Bookmaker Bet365.com Bonus The best odds.

Full premium theme for CMS

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, পুরাকীর্তি সমাচার এবং চোরের প্রতি ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’ আর এবার যেন সত্যি সত্যি বাঘ আসে

Written by হাসান শাহরিয়ার.

Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..

স ম্পা দ কী য়

আমরা আশা-আকাঙ্ক্ষা-স্বপ্নগুলোকে, প্রয়োজনের তাগিদেই, বেশ ‘ইজি সাইজ’ করতে শিখেছি। না শিখে উপায় নাই। বারবার স্বপ্ন আসে এবং অতঃপর ভাঙে। ভাঙা স্বপ্ন পুনরায় উজ্জীবিত হয়। লাফ-ঝাপ দেয়, কিন্তু মূল সাইজে ধরা দেয় না। ফলে সাইজে ছাড় দেয়া ছাড়া উপায় থাকে না। কিন্তু স্বপ্ন দেখার ব্যাপারে আমাদের কেউ নিরাশ করতে পারে না। স্বপ্ন দেখায় বড় অক্লান্ত আমরা।  

বাইরে প্রচার আছে, বাংলাদেশে সবচেয়ে সস্তা জিনিস- বাঙালির শ্রম। তাই অনেকেই নাকি এদেশে আসে, পুঁজি বিনিয়োগ করতে, শুধুমাত্র সস্তা শ্রম পাওয়ার জন্য। অনেকে আবার আসে না, আসার খরচটাও করতে চায় না। কেননা কেবল খরচটাই মুখ্য না, কিছুটা ইনসিকিউরডও ফিল করে, আন্দোলন পাল্টা-আন্দোলনের কারণে। তাই সস্তা শ্রমকেই উড়োজাহাজে তুলে নিয়ে যায় নিজ দেশে। এই সস্তা শ্রমের কথা যে কেবল বাইরের মানুষই জানে তা না, দেশের মানুষজনও জানে। তবে দেশের মানুষজন তাদেরকে উৎপাদন-খাতে লাগাতে চায় না। উৎপাদন খাতে লাগালে তাদের আয় বাড়বে, আয় বাড়লে নাওয়াটা-খাওয়াটা ভালো চাইবে। পড়া-লেখা করতে চাইবে। অনেক ‘বড়’ হতে চাইবে। তবে তো ভারি মুশকিল। সবাই ‘বড়’ হলে ‘ছোট’ কোথায় পাবে? তাই সস্তা শ্রমের ডাক পড়ে না উৎপাদনে, ডাক পড়ে মিছিল-মিটিং-এ ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। এই ঝাঁপিয়ে পড়াটাকেই বলে আন্দোলন পাল্টা-আন্দোলন। এটা যত বেশি হয় বিনিয়োগ তত কমে এবং তখন, সস্তা শ্রমে’র কারখানায় না গিয়ে মিছিলে ঝাঁপ দেয়ার বিকল্প থাকে না। সেই থেকেই আমাদের ঝাঁপিয়ে পড়ার একটা অভ্যাস তৈরি হয়েছে। এবং ঝাঁপিয়ে যেন আমরা পড়ি, যেহেতু আমরা ‘নির্বোধ’ না, তাই নেতারা আমাদের স্বপ্নের টোপ দেয়। হাড়-হাভাতের দলের শেষ সম্বল ‘স্বপ্ন’। তাই এই স্বপ্নটা যে, কিংবা যারা দেখায়, তাদের এই সস্তা শ্রম পেতে আর অসুবিধা হয় না। স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেলে ‘সস্তারা’ আর ‘সস্তা’ থাকবে না। তাই তাদের স্বপ্ন পূরণ করানো হয়-ও না। এবং তখন দেখতে পাই, স্বপ্নের সাইজের ব্যাপারে আমরা ছাড় দিতে বাধ্য হই। এই ছাড় দেয়ার বাধ্যবাধকতা থেকেই আমাদের স্বপ্নগুলো বেশ ‘ইজি সাইজ’ হয়ে গেছে।

বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসের গল্প যতই মজাদার আর গৌরবময় বলা হোক না কেন, এই জাতি এখনো কেবল দুটি অর্জনকেই তাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন মনে করে। ভাষার জন্য প্রাণ দান এবং অতঃপর বিজয়, আর তারই ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দান এবং অতঃপর আবারো বিজয়। কিন্তু এই দুই অর্জনের মধ্যেও একটা বিশাল পার্থক্য ক্রমশই স্পষ্ট হয়ে ওঠে সবার কাছে। ভাষার দাবি আদায়ের পর এই জনপদের মানুষজন ভাষা নিয়ে আর কোনো দ্বিমত করে নি। সবাই এই গর্বে গর্বিত ছিল যে, এই জয় আমাদের সামগ্রীক জয়, এই জনপদের মানুষের জয়। ফলে তখন, যেহেতু বলা হচ্ছে ‘তারই ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধ’, সেই মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা গেছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধোত্তর এই জনপদের চেহারাটা আগের মতো থাকলো না। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ, কিংবা বলা যায় বিজয়ী আর বিজিতদের অনুসারী, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও একই জনপদে, একই সাথে বাস করতে থাকলো যার যার ‘আদর্শ’ নিয়ে। ফলে দেশে পরিপূর্ণ ‘গণতন্ত্র’ কায়েম হলো। গণতন্ত্রে সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকে। তাই অতঃপর আমরা দেখতে পাই স্বাধীনতা বিরোধী নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা পেল। মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিলে যেহেতু রাষ্ট্র-ক্ষমতা ভোগের স্বাধীনতাও দেয়ার কথা, তাই প্রথমবারের মতো স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা একটি ‘গণতান্ত্রিক’ সরকার পেলাম যার রাষ্ট্রপতি স্বাধীনতার ‘ঘোষণা-পাঠক’ এবং প্রধানমন্ত্রী ঐ ঘোষণার বিরোধী। মুক্তিযুদ্ধ সবাইকে ‘মুক্ত’ করে দিল। মুক্তিযুদ্ধে ‘সস্তা’ শ্রমকে যে বিশাল স্বপ্নের টোপ দেয়া হয়েছিল, বলা হয়েছিল ‘সস্তা’ শ্রম আর রাজপথে থাকবে না, ঢুকে যাবে কল-কারখানায়, সেই বিশাল স্বপ্নের সাইজ ছোট হওয়া শুরু করলো।

‘সস্তা’ শ্রম যেহেতু কারখানার কাজে লাগানো হয় নি, তাই তাদের আবার ডাক পড়ে রাজপথে।  টানা ৯ বছর এই ‘সস্তা’ শ্রমকে লাফ-ঝাপে লাগানো হলো। গণতন্ত্র ‘পুনরুদ্ধারের’ স্বপ্নে প্রকম্পিত হলো রাজপথ। ‘পুনরুদ্ধার’ শব্দটি ভাঙলে দাঁড়ায় ‘পুনরায়’ ‘উদ্ধার’। তার মানে গণতন্ত্র ছিল, তাকে এবার উদ্ধার করা হবে। কোন গণতন্ত্র উদ্ধার করা হবে? যে গণতন্ত্র স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ দিয়েছিল? যে গণতন্ত্র বলেছিল যে, ‘এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাওয়া যাবে না’ (ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ)? যে গণতন্ত্রে সরকার চালিত হবে মুক্তিযোদ্ধা আর যুদ্ধাপরাধীদের সমন্বয়ে? এ-সব প্রশ্ন ‘সস্তা’ শ্রমিকরা করে নি তা না। কিন্তু গণতন্ত্রে প্রশ্ন করার যেমন অধিকার আছে, ঠিক তেমনি আছে উত্তর না দেবার অধিকার। উত্তর মেলে নি। ‘সস্তা’ শ্রমিকের স্বপ্ন এসে ঠেকে একটি স্বৈরাচারী সরকারের পতন নিশ্চিত করা, তা-ও আবার স্বাধীনতা বিরোধী দলগুলোর সাথে যুগপৎ আন্দোলন করে।

