Bookmaker Bet365.com Bonus The best odds.

Full premium theme for CMS

ট্র্যাজেডি পলাশবাড়ি

Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..

(মঞ্চের পিছনে একটা পর্দা ঝুলছে। পর্দায় একটি নয়তলা বিল্ডিং-এর সাজেশন। ভিডিও প্রজেকশন ব্যবহার করা গেলে পর্দায় দেখা যেতে পারে একটি কর্মব্যস্ত গার্মেন্টস-এর ভেতর এবং পরবর্তী সময়ে নিউজ চ্যানেলের ধারণকৃত সাভার পলাশবাড়ির ট্র্যাজেডি এ কথানাটকের নানান মুহূর্তে পর্দায় ভেসে উঠতে পারে। এই কর্মচঞ্চল ভবনটির ভেতর সমবেত কণ্ঠের গান হয়- রবীন্দ্রসংগীত- “মোরা কাজ করি আনন্দে ...”  হঠাৎ অডিও-তে বিষ্ফোরণের মতো শব্দ হয়)

অডিও    
(সমবেত কণ্ঠে) লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুব্হানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ জোয়ালেমিন।

অডিও    
(ভয়েজ ওভার)
Dead line 11th April 2005
Horror Strikes at Savar

সাউন্ড    
সমবেত নারী পুরুষের আর্তনাদ এবং দ্বিতীয় বিশাল ভূমি কাঁপানো বিষ্ফোরণের শব্দ।

অডিও    
(ভয়েজ ওভার)
A nine storied garments factory collapased at savar in the early hours of yesterday. Leaving at least 23 people dead and 350 other trapped under the rubble.

(পেছনের নয়তলা বিল্ডিং-এর মিথ্যা পর্দা হঠাৎ উপর থেকে অর্ধেক খসে পড়ে)

(ভিডিও স্ক্রিনে আউট অফ ফোকাস কিছু ইমেজ থেকে কালার বার চলে আসে। সেই সাথে যান্ত্রিক কোনো শব্দের একটানা ভো-ভো। মঞ্চ ধুয়ায় ছেয়ে যায়। ধুয়ার ভেতর থেকে প্রায় ক্রলিং করে এক নারীকর্মী কোনোরকমে বসে। হাতের সঞ্চালনে সে বোঝায় তার চারধারে দেয়াল)

নারী
কায় দেয় তুমি ছাড়া
নিশ্চিত ছায়া
তোমার ক্ষমতার ভুঁই
বিস্ময় ভরা
জালেম মুঁই না হও
ওগো নিদানেরও কায়া

হায় হায় হায়
বাঁচিবারে যে চাই
কায় আছেন, কুণ্ঠে আছেন
পানি দেন বাহে- পানি এট্টুখান

উপরের ছাদ নামি আসে ধীরে
এই বুঝি কোরান কিতাবের সত্য বয়ান
যেমন হাসরের সূর্য আকাশ থাকি
ছুটি আসে- গোলার লাহান
শত্রু জমিনের মাত্রই বিঘাতখানিক ফাঁক রাখি
জ্বলজ্বলে আগুন জ্বলে দারুণ রোখে।

দয়া কি হয় না
মায়া কি হয় না
এতসব দোয়া ভরসা
সবই মরিচিকা আশা?

আরো ধীর হ- আরো ধীর
তারে আসিবার
তারে জানিবার সুযোগ দে না কেন।
এই ভূমিকম্পে সে কই?
কোনখানে সে- কোন আশ্রয়
এই কি ভূমিকম্প না
সুনামি নাকি কয়।
একবার তারে দেখিবারে চাই
তার সাথে কত কথা কওয়া হয় নাই
কাল কবো- বাসর রাতোত গলা ধরি কবো।

খোদা তুমি একবার শুধু
দুই ছাদের মাঝখানে নামিয়া আসি
হুঙ্কার কর না কেনে-
“এই সইরে যাও ছাদ দূরে
অর কাইল বিহা সন্ধ্যার পরে।”

(নারী শোনার চেষ্টা করে ঈশ্বরের কথা)

কই তিনি-
নাই- কোনো গায়েবী আওয়াজ তো নাই।
কি কুক্ষণে আজ রাইত সিফট নিলোম
কি এমন হইল হেয় ছুটির দরখাস্তখান
না দিতাম- যদি না আসতাম-
মাত্র কয়েকদিনের বেতনের
আর কয়েকদিনের ছুটির কারণ

এখন ঐ ছাদ যদি আরো নামি আসে।
পিশি দেয় যদি জীবনের তরে-

(নারী হঠাৎ স্বাভাবিক হয়ে কথক হয়- উঠে দাঁড়ায়)

কথক
এই ধ্বংসস্তুপের মাঝখানে তার মৃত্যুর আহবানে
সে এক জীবন চক্র পার করে দ্রুত স্মৃতির ধুলা ঝেড়ে
সব যেন পরখ করে নিতে চায় দুই ছাদের ব্যবধান শেষ হবার আগেই।
“এই আছি
এই নাই-” শুধু মারফতি কথা নয়- এযে
বাস্তব দেখা যায় নরক নেমে আসে-
হাসরের দগদগে সূর্য এক বিঘত উপরে যে-

তার চঞ্চল চিত্ত-
সময়ের গতিরও দ্রুত
দৌড়ায় বোর‌্যাক চড়ে।

(কথক থেকে সে আবার নারীতে রূপান্তরিত হয়)

নারী    
সেই কবে মোর জন্ম হছিল এক বৈশাখে
গাইবান্ধায় এক আছে পলাশবাড়ি
তার অন্তর ছিড়ি
পা জোড়া থামে সেইখেনে
পাড়াগাঁয়ের ঠিক যেইখেনে।

বাপের ছিল গরুর গাড়ি একখেন
আর ধান কাটার মৌসুম হলিই
অনেক দূর ধু ধু পার হয়া খিয়ারোত-
দিন যায় মাস যায় ভিটার কোনে ফরিং-এর সাথে
নচেত সকলে মিলি থানকুনি আহরণে-
আর তাকি থাকো অপেক্ষায়
উই ধু ধুর পরের ধু ধুর পানে।

একদিন ফিরি আসে বাবা
গাড়ি খান ভরি সোনালী ধান
যেন ফিলিমের গাড়িয়াল ভাই।

দুই মাস তিন মাস-
বড় আদরে প্যাট পুরি ভাত খাও
আর রাত ভর আবদার স্বপ্নে নিদ যাও-
আর নয় মাস শুধু মংগা আকাল
মাটি খুড়ি কচুঘেচু আধপ্যাট খাও-
দিনে দিনে বয়স বাড়াও।
মেয়েদের বয়স-
যেমন লাউয়ের বিচিখান পুতি দাও
দুই দিন বাদে দুই পাতা উদ্ভিদ
মাস গেলি পড়ে লাউয়ের ডগা
বেড়া বায়া চালে উঠি ফুল পাও

বয়স বাড়ে আমারো।

রজখলা বিয়ের বয়স হয়
বুকের ভেতর ছোট পাখিটার কলিজায়
কায় যেন সুর তোলে-

গাও এলানি দিয়া নাচে গোলাবী
গোলাবী মোর দুধের স্বর
কেমনে যাইবে পরের ঘর-
গাও.... গোলাবী।

নমঃ নমঃ প্রজাপতি নমঃ
উড়ি উড়ি এবাড়ি ও বাড়ি
ফুল মধু দরদাম করি
জোড়া মিলি দেয় যেন সংসার গড়ি।

দশগ্রাম পার হয়া এক রাজপুত্তুর আসে
খিওরের বড়ো এক জোতদার বেটা।
সগলই অবাক হয়
কোন চান কপাল হামারে খোদা দেয়-
ভুই মানে ভিটে খান
চাল নাই চুলা নাই
গরু দুইখেন রোগা
তায় ভাংগী পড়ে চাকা দুইখেন-
এই না হয় মোর বাপ।

সেই তারাভানের কপালে রাজটিকা
কেউ এত কাল দেখে নাই যেনো।
তবে এই তারাভানের রূপ ছিল-
সেই রূপভানের কিচ্ছা
গ্রাম থেকে গঞ্জে ছড়ানো।

সবল গরুর গদী গাড়িতে স্বামী সাথে
সাওয়ার মুই ভিন গাওত ভিন বাড়িত,
ঘোমটার আড়ালে বারবার দেখো-
নতুন মানুষ
কি যে রূপ তার
কি যে দরদী ধানের ক্ষেতের লাহান
চোখ তার-
তবে কেমন যেনো উদাসী
আন্ধার দুই মনিজুইড়ি।

রাতের শেয়ালের কোলাহল দূরে
আর আকাশে ঘুড়ির মতো চাঁদ ওড়ে
আমার বুকের ভেতরের ছোট পাখী
খিওর চিড়ি যত যাই ততই
কেমন তির তির করে-।

একবাকে গাড়িয়াল থামে রাত দুই পহরে-
শশুর আসিয়া কেমন চোর চোর ভাব করে-
কয়-
“বৌমাগো- এই দুই খান বড়ি
তোমার স্বামীরে খিলি দাও
নিদ যাবে রাত ভরি-
সুবেহ সাদেকে পৌছে যামো বাড়ি।”

বড়ি হাতে একবার শুধু ভাবি
ভিতরের পাখির কলিজা কেমন দুক্ দুক্ দুক্ দুক্
কি অসুখ তার-
মুখ দেখি বুঝিবার না পারি-

কেমন অবুঝের মত অসুধ খায়া
নিদ যায় রাতভর আর আমি
চাকার তালে তালে ঢুলি ঢুলি
শশুর বাড়ি যাই- কর কর, কর কর-
পর পর তিনরাত সে শুধু নিদ যায়
আর দিনভর কেমন
জাপটে সাপটে থাকে-
কেমন পুরুষ বুঝিবার না পারি ।
পুরুষ মানে তো বাপ ভাই চাচা
সগলে হামরা এক কাথায় জড়াজড়ি-
তারপরও বিহা হোবে যখন শুনি
তখন থাকিতো নতুন এক চিন্তাকরি-
শরীর বায়া আপনা থাকি
তর তর করি নামে ভিন্ন পুরুষ
যার হাতে থাকে জানি কামনার দড়ি

চোখ লজ্জা, মুখ লজ্জার মাথা খায়া
শাশুরীরে ধরি- “মা মাগো-
আপনার ছাওয়াল এমন কেনে করে-”
আমাদের দুইজনের মাঝে তখন
শুধু দুই বুকের আওয়াজ- আর টু শব্দ নাই।
আমি চিৎকার করি-
“মা-মাগো- রাও না কেন করেন”
শাশুরী চোখ ভরা পানি আর
দুঃখ ভরা মাথা তোলে-

“বৌ-মাগো- মোর ছাওয়াল পাগল-
একেবারে নোয়ায়- সময় সময়
বছরে দুই চারবার- সগলে কয়-
বিহা দিলি ব্যাটা ঠিক বুঝি হয়-
বৌ-মাগো হাত দুইখান ধরি
মাফ করি দেন যেন মোরে-
এই আবদার শুধু করি
সব ঠিক হয়া যাবে নিশ্চই ক’দিন পরে।”
আসমান ভাংগী পরে বুকের পাখিটার কলিজায়-

বনোত ফুটিছে কাল কাশিয়া
বনোত ফুটিছে হোগেলা
বাপে মায়ে বেচে খাইল
মোর সোয়ামী পাগেলা

(হঠাৎ আবার অডিওতে আওয়াজ হয় বিকট- পেছনের পর্দাটা কিছুটা নেমে আসে- নারী আবার অনেক কষ্টে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করে। তখন অডিওতে ভাঙচুরের শব্দ হয়- একই সাথে বিভিন্ন নিউজ শোনা যায় এবং ভিডিওতে দেখা যায়- ধ্বংসস্তুপ এবং উদ্ধার অভিযান)

অডিও

At first I thought it was an earthquake ... The building was not properly designed and constructed. The owner of the building did not even take Rajuk's approval before its construction ...

(দূর থেকে ভেসে আসে এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের ভ্যাপো- নানান সাইরেন। ধীরে শব্দ মিলিয়ে যায়- নারী কোনোরকম নিজেকে সামলে আবার দাঁড়ায়)

নারী    
সত্যিই হঠাৎ স্বামী আমার কেমন ঠিক হয়া যায়।
দিনভর হাসে খায়- রাতভর আদরে সোহাগে মাতায়।
যেমন যেমন সুখ-ভোগ গল্প সখিরা কয়
নানী দাদী বুজিরা ইশরায় ইংগিতে হাসায়
পশুপাখি জড়াজড়ি করি বুকে পিঠে
ছোটকাল থাকি আগ্রহ ভয়ে
আড়চোখে দেখা
শিহরণ শরীরের গিটে গিটে।
এর নাম সুখ হয়-
সুখ হামার কেমনে বল সয়।
মাস না যেতেই সে উম্মাদ হয়
চিৎকার প্রলাপে মাতনে দুনিয়া মাতায়-
বান্দি রাখো, ঘর তালা দাও তবু
তার মুখের লাগাম বাধা দায়-
শরীর যেনো মত্ত ষাঁঢ়
কায় বাঁধে কারে- যার বিকার চিত্ত-
কল্পনা ঘোড়ায় হয়েছে সাওয়ার।

এক সকালে মায়া হয় বড়
ছাড়ি দেই বাঁধন- আর অমনি
চিৎকারে পাড়া মাতায়
“তালাক, তালাক, তালাক
তারাভান তোরে দিলোম তালাক”
নামি আসে ঘোর আন্ধার যবনী

পাগলের প্রলাপ কায় ধরে কত্ত ?
ধরে- পুরোহিত মাওলানা ফতোয়া করে-
কে কয়- সে উন্মাদ, পাগল, মাতাল
ধর্মের কথার হয় না নড়চড় মুখ থেকে
কোনোকালে ভুলে যদি একবার ফসকেও পড়ে।
মোর তালাক হয়া যায়।
ফিরি আসি বাপোর পোড়া ঘরে-
সেই ছন ছাওয়া দুই ঘর
নিত্যদিন আসা এক ঠ্যাং শালিক
ঠুলি মুখে গরু জোড়া
জাবর কাটে আর নাইয়র
দেখি সুশ্রী চোখে জমানো নালিশ
বুকের ভেতর দুখি পাখি
আবার ধরে শিষ-
ওগে মোর মাগে
এগিনা দুঃখের কথা
কহিম কাহার আগে।

বনোত ফুটিছে কাল কাশিয়া
বনোত ফুটিছে হোগেলা
বাপে মায়ে বেচে খাইল
মোর সোয়ামী পাগেলা।।

ও মোর মাগে
সোনার চান্দোক একবার
আসিয়া দেখিয়া যাওরে।।

(অডিওতে বাইরে আবার শব্দ হয়। কোলাহল হয়। দমকল, সাইরেন শোনা যায়। স্ক্রীনে কিছু নিউজ কাটিং দেখা যায়)

অডিও     
(ভয়েস ওভার)
১.    একটি ছাদের উপর আরেকটি পড়ে আছে। ধ্বসে পড়া পোশাকশিল্প কারখানা ভবনটির একেকটি তলার মেঝে আর ছাদের মধ্যে ব্যবধান দাঁড়িয়েছে এক ফুট। ... বিদ্ধস্ত নয়তলা ভবনটির কংক্রিটের মৃত্যু ফাঁদে এখনো আটকা পড়ে আছেন অসহায় শ্রমিকরা।
২.    The line between life and death can become extremely thin.
৩.    মেঝে আর ছাদের চাপে মানুষের পাশাপাশি চাপা পড়েছে কারখানার মেশিন, আসবাবপত্র, তৈরি পোশাক, ভবনের বড় বড় পিলারসহ আরো অনেক কিছু।
৪.    On sunday night in savar, the first ten minutes after the nine storied building caved in and became a huge heap of rubble were the most crucial
৫.    এ দৃশ্য দেখে অনুমান করা যায় এই নরকে আটকে থাকা হতভাগ্য মানুষগুলো কী রকম পরিস্থিতিতে রয়েছেন।
৬.   Perhaps the one who died immediately were the luckier ones. At least it was better than being battered and bleeding and waiting for a death that would inevitably follow.

(অডিও থামে- সাইরেন থামে। নারী আবার ক্ষীণ আশাবাদী হয়)

নারী    
এবার যদি বাচি যাই
তবে রে জীবন
গড়ায়ে নেব একেবারে নতুন।
ধুর- খেই হারায় স্মৃতি সিনামায়-
তালাক হই, ঘরে ফিরি, মুখ নামাই লজ্জায়।
এমনই সময় বোঝা যায়-
কায় যে স্বজন- দুর্জন কায়-
কায় মুখটিপি হাসে
কায় আসি হাতখান ধরি পাশে বসে।

ওমা কী কাণ্ড স্বামী হামার
হঠাৎ আসি হাজির- মিষ্টির হাড়ি
তার হাত থাকি আসে হাতে বাবার।
সে কান ধরে উঠ বস করে
হাসে বলে- “পাগলের বড়ি
না খালি আমি উন্মাদ রেগুলার।
এই দেখ সুস্থ হামি
হাত ধরে বুুকি নেও তুমি।”
আমি বলি- “ হায় হায় যাও বাড়ি
তালাক না হয়া গেল সোহাগেরও দড়ি।
মোন্দ কবে লোকে
হুজুরের সব ঘুর ঘুর সরিয়ত শোকে।”
বলি বটে- মায়া হয়, ঐ দিকে সন্ধ্যা ধায়।

রাত নামে- রাতের বাতাসে
পোকা মাকড়ের উল্লাসে
কেমন শরীরের ভেতর এক ঝটকায়
ছোট পাখির কলিজায় বউ কথা কয়-
বউ কথা কও- বউ কথা কও।
সকালে আরেক রূপ নেয়- “কথা কও-
তালাক হবার পরে-
কায় থাকে এক ঘরে-
সমাজে বাস করি হামরা
গ্রামবাসী কি বলো তোমরা?”
বাড়ি ঘিরি আছে এ গায়ের সব মুছুল্লিরা-
নানান বাক বিতণ্ডা হয়-
কাল হবে বিচার ঈদগাহ মাঠে-
আলেমরা, ফাজেলরা দুই দলে ভাগ হয়।
একশো ঘাত দোররা মারো-
নয় বুকডুবু মাটি ফুরি পাথর ছোড়ো
সেই দুই ভাগ ঝগড়া করে দুই দিন-
এই ফাঁকে পাগল হামার কানে কানে
কয়, “চল রাতের আন্ধারে ছুটি
গ্রাম নদী পার হয়া
বাস ধরি ঢাকার রুটি”
“কি কয় পাগল”
“পাগল নারে পাগলী
বড়ি দুই খান খায়া নিছি গিলী।”

দেই ছুট
ছোটো, ছোটো, ছোটো
ঢাকা তার নাম- হাজার মানুষ শুধু
মানুষ আর দালানের জঞ্জাল
দোররা আর পাথরের হাত থাকি বাঁচি গেলোম
অথচ সরিয়তে প্রায় ঠিক ছিল পরকাল।

সরিয়ত এমনি জিনিস
এমনি তার ধার
মুরগী জবাই থেকে মানুষ কোতল
একই মন্ত্র তার
আল্লাহু আকবর।

ঢাকা থাকি শশুর বাড়ি লোক পাঠায়
যদি পাগল ছেলে তার বাপের বাড়ি
থাকি কোনো আশ্বাস টুকু পায়-
দিন যায় কোনো উত্তর আসে না-
আত্মীয় স্বজন আছে দুই একজন
এগলি সেগলি ঘুরি যাও খুজি পাও-
একবেলা খানা- আর চা নাস্তা
বড়জোর দু’দশ টাকা তার বাদে বিদায় হও।
বোরকার গিলাপ খুলি দুই একটা সিনেমা
শিশুপার্ক, চিরিয়াখানা, গুলিস্তান,
ওভারব্রীজ, ফ্লাইওভার তার হাত ধরি ধরি
হা হা হি হি ঘুরি, মুক্তির সাধে বেশ উড়ি।

কথায় কয় পাগলের সুখ মনে মনে
একসময় পকেটের পয়সায় টান পড়ে
বস্তির বাসা ভাড়া করি থাকা দায় হয়-
তার মাথা খান আবার বিগরায়-

বস্তির মানুষ তারে ধরি পুকুরে চুবায়-
নানান পানি পড়া তুক তাক খাওয়ায়
আমি বলি-“দুইখান বড়ি দাও আনি
কি যেন নাম তার- মনে পড়ে না-”
বড়ি আসে না- সে পাগল হতি হতি
এক সময় কেমন আধমরা হয়-
“বাড়ি যাবো, বাড়ি যাবো” বলি আছড়ায়-
আমারও খুব ফিরি যাবার সাধ হয়-
সগলেই কয় বাড়ি গেলি যদি সব
ঠিক হয়- যাও না কেনে- ঘুড়ি আস না একবার
জন্ম ভিটার ঠায়।
একবার! ভাবি একবার যদি যাই?
সাথে সাথে ঐ সব মুখ
হাজার থাকি লক্ষ মানুষ হয়-
কারো হাতে দোররা কারো পাথর দেখিবারে পাই-
হঠাৎ অডিওতে কারো গোংগানোর শব্দ হয়।

অডিও
পানি- পানি-, কে আছো, এট্টু পানি

নারী    
কে- কে- ওইখানে

অডিও    
বজলু নাম আমার- মেশিনের তলে
পড়ে আছি- কে আছো- উদ্ধার করা
লাগবে না- শুধু এক গ্লাস পানি যদি
পাই- এক ঢোকে খাই তার পর সেই
সুখে মরে যাই- আপসোস নাই-

নারী    
বজলু ভাই- পানি তো নাই
নড়ার উপায়ও নাই

অডিও    
পানি- পানি- পানি-

(আস্তে আস্তে অডিও অস্পষ্ট হয়। এক  সময় মিলিয়ে যায়। টানা ভো ভো শব্দ হয়)

নারী    
মিলায়ে যায় কেমন বজলু ভাই
পানি পানি করি মিলায়
সাংগ করি জীবনের পালা
আমারও কেমন তিয়াস পায় মেলা।
কায় দিবে পানি-
টাগরা ভিজামো একটু খান
যাক পানি না খামো মুই,
ভুলাই নিজেরে-
কত পানি খাওয়া যাবে-
একবার এই গর্ত থাকি বার হলি পরে-
একদৌড়ে পৌছে যামো ঘরে।

ঘর- সেই ঘর- সেই ছোট ঘর ছাড়ি
স্বামী, সত্যি একদিন নিরুদ্দেশ হয়।
পাগলেরে খুঁজি পাগলিনী বেশে
কত রাস্তায় ঘাটে, বস্তির আশেপাশে
ঐ যে বলিছি- পাগলের সুখ মনে মনে
সে কোথায় ধায়, কোথায় লুকায় সংগোপনে-
দিন যায়, মাস শেষ করি বছর হয়
ঘর ভাড়া নাই
খাবার নাই- কিছুই নাই
নাই সোনাদানা-
সিকি আধুলী খানা।

পাশের ঘরের এক বুজান
অংপুরোর নীলফামারীত বাড়ি
ইশারায় ডাকি কয়-
“এট্টি আয় ছেড়ি
কার অপেক্ষায় শোকে গড়াগড়ি
আয় হাত ধর
মোর সাথে কাম কর”
“কাম করিম? কুন্ঠে, কোন কাম?”
আবার ইশারায় কয়-
“পলাশবাড়ির বস্তি থাকি দেখা যায়- দেখেন
এট্টুখানি দূরে ঐ নতুন নয়তলা দালান”
পলাশবাড়ি- মোর বাড়ি
তায়ওকি ঢাকা আছে
ঘুরি ঘুরি ঢাকা আসে?
বাকবাকুম করি ওঠে
বুকের পাখিটার ওম
কাটি যায় ধুক ধুক- মুই বাঁচোম
বাঁচোম মুই দুই পায়ে খারায়া-
এক কথায় রাজি হয়া যাই
উপায় যে নাই-
ততদিনে অনেক নাগর রাতের আন্ধারে
বেড়ার ঘরের ফাঁকে ফাঁকে শুধু ইশারা করে।
“রাজি- রাজি আছি মুই-
তবে কাজ যে জানি না-
কোনো দিনো করি নাই-”
“কাজ আমি তোরে শেখায়ে নিব
থাকবি আমার ঘরে
খাবি দাবি মাস শেষে
দুইজন সমান হিসেবে খরচা দিব।”

হাত চলে না পা চলে না
শুধু মাথার ভেতর গরু গাড়ি
গড়ায় ক্যারত ক্যারত শব্দ করি,
কোন সুদূর থাকি দৌড়ে আসে
খিওরের সেই রাত
রাঙা বৌ আমি, আকাশের চাঁদ পাশে পাশে।

তারপর ধীরে- ধীরে- ধীরে-
মেশিন চিনি- এ যে আরেক গরুর গাড়ি!
কেমন তর তর করি কাপড়ের বুকে
ফুটায় সুতার নাচন
এক সাথে শত শত গাড়ি
কেমন রাস্তা, ক্ষেত, জোত পার হয়
কখনো সূর্য মাথায় কখনো চাঁদ বুড়ি।

রাত দিন গার্মেন্সে কাজ করি
আমি এখন মেশিন অপারেটর।
তার চেয়েও ভালো কথা এর নাম চাকুরী।
আর মাস শেষে ট্যাকোত কচকচা নোট ভরি।

জীবনের প্রথম কামাই হাতোত
ঢ্যাং ঢ্যাং লাফ মারি ঘরে ফিরি।
নতুন টাকার গন্ধে
কেমন পড়ি যাই ধন্ধে-
গাড়িয়াল বাপ, মা, ভাই, বোন
কেমন চোখের সামনে টেলিভিশন
খবরের মংগা আকালের মুখ যেন।
অংপুরীয়া বুজান আমারে শেখায়-
“মনি অর্ডার করি দাও
ঠিকানা মতো টাকা চলি যাবে বাড়ি”
টাকাও দেখো কেমন আরেক গাড়ি।

বুক হালকা হয়।
অনেক কাল বাদে আয়নায় মুখ রাখি
হায় হায় এ কোন তারাভান-!
ডাবি গেছে চোখ
মুখ ভরা কালো ছোপ ছোপ।
একই আয়নায় বুজানো মুখ রাখে একদিন
মুচকি হাসি কয়-
“কি গো- নিজেরে দেখি চিনিবারে না পাও?
ঘাবরাও না- হাত পা ছাড়ি আমার সাথোত আও”
তার হাত ধরি জীবনে প্রথম ঢাকার বড় মার্কেটে ঘুরি-
ঘুরি ঘুরি কিনি স্নো পাউডার
লিপস্টিক আর ঘড়ি-
ঘুরতি ঘুরতি অচিন ঢাকাটা কেমন নিজেরি হয়।
হঠাৎ বোরকা ছাড়ি সাজুগুজু করি
স্নো পাউডারের দুই ঘসাতেই    
আবার আসমান থাকি নামি আসে পরী।
বুজান কয় “রূপভান, তারাভান এত রূপ
তুই কার লাগি থুলি
মুখখান খালি ঢাকি রাখো দুঃখের ঠুলি?”

লাইন সুপারভাইজার ওসমান
অবাক তাকায়- হোচট খায়
আমারে দেখি আবোল তাবোল তোতলায়-
সবাই জানে গার্মেন্সে এসব খুব হয়-
কেউতো ভাবি বসে দুই টাকার লজেন্সেই
নাকি এইখানের মেয়েরা সবকিছু বিলায়।
ওসমান অমন নয়-
প্রথম প্রথম বোরকা ফাঁকে দেখিছি তারে
সে যেনো কেমন আলগা মায়া করে।
প্রথম থাকিই আড়ালে আবডালে
কুশলাদি করে- “ভালো তো”
আমি শুধু ছোট জবাব দিতাম- “ভালো”
“ভালো হলেই ভালো” এই শুধু কথা
টিভির বিজ্ঞাপনের মত বার বার দেখো
একই কথা কয়-
অথচ তাতেই কেমন লোক ভোলায়।

আমিও কি ভুলি? ভেতরের ছোট পাখি
একটু কি কিচির মিচির করি ওঠে না ডাকি।
এই প্রথম সে আরেক কথা কয়-
“তুমি যে বড় সুন্দর-
চাঁন দেখে যেমন চলে যায় আন্ধার”
আর আমার বুক চিড়ি পাখি
উড়াল দিয়া ক্ষেত কোলা পার
হয়া গরু গাড়িটার ছইয়ে বসে-
“মা- মাগো, দেখ আমি তারাভান
আবার কেমন হয়া গেছি রূপবান”
পাখিটা মোর গায়ের ঘরে
উঠানে, ভিটায়, জারুল গাছে চড়ে
চি চি- করি গ্রাম থাকি গঞ্জে মাতায়।

(অডিওতে পাখির শব্দ, কাকের শব্দ, দূরের সাইরেন শোন যায়। উদ্ধারকারীদের চিৎকার চেঁচামেচি- জীবিতদের আশ্বস্ত করা- নিজ উদ্যোগে বের হওয়ার আহবান- প্রণোদনা- ভিডিওতে উদ্ধারের ছবি)


অডিও    
(ভয়েস ওভার)
১.    সাভারের পলাশবাড়িতে রোববার রাতে স্পেকট্রাম সোয়াটার ইন্ড্রাষ্ট্রিজ লিমিটেডের নয়তলা ভবনে কর্মরত তিনশতাধিক কর্মীসহ ধ্বসে পড়ার ঘটনাটি একাধারে মর্মান্তিক ও নজিরবিহীন।
২.    At first I could not get what happend. All I could see was the ceiling comming down as people around me were going down, I opend my eyes but could not see anything as the room had plunged inside the wreckage all the more worsehed the situation ...

(অডিওতে কাকের শব্দ, পাখির শব্দ আবার শোনা যায়)

নারী    
সকাল কি হয়া যায়
এখনো কেউ যে মোরে
উদ্ধার করিবারে আসে নাই-
আসিবে- ওসমান আসিবে-
দুইখান হাত বাড়ায়ে কবে-
“ডরাও কেন- এই যে আমি
হাত দুইখান ধর জোড় করি।”
যেমন হঠাৎ এক রাতে ডিউটি
শেষে কেমন ভয়ে ভয়ে ঘরে ফিরি
আচনক চায়া দেখি পাশে পাশে
হাটে ওসমান মুচকি হাসে
“ডরাও কেন এই দেখ আমি
পা দুইখান চালাও সবল করি
তোমার ডেড়ায় পৌছে তবে না যাব বাড়ি।”

কেমন নির্ভর হয়
কেমন নির্ভয় হয়
এমন নির্ভর হয় মন চায়
তার শক্ত বাজু খামচে ধরি।
এতদিনে ‘থ্যাংকু’ বলা গেছি শিখি
মোর ইংরাজী শুনি সে কি তার অট্টহাসি।
রাতের বাড়ি ফেরা আর ভয়ের নয়
সে আছে কাছে
সে কেমন নিশিদিন আশে পাশে
মানুষ থাকি পাল্টি পরিণত হয় অভ্যাসে।

তবে তার এই আনাগোনা
আর হামার ভেতর কলমি ফোটার দানা
কেমন করি বস্তি জুড়ি
পচাঁ মাছিদের ভ্যান ভ্যান ভ্যা হয়-
এক কান থাকি আরেক কান ফুড়ি-
মস্ত গল্প হয়
আর সব গল্পে বেটি ছাওয়াল
আর কিছু না শুধুই ছেনাল।
সব চায়া ফুসি ওঠে সাপ
অংপুরিয়া সেই বুজান আমার-
যার ঠায় বড় মানুষের হাটাটা শিখি
জীবন পাল্টি অতীতরে করিছি মাপ-
সেই বুজান ফুঁসি ওঠে-
“ওই মাগী- মাগ জোগাড় করি
বেসরম ঘোরাঘুরি পাড়া জুড়ি-
একঘরে ঠাই দিছি
এক পাতে পান্তা খাছি
যার স্বামীর খোঁজ নাই
বাঁচি আছে না মরি গেছে
খোদাই মালুম
তায় কেমন রঙে মজিছে”
কেমন ভয়ে কাপন ওঠে-
তালাক তালাক আর
শরিয়তের মাসলা মসায়েল
সাথে মশাল হাতে
লক্ষ মানুষ এই  বুঝি ছোটে-
এতকিছুর বাদেও মনের ভেতর
ছোট পাখি মুচকি হাসি ওঠে-
হিংসা- হিংসা নামে এক শব্দ আছে
বুজান আমার জ্বলি মরে সেই বিষে।
তবে হামিও তেমন
বাপের বেটি নয়াও
এই শহরের খাজে ভাজে
ঘুরি ঘুরি
চিনি গেছি মেশিন
থাকি শুরু করি
বয়লারের ধোয়াও

ঠাস করি বস্তিতে
নিজের ঘর করি।

একদিন দিনের আলোতে
তার ডান হাত খান খপ করি ধরি
চোখমুন্দি যেন স্বপ্নে বিভোর জীবন গড়ি।

তারপর থাকি তার হাত হাতের মুঠোয়
এই পথ সেই পথ করি-
কত যে বড় এই ঢাকা আর সাভার
কত যে বাড়ি, গাড়ি, লোক বেশুমার।
ট্রেন যায় ঝম ঝম ঝম তো ফের
সিগনাল উঠি গেলি মানুষ, গাড়ি।
একি! একদিন এই শহরে এক রাস্তায়
হঠাৎ দেখি এক গাড়িয়াল ভাই
আর তার গাড়ি।
মোর ভারী মজা হয়
আকাশে প্লেন ওড়ে, নিচে নৌকাও চাও
রিক্সা চাও, বাস চাও, ঠেলা গাড়িও পাও।

সে ধরি ধরি চেনায়, জানায়-
সাভার থাকি কোন বাসে
একবারে গাবতলি যাওয়া যায়
গাবতলি থাকি কায়, কোন পথে যাও
উত্তরবঙ্গের গাড়ি- হামার বাড়ি।
হামার বাড়ি, সেই ছোটো গাও
গাছ- গাছালির ছাও--
“মা- মাগো- বাড়ি যাইম কবে”
“কান্দো কেন- তারাভান
চোখে পানি নাই তবু বুঝি
ভেতরে কিসের গোমর- কালো ছায়া মুখখান”
নিজেরে কোনো মতে সামলাই
কালো ছায়া ছাড়ি যেই আলো পাই
ভেতরের পাখি কেমন দম আটকি মরে।
সব কথা ক্যামন করি-
কতক্ষণে কোব তারে-
সেতো শুধু এই তারাভানেরে চেনে
যে মুখনিচু করি কাপড়ে সুতা বোনে।

বুননে বুননে তার যে কত খোয়াব-
কখনো পাখি হয়, গাছ হয়-
ঘর হয়, মাছ হয়, চাঁদ হয়-
পিরিতি হয়, হয় পতি
বৌ-জামাই হয়, হয় মাও বাপ।
এ যে সব সত্য
গল্প শুধুই নয়, নয় খোয়াব।
ওসমান এই মুখখান দেখি
গোমরের এত কথা বুঝিবেকি?
কতক্ষণে সব কব তারে
যারে দেখি স্বপ্ন আবার
খিওরের সেই চাঁদের মত ওড়ে।

যখনই ভাবি কব
বড় তাল গাছ ভাঙ্গি বুকে পড়ে
পাথর আসি মাথার ভেতর জায়গা করে-
আটোআটো জিব খিরকিতে আটকি মরে।

ওমা কি আশ্চর্য! আচানক
সে নিজিই শিশুপার্কের নাগর দোলায়
কেমন আদরে জাপটি ধরি শুধায়-
“তারাভান, কি কথা বল না আমারে
মনের ঘরে ঘুরপাক খায়
জিব, ঠোট ছুয়ে আটকে যায়?”
নাগরদোলা ধীরে ধীরে ওপরে ওঠে
আমার বুকের পাখি কেমন
চিলের মত ওড়ে আর চিচি করে ঠোঁটে।
দম বন্ধ হয়া মরি যামু মুই
নাগর দোলায় চরি কি জানিবারে চান তুই।
মনে কয় এক লাফে নামি যাই
শুন্য থাকি পাতালে পড়ি
দম খুলি যামো মরি।
এতো তেমন নাগরদোলা নয়-
অনেক ওপরে- আরো ওপরে ওঠে-    
একদম শিখরে
চাইলেই আকাশ ছোঁয়া যায়
পরী হয়া ভাসি ভাসি পাখি শুন্যে মিলায়।

যা থাকে কপালে সব কথা
এক নিশ্বাসে কোব
কথা শেষে তার হাত দুইখেন ছোব-
সে যদি ছাড়ি নেয় হাত?
কি আর করা-
তারাভান- দুঃখ্যু লেখা যে তার কপাল জোরা।
“এত ভাবো কেন-
পিছনের দিকে বার বার
ফিরে কি দেখ
সব মানুষেরি থাকে
কঠিন যত কারবার-
তুমি কি ভাবো- জানি না কিছুই আমি?
সব জানি- বাবার গরু গাড়ি দৌড়ায়,
আর ছিল ভাই বোন মা, পাগল স্বামী,
ঘর করি যদি তুমি আমি
আর আছে এক মা- তিনজন মোট
এ সব তুচ্ছ জ্ঞান করি গার্মেন্টেসের ঝুট”

দম বন্ধ হয় না জ্ঞান হারায়।
চোখ ফাটি পানি বিদ্যুৎ চমকায়
চারিপাশ ভুলি জাপটে তারে ধরি
এর নাম হয় ভালোবাসা?
এক জীবনে আর কিছুই কি চাই
এই মুহূর্তে যদি দম আটকেও মরি।

ও মোর মাগে
সোনার চান্দোক একবার
আসিয়া দেখিয়া যাওরে

হুঁশ হয়া দেখি দুইজন
নাগরদোলা থামি আছে অনেকক্ষণ
সব দোলনায় কেমন আতংকো ছড়ায়
এতোক্ষণ ধরিতো চক্কর বন্ধ থাকার কথা নয়
“যান্ত্রিক গোলোযোগ
ঘাবড়ানোর কিছু নাই, মিস্ত্রির সাথে
ইতিমধ্যে হইয়া গেছে যোগাযোগ।”

মোর খুব ভালো ঠেকে-
থাকুক না চাকা এট্টু বন্ধ হয়া আসমানে।
মাটি ছুবার না চাও
নিচে নামি গেলে যদি নতুন স্বপ্ন
ভাঙ্গি পড়ে বাস্তব দরশনে-
সব অস্থির হয়- শুধু হামরা
একেবারে উপরে জাপটি ধরা দুইজন ছাড়া।
নামে তাও- সুর সুর করি নামে।
নাভি সোজা কেমন শির শির করি ঠাণ্ডা নামে।

আমারে কে পায়-
আমি যেনো বাল্যে ফিরি যাই
তিরিং বিরিং লাফাই
ও সব হাসি মুখে দেখে-দাড়ি থেকে ঠায়।

সেদিনই কথা পাকা হয়
একমাসের মধ্যি বে
বছর না যাতি যাতি ছাওয়াল নয় মেইয়ে
“আমি তখন দিন রাত খেটে খুটে
অন্ন বস্ত্র ভালো থাকা, ভালো জামা
যে করেই হোক
সুখ আর স্বচ্ছলতার হাসি এনে দেব তোমার ঠোঁটে।
তুমি তখন বাড়ি বসে বসে
দুই বছর বাচ্চা পালন শেষে
আবার পা বাড়াও কর্মদেশে।
আমি তখন মার সাথে থেকে
কাজ কাম ফেলে
কাটাবো সময় বাচ্চার সাথে খেলে।”
বাচ্চা! আমার হোবে বাচ্চা!

(পেছনের পর্দা হঠাৎ আরো একটু নেমে পড়ে সেই সাথে শব্দ। নারী আতঙ্কিত হয়। মঞ্চে আরো ধুয়া হয়। দূরের সাইরেন শোনা যায়। পাশাপাশি গোঙ্গানো নারীর কন্ঠ। তার নাম আলেয়া)

অডিও    
কেউ আমার কথা শুনতে কি  পাও-
যদি পাও দয়া  করে বাচ্চার বাবারে পাঠাও

নারী    
কে- কাঁন্দে কায়-

অডিও    
আলেয়া নাম আমার-
বাঁচার কোনো আশা নাই।
বুকের ওপর কংক্রিট
মাথা থেতলে দিছে ইট

নারী    
আমি তারাভান আলেয়া
আমারও যে নড়ার উপায়
টুকু গেছে শেষ হয়া-

অডিও    
তারাভান তুমি তো একলা
দুঃখ আমার- আমার পেটে
আরেক মানুষ সাতমাসের মোটে
তার দুরুদুরু বুকেও যে মৃত্যু দেয় দেখা-

নারী    
অভাগী- পোয়াতী তুই বু

অডিও    
তারাভান- আর বুঝি নাই সময়-
আন্ধারেরও আন্ধার নামে কলিজায়-

(কিছুক্ষণ গোঙ্গানোর শব্দ হয়। তারপর থেমে যায়- নৈঃশব্দ)

নারী    
আন্ধারেরও আন্ধার নামে কলিজায়-
আলেয়া যদি মরি যায়
কায় মরিবে আগে পেটের শিশু না আলেয়ায়।
এমন মরণে কে আগে মরে
মা মারা গেলি পেটে শিশু কি মাও মাও করে।
আমিও যদি এট্টু বাদে মরি
পেটোত শিশু নাই- কিন্তু বুকোত
তারে যে কবে থাকি জাপটে ধরি।
পিষে যাই যদি, মিশে যাই যদি
কেমনে চিনিবে সে আমারে-
চিনিবে- না মনে পরে- একমাস ধরি-
দুইজনে একই রংয়ের বস্ত্র পড়ি।
এই নিয়া গার্মেন্টস জুড়ি
কি যে হাসাহাসি টিটকারী
তবে সেই তামাশায় আসকারা ভারি।

(হঠাৎ ভিডিও স্ক্রিন সচল হয়ে ওঠে। ভিডিওতে দেখা যায় মানুষজন উদ্ধার হচ্ছে- ডেড বডি বের হচ্ছে। অপেক্ষমান মানুষের আহাজারী। একই সাথে অডিওতে নিউজ)

অডিও    
১.   ‘My wife had come to the factory only to work that day and to collect her salary for last month. She wanted to resign from the factory because of the pressure to work the night shift.’
২.    Ferdous, who works in the same factory, had asked Aleya last night at 9.00 p.m not to work the night shift because of her seven month pergnancy. But the need for money compelled her to go.
৩.    ‘My wife would have been safe if she had not worked the night shift.’

(ভিডিও- অডিও ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়। নারী আবার মঞ্চে দাঁড়ায় কোনোমতে)

নারী    
আর সবুর তো নাই
বিভোর স্বপ্নে কাটে না সময়।
বাচ্চার কথা মনে হতি
কত যে আহলাদে রাস্তা ঘাট ভুলি
ওসমান আর মুই দৌড়াই
হেসে গড়াগড়ি ইতিউতি।

হঠাৎ থামি যায় পা
শরীর ঝিমমারী আসে
সামনে খারায়া আমার পাগল রাজপথে-
বস্ত্রহীন, চুল দাড়িতে চেনা দায় বটে
তবে সেই দুই চোখ আর মলিন হাসিখান ঠোঁটে
দৌড়ে আসে আমারে দেইখে
হাজারো মানুষের ভীরে ঘটি যায় যেন-
প্রলয়ের মত কিছু- ন্যাংটা আদমের অগমন।
ওসমানের পিছনে কোনোমতে
নিজেরে যেই আড়াল করি।
পাগল চিৎকার করে- “তারাভান
তারাভান চিনিছি তোরে-
কুন্ঠে যাইস- পর পুরুষের হাত ধরি”
ওসমান আমারে এক হাতে পিছনে
আর এক হাতে সামলায় পাগলেরে সামনে
আদম হাওয়ার বিবাদ মিটায় অল্পক্ষণে।
পাগলের সুখ মনে মনে
তাও দেখো বোঝে- পরপুরুষ চেনে।
যেমন ঝড়ে দৌড়ি আসিছিলো
তেমনি- “মুই বাড়িত গেলোম” বলি
আরেক দৌড়ে দৃষ্টি ছাড়ায়া গেল চলি।

ওসমান একবার আমারে দেখি
মুচকি হাসি কয়- ‘ঝুট ঝামেলা কুট
এলে পড়ে মনে মনে যপো গার্মেন্টেসের ঝুট।’

দেখ একদিনে এক নাগরদোলায়
মাত্র কয়েক পাকে কত কি ঘটি যায়
এই ভরি ওঠে গ্লাস মধুতে এই না মিলায়।

একমাস মানে তো ত্রিশ দিন?
দুইজন ১৬ ঘন্টা ১৮ ঘন্টা কাজ করি
বাড়তি যা পাওয়া যায়
তাই দিয়ে বিয়ের আয়োজন
ঐ দিকে মানি অর্ডার আর
চিঠি পৌছি গেছে মোর বাড়ি।
বাপ মাও ভাই বোন সব আসিবারে চায়
দেখিবারে চায় এই তারাভানেরে ঠাঁই দেয় কায়।

ওসমান তিনদিনের ছুটি নেয়-
আমিও ছুটি চাই- পাই না পাই
সেই আশে ঘুরি এর ঠায় ওর ঠায়
শেষে কথা দেয় ম্যানিজার-
পর পর এক সপ্তা রাত্রির পর
মিলি যাবে ছুটি তিন দিনের তর।
আজ শেষ রাত্রির কাজ-
ও বলিছিলো- “ছাড়ো কাজ
যদি না থাকে এই টুকু মুক্তি
তাহলে দাসত্ব করার কি আছে যুক্তি”

হ্যাঁ, এযে দাসত্ব- দাস মুই- দাস তুই
দাস হয়া বাড়ি উঠি সকলে হামরাই।
এতটাই দস্তখত এতই নুয়ে পড়ে মাথা
টু শব্দ না করি- শতমারেও
হাজারো ব্যাথাতে গড়াগড়ি যাও মরি
তবু একবার বৃদ্ধআঙ্গুলটা বার করি
কচু দেখাবার না পারি।

(নারী বৃদ্ধাঙ্গুল দেখায় দর্শককে। পিছনের পর্দা প্রায় পুরোটা পড়ে যায়। সেই সাথে মঞ্চ অন্ধকার হয়। বিকট ভাঙনের শব্দ হয়। ভিডিও স্ক্রিনে ডেড বডির ছবি দেখা যায়, দূরে ধ্বংসস্তুপ)

অডিও    
১.    A few square kilometers area surronding the collapsed building is a human sea.
২.    But as hours pass by the expectation of finding the dear ones alive become slim.
৩.    Hundreds of relatives of the victims wait, hoping against hope that their loved one would come out alive.

(আবার মঞ্চে ধুয়ার মধ্য থেকে কথকরূপী নারী আসে)

কথক    
দেখ একদিনে এক নাগরদোলায়
মাত্র কয়েক পাকে কত কি ঘটি যায়
এই ভরি ওঠে গ্লাস মধুতে এই না মিলায়।

মিলিয়ে গেছে তারাভান, মিশে গেছে, পিশে
গেছে এই স্পেকট্রাম সোয়েটার ফ্যাক্টরির
বালি, ইট, লোহা সেলাই কল এর সাথে। তার
স্বপ্নচক্র, স্মৃতিচক্র এমনকি জীবন চক্র
সত্যিই অকিঞ্চিতকর। তার বাবার গরু গাড়ির ভাঙা চাকাটার মত।  
ছোট একদম ছোট পাখিটার মত।
আমি যাই, আমি
কে? জানতে ইচ্ছে করে?
আমি তারাভানের কলিজার ভেতরের আসল সেই
পাখিটা- মুক্তি পেয়ে গেছি- উড়ি- উড়ি- আকাশভর উড়ি- গান করি-

গাও এলানি দিয়া নাচে গোলাবী
গোলাবী মোর দুধের সর-
কেমনে যাইরে পরের ঘর-
গাও .... গোলাবী

ধীরে ধীরে আলো নেভে- গানটি এবার বাঁশি সহযোগে অডিওতে শোনা যায়। গান শেষে- শেষ সংবাদ। ভিডিওতে তখন উদ্ধার কাজ চলছে- সাদা কালো ছবিতে।

অডিও   
Crushed alive.
Hope dies fast at palashbari.
   

(নাটকের নিউজগুলো ইত্তেফাক, প্রথম আলো, ডেউলি স্টার এসব দৈনিক থেকে নেয়া এবং কখনো কখনো কিঞ্চিৎ পরিবর্তীত)

প্রথম খসড়া
ইতি
আজাদ আবুল কালাম
মাণ্ডা, ঢাকা।
১০.০৫.০৫    

আজাদ আবুল কালাম : অভিনেতা, নির্দেশক, নাট্যকার। সদস্য- প্রাচ্যনাট, ঢাকা।