Full premium theme for CMS
বাঁশি
Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..
প্রথম দৃশ্য
[মঞ্চে আলো আসতেই দেখা যায় একটি বালকের চোখ বাঁধা। কয়েকজন বালক চোখ বাঁধা বালকটিকে ঘিরে চারদিকে ঘুরছে। চোখ বাঁধা বালকটি অন্যান্য বালকদেরকে ধরার চেষ্টা করছে। হঠাৎ সে একজনকে ধরে ফেলে]
দিপু
ধরেছি ভাই, রাঘোব বোয়াল
নামটি তাহার যেন আওয়াল।
সবাই
ঠিক ধরেছিস ঠিক ধরেছিস
আওয়াল এবার চোর হয়েছিস।
[এবার সবাই আওয়ালের চোখ বাঁধে। চোখ বাঁধার পর দিপু একটি বুলি আওড়ায়]
দিপু
ঝিঙে গাছে ফিঙে নাচে
তেঁতুল গাছে বাটা।
বলতে পারিস আওয়াল এখানে
আংলি আছে কটা।
আওয়াল
পাঁচটা।
[চোর আওয়ালকে সবাই কয়েকবার এদিক ওদিক ঘোরানোর পর মঞ্চে ছেড়ে দেয়। আওয়াল তখন যে কাউকে ধরার জন্য হাতড়াতে থাকে। হঠাৎ একজনকে ধরে ফেলে]
আওয়াল
ধরেছি ভাই রুই কাতলা
নামটি তাহার লিটন ফোকলা।
সবাই
ঠিক ধরেছিস, ঠিক ধরেছিস।
লিটন এবার চোর হয়েছিস।
[এবার সবাই লিটনের চোখ বাঁধতে থাকে। হঠাৎ একটি খেলনা বাজাতে বাজাতে সুজন মঞ্চে প্রবেশ করে। সুজনের হাতে একটি ছোটমতো ব্যাগ। সবার দৃষ্টি সুজনের দিকে]
সুজন
কিরে আমাকে রেখেই তোরা খেলা শুরু করে দিয়েছিস?
সবাই
হ্যাঁ, তুই আসতে দেরি করলি। তাই আমরা তোকে রেখেই খেলা শুরু করে দিয়েছি। ওটা কী রে?
সুজন
খেলনা।
দিপু
খেলনা। খেলনা কোথায় পেলি?
সুজন
মেলায় গিয়েছিলাম কালকে।
লিটন
বারোআনির মেলায়? গতবার আমিও গিয়েছিলাম।
সুজন
গতবারের চেয়ে এবার আরো বেশি মজা হয়েছে।
দিপু
তুই গেলি আমাদেরকে বললি না?
সুজন
আরে আমিই গিয়েছি জোর করে। বড়দা তো নিতেই চায়নি। কত কান্নাকাটি করে তারপর গিয়েছি।
দিপু
এই সুজন, মেলায় বাইস্কোপ দেখিসনি?
সুজন
হ্যাঁ, দেখেছি মানে! শুধু কী বাইস্কোপ, চর্কায় উঠেছি। ঘোড়ায় উঠেছি।
লিটন
ঘোড়ায়। কোন ঘোড়ায়রে?
দিপু
আরে বোকা দেখিসনি। ঐ যে অনেকগুলি ঘোড়া একটি মস্তবড় খামবার চারদিকে ঘুরতে থাকে। যা মজা! গতবার আমিও উঠেছিলাম।
সুজন
এবার বাইস্কোপে কী দেখেছি জানিস?
সবাই
কী দেখেছিস?
সুজন
এবার দেখেছি স্বাধীনতার কাহিনী। আমাদের দেশ কিভাবে স্বাধীন হয়েছিল সেই কাহিনী। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সেকি যুদ্ধ। কিন্তু একটা জিনিস দেখে খুব খারাপ লাগলো।
সবাই
কী?
সুজন
দেখলাম পাকিস্তানি সৈন্যদের সাথে সাথে আমাদের দেশের কিছু লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের সাহায্য করছে।
দিপু
ওদেরকে রাজাকার বলে।
লিটন
রাজাকার আবার কিরে? অন্য কোনো জীবজন্তু নাকিরে?
