Full premium theme for CMS
প্রিয় দেশবাসী
Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..
[মঞ্জু সরকারের গল্প অবলম্বনে পথনাটক]
(আমানুল্লার শায়িত শরীর কাঠের মতো অনড়। চোখ দু’টো বন্ধ। দু’জন বালক অদূরে গুলতি খেলছে। চোখ পড়ে আমানুল্লার উপর)
বালক ১
ঠিকে রে, দাদা হামার মরি গেইছে। বিহান থাকি নড়ে চড়ে না, চোউখ খোলে না!
বালক ২
মারুক! ওই বুড়া মইলে তো ন্যাটা যায়। চলতো খ্যাতাখান সরে দেখি, মরি গেইছে না বাঁচি আছে?
বালক ১
খপরদার, ভূতে ধরপে। মানুষ মলে ভূত হয় জানিস না? চল্ দাদীক খপর দেই।
বালক ২
চল্।
(ওরা ব্যঙ্গ করে গান গায়)
দাদা হামার মরি গে’ছি
চক্ষু তু’লা চায় না
দাদা সুপারী খায় না।
দাদা হে.... হারে দাদা হামার শেওড়া গাছে
দাদীর খপর নেয় না
দাদা হামার উড়ি বেড়ায়
মাটিত পা দেয় না
দাদা হে...।
(গান গেয়ে আমানুল্লাকে ঘিরে ওরা চক্কর লাগায়। আমানুল্লা চোখ পিটপিট করে তাকায়। মাথাটা কাত করে দেখে ছেলে দু’টো দৌঁড়াচ্ছে। তার চোখে বেঁচে থাকার আনন্দ, ঠোঁটে হাসির রেখা। কাছেই মুরগীর বিষ্ঠা দেখে দূর দূর করে মুরগীটা তাড়িয়ে দেয়। গায়ের ময়লা কাঁথাটা সরিয়ে নিজের বেঢপ ফোলা ফোলা হাত পা খুঁটিয়ে দেখে)
আমানুল্লা
হে আল্লা, তোর আজরাইল কি আমানুল্লাক চোখে দেখে না?
(ভীড় ঠেলে একজন এসে সামনে দাঁড়ায়। সে সূত্রধর)
সূত্রধর
হ্যাঁ, এভাবে আমানুল্লা আজকাল আজরাইলকে রোজই ডাক দেয়। আজরাইল আসে না। কিন্তু না ডাকতেই যখন তখন ছুটে আসেন রাষ্ট্রপতি। স্মৃতি-সত্তা তোলপাড় করে হেলিকপ্টারে চড়ে আসেন তিনি, যেন আমানুল্লাকে অভয় ও সান্ত্বনা দেয়ার জন্যেই। হেলিকপ্টারে রাষ্ট্রপতির আগমন-ঘটনাটা এ গাঁয়ের ইতিহাসে তো একবারই ঘটেছিল। কিন্তু আমানুল্লার জীবনে রোজই ঘটে, চোখ বন্ধ করে এখনও স্পষ্ট দেখতে পায় সে তিস্তা নদীর উপর দিয়ে ফটফট আওয়াজ তুলে ঐ এগিয়ে আসে হেলিকপ্টার। গাঁয়ের শান্ত আকাশ, স্বাধীন বাতাস ছিন্নভিন্ন করে ভীড়ের দিকে এগিয়ে আসে সাদা হেলিকপ্টার। স্কুল ময়দানে সমবেত হাজার চাষা-ভুষা ভুখা-নাঙা মানুষের মন খুশিতে খলবল করে। হেলিকপ্টার দেখার আনন্দ আর রাষ্ট্রপতিকে দেখার উত্তেজনা ছাড়া দশ গাঁয়ের জনমানুষের মনে যেন আজ আর কোনো দুঃখ–কষ্ট নেই। -তা হলে দেখা যাক সেদিন এই গাঁয়ে কী ঘটেছিলো।
(সূত্রধর আবার ভীড়েই হারিয়ে যায়। উঁকি দেয় বালক ১)
বালক ১
ও দাদা শুনিছিস বাহে আইজকা আষ্টপতি আসপে।
আমানুল্লা
আষ্টপতি আসপে । সত্যি কলি?
