Full premium theme for CMS
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর : নির্বাচিত ৫০ প্রযোজনা।। প্রসঙ্গ: গোলাপজান
Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..
নাটক: গোলাপজান। গল্প: মোহাম্মদ আবু তাহের (গোলাপজানের অশ্বারোহন)। নাট্যরূপ-সংগীতপরিকল্পনা ও নির্দেশনা: এস এম সোলায়মান। মঞ্চপরিকল্পনা: কামালউদ্দিন কবির। আলোকপরিকল্পনা: ঠাণ্ডু রায়হান। পোশাকপরিকল্পনা: সিতিমা এনাম ও কামালউদ্দিন কবির। রূপসজ্জা: জয়নাল আবেদীন। পোস্টার ডিজাইন: শাহীনুর রহমান। প্রথম মঞ্চায়ন-বর্ষ: ১৯৯৫। একটি ‘থিয়েটার আর্ট ইউনিট’ প্রযোজনা
[মোহাম্মদ আবু তাহেরের গোলাপজানের অশ্বারোহন গল্প অবলম্বনে গোলাপজান নাটকের এই নাট্যসমালোচনাটি সেই শহরের আসলি মানুষ- শিরোনামে ‘বাংলা লাইভ ডট কমে’ ছাপা হয় ২৩ জানুয়ারি ২০০৭ সালে। ‘থিয়েটারওয়ালা’র এবারের বিশেষ-সংখ্যায় নাট্যসমালোচনাটি পুনঃপ্রকাশ করা হলো]
‘নাগিন’ কিংবা ‘বৈজু বাওয়া’-র মন কেমন-করা গানগুলো কীভাবে বাংলানাটকের শিরদাঁড়া হয়ে উঠতে পারে দেখিয়ে দিল ঢাকার ‘থিয়েটার আর্ট ইউনিট’-এর গোলাপজান। মোহাম্মদ আবু তাহেরের কাহিনির উপর দাঁড়িয়ে থাকা এই প্রযোজনার প্রধান রূপকার অকালপ্রয়াত এস এম সোলায়মান। গত ছদশকে পৃথিবী কতটা বদলে গেছে গোলাপজান তারই একটি মর্মস্পর্শী ধারাভাষ্য।
এখানে পৃথিবীর প্রতিনিধি হয়ে এসেছে ঢাকা শহর। সেখানকার এক সাধারণ-মেয়ে গোলাপজান। মক্তবে গিয়ে মৌলানার পায়ের তলায় বসে লেখাপড়া করতে করতে একদিন এক ঘোড়ারগাড়ির কোচোয়ানের সঙ্গে শাদি হয়ে গেল তার। নেপথ্যে সমবেত কণ্ঠে শোনা গেল ‘মিলতে হি আঁখে দিল হুয়া দিওয়ানা কিসি কা’। একসঙ্গে সিনেমা দেখে এসে মরদের মুখে ভারতভূষণের আদল খুঁজতে লাগল নববধূঁ। দেশভাগের পরও হিন্দিফিল্ম কীভাবে এই উপমহাদেশকে বিনিসুতোর মালায় বেঁধেছিল তার আভাস দিয়ে নিম্নবিত্ত মুসলমান জীবনের বর্ণময় যাপনচিত্র হয়ে উঠল দেড়ঘণ্টার এই প্রযোজনা। মায়ের ইচ্ছা ছেলে বড় হয়ে মুয়াজ্জিন হোক, আল্লা-হুজুরের বান্দা হয়ে থাকুক। বাবা চান ছেলে ফিটনগাড়ির লাগাম ধরুক। ছেলের ইচ্ছা অন্যরকম। হাতে লাটাই নিয়ে তার ঘোষণা, ‘ডাইনে কানি, বামে গোঁত্তা- ঘুড়ি উড়তাছে- যেদিন আমি মরুম, যদ্দিন বাইচ্যা থাকুম ঘুড্ডির রাজা হইয়া আসমান দখল কইরা থাকুম।’ কারোর সাধ শেষপর্যন্ত পূরণ হয় না। পাল্টে যেতে থাকে হাজার বছরের পুরোনো ঢাকা। যারা একদিন ঢাকার কেন্দ্রে ছিলেন, একটু একটু করে তাদের পরিসীমার দিকে সরে যেতে হয়। লজেন্স ফ্যাক্টরি, পঁচিশতলা বাড়ি, মোটরগাড়ির ঢাকা শহরে ঘুগনি ছেড়ে কাচের চুরি ফিরি করেও দিনগুজরান হয় না গোলাপজানের। ‘আমি এই শহরের আসলি মানুষ’- আস্ফালনও তখন আর্তনাদের মতো শোনায়। গরিব দেশ যদি বেপরোয়া হয়ে ধনী দেশের উন্নয়নের মডেল মেনে এগুতে চায়, তখন বলি হন আমজনতা। গোলাপজান তাদেরই প্রতীক হয়ে ওঠেন।
‘থিয়েটার আর্ট ইউনিটে’র এই অসাধারণ প্রযোজনার শিরদাঁড়া যে পুরোনো হিন্দিগানের টুকরো কলি তা আগেই বলা হয়েছে, এর সঙ্গে জুড়ে দিন দুর্দান্ত কম্পোজিশন, ভিজুয়ালাইজেশন, কোরিওগ্রাফি, লাইটডিজাইন আর অভিনয়। আট নজন কুশীলবের পারুলদিদি হয়েছিলেন গোলাপজানের চরিত্রাভিনেত্রী রোকেয়া রফিক বেবী। একমাত্র তারই মুখে সংলাপ দিয়েছিলেন নাট্যকার। তাই গোলাপজানের আশেপাশের সব চরিত্রকে জীবন্ত করে তুলতে বাচিক ও অঙ্গভাষা বদলে বদলে চলেছেন বেবী। দর্শক তাকে মুগ্ধকরতালিতে অভিনন্দিত করেছেন। মান্যগণ্য মানুষরাও উচ্ছ্বসিত। আগের আমল হলে কেউ-না-কেউ নিশ্চিত তাকে সোনার মেডেল দিতেন!
অংশুমান ভৌমিক ( This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it. ): ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক। ভারতের প্রথমসারির দৈনিক ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ আর বাংলা মাসিক ‘কৃত্তিবাস’ এর নাট্যসমালোচক