Full premium theme for CMS
গোলাপজান মঞ্চে এলো যেভাবে
Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..
[২১ এপ্রিল ২০০৬-এ মহিলা সমিতি মঞ্চে সন্ধ্যে ৭টায় হলভর্তি দর্শকের সামনে গোলাপজান নাটকের ১০০তম মঞ্চায়ন হয়ে গেল। দলের দ্বিতীয় কোনো নাটকের ১০০তম মঞ্চায়নের গৌরব অর্জন করলো থিয়েটার আর্ট ইউনিট। গোলাপজান এ দলটির তৃতীয় প্রযোজনা যার নাট্যরূপ, নির্দেশনা ও সঙ্গীত প্রয়োগ করেছেন প্রয়াত নাট্যজন এস. এম. সোলায়মান। ১০০তম মঞ্চায়নে দর্শক-আলোচকগণ ভূয়সী প্রশংসা করলেন, ফুলে ফুলে ভরিয়ে দিলেন নাটকের নামভূমিকার অভিনেত্রী রোকেয়া রফিক বেবীসহ অন্যান্য কলাকুশলী ও সদস্যদের। এই আকালের দিনে একটি নাটকের শততম মঞ্চায়ন নিঃসন্দেহে ঘটনাবহুল। প্রায় এগারো বছর আগে প্রথম মঞ্চায়িত নাটক গোলাপজান-র নির্মাণভাবনা, নির্মাণ প্রক্রিয়া আর নাট্যকার ও নির্দেশক এস. এম. সোলায়মানের দ্বৈত সত্তার পর্যবেক্ষণ করে প্রবন্ধটি লিখেছেন দলের সিনিয়র সদস্য ও অভিনেতা প্রশান্ত হালদার। লেখাটি প্রকাশের মাধ্যমে থিয়েটারওয়ালা-ও গোলাপজান-এর শততম মঞ্চায়নের আনন্দের অংশীদার হয়ে রইলো।- সম্পাদক]
‘গোলাপজানের অশ্বারোহন’ মোহাম্মদ আবু তাহেরের একটি ছোট গল্প, যার রচনাকাল ১৯৯০। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ‘শিল্পতরু’র বিশেষ গল্প সংখ্যায়। পরে ১৯৯২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বইমেলায় একই নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় এটি।
থিয়েটার আর্ট ইউনিটের দলপ্রধান, বাংলাদেশের কুশলী নাট্যজন এস. এম. সোলায়মান ‘গোলাপজানের অশ্বারোহন’ গল্পটি পড়ার পর গল্পকার মোহাম্মদ আবু তাহেরের সঙ্গে কথা বললেন। মোহাম্মদ আবু তাহের তখন বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার। বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে তাঁর অফিস কক্ষেই কথা হয় দু’জনের। সেখানে গল্পকারের অনুমতির প্রসঙ্গ টেনে সোলায়মানভাই বললেন যে, এ গল্পটি নিয়ে তিনি থিয়েটার করতে চান। গল্পকারের হতবাক উক্তি- ‘এ গল্পে তো কোনো নাট্যসম্ভাবনা নাই’! এর উত্তরে সোলায়মানভাইয়ের স্পর্ধিত উচ্চারণ- সেটা আমি দেখবো। তারপরও রচয়িতার বিনম্র ব্যাখ্যা এই যে, তাঁর গল্পে আছে সংলাপ স্বল্পতা আর নাটক চায় সংলাপ প্রাচুর্য। এই দুইটিকে মেলানো হবে কীভাবে? কিন্তু নির্দেশক যেহেতু এস এম সোলায়মান, তাঁর সৃজনশীলতার উপর আস্থা না রেখে পারেন নি গল্পকার।
গল্পকারের অনুমতি পেয়ে সোলায়মানভাই সেটি নাট্যরূপ দিয়ে ফেললেন। কিন্তু নামটি ছেঁটে রাখলেন শুধুই গোলাপজান। দলের নতুন নাটকের প্রথম মহড়ায় সবার সামনে সোলায়মানভাই পাঠ করলেন গোলাপজান। এবং সেই পাঠের পর গল্পকারের মতো আমরাও কোনো নাট্যসম্ভাবনা না পেয়ে চুপ করে বসে থাকলাম। আমরা এ-ও ভাবলাম আমাদের পূর্ব প্রযোজনা কোর্ট মার্শাল ততদিনে একটি দর্শকপ্রিয় নাটক হয়ে উঠেছে, এরপর এমন নাটক করা ঠিক হবে না যা একেবারে ‘থিয়েটারই’ হয়ে উঠবে না। কিন্তু আমাদের চুপ করে বসে থাকা, নেতিবাচক ভাবনার বহিঃপ্রকাশ, কোনো কিছুই নির্দেশককে দমাতে পারলো না। কারণ একটিই। গোলাপজান-র পুরো চিত্রকল্পই ততদিনে সোলায়মানভাইয়ের চোখের সামনে ভাসমান। নাটকের প্রধান চরিত্র গোলাপজানের ভূমিকায় অভিনয় করবেন রোকেয়া রফিক বেবী, গোলাপজান-র ভাষা হবে খাঁটি ঢাকাইয়া ভাষা এবং নাটকটি হবে সংগীতনির্ভর ইত্যাদি ইত্যাদি প্রায় সব চিত্রই তো নির্দেশকের চোখে স্পষ্ট। ফলে কোনোভাবেই আমাদের অস্পষ্টতা তাঁর বাধা হয়ে দাঁড়ালো না।
কিন্তু আসলেই কি সোলায়মানভাইয়ের কাছে সব কিছুই স্পষ্ট ছিল? বোধ হয় না। তিনি মূল জায়গাটা হয়তো ধরতে পেরেছিলেন, কিন্তু সর্বশেষ যে ডিজাইনটা গোলাপজান-র হয়েছে, তার পুরোটা তিনি কি প্রথম থেকেই ভেবেছিলেন? না। কারণ, গোলাপজানের বাইরেও কিছু চরিত্র আছে যেমন সাংবাদিক, পুলিশ, গোলাপজানের স্বামী, ছেলে, মাওলানা একাব্বর- এমনকি তাদের মুখে অনেক সংলাপও ছিল, এসব মিলিয়ে কীভাবে চরিত্রগুলো মঞ্চে আসবে তা নিয়ে সোলায়মানভাই-ও দ্বিধায় ছিলেন? এরই মধ্যে আমাদের প্রতি নির্দেশকের নির্দেশ আসলো ৩০/৪০ দশকের জনপ্রিয় হিন্দিগান জোগাড় করতে হবে। নাটকের আবহসঙ্গীত হিসেবে তিনি এ হিন্দি গানগুলো ব্যবহার করবেন। হায়! হায়! বলে কী! বাংলা নাটকে হিন্দি গান! আমরা কিছুটা তাজ্জব বনে গেলাম। এভাবে চলতে থাকলো। একসময় নির্দেশক স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন-হ্যাঁ, গোলাপজান হবে মাত্র একটি চরিত্রের সংলাপ নির্ভর, নামভূমিকার অভিনেত্রী বেবী আপা ছাড়া আর কারো মুখেই উচ্চারিত হবে না কোনো সংলাপ।
মহড়া আর স্ক্রীপ্ট সংশোধন চলছে সমান্তরালভাবে। মোহাম্মদ আবু তাহের স্ক্রীপ্ট নিয়ে গেলেন ঢাকাইয়া ভাষার ভুল-ভাল ঠিক করে দেয়ার জন্য। তিনি আদি ঢাকার স্থায়ী মানুষ নন। কিন্তু তার শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের একটা বড় অংশ কেটেছে আদি ঢাকায়। তবে যোগাযোগ আছে এখনও। গোলাপজান তো আদি ঢাকারই স্থায়ী মানুষ। ঢাকাইয়া বলতে যা বোঝায়- একদম তা-ই। যাদেরকে কিনা আমরা বলি ‘কুট্টি’, ‘ঢাকাইয়া কুট্টি’। সেই সম্প্রদায়েরই একজন আমাদের এই গোলাপজান। কেবল গল্পকার নন, আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন নাট্যকার সাঈদ আহমদ। ঢাকাইয়া ভাষার ব্যাপারে তিনি তো একেবারে চোস্ত ব্যক্তিত্ব। ৩০/৪০ দশকের হিন্দি গানের ব্যাপারেও সহযোগিতা পাওয়া গেল এই মিউজিক-ম্যানের, গানের উচ্চারণের সুক্ষ্ণ ভুলভ্রান্তি ধরবার ক্ষমতা রাখেন যিনি। এরমধ্যে কামালউদ্দিন কবিরের সাথেও নির্দেশকের কথা হয়েছে; তিনি সেট ডিজাইন করবেন। কবিরভাই তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাট্যকলায় মাস্টার্স নিয়ে বেরিয়েছেন। ঢাকার থিয়েটারে এটাই তার প্রথম সেট ডিজাইন। ক’দিন পর তিনি একটি মডেল দেখালেন আমাদেরকে। ওমা! এ আবার কীরকম সেট! প্রচলিত ধারণার সম্পূর্ণ বাইরে গিয়ে তিনি দাঁড় করিয়েছেন ছোট-বড় নানা আকারের জ্যামিতিক কিছু অবয়ব। এখানেও খানিকটা তাজ্জব বনে গেলাম গেলাম।
সোলায়মানভাইয়ের ভাবনায় এমন ছিল যে, সমস্ত আবহ সংগীত স্টুডিওতে রেকর্ড করা হবে এবং শো’র সময় এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা ব্যবহার করা হবে; আর তার জন্য প্রয়োজন এক চৌকশ মিউজিক অপারেটরের। কেনো না আবহসঙ্গীতের ব্যবহারটাও হবে অনেক ক্ষেত্রে রিদমিক। কিন্তু মহড়ার এক পর্যায়ে সেখান থেকেও সরে আসলেন নির্দেশক। সেলিম মাহবুবের নেতৃত্বে একটি গানের দল বানানো হলো। সেই দলে ছিলাম আমি, সাজু মোনায়েম (প্রয়াত), কামাল রায়হান, চন্দন রেজা, সঞ্চিতা, লিটা খন্দকার, সারোয়ার জাহান সিদ্দিকী, শফিকুজ্জামান ফুয়াদ, সাইফুল ইসলাম, মিল্লাত, ওয়ালিউল্লাহ আখন্দ রিপন ও আশরাফ কবীর। মাহবুব সেলিম হারমোনিয়ামে গান তোলেন আর আমরা যার যার ক্ষমতা অনুযায়ী সুরের সাথে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকি। সমান্তরালভাবে চলতে থাকলো দুই মহড়া- একদিকে গানের, অন্যদিকে স্ক্রীপ্ট ফেলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বেবী আপার সংলাপ প্রক্ষেপন। সংলাপের সাথে ধাতস্থ হওয়ার প্রাণান্তকর চেষ্টা আর সেই সাথে ঢাকাইয়া ভাষাটাও আয়ত্তে আনা। এক সময় বেবী আপা জানালেন তার কিছু সমস্যার কথা- সংলাপ বলার সময় তিনি কখানো কখনো অস্বস্তিতে ভোগেন, নিজেকে খুব একা মনে হয়, ফাঁকা মনে হয়, আশপাশে কেউ নেই, কল্পিত কোনো চরিত্রকে সারাক্ষণ মাথায় রেখে অভিনয় করা যায়? তবে এর থেকে উত্তরণ কীভাবে সম্ভব? নির্দেশক একটা উপায় বের করলেন। গোলাপজানের সামনে সংলাপবিহীন কিছু চরিত্র দাঁড় করিয়ে দিলেন। তখন চরিত্ররূপদানকারী অভিনেত্রী বেবী আপা কিছুটা স্বস্তি পাওয়ার কথা স্বীকার করে মহড়া এগিয়ে নিতে থাকলেন। তখন থেকেই সোলায়মানভাই এই নাটকে কোরাস ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিলেন। কেবল কোরাস ব্যবহারই নয়, গানের যে দলটির বসবার কথা ছিল পর্দার আড়ালে, সেটাকেই মঞ্চের ভেতরে আনার ডিজাইন তৈরি হলো। এবং তারপর থেকেই আমরা লক্ষ্য করতে থাকি যে, ‘দুর্বোধ্য, নাট্যসম্ভাবনাহীন’ একটি পাণ্ডুলিপি দিনে দিনে প্রাণবন্ত হতে থাকে মহড়ার মধ্যে।
সোলায়মানভাইয়ের বাসায় আমরা যেখানে মহড়া চালাতাম সে জায়গাটা কিছুদিনের মধ্যেই ছাড়তে হলো- কেননা জায়গাটি ছিল খুব ছোট পরিসরের, ওখানে ব্লকিং করা সম্ভব হচ্ছিল না। আবুজর গিফারী কলেজের একটি কক্ষে ব্লকিং শুরু হলো। ততদিনেও সেট তৈরি না হওয়ায় মডেল দেখে মেঝেতে চক দিয়ে এঁকে এঁকে নির্দেশক আমাদের মুভমেন্ট ঠিক করে দিচ্ছিলেন। এরপর সেট তৈরি হওয়ার পর একটা নতুন সমস্যা দেখা গেল। খানিকটা স্থানাভাব অনুভব করলাম আমরা সবাই। ব্যাপারটা আসলে যেহেতু প্রথমে চিন্তা করা হয়েছিল যে, বেবী আপা একাই মঞ্চে থাকবেন, সেহেতু সেট ডিজাইনে একজনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকলেও কোরাস অর্ন্তভুক্তির সিদ্ধান্তের ফলে এখন মঞ্চের স্পেসটা অনেকটাই সংকীর্ণ মনে হতে থাকলো। ব্যাপারটা সোলায়মান ভাই-ও লক্ষ্য করছিলেন। পরে সেট ডিজানারের সাথে বসে সেটে কিছুটা পরিবর্তন আনা হলো এবং পূর্বের ব্লকিং-এর অনেকটাই পাল্টিয়ে ফেললেন নির্দেশক। মঞ্চে আমাদের মুভমেন্ট দেখে মনে হতে থাকলো শহরের কোনো এক ঘিঞ্জি এলাকার অলি-গলি দিয়ে আসা যাওয়া করছে কিছু মানুষ। বাস্তবিকই যেন পুরান ঢাকার অবয়ব ভেসে আসলো মঞ্চের উপর।
নাটকটির পোষাক পরিকল্পনায় ছিলেন সিতিমা এনাম, সাথে ছিলেন কামালউদ্দিন কবিরও। লাইট ডিজাইন করেছেন ঠাণ্ডু রায়হান। সব মিলিয়ে গোলাপজান দর্শকের সামনে প্রথম উপস্থিত হয় ১৯৯৫ সালের ২৮ জুলাই, সন্ধ্যায়, পাবলিক লাইব্রেরির (বর্তমান) শওকত ওসমান মিলনায়তনে। মঞ্চে প্রথমেই আমরা দেখি তিন কুড়ি পাঁচ (৬৫) বছরের বৃদ্ধা গোলাপজান বিড়বিড় করছে। সে তার প্রিয় ঘোড়া লাল্লুর কথা বলছে, ছেলে সাল্লুর কথা বলছে। স্মৃতিতে ভীড় করে আসছে কতোজন- এক গলি দিয়ে এলো একজন বৃদ্ধ, অন্য গলি দিয়ে নাটাই হাতে এলো লাল জামা পরা তার ছেলে সাল্লু। এভাবেই নাটকের শুরু। তারপর রোকেয়া রফিক বেবীকে অভিনয় করতে হয় সাত বছর বয়স থেকে শুরু করে পঁয়ষট্টি বছর পর্যন্ত নানা বয়সী, নানা চরিত্রের ভূমিকায়। পৌনে দু’ঘন্টার এ একক সংলাপ নির্ভর নাটকে একক বাচিক অভিনয় করেন রোকেয়া রফিক বেবী। কোরাসের আছে সংলাপবিহীন উপস্থিতি। মহড়াকালে সোলায়মানভাইকে প্রশ্ন করেছিলাম- গোলাপজান কি তবে একক অভিনীত নাটক? তিনি সরাসরি উত্তর দেন নি, বলেছিলেন- এটি বলতে পারবে দর্শক আর নাট্যবোদ্ধারাই। গোলাপজান একক অভিনীত নাটক কি না, এই প্রশ্নের সুরাহা হয়তো প্রয়োজন নেই কিন্তু রোকেয়া রফিক বেবীর এটা যে সেরা অভিনয় তা নিয়ে নিশ্চয়ই কেউ প্রশ্ন তুলবে না। ইঙ্গিত, এই দেশে এই বেশে, কীর্তিনাশা, পীরচান, দ্যা লেসন সব নাটকে আছে বা ছিল তার সপ্রতিভ অভিনয় উপস্থিতি। কিন্তু সব চরিত্রকে ছাপিয়ে গোলাপজান চরিত্রে রোকেয়া রফিক বেবী যেন অভিনয় ক্ষমতার তুঙ্গ স্পর্শ করলেন। কেবল কি তার জীবনেরই এটা সেরা অভিনয়? ঢাকার মঞ্চেরও সেরা অভিনয়গুলোর একটা-ও কি এটা নয়?
এই নাটকে মিউজিক ব্যবহার করা হয়েছে ৩০/৪০ বা পঞ্চাশের দশককে মাথায় রেখে। পুরান ঢাকার ঐ সময়টাকে ধরার জন্য। সবগুলোই প্রচলিত ও জনপ্রিয় হিন্দি গান, তাও পুরো গান নয়, অংশ বিশেষ। অথচ সঙ্গীতের ব্যবহার কখনো আরোপিত মনে হয় নি; অপ্রাসঙ্গিক মনে হয় নি। মুডের সাথে মিলিয়েই মিউজিক তৈরি হয়েছে। মিউজিকের ব্যবহার এমন হয়েছে যে, নাটকটাকে টানটান করে রাখে। শেষের দিকে মহড়া দেখে সাঈদ আহমদ একদিন নির্দেশককে বলেছিলেন- সোলায়মান, তোমার এ নাটক ঝুলবে না। মিউজিক্যাল নেটটাই তোমার নাটককে ঝুলতে দেবে না। এই নাটকে এস. এম. সোলায়মানের সঙ্গীত প্রয়োগকৌশল এক অসম্ভব ব্যতিক্রমী ঘটনা। তাছাড়া রচনার দিক থেকেও একক সংলাপনির্ভর নাটক হিসেবে এটি তার প্রথম রচনা। তিনি সাধারণত যে-ধরনের নাটক লিখে থাকেন , এটি তেমন নয়। মোহাম্মদ আবু তাহেরের মূল গল্পে সংলাপ খুবই কম। প্রায় সমস্ত সংলাপই লিখেছেন এস. এম. সোলায়মান। গল্পের মনস্তাত্বিক রূপটা ঠিক রেখেই কৃতিত্বের সাথে তিনি এ কাজটি করেছেন। আর নির্দেশক হিসেবে তিনি প্রচুর কাজও করেছেন। ইন্সপেক্টর জেনারেল, ইঙ্গিত, এই দেশে এই বেশে, আমিনা সুন্দরী, কোর্ট মার্শাল-এর মতো অনেক জনপ্রিয় ও মান সম্মত নাটক তিনি উপহার দিয়েছেন। তবে গোলাপজানই বোধকরি তার সেরা নির্দেশনা এবং এর সাথে একথাও যোগ করা যায় যে, গোলাপজান রোকেয়া রফিক বেবী’র সেরা অভিনয়। এভাবেই গোলাপজান দুইজন শ্রেষ্ঠ শিল্পীর শ্রেষ্ঠ কাজ হিসেবে দর্শক হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছে।
প্রশান্ত হালাদার : অভিনেতা, সদস্য- থিয়েটার আর্ট ইউনিট