Full premium theme for CMS
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর : নির্বাচিত ৫০ প্রযোজনা।। প্রসঙ্গ: রহু চণ্ডালের হাড়
Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..
নাটক: রহু চণ্ডালের হাড়। উপন্যাস: অভিজিৎ সেন। নির্দেশনা: রেজা আরিফ। মঞ্চপরিকল্পনা: আলী আহমেদ মুকুল। আলোকপরিকল্পনা: শাহীন রহমান। পোশাকপরিকল্পনা: রেজওয়ানা মৌরি রেজা। পোস্টার ডিজাইন: শেখর শাশ^ত। প্রথম মঞ্চায়ন-বর্ষ: ২০১৮। একটি ‘আরশিনগর’ প্রযোজনা
[‘আরশিনগর’ প্রযোজনা রহু চণ্ডালের হাড় নাটকের এই নাট্যসমালোচনাটি রহু চণ্ডালের হাড়: বহুস্থানিক বর্ণমালায় বোনা সমান্তরাল সংস্কৃতি- শিরোনামে আবুল হাসনাত সম্পাদিত ‘কালি ও কলম’ পত্রিকায় ছাপা হয় আশি^ন ১৪২৭ সংখ্যায়। ‘থিয়েটারওয়ালা’র এবারের বিশেষ-সংখ্যায় নাট্যসমালোচনাটি পুনঃপ্রকাশ করা হলো]
‘আরশিনগর’ নামে ঢাকার এক নয়া নাটুয়ার দল এক উৎকৃষ্ট নাট্যনির্মাণ করেছে। রহু চ-ালের হাড়। ইদানীং কলকাতা বা ঢাকার প্রসেনিয়াম থিয়েটারের আঙ্গিনায় ও তাদের অনুসারী নগরনাট্যের নানান ঘাঁটিতে হরেক রকমের ভাঙাগড়ার পালা চলেছে। কোথাও বিষয়, কোথাও আঙ্গিকের দিকে নজর ঘোরানো আছে। কোথাও স্পষ্টই ভাটার টান, কোথাও জোয়ারের ইশারা। এই বিস্তৃত পরিম-লের কথা মাথায় রেখেও আমাদের বলতে হচ্ছে যে, এমন নিপুণ ও নিবিড় নাট্যনির্মাণ সচরাচর আমাদের চোখে পড়ে না। এই নাটকের অস্থিমজ্জায় যে সমবায়ী প্রয়াশের শ্রমকিনাঙ্ক আছে, এই প্রয়াসের আনাচেকানাচে এক প্রান্তিক সাংস্কৃতিক পরিসরের যে বিশ^াসযোগ্য অভিজ্ঞান আছে, এই পরিসর জুড়ে বাংলার সামাজিক ও অর্থনৈতিক-ইতিহাসের যে মন্থন চলছে সমগ্র নাট্যক্রিয়া জুড়ে তা শুধু সাধুবাদ নয়, আমাদের শ্রদ্ধা দাবি করে।
কয়েক বছর আগে এই ‘আরশিনগর’ সে রাতে পূর্ণিমা ছিল প্রযোজনা করে আমাদের চমকে দিয়েছিল। শহীদুল জহিরের উপন্যাস আধারিত সেই নাটকে কতক লাতিন আমেরিকা ঘরানার জাদুবাস্তবতার চেনা নিরিখকে নগরনাট্যের খাতে বইয়ে দেবার চেষ্টা করেছিলেন ‘আরশিনগরে’র নির্দেশক রেজা আরিফ ও তাঁর সঙ্গীসাথিরা। আমাদের তারিফ পেয়েছিলেন। এবারে আমাদের রোজকার দুনিয়ার হিসেবে কতক অচেনা এক নিরিখের তত্ত্বতালাশ করেছেন তাঁরা। অনেক জটিল, অনেক স্তরীভূত এক নির্মাণের আকাক্সক্ষা করেছেন। আধার হয়েছে অভিজিৎ সেনের উপন্যাস রহু চ-ালের হাড়।
বৃহত্তর পাঠকগোষ্ঠীর খবরের খাতিরে বলে রাখা ভালো যে, অভিজিৎ সেন আদতে বরিশালের জাতক হলেও তাঁর বেড়ে ওঠা কলকাতায়। বাংলার সংস্কৃতি ও ইতিহাসের যে সব গলিঘুঁজিতে নগরকেন্দ্রিক-সাহিত্যের ব্যাপারীরা বড় একটা যাতায়াত করেন না, সে সব দিকেই তাঁর বরাবরের মনোযোগ। প্রবল ক্ষমতাবান লেখক হলেও তাঁর লেখালেখি সম্পর্কে বাঙালি পাঠকবর্গের অনেকেই যে ওয়াকিবহাল এমন কথা জোর গলায় বলা যায় না। পশ্চিমবঙ্গে ও পরবর্তীসময়ে বাংলাদেশে এক ক্ষুদ্র পাঠকগোষ্ঠীর মধ্যে তাঁর বিচরণ। অনেকদিন আগে হরিমাধব মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় বালুরঘাটের ‘ত্রিতীর্থ’ তাঁর দেবাংশী উপন্যাসের এক বিস্ময়কর নাট্যরূপ দিয়েছিল। হালে কুন্তল মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় ‘সংলাপ কোলকাতা’ তাঁর ধর্মাধর্ম-এর এক মামুলি মঞ্চায়ন করেছে।