স্বৈরাচার গেল, কিন্তু এবারও যেহেতু কল-কারখানার নাম-গন্ধ পাওয়া গেল না, তাই  ‘সস্তা’ শ্রমিকের বেকার হয়ে বসে না থেকে উপায় থাকলো না। ঠিক তখনই আবার নাড়া-চাড়া দেয়ার উপলক্ষ্য তাদের তৈরি হলো। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য, দুই দশক পরে হলেও, এক গণআদালতে যোগ দিতে রাস্তায় নেমে পড়লো ‘সস্তা’ শ্রমিকরা। যখন তাদের বোঝানো হচ্ছে এদেশের মূল সমস্যা হলো যুদ্ধাপরাধী এবং এদের বিচার করা প্রয়োজন আর প্রয়োজন এদের রাজনীতি করার অধিকার হরণ করা, তখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসে আছে সেই যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার অনুমতি যারা দিয়েছে। এবং যেহেতু ইতোমধ্যেই মুক্তিযোদ্ধা এবং যুদ্ধাপরাধীর সমন্বয়ে সরকার প্রতিষ্ঠা করার ‘গণতান্ত্রিক’ সংবিধান তৈরি হয়েছে, তাই সেই সরকারেও ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রিবর্গ এবং তাদের শীর্ষে রাষ্ট্রপতি হিসেবে বসেছিলেন ‘বীর’ যুদ্ধাপরাধী। এই অবস্থায় ‘সস্তা’ শ্রমিকের যখন ডাক পড়লো- আসো আবারও মুক্তিযুদ্ধ শুরু করি, তখন আর তারা চুপ থাকতে পারলো না। তারা আবারো স্বপ্ন দেখা শুরু করলো এবং নিজেরাই যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির ঘোষণা দিয়ে দিল। তারপর থেকে মৌসুমী ভিত্তিতে বছর বছর ‘সস্তা’ শ্রমিকদের ডাকা হয় আর বলা হয়- ওদের নির্মূল করবোই। যতই বলা হয় ‘নির্মূল’ করা হবে, ওদের ‘মূল’ ততই শক্ত হয় আর পোক্ত হয় এবং অতঃপর ‘সস্তা’ শ্রমিকরা আবারো তাদের স্বপ্নের সাইজকে ছোট করে এবং যুদ্ধাপরাধী মন্ত্রী-মিনিস্টারদের আন্ডারেই এদেশে ‘সুখে’ থাকার পরিকল্পনা করে।

