Bookmaker Bet365.com Bonus The best odds.

Full premium theme for CMS

জলতরঙ্গ

Written by আসাদুজ্জামান দুলাল.

Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..

চরিত্র
মানুষ, যোগেন, বাশরি, খোকা, বিশু, ইব্রাহীম, সুজন, ছোটন, চেয়ারম্যান, পুলিশ, শমশের, মোল্লা, গ্রামবাসী-১, গ্রামবাসী-২

বাশরি    
বের-হ-বের-হ হারামজাদা বের-হ আমার বাড়ি থেকে।
(বিশু, বাশরি কান্না চেঁচামেচির ভেতর ঢুকবে। খোকা বিশুকে মুক্ত করতে চাইবে)

খোকা    
আহা করছো কি মেসো? ছাড়ো তো ছাড়ো। বাপে বেটার মারামারি করলে লোকে কি বলে? ছাড়াতো ছাড়ো।
(বিশুকে ছাড়িয়ে দিলে বিশু দূরে দাঁড়িয়ে কাঁদবে। খোকা বাশরিকে সামাল দেবে)

বাশরি    
হারামজাদা বেয়েনে বেরুইছে একজন লোক ঠিক করতে ...

খোকা    
আহা চুপ করতো চুপ কর, বিশু তুই ওদিক যা (বিশু আরও একটু দূরে গিয়ে কাঁদতে থাকবে এবং বাশরিকে খোকা নিয়ে যাবার চেষ্টা করবে) মেসো তুমি ঘরে চলতো চল।

বাশরি    
আজ সাতদিন হয় ঐ সরকারি টিউকলটা নষ্ট। এই খরার মধ্যে কাজ থেকে এসেছি ঘরে এক ফোটা জল নেই।

খোকা    
আহা সে কষ্টডা তো তোমার একার না, এ কয় ঘর মানুষেরই, হৈ চৈ করলেই তো আর এ সমস্যার সমাধান হবিনে।

বাশরি    
হারামজাদাক বেয়েনে পাঠাইছি একজন লোক ঠিক করতে। ভরদিন কোন মোকাম ঘুরে এসে এখন চ্যাটাং মেরে কথা বলে।

বিশু    
(কান্না এবং রাগ নিয়ে) আমি কি ভগবান যে কুয়া ঝালাই করা লোক তৈরি করে এনে দেবো?
(বাশরি রেগে দৌড়ে কলস তুলে মারতে যায়)

বাশরি    
তোকে আমি খুন করবো। তোকে খুন করে ফাঁসিতে ঝুলবো, বাঁদর। (বিশু চিৎকার দিয়ে ভয়ে কুপের পেছনে পালাবে। খোকা বাশরিকে ঠেকাবে) হারামজাদা কোনো কাজের মুরোদ নেই ...

খোকা    
(কলসটা হাত থেকে কেড়ে নিয়ে) এবার কিন্তু তুমি অন্যায় করলে মেসো, এখন তোমার উপরই আমার খুব রাগ হচ্ছে। দেখোনা ছেলেটা কেমন ভয় পাইছে।

বাশরি    
(কান্না নিয়ে বসে পড়ে) মরণ দে ভগবান, মরণ দে আমার।

খোকা    
(কলস হাতে বিশুর নিকট এগিয়ে যায়) বিশু কলসটা নিয়ে মণ্ডল বাড়ি যা একটু জল চেয়ে আন।
(বিশু কলস নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলে দূর থেকে একটি আর্তনাদ ভেসে আসে ... মাগো...জল...খাবো...একটু জল দে....মা....ওরা মঞ্চে  ভীষণভাবে আর্তনাদ শুনবে)

বাশরি    
আর তো সহ্য হয়নে রে খোকা। এক বেলা ভাত না খেয়ে থাকা যায় কিন্তু জল ছাড়া কি চলে ক?

খোকা    
কথা তো তাই কিন্তু করি কি কও তো?

বাশরি    
চল না চেয়ারম্যানের কাছে একটু যাই সরকারি টিউকলটার একটা গতি করা যায় কি না?

খোকা
সে তো আজ দুই দিনে ছ, পাক উড়ালো।

বাশরি    
চেয়ারম্যান কি কয় হবি না?

খোকা    
এখন সরকারি কোন বরাদ্দ নেই।

বাশরি    
আহা নতুন দরকার কী, ওটাই একটু সেরে সুরে দিক না।

খোকা    
সে জন্যও নাকি দু-সপ্তাহ দেরি করতে হবে ... তাও হবে কিনা সন্দেহ।

বাশরি    
কেন? সন্দেহ কেন?

খোকা    
এই সর্দার পাড়ার লোকেরা নাকি ভোট দেয় নি।

বাশরি    
তাহলে?

খোকা    
তাহলে বোঝ! আমার মনে হয় মেসো ঐ টিউকলের চিন্তা বাদ দিয়ে অল্প পয়সায় তোমার এই কুপটা ঝালাই করে নেয়াই ভাল।

বাশরি    
সেও তো লোক মেলে কই? (উভয়ে কুয়া দেখবে) তাছাড়া মজা কুয়া কয় বছর হলো পড়ে আছে জল উঠবে কিনা কে জানে ... আচ্ছা নিজেরা চাঁদা হাঁড়ি দিয়ে ঐ টিউকলটাই ঠিক ঠাক করে নেই না কেন?

খোকা    
সে তো ছয় শো টাকার ব্যাপার।

বাশরি    
ছয়শো টাকা? কেন এত টাকা লাগবে কেন?

খোকা    
ডিপকল, তুলে আবার নতুন করে বসাতে গেলে ছয়শো টাকাই লাগবে। কি সব নাট বল্টু নাকি লাগবে। যোগেন খুঁড়ো ১০ টাকার বেশি দিতে পারবে না। গোপাল আর কত্তা মিলে টেনে ছিড়ে ৩০ টাকা দিতে পারে, বাকি ৫৬০ টাকা দিতে পারবে?

বাশরি    
(হতাশা) অত টাকা! কোথায় পাবো?
(বিশু খালি কলস ঘাড়ে করে ফিরে আসবে)

বিশু    
মণ্ডল বাড়ি জল পাওয়া গেল না।

বাশরি    
কেন?

বিশু    
মোসলমান পাড়ার লোকজন লাইন দিছে। বললো হিন্দুদের পেতে নাকি দেরি হবে।

বাশরি    
হায়...ভগবান।

খোকা    
তোমার কুপের মধ্যে দেখি জলের আভাস দেখা যায।

বাশরি    
দেখা যায়?

বিশু    
(বিশু কলস রেখে দৌড়ে গিয়ে কুপে উঁকি দেয়) হ্যাঁ, হ্যাঁ দেখা যায়। (বাশরিকে টেনে নিয়ে যায়) বাবা শিগরি এসে দেখে যাও। (বাশরি উকি দেবে) ঐ তো মাছের চোখের মত চক চক করে জল দেখিছে বাবা।

খোকা    
দিখিছো মেসে?

বাশরি    
হতে পারে আমার বুড়ো চোখ নজরে আসে না।

খোকা    
শোন মেসো এখন দুচার বালতি কাদা তুলে দুটাকার চুন মেরে দেলে ব্যাস, তারপর আয়না মহল জল উঠবে। (আসে বৃদ্ধ যোগেন লাঠি ভর  করে। তার অন্য হাতে ধরা ভাঙা পাত্রে কিছু ছাতু সে নিয়ে আসে)

যোগেন    
ও বাশরি এটু জল দেতো বাবা ছাতুটুকু খাই।

বাশরি    
জলতো নাই জ্যাঠা।

যোগেন    
মিছে কথা কইস ক্যা.. ঐ যে কলস দেখি।

বাশরি    
(কলস কাত করে দেখা) এই যে দেখ জল নাই।

যোগেন    
একটু জল দে বাবা।

বিশু    
ঐ মণ্ডলবাড়ি যাও জল পাবানে।
 
যোগেন    
(কানের কাছে মুখ নিয়ে) কোনে যাবো?

খোকা    
(ফাজলামো করে) জল তো ঘরে নাই ছাতু নিয়ে কুপের মধ্যে নেমে পড় জল পাবানে।

যোগেন    
(রেগে গিয়ে লাঠি তুলে তাড়া করে, ওরা দৌড়ায় মুখ ভেংচিয়ে পরিবেশটাকে হাসি ঠাট্টায় পরিণত করে। কেবল বাশরি ওদের বাধা দেয়) তুই  নাম, তোর চৌদ্দ শুষ্টিক নামা, পেতিœর বেটা খাড়া হ, তোর বুকে মাটি দেই।

বাশরি    
আহ খোকা!