তাঁর রহু চ-ালের হাড় একেবারেই আলাদা গতের লেখা। ব্রিটিশ-রুশ বা মার্কিন উপন্যাসের যে সব ছাঁদ আমাদের নাগালে আছে রহু চ-ালের হাড়-কে তাদের সঙ্গে মেলানো দায়। ম্যাজিক রিয়ালিজমের চেনা লবজেও একে আটকানো যায় না। বাংলা ১৩৯২ সালের পহেলা বৈশাখ, অর্থাৎ আজ থেকে পঁচিশ বছর আগে কলকাতার ‘সুবর্ণরেখা’ রহু চ-ালের হাড় ছেপে বের করে। বিমল মজুমদারের নকশা করা সেই মলাটে ঠাঁইনাড়া একদল লোকের ছবি ছিল। তবে এই প্রচরণের পেছনে কোনো সাম্প্রদায়িক-রাজনীতির ইন্ধন ছিল না। কেননা, সেই ছবির তলায় এক খর্বনাসা নারীর মুখের আবছায়ার ওপর লেখা হয়েছিল- ‘উত্তরবঙ্গের এক যাযাবর গোষ্ঠীর জীবন সংগ্রামের কাহিনী’। এই যাযাবর গোষ্ঠী আসলে বাজিকর। ঔপনিবেশিক ভারতের চড়াইউৎরাই কীভাবে তাদের প্রভাবিত করেছে তার রঙবেরঙের বুনোটে এই উপন্যাসের বিস্তার। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানীর চোখ দিয়ে, সাম্যবাদী সমাজচিন্তকের মরমি মন নিয়ে এই আখ্যানকে কলমে ধরেছেন অভিজিৎ। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাঁসুলী বাঁকের ইতিকথা বা অদ্বৈত মল্লবর্মণের তিতাস একটি নদীর নাম-এর সঙ্গে রহু চ-ালের হাড়ের কিছু মিল থাকলেও সেটা কাঠামোগত। তা কৌমজীবনের ঘূর্ণিপাকের উদ্যাপন। তবে রাঢ়বঙ্গের কাহার বা বৃহত্তর ময়মনসিংহের মালো সম্প্রদায়ের আঁতের কথা শোনাতে বসে তার বুকে জমা থাকা কিস্সা কাহিনির ঝোলা উপুড় করে দেবার সুযোগ তাঁরা পান নি। সে তুলনায় আরও বিস্তৃত চিত্রপটে আঁচড় কেটেছেন রহু চ-ালের হাড়ের কথক। যে আখ্যানে কোনো নায়ক নেই, যেখানে কিংবদন্তি আর অতিকথা পাশাপাশি পথ চলে, তাকে ‘মহাকাব্যিক’ বললে কি কিঞ্চিৎ বেখাপ্পা শোনায়? তবে আজকালকার পরিভাষায় যাকে নি¤œবর্গীয় ও প্রান্তিক বলা হচ্ছে, তার দাঁড়িপাল্লায় এর মাপজোক করলে ওজনে বেশ ভারী দেখায় রহু চ-ালের হাড়-কে। কারণ অভিজিৎ খাপছাড়া এক যাযাবর-জাতের কয়েক পুরুষের আনাগোনার বৃত্তান্ত শোনাতে বসে লাগাতার সুইফোঁড়ে বুনে দিয়েছেন সমাজবিবর্তনের মার্কসবাদী পাঠের এক চোরা বয়ান। একেকটা লিটল ট্র্যাডিশন কেন ও কীভাবে বিগ ট্র্যাডিশনের সঙ্গে লড়াই করে, সমঝোতা করে, এমনকি দাসখত লিখে দেয়, তার অন্দরমহলকে খুলে দিয়েছেন। এই বয়ানের সুতোয় বাঁধা পড়েছে রাজমহল থেকে রাজশাহী, মণিরহাট থেকে মালদা, রংপুর থেকে পাঁচবিবি। কীভাবে কার্যকারণ সম্বন্ধের আপতিক যোগাযোগে বাজিকরদের কপাল পুড়েছে, কীভাবে দামাল এক দুনিয়াতে লেগেছে গেরস্থপনার বঁাঁধন, তার আভাস ফুটেছে ইতিউতি। এইখানে অভিজিতের ওস্তাদি।
