন্ট। ঠিক আছে ক্লায়েন্ট ...ল্যাপটপে শোনা যায়- স্বপ্নের দিকে চলুন, শাইলকের কাছে থাকুন। সেকান্দর ল্যাপটপের কাছে আসে। ল্যাপটপে একটার পর একটা প্ল্যান দেখতে থাকে। সে কনভিন্সড, সে উচ্ছ্বসিত)

সেকান্দর
বাড়ি হবে, আমার বাড়ি হবে!

(আসে সুরাইয়া)

সুরাইয়া
খাবে এসো।

সেকান্দর
সেটা পরে হবে। এদিকে এসো। বাড়ির কোন প্ল্যানটা তোমার পছন্দ দেখ তো।

সুরাইয়া
তোমার পছন্দই আমার পছন্দ, তুমি জানো না?
 
সেকান্দর
তবুও দেখ না। (একটা প্ল্যান দেখায়) এটা যদি বাড়ি হয়, সামনে নদী- কী অদ্ভুত সুন্দর লাগবে তাই না? (হেড়ে গলায় গান ধরে) আমার দিদিমায় আইসা প্রতিদিন ভোরে/ থালা বাসন ধুইয়া গেছে এই নদীরই জলে। ... আহ, সেই নদীটিও আমাদের হবে।

(নেপথ্যে বাবার ডাক- সেকান্দর)

সুরাইয়া
বাবা কিন্তু তোমার এই অতীত বিক্রিকে মেনে নিতে পারছেন না। ঘরে বসে কী সব বিড়বিড় করছেন। তুমি নাকি আমাদের সাথে সব সম্পর্ক বিক্রি করে দিয়েছ? এটা কি সত্যি?

সেকান্দর
তোমার কী মনে হয়? আমি সেটা করতে পারি?

সুরাইয়া
তোমাকে আমি বিশ্বাস করি। তোমার সব কিছুতেই আমার সায় ছিল, এখনও আছে।
 
সেকান্দর
তুমি পাশে থাকলে আমার আর কোনো ভয় নেই সুরাইয়া।

সুরাইয়া
(স্বপ্নে বিভোর) তোমার এই টাকায় এত কিছু হবে! বড় বাড়ি, বাড়ির সামনে নদী!

সেকান্দর
প্রয়োজনে আরও টাকা আসবে। আমার-তোমার স্বপ্নপূরণে যত টাকা লাগবে, ততই আসবে।

সুরাইয়া
সত্যিই! চল ভেতরে চল।

(রোমান্টিক মুডে দুজন চলে যায়- গাইতে থাকে- এই নদীতে সাঁতার কাইটা বড় হইছি আমি/ এই নদীতে আমার মায়ে কলসিত্ নিত পানি। বাবা আসে। বেশ চিন্তিত)

বাবা
(জনান্তিকে) স্মৃতি-সত্তা, কামনা-বাসনা সব, সব বিক্রি করে দিলে সেকান্দর! তুমি কোনো ভুল করো নি তো? তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে কীসের কামনা-বাসনায় লিপ্ত সেকান্দর! এর প্রতিটি মুহূর্তের জন্য তোমাকে কত টাকা গুণতে হবে জানো? এসবই যে তোমার অতীত- স্মৃতি। তুমি তোমার স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত। হায় খোদা - আমার পুত্র তার স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত! সে তার পিতাকে বিক্রি করেছে। হায় অভিশপ্ত! যে পুত্র তার পিতাকে বিক্রি করতে পারে সে জারজ। আমি এক জারজ পুত্রের জন্ম দিয়েছি, যে তার পিতার অস্তিত্বের মূল্যে, তার সমস্ত পূর্বপুরুষের অস্তিত্বের মূল্যে, সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখছে। সেকান্দর, তোমার বড় ভাই ইস্কান্দরকে তুমি নিজ হাতে কবরে শুইয়ে দিয়েছিলে। যে ইস্কান্দর আর তোমাকে আমি নতুন জামা, নতুন টুপি পরিয়ে, হাতে নতুন বাঁশি ধরিয়ে, ঈদের নামাজ পড়তে নিয়ে যেতাম। সে নিজের জন্য বাঁশি না কিনে আগে তোমার জন্য কিনতো- কত না উচ্ছ্বসিত হয়ে, কত না খুশি মনে! সেই অনুভূতি, সম্পর্ক, তুমি বিক্রি করে দিয়েছ!

(ঘুম ঘুম হাসিমুখে প্রবেশ করে সেকান্দর। যেনো একটা ঘোরের দৃশ্য ফুটে ওঠে- বাস্তব না কল্পনা ঠিক যেনো বোঝা যায় না)

সেকান্দর    
বাবা।

(বাবা অপলক চেয়ে থাকে)

বাবা
তুমি কোনো ভুল করো নি তো!

সেকান্দর
আপনিই বলুন, আমি চুরি করেছি নাকি ডাকাতি করেছি? এখানে ভুলের প্রশ্ন আসছে কেন? আমাদের সুন্দর বাড়ি
হচ্ছে, বাড়ির সামনে ...