দিপু
আরে নাহ। তুই বইতে পড়িসনি? ওরাও মানুষ, কিন্তু স্বাধীনতার সময় স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। একই দেশের মানুষ হয়ে নিজেদের ভাই বোনদের উপর অনেক অত্যাচার করেছে।
লিটন
ও।
সুজন
আমার মনে হয় কি জানিস? এখন যুদ্ধ লাগলে আমি যুদ্ধে যেতাম।
দিপু
আমিও যেতাম।
লিটন
আমি যেতাম না। যুদ্ধের কথা শুনলে আমর খুব ভয় করে।
দিপু
তুই তো আসলে ভীতু। যাকগে তারপর কী দেখলি বল।
সুজন
বাইস্কোপ দেখার পর উঠলাম ঘোড়ায়, তারপর চর্কায়। চর্কায় ওঠার পর মজার ঘটনা ঘটলো। চর্কায় ওঠার পর যখনই চর্কা ঘুরান মেরেছে- আর একটি ছেলে ভয়ে উপর থেকে প্রসাব করে দিয়েছে।
সবাই
[হাসে] প্রসাব করে দিয়েছে!
সুজন
তারপর চর্কা শেষে গেলাম খেলনা কিনতে।
দিপু
কী কী খেলনা কিনলি?
সুজন
কিনেছি। অনেক কিছু কিনেছি। তোদের সবার জন্যেই কিনেছি।
সবাই
সত্যি বলছিস? দেখি দেখি।
সুজন
দাঁড়া, বের করছি।
[সুজন একটা একটা করে খেলনা বের করে ব্যাগ থেকে এবং বলে]
সুজন
এই ধর এটা দিপুর, এটা লিটনের, এটা আওয়ালের, এটা হুমায়ূনের, এটা তোর। আর এই যে বাঁশিগুলো এগুলো আমার।
দিপু
দেখি দেখি এতো বাঁশি। তুই না আবার হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা হয়ে যাবিরে!
সুজন
হ্যাঁ, আমি হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা হবো।
লিটন
একটা বাঁশি দে-না-আমায়।
সুজন
না বাঁশি দেয়া যাবে না।
লিটন
এতো বাঁশি দিয়ে তুই কী করবি?
সুজন
বাজাবো। আমি আমার নানার বাড়ির রাখালকে দিয়ে বেছে বেছে বিভিন্ন নামের বাঁশি কিনেছি। এটার নাম কি জানিস? এটার নাম আড়বাঁশি, এটার নাম পাতাবাঁশি , এটার নাম মোহনবাঁশি, আর এটার নাম.... ভুলে গেছি।
আওয়াল
এই! মোহনবাঁশি আবার নাম হয় নাকিরে? এটা না মানুষের নাম। ঐ যে আমাদের মোহন ভাই।
সুজন
বাঁশিওয়ালার চেয়ে কি তুই বেশি জানিস। সে বলে দিলো আমাকে। [একটা বাঁশি হাতে নেয়] দেখি এই বাঁশিটা একটু বাজিয়ে দেখি।
[সুজন একটি বাঁশি বাজানোর চেষ্টা করতে থাকে। অন্যান্য সবাই যার যার খেলনা বাজাতে থাকে। আস্তে আস্তে খেলনার শব্দ বাজতে থাকে। এই শব্দগুলির মধ্যে দূর থেকে একটি সুন্দর বাঁশির সুর ভেসে আসে। সুজনের মনোযোগ ঐ বাঁশির সুরের দিকে। আস্তে আস্তে অন্যান্য খেলনার শব্দ এবং আলো কমতে থাকে। বাঁশিটির শব্দ বেড়ে যায়। আলো নিভে যায়]
দ্বিতীয় দৃশ্য
[মঞ্চের এক উচ্চ স্থানে বসে বাঁশি বাজাচ্ছে এক সাধক। তেল কুচকুচে উদাম শরীর, ঝাঁকড়া বাবরি শ্বেত চুল, মৌচাকের মতো দাঁড়ি। বাঁশিতে রাগ বাজাচ্ছে চন্দ্রকোষ। সুজন আস্তে আস্তে মঞ্চে প্রবেশ করে। সাধকের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য সুজন হাত থেকে একটি বাঁশি মঞ্চে ফেলে দেয়। সাধক আঁতকে উঠে]
সাধক
কে? কে আমার মনোযোগ ভেঙে দিলে?