যুদ্ধাপরাধী মন্ত্রী-মিনিস্টারের আন্ডারে থাকাটা মেনে নেয়, কেননা সেটা যুদ্ধাপরাধী রাষ্ট্রপতির আন্ডারে থাকার চেয়ে সম্মানজনক ভাবে তারা। এবং এভাবেই ‘ভালো’র আশা ত্যাগ করে এবং ‘মন্দের ভালো’কে বরণ করার একটা অভ্যাস তারা নিজেদের ভেতর তৈরি করে নেয়। তারা এ অভ্যাসও তৈরি করে যে, ‘লাভের’ প্রয়োজন নাই, ‘ক্ষতি’ যেন কম হয়- ‘মৃত্যু’ যেন না হয় ‘আহত’ হলে মন্দ না- ‘প্রমোশন’ না হলেও চলবে, চাকরি যেন না যায়- মচকাবো তবু ভাঙবো না। - এভাবেই স্বপ্নটা ছোট হতে হতে তারা এক অসাধারণ ‘নৈতিক বোধের’ সন্ধান পায় এবং তারা ‘চোরের’ প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে থাকে। চোর এখন তাদের কাছে, এই ‘সস্তা’ শ্রমিকের কাছে সম্মানীয় হতে থাকে যখন তারা খবর পায়, বিমান বন্দরে ডাকাতি হতে যাওয়া পুরাকীর্তি চুরি হয়েছে এবং এই চুরির ফলে ডাকাতি হতে যাওয়া পুরাকীর্তিগুলো ডাকাতের হাত থেকে পরিত্রাণ পেয়েছে। ডাকাত ঠেকাতে চোরকে সাধুবাদ দিতে পেরে তারা খুশি হয়। এবং তারা নিমগ্ন হয়ে এ-ও ভাবে যে, এই যে এতো এতো আন্দোলন-পাল্টা আন্দোলনে তাদের মতো ‘সস্তা’ শ্রমিকদের ডাকা হয়, কিন্তু দেশের এমন ঐতিহ্য ডাকাতি করার পরিকল্পনা যখন করা হচ্ছিল তখন কেউ তাদেরকে ডাকলো না কেন? পত্র-পত্রিকায় এ-বিষয়ে লেখা-টেখা খানিকটা হয়তো তাদের চোখে পড়েছে এবং বিষয়টা আদালত পর্যন্ত গিয়েও ‘ডাকাতি পরিকল্পনা’ রুদ্ধ করতে পারে নি, এ-ও তারা পড়েছে, কিন্তু মূল আক্ষেপ তাদের এই যে, তাদেরকে কেউ ডাকলো না কেন? এখনও যেহেতু কল-কারখানা নাই, ফলে তারাতো বেকারই ছিল। একবার ডেকেই দেখতো ‘সস্তা’রা কেমন ঝাঁপিয়ে পড়ে। নাকি ‘সস্তা’র উপর তাদের আস্থা নাই! এমত বিক্ষিপ্ত ভাবনাগুলো যখন ভাবতে থাকে, তখন তাদের কাছে বিষয়টা পরিষ্কার হয় যে- তাদেরকে দেশের ঐতিহ্য ডাকাতির বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে ডাকা হয় নি কারণ, যারা ডাকবে তারা নিজেরাই এই ডাকাতির সাথে জড়িত ছিল এবং অতঃপর চোরের প্রতি তাদের শ্রদ্ধাটা বেড়ে দ্বিগুন হয় এবং এ-ও তারা ভাবে যে ‘স্বপ্ন’কে স্বপ্নহীন করেই এদেশে থাকতে হবে।

স্বপ্নটা যখন ইজি সাইজ হয়েছে, তখন তাদের কাছে আরেক সংবাদ আসে এবং সেটা সেই পুরনো ইস্যু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে। এবার ‘সস্তা’ শ্রমিকদের একটু বিরক্তিই লাগে।
 
‘সস্তা’ বলে কি তারা এতোই সস্তা যে, মৌসুমী ভিত্তিতে একই ইস্যু নিয়ে কেউ কেউ ডাকবে আর তারা ঝাঁপিয়ে পড়বে? তারা প্রথম দিকে ঝাঁপিয়ে না পড়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং চুপ-চাপ ব্যাপারটা ফলো করে। ফলো না করে উপায়ও থাকে না, কারণ তারা দেখেছে, নির্মূল করার হুমকি-ধামকি কেবল গলাবাজিতে সীমাবদ্ধ থাকার কারণে যুদ্ধাপরাধীরা নির্মূল না হয়ে শক্ত-পোক্ত হচ্ছে। এবং বারবার এই নির্মূলের গর্জনকে অপরাধীরা বেশ আনন্দ চিত্তেই গ্রহণ করেছে। প্রচারেই প্রসার বলে তো একটা কথা আছেই। কিন্তু ঐ যে শুরুতেই বলা হলো- স্বপ্ন দেখার ব্যাপারে আমাদের কেউ নিরাশ করতে পারে না, তাই এবার যখন দেখা গেল এই বিচারের দাবিটা এসেছে খোদ মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর-কমান্ডারদের কাছ থেকে এবং তাদের সুরের সাথে নির্বাচন কমিশনের মুখোমুখি হওয়া সব রাজনৈতিক দলের সুরেরও বেশ মিল আছে, তখন তাদের ভেতরে ‘ইজি সাইজ’ হওয়া স্বপ্নটা আবার নড়েচড়ে উঠলো। বারবার ভয় দেখিয়ে সরে আসার কারণে যেহেতু অপরাধীরা ব্যাপারটাকে তামাশা হিসেবে দেখছে, তাই এবার তাদের, সেই ‘সস্তা’ শ্রমিকদের মনে হলো, শেষবারের মতো তাহলে আবার তারা ‘সস্তা’ হবে এবং এই ডাকে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়বে। এবং অতঃপর তাদের মনে হলো এবার যেন বাঘটা সত্যি সত্যি আসে এবং পুরনো গল্পটা তারা এভাবে সাজালো-