যোগেন    
খিদেয় আমার নাড়ী ছেঁড়ে আর অসুর আমার সাথে ইয়ার্কি মারে।

খোকা    
ইয়ার্কি করলাম কৈ ঠাকুরদা, তুমি জল চাইলে আমি তার সন্ধান দিলাম।

বাশরি    
আহ খোকা মানুষটা খিদেয় মরে তুই রঙ করিসনে তো, যা ওদিকে যা।

যোগেন    
অপঘাতে মরবি (দু-হাত উপরে তুলে) এই বাসি মুকে আমি অভিশাপ করি মা মনসা যেন তোর শরীলে বিষ ঢালে, নরলোকে যেন তোর নীল শরীল চোখে দেখে।

বাশরি    
বিশু যা তো বাবা একটু জল জোগার করে দে। এই যে এর সাথে যাও জ্যাঠা।

বিশু    
আস।

যোগেন    
(যেতে যেতে) বাপরে বাপ এক ফোটা জলের ঘুন্টা তাও হাতে উঠে না। আরে বাবা টাকা পয়সা তো চাই নে, তাও এত কথা। খাবোনে ছাতুই  খাবো না। (রেগে শূন্যে তুলে ছাতু ফেলে দেয় যোগেন। বাশরি দৌড়ে এসে মাটি থেকে ছাতু থালায় উঠাতে থাকে (খোকা নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকে)

বাশরি    
হায়...হায়..একি করলে জ্যাঠা ছাতু ফেলে দিলে?

যোগেন    
(যেতে গিয়ে ফিরে এসে কান্না জড়িত কন্ঠে) তোরা খা ভাত খা, জল খা, গুড় দিয়ে মেখে ছাতু খা। তোরা খা, আমার খাওয়া নাগবিনে।
(চলে যায়। বিশু থালা নিয়ে পিছনে দৌড়া)

বিশু    
ঠাকুর দা তোমার থালা নিয়ে যাও ও ঠাকুরদা। (চলে যায়)

বাশরি    
একি করলি খোকা! বুড়ো মানুষটার মুখের আহার নষ্ট করলি!

খোকা    
(হঠাৎ অন্য মনস্ক হয়ে পড়ে) আমি না মেসো, গরীবের আহার নষ্ট করে ভগবান। দোষ দিলে তাকে দাও।

বাশরি    
ঠিকই কইছিস ভগবান এবার ভাতেও মারলো জলেও মারলো।

খোকা    
মেসো এদিকটায় একটু এসো তো।

বাশরি    
কি?
(খোকার পাশে দাঁড়িয়ে সামনে দেখে)

খোকা    
দেখতো তোমার জবা তলায় কে যেন দাঁড়িয়ে না?

বাশরি    
কই?

খোকা    
ঐ যে দেখ এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।

বাশরি    
তাইতো কে?

খোকা    
চোর চুট্টা নয় তো?

বাশরি    
(ডাক দিয়ে) কে গো ওখানে দাঁড়িয়ে কে?

খোকা    
বিশুকে ডাক দেবে নাকি মেসো।

বাশরি    
জবা তলায় কে?

খোকা    
কে ডা।
(ওদের ডাকের ভিতরে দর্শকের ভেতর থেকে ইব্রাহীম উঠে দাঁড়ায়। খালি গা, কাছা আটা মাথায় বাঁধা জীর্ণ কাপড়ের পটি। কাঁধে ঝোলানো একগোছা মোটা রশি। কুয়া ঝালাইকার বেশে সে একদিক সেদিক তাকায়)

ইব্রাহীম    
সর্দারপাড়া যাওয়ার ঘাটা কোন তোরেরে বা?

খোকা    
এডাই সর্দারপাড়া কার খোঁজ কর।

ইব্রাহীম    
বাশরি সর্দারের খোঁজ করি। বেটার নাম বিশু, কোন বাড়ি?

বাশরি    
(ভীত হয়ে খোকাকে ডাকে) ও খোকা এতো দেখি আমার নাম কয় মতলব কি?

খোকা    
আহ ভয় কি দেখই না ঘটনা কি? (ডাকবে) এদিক আগায়ে আস। (ইব্রাাহীম মঞ্চে উঠে আসে এদিক সেদিক দেখে) কার খোঁজ কর?

ইব্রাহীম    
বাশরি সর্দার, বেটার নাম বিশু, কোন বাড়ি?
(বাশরি কথা বলতে এলে খোকা ইঙ্গিতে তাকে থামায়)

খোকা    
তাকে কি দরকার
(ইব্রাহীম হঠাৎ কুয়া দেখে ছুটে যায়)

ইব্রাহীম    
ও তাইলি এই সেই কুয়ে। (বিভিন্নভাবে কুয়া দেখে) একেবারে পুরানো মাল। ছিটছাট পানিও দেখা যায় ভেতরে।
(খোকা বাশরি মুখ চাওয়া চাওয়ি করে)

খোকা    
তুমি কি ঝালাইকার?

ইব্রাহীম    
আগে ছিলেম এখন তো এ কাম উঠেই গেছে। ঐ পুরানো অভ্যাস একটু আদটু আছে তো ... কই কুয়ের মালিক কই?

বাশরি    
(এগিয়ে আসে) আমি বাশরি সর্দার। আমিই কুয়ের মালিক। কয়দিন খুব জলকষ্টে আছি। যদি কামডা করে দেন তাহলে পাড়াশুদ্ধো লোক এই  আকালে জল খেয়ে বাঁচি।

খোকা    
খোঁজ দিল কে?

ইব্রাহীম    
কচু পাড়ার ইয়াছিন আমার জ্যাঠাতো ভাই। ও কলো কাম একটা আছে কুয়ে ঝালা, যদি পারো তো সর্দার পাড়া চলে যাও। দেখলাম কাজ কামও  নাই, হাঁটতে হাঁটতে চলে আসলাম। কে নাকি খোঁজ করিছিল বেয়েনে।

বাশরি    
আমার ছেলে বিশু, ঐ গেছিলো বেয়েনে।

ইব্রাহীম    
ও তালি তাই হবি।

খোকা    
ঝালাই করতি কত টাকা নেবেন?

ইব্রাহীম    
(কুয়া দেখে) নগদ দিবেন ১০১ টাকা আর আপনারে ঘরে তো ভাত খাওয়া চলবি নানে, চিড়ে মুড়ি আর কুশুলের গুড় দিয়ে এক সন্ধ্যা নাস্তা দিবেন।

বাশরি    
তা দেব তবে।

খোকা    
টাকা দেব আপনাক ৫১ ডা, রাজি?

ইব্রাহীম    
তাহলি কুয়েডা আগে একটু পরীক্ষে করে দেখি।

বাশরি    
তা, দেখেন।

ইব্রাহীম
একটা কুপি বাতি আনেন।

বাশরি    
(ডাক দিয়ে) ও বিশু..বিশু..রে।

বিশু    
(নেপথ্যে) ডাকো কেনে?

বাশরি    
কুপি বাতিডা আনতো বাবা, কুয়া ঝালাই করা লোক এয়েছে।
(বাতি নিয়ে আসে বিশু সাথে যোগেন)

যোগেন    
কই জল পাওয়া গ্যাছে? ও বাশরি দে বাবা এক গেলাস ঠাণ্ডা জল খাই, বুকটা কাট হয়ে গেছে রে।

বাশরি    
জল তো এখনো হয় নাই জেঠা।

যোগেন    
এখনো হয় নাই, আর কত দেরি? (খোকার নিকট গিয়ে) যা-না বাবা একটু মণ্ডল বাড়ি।

খোকা    
(ধমক দিয়ে) কানের কাছে ভ্যান ভ্যান করো নাতো ওদিক যাও।
(ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেবে)

ইব্রাহীম    
বাতিটা জ্বালান।
(ওরা বাতি জ্বালাবে ইব্রাহীম ইতোমধ্যে সাথে করে নিয়ে আসা দড়ির গোছা খুলে একদিকের কিছু অংশ কূপের মধ্যে নামাবে অন্যদিক খোকা ও বিশু হাতে ধরিয়ে দেবে। কুপ সালাম করে নামার উদ্যোগ নিলে ছুটে আসে যোগেন)

যোগেন    
একি কাম করিস রে তোরা এ্যা.. সবখানে পরামানকি করিস, দুটো ফুল বেলপাতা না দিলে মা গঙ্গা কি ধরা দেয়?

বিশু    
(কানের কাছে মুখ নিয়ে) ঝালাই এখনো শুরু হয় নাই। পরীক্ষে হচেছ ঠাকুর দা।

যোগেন    
ও পরীক্ষে হচ্ছে? আচ্ছা হোক।

ইব্রাহীম    (দড়ি ধরে কূপে নামে) দড়িডা শক্ত করে ধইরেন।
(বিশু ও খোকা দড়ি একমাথা টান টান করে ধরে যোগেন প্রণাম করে কূপের পাশে ঘোরে ইব্রাহীম হাত তুলে)

ইব্রাহীম    
বাতিটা দেন।
(ওরা বাতি দিলে জলন্ত বাতি নিয়ে ইব্রাহীম কূপের ভেতর চলে যাবে)

বাশরি    
এবার বুঝি জলের সমস্যাটা যাবে, নাকি রে খোকা?