রেজা আরিফ এর প্রসাদগুণ ঠিক চিনেছেন। প্রযোজনাপুস্তিকায় তিনি লিখেছেন, ‘এক অর্থে রহু চ-ালের হাড় অখ- বাংলার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক-মিলনের গল্প।’ এই মন্তব্যের মর্মার্থে যেমন ঐতিহাসিক-সত্য আছে, তেমন আছে যাপনিক-সূত্র। রাজপাটের কাছাকাছি থাকা খুশনসিব বাঙালি বরাবরই ক্ষেত্রবিভাজনের খোপে বসে শিল্পসাধনা করে এসেছে। ধুরন্ধর শাসককুলের পেতে রাখা অপর নির্মাণের ফাঁদে পা দিয়েছেন। অতটা ‘বাঙালি’ নয় বলেই হয়তো বাজিকরের দল ওই বিভাজনমুখী সন্দর্ভের মাপে আটকা পড়ে নি। তাদেরকে সামনে রেখে এই গঙ্গামেঘনাবিধৌত ভূখ-ের যে সমান্তরাল ইতিহাস লিখতে চেয়েছিলেন অভিজিৎ সেন, তাকে শিরোধার্য করে অবাধে পথ কেটেছেন রেজা আরিফ। পৈতে টিকি টুপি টোপরের বালাই ঘুচিয়ে দিয়েও যে একটা আগাপাশতলা বাংলানাটক বানানো যায়, তার সার্থক প্রয়োগক্ষেত্র হয়ে উঠেছে ‘আরশিনগরে’র রহু চ-ালের হাড়।
আমাদের আলোচনার স্বার্থে ওই বইয়ের ডাস্ট জ্যাকেটে কী লেখা ছিল, পুরোনো বানান না বদলে তাতে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
রহু হয়ত বা তাদের আদিপুরুষ। সেই চ-ালের হাড়ের ছোঁয়ায় তাদের যত ভেল্কি ভানুমতির খেলা। বাজিকরেরা এমনই এক যাযাবর সম্প্রদায়। উত্তরবঙ্গের দু’চারটি গ্রামে তাদের অবশেষ কিছু মানুষ এখনো যথার্থ গৃহস্থ হওয়ার জন্য লড়াই চালিয়ে যায়। স্মৃতি ক্রমশ ঝাপসা হয়, নতুন প্রজন্ম হয়ত ভাল ক’রে জানেই না পশ্চিম কিংবা উত্তর ভারতের কোন জনপদে ছিল তাদের আদি বাস, ছিল অন্য ভাষা অন্য রীতিনীতি। শারিবা তার নানি লুবিনির কাছ থেকে বাজিকরের অতীতকে তুলে আনে গল্প, গাথা, গান, এবং এক ধারাবাহিক সংগ্রামের উপাখ্যান। পাঁচ পুরুষ ধরে প্রায় দেড়শ’ বছরের এক কাহিনী, যার শুরু হয়েছিল শারিবার বৃদ্ধ প্রপিতামহ পীতমের আমল থেকে এবং যার সংঙ্গে আবশ্যিক ভাবে এসেছে এই দেড়শ’ বছরের রাজনীতি সমাজ এবং আরো অনেক উত্থান-পতনের ইতিহাস। পীতম চেয়েছিল যযাবরী বৃত্তি ত্যাগ ক’রে গৃহস্থ হতে, সেই দায় পাঁচ পুরুষ পরে শারিবা এখনো বহন করছে।
এই ধরতাইটুকুর মধ্যে রহু চ-ালের হাড় কী নিয়ে তার খানিক আঁচ মেলে ঠিকই, মেলে না আরও অনেকখানি। যিনি পড়েন নি, পড়বার উপায় নেই, সেই তাদের জন্য আরও কিছু জানান দেওয়া আবশ্যক। জানান দিতেই হয় যে, এই আখ্যানের শিরদাঁড়া হয়ে আছেন লুবিনি নামের এক প্রাচীনা। অভিজিতের ভাষায়, ‘লুবিনি বলে এক অজ্ঞাত দেশের কথা। সি দ্যাশ হামি নিজেই দেখি নাই, তোক আর কি কবো। সি দ্যাশের ভাষা বাজিকর নিজেই বিসোরণ হোই গিছে, তোক্ আর কি শিখামো!’ এই লুবিনি নানির কাছে বাজিকর সভ্যতার পূর্বমুখী প্রচরণের গল্প শোনে শারিবা। পল্পের তোড়ে ভেসে ওঠে, ভেসে যায় অসংখ্য স্থান-কাল-পাত্র।