সুজন
[ভয়ে ভয়ে] আমি।
সাধক
আমি! আমি কে? [বালকের দিকে তাকিয়ে] কী নাম তোর উটকো বালক?
সুজন
আমার নাম- আমার নাম সুজন।
সাধক
এখানে আসার কারণ?
সুজন
তোমার ঐ বাঁশি।
সাধক
বাঁশি!
সুজন
হ্যাঁ, বাঁশি। তোমার ঐ বাঁশির সুর আমাকে নিয়ে এসেছে এখানে। তুমি আমার একটা কথা রাখবে সাধক?
সাধক
কী কথা? বল।
সুজন
তোমার ঐ বাঁশি বাজানো আমাকে শেখাবে? যেন তোমার মত করে বাজাতে পারি।
সাধক
এহ্, বাঁশি বাজানো শিখবে। যেন ছেলের হাতের মোয়া। এত সহজ নয়। এটা একটা সাধনার কাজ।
সুজন
আমি সেই সাধনা করবো সাধক।
[সাধক কিছুক্ষণ ভাবে]
সাধক
এ কাজ তুই পারবি না।
সুজন
পারবো সাধক। এই দেখো আমি মেলা থেকে কতগুলি বাঁশি কিনে এনেছি।
সাধক
দেখি কী বাঁশি কিনেছিস?
[সুজন বাঁশিগুলি সাধকের হাতে দেয়। বাঁশি দেখে এবং কিছুক্ষণ পর]
সাধক
শিখাতে পারি, কিন্তু কতগুলো শর্ত আছে। শর্তগুলো মানতে পারবি?
সুজন
পারবো সাধক।
সাধক
তাহলে এবার যা। কাল নিশিরাতে আসবি শর্তগুলো বলবো আর বাঁশি বাজানো শিখাবো। তবে হ্যাঁ কঠিন পরিশ্রম করতে হবে কিন্তু?
সুজন
করবো সাধক। তুমি যা বলবে আমি তাই করবো।
সাধক
তা হলে এবার যা।
[সুজন বেরিয়ে যায়। সাধক আবার বাঁশিতে একটা সুর বাজায়। আস্তে আস্তে আলো নিভে যায়]
তৃতীয় দৃশ্য
[ভয়ানক চেহারার এক অত্যাচারী প্রেতাত্মা। চোখে মুখে তার ক্রোধের চিহ্ন। তার সাথে আরো দু’জন। তাদের আস্তানায় বসে আছে]
প্রেতাত্মা
বীরবল।
বীরবল
জ্বী মহারাজ।
প্রেতাত্মা
ঐ সাধক ব্যাটার বাঁশি বাজানো বন্ধ করবার উপায় কী?
বীরবল
বন্ধ করবার আপাতত কোনো উপায় নেই মহারাজ।
প্রেতাত্মা
কী বলছো তুমি? তাহলে তো সাড়ে সর্বনাশ। এই বাঁশিকে স্তব্ধ করে দিতে হবে চিরদিনের জন্যে। কারণ, বাঁশির সুর হচ্ছে একটি সুন্দর ও কোমল জিনিস যা কিনা শান্তি ও সৌন্দর্যের প্রতীক। তাই মানুষ যদি প্রতিদিন এই সুর শুনতে পায় তাহলে মানুষের মন সুন্দর হতে থাকবে কোমল হতে থাকবে। আর মানুষের মন যদি সুন্দর হয়ে যায় তাহলে তো পৃথিবীতে ঝগড়া-ঝাঁটি, মারামারি, কাটা-কাটি হবে না। এসব ছাড়া কি পৃথিবী চলবে? না না এটা হতে দেওয়া যায় না। বীরবল যেমন করে পারো ঐ সাধক ব্যাটাকে ধরে নিয়ে আস।
বীরবল
মহারাজ ওকে ধরে আনা যে ভীষণ কঠিন।
প্রেতাত্মা
কেন কঠিন কেন?