বালক ১
হ’দাদা। আজকাই আসপে। দেশের পেরসিডেন। দাদা, পেরসিডেন দেখতে কেমুন গো দাদা?
আমানুল্লা
মুই কী জানোম? দেখছোম তাক কোনোদিন?
বালক ১
দাদা, আজ তো দেখপা। মোক নিবা তোমার সাথে? বড় মানুষ ছাড়া কাকো আইজ অটি যাবার দিবা নয়। দাদা, তোমার সাথে গেলে যাবার দিবা নয়?
আমানুল্লা
ছোটপোলের যাওয়া নিষেধ।
বালক ১
তাইলে তুমি একলায় দেখি আসো। পরে হামাক কও আষ্টপতি দেখতে কেমুন। চলো হাতে ধরি নিয়ে যাই।
(ছেলেটির হাত ধরে বুড়ো উঠে দাঁড়ায়। যেতে উদ্যত হয়। হেলিকপ্টারের ভোঁ ভোঁ শব্দ ও লোকজনের প্রচণ্ড কোলাহলে বুড়োর গায়ে ধাক্কা লাগে। কিছুসংখ্যক লোক দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে এসে বুড়োর গায়ে ধাক্কা খায়। সে পড়ে যায়। ছেলেটি ভয়ে পালিয়ে যায়। বুড়ো মাটিতে গড়াগড়ি যায়। আবার উঠে দাঁড়ায়। সেখান থেকে এক পা’ও নড়ে না)
একজন
বুড়োর শখ দেখছেন, এক পা কবরোত যাবার নাগছে আষ্টপতিক দেখার চাচ্ছে।
আরেকজন
যেকানে ছিল সেটি খাড়া হয়া আছে। ব্যাটা বুঝপার পারছে, তার সামনোত দিয়া হাঁটি আষ্টপতিক মঞ্চথ উঠা নাগবে।
(আমানুল্লা কপালে হাতের তালুর ছাউনি দিয়ে দেখে রাষ্ট্রপতি আসছে কিনা। ‘আষ্টপতি- জিন্দাবাদ’ শ্লোগান দিয়ে জনতা প্রবেশ করে। তাদের ধাক্কাধাক্কিতে আমানুল্লা আবার পড়ে যায়। মুখে চাপা হাসি, চোখে কালো চশমাআঁটা রহস্যময় রাষ্ট্রপতি লোকজনকে হাত নেড়ে অভিনন্দন জানাতে জানাতে মঞ্চে প্রবেশ করছিলেন। আমানুল্লার কাছে এসে থমকে দাঁড়ান। একটু কুঁজো হয়ে তার হাত চেপে ধরে কুশল জিজ্ঞেস করলেন। বুকে ধরে পিঠে আদুরে কিল দিলেন কয়েকটি। এক ভদ্রলোক ক্লিক ক্লিক করে ছবি তুলতেই রাষ্ট্রপতি আমানুল্লাকে ছেড়ে দিয়ে ডায়াসে দাঁড়ালেন। জাতীয় সংগীত বেজে উঠলো। সবাই দাঁড়ায়। আমানুল্লা বসে আছে দেখে দু’জন লোক আমানুল্লাকে ধরে জোর করে দাঁড় করায়। জাতীয় সংগীত শেষ হলেও আমানুল্লা বসে না। হা করে রাষ্ট্রপতির দিকে তাকিয়ে থাকে। মুখের হা-তে বিস্ময় খেলা করে। ওরা আমানুল্লাকে জোর করে বসাতে চায়। তাতে আমানুল্লা ক্রুদ্ধ হয়। অবশেষে বসে। মাইকের গর্জন শোনা-যায়। ভাইসব বসে পড়ুন এক্ষুণি মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষণ শুরু হবে। সভাস্থল নীরব হয়। দু’হাত তুলে রাষ্ট্রপতির মুক-ভাষণে আরো নীরবতা নেমে আসে। পাশ্চাত্য ধ্রুপদ সংগীতের সুরে নীরবতা ভাঙতে থাকে। রাষ্ট্রপতির ভাষণে জনতা উত্তেজিত হয়ে উত্তাল তরঙ্গের মতো যেন পাড়ে আছড়ে পড়ে। সংগীতের সুর মূর্ছনা থেমে যায়। রাষ্ট্রপতি অনেকটা বুড়ো আঙ্গুল দেখানোর মতো ডানহাত-খানা নাড়তে নাড়তে প্রস্থান করে। হেলিকপ্টারের পাখার ফট্ফট্ শব্দ শোনা যায়)
জনতা ১
আরে আসছিল খালি ভোট চাওয়ার জন্য।
জনতা ২
খালি ভোট কেন বাহে, হামাগরের জন্য যে হাসপাতাল বানায় দেবে।
জনতা ৩
স্কুল গড়ি দিবে কয়া গেলো, দুই নাক্ষ টেকা দিবে কয়া গেল।
জনতা ১
আরে থো। বাকির কাম ফাঁকি বাহে। স্কুল হাসপাতাল ধুয়া কি হামরা পানি খামো?