খোকা    
হ্যাঁ... এখন ভালোয় ভালোয় সব হলে হয়।

বাশরি    
ভাগ্যিস মানুষটাকে পাওয়া গেল নইলে ... ওহ কয়দিন জলের যা কষ্ট গেল।

বিশু    
তখন তো খামোখা আমাক গাল মন্দ করলা।

বাশরি    
(ছেলেকে আদর করে) বিপদে মাথা ঠিক ছিল নারে বাবা।

যোগেন    
শোন প্রথম উঠা জল এক গ্লাস আগে মা শীতলার আসনে ঢালিস। আগে মার জীবন ঠাণ্ডা, তারপর নিজেরা।

ইব্রাহীম    
(নেভা বাতি নিয়ে কূপের মধ্যে মাথা তুলে) বাতি নিভে গেল।

সবাই
নিভে ... গেল।

ইব্রাহীম    
(উঠে আসে) হ্যাঁ কুয়ায় খুব গ্যাস। আর গ্যাস বেশি থাকলে বাতি থাকে না। সেডেই পরীক্ষে করে দেখলাম।

বাশরি    
এখন তাহলে উপায়।

ইব্রাহীম    
কুয়েত যে গ্যাস দেখলাম তাতে ১০০ টাকা ক্যা ৫০০ টাকা দিলেও কোনো ঝালাইকার এ কুয়ের কাছে আসতো না। এখন আমি আপনেরে জবান  দিছি ঐ ১০১ টাকা আর এক সন্ধ্যা নাস্তা, এর কম আমি পারবো না।

বাশরি    
কি করবি রে খোকা?

খোকা    
সেটা এখন সবাই বুঝে দেখ পারবে কি না।

বিশু    
এ-লোক হাতছাড়া হয়ে গেলে আর কিন্তু লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না।

বাশরি    
জ্যাঠা ... খোকা এদিক আয়।
(সবাইকে ডেকে ওরা পরামর্শের একটি সার্কেল তৈরি করবে)

খোকা    
ঠাকুরদা, তুমি দেবে ২০ টাকা।

যোগেন    
তোর চোখ খালি আমার তরেই পরে, গাঁয়ে আর কাকো চোখে দেখিসনে? আমি এক আনাও দেবো না নে।
(রেগে উঠে পড়লে সার্কেল ভেঙে যাবে)

বাশরি    
(সবাইকে আবার ডেকে বসবে) আহা রাগারাগি করলে তো কাজ হবে না জ্যাঠা। সবাই মিলেই তো করতে হবে..আস..সবাই আয়।

খোকা    
(সার্কেল থেকে দাঁড়িয়ে ইব্রাহীমকে) মুরুব্বি আমারে একটা কথা রাখেন।

ইব্রাহীম    
কন।

খোকা    
এক সন্ধ্যে খাওয়া দেব ঠিকই, তবে নগদে দেব ৮১ টাকা।

বাশরি    
আমরাও গরীব আপনিও গরীব। কাজটা করেন।

বিশু    
এছাড়া আমারে আর দম নাই কাকা।

যোগেন    
জল দান পূণ্যির কামরে বাবা, আমারে জেবন বাঁচান।

খোকা    
কি কন?

ইব্রাহীম    
বাপুরে পুরানো কুয়ে গ্যাসে ভরা, এই জানডা হাতে করে পাতালে যাবো, সেখানে আলো নাই, বাতাস নাই, সাথী সঙ্গী নাই। একটা বিপদ হলি, ... না ... না... আমি পারবো না, আপনেরা তালি অন্য লোক দেখেন।

খোকা    
তাহলে তো আর হয় নে মেসো।

বাশরি    
হ্যাঁ! সব তবিল ঝেড়ে পুঁছেতো ৮১ টাকার বেশি হয়নে।

বিশু    
আমি কিন্তু গাঁয়ে গাঁয়ে ঘুরে আর লোক খুঁজতে পারবো না।

ইব্রাহীম    
আমি তাহলে যাই।

বাশরি    
ও খোকা, জল বিনে সবাই মরবো নাকি রে.. ও জ্যাঠা ২০ টাকার যোগার কি তাহলে হবি নে?

যোগেন
একখানে ২০ টাকার যোগার আছে যদি তোরা পারিস।

বাশরি    
কোনে?

বিশু    
কোনে?

খোকা    
কার কাছে?

যোগেন    
গোপালের কর্তার ঘরে দুই হালি মুরগীর ডিম আছে যদি দেয়।

খোকা    
দিবিনে মানে?

বিশু    
জল আগে না ডিম আগে?

বাশরি    
বিশু যাতো বাবা দৌড় দিয়ে জেঠিমার কাছে জেনে আয়।
(বিশু ছুটে যায়)

ইব্রাহীম    
আমি আর কত দেরি করবো, বেলা যায়।

খোকা    
আর ২ মিনিট দাঁড়ান।

বাশরি    
ও খোকা, আমি একটু আগায়ে যাবো নাকিরে? ছেলে মানুষ, যদি ওর কথায় জেঠিমা রাজি না হয়।

খোকা    
হবে হবে রাজি না হয়ে কোনে যাবে, তার কি জল লাগবি নে?

যোগেন    
যে কিপটে, এক পয়সা তিনবার করে গিঁটা আঁটে।

ইব্রাহীম    
আমি তালি যাই।
(যেতে গেলে দুর থেকে বিশুর কন্ঠ ভেসে আসবে। ছুটে আসবে বিশু)

বিশু    
পাওয়া গেছে.. পাওয়া গেছে।

সবাই    
পাওয়া গেছে।

বিশু    
হ্যাঁ! কর্তা নিজে মুখে ডিম দিতে রাজি হইছে।

যোগেন    
যাক মা গঙ্গা তাহলে মুখ তুলে চাইছে।
(সবাই গঙ্গার উদ্দেশ্যে কপালে হাত ঠেকাবে)

বাশরি    
এবার তাহলে ঝালাই শুরু করেন।

ইব্রাহীম    
হ্যাঁ শুরু করি।

খোকা    
জল উঠবি তো মুরুব্বি?

ইব্রাহীম    
তা কি কওয়া যায়। ঐ যে কথায় আছে না ভুঁই কেনো আকালে আর জল মেলে কপালে। আমি চেষ্টা করবো, উঠা না উঠা আপনাদের কপাল।

বাশরি    
ও জ্যাঠা, তাহলে মা গঙ্গার চরণে দুটো ফুল বেল পাতা দিয়েই কাজ শুরু করি কি কও?

যোগেন    
সে কথা তো আমি আগেই কইছি।

বিশু    
যা করার তাড়াতাড়ি, ঝামেলা শেষ কর।

খোকা    
ঠাকুর দা তুমিই যা হোক নমঃ নমঃ করে একটু ফুল জল দাও।

যোগেন    
আ-মি-

বাশরি    
তাছাড়া এখন এই অবেলায় ঠাকুর পাবো কোনে?

ইব্রাহীম    
দেরি কইরেই না বেলা কিন্তু বেশি নাই।

বাশরি    
না না আর দেরি নাই, এই তো হয়ে যাবিনি, বিশু, খোকা আহা তোরা দাঁড়িয়ে থাকিসনে বাপু, যোগারজান্তিগুলো কর যা। (বিশু খোকা চলে যায়) জ্যাঠা তুমি যাওতো বেস পড় খালি গাছ হয়ে দাঁড়িয়ে থাক যাও।

ইব্রাহীম    
একটা বালতি লাগবি।

বাশরি    
বিশু একটা বালতি আনিস বাবা।
(বিশু, খোকা, পূজার সরঞ্জাম বালতি ধূমায়িত ধুপতি নিয়ে মঞ্চে আসবে। জ্যাঠাকে সামনে নিয়ে ওরা কূপ পূজায় বসবে। সমবেত মন্ত্র পাঠ ঘন্টা ধ্বনি উলু ধ্বনির ভেতর ইব্রাহীম কূপে নামবে। মঞ্চের অন্যদিক দিয়ে খালি একটি কলস নিয়ে বিশেষ নাচের কায়দায় কয়েকজন বুনো সম্প্রদায়ের মানুষ আসবে। কূপ ও পূজার বিপরীতে কলস হাতের মাঝ রেখে ওরা গোল চক্রে আদিবাসীয় নাচ গান করবে)

সমবেত    
দেবী সুরেশ্বরী ভগবতী গঙ্গে ত্রিভুবন তারীনি তরল তরঙ্গে

মন্ত্রপাঠ    
হে মা গঙ্গা কৃপা কর মা..
(দু’হাত তুলে ওদের প্রার্থনা শেষ হলে, গান সহ কোরাস দল কলস নৃত্য শুরু করবে)

গান    
হে মা গঙ্গা জল দে মোদের কলসে
আমরা অধম পাপী ছেলে পুজো দেই তোর চরণে..

কোরাস    
হে মা গঙ্গা জলদে মোদের কলসে
গঙ্গা দেবী ধরিত্রী তুই ধন্য করি স্মরণে
হে মা গঙ্গা জলদে মোদের কলসে।

বাশরি    
এই, সবাই এখন গান বাজনা বন্ধ কর। কাজে হাত লাগাও। (গান ও নৃত্যের লোকেরা চলে যাবে) খোকা তুই থাকবি আমার পেছনে, বিশু থাকবে সবার পেছনে।
(ওরা সবাই লাইন করে দাঁড়াবে)

যোগেন    
আমি কি করবো?

বিশু    
তুমি এ দিকটায় বসো। (মঞ্চের এক কোণে বসায়। পূজার সরঞ্জাম সামনে এনে দেয়) এগুলো এখানে রাখ।

খোকা    
ও মেসো গোপালকে একটু ডাক ছাড় না।

বাশরি    
কেনে ডাকাডাকি করবো, কেনে ডাকাডাকি করবো, দশের কাজ সে নিজে ইচ্ছে করে আসতে পারে না? নাকি তার জল লাগবে না?

ইব্রাহীম    
(কূপের মধ্যে থেকে) দাদা বালতি নামান।

বাশরি    
এই বালতি নামা।
(খোকা রশি বাঁধা বালতি কূপে নামায়)

খোকা    
মেসো, এ কাজ করতে খুব সাহস লাগে, না?

বাশরি    
(কূপে উঁকি দিয়ে) তাতো লাগেই।

খোকা    
হ্যাঁ, দেখ কোথায় চলে গেছে মানুষটা, কোনো খবর নাই। একা একা আঁধারে জল-কাঁদায় মাখামাখি করে। আলো নাই-বাতাস নাই ... সঙ্গী-সাথী নাই ... ওহ ভাবাই যায় না।

বিশু    
আমার তো তোমার কথা শুনেই ভয় লাগতিছে। হাত পাও শির শির করতিছে, দম বন্ধ হয়ে আসতিছে।

ইব্রাহীম    
(কূপের মধ্যে থেকে) বালতি তোলেন।

খোকা    
মেসো বালতি তোল।
(বাশরি বালতি তুলবে জল তোলার ভঙ্গিতে)

যোগেন    
কাজের সময় তোগারে খালি আজুরে প্যাচাল।

বাশরি    
(খোকার হাতে বালতি ধরাবে) নে ধর।

খোকা    
ওরে বাবা একেবারে পাকা কেদো।

যোগেন    
মাটির রঙ কিরে?

খোকা    
পাঁটি বকরির মত কালো ঠাকুর দা।

যোগেন    
(মাটি দেখে) তাহলি দেরি আছে, ইয়ের পর আসপি লাল মাটি, মোটা বালু তারপর আসপি নূরী পাথর চিকন বাল,ু তারপর আসপি জল সে অনেক দূর ... (বিশুকে বালতি দেয়)

বিশু    
ঢালবো কোনে?

বাশরি    
জবা গাছের গোড়ায়।
(বিশু বালতি নিয়ে বাইরে কাদা ঢেলে আবার লাইনে আসে)

ইব্রাহীম    
দাদা ভেতরে বিড়ি ম্যাচ নামান।

বাশরি    
ও খোকা উনি বিড়ি ম্যাচ চায়।

খোকা    
(ভেতরে ডাক দিয়ে) বিড়ি ম্যাচ তো মিটানো ছিল না।

যোগেন    
আরে তাতে কি, নেশা জিনিস দে। জলের তেষ্টা আর বিড়ির নেশা, না পালি হয় মরণ দশা।
(বালতির ভেতর বিড়ি ম্যাচ কূপে নামায়। নেপথ্যে কর্তার গলা শোনা যায়)

কর্তা    
(নেপথ্যে) ও বিশু জল কি হইছে রে।

বিশু    
না কর্তা দেরি হবি।

কর্তা    
(নেপথ্যে) দুই হালি ডিম নিলু নগদ আর জল কি দিবু ভাদ্র মাসে রে?

যোগেন    
শালা কারুনির দুই হালি ডিম দিয়ে চোখে ঘুম নাই।

বাশরি    
এ তো আরেক ঝামেলা হলো দেখতিছি।

খোকা    
মেসো ঐ যে দেখো দড়ি নাড়ে।

বাশির    
তাইতো কেনো?

বিশু    
মনে হয় বালতি উঠাবার ইঙ্গিত দেয়।

খোকা    
মেসো বালতি উঠাও।
(বাশরি বালতি উঠাবে)

বাশরি    
ও খোকা জল দেখা দিছে।

খোকা    
দেখা দিছে, কই দেখি?

যোগেন    
জল! সত্যি!

বিশু    
এত তাড়াতাড়ি?

যোগেন    
হবি নে মা গঙ্গাক পূজা দিছিনে?

বাশরি    
(আনন্দে বালতি উপরে তুলে) হা-হা-আর চিন্তা নাই এবার সর্দার পাড়া জলের ঢেউ খেলবে। এই যা দেখ কাদার মধ্যে ঘোলা জল।
(সবাই বালতি ঘিরে)

খোকা    
তাইতো, হুর-রে। (বালতি নিয়ে মঞ্চে ঘুরবে সাথে বিশু) আর দু-চার বালতি, তারপর কাঁচের মত জল বেরুবে।

যোগেন
আমাক একটু দেখা তোরা।

বিশু    
(বালতি এগিয়ে) দেখ দেখ প্রাণ ভরে দেখ।

যোগেন    
(হাতে মুখে জল মেখে) আহা কি ঠাণ্ডা জলরে। গন্ধ বাসনা কিছু নাই, নিজের জলের কথাই আলাদা।
(ওরা সবাই সারা মঞ্চ জুড়ে জল, এ ওর গায়ে ছিটায় আনন্দে জলকেলি খেলে)

খোকা    
কাইল থেকে পেট ভরে যত ইচ্ছে জল খাও।

বিশু    
দুপুরে বেলা ঠাণ্ডা জল ঢেলে চান কর।

বাশরি    
কাপড় কাচ, ফেল ছিটাও যত ইচ্ছে খরচ কর।

যোগেন    
নিজের হাতের জল খেজুর রসের মত মিঠা লাগে-গো।
(কথার ভেতরে একদল কোরাস বৈঠা মারার মুদ্রায় গান গাইতে গাইতে মঞ্চে ঢুকবে এবং চক্রাকারে ঘুরবে। বাশরি গং সার্কেলের মাঝে নেচে নেচে কোরাসে শরীরে জল ছিটানোর মুদ্রা করবে। গোটা মঞ্চ একটি জলাশয়ে রূপ পাবে)

গান    
জল খাইতে গেয়ে ছিলাম দিন ভিখারীর বাড়ি
কে যে জল আইনা দিল রে
ও সে মানুষ কিম্বা পরী রে
মন পাগল হয় তার লাগিয়া রে
জলের ছলে দুপুর বেলে আলো কে মোর বাড়ি
যতন করে জল দিলাম তারে
ও জল গেল যে ঢালিয়া রে
মন পাগল হয় তার লাগিয়া -রে
(কোরাস দল গান গাইতে গাইতে চলে যাবে মঞ্চে কিছু সময় সেই উন্মাদনা থাকবে। হঠাৎ বাশরি লক্ষ্য করে ইব্রাহীম কূপে নামানো দড়িটা সম্পূর্ণ টেনে নিয়েছে ভেতরে)

বাশরি    
(এগিয়ে দেখে) সে কি দড়ি টেনে নিল কেনে? ও খোকা দড়ি টেনে নিলে কেনে?
(সবাই থমকে যাবে)

খোকা    
দড়ি টেনে নিল?

বাশরি    
হ্যাঁ।

খোকা    
(কূপের মধ্যে নামিয়ে) দড়ি টেনে নিলেন কে-নে? না মেসো কোনো সারা তো দেয়নে।

যোগেন    
সেকি কথা দড়ি টেনে নিল!

বাশরি    
দেখতো ভাল করে উঠে আসে নাকি?

খোকা    
ভেতরে ঘুট ঘুটে আন্দার কিছুইতো চোখে পড়ে না।

যোগেন    
নড়াচড়া বুঝা যায়?

খোকা    
তাওতো আন্দাজ করা যায় না।

বাশরি    
সর্বনাশ কিছু হলো নাতো?

বিশু    
ও বাবা আমার মনে হয় নতুন একটা দড়ি নামালে ঘটনা বুঝা যাবে।

বাশরি    
যাতো নিয়ে আয়..যা।
(বিশু গিয়ে দড়ি আনবে। খোকা কূপের মধ্যে নামিয়ে চারপাশ ঘুরাবে)

খোকা    
এই যে আরেক গাছা দড়ি গেল ... ধরেন আপনার কি কোন সমস্যা হইছে? দড়ি ধরে ... না! কিছুই তো কয় নে।

বাশরি    
এখন তাহলে কি করি?

যোগেন    
হায় ভগবান একি বিপদ হলো?

খোকা    
একটা টর্চ বাতি হলে বোধ হয় দেখা যেত মেসো।

বাশরি    
সে তা এখন কোনে পাই?

বিশু    
মণ্ডলের ছোট ছেলের বিদেশি একটি নাইট আছে।

বাশরি    
গিয়ে দেখতো পাওয়া যায় নাকি? (বিশু যেতে গেলে) বিশু শোন, গিয়ে আমার কথা বলবি। অন্য কেউ যেন না জানে।
(বিশু চলে যায় এবং টর্চ লাইট সহ আসে সুজন)

সুজন    
দেখি দেখি, সবাই সরে আসেন আমি লাইট আনিছি, সবাই সরে যান। (ওরা কূয়া থেকে সরে দাঁড়াবে সুজন টর্চ জ্বালিয়ে নানাভাবে কূয়া দেখবে) ঐ তো দেখা যাচ্ছে।
বাশরি    
দেখা যাচ্ছে।

যোগেন    
দেখা যাচ্ছে।

সুজন    
হ্যাঁ দেখা যাচ্ছে।

খোকা    
কই দেখি।

বিশু    
দেখি।

সুজন    
ঐ যে দেখ কাদার মধ্যে অর্ধেক ডুবে আছে। ঐ যে দেখ ঘারটা এক তরে কাইত। দেখিছো?

খোকা    
না।

সুজন    
তুমি।

বিশু    
ছোঁয়া.. ছোঁয়া.. ঠিক আন্দাজ করা যায় না।

সুজন    
ধোৎতরি .. তোমাগের চোখের ফোকাসই কম। ঐ তো দড়ি বালতির পাশে দেখা যায় হাত পা ডোবা, ঘারটা একদিকে কাইত, একেবারে স্পষ্ট  দেখা যাচ্ছে। (সুজন হঠাৎ চিৎকার দিয়ে উঠে) ওরে বা..পু..রে কূয়ার মধ্যি একজন মানুষ পড়ে মরে যাচ্ছে, তোমরা শিগ্রী আ-স।

নেপথ্যে
কোনেরে?

সুজন    
সর্দার পাড়া বাপু ... রে।
(ইত্যাদি হাঁক ডাকের মধ্যে সুজন ছুটে চলে যায়)

বাশরি    
ও খোকা আমরা মনে হয় বিপদে পরে গেলাম-রে।

বিশু    
ও বাবা মানুষটা যদি মারা যায়!

যোগেন    
(মাটিতে মাথা খুড়ে) হায় মা গঙ্গা তুই একি করলি.. জলের বদলে জীবন নিলি ... মা ... হায় ... হায় ...
(ওরা কান্না হাতাশায় ভেঙে পড়ে। খোকা অস্থির ঘোরে। নেপথ্যে গঙ্গা দেবীর মন্ত্র পাঠ ভেসে আসে)

খোকা    
আহ তোমরা কি শুরু করলে! আগেই এত অস্থির হওয়ার কি আছে? চুপ করতো সবাই চুপ কর.. ঠাকুরদা তুমি ভিতরে যাওতো.. যাও।
(যোগেন হায় ... হায় ... করতে করতে চলে যাবে। অন্যদিক দিয়ে ঢুকবে সুজন শমশের মোল্লা ও দুএকজন গ্রামবাসী)

সমশের    
কইরে কোনে?

১ম গ্রামবাসী
(আঙ্গুল তুলে দেখায়) ঐ তো কূয়ে।

শমসের    
দেখি লাইটটা।

সুজন    
আরে আমি নিজে দেখিছি খালি মাথাডা দেখা যাচ্ছে, ঘাড়টা দেখলেম একতরে কাইত।

শমশের    
আচ্ছা! সব দেখতিছি।

বাশরি    
দেখেন তো দাদা কি বিপদে পরলাম আমরা, ভাল মানুষটা কূয়র মধ্যে নামলো, দুই চার বালতি জল কাদাও তুললো তারপর আর কোনো সারা  নাই। (কূপ এবং তার আশপাশ পরিদর্শন করে। ইতোমধ্যে খোকা একটি চেয়ার এনেছে বসার জন্য) খোকা বসেন কাকা বসেন।

শমশের    
(বসতে বসতে) ভেতরে নামিছে কে?

বাশরি    
নাম তো জানিনে দাদা।

শমশের    
কূয়ের মধ্যে মানুষটাক নামায়ে দিলে, আর তার নামই জানো না? আশ্চর্য ব্যাপার!

খোকা    
গাঁয়ের নাম যেন কি রে বিশু?

বিশু    
কচুপাড়া।

বাশরি    
হয় হয় কচুপাড়া।

শমশের    
কচুপাড়া! কচুপাড়ার কে?

১ম গ্রামবাসী    
ও, ঘন্টা দুই আগে আমার সাথে দেখা হইছিলো। কাঁদে একগাছ দড়ি নিয়ে দেখলেম ঘুরতিছে।

২য় গ্রামবাসী    
সে তো ইব্রাহীম খালু। আমার সাথেও দেখা হইছিলো।

শমশের    
ইব্রাহীম! মানে ইয়াছিনির ছোট ভাই?
১ম গ্রামবাসী
হয় ... হয়।

শমশের    
কইস কি? সে তো তরতাজা মানুষরে।

২য় গ্রামবাসী
ও তরতাজা লয়, ঘ্যাগা একে বারে লিকলিকে।

শমশের    
চুপ কর হে, গেল সপ্তাহে ও আমার বাড়ি কাম করে গেল, আর আমি জানিনে?

সুজন    
(কূয়ার পাশ থেকে) কূয়ের মধ্যি গোঙ্গানির শব্দ শোনা যাচ্ছে।

১ম গ্রামবাসী    
শব্দ শোনা যাচ্ছে? তাহলি তো বাঁচে আছে।

সবাই    
(আনন্দে) বাঁচি আছে, বাঁচি আছে।

শমশের    
(১ম গ্রামবাসীকে) এ তুই মাটিতে কান পাত, (২য় গ্রামবাসীকে) এ তুই কূয়াতে কান লাগা, সুজন তুই ভাল করে দেখ। (সবাই কথা মত কাজ  করে) কিরে আর কোনো খবর পাওয়া যায়?

২য় গ্রামবাসী    
ঐ তো হাত তুলে ইশারা করতিছে। ও তা ঐ মনে হচ্ছে কাক বা ডাকতিছে।

বাশরি    
মোল্লার ব্যাটা এসব হাঙ্গামা না করে মানুষটাকে তোলার একটা ব্যবস্থা করেন।

খোকা    
কাকা যা হোক একটু তাড়াতাড়ি করেন।

শমশের    
রও হে বাপু! মুখ দিয়ে কলিই হয়? জিনিসটা আগে ভালো করে বুঝা লাগবিনে? এই দেখি লাইটটা। (সুজন লাইট দেবে) দেখি সব সরে যা।

সুজন    
এই সব সরে যাও।
(সবাই দুরে গিয়ে উঁকি ঝুকি দেবে। শমশের মোল্লা লাইট জ্বেলে কূয়া দেখবে)

শমশের    
কইরে কিছুই তো চোখে পড়ে না, সবই তো মহিষের পিঠের মত কালো দেখা যায়। আর তোরা কইস উঠতিছে, বসতিছে, লাইটের আলোই তো অতদুর যায় না।

বিশু    
কাকা তালি এক কাম করেন, নাইট জ্বালায়ে দড়ি বাঁধে ভিতরে নামায়ে দেন, তালি দেখা যাবে।

১ম গ্রামবাসী    
ঠিক বুদ্ধি।

খোকা    
তাহলি তাই করেন।

শমশের    
চল দেখি একগাছা দড়ি দে, আয়।
(শমশের বিশু খোকা বাশরি চলে যাবে। সুজন ও গ্রামবাসী গং কূয়া দেখবে)

২য় গ্রামবাসী    
ঐ তো পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

১ম গ্রামবাসী    
ঘুমায়ে রইছে নাকি রে?

সুজন    
তা হবের পারে, কেঁদোর ঠান্ডায় অনেক সুমায় ঘুম ধরে।
(আসে উগ্র পোশাকের যুবক ছোটন। হাসি খুশি কৌতুহল তার)

ছোটন    
কি হইছে রে সুজন?

সুজন    
আরে মহাঘটনা, কুয়ের মধ্যি একজন নাইমে অক্কা পাচ্ছে।

ছোটন    
তাই নাকি দেখি দেখি। (কুয়া দেখে) মারা গেছে নাকি?

সুজন    
এস্টিমেট করা যাচ্ছে না, একবার নড়ে আবার নড়ে না।

ছোটন    
তাহলি তো একজন ইঞ্জিনিয়ার ডাকা দরকার।

সুজন    
ধুরবে, এখানে ইঞ্জিনিয়ার আসে কি করবি?

ছোটন    
কেন এষ্টিমেট দিবি।

সুজন    
গাধার মত কথা কসনেরে, পানি কেঁদোর কাম, এখানে দরকার একজন ডুবুরি।

ছোটন    
ভুতে গাঁয়ে তুই ডুবুরি পাচ্ছু কোনে?

১ম গ্রামবাসী    
আরে মানুষটা বাঁচে আছে কি মরে গেছে সেডাইতো বুঝা যাচ্ছে না।

২য় গ্রামবাসী    
হয় সেডেই তো বুঝা দরকার।

ছোটন    
তাইল এক কাম কর।

সবাই    
কি?

ছোটন    
মরিচের গুড়া ছিটানো যাক, যদি বেঁচে থাকে তাহলে নাকে ঝাল লাইগে হাঁচি করবি। (প্রথম গ্রামবাসী হাঁচি করবে। ওরা হেসে উঠবে) দেখলু  হাতে নাতে প্রমাণ। যা মরিচের গুড়ার ব্যবস্থা কর।
(ওরা হৈ-হৈ করে যেতে গেলে খোকা এসে বাঁধা দেবে)

খোকা    
দাদা আপনারা একটু থামেন, একটু।

বাশরি    
দোহাই আপনারে একটু শান্ত হোন আপনারা।
(ইতোমধ্যে শমশের দড়িতে লাইট বেঁধে নিয়ে আসে)

২য় গ্রামবাসী    
আপনারা সবাই চুপ করেন। শমশের তা ঐ আইসে গেছে, তার কথা শোনেন।
(শমশের দড়ি সহ লাইট কূপের মধ্যে নামাবে। পর্যবেক্ষণ করবে। অন্যরা গভীরভাবে অপেক্ষা করবে। শমশের নিঃশব্দে সরে আসবে)

১ম গ্রামবাসী    
চাচা মিয়া কন কি দেখলেন, কি সমাচার?

শমশের    
তোরা সবগুলো হইছু বাঁদর বদমাইস! একটা জিনিস জানা নাই, বুঝা নাই আগেই ফাল পারিস। ইডা কত বড় একটা সমস্যা হলো বুঝিস?
(নিঃশব্দে হাঁটে কূয়া দেখে)

বাশরি    
কি দেখলেন দাদা?

খোকা    
কাকা কি বুঝলেন?

শমশের    
মারা গেছে।

সবাই    
(আর্তনাদ) মারা গেছে!

শমশের    
হ্যাঁ-কূয়োর গ্যাসে অনেক আগেই সে মারা গ্যাছে। এখন পানি মধ্যি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। (আবার টর্চ জ্বেলে) ঐ তো ফুলে একে বাড়ে ঢোল  হয়ে গেছে।

ছোটন    
ইস একজন তরতাজা মানুষরে।

১ম গ্রামবাসী    
(কাছা এঁটে) আমি নামবো, মরা তাজা যা হোক তুলে নিয়ে আসি?

সুজন    
(হেঁয়ালী করে) সাবাশ এইতো বাপের বেটা সাহসী সন্তান।

ছোটন    
(কাছা ছেড়ে দিযে) এতদিন কোনে ছিলে চাঁদ?

২য় গ্রামবাসী    
ইডা কি ফাজলামির সময়? আপনারা কি মানুষ? ভাই তুই নাম তোর কোন ভয় নাই অসুবিধা হলে দড়ি লড়াবু, আমরা টানে তুলে ফেলাবো।

১ম গ্রামবাসী    
শমশের চাচা, আমি তাহলে নামলেম।

শমসের    
একটা চড় দিয়ে সব কয়ডা দাঁত ফেলায়ে দেব হারামজাদা। (সুজন ছোটন হেসে উঠবে) এই সর্দারের ভুলে একটা লাশ হইছে, আবার তোর লাশ  হওয়ার শখ হইছে? ইডা পুরানো কূয়ে, গ্যাসে ভরা, এখানে নামলি ৫ মিনিটের মধ্যি সে মারা যাবি। বড় দাতা হইছু না। যা এখান থেকে।

ছোটন    
সুজন ওক তাড়ায়ে দে।

সুজন    
যা ভাগ।

২য় গ্রামবাসী    
তাহলি কি মানুষটা কূয়ের মধ্যিই পড়ে থাকবি।

শমশের    
সেই ব্যবস্থাই তো হচ্ছে। সুজন এদিক আয় ছোটনেক সাথে লিয়ে চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে যা, যায়ে আমার ছালাম দিয়ে সব ঘটনা খুলে কবু। চেয়ারম্যান যেন থানা হয়ে তারপর এখেনে আসে।

ছোটন    
সুজন আয়।
(যেতে গেলে খোকা বাধা দেবে)

খোকা    
দাদা আপনারা একটু দাঁড়ান। কাকা এ সময় যদি চেয়ারম্যান সাহেবকে না পাওয়া যায় এদিক তো সন্ধ্যে হয়ে আসলো।

শমশের    
কিছুই করার নাই। অপঘাতে মৃত্যু, ও রিস্ক তো পাবলিক নিতে পারে না।

বাশরি    
চেয়ারম্যান, থানা, সে মেলা ঝামেলা। দয়া করে আপনেই একটা গতি করেন দাদা।

শমশের    
আমি কি করবো?

খোকা    
ঐ যে উনি নামতে চাইলো। আপনে অনুমতি দেন ভগবানের আশির্বাদে কিছু হবিনে।

শমশের    
তোরা ইচ্ছা করে একজনেক মারচ্ছু। আমাকো কি সেই কাম করব্যার কইস?

বাশরি    
এইডে কি কন দাদা। আমরা ইচ্ছা করে মানুষ মারবো কেনে?

শমশের    
ক্যা! তোরা জানতু না যে কুয়েত গ্যাস আছে?

ছোটন    
অবশ্যই জানতো।

বিশু    
কুয়ে দেখে শুনে দরদাম করে উনি নিজিই রাজী হইছে।

বাশরি    
কয় দিন হলো জলের কষ্টে আমারে মাথা ঠিক ছিল না। এসব বুঝে উঠপের পারি নাই দাদা।

শমশের    
তাহলি নিজেরা কেউ নামলিই পারতু।

ছোটন    
আরে বোঝেন না, মরবি মুসলমান মরুক উগারে কি?

সুজন    
এ সব ষড়যন্ত্র।

১ম গ্রামবাসী    
এ কথা ঠিক না।

সুজন    
ঠিক না কি? অবশ্যই ষড়যন্ত্র।

২য় গ্রামবাসী    
কিসের ষড়যন্ত্র, ইডা একটা দুর্ঘটনা।

শমশের    
তোরা এত পরামানিক কবে থেকে হলুরে? রাতারাতি দেখি তোগারে চুল দাঁড়ি গজায়ে গেল।

ছোটন    
শালা হেদুগেরে দালাল হইছেও, ওক কত টাকা দালালি দিছু এই শালা খোকা?

খোকা    
মুখ খারাপ করবেন না দাদা, আপনারা এখেন থেকে চলে যান।

সুজন    
কি কলু শালা আমরা চলে যাবো মানে?

ছোটন    
(খোকার কলার ধরে) শালা চলে যাবো মানে, একটা জান মারুচ্ছু, তার দাম নাই?

শমশের    
এই ছেড়েদে ছেড়েদে। (ওরা ছেড়ে দেয়) এই তুমি লাইন ছাড়া কথা কও ক্যা? ওরে যাওয়ার কথা কওয়ার তুমি কে?

ছোটন    
দেখেন তো চাচা এতবড় একটা ঘটনা ঘটালো তারপর কথা কওয়ার সাইজ দেখেন।

সুজন    
মুখের ভাষা শোনেন। 

বাশরি    
(হাত জোর করে) হাত জোর করি বাবা আপনারে কাছে, আপনারা গোলমাল করবেন না, আমার কথাডা শোনেন।

সুজন    
আর কোন শুনাশুনি নাই। (ওরা বাশরিকে আঘাত করে)

খোকা    
বিশু যা তো ক্যাঠা মারা শলাডা বাইর করতো।

ছোটন    
কিরে শালা!