বীরবল
ওদের শক্তি যে আমাদের চাইতে অনেক বেশি। তাই ওদের সাথে জোর করে পারা যাবে না। সুকৌশলে এগুতে হবে।
প্রেতাত্মা
তুমি তো বড় বুদ্ধিমান হে।
বীরবল
সবই আপনাদের শিক্ষা মহারাজ।
[আলো নিভে যায়]
চতুর্থ দৃশ্য
[সাধক এবং সুজন মঞ্চে কথা বলছে। আলো আসে। সময় রাত]
সাধক
আজ আমি আমার বাঁশিটা তোকে দিয়ে যাবো। এই বাঁশি তোকে রক্ষা করতে হবে। আর আমি যেভাবে বলেছি ঠিক সেভাবে কাজ করবি। মনে রাখবি এই বাঁশি যেন কোনোদিন হাতছাড়া না হয়। যদি হাতছাড়া হয় তাহলেই কঠিন বিপদে পড়বি। তবে হ্যাঁ, বিপদে যদি পড়িস কখনো; চন্দ্রকোষ রাগটা বাজালেই আমার সন্ধান পাবি।
সুজন
আশীর্বাদ করো আমায়। যেন তোমার সম্মান আমি রক্ষা করতে পারি।
সাধক
ধর- বাঁশিটি ধর।
[সুজন সম্মানসূচক ভঙ্গিতে কদমবুচি করে বাঁশিটি নেয়]
সাধক
এবার ঐ রাগটি ধর।
সুজন
কোন রাগটি সাধক?
সাধক
ঐ- যে রাগের আহ্বানে-
চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি।
ধেঁয়ে আসে সাত আসমানের পরী।
সুজন
আমি কি পারবো সাধক?
সাধক
পরিব না এ কথাটি বলিবে না আর
একবার না পরিলে দেখ শতবার।...ধর।
[সুজন বাঁশিতে হংসধ্বনি রাগটি বাজাতে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ বাজানোর পর পরীর দল মঞ্চে প্রবেশ করে এবং বাঁশির সুরের সাথে নাচতে থাকে। এক সময় সুজন বাঁশি বাজানো থামিয়ে দেয়। সুজন মনে মনে আনন্দিত হয়। সাধককে না দেখে ভীত হয়ে যায়। এদিক ওদিক সাধককে খুঁজতে থাকে। তখন পরীরা বুঝতে পেরে বলে]
পরী
তুমি ভয় পাচ্ছো কেনো? আমরা তোমার বন্ধু।
সুজন
[ভয়ে ভয়ে] সাধক... সাধক কোথায়?
পরী
সাধক আসবে...। সময় মতো ঠিকই আসবে।
সুজন
তোমরা কি জানো?
পরী
হ্যাঁ, জানি। শোনো আজ থেকে আমরা তোমার বন্ধু, সাধক আমাদেরকে তোমার কথা বলে গেছে। বন্ধু আজকে আমার জন্মদিন। আমার জন্মদিনে তোমাকে বাঁশি বাজাতে হবে। তাই জন্য তোমাকে আমরা নিতে এসেছি।
সুজন
কোথায় নিয়ে যাবে?
পরী
আমাদের রাজ্যে।
সুজন
তোমাদের রাজ্যে যাবো- আমার কি পাখা আছে!
পরী
আমরা তোমাকে নিয়ে যাবো।
সকল পরী
হ্যাঁ, আমরা তোমাকে নিয়ে যাবো।
সুজন
আচ্ছা তোমাদের রাজ্যে দেখার মতো কী কী জিনিস আছে?
পরী
আমাদের রাজ্যে সব কিছুই দেখার মতো।
সুজন
তোমাদের রাজ্যে কি সপ্তাশ্চর্যের টেমস নদী, মস্কোর ঘণ্টা, চিনের প্রাচীর এসব আছে?
পরী
এর চেয়েও আশ্চর্যজনক জিনিস আছে। তুমি গেলেই সব দেখতে পাবে।
সুজন
তাহলে তোমরা দাঁড়াও আমি মাকে বলে আসি।
পরী
বলার দরকার নেই, তুমি যাবে আর আসবে।
সুজন
তাহলে কি আমি পালিয়ে যাব?