জনতা ২
হিহি হাহা শালার কথা শোনেক, আরে সেই জন্যে তো উৎপাদন বাড়াবার কতা কয়া গেল।
জনতা ১
উৎপাদন বাড়িলে গেরস্ত মহাজনের গোলা ভরবে, হামার মত কামলা কিষাণের লাভটা কী?
আমানুল্লা
আচ্ছা হেলিকপ্টার খান কি তার নিজের? কতো দাম হবে বাহে? মোর বোধে কয় হাজারেরর কম নয়।
জনতা ৪
শালা ছোট লোকের আন্দাজ দেখ। একশো হাজার কহে, একশো হাজার।
একজন
বুড়াটা কাঁয় বাহে, নামাটাড়ির আমানুল্লা না?
আরেকজন
আষ্টপতি কী কয়া গেল তাক, কী দিয়া গেল?
একজন
চল তো দেখি, চল চল।
(আমানুল্লার কাছে যায়)
আরেকজন
ও চাচা, কানে কানে কী ক’লো বাহে? তোমাক চুপ্পৎ করি কী দিয়া গেল বাহে?
আমানুল্লা
ইস তুলার চাইতেও নরম তুলতুলা বুকখানা হে।
একজন
শালা বুড়া কয় কী! ব্যাটা ছোলের বুক আবার নরম হয় কী করি?
আমানুল্লা
না বাহে, না। নরম তো হাতখেন, বুক বাহে নোহার চাইতেও শক্ত। মোক বুকৎ জড়ি ধরি এমন একটা যাতা দিছে- (বর্ণনার ভাষা খুঁজে না পাওয়ার দৈন্যটুকু আবেগাপ্লুত আলিঙ্গনের ভঙ্গি দিয়ে ঢেকে দেয় আমানুল্লা। ভীড়ের মধ্যে হাসির ঢেউ জাগে) মুই নিজের চোখে দেখলোম বাহে তার পকেটৎ শতকি নোটের বান্ডিল, আহা এতো টেকা! সেই জন্যে তো কয়া গেল- কেউ আর না খায়া মরবি না, বেনা চেকেস্সায় মরবি না।
সবাই
ঠিক বাহে, ঠিক।
(সবাই প্রস্থান করে)
(বাড়িতে এসে বুড়ির চোখের ঝলমলে তোরণ পেরিয়ে আমানুল্লা আঙ্গিনায় পৌঁছে)
আমানুল্লা
আগে পিড়াখানা দে, খুলিত বসম!
বুড়ি
(মেয়েকে) নাইওর আসছিস জন্য হা করি থাকবি ক্যা? পাঙ্খা আনি বাতাস কর। (মেয়ে ঘরে ঢুকলে) হাঁ অকিমুল্লার বাপ, আষ্টপতি বোলে তোমাক টেকা দিয়া গেল?
আমানুল্লা
আরে ধুর মাগী, টেকা নয়, টেকা নয়...
(মেয়ে এসে বাতাস করে আমানুল্লাকে)
মেয়ে
হুউম, বাবার আরো কতা! দুনিয়া তলে গেইছে যে, আজা মোর বাপক টেকা দিয়া গেছে। মোক কিন্তুক একখান শাড়ি দেওয়া নাগবে বাবা।
আমানুল্লা
আরে পাগলি টেকা নয়, টেকা নয়- ভালোবাসা! সম্মান! তোমরা তো বুঝলা না বুড়ার কী দাম! দ্যাশের পেরসিডেন হামাক বুকৎ জড়ে ধরি...
