Bookmaker Bet365.com Bonus The best odds.

Full premium theme for CMS

হাসান শাহরিয়ারের লেখা ও থিয়েটারে পেশাদারিত্ব নিয়ে আমার ভাবনা ও প্রস্তাবনা

Written by রামিজ রাজু.

Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..

‘থিয়েটারওয়ালা’-সম্পাদক ‘বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান ও থিয়েটারচর্চার সামনের দিন’ শিরোনামে যে লেখা এই সংখ্যায় তুলে ধরেছেন (অপ্রকাশিত অবস্থায় কপিটা আমি হাতে পাই), তা অত্যন্ত সমসাময়িক এবং প্রাসঙ্গিক।

আমাদের থিয়েটারচর্চায় কী কী পরিবর্তন আনলে আমরা আগের চেয়ে নিয়মিত ও সমৃদ্ধ-থিয়েটারচর্চা করতে পারব, তা নিয়ে অকপটে প্রবন্ধকার হাসান শাহরিয়ার তার চিন্তা-ভাবনা তুলে ধরেছেন। বিষয়টা পড়তে গেলে যখনি মনে কোনো প্রশ্ন আসে যে, ‘এই বিষয়টা এমন হলে ঐ বিষয়টা এমন কেন’, তখনি লেখার ধারাবাহিকতায় তার জবাবও চলে আসে। তাই খুব সহজেই বোধগম্য হয়। আর এ কারণেই লেখাটার সাথে পূর্ণ-সমর্থন ব্যক্ত করছি।

কিন্তু একটা বিষয়ে আমার দৃষ্টি একটু আলাদাভাবে এবং বিষদভাবে দিতে চাচ্ছি, আর তা হলো ‘থিয়েটারে পেশাদারিত্ব’, যা কিনা বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের ১১ নম্বর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে উল্লেখিত রয়েছে। তা হলো, ‘পেশাদারি থিয়েটারের ক্ষেত্র-প্রস্তুত করা’। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, পেশাদারি থিয়েটারের ক্ষেত্র-প্রস্তুতের ব্যাপারে ফেডারেশান যে কখনোই কোনো গুরুত্ব প্রদান করে নি তা খুব স্পষ্ট।

অথচ, এই সময়ে এসে থিয়েটারচর্চা করতে হলে বিষয়টা নিয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে আমাদের।

স্বাধীনতার পর এতগুলো বছর কেটে গেল, তবু থিয়েটারকে কেন পেশা-হিসেবে নিতে পারলাম না, এটা সত্যি এক বিস্ময়কর ব্যাপার! পূর্ণ-পেশা না হলেও এটা হতে পারত খণ্ডকালীন পেশা, যাকে বলা যায় ‘পার্ট টাইম জব’। এই ব্যাপারে ফেডারেশান সব সময় ছিল উদাসীন, সেই সাথে প্রতিটা দলও উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে। থিয়েটারকে যে পেশা হিসেবে নেয়া যায় বা নেয়াই উচিত, এই ভাবনা-পর্যন্ত একজন নাট্যকর্মী বা মঞ্চশিল্পীর মাথা কিংবা মন থেকে মুছে দেয়া হয়েছে। এখানে আমরা কাজ করে কোনো পয়সা পাই না কিংবা এখানে কাজ করে আমরা কোনো ‘পয়সা নিই না, এটা বলে কী একটা ‘অদ্ভুত ক্রেডিট’ নেয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়।  

কেন এটা হলো! ফেডারেশান কী ভাবছে? সব নাট্যদলগুলোই-বা কী ভাবছে, তা আমাদের জানা উচিত। প্রতিটা নাট্যকর্মী তার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়টাই এখানে দিয়ে থাকেন, অথচ যখন কিনা তার নিজেকে গড়বার সময়, সমাজে সচ্ছল-হিসেবে প্রকাশ করার সময়।
 
একেকটা নাট্যদল যখন ‘নাট্যকর্মী আবশ্যক’ শিরোনামে বিজ্ঞপ্তি দেয়, তখন এক-বুক স্বপ্ন-নিয়ে সবার আগে এবং সবচেয়ে বেশি ঝাঁপিয়ে পড়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তখন তাদের প্রত্যেকের ভেতরে এক ধরনের রঙিন-স্বপ্ন। সন্ধ্যার  সময়টাতে নিজের পড়াশোনাকে কিছুটা এদিক-সেদিক করে রোজ তাকে যেতে হয় থিয়েটারে। আবার এই সময়টাতে অনেকের অন্যকিছু বাড়তি-কাজও থাকে। যেমন, টিউশনি, যা দিয়ে হয়ত তার মেস-খরচ কিংবা হল-খরচ মেটানো যেত, তাও বিসর্জন দেয় সন্ধ্যায় থিয়েটার করতে। কিন্তু এর বিনিময়ে সে তো আর্থিকভাবে কিছু পায় না। বরং তাকে পকেট ফাঁকা করে সর্বস্ব দিতে হয়।
 