পরী
পালিয়ে কেন? এখনতো সবাই ঘুমিয়ে আছে। সূর্য ওঠার আগেই তোমাকে পৌঁছে দিয়ে যাবো।
সুজন
ঠিক আছে তাহলে কিন্তু বেশিক্ষণ থাকবো না। যাবো- তোমার জন্মদিনে বাঁশি বাজাবো। তারপর একটু বেড়িয়ে আসবো।
পরী
ঠিক আছে। চলো।
[সাথে সাথে একটি মিউজিক বাজে। মিউজিকের তালে তালে সবাই নাচতে নাচতে বেরিয়ে যায়। আলো নিভে যায়]
পঞ্চম দৃশ্য
[পরীর রাজ্য। পরীর মা, বাবা ওদের জন্য অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণ পর একটি মিউজিকের সাথে পরীর দল নাচতে নাচতে মঞ্চে আসে]
পরী
সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ি দিয়ে
এসেছি মা বন্ধু বাঁশিওয়ালাকে নিয়ে।
মা
বেশ করেছিস
পরীর রাজ্যের মান রেখেছিস।
[সুজনের কাছে গিয়ে]
বাবা তোমায় জিগাই এবার
বলবে একবার নামটা তোমার।
সুজন
আমার নাম সুজন। অনেকে আমায় বাঁশিওয়ালা বলেও ডাকে।
মা
নামটা তোমার সুন্দর বটে
যেন গোলাপ গাছে গোলাপ ফোঁটে।
কন্যাবতী মা পরী মা
পরাও এবার নতুন জামা।
পরী
এসো বাঁশিওয়ালা
জামা পরবে জরিওয়ালা
[পরীরা সবাই সুজনকে নতুন জামা পরায় এবং মাকে বলে]
পরী
মাগো এবার শুরু করো।
বাঁশির সাথে নাচ করো।
[পরীরা সুজনের বাঁশির সুরের সাথে নাচতে থাকে। পরীদের সবার হাতে একটি করে প্রদীপ। আস্তে আস্তে বাঁশি থেমে যায়। আলো নিভে যায়]
ষষ্ঠ দৃশ্য
[প্রেতাত্মার আসর। বাঁশির সুর শুনে উদ্বিগ্ন প্রেতাত্মা]
প্রেতাত্মা
বীরবল সেই বাঁশির সুর এখানে কী করে এলো?
বীরবল
এক মনুষ্য বালক বাজিয়েছে।
প্রেতাত্মা
কে সেই মনুষ্য বালক?
বীরবল
সেই সাধক ব্যাটার শিষ্য। সেই সাধক ব্যাটা এই বালককে বাঁশি বাজানো শিখিয়েছে।
প্রেতাত্মা
ওর এতো বড় সাহস? এই উটকো বালক পরীর রাজ্যে কী করে এলো?
বীরবল
কন্যাবতী পরীর জন্মদিনে বাঁশি বাজাতে নিয়ে এসেছে ওকে।
প্রেতাত্মা
বাঁশি বাজাতে এসেছে পরীর রাজ্যে, ওর সাহস তো কম নয়। পৃথিবীর মানুষকে সুন্দর করতে চায়? আবার পরীদেরকেও... বীরবল এটা হতে দেয়া যায় না। তাহলে আর আমাদের জন্ম কেন?
বীরবল
এই তো সুযোগ মহারাজ। এই মনুষ্য বালক এখন পরীর রাজ্যে ঘুরতে বেরুবে। ঘুরতে বেরুলেই ওকে আটকাতে হবে। মহারাজ, ওর হাতে সাধকের দেয়া একটি বাঁশি আছে। বাঁশিটি কেড়ে নিলেই ওর আর বাঁচবার ক্ষমতা থাকবে না। আর সেই সাধক ব্যাটার প্রতিশোধও নিতে পারবেন।
প্রেতাত্মা
তুমি এতো সব জানলে কী করে?