(ছোট ছেলে আছিমুদ্দিন আসে। পেছনে তার বউ)
আছিমুদ্দিন
বাবা আচ্ছে কি? মুই আরো ইতিউতি উটকিয়া আনু। গুয়া-পান আনেক, সবাইকে দে।
বউ
বাবাজানকে দোকানের একটা পান বিনে পোয়সায় দেয়ার জন্যে তখন পাছাত নাথি দিছিলো, এখন কবার নাগছেন পান দিতে? আহারে আষ্টপতি, বিহানবেলা আসলে হামাক আর নাথি- গুড়ি খাওয়ার নাগত না (পান আনতে যায়, এনে দেয়)।
(বড়ো ছেলে আকিমুল্লা ঢোকে। সাথে তার শ্বশুর। শ্বশুরের হাতে স্যান্ডেল, কাঁধে ঝোলানো জামা, বুড়োর মেরুদণ্ড বাঁকা)
শ্বশুর
বিয়াই, বিয়াই- আসসালামু আলাইকুম।
আমানুল্লা
ওয়ালাইকুম, আরে বিয়াই-
শ্বশুর
বিয়াই, আষ্টপতি ছার যখন আসপার চাচে, তখন আসপেই। দেখা যখন কারবার চাচে, তখন করবে বাহে। মোর মামলার কথা কানৎ তুলবেন কিন্তুক-
আকিমুল্লা
আব্বা, মামলার কথা বাদ দেন এখন। আগে খাওয়া দাওয়া করবেন, তারপর। বাবা, তুমিও হামারগরে সাথে খাবেন। হামার শ্বশুর এদ্দিন পরে আসছে। দুই বেয়াই একসাথে না খালে ক্যামন হয়।
(আমানুল্লা সম্মতি জানায়। ওরা চলে যায়। আমানুল্লা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, গীতের সুর মূর্ছনা, শূন্যতার ইঙ্গিতবহ)
সূত্রধর
সেই যে রাষ্ট্রপতি একবার এসেছিলো রাষ্ট্রপতি আসে বারবার প্রতিদিন।
আমানুল্লা
আষ্টপতি, আর একবার যদিল আসলো হয়, জেবনে আর একবার যদিল দেকা হয় তার সাথে, তা হলে...
(বুড়ির কান্নার স্বর, বিলাপের শব্দ আসে। আমানুল্লার ঠোঁটে সুখি হাসির রেখা। বগলে মোয়া-মুড়ির ডালা নিয়ে বুড়ি আসে)
মরণ হয় নাই রে, কান্দিস না। যেদিন মরিম, তোক কয়া-বুলি মরিম। কানছিলি ক্যান বউ?
বুড়ি
হামাক ফের নাতি দুইটা খপর দিল তুমি মইরে গেছ। বজ্জাতের হাড্ডি।
আমানুল্লা
দিবে তো। হামি মলে তো সগলে বাঁচে।
(বুড়ি আমানুল্লাকে মুড়ি খেতে দেয়। পা মুড়ে বসে খায় আমানুল্লা)
বুড়ি
তাড়াতাড়ি খান। মুই বাইরে যাম।
আমানুল্লা
কোনঠে যাবেন বাহে?
বুড়ি
দোকানদারীত। না গেলে খাওয়া জুটবে কেমন করি?
আমানুল্লা
ও।
বুড়ি
শুনচেন, আইজ বোলে মেম্বারের এডিউৎ আষ্টপতি ভাষণ দেবে? তোমার কতা বা কয় কিছু? যাবেন শুনবার?
আমানুল্লা
শুনি মোর কিছু হবে?