বাবা
নদী বয়ে যাবে। যে নদীতে তোমাকে আর ইস্কান্দরকে আমি গোছল করিয়ে স্কুলে পাঠাতাম।

সেকান্দর
সেই নদীটিও আমাদের হবে।
 
বাবা
আমাদের আমাদের করছো কেন? বলো তোমার হবে।

সেকান্দর
তাই হোক। আপনিও ইচ্ছা করলে ...

বাবা
তুমি কি জানো তোমার সাথে সুরাইয়ার যে সম্পর্ক, তা-ও এখন একটা নষ্ট সম্পর্ক ছাড়া আর কিছু না? তোমরা ব্যভিচারে লিপ্ত। হায় খোদা!

সেকান্দর
সেটার জন্য আমি পে করছি বাবা। প্রতিবারের কামনা-বাসনার জন্য আমার একাউন্ট থেকে টাকা কাটা যাচ্ছে। কিন্তু তা যা পেয়েছি তার তুলনায় কিছুই না। জীবনটা হচ্ছে ভোগের। ভোগেই তৃপ্তি, ভোগেই মুক্তি। আপনি একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভাবুন। আমাদের ইনফরমেশন হচ্ছে- অতীতের বিক্রি-বাট্টার রেট দ্রুতহারে কমে যাচ্ছে। আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণে কালক্ষেপণ আপনাকে ফিন্যান্সিয়ালি লুজার করে দেবে স্যার।

(বাবার একেবারে কাছে চলে আসে)

বাবা
স্যার! তুমি আমাকে স্যার বলছো!

সেকান্দর
ইটস জাস্ট বিজনেস ডিলিং, নাথিং এলস স্যার!

বাবা
চমৎকার! যে পুত্র তার পিতার স্মৃতি কেনে বা যে পিতা তার পুত্রের কাছে হৃদয় বিক্রি করে দুজনেই জারজ।

সেকান্দর
ওহ নো স্যার, এখন পৃথিবীতে আর পিতা-পুত্রের জায়গা নেই। পরিচিত পিতার পরিচয় আড়াল করতে সকলকেই শাইলকের কাছে ছুটে আসতে হবে। শাইলক সকলের পিতা, সকলের ত্রাণকর্তা। জন্মাবার জন্য এখন আর কোনো গর্ভেরই প্রয়োজন হবে না স্যার। জারজ-টারজ সব অবান্তর শব্দ।

বাবা
সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃতভাবে মানুষের পিতৃপরিচয় লুপ্ত করে এক জারজ সভ্যতা নির্মাণের চেষ্টা চলছে?

সেকান্দর
চেষ্টা নয়, প্রক্রিয়া নয়, ইতোমধ্যেই এই সভ্যতা নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে গেছে স্যার।

বাবা
তা হলে মুক্তির আর কোনো আশা নেই?

(বাবা চলে যায়)

সেকান্দর
আশা-আকাঙ্ক্ষা, কামনা-বাসনার বিনিময়ে একটা সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চয়ই আপনাকে মুক্তিই দেবে। প্লিজ টেক ইওর ডিসিশান এজ আরলি এজ পসিবল স্যার।

(ঘোরের মধ্যে বলতে বলতে সেকান্দর চলে যায়। আন্তোনিও ঢোকে। ট্রে কফি নিয়ে। গুড মনিং বলে। সেকান্দর স্টেজে আসে। কফি নেয়। আন্তোনিও সুরাইয়াকেও কফি দেয়। সুরাইয়া কফিতে চুমুক দিয়ে ভেতরে চলে যায়। সেকান্দর আর সুরাইয়া দুজনই বেশ পরিবর্তিতরূপে আবির্ভূত হয়। তারা এখন অতীত ভুলে কেবল ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোর- কেমন যেনো কর্পোরেট কর্পোরেট ভাব)

সেকান্দর
আন্তোনিও, নদীর রিপোর্টটা এসছে নিশ্চয়ই।

আন্তোনিও    
জ্বী স্যার। এই যে, আজকের সব পত্রিকারও হেড লাইন হয়েছে যে- বর্তমান নদীটি মৃত। সুতরাং নতুন নদী খননে এই এলাকার দীর্ঘদিনের সেচ সমস্যার সমাধান হবে। আপনার বাড়ি আর নদী খননের কাজ শুরুও করে দিয়েছি স্যার।

(আন্তোনিওর কাছে আসে। কফি রাখে। আন্তোনিও সেকান্দরের আগের কোটটি বদল করে একটি কালো কোট পরিয়ে দেয়)

সেকান্দর
ভেরি গুড। (ল্যাপটপে প্ল্যান দেখে) হু, এই ডিজাইনটাই সুরাইয়া পছন্দ করছিল। যদিও খরচ একটু বেশি পড়বে- তাই না?  

আন্তোনিও
টাকা কোনো সমস্যা না স্যার। আপনার একাউন্টের বিপরীতে একটা লোন-একাউন্ট খোলা হয়েছে। স্যার, ইন্সটলমেন্ট কী হারে দিতে চান? দীর্ঘমেয়াদী না স্বল্পমেয়াদী?

