Bookmaker Bet365.com Bonus The best odds.

Full premium theme for CMS

থিয়েটার ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম : সুধীজনের মতামত

Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..

[গত ৭ অক্টোবর ২০০৪ তারিখে চট্টগ্রামে উদ্বোধন হয়ে গেল একটি আশা জাগানিয়া থিয়েটার কমপ্লেক্সের - থিয়েটার ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম-এর। সবধরনের আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন অভিনয়োপযোগী মঞ্চ, আর্ট গ্যালারী ইত্যাদিতো থাকছেই, আরো থাকছে বিভিন্ন মেয়াদী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আর প্রকাশনার পরিকল্পনা। এই উদ্বোধনী আয়োজনের প্রাক্কালে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৪ ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজন করা হয়েছিলো বিশিষ্টজনদের মতামত বিষয়ক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন তাদের কথপোকথন অনুলিখন করে পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেয়া হলো। বাংলাদেশের নাট্য ইতিহাসে এই উদ্যোগ উল্লেখযোগ্য জায়গা করে নিবে বলে আমাদের ধারণা]

আহমেদ ইকবাল হায়দার
আজকের অনুষ্ঠানে আগত সকল নাট্যজন ও সাংবাদিকদের চট্টগ্রাম নাট্য জগতের পক্ষ থেকে জানাই শুভেচ্ছা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আর্থিক সহযোগিতায় আমরা চট্টগ্রামে নির্মাণ করেছি একটি থিয়েটার কমপ্লেক্স। নাম দিয়েছি থিয়েটার কমপ্লেক্স, চট্টগ্রাম। আগামী ৭ অক্টোবর ২০০৪ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন হবে। উদ্বোধনের প্রাক্কালে আমরা দেশের বিশিষ্ট নাট্যজনদের মতামত নেবার প্রয়োজন অনুভব করেছি। সেই তাগিদ থেকেই আজকের এই আয়োজন। আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিলো, নাটককে নিয়ে। সেই স্বপ্নের অনেকটাই পূরণ হবে এই কমপ্লেক্সের মাধ্যমে। ... চট্টগ্রামে যদি কেউ আসে, ভালো থিয়েটার কোথায় হয় ভাবলেই ঐ জায়গার কথা প্রথমে আসবে। এটা আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি। আমি থিয়েটারের ভেতরের ফোরস থেকেই কথাটা বলছি।

আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক সময়েই আমাদের মাননীয় মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কাছে যেতাম। তো এক সময় আমি আমার স্বপ্নের কথাটা বললাম। বললাম যে, একটা থিয়েটার ইনস্টিটিউট করবো। একটা জায়গা যেন সিটি করপোরেশন আমাদের দেয়। এই আবদার অনেকদিন ধরেই চলছিলো। একসময় উনি বললেন- জায়গা দিলেইতো হবে না, বিল্ডিংটাও আমার করে দিতে হবে। আমি বললাম লাগবে না - আমরাই পারবো। উনি বললেন- পারবা না, আমি জানি, এটার একটা সাপোর্ট লাগে। যাত্রা ওখান থেকেই শুরু। প্রথমে ছিলো ৮০ জনের একটি ছোট্ট গ্রাউন্ড, সেখানে হয়তো আমরা ইন্টিমেট থিয়েটার করবো ভেবেছিলাম, সে জায়গাটা ছিলো। এক সময় আমাদের প্রবেশপথ কোথায় হবে সেটা দেখানোর জন্য ওনাকে নিয়ে গিয়েছিলাম। পরিবেশটা দেখে উনি আমাকে বললেন, তোমরা কালচার করোতো, তোমরা না পেতে পেতে তোমাদের আত্মাটাই ছোট হয়ে গেছে, আরো বড় করোনা। করছোই যখন আরো বড় কর। এই জায়গা থেকে শুরু হলো। হতে হতে এটা থিয়েটার কমপ্লেক্স হয়ে দাঁড়ালো। এখানে একটা আর্ট গ্যালারী আছে। আপনাদের কাছে কাগজ (লিফলেট) আছে। আমরা একটা লিফলেট দিয়েছিলাম, যদি না থাকে আমাদের কর্মীরা আছে তারা আপনাদের কাছে পৌঁছে দেবে। এখানে একটা থিয়েটার আর্ট গ্যালারী আছে, যেখানে প্রদর্শনী হতে পারবে আবার ছোটখাট অনুষ্ঠানও হতে পারবে। মাল্টিপারপাস ব্যবহার। সেমিনার করা যাবে, এটাকে আমরা নাম দিচ্ছি গ্যালারি। আরেকটি হলো ল্যাবরেটরি থিয়েটার। আসলে এটার নাম দেয়া উচিত ছিলো স্টুডিও থিয়েটার। কিন্তু স্টুডিও থিয়েটার নামে চট্টগ্রামে একটি ছোট্ট হল আমরা আগেই করে নিয়েছিলাম- মুসলিম হলের পাশে। ওটা একটা জীর্ণ জায়গা কিন্তু ইন্টিমেট কাজ করা যায়। বদ্ধ একটা গুদামের মতো। যাই হোক ... তো ঐ কারণে বিকল্প একটা নাম খুঁজতে হয়েছে। যেহেতু আমরা নিরীক্ষামূলক কাজ করবো, গবেষণামূলক কাজ করবো সুতরাং নাম দেয়া যাক ল্যাবরেটরি থিয়েটার। এটার আসন সংখ্যা ২৫০। এখানে যতটুকু পেরেছি আমরা আমাদের ভাবনা থেকে আধুনিক করার চেষ্টা করেছি এবং থিয়েটারের মত করার চেষ্টা করেছি। এটির লাইট ডিজাইন করেছেন তাপস সেন। এটির একুয়াস্টিক ট্রিটমেন্ট করেছেন ড. নিজামউদ্দিন- তিনি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের। সাথে সাথে এ কাজটি করার সময় বাংলাদেশের থিয়েটার নিয়ে যারা ভাবেন বিশেষ করে প্রায়োগিক কাজে ... আমি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে ঢাকা, চট্টগ্রাম বা বিভিন্ন জায়গায় এমনকি কলকাতাতেও যেখানে পারি আমি আমার যতটুকু সুযোগ আছে বা না থাকলেও ... গিয়ে দাঁড়িয়েছি, আমি সহযোগিতা নেয়ার চেষ্টা করেছি। আমি অত্যন্ত আনন্দিত, সবাই আমাকে সহযোগিতা করেছেন। সুতরাং এই থিয়েটারটা একটা যৌথ প্রয়াস, হলটি যৌথ প্রয়াস। এখানে দুটো ক্লাশরুম রেখেছি যেখানে মহড়া করা যায় এবং আমরা অন্য কিছু কাজও করতে পারি। এখানে শিক্ষার কিছু কার্যক্রম আমরা রেখেছি। একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ থিয়েটার কমপ্লেক্স করার জন্য যা যা প্রয়োজন আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষমতার দ্বারা আমরা করার চেষ্টা করেছি। তবে এটা ঠিক, এটা হবে সংস্কৃতিকর্মীদের তীর্থস্থান। হয়তো এরপরই এটাকে মডেল হিসেবে নিয়েই বাংলাদেশে এর চাইতে ভালো কাজ হবে। কিন্তু আমরা করেছি। প্রায় তিন বছর ভৌতিক অবকাঠামো নির্মাণের পর আগামী ৭ অক্টোবর ’০৪ হলটি উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। আমরা এর নাম দিয়েছি- ‘থিয়েটার ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম’, সংক্ষেপে টিআইসি। ৭, ৮, ৯ অক্টোবর ’০৪ তিনদিনের একটা মেলা করতে চাই আমরা। এখানে থাকছে চিত্রপ্রদর্শনী, এখানে থাকছে নাটক, সংগীতানুষ্ঠান, নৃত্যানুষ্ঠান, আবৃত্তি ইত্যাদি। আমরা ডিসেম্বর ’০৪ থেকে এটা সবার জন্য ছেড়ে দেব। নীতিমালা সবকিছু হয়ে যাবে আশা করছি। এখানে স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর থাকছে এবং ভবিষ্যতে আমরা আশা করছি এই বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের প্রথমেই ভিডিও ধারণ করার সিস্টেমটাও করে ফেলতে পারবো। তো আমরা চাই এই উদ্যোগটা শুধু আমাদের নয়, এই উদ্যোগটা বাংলাদেশের সংস্কৃতিকর্মীদের জন্য। আমরা চট্টগ্রামে একটা ছোট্ট অনুষ্ঠান করেছিলাম মতবিনিময়ের, এখন আমরা ঢাকায় করছি, আমরা এসেছি আপনাদের কাছে। আপনারা আপনাদের মতামত দেবেন, ভাবনা দেবেন। অবশ্যই এগুলো আন্তরিকভাবে দেবেন এবং এগুলো আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, অবশ্যই হবে। কারণ আমরা চাই এমন একটি থিয়েটার ইনস্টিটিউট হউক যেটি সবার হল্। আমাদের এখানে আজ উপস্থিত আছেন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সভাপতি মামুনুর রশীদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসিরউদ্দিন ইউসুফ, আরো আছেন রামেন্দু মজুমদার, আতাউর রহমান, আলী যাকের, কলিম শরাফী, সৈয়দ শামসুল হক ... আরো অনেকেই উপস্থিত আছেন। আমাদের যাত্রা শুরু হবে ৭ অক্টোবর। এই যাত্রা হবে আমাদের জন্য একটি স্বপ্নের যাত্রা। সেই স্বপ্নটা সত্য হোক এ-ই চাই।