‘আরশিনগরে’র এই নাটক নিয়ে ঢাকা তথা বাংলাদেশ যে কিঞ্চিদধিক আলোড়িত এই খবর তো কবেই কলকাতায় পৌঁছেছিল। আগ্রহ জমছিল। বাধ সাধছিল বন্দোবস্ত। শীতকালীন নাট্য উৎসবের ঢালাও মরসুমে জুতসই একটা-দুটো মঞ্চ যদিওবা পাওয়া যায়, রহু চ-ালের হাড়ের তিরিশজন কলাকুশলীর বড়সড়ো দলকে ঢাকা থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা, তদুপরি তাদের থাকাখাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য দরাজ ও দিলখোলা এক আয়োজক দরকার ছিল। এগিয়ে এল ‘অনীক’। একুশ বছরে পা দেওয়া ‘গঙ্গা-যমুনা নাট্য উৎসবে’র সপ্তম তথা শেষপর্যায়ে (২ ফেব্রুয়ারি-১ মার্চ) বাংলাদেশের নানান জায়গা থেকে বাছাই করা নাটক এনেছিল তারা। এই সুবাদে ২৯ ফেব্রুয়ারি (বাংলা ১৪২৬ সনের ১৬ ফাল্গুন) সন্ধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাট এলাকায় ‘তপন থিয়েটার’ নামের এক বুড়োটেগোছের নড়বড়ে প্রসেনিয়াম থিয়েটারে হইহই করে মঞ্চস্থ হলো রহু চ-ালের হাড়। বাংলার মাটিতে বেড়ে ওঠা বর্ণনাত্মক নাট্যভাষের আধুনিক-প্রয়োগে বাংলাদেশ যে সিদ্ধিগঞ্জের মোকামের হদিস পেয়েছে, প্রায় দুঘণ্টার এই বর্ণাঢ্য মঞ্চায়ন তার মজবুতি ভিতকে আরও পাকাপোক্ত করল।
এই মঞ্চায়নের একটা প্রাগৈতিহাস আছে। তার মুখ্য-লিপিকার জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়। অনেক দিন ধরেই এই উপন্যাস সেখানে পড়ানো হয়। সেই সূত্রে অভিজিৎ সেখানে বক্তৃতা দেবার ডাক পেয়েছিলেন ২০০৮ সালে। শুনে এসেছিলেন যে, জাহাঙ্গীরনগরের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ তাঁর উপন্যাসের নাট্যায়নে ব্রতী হয়েছে। রেজা আরিফ সেই ব্রতচারী। তারপর অনেকদিন কেটেছে। কিছুকাল আগে বিভাগীয় ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে এই প্রযোজনার একটা খসড়া চেহারা খাড়া করেছিলেন রেজা। সেই চেহারা খোলতাই হয়েছে ‘আরশিনগরে’র একদল পাগলপারা নাটুয়ার ঘামে-রক্তে-জলে। এই সংস্কৃত ও বহুবর্ণী রহু চ-ালের হাড় প্রথম মঞ্চস্থ হয় ঢাকায়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল হলে, ২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর। বাহবা কুড়োয় এন্তার। সুবাস ছড়ায় চারপাশে। কলকাতায় মঞ্চায়নের কয়েকমাস আগে সামাজিক-মাধ্যমে এক প্রতিক্রিয়া জানাতে বসে অশক্ত অভিজিৎ জানিয়েছিলেন, ‘নিজেকে খুব হতভাগ্য মনে হচ্ছে প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত থেকে এ সবের সাক্ষী হতে পারছি না বলে।’ কী আশ্চর্য সমাপতন যে দ্বাবিংশ গঙ্গা-যমুনা নাট্য উৎসবে এই প্রযোজনার দ্বাবিংশ মঞ্চায়ন হলো। এবং অভিজিৎ একেবারে সামনের সারিতে বসে তাঁর সাহিত্যের নাট্যায়ন দেখলেন। বারো বছর আগে যে বৃত্ত আঁকতে শুরু করেছিলেন রেজা, এই প্রদর্শনীতে যেন তা সম্পূর্ণ হলো।