তবে, এখানে যে তার মন, মেধা, চিন্তা-চেতনা, দেশপ্রেম, মূল্যবোধ, মানবিকতা, জাতীয়তাবোধ ইত্যাদি বিকশিত হয়, একথা অনস্বীকার্য।
 
অনেক সময় নিজের ডেডিকেশন প্রকাশ করতে কিংবা থিয়েটারের প্রতি এক অদ্ভুত প্রেমে-মশগুল মনকে প্রশ্রয় দিতে,  দিনেরবেলার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়টুকুও কেটে-ছেঁটে নিয়ে থিয়েটারচর্চায় নিবেদন বা উৎসর্গ করতে হয়। কিন্তু যখন জীবনের বিশেষ-মুহূর্ত উপস্থিত হয়, তখন দেখা যায়, দর্শকের কিছু ভালোবাসা আর বাহ্বা ছাড়া আর কিছুই নেই! কারণ, জীবনে চলার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যে অর্থের (টাকাকড়ি), তা-ই তার কাছে নেই।

শুনতে খারাপ মনে হতে পারে যে, অর্থকেই (টাকাকড়ি অর্থে) এত বড়ো করে দেখা হচ্ছে কেন!

কিন্তু এটা তো সত্য যে, মঞ্চশিল্পীর নিজের খরচ নিজেকেই চালাতে হয়। তার উপর, সংসার তো তাকেই চালাতে হয়, চিকিৎসা-খরচ তো তাকেই বহন করতে হয়। নাট্যদলগুলোর কাছ থেকে সে তো এক্ষেত্রে কোনো সহযোগিতা পায় না। অথচ তার যে একটা পূর্ণাঙ্গ-জীবন আছে, সংসার-পরিবার আছে, সংকট আছে, ঈদ আছে, পূজা-পার্বণ আছে, রোগ-শোক আছে, এবং সেখানেও তার দায়-দায়িত্ব আছে, এটা ভাবতে নাট্যদলগুলো খুব একটা পছন্দ করে না।
 
আরেকটা নির্মমতা আছে এই থিয়েটার-অঙ্গনে, আর তা হলো, ‘শো মাস্ট গো অন’।
 
আজ এই সময়ে দাঁড়িয়ে এতসব সত্য-নির্মমতা নিয়ে কেউ থিয়েটার করতে না চাইতেই পারে, তাতে তাকে দোষ দেয়াটাও সমীচীন হবে না।
 
এই-পর্যায়ে শেক্সপিয়রের হেমলেট নাটকের একটা সংলাপ (সৈয়দ শামসুল হক অনূদিত) উল্লেখ করা যেতে পারে, যা খুব সত্য-নিষ্ঠুর। আর তা হলো-

জানো তো মানুষ চায় সঙ্গীত কি নাটকের মজা
ষোল আনা পেতে, কিন্তু দাম দিতে দু’আনার বেশি
নয়, শিল্পীর মূল্য কে দেয়? আলো হাওয়ার মতোই
শিল্পকলা প্রকৃতি-সহজলভ্য যেন, শিল্পী যেন
বায়ুভুখ, হাওয়া খেয়ে থাকে! মানুষের এ ধারণা
সারা পৃথিবীতে, দেশে দেশে যুগে যুগে শিল্পীদের
অবমূল্য দেখি। অথচ কী গর্ব করা শিল্প নিয়ে,
বৃথা বৃথা সব। অনাহারে থাকে শিল্পী তবু শিল্প
আঁকড়ে ধরে থাকে, অনাহার, তবু দ্যাখো অভিনেতা
কী দাপটে মঞ্চে এসে অভিনয় করে যায়, পর্দা
নেমে এলে পরে সাঝঘরে গিয়ে সে চিবোয় রুটি-
শুকনো রুটি! বড় ক্রুদ্ধ বোধ করি।

এতদিন নানাভাবে আমরা শিল্প করে গেলাম। কিন্তু আমাদের কোনো শিল্পমূল্য হলো না। আমরা দর্শনীর বিনিময়ে থিয়েটার শুরু করেছি সেই ১৯৭৩ সালে। কিন্তু শিল্পীকে তার মূল্য দিতে পারলাম না। এই দায় কার?