শুরুতেই আমি আমাদের চট্টগ্রামের মাননীয় মেয়র মহোদয়কে অনুরোধ করবো আপনাদেরকে স্বাগত জানিয়ে তার বক্তব্য দেয়ার জন্য। একথা না বললেই নয় যে, এই মঞ্চ তাঁর ঐকান্তিক চেষ্টা, ইচ্ছা ব্যতীত নির্মাণ করা সম্ভব হতো না।

এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী
স্লামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু। যারা হিন্দু, বৌদ্ধ বা অন্য ধর্মাবলম্বী আছেন তাদের আমি আদাব জানাই। আমি মূলত এসেছি গ্রাম থেকে শহরে। সবাই জানেন চট্টগ্রাম - গ্রামটা পেছনে আছে এবং শহরে এসেছি এই জন্যই যে গ্রামে ফিরে যেতে চাই আমরা। চট্টগ্রাম বিভিন্নভাবে অবহেলিত। তাই এই অবহেলিত এলাকার চিত্র সাধারণ মানুষের কাছে ফুটে উঠুক, সেটাই আমার মূল লক্ষ্য ও কাম্য ছিলো। আমার অত্যন্ত আনন্দ লাগছে যে, আমাদের আহ্বানে আপনারা সাড়া দিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন। আমি অত্যন্ত গৌরবান্বিত। কারণ, আমি এখানে, এই সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কথা বলার চেষ্টা করছি, অথচ এই যোগ্যতা আমার নেই। এখানে আপনারা যারা এসেছেন তারা হচ্ছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের শ্রেষ্ঠ মানব। সমাজের উঁচু স্তরে বসবাস করেন। তাই আপনাদের সহযোগিতা যদি পাই, তাহলে আশা করতে পারি, অসাধ্য সাধন চট্টগ্রাম করতে পারে। তার একটা ভৌগলিক পরিবেশ আছে। এবং জিওগ্রাফিক কনডিশনটা এত উন্নতমানের, সেটা কিন্তু আপনারা রাজধানীতে বসে দেখতে পান না। দেখা গেলেও সেটা উপেক্ষিত হয় বিভিন্নভাবে। আমার চট্টগ্রাম শহরের মধ্য দিয়ে একটা নদী বয়ে গেছে, যেটা কর্ণফুলী নদী আর পাশে সমুদ্র আছে। তার পাহাড় আছে, সমতলভূমি আছে। এই যে একটা বৈচিত্র্যময় অবস্থা, বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকার চাইতে অনেক উন্নত বলে আমি মনে করি। কিন্তু অবহেলার কারণে আমরা পিছিয়ে আছি। তাই সহযোগিতা নিতে এসেছি আপনাদের কাছ থেকে। একটা থিয়েটার ল্যাবরেটরি করার উদ্যোগ নিয়েছি। ... আমার তেমন কোনো যোগ্যতা নেই, কারণ, আমি কোনোদিন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িত করতে পারিনি। হয়তো যারা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করতে চেষ্টা করেছে যাদের প্রতিভা আছে, তাদেরকে সহযোগিতা করেছি মাত্র। এবার প্রথমবারের মতো একটা থিয়েটার ল্যাবরেটরি করছি। টাকার চাইতে আন্তরিকতা হচ্ছে বড় কথা। তা আমরা চাই ... আমি চাই, চট্টগ্রামে আমরা যে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডটা শুরু করেছি, তা যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। বাইরে, দেশের বাইরে আমাদের পরিচিতি ভূখা নাঙ্গা হিসেবে। আমাদের যেসব চিত্র বাইরে যায় সবই হচ্ছে দুর্ভিক্ষের আর অভাবের। কিন্তু আমরা সম্পদশালী নই এটা আমি বিশ্বাস করি না। আমাদের সম্পদ আছে, কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা নাই কিংবা পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবায়ন করি না। সুতরাং অর্থনৈতিক হোক আর সাংস্কৃতিক হোক, উদ্যোগ নিতে হবে আর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ... প্রতিটি ক্ষেত্রেই ... সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেই ধরুন আর বিভিন্ন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই ধরুন, আমাদের মেধা আছে; মেধাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। চট্টগ্রামকে বিভিন্নভাবে অবহেলা করা হলেও চট্টগ্রামের মানুষ হিসেবে আমরা চাই, আমাদের কামনা হচ্ছে যারা জ্ঞানী গুনী বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় আছে ... চট্টগ্রামের ভৌগলিক অবস্থাকে মানুষের সামনে তুলে ধরার পরে সারা বিশ্বের সামনে যেন আমরা প্রমাণ করতে পারি, আমার দেশ সম্পদশালী। এখানে লুটে পুটে না খেয়ে ... যেহেতু আমাদের যোগ্যতা আছে আমরা অবশ্যই দেশটাকে উন্নত করতে চাই। এই আশায় সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে ... আমি যদিও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়িত নই ... আমি মনে করি একটা দেশকে তুলে ধরার জন্য সবচেয়ে উত্তম পন্থা হলো তার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। এই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করার জন্যই চট্টগ্রামে একটা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

... আপনারা কষ্ট করে বর্ষার সময় এখানে এসেছেন ... তাও আবার অফিস সময়ে ... এই কাজের সময়ে আপনারা এসেছেন আমাকে সহযোগিতা করার জন্য, যারা ঢাকা ছাড়াও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বিভিন্ন এলাকাতে করছেন, তাদেরকে উৎসাহিত করার জন্য এসেছেন ... এই জন্য চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে আমি সবাইকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি চাই আপনারা আজকে আপনাদের মতামত জানাবেন। আমাদের পরিকল্পনাকে আরো জোরদার করবেন। আমরা উদ্বোধন করবো ৭ অক্টোবর। আপনারা সবাই আমাদের সেই আয়োজনে অংশ নিবেন এই আমার প্রত্যাশা। সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি। খোদা হাফেজ। স্লামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহে ওয়া বারাকাতুহু।

আহমেদ ইকবাল হায়দার
সুধীমণ্ডলী, আমরা আপনাদের কাছ থেকে কিছু মতামত চাই। এবং আমাদের এই কমপ্লেক্সের ব্যাপারে আপনাদের ভাবনাটা চাই। আমরা আপনাদের পরামর্শে ধন্য হবো। আমি প্রথমেই নাট্যব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দীন ইউসুফকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি তার কথা বলবার জন্য।

নাসিরউদ্দীন ইউসুফ
ধন্যবাদ, আহমেদ ইকবাল হায়দার। সমবেত সুধীজন এবং চট্টগ্রাম থেকে আগত সম্মানিত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রামের নাট্যকর্মী এবং সাংস্কৃতিক ভায়েরা। আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছে কয়েকবারই ... এই হলটা নির্মাণের সময়ে। এখনও নির্মাণাধীন। এবং এটি যখন হায়দার আজ থেকে কয়েক বছর আগে ঢাকায় প্রথম বলে ... মহিলা সমিতির সামনে ... যে এটি করতে চাই, তখনই বলেছিলাম আসলে হায়দার যে স্বপ্নটি দেখছে সেটি আমাদের প্রায় সবারই স্বপ্ন। আমরা যারা নাটক করি, আমরা সবাই ভাবি যে, আমাদের একটি নিজস্বভূমি দরকার। একটি নিজের জায়গা দরকার। কিন্তু সে ভাবনাটা কিভাবেরূপ দেয়া যায় সেটি আমাদের পক্ষে ঢাকায় কিন্তু সম্ভব হয়নি। ঢাকায় জাতীয় নাট্যশালা হয়েছে কিন্তু সেটি সরাসরি সরকারের তত্ত্বাবধানে হওয়াতে কত ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে, তা আমরা সবাই জানি। এই আঁচটা আমাদের গায়ে কতটুকু লাগে তা আমরা জানি। চট্টগ্রামের কথা হায়দার যখন প্রথম বলেছে বিশ্বাস করতে একটু কষ্টই হয়েছে ... সত্যি কথা ... তারপরে যখন প্রথম গেছি, যে জায়গাটা দেখিয়েছে সেখানেও যে হতে পারে সেটি নিয়েও একটু সন্দেহ ছিলো। শহীদ মিনারের পাশে সুন্দর জায়গা কিন্তু একটি নির্মাণাধীন মার্কেট আছে - তার পাশেই। তো তারপরে বললাম যে হ্যাঁ, হতে পারে ... কেন হতে পারে না ... একটি জায়গাতো নিজেদের দরকার এবং এটি যদি এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার স্পেস হয় তাহলে সবচেয়ে ভালো হয়। হায়দার সেভাবেই কাজটা শুরু করে এবং হায়দারকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেন মাননীয় মেয়র। এবং আমার মনে হয় তাঁর পক্ষেই সম্ভব ... সকল নাট্যকর্মীরা বাংলাদেশের সংস্কৃতিকর্মীরা এই জন্য তাঁকে সাধুবাদ জানাই, ধন্যবাদ জানাই যে, একজন মানুষের গণচরিত্র থাকলেই তাঁর পক্ষে সেই দেশের সংস্কৃতি এবং শিল্পভাবনার সাথে নিজেকে জড়ানো সম্ভব আর সেই সম্ভবপর কাজটি তিনি করতে পেরেছেন। একটি থিয়েটার হল যদি হয় এবং সেখানে যদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় তাহলে সে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে আমাদের থিয়েটার, বাংলা থিয়েটার ক্রমশ ভালোর দিকে এগুবে। আমাদের সংস্কৃতি এবং তার চর্চা সে মিলনায়তন বা সেই স্পেসে করা যাবে। এটি নির্মাণকালীন সময়ে আমাকে যখন হায়দার বলে, আমি তখন তাপস সেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম ... তাপস দা’ সময় দিয়েছেন, চট্টগ্রামে কয়েকবার গিয়েছেন এবং আলোর ডিজাইনটা করেছেন। পরে একুয়াস্টিক সিস্টেম নিয়ে যখন কথা হয় তখন ড. নিজামের সাথে কথা বলি ... নিজামকে বলেছি যে, পয়সা অল্প কিন্তু তারপরও করতে হবে কাজটা। এরা সবাই সহযোগিতা করেছেন এবং এর কারণেই একটি মিলনায়তন হয়েছে ... ২৫০ জন বসতে পারবে, একথা ঠিক কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হলো এটি ফ্লেকজিবল মিলনায়তন। যেকোনো জায়গায় এটির মঞ্চ স্থাপন করা যাবে। যেকোনো জায়গায়ই আপনি আপনার মঞ্চায়ন করতে পারবেন এবং শিল্পীরা অভিনয় অথবা সংগীত অথবা নৃত্য পরিবেশন করতে পারবেন। আলোর ব্যবস্থাও চমৎকার। এটি  অত্যন্ত ফ্লেকসিবল এবং এটি একটি স্টুডিও থিয়েটার ... আসলে স্টুডিও থিয়েটার হলে সবচেয়ে ভালো হতো। একসময় হায়দারকে বলেছিলাম - একটি স্টুডিও থিয়েটার চট্টগ্রামে আছে, আপনারা শুনেছেন, মুসলিম ইনস্টিটিউটে ... সেকারণে এটিকে নাম দিয়েছে তারা থিয়েটার ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম এবং থিয়েটার ল্যাবরেটরি। সাথে তারা একটি ইনস্টিটিউটও করেছে যেখানে একটা বিশাল কার্যক্রম আছে ... আপনাদের কাছে একটি লিফলেট আছে ... সেখানে পরবর্তী পর্যায়ে তিনবছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্স বা আরো অনেক স্বপ্নের কথা বলা আছে। আসলে খুবই এম্বিশাস মনে হতে পারে কিন্তু যখন শুরু করেছিলো ... একটি ইট যখন গেঁথেছিলো, তখনও মনে হয়েছিলো প্রজেক্টটা খুব এম্বিশাস। কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম ক্রমশ আমাদের চোখের সামনে দিয়ে সম্পূর্ণভাবে নাট্যকর্মীদের প্রচেষ্টায় এবং একজন রাজনীতিবিদ, যিনি নির্বাচিত এবং জনপ্রতিনিধি, তাদের সম্মিলনে একটি বড়মাপের কাজ হয়েছে। আমি মনে করি যে, এটি বাংলাদেশের ... আমার দেখা এই মুহূর্তে সবচেয়ে আধুনিক মঞ্চ। এবং এটি নির্মিত হয়েছে চট্টগ্রামে এবং এটি সম্ভব হয়েছে চট্টগ্রামের নাট্যকর্মী এবং আমাদের মাননীয় মেয়রের সহযোগিতায়। আমরা ঢাকা থেকে আপনাদের এই আশ্বাস দিতে পারি যে, আমরা বিভিন্ন সময়ে ঢাকা থেকে যেয়ে আপনাদের মঞ্চে নিয়মিত নাটক করার চেষ্টা করবো এবং আপনারা সে ব্যবস্থা রাখলে ঢাকার দলগুলো আগ্রহ প্রকাশ করবে বলে আমার ধারণা। ... তার মধ্য দিয়ে আমাদের থিয়েটার একটি ভিন্নস্তরে উন্নীত হতে পারে। আরো আশার কথা ও আনন্দের কথা যে সেখানে একটি গ্যালারি করেছেন তারা, যে গ্যালারিতে চিত্রকলা প্রদর্শনী, ফটোগ্রাফি প্রদর্শনী কিংবা ছোট খাট গানের আসরও হতে পারে - স্পেসটা এমনই সুন্দর। এর প্রবেশপথ অত্যন্ত সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর, সামনের ফোয়ারা ও অন্যান্য সব স্পেসই খুবই সুন্দর। আমি একজন নাট্যনির্দেশক হিসেবে এমন একটি কাজের জন্য উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ দিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি।

আহমেদ ইকবাল হায়দার
ধন্যবাদ। এবার বক্তব্য রাখবেন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সম্মানিত সভাপতি নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। মামুনভাইয়ের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়, এমনকি কালকেও একাজের ক্ষেত্রে সহযোগিতা নিয়েছি এবং আমরা যারা চট্টগ্রামে নাটক করি তারা প্রায় সময়ই মামুনভাইকে বিভিন্ন কাজে পেয়ে থাকি। তখন মনে হয় না যে উনি ঢাকার নাট্যকর্মী। এখন মামুনভাই কিছু বলবেন।