নাট্যকার হিসেবে তিনি বহুপ্রসু না হলেও রেজা আরিফের নাট্যনির্মাণের একটা ঘরানা এতদিনে কায়েম হয়ে গিয়েছে। তিনি সহজিয়া পথে চললেও সে পথে চলা সহজ নয়। অন্তত বাংলা নগরনাট্যের যে ধারাবাহিকতায় আমরা আছি, তার সাপেক্ষে এই পথকে ক্ষুরস্যধারা বললেও কম বলা হয়। বাচিক নয়, তাঁর নাট্যনির্মাণে জোর পড়ে আঙ্গিক অভিনয়ে। অথচ তার দরুন বাচিক যে কমহোরি হবে তার জো নেই! হালফিলের জবানে যাকে ‘সিনোগ্রাফি’ বলার চল হয়েছে, যাকে এক কথায় ‘ডিজাইন’ বলে মার্কা মেরে দেওয়া এই উপমহাদেশের রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেই সব খুঁটিনাটিতে পারদর্শিতা দেখান রেজা। চিত্রপটে ঘা দিয়ে যান থেকে থেকে। তা বলে চিত্রপটকে হেলাফেলা করেন না।
রহু চ-ালের হাড় নাটকে আলী আহমেদ মুকুলের অভিজ্ঞতাসঞ্জাত মঞ্চ একটা আছে। আছে উঁচুনিচু তলবিন্যাসের জ্যামিতি। আপ-রাইটে একটা চওড়া পাটাতনের ওপর দাঁড় করানো আছে একটা চাকা। গোরুর গাড়ির চাকার মতো তার গড়ন। মিডল-লেফটে একটা দশাসই খাম্বা। সামনে পেতে রাখা সিঁড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে ফুট দশেক উঠে যাওয়া যায় তার ওপর, ওপরের নাতিপ্রশস্ত পাটাতনে খানিক থিতু হওয়া যায়। প্রসেনিয়ামের ছাদ থেকে কতক সার্কাসের ট্র্যাপিজের মতো দড়িদড়া ঝোলে। তাতে নাগরদোলার মতো চরকিপাক খাওয়া যায়, আবার ঝুলনের মতো দোলা খাওয়া যায়। বাজিকরদের জীবন বাজি রেখে চলার রোমহর্ষক স্বভাবের অনুচর হয়ে ওঠে ওইসব উল্লম্ব মঞ্চসামগ্রী। এর কোনোটাই একমাত্রিক নয়। সবই স্থিতিস্থাপক ও বহুমুখী। কারণ, জগদ্দল কোনো মঞ্চস্থাপত্যে রেজার ভরসা নেই। এই মঞ্চসামগ্রী ও সংলগ্ন মানবশরীরকে এমনভাবে ইস্তেমাল করেন রেজা যে মুহুর্মুহু ভোল পাল্টায় মঞ্চ। এই গড়ে, পরমুহূর্তে হুড়মুড় করে ভেঙে যায়, আবার গড়ে। প্রসেনিয়াম উপচে পড়ে জীবনের ¯্রােতে। উষ্ণ প্র¯্রবনের মতো জঙ্গম এক কৌমজীবনের ছবি তৈরি হয়। ‘আরশিনগরে’র সে রাতে পূর্ণিমা ছিল নাটকে দেখেছিলাম বাঁধাগতের গল্পগাছার ফেরে আটকে না পড়ে আমআদমির রোজকার গাথা কীভাবে নাট্যবস্তু হয়ে উঠতে পারে, কীভাবে মৃত্তিকালগ্নসংস্কৃতির নানান গহনা তাকে কনের মতো সাজিয়ে দেয়, কীভাবে নীলচে আলোছায়ায় আরও মায়াবি লাগে কুশীলবদের আটপৌরে সাজ, কীভাবে ঝুলে থাকা কাপড় ধরে উড়াল দেয় মানুষ, আর কেমন করে নৌকার গলুই হয়ে ওঠে নিষিদ্ধ নৈশজীবনের বাতিঘর। আলোকশিল্পীর যোগসাজশে এই ব্যাপারটা বেশ মনোহর দেখায়। নাটকবিশেষে রঙের মেজাজ পাল্টে যায়। আলোকের দায়িত্বে থাকা শাহীন রহমান এই বর্ণাঢ্য পৃথিবীর ঝলমলে দিক চিনিয়েছেন, আঁধারঘুঁজিকেও ভোলেন নি। মনোজগতের রঙবদলে সুরের কদর করেন রেজা। স্টুডিও রেকর্ডিং নয়, রহু চ-ালের হাড়ে পুরোদস্তুর ভরসা রেখেছেন লাইভ মিউজিকে। অথচ পেশাদার গায়েন-বায়েনদের তোয়াক্কা না করে ‘আরশিনগরে’র উদ্যমী কলাকুশলীদের দিয়েই গোটা ব্যাপারটা ছকে নিয়ে চালিয়ে দিয়েছেন। নিজেরাই গান লিখেছেন, গুটিকয় মহাজনের মাধুকরী নিয়ে