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান যদি এত বছরেও এই দায় থেকে নিজেকে মুক্ত করতে না পারে, তবে তার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। এক্ষেত্রে শুধু অভিনেতৃর কথাই বলছি না। থিয়েটারে আমাদের প্রয়োজন নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতা-অভিনেত্রী, সেট ডিজাইনার, সেট নির্মাণকারি, আলোক-পরিকল্পনাকারী, আলোক-নিয়ন্ত্রক, শব্দ ও সংগীত পরিকল্পনাকারী, সংগীত নিয়ন্ত্রক, প্রপস ডিজাইনার, বিজ্ঞাপন বুকিং, হল বুকিং-এর জন্য ব্যক্তি, পোস্টার-ব্যানার ডিজাইনার, পোস্টার-ব্যানার স্থাপনকারী, স্যুভেনির প্রকাশন-ব্যবস্থাপনাকারী, মহড়াকক্ষ তত্ত্বাবধানকারী (যদি থাকে) ইত্যাদি ইত্যাদি। এসবের  বাইরেও রয়েছে আরো অনেক সেক্টর বা শাখা। কত আর উল্লেখ করব!
 
কথা হচ্ছে থিয়েটারে উল্লেখিত সব শাখায়ই কাজ চলে নিয়মিতভাবে। এদের মধ্যে যারা নির্দিষ্ট-নাট্যদলের সাথে যুক্ত না (সদস্য না) তারা নামকাওয়াস্তে কিছু পারিশ্রমিক হয়ত-বা পান কিন্তু নাট্যদলের সদস্য খেটে যাচ্ছে, ‘বাজারি-ভাষায়’, ‘একদম ফ্রি’। যাকে বলে ‘মাগনা’। কিন্তু বিবেচনার বিষয় হচ্ছে, সব শিল্পী বা কর্মী উচ্চবিত্ত পরিবার থেকে এসেছে এমনটা নয়, কিংবা তাদের অন্যকিছু না করলেও পেট-চলে তা-ও নয়। ‘পেট’টার দেখভাল তাহলে কীভাবে হবে!
 
পুরো পৃথিবীতে যখন সবকিছুর মূল্য ঊর্ধমুখী, যখন কড়ি-ছাড়া খাবারপানি-পর্যন্ত জোটে না, সেখানে এই এতসব শাখার এতগুলো কাজ শুধু ভালোবাসার জোরে নিয়মিতভাবে করে যাচ্ছে কত শত-সহস্র-নাট্যকর্মী, নাট্যশিল্পী। সত্যিই বিস্ময়কর এই নিবেদন! হয়ত-বা বিস্ময়কর এই আবেগ ও বোকামিও!

আমরা আসলে জানি না, ‘আমরা বোকা হয়েই রবো’, এটাই আমাদের অ্যাম্বিশন কিনা! এতদিনেও ফেডারেশান কেন এই বিষয়গুলোতে সচেতনভাবে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিলো কিংবা দলগুলোই বা কেন ব্যক্তিগতভাবে এই ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করল না? কেনই-বা সবাই এতটা উদাসীনতার পরিচয় দিলো তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।

এতক্ষণ যে বিষয়ে আলোচনা করা হলো এগুলো কম-বেশি সবারই জানা। তবুও আরেকবার স্মরণ করে নিলাম নিজের অবস্থান বুঝতে।

কথা হচ্ছে আমরা ‘যেমন আছি তেমন রবো, ব্যাপারটা কি এমন? নাকি পরিবর্তন হওয়া উচিত?

এখন আমরা ভাবতে পারি, আমাদের থিয়েটারচর্চায় কী কী পরিবর্তন আনলে আমরা আগের-চেয়ে নিয়মিত ও সমৃদ্ধ-থিয়েটারচর্চা করতে পারব। ‘সমৃদ্ধ’ কথাটার আসলে মানে কী? সমৃদ্ধ কথাটার মধ্যে উন্নত, বুদ্ধিদীপ্ত, ঐশ্বর্যশালী ব্যাপার রয়েছে। কিন্তু আমাদের থিয়েটার কি সমৃদ্ধ বা ঐশ্বর্যশালী, যা দিয়ে তার শিল্পীদের সাথে পেশাদারি আচরণ করতে পারে? উত্তরটা অবশ্যই, ‘না’। তারমানে পেশাদার হবার জন্য আমাদের থিয়েটারকে অবশ্যই ‘সমৃদ্ধ’ হতে হবে।

এই সংকট থেকে পরিত্রাণের উপায় কী হতে পারে?
 