বুড়ি
ছলের মা কলো, মেম্বারের এডিউৎ বোলে তোমার কথা একদিন কচে। আচ্ছা, মেম্বারের এডিওৎ পেরায় আজার ভাষণ হয়। আকিমুল্লার সমুন্ধীর এডিওৎ হয় না ক্যান? আচ্ছা, মুই তালে যাই।
আমানুল্লা
যাবি, যা। মুইও তালি যাই। আগেই মেম্বারের বাড়ি গিয়া বসি থাকি। দেখি আষ্টপতির ভাষণ হয় নাকি।
(দুজনেই চলে যায়। মেম্বারের বাড়িতে লোকজন জটলা পাকিয়ে বসে আছে। হুক্কা টানছে। হাসি মস্করা করছে। গল্পগুজবে মেতে আছে। উচ্চ আসনে বসে মেম্বার হাতে নিয়ে রেডিও শুনছে। এতে ভাওয়াইয়া গান হচ্ছে। বালক-২ কে নিয়ে আমানুল্লা প্রবেশ করে। ভিখারীর মতো প্রার্থনার ভঙ্গিতে কী যেন বলতে চায়। মেম্বার শুনেও বুঝতে পারে না। রেডিওর ভলিউমটা কমিয়ে দেয়)
মেম্বার
আরে বাহে, দশ টেক দিয়া কি এই অগের চিকিৎসা হয়? তোমার ব্যাটা দুইটাক কনু টেকা-পোয়সা জোগাড় করি বুড়াটাক টাউনের হাসপাতালে ভর্তি করি দিয়া আইসো। তা’ তোমার ব্যাটারা কয় বুড়া বাঁচি থাকি কী লাভ? তা’ কতা তো মিছা নয়। দিনকাল হচ্ছে, এখন আল্লা মাবুদের নাম করো চাচা।
(মাচান থেকে মেম্বারের কথায় সায় জানালো অনেকেই। আমানুল্লা প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে পেলো না। বুকের মধ্যে তোলপাড় করে কী যেন সব জেগে উঠতে চাইছে। পা’ কাঁপছে থর থর, দাঁড়িয়ে থাকার তাগদ নেই। দম নেয়ার জন্যে আমানুল্ল মেম্বারের পায়ের কাছে বসে হাঁপাতে থাকো)
বালক ২
ও দাদা, তোমার সেই আষ্টপতি এলায় ভাষণ দিবে, ভালো করি শোন।
(হেসে উঠে কেউ কেউ। আল্লাহর নাম স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি ভাষণ শুরু করলেন)
বালক ২
এই যে শোন দাদা, ঠিক সেই গলা, তোমাক যে বুকৎ জড়ে ধরি কতো ভালোবাসা আর সম্মান দিয়া গেছে।
(আবার হাসির রোল)
মেম্বার
চুপ করো বাহে, ভাষণ শোন।
(সভাস্থল নিস্তব্ধ হয়। রাষ্ট্রপতির ভাষণ বাজতে থাকে। বুকের মধ্যে আমানুল্লার একটা চনমন ক্রোধ জমতে থাকলো। উত্তেজনার আধিক্যে থরথর করে গোটা দেহ কাঁপতে লাগলো তার। চুপ করে বসে থাকতে না পেরে লাঠিতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ায় সে। লাঠিতে ঠক্ঠক্ শব্দ তুলে বাড়ির দিকে হাঁটতে লাগলো আমানুল্লা। রাষ্ট্রপতির ভাষণ বেজেই চলেছে। কিছুক্ষণ পর একটা চিৎকার শোনা গেলো)
আমানুল্লা
মনুরে এ-এ, মরি গেনু মুই, বাঁচাও বাঁচান হে-এ-এ-এ....
মেম্বার
কেটা? আমানুল্লার গলা না?
সবাই
হ,হ।
মেম্বার
দেখতো ঘেটু, বুড়ার কী হলো?
(বালক ২ গলা বাড়িয়ে দেখে)
বালক ২
মেম্বার সাব, দাদা হামার মরি যাচ্ছে। বুড়া মানুষ হাঁটপার না পায়া ধানক্ষেতের পানিত পড়ি গেছে। দাদা হামার মরি যাচ্ছে মেম্বার সাব।
আমানুল্লা
বাঁচান বাহে, বাঁচান...
মেম্বার
যা দৌড় দে।
(বালক ২ চিৎকার করে দৌঁড় দেয়। রেডিওতে রাষ্ট্রপতির ভাষণ উচ্চগ্রামে বাজতে থাকে। সবার মাঝে উত্তেজনা। জীবন্ত রাষ্ট্রপতি এসে সামনে উপস্থিত হয়)
রাষ্ট্রপতি
প্রিয় দেশবাসী, ইনশাল্লাহ...
(সবাই ফ্রিজ)
গোলাম শফিক- লেখক, নাট্যকার। সদস্য- বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার