Full premium theme for CMS
অন্য চোখে আলাপন।। আলাপনে নাট্যজন : কিছু কথা
Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..
আমি থিয়েটারওয়ালার নিয়মিত পাঠক। পত্রিকাটির জন্মসংখ্যা থেকে শুরু করে সর্বশেষ সংখ্যা- সবগুলো সংখ্যাই আমি বেশ আগ্রহের সাথে পড়েছি। বলা বাহুল্য একদম বিনে পয়সায় পড়েছি। বহুবার বিনিময় মূল্য নেয়ার জন্য সম্পাদককে বলেছি কিন্তু প্রতিবারই তা হেসে উড়িয়ে দিয়েছে এবং পরবর্তী সংখ্যাটি যথারীতি ডাকযোগে পাঠিয়ে দিয়েছে এই অনুজপ্রতিম সম্পাদক। এ সব কিছুই আমার কাছে এখনো রহস্যময়। বর্তমান সময়ে এরকমভাবে একটা নাট্যপত্রিকা নিয়মিত প্রকাশ করা প্রায় অসম্ভব এ কথা বলার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।
থিয়েটারওয়ালায় ইদানিংকালে প্রকাশিত হচ্ছে দেশের পুরোধা নাট্যব্যক্তিত্বদের নিয়ে আলাপন। এই আলাপনে একদিকে মুগ্ধ হয়েছি, আবার অন্যদিকে কিছু কিছু বিষয় নিয়ে কিছু একটা বলবার তৃষ্ণাও পেয়েছি। কিন্তু কীভাবে কী লিখবো তা ভাবতে ভাবতেই দেখি এক রকম একটা লেখা দাঁড়িয়ে গেছে। হয়তোবা এটুকুই আমি বলতে চেয়েছি।
থিয়েটারওয়ালার জুলাই-সেপ্টেম্বর’০৫ ও অক্টোবর-ডিসেম্বর’০৫ সংখ্যায় প্রকাশিত আমাদের বিশিষ্ট নাট্যজনদের নিয়ে অন্তরঙ্গ আলাপন আমি অত্যন্ত আগ্রহের সাথে পড়েছি। পড়তে পড়তে চলে গিয়েছি পুরোণো দিনগুলোতে। খুব বেশি পুরোনো নয়, আমাদের সময়টাকেই দেখেছি নতুন করে। বিশেষ করে স্বাধীনতা পরবর্তী নাট্যচর্চার বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ নতুন করে ধরা পড়েছে আমাদের চোখে। সেখানে উঠে এসেছে নানা ঘটনা, যার অনেক কিছুই ঘটেছে আমাদের চোখের সামনে। তবে বাড়তি পাওনা হিসেবে পেয়েছি শ্রদ্ধেয় নাট্যজনদের ব্যক্তিগত জীবনের অনেক অজানা কথা। সেই সাথে পেয়েছি তাদের সমযের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের খণ্ড খণ্ড চিত্র, যা ভবিষ্যতে নাট্য গবেষক, ইতিহাসবিদদের জোগাবে অনেক তথ্য, উপকরণ। এ সব আলাপনে আমরা যেমন পাই স্বাধীনতা পূর্বকালের নাট্যচর্চার চিত্র, তেমনি পাই স্বাধীনতা পরবর্তীকালে নব নাট্যচর্চার অনেক অলিখিত কথা। প্রথমেই সাঈদ আহমদ ভাই আমাদের নিয়ে যান অবিভক্ত ভারতের বাংলাদেশে। তারপর পাকিস্তানি আমলে। পরবর্তী সময়ে রামেন্দু মজুমদার, আতাউর রহমান, আলী যাকের, মামুনুর রশীদ ও নাসির উদ্দিন ইউসুফের কথায় ফিরে পাই আমাদের সমকালকে। থিয়েটারওয়ালার এই আয়োজন সত্যিই অসাধারণ!
আমাদের শ্রদ্ধেয় নাট্যজনেরা তাদের কথা, দলের কথা যেমন বলেছেন, তেমনি বলেছেন অন্যদের কথা, অন্য দলের কথা। সেসব কথায় কখনো প্রকাশ পেয়েছে ভালো লাগার কথা, তেমনি ফুটে উটেছে ঈর্ষা ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ তাদের কথায় রীতিমতো তুলনামূলক আলোচনা করে নিজস্ব প্রযোজনাকে বড় করে তুলতে চেয়েছেন, যা অনেক সময় হাস্যকর হয়েও উঠেছে। এসবেরও প্রয়োজন আছে, তবে কাউকে খাট করে নয়।
নাটকের মতো একটি শিল্পের মূল্য বিচার একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। অনেক সময়েই তাতে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে এবং সেটা এক্ষেত্রে হয়েছেও। আর তার প্রতিক্রিয়া আমরা দেখতে পাই থিয়েটারওয়ালার ৭ম বর্ষ ৪র্থ সংখ্যায়। তবিবুল ইসলাম বাবু, রামেন্দু মজুমদার ও অনন্ত হিরার লেখার ভেতর দিয়ে তা আমরা দেখতে পেয়েছি। তবিবুল ইসলাম বাবু তার লেখায় থিয়েটারের প্রতিষ্ঠা ও নাটক নিয়ে সিউল যাত্রা নিয়ে ব্যক্ত করেছেন তার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় মামলা মোকদ্দমা করবার কথা পর্যন্ত বলেছেন।বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক। তবে ইে সংখ্যাতেই রামেন্দু মজুমদারের দেয়া উত্তরটি সত্যিই প্রশংসনীয়। আমার ধারণা এর পর বাবু ভাইয়ের আর মনোকষ্ট থাকবে না। নাট্যজন আতাউর রহমানের আলাপচারিতার প্রেক্ষিতে অনন্তহিরার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াটি পাঠক মনে অনেক ভাবনার জন্ম দেয়। আতাউর রহমানের আলাপচারিতা আর অনন্ত হিরার তীব্র প্রতিবাদটি তবিবুল ইসলাম বাবুর প্রতিক্রিয়ার সাথে মেলানো যায় না। অনন্ত হিরার বড় অভিযোগটি নতুন প্রজন্মের কমিটমেন্ট নিয়ে। অভিযোগটি সত্যিই গুরুতর। কমিটমেন্টের বিষয়টি নিঃসন্দেহে একটি স্পর্শকাতর বিষয়। দু-একজন বিচ্ছিন্ন ব্যক্তির কমিটমেন্টহীনতার কারণে নিশ্চয়ই একটি প্রজন্মকে অভিযুক্ত করা যায় না। কমিটমেন্টহীনতার বিষয়টি কিন্তু নতুন পুরাতন সবার ক্ষেত্রেই সমান প্রযোজ্য। একটি কথা কম-বেশি সকলেই স্বীকার করবেন, আজকে যারা আমাদের নাট্যচর্চাকে বর্তমান অবস্থানে নিয়ে এসেছেন, সেই অগ্রজরা কিন্তু লড়াইটা একা করেন নি। তাদের পেছনে ছিল অপেক্ষাকুত তরুণ এক বিশাল কর্মী বাহিনী। বলাবাহুল্য, এখনো তারা আছেন। এবং তারা আছেন প্রতিটি দলেই। ইতোমধ্যেই তাদের অনেকে সৃজনশীলতায় বিশেষ অবস্থানও তৈরি করে নিয়েছেন।বরং এসব ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রজরাও তাদের দায়িত্ব পুরো পালন করতে পারেন নি। তবে আতাউর রহমানের কথায় অনন্ত হিরার প্রতিক্রিয়াটি একটু রাখঢাকাহীন। অবশ্য সবাই একইভাবে তাদের মত প্রকাশ করেন না।
শ্যামাপ্রেম নিয়ে অনন্ত হিরার প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে আমার শুধু বারবার শেক্সপীয়রের কথাই মনে পড়ছে। সময়ের সাথে সাথে শেক্সপীয়রের মঞ্চায়ন নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভেতর দিয়ে আজো প্রদর্শিত হয়ে আসছে দর্শকদের মাঝে। তাতে শেক্সপীয়রের সৃষ্টির কোনো অবনমন হয় নি। বরং নানারূপে নানা আঙ্গিকে শেক্সপীয়র ছড়িয়ে পড়েছেন সারা বিশ্বে। রবীন্দ্রনাথও আমাদের তেমনি উত্তরাধিকার। প্রত্যেক নির্দেশকই তার নিজস্ব ভাবনা থেকেই রবীন্দ্রনাথকে উপস্থাপন করবেন এটাই স্বাভাবিক। সেখানে একটি বিষয়ই বিবেচ্য হতে পারে, আর তা হলো শিল্পমান। আর এ ক্ষেত্রে দর্শক-শ্রোতাই সর্বোচ্চ আদালত। রবীন্দ্রনাথ কোনো বিশেষ মহল বা গোষ্ঠীর সম্পত্তি নন। রবীন্দ্রনাথ সকলের। একটা কথা মনে রাখা দরকার, যারাই রীন্দ্রনাথকে মঞ্চে আনুন না কেন তারা রবীন্দ্রনাথকে যতটা না মহিমান্বিত করেন, তার চেয়ে বেশি নিজেরাই আলোকিত হন রবির আলোয়। আমরা বরং রবীন্দ্রনাথকে আরো বেশি বেশি মঞ্চে দেখতে চাই।
থিয়েটারওয়ালার আলাপন নিয়ে হঠাৎ করেই কিছু লিখে ফেললাম। হয়তো আরো লেখা যেত বা অন্যরা হয়তোবা লিখবেনও। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে- এই যে নিজেরকে উন্মোচন করা এবং অন্যের কথা শোনার প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছে, থিয়েটারওয়ালা যেন এটাকে অব্যাহত রাখেন, নানাবাবে, নানা আঙ্গিকে। আমাদের নাট্যচর্চার বিকাশে এসব ভিন্নমত আর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া- এসবেরও দরকার আছে। আমার বিশ্বাস ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া সব কিছুই আমরা নাটককে ভালোবাসি বলেই করছি।
জয় হোক থিয়েটারওয়ালার।
আবদুল্লাহেল মাহমুদ ( This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it. ): নাট্যকার। নাট্যজন- সদস্য, আরণ্যক নাট্যদল।