তাদের সুরে বেঁধেছেন, গেয়েছেন, এমনকি বাজনাও বাজিয়েছেন ‘আরশিনগরে’র অভিনেতৃকুল। ঘড়ির কাঁটায় বাঁধা, দেশবিদেশের রকমারি তালে সাধা এইসব কর্তব্য নিখুঁতভাবে পালন করে গেছেন তাঁরা। রেজওয়ানা মৌরি রেজার নকশা করা তাদের বেশভূষায় পশ্চিমভারতীয় মরুসভ্যতার একটা আন্দাজ ফুটেছে। আর সোমা মুমতাজের সৌজন্যে তাদের নিটোল অঙ্গবিন্যাসে, তাদের সারগ্রাহী নৃত্যভঙ্গিমায় ফেটে বেরিয়েছে আনকোরা দুরন্তপনা।
এই দুরন্তপনার মাত্র দুয়েকটা নমুনা দিই। বাজিকর বানজারাদের সঙ্গে বা নিদেনপক্ষে মাদারি কা খেলের কেরদানির সঙ্গে আমাদের রোজকার মুলাকাত যতই কমে আসুক না কেন, তাদের দড়িবাজি বাঁশিবাজি চরকিবাজির একটা আবছা ছবি আমাদের সামূহিক নির্জ্ঞানে ধরা আছে। যেমন ধরা আছে আগুন ফুঁকে ধোঁয়া ওড়ানোর চোখধাঁধানো খেলা। ‘আরশিনগরে’র কলাকুশলীদের দিয়ে এ সবই করিয়েছেন রেজা। অনায়াস পটুতা ফুটে বেরিয়েছে তাদের ক্ষিপ্র অঙ্গভাষায়। সিনেমায় দেখলে একে স্টানবাজি বলে দায় এড়াতাম। তপন থিয়েটারের স্বল্পায়তন মঞ্চে এইসব রোমাঞ্চকর অথচভীতিপ্রদ কসরত দেখতে দেখতে গা শিউরে উঠেছে। চোখের সামনে দেখছি যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে ঘুরতে ঘুরতে দড়াম করে কাঠের খাম্বায় ধাক্কা লাগল এক বাজিকরের। নেহি পরোয়া! নির্বিকারে খেল চালিয়ে গেলেন তিনি। রণপা নিয়ে দিব্যি চলেফিরে বেড়াচ্ছেন কুশীলবকুল। দোলনায় দুলতে দুলতে হামেশাই কাঠের তক্তায় ঠোকর লেগেছে। দর্শক আসনে বসে মনে মনে প্রমাদ গুণেছি। ফায়ার ব্রিদিং দেখানোর সময় কেরোসিনের গন্ধ শুঁকে ফেলেছি আনমনে। চটকে গেছে নাগরিক-বিনোদনের অভ্যস্ত মৌতাত। আবার প্রবল আস্ফালনে বাঁশে বাঁশে টক্কর লেগেছে যখন, মরণপণ লড়াই চলেছে বাজিকরের দলের সঙ্গে নানান প্রবলতর প্রতিপক্ষের, মনে মনে পক্ষ নিয়ে টেক্কা দেবার ফন্দি এঁটেছি আমরাও। এভাবে দর্শকের ¯œায়ুর ওপর নানাবিধ পরীক্ষা চালিয়ে গেছেন রেজা। থিয়েটার অব ক্রুয়েলটির পশ্চিমি-চালে নয়। আমাদের পরম্পরাবাহিত বিনোদনের স্মৃতিজাগানিয়া এইসব কায়দা কসরত আসলে আমাদের আরামের-জীবনের বাইরের লড়াকু-জীবনের যাপনচিত্র এঁকেছে প্রেক্ষাগৃহ জুড়ে। আমাদের অজ্ঞাতসারে ওই প্রচ- সংগ্রামবিক্ষুব্ধ কৌমজীবনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবান করে তুলেছে। কোনো বিরতি ছাড়াই দুঘণ্টার কিনারা ছুঁয়ে থেমেছে রহু চ-ালের হাড়। পল অনুপল জুড়ে দৃশ্যকাব্যের এই নির্মাণ একবারের জন্যও মঞ্চ থেকে চোখ সরাতে দেয় নি আমাদের।
এর জন্য মূল-উপন্যাসের আখ্যানরীতিতে কোনো অহেতুক ভাঙচুর করতে হয় নি রেজাকে। কোনো সংলাপ কাটতে হয় নি, জুড়তে হয় নি। আখ্যানভাগকে আগুপিছু করে ছেঁটেকেটে নিতে হয়েছে দরকার মাফিক। অনেক কিছু বাদ দিতে হয়েছে। অনেক উপাখ্যান, অনেক ইংগিত চাপা পড়ে গেছে। আবার গদ্যের অন্তর্লীন ছন্দকে ধারণ করতে কথার ফাঁকফোকরে জুড়ে দিতে হয়েছে কয়েকটা গান। গানের সই হয়ে এসেছে নাচ। বাজিকরসুলভ সেইসব রোমহর্ষণের কথা তো আগেই বলেছি। তুরুপের এই কয়েকটা তাসের খেলায় বর্ণনাত্মক নাট্যধারার টলটলে খাতে দিব্যি বয়ে গেছে অভিজিতের তিরতিরে গদ্য।