বীরবল
আমি তো এতদিন ওর পেছনে ছায়ার মতো লেগে ছিলাম। তাই এসব জানতে পেরেছি।
প্রেতাত্মা
যাও আর দেরি নয়। এক্ষুণি ধরে নিয়ে আস ওকে।
বীরবল
হ্যাঁ, এতক্ষণে ঘুরতে বেরিয়েছে। আমি যাচ্ছি মহারাজ।
[বীরবল বেরিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর সুজনকে ধরে নিয়ে এসে মঞ্চে ধাক্কা মেরে প্রেতাত্মার সামনে ফেলে দেয়। প্রেতাত্মা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। সুজন ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যায়]
প্রেতাত্মা
বীরবল ওর কাছ থেকে বাঁশিটি কেড়ে নাও।
বীরবল
এই! বাঁশি দে।
সুজন
না বাঁশি দেব না। নিও না বাঁশি।
বীরবল
দে, দে বাঁশি।
[জোর করে বাঁশি নিতে যায়]
সুজন
[চিৎকার করে বলে] বাঁশি নিও না। নিও না আমার বাঁশি। সাধক... সাধক তুমি কোথায়। আমার বাঁশি নিয়ে গেল। আমাকে বাঁচাও। আমাকে বাঁচাও সাধক....
প্রেতাত্মা
আর কেউ তোকে বাঁচাতে পারবে না।
[হাসে প্রেতাত্মা। সুজন চিৎকার করতে থাকে। প্রেতাত্মারা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। সুজন এক সময় সহ্য করতে না পেরে মাটিতে গড়াগড়ি যায়। বেশ কিছুক্ষণ পর সাধকের সেই সুরটির কথা মনে পড়ে। কিন্তু উপায় নেই সাধকের দেয়া বাঁশিটি যে নিয়ে গেছে, কী করে বাজাবে! হঠাৎ তার মনে পড়ে তার ব্যাগে অন্য একটি বাঁশি আছে। ব্যাগ থেকে বাঁশিটি অতি কষ্টে বের করে। সাধকের শেখানো চন্দ্রকোষ সুরটি বাজনোর চেষ্টা করে। কয়েকবার চেষ্টা করে হঠাৎ সেই সুরটি বাঁশিতে উঠিয়ে ফেলে। সুজনের শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। সুরটি কোনোমতে বাজানোর পর অজ্ঞান হয়ে মঞ্চে পড়ে যায়। প্রেতাত্মারা হাসতে থাকে। হঠাৎ বীরবলের মনে হয় ঐ সুর বাজিয়েছে এখনতো সাধক ব্যাটা চলে আসবে]
বীরবল
মহারাজ।
[মহারাজ হাসি থামায়]
প্রেতাত্মা
বলো।
বীরবল
আর এক মুহূর্ত নয় এখানে।
প্রেতাত্মা
কেনো?
বীরবল
সেই সাধক ব্যাটা নিশ্চই এতক্ষণে সংবাদ পেয়ে গেছে। এক্ষুণি হয়তো চলে আসবে।
প্রেতাত্মা
আসুক বাঁশি এখন আমার কাছে।
বীরবল
আসলে যে বিপদ হবে আমাদের। বাঁশি তো কেড়ে নেবেই আবার প্রতিশোধ নেবে ঐ বালকের।
প্রেতাত্মা
তাহলে চলো।
[প্রেতাত্মারা মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যায়। মঞ্চে সুজন অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে। এর মধ্যে দূর থেকে সাধকের বাঁশির সুর ভেসে আসে। ঝড়ের গতিতে বাতাস বইতে থাকে। বাঁশির সুর আস্তে আস্তে কাছে আসে। সাধক মঞ্চে প্রবেশ করে। সুজনকে ঘিরে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে বাঁশি বাজায়। বাঁশির সুর দ্রুত থেকে দ্রুততর লয়ে বাজতে থাকে। সেই দ্রুত লয়ের সাথে সুজনও দুলতে দুলতে উঠতে থাকে। এক পর্যায়ে সুজন দাঁড়িয়ে যায়। সুজন সাধককে দৌঁড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। ফ্রিজ হয়। আলো নিভে যায়]
সায়ফুজ্জামান শামীম- নাট্যকর্মী, সদস্য- আরণ্যক নাট্যদল, ঢাকা