সেকান্দর
আপনার মতামত কী?

আন্তোনিও
দীর্ঘমেয়াদীই ভালো স্যার, ইন্সটলমেন্ট রেট কম। ঋণ নিয়ে তাড়াতাড়ি শোধ করে দেয়ার তো কোনো মানে হয় না। প্রয়োজনে আবার ঋণ নেয়া যাবে স্যার।

সেকান্দর
দ্যাটস গুড আইডিয়া। একটা সুখবর আছে, সুরাইয়া হয়তো ওর অতীত বিক্রির ব্যাপারে আজই সিদ্ধান্ত নেবে।

আন্তোনিও
জ্বী স্যার, ওনার একাউন্টে টাকা জমা হয়ে গেছে।

সেকান্দর
হোয়াট!

আন্তোনিও
শি হ্যাজ অলরেডি সোলড হার পাস্ট, স্যার। এগ্রিমেন্ট সই হয়ে গেছে।

সেকান্দর
অ মাই গড! ফাইন।

(ঢোকে সুরাইয়া, স্মার্ট ভঙ্গিতে শাড়ি পরা)

সেকান্দর
সুখবরটা পেলাম। আন্তোনিও জানালো।

সুরাইয়া
ও, পেয়ে গেছ। আমি চাচ্ছিলাম আমিই তোমাকে আগে জানাবো। যা করবো, তার জন্য আর দেরি করা কেন বলো?

সেকান্দর
নিশ্চয়ই।
 
সুরাইয়া
(নদী খননের কাজের ব্যাপারে কথা বলে) আন্তোনিও কাজটাতে কয়েকজন দেশি এক্সপার্টিজকে কাজে লাগান। ওরা থাকলে ভালো হয়। দেশি বিনোয়েগে দেশের জ্ঞানকে কাজে লাগাবো না, এটা হতে পারে না।

আন্তোনিও
কয়েকজনের নাম দেয়া হয়েছে। ওনারা আমাদের সব প্ল্যানকেই পরিবেশ-বান্ধব বলে এগ্রি করেছেন। বাইরের এক্সপার্টিজদের রিপোর্টে ওনাদের সই আছে ম্যাডাম।

সুরাইয়া
দ্যাটস ফাইন। এমপ্লমেন্টের কী অবস্থা?

আন্তোনিও
গ্রামের প্রায় ৮০% লোককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কাজ নিয়ে তাদের মধ্যে উৎসাহের কমতি নেই।

সুরাইয়া
না না, আপনি সব পুরুষদের কাজে লাগাবেন না। এখানে এটলিস্ট ৫০% মহিলাদের কাজে লাগান।

আন্তোনিও
মহিলাদের কর্মক্ষমতা কিছুটা কম, তাই কাজটা দ্রুত শেষ করার জন্য ...

সুরাইয়া
কর্মক্ষমতা কম, আবার মজুরীও তো কম। তা ছাড়া কাজ পেলে পরিবারে কথা বলার রাইট বাড়বে ওদের।

সেকান্দর
(সুরাইয়ার কর্পোরেট ভঙ্গিতে মুগ্ধ হয়। সে-ও সুরাইয়ার টোনে কথা বলে) দে আর অলসো আওয়ার ক্লায়েন্ট, আন্তোনিও। হিউম্যান রাইট এচিভ না করলে, সেই রাইট বিক্রি করার ক্ষমতাও ওদের থাকবে না। আপনি বরং ৫০% মহিলাকে কাজে লাগান, জেন্ডার ইকুইটির ব্যাপারটা ঠিক রাখা দরকার।

আন্তোনিও
ও-কে।

(চলে যায় আন্তোনিও। দুই চেয়ারে সেকান্দর আর সুরাইয়া প্রণয়ের ভাব করবে। উঠবে। দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে নাচবে)

সেকান্দর
সত্যি সুরাইয়া, এত সুখ আগে কখনো কি পেয়েছি?

সুরাইয়া
জানি না।

সেকান্দর
সব মিলনেই ছিল দুঃশ্চিন্তা। এক অনিশ্চিত সকালের দুঃশ্চিন্তা। ব্যাথা-বেদনা আর অনিশ্চয়তার কামনা-বাসনায় মিলন কি সুখের হয় বলো!

সুরাইয়া
সত্যিই, কেমন নির্ভার লাগছে নিজেকে। প্রণয়ের পরই দুঃশ্চিন্তা মাথায় কিলবিল করতো। কত সময় কত ছোট করে ভেবেছি তোমাকে। তোমার কত কামনাকে নিষ্ফল করে দূরে সরিয়ে রেখেছি রাতের পর রাত। অথচ এখন কেবলি কামনায় উদ্বেলিত হতে মন চায়। ও গো, নিজেদের কীভাবে দিন যাবে, তা ভেবেই এতদিন অস্থির হয়েছি। আর আজ, কত মানুষের কাজের সন্ধান দিয়েছি তুমি আর আমি।

সেকান্দর
হয়তো আরও দেব। যে পুরুষেরা কাজ পাবে না, তারা নিশ্চয়ই আসবে আমাদের কাছে। তারা নিশ্চয়ই তাদের
স্মৃতি-সত্তা-বাসনা আমাদের কাছে বিক্রি করবে।

সুরাইয়া
তা-তো আসবেই। চাষা-ভূষাদের আবার স্মৃতি! সেটা থাকলেই কী, না থাকলেই-বা কী।

সেকান্দর
চাষা-ভূষা বলছো কেন, দে আর অলসো আওয়ার অনারেবল ক্লায়েন্ট। ক্লায়েন্টই তো আমাদের লক্ষ্মী। (মেয়ের কথা মনে পড়ে) আচ্ছা, মিনির কী খবর?

সুরাইয়া
আসবে, আন্তোনিও লোক পাঠিয়েছে।

সেকান্দর
দ্যাটস ফাইন। তাহলে আরও কাছে আসো।

সুরাইয়া
ইস, হয়েছে। কতগুলো টাকা একাউন্ট থেকে গেল সে হিসাব আছে?

সেকান্দর
অ মাই গড। তাই তো! আমার হিসাবী বৌ হাঃ হাঃ-

(দুজন হাসতে থাকে। আবারও জড়িয়ে ধরে। আসে আন্তোনিও)

আন্তোনিও    
স্যার (ল্যাপটপ দেখিয়ে) এখানে আপনাদের দুটো সই লাগবে। (ওরা সেদিকে খেয়াল করে না, রোমান্সে মজে থাকে) এইমাত্র ইনফরমেশন পেলাম, চট্টগ্রামের সমুদ্র অঞ্চলে আর ফুলবাড়িয়ায় গণ্ডগোল হয়েছে।

সুরাইয়া
আবার?

সেকান্দর
বারবার।

আন্তোনিও
সরকার সেখানে কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে। লোকজন মারা যাওয়ার ব্যাপার আছে। সেখানে সরকারের পক্ষের বিবৃতিতে সই লাগবে স্যার।

সেকান্দর
(সতর্ক হয়) হোয়াট! আমরা সরকারের পক্ষে সই করবো কেন?

সুরাইয়া
জনগণ কেন করছে সেটার তথ্য দিন।

আন্তোনিও
এটা শাইলকের হয়ে সরকারকে সমর্থন দেয়া। এর চেয়ে বেশি কিছু না স্যার।

সেকান্দর
ও, শাইলক। Then O.K.

(আবারও নাচতে থাকে। নাচের মধ্যেই আন্তোনিও তাদের টিপসই নিয়ে নেয়)

সুরাইয়া
তা আমাদের কাজ এগুচ্ছে তো?

আন্তোনিও
ভালোই এগুচ্ছে, তবে নতুন নদী খনন আর হাসপাতাল-স্কুল ভাঙা নিয়ে কিছু উচ্ছৃঙ্খলতা দেখা যাচ্ছে।

সেকান্দর
আপনি রিপোর্ট করছেন না কেন?

(দুজনে চিন্তিত হয়)

আন্তোনিও
বেশি কিছু হলে জানানো হবে স্যার। আমরা এর পক্ষে অন্যদের সই নিয়ে রেখেছি। আশা করি কিছু হবে না। শ্রমজীবীদের বাদ দিয়ে জনগণকে ভাবাটা বোকামি হবে নিশ্চয়ই। আর হ্যাঁ, একটা সুসংবাদ আছে, মহিলাদেরকে এত উঁচু হারে কাজে নিয়োজিত করাটা উইমেন্স এ্যাফেয়ার ফোরাম থেকে কনগ্রেচুলেট করা হয়েছে।

(দুজন খুশীতে পরষ্পরকে জড়িয়ে ধরে। আন্তোনিও দাঁড়িয়ে থাকে, যেনো আরও কথা আছে)

সেকান্দর
আর কিছু?

আন্তোনিও
না, তেমন কিছু না। ঐ উচ্ছৃঙ্খল লোকজনের সাথে আপনার বাবাকে দেখা গেছে। কিন্তু এটাকে আমরা আপাতত কোনো সমস্যা ভাবছি না। (সেকান্দর সুরাইয়ার প্রণয় বন্ধ হয়) যাই স্যার?

সেকান্দর
মিনির কী খবর?

আন্তোনিও
এই এলো বলে স্যার।

(চলে যায় আন্তোনিও)

সেকান্দর
(পল্পষ পজপঠ) বুড়োটা নিজের ভালো বুঝলো না।

সুরাইয়া
কী করছো? কষ্ট পাওয়া যাবে না। তোমার ফ্রি আওয়ার কিন্তু প্রায় শেষ। ওসব বাদ দাও। আন্তোনিও জানিয়েছে, ওনার রেট অনেক কম। হি ইজ নট আ প্রফিটেবল ক্লায়েন্ট ইন ডিড।

সেকান্দর
(খুশি হয়) ইনডিড? (আবার প্রণয়। সেকান্দর যেনো কাজের কথা বলে) কিন্তু আমাদের এখন প্রণয় বাদ দিয়ে প্রয়োজনের দিকে নজর দেয়া উচিত। যে কাজ নিয়েছি, ভবিষ্যতে যা যা করতে হবে, তাতে অনেক টাকা দরকার।

সুরাইয়া
তুমি কিচ্ছু ভেবো না। দরকার হলে আমার একাউন্টের এগেইনস্টেও লোন নেব। ঋণ নেয়া এখন আমাদের অধিকার সেকান্দর।

সেকান্দর
অ মাই গড। বোকা মেয়ে। এই ঋণ শোধ করতে হবে না? ইন্সটলমেন্ট দিতে হবে না?

সুরাইয়া
প্রয়োজনে এসব দেবে আমার সন্তান!

সেকান্দর
মিনি, মিনি কি রাজি হবে? নাকি বাবার মতো গো ধরে বসে থাকবে কে জানে?

সুরাইয়া
মিনি নাগো, এ আমার নতুন অতিথি।

সেকান্দর
নতুন অতিথি! কী বলছো তুমি। আমাদের আবার সন্তান হবে!

সুরাইয়া
আমার বোকা স্বামীটা। আমি কি তোমার অতিথি বলেছি? এ আমার অতিথি।

(সেকান্দর থ হয়ে তাকিয়ে থাকে)

সেকান্দর
হাঃ হাউ ফানি!

সুরাইয়া
যখন আন্তোনিও আমার অতীত বিক্রির এগ্রিমেন্টে সই নিল, ঠিক আগ মুহূর্তে সে এই নতুন প্রস্তাবটা দিল।  

সেকান্দর
এনিথিং প্রফিটেবল?

সুরাইয়া
অবকোর্স। আন্তোনিও জানালো, যদি তার ঔরসে আমি সন্তান নিই, তাহলে এই সন্তান পাবে আমার দ্বিগুণ রেট।

সেকান্দর
অ মাই গড। কিন্তু তার জন্য তো আমিই আছি।

সুরাইয়া
(আগের আবেগ ধরে রেখে) নাগো। তোমার ঔরসের রেট এখন দ্রুতই কমে যাচ্ছে। আন্তোনিও ইন্টারন্যাশনাল এ্যান্ড হাই-রেটেড সিটিজেন। ওর সন্তান নিলে তোমার আমার জীবনের স্বপ্ন অনেক উজ্জ্বল হবে।

সেকান্দর
দ্যাটস ফাইন!

সুরাইয়া
তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি ওর সন্তান নেব ভেবেছি। সেই সন্তানই আমাদের কিস্তি দেবে, ইন্সটলমেন্ট
দেবে। তুমি খুশি হও নি?

সেকান্দর
হোয়াই নট। তোমাকে আমি বিশ্বাস করি সুরাইয়া। তোমার সব কিছুতেই আমার সায় ছিল, এখনও আছে।

সুরাইয়া
সব কিছুর পরও আমি তো তোমারই, তাই না?

সেকান্দর
তা কি আমি জানি না? তোমার উপর সেই বিশ্বাস আমার আছে।

(ঢোকে আন্তোনিও)

আন্তোনিও
আপনাদের স্যার ঢাকায় যেতে হবে। রেডি হয়ে নিন।

সুরাইয়া ও সেকান্দর    
কেন?

আন্তোনিও
ওখানে সরকারের পক্ষ থেকে মানব-বন্ধন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। দেশে সম্পদের সঠিক ব্যবহার যারা করতে চায় না, তাদের বিরুদ্ধে এই প্রোগ্রাম থ্রো করা হয়েছে। শাইলক এ্যান্ড সিকোফ্যান্টসের কয়েক হাজার প্রতিনিধি অলরেডি পৌঁছে গেছে।

সেকান্দর
কিন্তু আমাদের এখানকার কাজ দেখবে কে? এখানেও একটু আধটু গোলমাল হচ্ছে বলছিলেন।

আন্তোনিও
হ্যাঁ, তবে সরকার বলেছে- যেকোনো কিছুর মূল্যে নদী খনন হবেই। প্রাইভেট ডোনেশনে এত বড় একটা কাজ হচ্ছে, সেখানে হাজার হাজার মানুষ কাজ পেয়েছে, সেটার যারা বাধা দেবে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন যা করার সব কিছুই করবে। জনগণের সরকার সব সময় জনগণের পাশে থাকবে।

সুরাইয়া
সেকান্দর থ্যাঙ্কস। আমরা আসছি।

(আন্তোনিও যেতে নেয়)

সেকান্দর
আপনি একটা ব্যাপার খেয়াল রাখবেন, যেন আমাদেরকে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়তে না হয়। এসব রাজনীতি-ফাজনীতির আমরা বাইরে থাকতে চাই।

আন্তোনিও
সেটা ভাববেন না স্যার। এসবই হচ্ছে শাইলকের নির্দেশে। এখানে রাজনীতির কোনো প্রশ্ন নেই।

সুরাইয়া ও সেকান্দর
থ্যাঙ্কস।

(চলে যেতে নেয় আন্তোনিও, সুরাইয়া ডাকে। সেকান্দরকে না শুনিয়ে যেনো বলে)

সুরাইয়া
আন্তোনিও, আপনার ঐ প্রস্তাবে আমরা রাজি।

(খুশী মনে হেসে চলে যায় আন্তোনিও। আবার দ্রুত প্রবেশ করে)

সুরাইয়া ও সেকান্দর
চলুন, গাড়ি রেডি?

(চোখ স্থির করে রাখে ল্যাপটপের দিকে। সেদিকে খেয়াল করে দুজন। ল্যাপটপ থেকে চোখ উঠিয়ে বলে)

আন্তোনিও
ঢাকায় যাওয়ার প্রোগ্রাম ক্যানসেল করা হয়েছে স্যার।

সুরাইয়া ও সেকান্দর
এনিথিং রং!

আন্তোনিও
নো স্যার, নট সো ডেঞ্জারাস। আপনার বাবা সুইসাইড করেছেন।

সেকান্দর
আপনি বলছিলেন, বাবা ওখানে প্রোটেস্ট করছিল। তাহলে ... এনিথিং লাইক হার্ট ফেইলিওর?

আন্তোনিও
প্রশাসন, মুখোমুখি প্রতিবাদের এক পর্যায়ে তাকে গুলি করতে বাধ্য হয়েছে।

সেকান্দর
তাহলে সুইসাইড বলছেন কেন?

আন্তোনিও
তাকে বলা হয়েছিল, সতর্ক করা হয়েছিল, তারপরও সম্পূর্ণ নিজ ইচ্ছায় সে বুক পেতে দিয়েছে। নিজ ইচ্ছায় মরণ, সো ইট ইজ আ সুইসাইডাল কেস। এখন অনেক রাত। তাকে দাফন শেষে সবাই চলে গেছে। আমাদের সেখানে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে স্যার।

সুরাইয়া
যা হবার হয়ে গেছে। ওখানে গিয়ে সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না।

আন্তোনিও
তবুও যেতে হবে। কিছু কিছু ইনফরমেশন আমাদের নেটওয়ার্কে ধরা দিচ্ছে না। উনি বেঁচে থাকতে কাকে কীভাবে কী কাজ করতে বলে গেছেন, সেটা তার মুখ থেকে শুনতে হবে। চলুন স্যার।

সেকান্দর
আন্তোনিও, ফ্রি আওয়ার থেকে আমাকে দুটো মিনিট দিন না, একটু কাঁদবো।

আন্তোনিও
কনসিডার করলাম স্যার।

(সেকান্দর কাঁদে। একটু পর আন্তোনিও তাকে ধাক্কা দেয়। সেকান্দর কান্না থামিয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে)

সেকান্দর
এভাবে কি কাঁদা যায় নাকি! (ধাতস্ত হয়) উনিতো ডেড, উনি কী কথা বলবেন?

আন্তোনিও
মৃতরাই বেশি কথা বলে স্যার। জীবিতদের নানাভাবে কনভিন্স করা যায়। ওদের যায় না। আর ওদের ফেলে যাওয়া সব ভাবনা-চিন্তা আমাদের নেটওয়ার্কে ধরাও দিচ্ছে না। ওদের ইতিহাস, কামনা-বাসনা আমরা কিনে নিতে পারি নি। সেই চেষ্টাটাই করতে হবে। আশা ছাড়বেন না। মনে রাখবেন স্টিল হি ইজ আওয়ার ক্লায়েন্ট। সো তাকে কনভিন্স করাটা এখনও আমাদের বিজনেস স্ট্র্যাটেজির মধ্যেই পড়ে।

(ওরা মঞ্চের বিভিন্ন দিকে অবস্থান নেয়। মঞ্চে একটা কবর জেগে ওঠে। বাবার কবর। তিনজনই কবরটিকে ক্লায়েন্ট মনে করে এবং সেভাবে ইনফরমেশন দেয় ও কথা বলে। বাবা উঠে দাঁড়ায়)

সেকান্দর
আপনি সুইসাইড করতে গেলেন কেন স্যার?

বাবা
তোমাদের প্রোগ্রামিং-এ ভুল ডাটা সেট হয়ে আছে, সেকান্দর। আমি আত্মাকে হত্যা করি নি, আত্মাকে বিস্তৃত করেছি মাত্র।

আন্তোনিও
আমাদের ডাটা সম্পূর্ণ আপ-ডেট করা আছে স্যার। আপনি মানুষের মধ্যে যা ছড়াতে চাচ্ছেন, সেগুলোইউটোপিয়ান ভাবনা চিন্তা। তবুও আপনি ইচ্ছা করলে এখনও আপনার ভাবনা-চিন্তা-চেতনা আমাদের কাছে বিক্রি করতে পারেন।

বাবা
ওগুলো এখন আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে আন্তোনিও। ওগুলো যাদের নিয়ন্ত্রণে তারা এখনও বেঁচে আছে। তোমরা প্রয়োজনে তাদের কাছে যাও।

সুরাইয়া
অবশ্যই স্যার আমরা তাদের কাছেও যাব। সব কিছুই আমাদের কাছে পণ্যের মর্যাদা পাচ্ছে স্যার। আমরা সব কিছুই কিনে নিতে চাই।  

আন্তোনিও
আমরা আপনার কবরটি কিনে নিতে চাই।

বাবা
এখানে তো কোনো সম্পদ নেই। এ দিয়ে তোমার শাইলক কী করবে?