প্রথমত, সবার আগে প্রয়োজন সরকারি-পৃষ্ঠপোষকতা। এক্ষেত্রে, উল্টো এক ‘শিল্প-দাসত্ব’ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা বিরাজ করতে পারে। ক্ষমতাসীন-সরকার যদি এই ‘পৃষ্ঠপোষকতার’ বিনিময়ে নাট্য-আন্দোলন বা থিয়েটারচর্চাকে দিয়ে শুধু ‘নিজের কথা’ বলিয়ে নিতে চায়, নিজের ‘এজেন্ডা’ বাস্তবায়ন করিয়ে নিতে চায়, তখন কী হবে! এর সমাধান তো একটাই। সরকারের সাথে যে সংগঠন বোঝাপড়া করবে, অর্থাৎ, ধরা যাক ‘বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান’, তাকে হতে হবে ‘নাট্য-বান্ধব-ফেডারেশান’। সে শক্ত-মেরুদ- নিয়ে সরকারের সাথে বোঝাপড়া করবে। পূর্ণস্বাধীনতা দিয়ে, নির্মোহ হয়ে সরকারকে অবশ্যই থিয়েটারের পাশে দাঁড়াতেই হবে। কোনো দলকে কিংবা সমগ্র থিয়েটারকে সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে ঐ দল বা দলগুলোর বিগতদিনের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে করতে হবে। এক্ষেত্রে ফেডারেশান (যেহেতু সে নাট্য-বান্ধব হবে বলে ধরে নিয়েছি) বা কোনো নির্বাচিত কমিটিও নির্মোহ হয়ে সরকারকে সাহায্য করবে। এই সহযোগিতা মাসিক বা বাৎসরিক হতে পারে। বাৎসরিক হলে হয়ত ভালো। একটা দল পুরো বছরের পরিকল্পনা করে সে অনুযায়ী এগুতে পারবে।  

পাশাপাশি একটা ‘জাতীয় থিয়েটারে’র স্বপ্ন অনেকদিন ধরেই আমাদের নাট্যকর্মীরা দেখে আসছে। জাতীয় ক্রিকেট টিম, জাতীয় ফুটবল টিমের মতো একটা জাতীয় নাটকের টিম থাকাটা আমাদের স্বপ্ন। এতে করে একটা টার্গেট থাকবে জাতীয় দলে কাজ করার। নিজেকে তৈরি করার একটা সুস্থ-তাড়না কাজ করবে।

দ্বিতীয়ত, বেসরকারি-পৃষ্ঠপোষকতা। এক্ষেত্রে কোনো নাট্যদল ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির সাথে একটা চুক্তি-সম্পাদনের মাধ্যমে কাজ হতে পারে। অনেক বড়ো বড়ো চলচ্চিত্র, টেলিভিশন নাটক, প্রোগ্রাম, এমনকি বিভিন্ন ইভেন্ট যদি কোম্পানির স্পন্সর-সহযোগিতায় হতে পারে, তবে থিয়েটার কেন নয়? বলে নেয়া ভালো, এক্ষেত্রে বিভিন্ন কোম্পানি যে ইতোমধ্যেই থিয়েটারে সহযোগিতা করে আসছে না তা কিন্তু না। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় বা আমাদের ‘স্বপ্নের’ তুলনায় খুবই সামান্য। এক্ষেত্রে আমাদেরকে বা থিয়েটারকে ভেবে এগুতে হবে যে, কী করলে এই পৃষ্ঠপোষকতা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে, থিয়েটারের স্বার্থ বাস্তবায়িত হবে। দুপক্ষকেই কিছুটা ছাড় দিয়ে চুক্তি হতে হবে। তা না-হলে কেন একটা প্রতিষ্ঠান শুধু শুধু থিয়েটারকে পৃষ্ঠপোষকতা করবে।

বেসরকারি-উদ্যোগে বা ব্যক্তি-উদ্যোগেও গড়ে উঠতে পারে একাধিক রেপাটরি থিয়েটার দল। যেখানে কাজ করা হতে পারে একজন নাট্যকর্মীর কাছে একান্ত সম্মানের। সেই রেপাটরি দল বা প্রতিষ্ঠান তাদের পেশাদারি-পলিসি নির্ধারণ করবে। কিন্তু  সেখানে শিল্পীরা কাজ করে তাদের আর্থিক-নিশ্চয়তা পাবে, এটা নিশ্চিত করতে হবে।
 
ঢাকা শহরে অল্প-কয়েকটা মিলনায়তন ছাড়া নাটক করবার মতো পর্যাপ্ত জায়গার অভাব অনেকদিনের। তাই সরকারি বা বেসরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় ‘জোন-ভিত্তিক’ মিলনায়তনের ব্যবস্থা করা উচিত। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, পাবলিক লাইব্রেরিসহ বেশ কিছু স্পেস আলোচনা-সাপেক্ষে থিয়েটার-উপযোগী করে নেয়া উচিত। আর্থিকভাবে কমমূল্যে যেন এই জায়গাগুলো নাট্যদলগুলো ব্যবহার করতে পারে, সেদিকটায় লক্ষ রাখা উচিত।

থিয়েটারে ‘প্রচার বা বিজ্ঞাপন’ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা অধ্যায়। এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অর্থাৎ ফেইসবুক ছাড়া তেমন কোনো প্রচার-মাধ্যম নেই। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে গেলেও ন্যূনতম (থিয়েটারের জন্য যা ‘ন্যূনতম’ না) একটা খরচ বহন করতে হয়। সরকারি টেলিভিশন-রেডিও চ্যানেলগুলো যেন এই ব্যাপারে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসে তার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি রেডিও-টেলিভিশন চ্যানেল, পত্রিকা এবং অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোকেও এগিয়ে আনার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি স্কুল-কলেজে থিয়েটারকে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সেটা নিয়মিতভাবে চর্চিত হওয়ার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের থিয়েটার দেখার প্রতি আগ্রহী করে তোলা সম্ভব।  

এককালীন প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

এক্ষেত্রে ১০-১৫ দিনের হল বুকিং নিয়ে এক-নাগাড়ে টানা একই নাটকের এককালীন শো করা যেতে পারে। প্রতিমাসে একটা করে শো করার চাইতে এটা বেশি ফলদায়ক হবে বলে মনে করছি। যখন দর্শক জানতে পারবে এটা এই নাটকের এককালীন প্রদর্শনী, নিকট-সময়ে এর প্রদর্শনী আর হবে না, তখন তিনি এই ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে কোনোদিন তার সময় বের করে প্রদর্শনীটা দেখে নেবে।

এসব পরামর্শ আসলে হাসান শাহরিয়ারের প্রবন্ধে কম-বেশি, আগে-পরে বলা হয়েছে। আমি এসবের সাথে একমত পোষণ করি বলেই, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আলোচনার বিস্তৃতি ঘটিয়েছি।

সবমিলিয়ে যে কথাটা আসলে বলার জন্য এতকিছু বলা, তা হলো, থিয়েটারকে আমরা এখন পেশা হিসেবে নিতে চাই।

পৃথিবীর সবকিছুর যেমন কোনো-না-কোনো মূল্য আছে, আমার থিয়েটারেরও একটা মূল্য থাকা উচিত। থিয়েটারটা  ফ্রী বা মাগনা দেখা উচিত নয়। এটা দর্শনীর বিনিময়ে দেখতে হবে, এটা আমরা কিছুটা হলেও বুঝেছি প্রায় শুরু থেকেই। কিন্তু  থিয়েটার মূলত চলে যাদের দিয়ে, অর্থাৎ নাট্যশিল্পীদের দিয়ে, তাদের পকেটে কেন কোনো অর্থকরীর সন্ধান মিলবে না বা ‘মেলা উচিত না, এটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।

থিয়েটারচর্চা অবশ্যই পেশাদারি হতে হবে। ফেডারেশান যদি এই দায়িত্ব নেয় তো ভালো (যদিও এতদিন নেয় নি, আর নেবে বলে আমরা আশা করতে পারি না), তা না-হলে আমাদের উচিত ফেডারেশানের উপর আমাদের প্রত্যাশা ছেড়ে নিজেদের উদ্যোগে নিজেদেরকে পেশাদারি হিসেবে সমৃদ্ধ করা। তাহলেই তরুণ-নাট্যযোদ্ধাদের একটা স্বপ্ন অন্তত পূরণ হবে। এবং তা হওয়াই উচিত।

২৭ মে ২০২২

রমিজ রাজু ( This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it. ): অভিনেতা