Full premium theme for CMS
বন্ধ্যাত্ব ঘুচিয়ে এগিয়ে যাক থিয়েটার
Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..
স ম্পা দ কী য়
বাংলার নাট্যচর্চা বর্তমানে পার করছে এক শ্লথাবস্থা। নাট্যপাড়া আজ মুখরিত হয় না দর্শকভিড়ে, নাট্যকর্মীরা ঘিরে বসে না জমজমাট আড্ডায়, খুঁজে পায় না তাদের স্বপ্নের বসতবাটী। স্বপ্ন ব্যতীরেকে সৃষ্টি এক ঘোলাটে যাত্রা। সৃষ্টির যাত্রাকে স্বপ্লীল করার জন্য নাট্যকর্মী ও প্রণম্য দর্শকদের উদ্দেশ্যে ‘থিয়েটারওয়ালা’র আহ্বানে কলমের আঁচর বসিয়েছিলেন আমাদের দেশের নবীন, প্রবীণ ক’জন নাট্যব্যক্তিত্ব (থিয়েটারওয়ালার একটি লিফলেটে বর্তমান নাট্যচর্চার অবস্থা নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, যা সবার মাঝে বিলিয়ে দেয়া হয়েছে)। কলমের সেই আঁচড়ের প্রায় সর্বত্রই ছড়িয়ে আছে আশার ছোঁয়া। এটাই স্বাভাবিক, আশার ভেতর দিয়ে পথ চলা শিল্পীর সহজাত প্রবৃত্তি।
কিন্তু এ কথা মেনে নেয়া উত্তম, নাট্যচর্চার এই শ্লথ গতির জন্য কেবল মঞ্চ স্বপ্লতা আর ভালো অভিনেতৃগণের অভাব আর স্যাটেলাইট ’আগ্রাসন’ই দায়ী নয়। দায়ী আরো অনেক কিছু যা আমরা সযত্নে গোপন করে যাচ্ছি। আমরা থিয়েটারের (মঞ্চনাটকের) প্রকৃত শক্তি কী এবং এর ব্যাপ্তি কতটুকু তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে নারাজ। আমরা কেবল প্রাণপণে বোঝাতে চাই, থিয়েটার হলো একটি নাটক (Play, শুধুই খেলা?) যা মঞ্চে দেখানো হবে, সেই নাটকের অভিনেতৃগণ দর্শকদের মজা দেবেন, তা যেভাবেই হোক না কেনো। ঐ নাটকের বিষয় আশয় বড় ব্যাপার না, বড় ব্যাপার হলো কারিশমা আর জৌলুস। আবার এ ধারণাও দিচ্ছি, সেই কারিশমা আর জৌলুসের ছোঁয়া পেতে নাকি দর্শক হুড়মুড় করে ঢুকতে থাকবে হলের ভেতর।
দর্শক কেনো আসবে থিয়েটারে? দর্শক এমন কিছু দেখতে বা জানতে আসবে যা দেখার বা জানার তৃষ্ণা মেটানোর জন্য মঞ্চই একমাত্র মাধ্যম। টেলিভিশনে যা পাবে, সার্কাসে যা পাবে, বক্তৃতায় যা পাবে, এমনকি বইয়ের ভেতরে যা পাবে- তা পাওয়ার জন্য সে খামাখা মঞ্চে আসবে কেন? আসার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকার কথা না। তবুও আমরা ক্রমান্বয়ে থিয়েটারকে এমন এক সংকীর্ণ মাধ্যম হিসেবে দাঁড় করাচ্ছি, যার চেয়ে অনেক বিশাল ক্যানভাস উপহার দেয়ার ক্ষমতা এই মাধ্যমটির আছে।
প্রায়শই মনে হয় ‘বিনোদন’, ‘মজা’, ‘আনন্দ’ ইত্যাদি অনুভূতিগুলো বহিঃপ্রকাশের একমাত্র চিহ্ন হয়ে গেছে ‘হাসি’। কোনো কিছু যদি কারো হাসির উদ্রেক না করে, তবে ধরে নিতে হবে সেই ‘কোনো কিছু’র দ্বারা বিনোদন কিংবা মজা কিংবা আনন্দ সাধিত হয়নি। হারানো সন্তান ফিরে পাওয়া মা-বাবা চোখের জল যে ‘আনন্দ’, শ্রেণী সংগ্রামের লড়াইয়ের অনুভূতি যে ‘বিনোদন’, এ কথা কে কাকে বোঝাবে? আর এগুলো বোঝানো যাচ্ছে না বলেই থিয়েটারে এখন Text নেই, আছে কেবল তামাশা।
বর্তমানে নাট্যদলগুলোর কাজ কী? নাটকের দেশি-বিদেশি পত্রিকা ঘাঁটাঘাঁটি করে স্বল্পতম সংখ্যক নারী চরিত্রের একটি নাটকের পা-ুলিপিসহ নাট্যদলটির প্রধান ব্যক্তিদের একজন অন্যান্য সবাইকে নিয়ে শুরু করেন পাঠপরিক্রমা। নিয়মিত বিরতিতে চার/পাঁচ মাস মহড়াকক্ষে কোটাভিত্তিক অনিয়মিত হল বরাদ্দ পাওয়া এবং বরাদ্দ দিনে ’শো করা আর ‘অনিবার্য কারণবশত’ ’শো করতে না পারার খেলা খেলতে খেলতে পার করে দেয় দু/তিন বছর। তারপর আবার...। তার মানে কী দাঁড়ালো, আর কী পরিমান কাজ এ দু/তিন বছরে করা হলো? কাজের পরিমান হলো এই, থিয়েটারের মতো বিশাল ক্যানভাসের শিল্প মাধ্যমটির দ্বারা একটি ’মুষিক’ প্রসর করা হলো। সেই প্রসবে না আছে ব্যথা, না আছে আনন্দ। এমন সংকীর্ণ কাজের প্রতি সৃজনশীল নাট্যকর্মী আর শিল্পমনা দর্শকের অনীহাকে ধিক্কার দিই কোন স্পর্ধায়?
কিন্তু ঐ যে, শুরুতে বলা হলো- আশার ভেতর দিয়ে পথ চলা শিল্পীর সহজাত প্রবৃত্তি- সেই শিল্পীরা পিছু হটলে চলবে কী করে? তারা পিছু হটবে না। তারা থিয়েটারটাকে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। বের করবে থিয়েটারের মূল শক্তি, তার পরিধি, তার বিশালত্ব (নিজের অজান্তেই পথনাটক, মুক্তনাটক আর গ্রাম থিয়েটারের কথা বলছি নাকি!)। থিয়েটার থেকে তারা ভোগ করবে সর্বোচ্চ উপযোগ। আর সেটা করতে পারলেই তারা থিয়েটার চর্চা করে বিরক্ত হবে না, ক্লান্ত হবে না। নতুন শতাব্দিতে তাই আমাদের চাই- থিয়েটার প্রোগ্রামার, যে প্রোগ্রামার পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি বিশ্বে নিজেকেও করবে আধুনিক। দেশকে উপহার দিবে এক থিয়েটার সংস্কৃতি।
হাসান শাহরিয়ার
সোবহানবাগ, ঢাকা।