এক জনপদে এক মুক্তিযোদ্ধা রাখাল ছিল। সে রোজ গরু নিয়ে পাহাড়ের পাড়ে যেত। পাহাড়ের ওপাশেই যে পল্লীটি, সেটি ছিল যুদ্ধাপরাধীবহুল পল্লী। রাখাল গরু চড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে হাঁক দিত- বাঘ আসছে, বাঘ আসছে, রাজাকার নিধনের বাঘ আসছে। তার চিৎকার শুনে যুদ্ধাপরাধীরা দৌড়ে আসতো, বাঘকে প্রতিহত করার জন্য। এসে দেখতো রাখাল হাসছে। তারা চলে যেত। এভাবে প্রায়-দিনই রাখাল চিৎকার করতো- বাঘ আসছে, বাঘ আসছে, রাজাকার নিধনের বাঘ আসছে। রাজাকাররা হুড়মুড় করে আসে, প্রস্তুতি নিয়ে আসে, বাঘ প্রতিহত করার প্রস্তুতি। এসে দেখে রাখাল সেই আগের মতোই হাসছে। এভাবে অনেক দিন চলে গেল। বলা যেতে পারে প্রায় ৩৬ বছর চলে গেল। রাখাল বালক এখন আর বালক নাই, পরিপূর্ণ পুরুষ। সে গরুগুলোকে পাহাড়ের পাড়ে বেঁধে এবার হাঁক দিল- বাঘ আসছে, বাঘ আসছে, রাজাকার নিধনের বাঘ আসছে। রাজাকাররা এই ডাক শুনলো বটে, কেউ দৌড়ে এলো না। ঘরে বসেই হাসতে লাগলো। রাখাল-পুরুষ আবার হাঁক দিল- বাঘ আসছে, বাঘ আসছে, রাজাকার নিধনের বাঘ আসছে। রাজাকাররা ঘরে বসেই উপহাস করতে থাকলো। ইতোমধ্যে রাখালের সাথে সব বাঘের দল জড়ো হতে থাকলো। বাঘে বাঘে ভরে গেল সেই পাহাড়ের পাদদেশ। এবার সব বাঘ এক সাথে হুঙ্কার দিয়ে এগিয়ে গেল রাজাকার পল্লীতে। ৩৬ বছরের পুরনো সেই স্মৃতি আর শক্তি দিয়ে নিশ্চিহ্ন করতে থাকলো প্রত্যেকটি রাজাকারকে, প্রত্যেকটি যুদ্ধাপরাধীকে। সেই পল্লীটি ৩৬ বছর পর আবারো ¯œান সেরে চুল শুকাতে গেল।

গল্পটি এভাবে সাজিয়ে দেখলো, যেহেতু তাদের স্বপ্নগুলো ‘ইজি সাইজ’ হয়েছে, তাহলে তা কেবল ছোট হবে কেন। টেনে বড়ও তো করা যায়। তখন তারা তাদের স্বপ্নগুলোকে বড় করতে লাগলো এবং সেই বাঘের প্রতিক্ষায় থাকলো, যে বাঘ তাদেরকে আর ‘সস্তা’ ভাববে না। পুনঃপুনঃ আন্দোলনের নামে ফাঁকি দেবে না।

ইতি
হাসান শাহরিয়ার
ডিসেম্বর ২০০৭
সোবহানবাগ, ঢাকা।