ওই গদ্যের খাঁজে-ভাঁজে যে নাট্যসম্ভাবনা ছিল তাকে উসকে দিয়েছেন রেজা। সবটাই যে রক্তে ভেজা, ঘামে জবজবে এমন তো নয়। কোথাও আনমনা হয়েছে যৌবন। কোথাও উথলে উঠেছে যৌনতা। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে যায়, রাধা নামের এক রহস্যময়ী স্বয়ংসিদ্ধার কথা। লুবিনির মরদ জামিরের সঙ্গে তার পাগলপারা প্রেমের কথা। ওই ভূমিকায় অভিনেত্রী আইননু পুতুলের জন্য দু-তিনটি মাত্র দৃশ্য বরাদ্দ। তাতে কথার চাইতে চমকঠমকের দিকে ঝোল টানা বেশি। উপাখ্যানের নায়িকাকে লাল রঙে ছুপিয়ে, তার অনর্গল যৌবনকে না লুকিয়ে, বর্ণনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খিলখিল হাসির মাপা প্রয়োগে কী অনায়াসে এক স্মরণীয় যৌনপ্রতিমা নির্মাণ করা যায় তার সফল নিরীক্ষা করেছেন রেজা। আবির্ভাবলগ্নে রাধাকে রেখেছেন ওই চাকার সামনে। আসামাত্র থেমে থাকা চাকাতে গতির সঞ্চার করেছেন পুতুল। চরাচর আঁধারে ঢেকে রেখে তেরচা আলো পড়েছে তাঁর ওপর। ঘূর্ণায়মান চাকার প্রেক্ষাপটে ওই কুলছাপানো হাসির রসায়নে মাত হয়ে গেছেন সবাই। যখন সবাক হয়েছে রাধা, পরকিয়ার ‘বাণে’ ফুঁড়ে দিয়েছে প্রেমাস্পদের দম্ভকে, বনেবাদারে তাঁর অভিসারের সাতকাহন ফেঁদেছে, অতর্কিতে দোলনায় চেপে বসে দুলতে দুলতে রতিসুখে উছলে উঠে আদুরে গলায় দিয়ে গেছে তাদের মিলিত হবার উদ্দামবার্তা, আর দুলকিচালে আনদ্ধবাদ্যে তাদের আসঙ্গতৃপ্তির আবহ বেজেছে, তখন ওই বাক্সময় হাস্য আর জমিন-আসমানে সঞ্চরমান লাস্যের মণিকাঞ্চনযোগ ঘটে গেছে। এর বিপ্রতীপে দোদোন ঘোষের (নিতাই চন্দ্র কর্মকার) যৌনঈর্ষা চকিতে খুলে দিয়েছে যমুনা পুলিনের গোচারণভূমি চুঁইয়েপড়া পৌরাণিক পরিসরের দোর। হঠাৎ-আলোর ঝলকানির মতো এসেছে রাধা। আবার অনেক হাহাকার আর হকচকানির খিল খুলে দিয়ে চলে গেছে। ক্ষণকালের এই আভাস আমাদের চিরকালের সেলামি আদায় করেছে।
রহু চ-ালের হাড় নায়কপ্রধান নয়। ব্যক্তি এখানে কৌমের নামান্তর। কৃত্য এখানে মঞ্চচারণের চাবিকাঠি। সামূহিক-অনুশীলন এখানে ব্যক্তিগত-সাধনার পরিপন্থী। তাই একক অভিনয়ের চাইতে সমষ্টিগত অভিনয়ের দিকেই ঝোঁক বেশি। দুয়েকজন বাদে সকলেই দুই বা ততোধিক ভূমিকায় মঞ্চে এসেছেন। একবারের জন্যও খাপছাড়া লাগে নি কাউকে। তবু বলতেই হয়, যে ‘রহু চ-ালে’র প্রতীক বহন করে চলে এ প্রযোজনা, যার ‘হাড়’ দিয়ে তৈরি জাদুকাঠি এই বাজিকরদের অপ্রাকৃত উত্তরাধিকার, সেই রহুর একচিলতে ভূমিকায় উজ্জ্বল ছিলেন আসাদুজ্জামান আবির। বৃদ্ধা লুবিনির কাঁধে অনেক দায়িত্ব ন্যস্ত করেছিলেন অভিজিৎ-রেজা। যথাযোগ্য মর্যাদায় তা পালন করেছেন শ্যামাঙ্গিনী শ্যামা। তার নাতি শাবিরার ভূমিকায় অমিত একটু নিচু পর্দায় খেললেও মানানসই হয়েই ছিলেন। রহু চ-ালের হাড়ের একেবারে মধ্যিখানে যে আখ্যানভাগ তার অন্যতম কুশীলব সালমা। এই বহুমাত্রিক ভূমিকায় আশ্চর্য সপ্রতিভ নুসরাত জিসা। বাজিকরকুলপতি পীতমের বেশে ফাহিম মালেক ইভান আরেক দাপুটে উপস্থিতি।