সুজন    
ঐ শালাক ধর। (একে অপরকে ধাওয়া দিলে গ্রামবাসী দুজন ঠেকাতে চায়। সবাই ছিটকে বেড়িয়ে যায়। শমশের চুপিচুপি কূপের পেছনে লুকায়। নেপথ্যে গোলমালের আওয়াজ আসে। শমশের মোল্লা চুপিসারে যেতে গেলে মুখোমুখি ঢোকে ১ম গ্রামবাসী)

১ম গ্রামবাসী    
মোল্লার ব্যাটা, ঘটনা যে এখন অন্যরকম রূপ নিল।

শমশের    
তা তো লিবিই।

১ম গ্রামবাসী    
এখন যে খুন জখম হয়ে যাবিনি।

শমশের    
আরে যাবের দে।

১ম গ্রামবাসী    
না না আপনে একটা কিছু করেন।

শমশের    
আমার কি করার আছে, যার মাথা তার ব্যথা। (২য় গ্রামবাসী ছুটে আসে)

২য় গ্রামবাসী    
এ ভাই, চরম মাইর ধইর শুরু হয়ে গেছে জিনিসপত্র ভাঙচুর, লুটপাট হচ্ছে।

১ম গ্রামবাসী    
মোল্লার ব্যাটা আপনে একটু ওখানে চলেন তালি সব ঠাণ্ডা হবিনি, চলেন।

শমশের    
আমি চেয়ারম্যানের কাছে যাচ্ছি, তোরা সবগুলে হইছু অসভ্য। (চলে যায়)

১ম গ্রামবাসী    
শমশের মোল্লা পলালো নাকিরে? (নেপথ্যে আত্ম চিৎকার) ইস্ কার মাথায় বাড়ি দিলরে।

২য় গ্রামবাসী    
চলতো দেখে আসি।

১ম গ্রামবাসী    
তোর মাথা খারাপ উয়ের মধ্যি যায়ে জান হারাবো? (গোলমালের চূড়ান্ত রূপ মঞ্চে আসতে গেলে ১ম গ্রামবাসী ২য় গ্রামবাসী অন্যত্র পালাবে।
(কান্না চিৎকার নিয়ে আসে বাশরি, যোগেন, বিশু, খোকা। ওদের পেছনে তেড়ে আসে প্রথমে সুজন পরে ছোটন। সুজনের হাতে লাঠি)

খোকা    
মেসো তোমরা সরে যাও। ঠাকুর দা পালিয়ে যাও লাঠিটা আমার হাতে দাও। তোমরা পালিয়ে যাও। (সুজন এলে খোকার সঙ্গে মারামারি  সংগঠিত হয়। আসে ছোটন। খোকার লাঠির আঘাতে পড়ে যায়। খোকা পালিয়ে যায়)

সুজন    
বুনে শালারে সাহস দেখলু? ঘুরে খাড়া হইছে শেষ-মেশ আমরাই মাইর খালেম! তুই শালা একটা মাইগে চোদা .. তোর জন্যিতো ...

ছোটন    
তুই বল্টু আর পল্টুক খবর দে তারপর দেখতিছি শালার বুনের বাথান আজ জ্বালায়ে দেব-চল। (ওরা চলে যাবে এনং মশাল হাতে ফিরে আসবে। সাথে দু একজন মুখ বাঁধা যুবক) জ্বালা, আগুন জ্বালা, আগুন জ্বালা। শোন তোরা ঢুকপু বাম দিক দিয়ে আমরা পেছনে থিকে আগুন লাগাবো। এক শালাও যেন বাইর হবার না পারে চল। (মশাল দিয়ে ওরা আগুনের লেলিহান তৈরি করবে যা দু একবার মঞ্চে প্রদর্শিত হবে। নেপথ্যে আগুন আগুন চিৎকার কান্না ছুটাছুটি। একটা পুটলি বুকে ধরে আসবে আতংকিত যোগেন)

যোগেন    
হায় ... হায় এখন কোনে যাবো? ও বাশরি ও খোকা, গোপালরে তোরা সব কোনে গেলুরে, ঘর দুয়ার সব পুড়ে গেল। হায়, হায় এখন কোনে যাবো মা গঙ্গা জল চাইনে জিবন ভিক্ষা দে মা।

১ম গ্রামবাসী    
(কুয়ার পেছন থেকে উঠে) ওরে, পূবে সর্দার পাড়া মানুষ খুন হয়ে গেল। (যোগেন পালিয়ে যাবে গ্রামবাসীর পুনরায় বসে যাবে কুয়াকে আড়াল করে। শমশের মোল্লার সাথে আসবে চেয়ারম্যান)

শমশের    
আসেন চেয়ারম্যান সাহেব আসেন। (চেয়ারম্যান কূয়া দেখে)

চেয়ারম্যান    
অলরেডি মারা গেছে?

শমশের    
হ্যাঁ, আমি নিজে দেখিছি, সেই নিয়েই তো এই তুলকালাম কাণ্ড।

চেয়ারম্যান    
তাহলে তো আর আমাদের কিছুই করার নাই। (নেপথ্যে গোলমাল শোনা যাবে) আপাতত গোলমালটা বন্ধ করা দরকার না, কি, মনে করেন?

শমশের    
হ্যাঁ, করেন তবে যাই করবেন একটু বুঝে সুঝে করেন।

চেয়ারম্যান    
সেই চিন্তাই তো করতিছি। এতবড় একটা ঘটনা কীভাবে যে ট্যাকেল করি। সামনে তো আবার আমার ইলেকশান।

শমশের    
আরে এখেনে তো আপনার কোন ভোট নাই।

চেয়ারম্যান    
তাও জানি, তারপরেও আপনি একটা কাজ করেন আপনি গিয়ে গোলমালটা বন্ধ করে দেন লোকগুলোকে উদ্ধার করেন।

শমশের    
আপনে থাকতে আব  রআমি ক্যা?

চেয়ারম্যান    
আরে আপনিই গ্রামের মাথা। যান তো যান।

শমশের    
সে যাই হোক আপনে হলেন চেয়ারম্যান, জনপ্রতিনিধি। আপনে থাকতে আমি যাবো ক্যা? আপনিই যান।  (ওরা একে অপরে ঠেলাঠেলি করবে)

চেয়ারম্যান    
আরে ভাই যানতো আমি তো আপনার সাথেই আছি কোনদিন তো কোল ছাড়া হই নেই যান ... যান। (শমশের ঘটনাস্থলে এগিয়ে যায়)

শমশের    
আমি শমশের মোল্লা কচ্ছি. তোমরা আর কেউ গোলমাল করো না।  চেয়ারম্যান সাহেব আইছে এখন সব কিছুর সুষ্ঠু বিহিত হবি। এই তোমরা এদিক আস আস। (রক্তাক্ত বাশরি, খোকা, বিশুকে উদ্ধার করে। দূর থেকে ভেসে আসবে- আমরা এই ঘটনার বিচার চাই, জীবনের মূল্য চাই, বিচার চাই ইত্যাদি শোনা যাবে)

চেয়ারম্যান    
অবস্থা কেমন বুঝলেন?

শমশের    
ভাল না সবাই দেখলেম মাইরমুখি।

১ম গ্রামবাসী    
(আচমকা কূয়ার পেছন থেকে উঠে দাঁড়ায়) সবাই না চেয়ারম্যান সাহেব। হাতে গোনা কয়েক জন।

চেয়ারম্যান    
আচ্ছা! ওরা জেনে শুনে এই কূয়ার মধ্যে লোক নামালো কেন?

শমশের    
আমার কথাও তো সেইডে।

১ম গ্রামবাসী    
সাতদিন হইলো সরকারি টিউকল লষ্ট, কেউ দেখে না। নিজেরা তুলে বসাবি টেকা নাই। কয়দিন পানির খুব কষ্ট হইছে।

চেয়ারম্যান    
কয়দিন পর আমি ব্যবস্থা করে দেব কইছি, সহ্য হলো না? এই বিষাক্ত কূয়েত মানুষ নামালো?

১ম গ্রামবাসী    
শোনেন শোনেন, পানি ছাড়া মানুষের এক মূহূর্ত চলে না। আপনে কয়দিন দেখতিছেন ...

শমশের    
খুবতো বুনেগেরে পক্ষে কথা কচ্ছু। এখন এই যে সব ঘটনা ঘটলো সামাল দিবি কেডা? তুই দিবু এই তুই দিবু? (হঠাৎ গোলমাল একটু জোর পাবে। ১ম গ্রামবাসি পালিয়ে যাবে। চেয়ারম্যান শমশের সচকিত হবে)

শমশের    
গোলমালটা আবার একটু জোর দিল মনে হচ্ছে।

চেয়ারম্যান    
আমাদের বোধ হয় পুনরায় রিস্ক না নেওয়াই ভাল।

শমশের    
তা হলি কি করবেন?

চেয়ারম্যান    
আমি থানায় একটা ফোন করি।

শমশের    
হ্যাঁ এখন বোধ হয় থানার আওতায় ছেড়ে দেওয়াই ভাল।

চেয়ারম্যান    
(মোবাইল ফোনে) হ্যালো, হ্যালো, কচুপাড়া থানা? জ্বী আমি চেয়ারম্যান বলছি, মানে ৭নং ওয়ার্ডে সর্দারপাড়া মানে ... (শমশের ফোন কেড়ে নেয়)

শমশের    
মানে সর্দারপাড়া চরম মারামারি চলতিছে আপনেরা তাড়াতাড়ি চলে আসেন।

চেয়ারম্যান    
(ফোন পুনরায় কেড়ে নেয়) জ্বী জ্বী, আমি ঘটনাস্থলে আছি। আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে আসুন। (পুলিশের বাঁশি, গোলমাল। চেয়ারম্যান শমশের কিছু একটা আশংকা করে কূপের পেছনে পালাবে। দ্রুত ঢুকবে সুজন ছোটন)

ছোটন    
সুজন পুলিশের বাঁশি শোনা যাচ্ছে।

সুজন    
তাহলি এখন কি করবো? (শমশের চেয়ারম্যান কূপের পেছন থেকে মাথা তুলে)

ছোটন    
চাচা এখন আমরা কি করবো?

শমশের    
পুলিশ আসতিছে শিগ্রী পালা। (ওরা পালালে আসে পুলিশ)

পুলিশ    
সব ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছি। আপাতত মনে হচ্ছে একটু শান্ত। এখন নাম ধামগুলো আমাদের জানা দরকার। বলেন কারা কারা ছিল?

চেয়ারম্যান    
এ বিষয়ে একটু পরে কথা বলি কি বলেন মোল্লা সাহেব।

শমশের    
তা তো বটেই নাম ধাম শুলেন তো একটু বুঝে সুঝেই দেওয়া লাগবি। কারা ছিল কি বিত্তান্ত ...

পুলিশ    
তাহলে এখন আমি কেইসটা ফাইল করি কীভাবে?

চেয়ারম্যান    
আপাতত বন্ধ রাখেন।

পুলিশ    
সিনসেটিভ বিষয়, উপর থেকে প্রচণ্ড চাপ আছে। কেইস একটা ফাইল করতেই হবে। আপনারা সাহায্য না করলে পুলিশ নিজ বাদীতে কেইস করবে।

শমশের    
এখানে একটা গেঞ্জাম লাগিছে?

পুলিশ    
কেমনে?

শমশের    
(রক্তাক্ত বাশরিদের দেখিয়ে) এই যে এরা সব কিছু জেনে শুনে একজন মানুষকে ঐ বিষাক্ত কূয়ার মধ্যে নামাযে দিছে। লোকটা মারা যাওয়ার খবর শুনে পাবলিক ক্ষিপ্ত হয়ে গণধুলাই দিছে, এই তো ঘটনা।

চেয়ারম্যান    
এই বিষয়টাকেই এখন আমরা টেকেল করার চেষ্টা করছি।

পুলিশ    
তাহলে তো এখন দেখতিছি আমাদেরই মহা সমস্যা কোন দিকে যাই?

চেয়ারম্যান    
ঠিক আছে আমি সরজমিন তদন্ত শেষ করে সকাল ১০ টায় থানায় আসতিছি।

শমশের    
হ্যাঁ সেই ভাল।

পুলিশ    
ওকে আমি তাহলে আসি?

চেয়ারম্যান    
এই কুয়ার লাশটা এখন উদ্ধার করার ব্যবস্থা করেন।

পুলিশ    
অনেক রাত্রি হয়ে গেল লোকজন পাওয়াই তো মুশকিল হবে?

শমশের    
পানির লাশ তো ভাই পচে যাবে। উদ্ধার হলেই আমরা দাফনের কাজটা শেষ করে ফেলবো ইনশাল্লাহ।

পুলিশ    
আচ্ছা দেখি কি করা যায়। (যেতে গেলে)

চেয়ারম্যান    
আর আজকের মত একজন পুলিশ এখানে ডিউটি রাখেন। এই যে এরা এখানে থাকলো বলা তো যায় না সাবধানের মাইর নাই, বোঝেন না?

পুলিশ    
পুলিশ একজন অবশ্যই থাকবে। ঠিক আছে আসি। (চলে যায়)

চেয়ারম্যান    
গুড নাইট। মোল্লা সাহেব চলেন আমরা ঐ দাফনের জিনিসপত্রগুলো ঠিক করি।

শমশের    
হ্যাঁ, হ্যাঁ অবশ্যই চলেন।

চেয়ারম্যান    
(বাশরিদের শান্ত্বনা দেয়) আপনারা তাহলে থাকেন আর কোন অসুবিধা নাই। পুলিশ একজন সার্বক্ষিণক থাকবে।

শমশের    
আমরাও আশেপাশেই থাকবো, আর কোন ভয় নাই। (ওরা চলে যায়। সংজ্ঞাহারা বাশরি গং যন্ত্রণায় কাতরায়। দূরে কুকুরের ডাক ভেসে আসে। এর মধ্যে কর্দমাক্ত ইব্রাহীম মাথা তোলে)

ইব্রাহীম    
বেশ রাইত হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। বুঝবেরই পারি নেই, কূয়ের গ্যাসে খানিকক্ষণ অজ্ঞান হয়ে গেছিল্যাম মনে হয়। কই দাদারা আপনারা কোনে? কাম একটু বাঁকিই থাকলো। কি ব্যাপার কোন সারা শব্দ নাই। (উঠে এসে) ও দাদা,  (হঠাৎ রক্তাক্ত বাশরিদের দেখে) সেকি এ ঘটনা কি করে ঘটলো! ও দাদারা এই টুকু সময়ের মধ্যি এত বড় ঘটনা কারা ঘটালো, কি জন্যি ঘটালো? আহারে কি জখম করিছে রে। (বাশরি অস্পষ্ট স্বরে জল খেতে চায়) পানি? পানি কোনে পাই? আন্দারে তো কিছুই চোখে পড়ে না দাঁড়াও কূয়ের মধ্যি মনে কয় এতনে কিছু পানি জমিছে একটু সবুর কর তুলে আনি। (ইব্রাহীম বালতি নামিয়ে পানি তুলবে। চিৎকার করে কুকুর ডাকে) এই যে একটু পাওয়া গেছে ধর খাও। (পানি এগিয়ে আসা দেখে ওরা হা করে ইব্রাহীম মুখে দিতে গেলে ঢোকে সিকিউরিটি পুলিশ ইব্রাহীম থমকে যায়)

পুলিশ    
এই ওখানে কে রে?

ইব্রাহীম    
আমি ইব্রাহীম। 

পুলিশ    
মোসলমান! শালা আবার ঢুকেছিস বের হ, বের হ শালা (লাঠি বাগিয়ে দাবড়ানি দেয়)

ইব্রাহীম    
(বালতির পানিটুকু রক্ষা করে) স্যার আমার একটু কথা শুনেন।

পুলিশ    
কোন শুনা শুনি নাই। এখানে ১৪৪ ধারা জারি আছে। বের হ শালা, বের হ (পুলিশ তাড়া দেয়। ইব্রাহীম পুনরায় বালতি এবং পানি রক্ষা করে)

ইব্রাহীম    
স্যার আমি ঝালাইকার চোর ডাকাত না। ঐ দাদারে একটু পানি খাওয়াই। (বালতি মুখের দিকে ধরলে পুলিশ লাথি মেরে বালতি ফেলে দেয়)

পুলিশ    
শালা তো কথা শোনে না-ভাগ শালা। (আঘাত করতে গলে ইব্রাহীম লাঠি ধরে ফেলে)

ইব্রাহীম    
আপনে বাইর হন। আপনাক এখেনে কে ডাকিছে? আমি আইছি মানুষের মুখি পানি তুলে দিবের, আপনে কি জন্যি আইছেন? আপনেক কে ডাকিছে? (ধাক্কা দিলে পুলিশ পরে যায়)

পুলিশ    
তোর বাপ ডাকিছে শালা। (উঠে ইব্রাহীমকে ধরে ফেলে) চল শালা থানায় চল। তাপর দেখাবো মজা। (মারতে মারতে নিয়ে যায়। বাশরি গং পানি খেতে চায়। ঢোকে সুজন ও ছোটন)

সুজন    
দেখুছু বুনে শালারে বিড়ালের জান এখনো মরে নাই।

ছোটন    
শালারা একটু পানি চায়।

সুজন    
চল একটু পানি দেই। (অন্য একটা ইঙ্গিত করে)

ছোটন    
চল (আগাতে গেলে আসে উদভ্রান্ত যোগেন। ওদের সামনে পড়ে যায়)

সুজন    
পানি খাবু না?

ছোটন    
চল পেট ভরে পানি খাবের দেই।

যোগেন    
জল চাইনে বাবা জেবন ভিক্ষে দে বাবা।

সুজন    
তাই কি হয় নাকি রে? (দুজন মিলে যোগেনকে তুলে নিয়ে কূয়ার দিকে আগায়)

যোগেন    
ও বাশরি, গোপাল আমাক নিয়ে গেল রে, তোরা কোনে? (কূপের মধ্যে ফেলে দেয়। যোগেন আর্তনাদ করে, কূপের মধ্যে তরিয়ে যায়)

সুজন    
খা, শালা পানি খা।

ছোটন    
আমারে একটা লিছে।

সুজন    
উগারে একটা লিলেম, শোধবোধ। (নেপথ্যে পুলিশের বাঁশি, ছোটন, সুজন পালিয়ে যায়। পেছন থেকে গান ভেসে আসবে, মা গঙ্গা জল দে মোদের কলসে ... আমরা অধম পাপী ছেলে পূজা দেই তোর চরণে  ...  মা গঙ্গা জল দে মোদের কলসে। গানের মধ্যে বিশু, খোকা, বাশরী বিদ্ধস্ত, রক্তাক্ত, তৃষ্ণার্তভাবে শূন্যে হাত তুলে জল প্রাপ্তির আকাক্সক্ষায়, ফ্্রীজ হয়)।

আসাদুজ্জামান দুলাল : নাট্যকার, সংগঠক। সদস্য- চাটমোহর সমন্বয় থিয়েটার, পাবনা