(এরপর থেকে মনে হবে যেনো ওরা তিনজন ‘বিজ্ঞাপনী’ ভাষায় কথা বলতে থাকে)

আন্তোনিও
আপনাকে কাছে পেতেই স্যার আমাদের এতদূর আসা।

সেকান্দর
এখানে কিছু কামনা-বাসনা-স্মৃতি আছে। তার মার্কেট ভ্যালু আমাদের কাছে কম গুরুত্বপূর্ণ না স্যার। আমরা চাই সব সম্পদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে না থেকে শাইলকের নিয়ন্ত্রণে আসুক। একটা সুন্দর পৃথিবী গড়তে এটার খুব প্রয়োজন স্যার।

বাবা
শাইলক ইচ্ছা করলেই সব সম্পদের মালিক হতে পারে? তোমাদের তাই মনে হয়?

আন্তোনিও
আপনার সহযোগিতা পেলে আমরা দিন বদলের দিকে যেতে পারবো স্যার। আপনি বদলে যান, দেখবেন সব কিছু বদলে গেছে।

সুরাইয়া
আপনি থাকুন এক ধাপ এগিয়ে। জ্বলে উঠুন আপন শক্তিতে।

আন্তোনিও
আপনাকে একটা রিপোর্ট দিচ্ছি স্যার? বিক্রি করবার মতো মানুষের হাতে আর তেমন কিছুই নেই। ষাটের দশকে
পৃথিবীর মাত্র ২০ ভাগ লোকের হাতে ছিল ৭০ ভাগ সম্পদ।  

সেকান্দর
বর্তমানে এই ২০ ভাগ লোকের কাছে পৃথিবীর ৮৪ ভাগ সম্পদ রয়েছে।

বাবা
চমৎকার!

সুরাইয়া
চমৎকার কোনটা স্যার, ২০ ভাগ লোক নাকি ৮৪ ভাগ সম্পদ?

বাবা
২০ ভাগ লোকের কাছে ৮৪ ভাগ সম্পদ!

আন্তোনিও
আংশিক নয়, পুরোপুরি সত্য। এই ২০ ভাগ লোক মানে কিন্তু মাত্র ৮ টি দেশ।

সুরাইয়া
এই ৮ টি দেশের মাত্র ৩৫৬ টা পরিবারের হাতে আছে বিশ্বের ৮৪ ভাগ সম্পদ স্যার।

সেকান্দর
এই ৮৪ ভাগ সম্পদের ৭০ ভাগ সম্পত্তি আছে কেবল শাইলকের দেশের পরিবারের হাতে।

আন্তোনিও
এই ৮ টির ভেতরে কেবল একজনই সত্যিকারের অভিভাবক, নেতা অথবা চালক, সে-ই প্রকৃত অর্থে সব সম্পত্তির দখলদার, জিম্মাদার, আমাদের পরম পিতা- শাইলক। বাকিরা তার দাসানুদাস, কৃপাপ্রার্থী, স্তাবক- সিকোফ্যান্টস।

(পর্যাক্রমে তারা কিছু তথ্য বলতে থাকে। যেভাবে মার্কেটিংয়ের লোকজন বলে )

৩ জন
আমরা স্যার সব কিছু বদলে দিতে চাই

আন্তোনিও
একটি সুন্দর পৃথিবী গড়তে শাইলক বদ্ধ পরিকর

সুরাইয়া
সব কিছু কিন্তু বদলে দিতে নেই।


৩ জন
তবু বদলে যান, বদলে দিন স্যার

আন্তোনিও
সম্পদ আপনার, তার বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমাদের।

সুরাইয়া
আপনাকে দিচ্ছে সুন্দরের হাতছানি।

৩ জন
ইচ্ছে করলেই আপনি পারেন আকাশ ছুঁতে।

বাবা
কিন্তু এই শাইলকের দেশে, সমস্ত সম্পদের মালিকের দেশে ৫ ভাগ লোক ফুটপাতে ঘুমায়, তারা আশ্রয়হীন। শাইলক সবার পিতা, কিন্তু সে তার পুত্রকেও আশ্রয় দেয় না, দেবে না।

আন্তোনিও
এখন নপুংসক পুরুষের কাল স্যার। যিনি পিতা তিনি কেবলিই পিতা। তার কোনো সন্তান নেই স্যার।

সুরাইয়া
এখন হচ্ছে স্যার নিষ্ফলা নারীদের যুগ।

সেকান্দর
এখন মানুষ কেবল কালহরণ করবে স্যার।

বাবা
তোমাদের পরম পিতার সেই জ্ঞান নেই যে তিনি এখন কোথায় আছেন। প্রত্যেকটা মানুষের বিদ্রোহ, ক্রোধ, অভিমান, যন্ত্রণা, বিপ্লব, অভ্যুত্থান কিনে নেবার পর যে পৃথিবী তৈরি হবে, তা এক শূন্য পৃথিবী। তোমাদের পরমপিতা এক শূন্য পৃথিবীর পরমপিতা হবেন। হাঃ হাঃ

আন্তোনিও
তারপরও তিনি পরমপিতাই থাকবেন স্যার। শূন্য পৃথিবীর পিতাও একজন পিতাই, এর চেয়ে কম কিছু নন।

বাবা
তাহলে তার এত ভয় কেন? মৃতকেও সে কিনতে চায় কেন?