একটা ব্যাপার লক্ষণীয়। অভিনেতৃকুলের চোখেমুখে বিশেষ কোনো নৃতাত্ত্বিক আদলকে আমল দেন নি নাট্যকার। দরকার পড়লে ঢেকে দিয়েছেন। তাই বিশিষ্ট মঙ্গোলয়েড মুখশ্রী নিয়ে বাদবাকিদের সঙ্গে মিলেমিশে যেতে অসুবিধে হয় নি বৈজয়ন্তী খীসার। সাওঁতাল পরগনার ঝুমুর সুর ছাড়া অন্য কোনো আবহকে মাথায় চড়তে দেন নি নির্দেশক। তার জন্য কোনো প্রোটো-অস্ট্রালয়েড মুখোশ আমদানি করতে হয় নি তাঁকে। কতক রাজস্থানি তরিকায় দুজন কুশীলবকে কাপড়ে মুড়ে একটা কুনকি ঘোড়াকে মঞ্চে এনেছিলেন রেজা। ফারজানা মুক্তার ঝকঝকে দাঁতের পাটি আর ঝলমলে চোখের তারা দিয়ে সেই ঘোড়ার মনোজগতের হদিস মিলেছে। খাকি উর্দির রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের সমান্তরালে ওই মূল-পশুর চাউনি যে বিরোধাভাস রচনা করেছে তা আখ্যানের এঁকেবেঁকে চলা গতিকে আরও তীব্রতা দিয়েছে। এভাবে বহুস্থানিক বর্ণমালায় সাধা নাট্যভাষার যে আন্তর্জাতিকতা বাংলা প্রসেনিয়াম থিয়েটারের মরকতমণি হতে পারে, তার কীর্তিফলক হয়ে উঠেছে রহু চ-ালের হাড়। যাযাবরবৃত্তির আসমানদারিতে যে জমিনদারির খোয়াব বোনা থাকে, যা এই উপমহাদেশের কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসের চালিকাশক্তি, সমবায়ী গরজে সেই খোয়াবনামার দৃশ্যায়ন সম্ভব করেছে ‘আরশিনগর’।
২৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় নাটক শেষ হবার পর আয়োজকদের তরফ থেকে অভিজিৎ সেনকে মঞ্চে আহ্বান করা হয়েছিল। দৃশ্যত আপ্লুত অভিজিৎ। দেবেশ রায়ের কথা ধার করে একে ‘উপন্যাসের মঞ্চপরিক্রমা’ আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা যেভাবে নাটক দেখতে অভ্যস্ত সেই একই পদ্ধতিতে এই নাটক মঞ্চায়ন হয় নি। যেভাবে হয়েছে তা আমাদের পরিতৃপ্ত করেছে কিনা প্রত্যেক দর্শক বুঝতে পারছেন। আমি নিজে পরিতৃপ্ত।’
পরিতৃপ্তির এই অনুভব সেই সন্ধ্যার এক মাস পরেও এই সমালোচককে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। তাৎক্ষণিক মুগ্ধতাকে আড়াল করে লিখতে বসে এখনও ভেবে চলেছি যে, এক দশক ‘গর্ভে’ ধারণ করার পর এমন বিস্ময়কর নাট্যবস্তু যে নির্দেশক ‘প্রসব’ করতে পারেন, তাঁর কাছে আগামী-পৃথিবী আরও কোন কোন দাবিসনদ নিয়ে হাজিরা দিচ্ছে।
অংশুমান ভৌমিক ( This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it. ): ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক। ভারতের প্রথমসারির দৈনিক ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ আর বাংলা মাসিক ‘কৃত্তিবাস’ এর নাট্যসমালোচক