মামুনুর রশীদ
মাননীয় মেয়র এবং উপস্থিত সুধীবৃন্দ। আকাশে অকাল বর্ষণ। বাংলাদেশে আমাদের জীবদ্দশায় এরকম অকাল বর্ষণ আর দেখিনি। চারদিকে ডিপ্রেশন, নিুচাপ। আমরাও প্রচন্ড নিুচাপে ভূগছি। একটার পর একটা গ্রেনেড হামলা হচ্ছে ... রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামনে কোনো আলো দেখতে পাচ্ছি না। তারমধ্যেও আজকের সকালে মনে  হলো ... এই বর্ষণের মধ্যেও একটা আলোর ঝিলিক। সেটি হচ্ছে চট্টগ্রামের থিয়েটার ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। সত্যি কথা বলতে কি, প্রথম যখন হায়দার আমাকে পরিকল্পনার কথা বলে এবং এটাও বলে যে- মেয়র সাহেব আমাদের সঙ্গে আছেন- সত্যি বলতে কি আমার বিশ্বাস হয়নি। কারণ, আমরা রাজনীতিবিদদের বিশ্বাস করতে ভুলে গেছি। রাজনীতিকরা অনেক অঙ্গীকার করেন, অনেক কথা বলেন কিন্তু কোনো কিছু কনসেন্ট্রেট করেন না। না বুঝেই বলেন এবং পরে এক জায়গায় গিয়ে বলেন - না এটা করা গেল না। বা সেই রাজনীতবিদকে হয়তো টেলিফোনেও পাওয়া যায় না। এই যখন পরিস্থিতি তখন আমাদের মেয়র মহোদয় অবশ্যই একটি ব্যতিক্রমী কাজ করলেন। এবং ব্যতিক্রমী কাজটি করলেন এমন মানুষদের জন্য, যারা হয়তো তার বিপক্ষে নাটক করবে। তিনি যখন পথভ্রষ্ট হবেন, তখন দেখা যাবে সেই নাট্যকর্মীরা মেয়রের বিরুদ্ধে ওখানে নাটক করছে। আমাদের রাজনীতিবিদরা নাটককে ভয় পায় এই কারণেই। এসব কারণেই অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন হয়েছিলো। মহিউদ্দিন সাহেব এই ভয়কে অতিক্রম করতে পেরেছেন- এটা একটা বড় দিক। এবং মহিউদ্দিন সাহেবের যে দিকটি আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগে যে, আমরা যারা কোনো দল করি না, তিনি যে দলে আছেন সে দলও করি না, তাদেরকে তিনি আলাদা করে দেখেন না। জানি না রাজনীতির ক্ষেত্রে কি করেন কিন্তু আমরা দেখেছি যে, আমাদেরকে আলাদাভাবে দেখেন না। এটা একটা বড় দিক। তাকে ধন্যবাদ জানাই। আমার মনে হয়েছিলো একটা থিয়েটার কমপ্লেক্স নির্মাণে এই প্রথম ... নাট্যকর্মীরা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত জড়িত থাকতে পারলো। শিল্পকলা একাডেমির যে কমপ্লেক্স হয়েছে, প্রথম দিকে আমরা ইনভলব ছিলাম ... কিছুদিন পর আমাদের তাড়িয়ে দিয়েছে। আবার আরেক দল এসেছে, আবার বন্ধ হলো আবার খোলা হলো কিন্তু সেখানে আমাদের কোনো অংশগ্রহণ নেই। মহানগর নাট্যমঞ্চ - সেখানেও সিটি করপোরেশন থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো যেন নাটকের লোকজন এটা নির্মাণের সময় এর কাজের সাথে যুক্ত থাকতে পারে ... কিন্তু শেষ অব্দি আমরা যুক্ত থাকতে পারিনি। মঞ্চ যেদিন উদ্বোধন হলো সেদিন আমাদের দাওয়াত দেয়া হলো এবং আমরা গিয়ে দেখলাম সম্পূর্ণ অভিনয় অনুপযোগী একটি মঞ্চ আমাদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। তারপর যা হবার তাই হয়েছে ... সেখানে এখন কোনো নাটক হয় না। এই হচ্ছে ঢাকার মঞ্চের ইতিহাস। বাংলাদেশে মঞ্চের কোনো অভাব নেই। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মঞ্চ আছে। কিন্তু সবগুলো মঞ্চ হচ্ছে বক্তৃতা দেওয়ার মঞ্চ এবং সেখানে সাউন্ড সিস্টেমের কারণে বক্তৃতাও ঠিকমতো শোনা যায় না। অথচ আমাদের পাশের দেশ ভারতেই সব জেলায় চমৎকার মঞ্চ আছে, রবীন্দ্রসদন আছে ... শিলিগুড়ি শহরে যেকয়টি মঞ্চ আছে, সরকারের অর্থায়নে, এটাতো কল্পনা করা যায় না আমাদের দেশে। যা হোক একটা চমৎকার কাজ হয়েছে। আমি আজকের এই অভাবিত জনসমাগম দেখেও অনুপ্রাণিত। আমরা প্রতিমাসে ঢাকার বাইরের একটি নাটক ঢাকায় এনে অভিনয় করাই। সেখানে ঢাকার লোকদের খুব অনীহা দেখতে পাই। শুক্রবারে তাদের প্রদর্শনী থাকে ... সাধারণত হাউজফুল হওয়ার কথা ... কিন্তু সেদিনও দেখি দর্শক তেমনভাবে আসেন না। কিন্তু আজকের এই উপস্থিতিতে আমি খুব অনুপ্রাণিত। প্রদীপ, হায়দাররা যে এরকম একটা যোগাযোগ করতে পারবে এটাও আমি ভাবিনি।

মেয়র সাহেবকে আমি অনুরোধ করবো হলের ভাড়াটি যেন যারা ব্যবহার করবে তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। এটা নিয়ে ঢাকায় বেশ সমস্যা এখনো হচ্ছে। নাসিরউদ্দিন ইউসুফ যেটি বললেন ... চমৎকার প্রস্তাব করেছেন ... প্রতিমাসে যদি আমরা ওখানে গিয়ে অভিনয় করতে পারি তাহলে আমাদের যোগাযোগটাও বাড়বে। চট্টগ্রাম নাট্যকর্মীদের জন্য একটা চমৎকার মিলনক্ষেত্র হিসেবে গড়ে উঠুক ... শুধু চট্টগ্রামে নয়, সারা দেশের নাট্যকর্মীরা নাটকের পাশাপাশি যে গবেষণার দিকগুলো আছে, বিভিন্ন দলের নাটকের স্টিল ছবি ইত্যাদি সংরক্ষণে, আর্কাইভের যে দিকগুলো আছে সেগুলো থেকে উপকৃত হতে পারবে। মনে রাখতে হবে চট্টগ্রাম আমাদের ইকোনোমিক ক্যাপিটাল - ভারতের যেমন বোম্বে, নিউইয়র্ক যেমন আমেরিকার। হয়তো নানান কারণে, অবহেলা ... রাজনৈতিক কারণ ইত্যাদি অনেক কারণে হয়ে ওঠেনি কিন্তু চট্টগ্রামে অনেক কিছুই হওয়া উচিত ছিলো। বৃটিশবিরোধী আন্দোলন হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়েছে ... সেই চট্টগ্রামে অনেক কিছুই হতে পারতো কিন্তু তেমনভাবে হয়নি। বরং অনেক সংস্থার হেডকোয়ার্টার আছে চট্টগ্রামে, সেগুলোকেও সরিয়ে ফেলা হচ্ছে ... সেক্ষেত্রে আমি বলবো যে, একটি ক্ষেত্রে অন্তত শুভসূচনা হলো। তার জন্য মেয়রকে ধন্যবাদ জানাই। চট্টগ্রামের নাট্যকর্মীদের একাগ্রতাকে ধন্যবাদ জানাই। সবশেষে ধন্যবাদ জানাই হায়দারকে  যার একনিষ্ঠ লড়াইয়ের কারণে একাজটি সম্পন্ন হতে যাচ্ছে।

আহমেদ ইকবাল হায়দার
ধন্যবাদ। এবার মতামত দিবেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার।

রামেন্দু মজুমদার
চট্টগ্রামের মাননীয় মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং সমাগত সুধীমণ্ডলী। দুজন কর্মদ্যোগী মানুষের সম্মিলনে যে কি বড় মাপের কাজ হতে পারে আজকে সেটার প্রমাণ পেলাম। মেয়র মহিউদ্দিন সাহেবকে আমরা চিনি। ওনার কর্মদ্যোগের কথা আমরা জানি। তিনি চট্টগ্রামে খুবই জনপ্রিয়, সেখানকার নানা ধরনের সামাজিক-রাজনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য। দুতিন বছর আগে তিনি চট্ট্রগ্রামে স্বাধীনতা যুদ্ধের উপর একটি চলচ্চিত্র নিমার্ণের উদ্যোগ নিয়ে সফল হয়েছিলেন। আজকে এই নাটকের ক্ষেত্রে তিনি যে সহযোগিতা দিয়েছেন তার জন্য চট্টগ্রামে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি থিয়েটার হতে পারলো। আহমেদ ইকবাল হায়দার আমাদের দীর্ঘদিনের সহযাত্রি ... সে-ও যেভাবে লেগে থেকে কাজটি করলো তা প্রশংসনীয়। আমাদের সাথে অনেক পরামর্শ করেছে, কিন্তু আসলে আমিও প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে শেষ পর্যন্ত এটি বাস্তবায়িত হবে। কিন্তু কয়েকমাস আগে সেখানে গিয়ে দেখেছি যে কিভাবে সব হয়ে গেল আর সেই স্পেসটাই চমৎকারভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে নানা কর্মকাণ্ডের জন্য। বিদেশে যেখানেই গেছি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখেছি যে, মিউনিসিপাল থিয়েটার আছে। প্রত্যেক মিউনিসিপালটির একটি নিজস্ব থিয়েটার আছে। তার অর্থায়নে চলে এবং একটি অলিখিত প্রতিযোগিতা আছে- কার থিয়েটার কত ভালো হয় , সেই বিষয়ে। চট্টগ্রামের মতো ঢাকায়ও একটি মহানগর থিয়েটার হয়েছিলো। কিন্তু তার নির্মাণ ও পরবর্তী  অবস্থা সম্পর্কে মামুনুর রশীদের কাছে শুনেছেন। সেটি এখন প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। ওখানে এখন রাজনৈতিক সভা সেমিনার হয় আর হয় কিছু তথাকথিত বাণিজ্যিক নাটক। চট্টগ্রামের থিয়েটার কমপ্লেক্সটি এমন হবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস।

এই থিয়েটার কমপ্লেক্সটির ব্যাপারে আমার পরামর্শ হচ্ছে- বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে যে যে বিষয় শুরু করা সম্ভব এবং যেটা প্রথমে করা সম্ভব, আর্থিক দিক বিবেচনা করে, সেই সব ক্ষেত্রকে প্রাধান্য দেয়া। সবগুলো একসঙ্গে শুরু করা উচিত হবে না। ভাড়ার ব্যাপারটা অবশ্যই দলগুলোর আয়ত্বের মধ্যে রাখতে হবে। আমরা চাই প্রতি রাতে যেন সেখানে নাটক মঞ্চস্থ হয় তা নিশ্চিত করা। ঢাকার দলগুলোও যেন সেখানে গিয়ে নাটক করতে পারে, অন্তত মাসে একদিন করে। আমি থিয়েটার ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রামের সাফল্য কামনা করছি। সবাইকে ধন্যবাদ।

আহমেদ ইকবাল হায়দার
ধন্যবাদ। এবারে বক্তব্য রাখবেন বিশিষ্ট নাট্যজন আতাউর রহমান।

আতাউর রহমান
চট্টগ্রামের মাননীয় মেয়র জনাব মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সমাগত সুধীবৃন্দ। আপনারা শুনলেন যে, একটা বড় ধরনের কাজ হয়েছে। আমি কেবল কিছু পরামর্শ দিতে চাই। এর বেশি কিছু বলব না। তার আগে আহমেদ ইকবাল হায়দার এর কথা একটু বলে নিই। তার মতো এতো নিবিষ্ট নাট্যকর্মী আমি আমার দীর্ঘ নাট্যজীবনে আর দেখিনি। এমন হয়ে দাঁড়ালো যে কৌমার্যব্রত গ্রহণ করলো ... বিয়ে করবে না, নাটকই করবে। বিয়ে করলে নাটকে ইনভলভমেন্ট কমে যাবে। তো একটি মেয়ে জোর করে ওকে সংসারী করেছে এখন। তারপরেও কতটুকু সংসারী হয়েছে জানি না। নাটক পাগল মানুষ সে। তার সাথে এবার যোগ দিয়েছেন মাননীয় মেয়র। এ প্রসঙ্গে বলতে হয়- অনেকদিন আগে ... আলী যাকেরও ছিলেন ... আমাদের এক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সাথে মিটিং ছিলো। নাম বলবো না। তো উনি বললেন যে, আপনাদের মঞ্চ গড়ে দেয়া নানা সমস্যা। এগুলো তো আমাদের প্রায়োরিটি না। আমাদের প্রায়োরিটি রয়েছে চাল আমদানী করা, গম আমদানী করা। তখন আমরা বলেছিলাম- তাহলে আর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় রাখা কেন? এটা বন্ধ করে দিলেইতো হয়। তো আজকে একজন রাজনীতিবিদ যদি বলতে পারেন যে, একটা জাতিকে চেনা যায় তার মঞ্চ দিয়ে, তার সংস্কৃতি চর্চা দিয়ে (যেটা মহিউদ্দিন সাহেব বললেন)- সেটা আমাদের জন্য পরম পাওয়া হয়ে দাঁড়ায়। যার জীবন্ত প্রতিভূ আমার পাশে ডানদিকে বসে আছেন। তাঁর সাথে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় নেই। আমি এই সুযোগে তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।

আমার পরামর্শগুলো হলো ... যেহেতু স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছে, আরো বড় স্বপ্ন দেখতে চাচ্ছি, দিল্লীর এনএসডি’র মতো, কিংবা লন্ডনের একাডেমি অব ফাইন আর্টের মতো। রয়েল একাডেমির মতোও যে হবে না কে বলতে পারে- আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পরে? পরামর্শগুলো হলো ১. এই ইনস্টিটিউট থেকে বছরে দুটো নিজস্ব প্রযোজনার কথা ভাবা যেতে পারে। অথবা তাদের রিপার্টরী কোম্পানী থাকবে। নাট্যদলগুলোর নিয়মিত প্রদর্শনীতো থাকবেই, এর বাইরেও দুটি নাটক কিংবা অন্তত একটি প্রযোজনা থাকবে। এর নির্দেশক চট্টগ্রামের হতে পারে বা দেশের বা দেশের বাইরের যেকোনো কীর্তিমান নির্দেশকেরও হতে পারে। ২. দেশ-বিদেশের নাট্যদলগুলোকে বছরে বা দুবছরে একবার আমন্ত্রণ জানিয়ে ভালো নাট্য প্রযোজনা দেখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সেটা ভারতের হোক কিংবা ইউরোপ বা আমেরিকার কোনো নাট্যদলই হোক। ৩. আমাদের লোকজ আঙ্গিকগুলোর ব্যাপারেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যেতে পারে। এখানে নাসিরউদ্দীন ইউসুফ আছেন, তারা ঢাকা থিয়েটারের হয়ে যেটা চেষ্টা করছেন, সেটাকে আরো গতিশীল করা যেতে পারে। ৪. নিয়মিত প্রকাশনা ছাড়াও বিষয়ভিত্তিক নাটকের পুস্তক প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। আমি বিষয়ভিত্তিক বলছি- লাইট ডিজাইন, মিউজিক, সেট ইত্যাদি বিষয়ের ... অভিনয়, নির্দেশনা সব বিষয়ে প্রকাশনা হতে পারে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মঞ্চনাটকের সিডি সংরক্ষণ ও প্রকাশনার ব্যবস্থা হতে পারে। নাটকের অডিও প্রকাশ করতে পারে। ক্যাসেট লাইব্রেরি থাকতে পারে। অর্থাৎ একটা আর্কাইভ যদি সাথে থাকে, খুব ভালো হয়। ৫. ইনস্টিটিউট পরিচালনায় ... ঠিক এখন থেকেই হতে হবে তা নয়, পরেও হতে পারে - দুটো ভাগ থাকবে। একটি সৃজনশীল দিক অন্যটি প্রশাসনিক দিক। ইনস্টিটিউট পরিচালনার জন্য বাৎসরিক বাজেট তৈরি করতে হবে। একটা ফান্ড তৈরি করতে হবে- বিভিন্ন দান-অনুদানের মাধ্যমে বা বিদেশি কোনো অনুদান নিয়ে অন্তত ৫০ লক্ষ টাকার যদি একটা ফান্ড মেয়র সাহেব তৈরি করে যান, তাহলে সেটা থেকে নিয়মিত আয় হতে পারে। অথবা আরেকটু এম্বিশাস হয়ে বলা যায় এটাকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানী করে শেয়ার ছাড়া যেতে পারে। টাকার সমস্যাটা এভাবে মেটানো হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে কিন্তু বিপদ হতে পারে। এই স্বপ্নের কথা বলে আমি বিদায় নিচ্ছি, সবাইকে ধন্যবাদ।

আহমেদ ইকবাল হায়দার
ধন্যবাদ। এখানে অনেক সাংবাদিক বন্ধু আছেন, আপনাদের যদি কোনো প্রশ্ন থাকে আমরা বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে উত্তর দেবার চেষ্টা করবো। কারো কােনো প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন।

জনৈক
প্রজেক্টটা করতে কত টাকা ব্যয় হয়েছে তা জানতে চাই।

আহমেদ ইকবাল হায়দার
এরই মধ্যে দুকোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। আরো কিছু খরচ বাকি আছে। আড়াই কোটি টাকা ধরতে পারেন।

জনৈক
নীতিমালা কি এখনো ঠিক হয়নি?

আহমেদ ইকবাল হায়দার
না, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা নীতিমালা করে ফেলবো।

জনৈক
এটার নিয়ন্ত্রণে কে বা কারা থাকবেন?

আহমেদ ইকবাল হায়দার
যদিও এটা সিটি করপোরেশনের প্রজেক্ট তবুও এটার একটা বডি থাকবে, যেটা গভর্নিং বড়ি। তারা নীতিমালা নির্ধারণ করবে। পরবর্তী পর্যায়ে সেটা এই প্রজেক্টে যারা আছেন তারাই চালাবেন, ঐ নীতিমালার আলোকেই।

এরপর আমাদের জন্য মতামত নিয়ে আসছেন শ্রদ্ধেয় নাট্যব্যক্তিত্ব আলী যাকের।

আলী যাকের
মাননীয় মেয়র ও নাট্যপ্রেমিক সুধীবৃন্দ। সকলকে আমি আমার শুভেচ্ছা জানিয়ে অত্যন্ত সংক্ষেপে দু-একটি কথা বলবো। ঢাকার শিল্পকলা একাডেমির যে মঞ্চটা হয়েছে, সেটির যখন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়, তখন আমাকে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছিলো ... সেখানে আমি বলেছিলাম যে, যেদিন আমি মঞ্চটিতে নাটক করতে পারবো সেদিন বিশ্বাস করবো যে, মঞ্চটি হয়েছে। তো সেই মঞ্চটি হয়েছে ... ভারি সুন্দর ও আধুনিক মঞ্চ। চট্টগ্রামের মঞ্চটি এখনো আমার দেখা হয়নি। বন্ধুবান্ধবদের কাছে শুনেছি, চট্টগ্রামের মঞ্চটি ঢাকার মঞ্চটির চেয়েও ভালো।

আতাউর যে কথাটি বলে গেল যে, হায়দার বলেই এটা সম্ভব হয়েছে ... সেটা বোধহয় বাড়িয়ে বলেনি। বললে বোধহয় বেশি বলা হবে না যে, চট্টগ্রাম যেমন সমগ্র বিষয়েই আমাদের বাংলাদেশকে এবং বাঙালিকে পথ দেখিয়েছে, বিভিন্ন সময়ে, সেইভাবে নাট্যজনদের নিজস্ব একটি ক্ষেত্র তৈরি করার ব্যাপারেও চট্টগ্রামই পথ দেখালো। আমরা মাস্টার দা’ সূর্যসেন থেকে আরম্ভ করে প্রীতিলতা হয়ে পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের জন্ম- এসমস্তই বিশাল মহানগরীটিতে হতে দেখেছি এবং সেই নগরীতেই আরেকটি বিপ্লব সংগঠিত হলো। এই বিপ্লবটি সংগঠিত হওয়া সম্ভব হয়েছে যার কল্যাণে, তিনি হচ্ছেন - মহিউদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রামের মেয়র। নগরপিতার নানাবিধ কাজ থাকে, আমরা সকলেই তা জানি। তার প্রধান কাজটি হচ্ছে খাজনা আদায় করা। তার কাজ হচ্ছে নগরের উন্নয়ন করা, রাস্তাঘাট ভালো রাখা। ... আতাউর যেমন বলে গেল ... কালচারাল মিনিস্টার বলেছিলেন, একসময় যে- সরকারের কাজের প্রায়োরিটি নানাবিধ আছে, কালচার দেখার প্রায়োরিটি কোথায়? ... কিন্তু একজন আদর্শ নগরপিতার প্রায়োরিটিতে সংস্কৃতি এবং তার চর্চা একটি বিশেষ স্থান দখল করে থাকে। পৃথিবীর উন্নত অনেক রাষ্ট্রেই নগরপিতাগণ এই দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তবে তারা সরাসরি কাজের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ন্ত্রণ করেন না। নিয়ন্ত্রিত হয় সেখানকার নাট্যকর্মী বা নাট্যজনদের দ্বারা। এবং আমি এই পর্যন্ত যা জানি, মহিউদ্দিন চৌধুরীর ব্যাপারে ... তাঁকে আমি অনেকদিন ধরে চিনি ... আমি নিশ্চিত যে, চট্টগ্রামের মঞ্চেও, মঞ্চকেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নিয়ন্ত্রণ করবেন না বরং সহযোগিতা ও সহায়তার মাধ্যমে সামনে বেড়ে যেতে সাহায্য করবেন। আমি খুবই অবাক বিস্ময় প্রকাশ করছি যে, কেমন করে আমাদের মতো হতদরিদ্র ও দূর্ভাগা দেশের একজন নগরপিতা এটিও মনে করতে পারলেন যে, কেবল রাস্তা তৈরি নয়, কেবল ভবন তৈরি নয়- নগরের সংস্কৃতি নির্মাণও তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তাঁর মতো অন্যান্য নগরপিতারাও যদি একই রকম ভাবতেন তাহলে দেশ সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারতো। সংস্কৃতি এগিয়ে গেলে অর্থনীতিও এগিয়ে যেত এবং রাজনৈতিক সংকীর্ণতা হয়তো এতদূর নামতো না। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রধান অনুপ্রেরণাই ছিলো আমাদের সংস্কৃতি। আমাদের ভাষা, আমাদের ধর্ম এ-সবই সংস্কৃতির অংশ। আমাদের সংস্কৃতিই কিন্তু আমাদের শিখিয়েছে যে, পাকিস্তান এবং আমরা এক জাতি নই। অথচ দূর্ভাগ্য যে, এক-দুইজন রাজনীতিবিদ বাদে কেউই মনে করেন না যে, রাজনীতি সংস্কৃতির অন্তর্গত- সংস্কৃতি রাজনীতির অন্তর্গত নয়। এই জন্যই সংস্কৃতি যে ভালোবাসা আমাদের শেখায়, সেখান থেকে আমরা ক্রমশই দূরে সরে যাচ্ছি। ঠিক এমন একটা সময়ে চট্টগ্রামের এই থিয়েটার ইনস্টিটিউট আমাদেরকে আশার আলো দেখায়। সবাইকে ধন্যবাদ।

আহমেদ ইকবাল হায়দার
ধন্যবাদ। এবার আসবেন আমাদের সব্যসাচী লেখক শ্রদ্ধেয় সৈয়দ শামসুল হক।

সৈয়দ শামসুল হক
চট্টগ্রামের মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী ও যারা উপস্থিত আছেন সবাইকে শুভেচ্ছা। আমার পরামর্শ দেবার কিছু নেই। বিনিময়যোগ্য আমার কাছে শুধু বিস্ময় আছে। এইরকম একটি সুন্দর ঘটনার জন্য। সংক্ষেপে দু’একটি কথা বলতে চাই। এখানে গোড়া থেকেই একটা সুর বেজে উঠেছে- যে, মেয়র সাহেব বলেছেন ‘চট্ট’র সাথে গ্রাম মিলিয়ে তবে ‘চট্টগ্রাম’, সুতরাং চট্টগ্রামের অবস্থা খারাপ। আমি বলবো ঢাকার অবস্থা আরো খারাপ- ঢাকা হচ্ছে ‘ঢাকা’, একেবারে আবৃত।

আসলে আমরা সবাই দ্বীপে পরিণত হয়েছি। এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো আইয়ুব খাঁর মার্শাল ল’র সময় থেকে। চট করেই সমাজের ভেতরে একটা আচমকা ঘটনা ঘটলো ... আমরা বিভক্ত হতে শুরু করলাম। কেউ দালালে পরিণত হলো, কেউবা দেশপ্রেমিকে- দুটোই কিন্তু আমাদের নিজেদের ভেতর ছিলো। আমরা আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম, আমরা দ্বীপে পরিণত হতে চলেছি। বাংলাদেশে এই বিচ্ছিন্নতাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় দূর্ঘটনা। মানুষে মানুষে, প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানে, জনপদে জনপদে- এই বিচ্ছিন্নতাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় দূর্ঘটনা। মানুষ যদি মানুয়ের সাথে মিশতে পারতো ... যেমন চট্টগ্রামে আজকে দেখছি ... যে ঘটনার কারণে আমরা এখানে উপস্থিত, তাহলে দেশটার চেহারা এরকম হতো না। এখানে মত বিনিময় হয় না- মত ছুঁড়ে দেয়া হয়। এবং নিজের মতটিকে শ্রেষ্ঠ, বলবান এবং মহৎচিত্ত মনে করা হয়। যার ফলে আমরা যে যেখানে আছি - রক্তাক্ত মুখ নিয়ে আছি অধিকাংশ। দু’একজনের মধ্যে যে স্বাস্থ্য ও আলো দেখতে পাচ্ছি, সেটাও কিন্তু চিরস্থায়ী নয়।

এতো দুঃসময়, এতো দূর্ঘটনার পরও কিন্তু সুসংবাদও আছে। এবং এই সুসংবাদটা কেবল আশার শরীরে নয়, আশার আকারে নয়- একেবারে বাস্তব আকারে। তো আমি পরামর্শ আকারে কয়েকটি কথা বলতে পারি। আপনাদের কাজের মধ্যে কিছু একাডেমিক কার্যক্রমের উল্লেখ আছে। আমি চাইবো এর জন্য একটি ক্যাম্পাস ... বা ঠিক ক্যাম্পাস নয় ধরুন, রেস্ট হাউজ বা ডরমেটরি, যাই বলুন না কেন নির্মাণ করলে ভালো হবে। শিক্ষার্থীরা যেন থাকতে পারেন আর আমরা যারা দূর থেকে যাব আমরাও যেন থাকতে পারি। এবং আমি চাই মেয়র সাহেব থাকতে থাকতেই এটা যেন করে যান। থাকতে থাকতে বলছি একারণে যে, কখন কে আসবে বলাতো যায় না। দ্বিতীয়ত, এমন একটা কনস্টিটিউশনাল দিক ঠিক করে যাবেন যেন সিটি করপোরেশন বা সরকার এটার কার্যক্রমের উপর অহেতুক খবরদারি করতে না পারে। সংস্কৃতির প্রশিক্ষণের বদলে যেন এখানে দলীয় রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ না হতে পারে। বাংলা একাডেমিও সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো- সেই ৫৪ সালে ২১ দফা আন্দোলনের একটি প্রধান আন্দোলন হিসেবে। সেই বাংলা একাডেমি কিভাবে সরকারি নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে সেটা আমরা সকলেই জানি। এরফলে এখন একাডেমির মান কোথায় গেছে তাও আমরা জানি। শিল্পকলা একাডেমির কথাতো আমার পূর্বে বক্তাগণ বলেই গেলেন। কাজেই এধরনের নিয়ন্ত্রণ যেন চট্টগ্রামে না হয় সে জন্য আপনি (মেয়র) থাকতে থাকতেই একটি নীতিমালা করে যাবেন। এবং আপনি তা পারবেন। সবাইকে আবারো ধন্যবাদ।

আহমেদ ইকবাল হায়দার
ধন্যবাদ। এবার মতামত দিবেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী।

জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী
চট্টগ্রামের স্বনামধন্য মেয়র জনাব মহিউদ্দিন চৌধুরী ও উপস্থিত সুধীবৃন্দ। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে এই অনুষ্ঠানে এসেছি। আমি জানি না কিভাবে থিয়েটার ইনস্টিটিউট যারা গড়ে তুলেছেন তাদের নজরে পড়লাম। কারণ আমিতো প্রত্যক্ষভাবে কোনো নাট্যগোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত নই। নাটকের ব্যাপারে আগ্রহ আছে। সাহিত্যর ছাত্র হিসেবে এবং সংস্কৃতির সঙ্গে সাহিত্যের যে একটি যোগ আছে, অর্থাৎ সাহিত্যের একটি বড় অংশ জুড়ে আছে নাট্যসাহিত্য- সেই সুবাদে ভালো নাটক মঞ্চস্থ হলে দেখতে যাই। মহিউদ্দিন সাহেবের সাথে আমার আগে থেকেই পরিচয় আছে এবং আমি সংস্কৃতি বিষয়ে তার এই পৃষ্ঠপোষকতার ব্যাপারটির সাথেও পরিচিত। অনেকবার আমি চট্টগ্রাম গেছি তার নিমন্ত্রণে। আমি তাঁর আতিথ্য গ্রহণ করেছি। দূর থেকে তাঁকে প্রশংসা করেছি, তার সাহসের জন্য। অনেক ঝড় ঝাপটার মধ্যেও ... রাজনৈতিক ঝড় ঝাপটার মধ্যেও তিনি যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছেন, সে খবরও আমি রাখি। চট্টগ্রাম অনেক কিছুরই উদ্যোক্তা, আমরা যে ১৬ ডিসেম্বরে উৎসব করি এটা প্রথমে শুরু করেছে চট্টগ্রাম। ইউরোপের অনেক শহরের সাথে ফেস্টিভাল জড়িয়ে আছে। যেমন এডিনবরা ফেস্টিভাল ... তো আমি বহু আগে একটি লেখায় উল্লেখ করেছিলাম যে, চট্টগ্রাম ফেস্টিভাল বা চট্টগ্রাম উৎসব আয়োজন করা হোক। একসময় তা বড় আকার ধারণ করবে। আজ এই যে ইনস্টিটিউট তৈরি হলো একসময় এটাও, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এটাও জাতীয় আকার ধারণ করবে। যদিও এটি চট্টগ্রামে কিন্তু এর চরিত্রটা হবে ‘জাতীয়’। এখানে সারাদেশের নাট্যকর্মীরা একত্রিত হবে।

আমার আগে এক বক্তা বলে গেছেন যে, তারা যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যক্রম শুরু করেন। আমারও একই পরামর্শ। আমি বেশি কথা বলতে চাই না। বেশি কথা বলার সুযোগও এখানে নেই। প্রশংসা করা ছাড়া আর কিইবা করার আছে! আমি কৃতজ্ঞ মেয়র সাহেবের কাছে, তিনি আমাকে মনে রেখেছেন। সবাইকে ধন্যবাদ।

আহমেদ ইকবাল হায়দার
এবারে বক্তব্য রাখবেন একুশের প্রথম কবিতার রচয়িতা ভাষাসৈনিক মাহবুবুল আলম চৌধুরী।

মাহবুব-উল আলম চৌধুরী
চট্টগ্রামের সিটি করপোরেশনের মেয়র জনাব এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং উপস্থিত সুধীবৃন্দ। আমি মহিউদ্দিন চৌধুরীকে ভয়ানক ভয় পাই। চট্টগ্রামে আমি যখন যাই, যেখানে থাকি বলে দিই - আমি যে চট্টগ্রামে আছি এটা যেন মহিউদ্দিন সাহেব না জানেন। আমাকে ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও সক্রিয় করার জন্য তিনি খবর পেলেই প্রাইমারি স্কুলে নিয়ে ছড়া পড়াবেন, কবিতা পড়াবেন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত করাবেন। এটা তার স্বভাবে পরিণত হয়েছে। একবার ... আওয়ামী লীগ আমলে ... তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে সিটি করপোরেশন থেকে আমাকে একুশে পদক দেয়া হবে। অনুষ্ঠানে তিনি বললেন যে, মাহবুবুল আলমকে আওয়ামীলীগ চিনলো না। একুশের প্রথম কবিতার লেখককে কোনো পদক দিলো না। আমি তাঁকে পদক দিলাম- একুশে পদক দিলাম। সুতরাং উনি (মেয়র) খুব ভয়ংকর মানুষ, আমি ওনাকে ভয় পাই।

এখন আমি চট্টগ্রামের কিছু গৌরবের কথা বলবো। আমি যখন ছোট, ক্লাশ থ্রিতে পড়ি- ১৯৩৬ সালে, তখন চট্টগ্রামে পাঁচটি থিয়েটার ও যাত্রার পোষাকের দোকান ছিলো। তখন চট্টগ্রামে স্কুলে স্কুলেও নাটক হতো। চট্টগ্রামের যেটাকে গান্ধি ময়দান বলা হয়, সেখানে নাটক হতো। আর্যসংগীতের ওখানে হতো। মুসলিম হল যখন সরকার অধিগ্রহণ করে তখন আমাদের সাথে চুক্তি হয় যে, নাটক করার মতো একটি হল তারা নির্মাণ করে দিবে। কারণ, মুসলিম হল ছিলো একটি ট্রাস্টির অধীনে, যে ট্রাস্টিতে আমাদের পরিবারের সদস্যরা ছিলো। কিন্তু সেটা তারা করে দেন নাই। এবং পরে তারা এমন নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করলেন যে, নাটক করাই মুশকিল হয়ে গেল। গৌরব আরো আছে। ১৯৩০ সালে অস্ত্রাগার দখল করেছিলো - আমি ‘দখল’ বলি ‘লুন্ঠন’ বলি না। চট্টগ্রামে আমরা প্রথম নবনাট্য আন্দোলন শুরু করি ১৯৫০ সালে দিকে। ১৯৫০ সালে আমরা প্রান্তিক নবনাট্য সংঘ বলে একটি নবনাট্য গঠন করি। সেখানে আমরা খুব কম খরচে চট দিয়ে মঞ্চ সাজিয়ে প্রগতিশীল নাটক মঞ্চস্থ করি। তখন কলিম শরাফী আমাদের সঙ্গে যোগ দেন। তারই পরিচালনায় পথিক, ছেঁড়াতার, নবান্ন  ইত্যাদি আমরা মঞ্চে আনি। প্রান্তিক নবনাট্য সংঘের আগে পেশাদার নায়িকাদের দ্বারা অভিনয় করানো হতো। নবনাট্য সংঘে আমাদের স্ত্রীরাই যেমন- কলিম শরাফীর স্ত্রী, আমার স্ত্রী এবং অন্যান্য আরো অনেককে দিয়ে আমরা অভিনয় করাই। এটা একটা বিরাট গৌরবের বিষয়। পাকিস্তান দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগ করে জিন্নাহ সাহেব যখন বললেন যে, উর্দু এ্যালোন শ্যাল বি দ্যা স্টেট ল্যাঙ্গুয়েজ অব পাকিস্তান - তখন তা সরাসরি মোকাবেলা করা যাবে না ভেবে আমরা চট্টগ্রাম থেকে ‘সীমান্ত’ নামে একটি পত্রিকা বের করি ১৯৪৭ সালে। সেখানে আমরা তার প্রতিবাদ করেছিলাম। ‘সীমান্ত’ পত্রিকাটি পাঁচ বছর চলেছিলো। ... চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা করা হয়। এইগুলো অবশ্যই চট্টগ্রামের গৌরব গাথা।

নাটকের সাথে আমার সম্পর্ক বহুদিনের। চল্লিশের দশকে দারোগা নামে একটি নাটক লিখি। যার ভূমিকা লিখেছিলেন হুমায়ুন কবির এবং পঞ্চাশের দশকে লিখি আগামীবার নামে আরেকটি নাটক। এছাড়া নবনাট্য সংঘ নিয়ে গ্রামে-গঞ্জেও গেছি ... এখানে কলিম শরাফী উপস্থিত আছেন, তিনিও ছিলেন সাথে ... তো সেই চট্টগ্রামে এখন একটি থিয়েটার হল হতে যাচ্ছে। মহিউদ্দিন সাহেব আর আহমেদ ইকবাল হায়দারের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই কাজ হলো, চট্টগ্রামবাসি হিসেবে এটা আমার গৌরবের বিষয়। চট্টগ্রাম থেকে লেখা হয়- নানা বরণ গাভীরে ভাই একই বরণ দুধ, জগৎ ভ্রমিয়া দেখি একই মায়ের পুত অর্থাৎ সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। এই ঐতিহ্য ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাবে এবং এই ঐতিহ্য চট্টগ্রাম রক্ষা করবে। আমি এই আশাবাদ ব্যক্ত করে বক্তব্য শেষ করছি।

আহমেদ ইকবাল হায়দার
এবার বক্তব্য রাখবেন শিক্ষাবিদ শামসুল আলম সাইদ।

শামসুল আলম সাইদ
১৯৬৭ সালে চট্টগ্রামে অধ্যাপনা জীবনের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যার সান্নিধ্যে আছি, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সেই মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী ও অন্যান্য সুধীবৃন্দ। আমি  বেশি কথা বলবো না। আমার চেয়ে গুনী ব্যক্তিরা বলে গেছেন। আমি সাহিত্যের ছাত্র। চট্টগ্রামে যে ইনস্টিটিউট হচ্ছে, তার ব্যাপারে আমি বলতে চাই এখানে যে সমস্ত কোর্স হবে তার যেন সার্টিফিকেট দেয়া হয়। এবং এই সার্টিফিকেট নিয়ে শিক্ষার্থীরা যদি আরো উন্নত ডিগ্রী নিতে চায় তাহলে যেন তা ব্যবহার করতে পারে। সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে বক্তব্য শেষ করছি।

আহমেদ ইকবাল হায়দার
কারো কোনো প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন।

জনৈক
কতটুকু জায়গার মধ্যে এই কমপ্লেক্সটা হয়েছে?

আহমেদ ইকবাল হায়দার
পুরো এলাকাটা প্রায় এক একর। একটু কম বেশি হতে পারে।

জনৈক
এই ইনস্টিটিউট যেন কারো নিয়ন্ত্রণে না থাকে সে বিষয়ে বক্তারা বলেছেন। এ ব্যাপারে মেয়র মহোদয়ের বক্তব্য শুনতে চাই।

এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী
আমার মনে হয় নিয়ন্ত্রণমুক্ত হবে ব্যাপারটা ঠিক না। কাউকে না কাউকেতো নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে। বলতে পারেন দলীয়করণ যেন না করা হয়। হ্যাঁ, কোনো একটা প্রতিষ্ঠান বা কোনো একটা দল বা কোনো একটা গোষ্ঠীর মধ্যে যেন কর্তৃত্বটা সীমাবদ্ধ না থাকে সে ব্যাবস্থা হবে বলে আমি আশ্বাস দিতে পারি।

আহমেদ ইকবাল হায়দার
এবার মতামত প্রকাশের জন্য মঞ্চে আসবেন নাট্যজন লাকী ইনাম।

লাকী ইনাম
আজকের এই অসাধারণ উল্লেখযোগ্য আয়োজনে উপস্থিত সম্মানিত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী, ঢাকা ও চট্টগ্রামের নাট্যবন্ধুরা এবং সাংবাদিক বন্ধুরা আমার অভিনন্দন গ্রহণ করুন। আমি কোনো সাজেশান দেব না। হায়দার যখন চট্টগ্রাম থেকে ফোনে আমাকে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য বললো, তখন, সত্যি বলতে কি মনের কোথায় যেন একটু কাঁটার মতো বিঁধেছিলো। আমরা ঢাকায় করতে পারলাম না, কিন্তু ওরাতো পারলো। যাক, কিছু একটাতো হলো। চট্টগ্রাম দিয়েই না হয় শুরু হলো। আমরা আশা করি এই ইনস্টিটিউট সুন্দর ও সফলভাবে এগিয়ে যাবে। আমরা ঢাকা থেকে গিয়ে নাটক করবো, প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করবো, চট্টগ্রাম ও ঢাকার নাট্যকর্মীদের মধ্যে একটা সাংঘাতিক রকমের হৈচৈ পড়ে যাবে- সেই সুদিনের প্রত্যাশা করছি। সবাইকে ধন্যবাদ।

আহমেদ ইকবাল হায়দার
ধন্যবাদ । আমরা অনুষ্ঠানের প্রায় শেষের দিকে চলে এসেছি। এ পর্র্যায়ে আমাদের মাঝে আসবেন নাট্যজন তবিবুল ইসলাম বাবু।

তবিবুল ইসলাম বাবু
সবাইকে শুভেচ্ছা। মেয়র মহোদয়, আপনার কথা অনেক শুনেছি। খবরের কাগজে আপনার সাহসিকতার অনেক প্রমাণ পেয়েছি। আপনি একজন ধার্মিক ব্যক্তি। কিন্তু ধর্মান্ধ নন। আপনি ধর্মীয় মৌলবাদীও নন। আপনি একজন মুক্ত মনের মানুষ- তার পরিচয় হলো থিয়েটার ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম। দুঃখজনক ভাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগ বোধহয় বন্ধ হয়ে গেছে। তারপরেও আপনি এটা করেছেন- এটা অত্যন্ত আনন্দের কথা। অদ্ভুত আঁধার নেমেছে বাংলাদেশে। তো আপনার এই কাজের মাধ্যমে আঁধারের মধ্যে আমরা আলো দেখতে পাচ্ছি। অনেকেই আপনি মেয়র থাকাকালীন সময়ের মধ্যে কিছু নীতিমালা প্রণয়নের কথা বলেছেন। আপনিতো আর সবসময় মেয়র থাকবেন না। কোনো ইতর জাতীয় কেউ যদি মেয়র হয় বা মৌলবাদি কেউ যদি মেয়র হয় তো বলবে- এখানে নাটক করা যাবে না। টাকাটা যেহেতু সিটি করপোরেশনের, সীমাবদ্ধতা কিছুটাতো থাকবেই। আপনি অনেক সাহসী, সেজন্য আপনি বলেছেন- কোনো রাজনৈতিক দলের আখড়ায় পরিণত হবে না। তো আপনি সাফল্যের সাথে নীতিমালা করবেন, এই প্রত্যাশা রেখে আমি বিদায় নিচ্ছি। সবাইকে ধন্যবাদ।

আহমেদ ইকবাল হায়দার
ধন্যবাদ। সুধীবৃন্দ। আমরা ওয়ার্কিং ডে-তে এই অনুষ্ঠান করেছি। তারপরও সবাই এসেছেন। তবে সবারই একটু তাড়া আছে। আমি অনুষ্ঠান আর দীর্ঘ করবো না। সবার বক্তব্য শুনতে পারলে আমরা আরো উপকৃত হতাম। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ, যারা এসেছেন। এখানে উপস্থিত আছেন - শ্রদ্ধেয় কলিম শরাফী, খালেদ খান, ড. ইনামুল হক, কবি নুরুল হুদা। আরো উপস্থিত আছেন শ্রদ্ধেয় কেরামত মাওলা, এস এম মহসীন, মান্নান হীরা, কবি ত্রিদিব দস্তিদার, দেবপ্রসাদ দেবনাথ, কামালউদ্দিন কবির, জিল্লুর রহমান জন, ঝুনা চৌধুরী, ইসরাত নিশাত, পীযূষ দা’। আমাদের এই উদ্যোগের সাথে একাত্ম হয়ে সবাই এসেছেন। আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। আমরা ৭, ৮, ৯ অক্টোবর’০৪ সাংস্কৃতিক মেলার আয়োজন করেছি, চট্টগ্রামে। আপনারা সবাই আমন্ত্রিত।

এবার আপনাদেরকে চট্টগ্রামে আসার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানাবেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সচিব, ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী জনাব মোস্তফা কামাল। আমি তাঁকে মঞ্চে আসার জন্য অনুরোধ করছি।

মোস্তফা কামাল
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে সদ্য নির্মিত থিয়েটার ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রামের উপর আজকের এই মতবিনিময় সভায় উপস্থিত এদেশের বরেণ্য নাট্যকর্মীবৃন্দ এবং সাংবাদিকবৃন্দ- আমার শুভেচ্ছাগ্রহণ করুন। চট্টগ্রাম থেকে এসে আপনাদের সবাইকে একসাথে পেয়ে খুব ভালো লাগছে, অভিভূত হয়েছি। আমাদের আগমন সার্থক হয়েছে। আপনারা যে মন্তব্যগুলো করেছেন, যে মতামত দিয়েছেন- এগুলোকে মাথায় রেখেই আমাদের নীতিমালা আর কর্মপরিকল্পনা করবো। আপনাদের এসব সাজেশনসহ একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করারও ইচ্ছা আছে। আমি কথা বাড়াবো না। আপনাদের সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি আগামী ৭, ৮, ৯ অক্টোবর চট্টগ্রামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। আশা করি আপনার চট্টগ্রামে গিয়ে স্বচক্ষে দেখে আসবেন আমাদের ইনস্টিটিউট। এখন আমি আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি আমাদের আজকের শেষ আয়োজন দুপুরের ভোজনে। আমরা একসাথে আজকের দুপুরের ভোজ সারবো। আপনাদের সবাইকে আবারো ধন্যবাদ।

[অনুষ্ঠানটি ক্যাসেট থেকে অনুলিখন করেছেন থিয়েটারওয়ালার সহকারী সম্পাদক- সাইফ সুমন। অনুলিখনটি সম্পাদক কর্তৃক সম্পাদিত]