Bookmaker Bet365.com Bonus The best odds.

Full premium theme for CMS

ভালো নাটক আর নাট্যজনের নিজের মুখ দেখা

Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..

স ম্পা দ কী য়

কোনো সমতল জায়গায় বসে, চক জাতীয় একটা বস্তু নিয়ে নিচের ভাবনাগুলো লেখা যেতে পারে:
এক.    ভালো নাটক নির্মাণ হয় না।
দুই.     ভালো নাটক দর্শক দেখে না।
তিন.    যে নাটক দর্শক দেখে না, সেটাই ভালো নাটক।
চার.     দর্শকনন্দিত নাটক মানেই কোনো না কোনো ঘাপলা আছে।
পাঁচ.    অনেক ত্যাগের বিনিময়ে কিছু না পেয়ে নাটক করে যাওয়াই আদর্শের কাজ।
ছয়.     ভালোলো জিনিস কম হয় বলেই তা ভালো, নাকি কম হওয়া জিনিসই ভালো?

এগুলো লেখার পর ভাবনায় রত হওয়া যাক। অনেক্ষণ ভাবার পর দেখা যাবে, এগুলো একজন হতাশ শিল্পীর অবচেতন মনের কথা। এবং যেহেতু ‘শিল্পী’ আর ‘হতাশাবাদী’- এই দুই পাবলিক একই ব্যক্তি হতে পারে না, তাই লেখাগুলো আবছাভাবে মুছে ফেলা যাক এবং আবার গোড়া থেকে ভাবা যাক।

বাংলাদেশের মঞ্চনাটক যে বর্তমান আদলে চলছে তা শুরু হয়েছে স্বাধীনতার পর থেকে। নিয়মিতভাবে এবং দর্শনীর বিনিময়ে যে নাটক হচ্ছে সেটাকেই এখানে ‘বর্তমান আদল’ বলা হচ্ছে। এই আদলটির জনক নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়, যার জন্ম ১৯৬৮ সালে। কিন্তু জন্মের পর থেকে সে রেডিও-তে কাজ করেছে, মঞ্চের ছেলের মঞ্চে কাজ শুরু করতে সময় লেগেছে অনেকদিন। দলটি মঞ্চের কাজ শুরু করেছে ১৯৭২ সালে, ‘বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ’ দিয়ে। তারপরই নিয়মিতভাবে এবং দর্শনীর বিনিময়ে নাটক করবার মতো ‘পাগলামী’টা তারা করলো- ‘বাকি ইতিহাস’ মঞ্চে এনে। ‘বাকি ইতিহাস’ থেকেই আসলে শুরু আমাদের মঞ্চের (বাঙলা মঞ্চের না, বাংলাদেশের নাগরিক বা শহুরে মঞ্চের) বাদ-বাকি ইতিহাস। নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের পরপরই বেশ কিছু দল একই নিয়তে কাজ শুরু করলো। এর থেকেই বোঝা যায়, সবার ভেতরেই একই তাগিদ অনুভূত হচ্ছিল- স্বাধীন দেশে স্বাধীন চিন্তা-ভাবনা নিয়ে থিয়েটার করবার তাগিদ- শুরুটা কেবল কয়েকদিন আগে-পিছে হয়েছে এই-ই যা। ঢাকা থিয়েটার, থিয়েটার, নাট্যচক্র, আরণ্যক নাট্যদল- সবই ঐ এক কাতারের ভাবুক দল।

নাটক করবো এবং দর্শককে সেই নাটক দেখাবো- এই দুয়ের মিলনই তো থিয়েটার। যেকোনো নাটকের বেলাতেই দর্শকের ভালো লাগা না লাগাটা বেশ জরুরি। এ পর্যায়ে তখনকার নাট্যজনদের ভাবনাগুলোকে আবার চক জাতীয় বস্তুটি দিয়ে লেখা যেতে পারে:

এক.     একজন ভাবলেন, বিশ্বের ভালো ভালো নাটকগুলো মঞ্চে এনে দর্শককে দেখাবো, স্বাধীন চিন্তা মানেই হলো
         পুরো বিশ্বের ভালো কাজের অংশীদারিত্ব নেয়া;
দুই.      আরেকজন ভাবলেন, আমাদের আশপাশের যে বাস্তব ঘটনা আছে, তার উপর নাটক লিখে দর্শককে
         দেখাবো এবং অতঃপর দর্শককে সচেতন করবো;
তিন.    আরেকজন ভাবলেন, আমার একটা ঐতিহ্য আছে, সেই ঐতিহ্যের সন্ধানে আমাকে যেতে হবে এবং নিজের
         শিকড়ের গন্ধ দিয়ে নাটক বানাতে হবে, অন্যের পেছন পেছন নাচানাচি আর কতোদিন!

নাট্যজনদের এই ভাবনাগুলো লেখার পর আপাতত মুছে ফেলবার দরকার নেই।

তারপর থেকে অনেক ভালো নাটক নির্মাণ করা হয়েছে। দর্শকও ভালো বলেছে এবং দর্শক যদ্দিন দেখতে চেয়েছে তদ্দিন নাটকগুলো মঞ্চস্থ হয়েছে। একটি দলে ভালো নাটক নির্মাণের কয়েকটি পূর্বশর্ত আছে। এক. দলে সেই ভালো নাটকটি নির্মাণের মতো নির্দেশক আর অভিনেতৃ আছে কিনা, দুই. সেই নাটকটি হৃদয়ঙ্গমে দলের সবাই পারঙ্গম কিনা অর্থাৎ ভালো নাটক বোঝার জন্য যদিওবা চাই শিক্ষিত দর্শক, তার আগে চাই দলের শিল্পীরা শিক্ষিত কিনা তা বিবেচনা করা (এটার একটা বিশেষ কারণ আছে, তাহলো, কালোত্তীর্ণ অনেক নাটকের মূর্খ উপস্থাপন দর্শক বর্জন করলে, সেক্ষেত্রে দর্শককে মূর্খ ভাবার প্রবণতা এ দেশে লক্ষণীয়)। তিন. যদি নাটকটি সত্যিই ভালো এবং দর্শকপ্রিয় হয় তবে যদ্দিন দর্শক চায় তদ্দিন তা মঞ্চস্থ করবার মতো সাংগঠনিক ভিত দলে আছে কিনা।- এই পূর্বশর্তগুলো যত না দর্শকনির্ভর তারচেয়ে বেশি নাট্যদলের অভ্যন্তরীণ বিষয়নির্ভর। এই শর্ত পূরণ করে আমাদের মঞ্চে বহু নাটক হয়েছে। কিত্তনখোলা, শকুন্তলা, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, কেরামতমঙ্গল, ওরা কদম আলী, গ্যালিলিও, সৎ মানুষের খোঁজে, নূরলদীনের সারাজীবন, কোপেনিকের ক্যাপ্টেন, বিষাদসিন্ধু, জয়জয়ন্তী, কোর্ট মার্শাল, গোলাপজান- এমত আরো অনেক নাটকের নাম মনে আসতে না আসতে যদি হাতের চক জাতীয় বস্তুটির লেখার ক্ষমতা নিঃশেষ হয়ে যায় তো কোনো সমস্যা নেই, কারণ, আমরা বুঝে নিতে পারি যে অনেক অনেক ভালো নাটক হয়েছে আমাদের মঞ্চে, যার সংখ্যা নিতান্তই এক নিঃশ্বাসে বলে শেষ করবার মতো না।

বাংলাদেশে ভালো নাটক করবার জন্য কেবল নিয়ৎ ভালো থাকলেই চলবে না। উপরের প্যারায় যে তিনটি শর্ত দেয়া আছে তার প্রথম দুটি পূরণ করেও তৃতীয়টিতে এসে যদি থামতে হয়, তাহলে বাকি দুটির ফলাফল = শূন্য। সাংগঠনিক কাঠামোর ভাবনা চিন্তা মাথায় রেখে নাট্যদল পরিচালনা করতে হয় বলেই অনেক সৃজনশীল প্রতিভা তাদের প্রতিভার শেষ নির্যাসটুকু আমাদের দেখাতে সক্ষম হননি। আমাদের প্রধান প্রধান সকল নাট্যজনকেই সাংগঠনিক দায়দায়িত্ব পালন করেই নাটক নির্মাণে ব্রত হতে হয়েছে। ছেলে-মেয়ে জোগাড় করা আর অর্থের সংস্থান করা আর মহড়া কক্ষের ভাড়া গোনা ইত্যাদি সব করে তারপর তো নাটক নির্মাণ! রামেন্দু মজুমদার বলি আর মামুনুর রশীদ আর আলী যাকের বলি আর আতাউর রহমান বলি আর প্রয়াত এস এম সোলায়মান বলি আর আসাদুজ্জামান নূর বলি আর নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলি আর লিয়াকত আলী বলি বা আরও অনেক নাম বলিনা কেন, সবার মাথাতেই প্রথম চিন্তা আসে দল চালানোর ব্যাপারটি। দু-একজন হয়তো আছেন যারা এসবের বাইরে থেকেও আমাদের থিয়েটারে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আছেন। সাংগঠনিক গ্যাঁড়াকল তাদের স্পর্শ করেনি, তাঁরা ভাগ্যবানই বটে!

এ কথাগুলো আলোচনায় আনার উদ্দেশ্যটা এবার পরিষ্কার করে নিই।

আমাদের মঞ্চনাটকের এখনকার যারা প্রতিভাবান তাদের ক্ষেত্রে প্রায়শই এই সাংগঠনিক শক্তির দুর্বলতা প্রতীয়মান হয়। এখনকার অনেকেই দেশ-বিদেশে পড়াশোনা করা শিক্ষিত নাট্যজন। তাদের ভাবনা চিন্তা, কিংবা বিশ্বনাটক সম্পর্কে তাদের ধারণা সবই উন্নত স্তরের। তাই দলে নাটক নির্মাণে তারা প্রায় সব সময়ই রুচি ও শিক্ষার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। ফলে গত দেড় দশকে আমাদের মঞ্চ অনেক মানসম্মত নাটকের সাক্ষৎ পেয়েছে। কিন্তু যেহেতু দলের এবং নিজের সাংগঠনিক শক্তি দুর্বল, তাই সেসব নাটকগুলোর বহুল প্রদর্শনী তারা করতে ব্যর্থ হয়েছে। পরিশ্রম সাধ্য, ভালো নাটক নির্মাণ করে তা নিয়মিত মঞ্চে না আনার মতো বিলাসিতা আমরা দেখাতে পারি কিনা সেটাই ভাববার বিষয়। কোনো এক দল একবার ‘যযাতি’ মঞ্চে এনেছিল যা দর্শক ভালোভাবে জানবার আগেই বন্ধ হয়ে গেছে সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য। নাট্যজন আবদুল্লাহ রানা অসীম সাহসের সাথে মঞ্চে এনেছিল ‘মাধবী’। এই নাটকের প্রশংসা করেনি এমন দর্শক খুঁজে পাওয়া ভার। কিন্তু ক’জন দর্শকই বা দেখার সুযোগ পেয়েছে এমন একটি ভালো নাটক? দুদিন বাদেই তো বন্ধ হয়ে গেল। (শ্রদ্ধেয় রামেন্দু মজুমদারকে ধন্যবাদ যে তিনি আবার নাটকটিকে দর্শকের সামনে এনেছেন এবং ফলে ত্রপা মজুমদারের এক অনবদ্য অভিনয় আমরা দেখতে পেলাম। তাঁর দলের সাংগঠনিক কাঠামো সবল হওয়ায় নাটকটির বহুল প্রদর্শনী সম্ভব হচ্ছে) কয়েকদিন আগে ‘জিয়নকাঠি’ মঞ্চে এনেছিল আবহমান বাংলা। শ্রদ্ধেয় বিপ্লব বালা এই দলের প্রধান এবং এই নাটকেরও তিনি নাট্যকার-নির্দেশক। নাটকের মহড়া থেকে শুরু করে মঞ্চে আনা পর্যন্ত কী শ্রম আর মেধার সংযোগ ঘটেছে তা যেকোনো দর্শকই অনুভব করতে পারবেন। কিন্তু বেশি দর্শককে সেই অনুভবে আবিষ্ট হতে হবে না, কারণ, একটি কী দুটি প্রদর্শনীর পর নাটকটি বন্ধ হয়ে গেছে। পরে সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠবার জন্য ‘স্ত্রীর পত্র’-এর মতো একক অভিনীত নাটক বাছাই করা হয়েছে যা মাসের পর মাস মহড়া দেবার পর প্রেস ’শো করে আর কোনো প্রদর্শনী গত মাস-ছয়েকের মধ্যে করতে পারেনি। আরেকটি নাটকের এমন ফলাফলের পূর্বাভাস শোনা যাচ্ছে। এ প্রজন্মের শিক্ষিত নাট্যনির্দেশক কামালউদ্দিন কবির নাট্যদল তৈরি করেছে ‘জন্মসূত্র’ নামে। জন্মসূত্রের জন্মলগ্ন থেকে একটি ভালো নাটকের নির্মাণ কাজ চলছে। তরুণ প্রতিভা বদরুজ্জামান আলমগীরের ‘অহরকণ্ডল’ নামের সেই নাটকটির মহড়া চলছে বোধকরি এক বছরের বেশি সময় ধরে। নাটকটিতে ঢাকার দুটি প্রতিষ্ঠিত নাট্যদল ‘উদীচী’ আর ‘দেশ নাটক’র তিনজন ভালো অভিনেতা- রতন দেব, আনোয়ারুল হক এবং দিলীপ চক্রবর্তী অভিনয় করছেন যারা নিজ নিজ দলে পরীক্ষিত নাট্যসংগঠক। তিন + এক = চার, এই চারজন ভালো নাট্যজনের মিলিত শ্রম যদি বৎসরাধিককাল ধরে মহড়া চালিয়ে মাত্র একটি নাটক নির্মাণ করে এবং ‘আল্লাহ না করুক’ যদি এই নাটকেরও মাত্র কয়েকটি প্রদর্শনীর আয়ু হয় - তাহলে আবার একটু ভাবা যাক যে, সবার কাছে যখন সময় এবং শ্রম একটি মূল্যবান সম্পদ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, ঠিক সেসময়ে শিক্ষিত নাট্যজনদের কাছে এ দুটি জিনিস এ্যাতোটাই মূল্যহীন হয়ে যাচ্ছে কীভাবে!

এবার নতুন আরেকটি চক জাতীয় বস্তু আর এক বালতি পানি এনে সেই পানিতে নিজের মুখটি উপুর করে তাকালে দেখা যাবে ‘দৃশ্যপট’ নামে একটি নাট্যদল আছে এবং সেই দলে আলী মাহমুদ নামে একজন বিদেশ ফেরৎ শিক্ষিত নির্দেশক আছে এবং সে এক সময়ে গিরিশ কারনাডের ‘নাগমণ্ডল’ নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছিল। ঢাকার দরিদ্রতম দলগুলোর একটি এই ‘দৃশ্যপট’, দরিদ্র অনেক অর্থেই- সাংগঠনিকভাবে এবং আর্থিকভাবে। অসাধারণ এই নাটকটির পেছনে যে ক’জন নাট্যজন তাদের মূল্যবান সৃজনশীল সময় ব্যয় করেছিল তাদের সেই সার্থক কাজের সার্থক মঞ্চায়ন (সংখ্যার দিক দিয়ে) কি হয়েছে? হয়নি। তবে কেন এই খামাখা ভালো নাটক বাছাই করা আর সময় ব্যয় করা?- বিংশ শতাব্দির শেষে ও একবিংশ শতাব্দির শুরুর এই ব্যস্ত সময়ে থিয়েটারের মানুষজন যে আলতু-ফালতুভাবে সময় ব্যয় করছে তা ভাবলে নিজেদেরকে কোনোভাবেই আর আধুনিক মানুষ মনে হয় না। এবার নতুন আনা চক জাতীয় বস্তুটি দিয়ে লেখা যেতে পারে যে-

এক.    আমরা ভালো নাটক করি এবং
দুই.    ‘সক্রেটিসের জবানবন্দী’ নামে একটি নাটক আছে, যার ৫০টি প্রদর্শনী আমরা করেছি।

একটি দল যখন শিশিরকুমার দাশ রচিত ‘সক্রেটিসের জবানবন্দী’ নাটক মঞ্চায়নের উদ্দেশ্যে মহড়ায় নামে, তখন অনেক শিক্ষিত নাট্যজনেরই চোখ পরে সেই দলটির দিকে। কেবল ভালো নাটক তাই নয়, বর্তমান সময়কার বাস্তবতায় কত বড় হিম্মৎ থাকলে সক্রেটিসের মতো চরিত্রের উপস্থিতি ঘটাতে চায় তারা এই সমাজে। তারা নিকট অতীতের মুক্তিযুদ্ধের বিশ্লেষণ চায় না, চায় না আরো অতীতের ব্রিটিশ শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালিদের বিদ্রোহ দেখাতে- তারা জ্ঞান বিশ্লেষণের শিকড়ে হাত দিতে চায়। সমাজ সভ্যতার মুখোশে যত বড় বড় নন্দন তত্ত্বের আর শিল্পের আর সমাজ পরিবর্তনের বুলি কপচানো হোক না কেন, আসল কথা থিয়েটারটা হলো শিক্ষিতজনদের কর্ম, জ্ঞানীদের কর্ম। আর শিক্ষিত সে-ই, জ্ঞানী সে-ই- ‘যে জানে যে, সে জানে না’। সব জান্তার অহমিকায় যখন নাট্যজনেরা তৃপ্তির ঢেকুর তোলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হওয়া কিছু তরুণ তখন উপলব্ধি করে যে, তারা নিজেরা আসলে জানে না কিছুই। এবং তাই তারা সবাইকে জানাতে চায় যে- ‘আমরা যতটুকু জানি, তার লক্ষগুণ আমাদের অজানা’। সক্রেটিসের জবানবন্দী নাটক নির্মাণে মেধা, শ্রম আর অর্থ ব্যয় নিতান্ত কম নয়। এবং অতঃপর ঢাকার মঞ্চে অনেক ভালো নাটকের মতো আরেকটি নাটকের অভিষেক ঘটে। প্রতিটি দর্শক আপ্লুত হলো নাটক দেখে। নাম ভুমিকার অভিনেতা আলী মাহমুদের অভিনয় দেখে অভিনয় বোঝা তাবৎ সমালোচকদের ’থ হয়ে যাবার উপক্রম। কোথায় পেল সে এই অভিনয় ক্ষমতা! ধারাবাহিকতাহীন এক উল্লম্ফন এই অভিনয় প্রতিভা! অনেকেই প্রণাম জানিয়েছেন এই অভিনয় ক্ষমতাকে। এবার চক জাতীয় বস্তুটি দিয়ে আরো দুটি বিষয় লিখে ফেলা যাক:

এক.    আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এ্যাতোটাই বিমোহিত যে, তাঁর বই পড়া কর্মসূচির পাশাপাশি এই নাটকটিও শিক্ষার্থীদের দেখানোর সফল উদ্যোগ নিলেন।
দুই.    অধ্যাপক শফি আহমেদ সুযোগ করে দিলেন আগরতলায় বাংলাদেশ উৎসবে যোগ দেয়ার। সেখানে নবীণ-প্রবীন দর্শকদের সেকি প্রশংসা! তাদের ভাষ্য মতে- এমন উন্নত চেতনার লোকজনই তাহলে এখনকার বাংলাদেশের নাট্যজন! তবে তো আর কোনোভাবেই পেছন ফেরা নয়।

এবার ব্যাপারটা একটা গল্পের মতো দাঁড় করানো যায়। গল্পটা এমন যে- একদা এক নাট্যদল ছিল ‘দৃশ্যপট’, সেই দলের এক নাটক ছিল ‘সক্রেটিসের জবানবন্দী’, সেই নাটক দর্শকদের খুব ভালো লাগা শুরু করলো, কিন্তু দলের নাট্যজনেরা বিপরীতে অলস হওয়া শুরু করলো, ক্রমশই নাটকের মান নিম্নগামী হতে থাকলো, মহড়ায় ঘাটতি দেখা দিল, অভিনেতৃগণ তাদের অন্যান্য ব্যস্ততার ফিরিস্তি গাইতে শুরু করলো, কারণ দলের নাট্যজনেরা যখন এই নাটকের মহড়ায় নামে তখন তারা আদতে বুঝতে পারেনি যে, এই নাটকের জন্য কমিটমেন্টের কতটা দরকার হতে পারে, এবং নাটক দর্শকের খুব পছন্দ হলে তাদের কী করতে হবে এব্যাপারেও তাদের কোনো পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না- কারণ তারা পূর্বে কখনো তাদের কোনো নাটকের এ্যাতো জনপ্রিয়তা দেখেনি। এটুকু লেখার পর চক জাতীয় বস্তুটির দিকে তাকিয়ে একটু ভেবে নিয়ে আবার লেখা যেতে পারে যে- মঞ্চের অভাবে ঢাকা এই ঢাকার থিয়েটারে তারা অনেক অনেকবার হল বুকিং পেয়েও দলের অভিনেতৃদের খামাখা ব্যস্ততা আর অলসতার জন্য হল ছেড়ে দিয়েছে। এবং অতঃপর আট বছর অতিক্রমণের পর ‘সক্রেটিসের জবানবন্দী’ নাটকের ৫০তম প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে।

বাংলাদেশের মঞ্চের ৫০তম প্রদর্শনী হওয়া প্রথম নাটকের নাম ‘থিয়েটার’ এর ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’। তারপর বহু নাটকের শতাধিক মঞ্চায়ন হয়েছে। এমনকি চারশতাধিকবার মঞ্চায়ন হয়েছে এমন নাটকের সংখ্যাও এখন একাধিক। তাদের উত্তরসূরী হিসেবে এই নাটকের মাত্র ৫০টি প্রদর্শনী করতে কেন আট বছর সময় লাগলো এ নিয়ে কেউ তেমন প্রশ্ন তোলেনি। এর কারণ হতে পারে, প্রায় সব দলের নাট্যজনেরাই এখন শখের থিয়েটার করে। আগে থিয়েটারের পাশাপাশি কিছু একটা করার চেষ্টা চলতো, এখন অনেক কিছু করার পাশাপাশি থিয়েটার করা হয়। আট বছরে কেন, মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তেও যদি কোনো না কোনোভাবে ৫০টি প্রদর্শনী করা যায় তবু তারা বিজ্ঞের মতো ঠ্যাঙের উপর পা তুলে বলবে- Better late than never. হায়রে! অসাধারণ এই পক্তিটির কী অশ্লীল ব্যবহার!

এবার প্রায় নিঃশেষিত চক জাতীয় বস্তুটি ফেলে দিয়ে আরো নতুন চক জাতীয় বস্তুর সন্ধানে যেতে হবে এবং বালতির পানির উপর আবার উপুর হতে হবে এবং সেখানে নিজের প্রতিকৃতি দেখে বুঝতে হবে, আসলে এসব কর্মকাণ্ডের জন্য সে-ই মূলত দায়ী। এবার সে প্রায় নিঃশেষিত চক জাতীয় বস্তুটি কুড়িয়ে নিয়ে দ্রুত লিখতে থাকবে- সে নিজে একটা নাট্যদলের কর্ণধার ছিল, তার দল ‘সক্রেটিসের জবানবন্দী’ নামে একটি নাটক মঞ্চস্থ করতো, সেই দলের অনেক কর্মী তাদের কমিটমেন্ট থেকে সরে গিয়েছিল, এই সরে যাওয়াটার দায় তাকে নিতে হবে। এ্যাতটুকু লেখার পর প্রথমে আবছাভাবে মুছে ফেলা লেখাগুলো আবার পড়ার চেষ্টা করবে, এক-দুই-তিন-চার-পাঁচ-ছয় এবং দেখবে এগুলো এক হতাশাবাদী পাবলিকের কথা এবং তার নিজেরও কথা এবং সে নিজেকে আবিষ্কার করবে এক হতাশাবাদী হিসেবে এবং যেহেতু ‘শিল্পী’ আর ‘হতাশাবাদী’- এই দুই পাবলিক একই ব্যক্তি হতে পারে না, তাই সে বুঝে নেবে যে, সে আর কোনোভাবেই ‘শিল্পী’ হিসেবে নিজের পরিচয় দিতে পারে না।

ইতি
হাসান শাহরিয়ার
মিরপুর।
১০-০৮-২০০৫ ইং