সুরাইয়া
এটা ভয় না স্যার। এটা আপনার সম্পদকে মূল্য দেয়া। ever u r/ u r with the shylock sir.

বাবা
পৃথিবীর প্রায় সব সম্পত্তির মালিক, শাইলকের হাতে আছে ৭ লক্ষেরও বেশি পারমানবিক বোমা। এর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ই প্রতিদিন ৬ হাজার কোটি টাকা। গত ৫০ বছরে এই শাইলক ভিয়েতনাম, নিকারাগুয়া, গোয়াতেমালা, এল সালভাদর, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, লিবিয়াসহ ৫০ টি দেশে আক্রমণ চালিয়েছে। ৪০ লাখের বেশি মানুষ হত্যা করেছে। সবচেয়ে বড় ক্ষতি সে যা করেছে- ঐ দেশগুলোর আর্থ-সামাজিক ও সৃজনশীল সব সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই সময়ে শাইলক কেবল পারমানবিক কর্মসূচিতে ব্যয় করেছে ৬ ট্রিলিয়ন ডলার। এই অর্থ এত বড় যে একেকটি ডলার পর পর সাজিয়ে যদি দড়ি বানানো যায়, তবে তার দৈর্ঘ্য পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্বের দ্বিগুণ হবে। এরপরও তার নিরাপত্তার অভাব কিন্তু কমেনি। পৃথিবীর শেষ মানুষটির অস্তিত্ব থাকা পর্যন্ত এই নিরাপত্তাহীনতা তোমাদের পরমপিতাকে আচ্ছন্ন করে রাখবেই। কারণ, মানুষকে যে সে বড় বেশি ভয়
করে!

আন্তোনিও
স্যার, আমরা আপনার বিবেককে শ্রদ্ধা করি। বেঁচে থাকলে এটাও আমরা কিনে নিতাম। আপনি নিজে দেখলেন আপনার ছেলে, ছেলের বউ, এমন কি আমি, এই আমি নিজেও তো স্যার স্মৃতি বিক্রি করে দিয়েছি, হৃদয় বন্ধক দিয়ে দিয়েছি। আমরা নিশ্চয়ই নির্বোধ নই, মূর্খ নই স্যার।

বাবা
তা হয়তো-বা না। কিন্তু তোমাদের জ্ঞানই তো শেষ কথা না আন্তোনিও। তোমাদের যুক্তিই তো চরম যুক্তি না।
এর বাইরেও জ্ঞান আছে, যুক্তি আছে।

আন্তোনিও
সেই যুক্তি, সেই জ্ঞান কী স্যার?

বাবা
সে-তো আমারও জানা নেই। আমার-তোমার জানাটাই সব জানা না। আবার, আমাদের অজ্ঞানতাই চরম মিথ্যা না আন্তোনিও।  সেকান্দর, তোমার মাথায় আমি একটু ছুঁয়ে দিতে চাই।

(সেকান্দর এগুতে যায়, আন্তোনিও আর সুরাইয়া বাঁধা দিয়ে স্মরণ করিয়ে দেয়, এটা হবার না)

সুরাইয়া
সেকান্দরকে ছুঁতে পারবেন রাত বারটার পর সবচেয়ে কম রেটে।

আন্তোনিও
এই অবিশ্বাস্য রেট দিচ্ছে শুধুমাত্র শাইলক।

সবাই
আমরা স্যার সব কিছু বদলে দিতে চাই

একটি সুন্দর পৃথিবী গড়তে শাইলক বদ্ধ পরিকর

সব কিছু কিন্তু বদলে দিতে নেই
তবু বদলে যান, বদলে দিন স্যার

সম্পদ আপনার, তার বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমাদের

আপনাকে দিচ্ছে সুন্দরের হাতছানি

ইচ্ছে করলেই আপনি পারেন আকাশ ছুঁতে

সবাই দিয়েছে অনেক
অনেকে দিয়েছে সব   

যেটুকু সময় আপনার হাতে
একটা কিছু করুন, যেন দুনিয়া কাঁপে

সব মানুষের সম্পদ নিতেই শাইলকের এতদূর আসা

সবাই
যাই করুন আর তাই করুন
শাইলকের সাথে থাকুন।

হাসান শাহরিয়ার: নাট্যজন। সম্পাদক- থিয়েটারওয়ালা