Bookmaker Bet365.com Bonus The best odds.

Full premium theme for CMS

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর : নির্বাচিত ৫০ প্রযোজনা।। প্রসঙ্গ: লেট মি আউট

Written by অলোক বসু.

Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..

নাটক: লেট মি আউট। রচনা: রুনা কাঞ্চন। নির্দেশনা: বাকার বকুল। মঞ্চ ও আলোকপরিকল্পনা: আসলাম অরণ্য। পোশাকপরিকল্পনা: শাহনাজ জাহান। আবহসংগীতপরিকল্পনা: রবিউল ইসলাম শশী ও ইসমাইল পাটোয়ারি। রূপসজ্জা: মোহাম্মদ আলী বাবুল। পোস্টার ডিজাইন: চারু পিন্টু। প্রথম মঞ্চায়ন-বর্ষ: ২০১৯। একটি ‘তাড়ুয়া’ প্রযোজনা

[লেট মি আউট নিয়ে অত্যন্ত সাহসী ও সময়োপযোগী নাটক- শিরোনামে নাট্যসমালোচনাটি নাট্যপত্রিকা ‘ক্ষ্যাপা’র ৫ম সংখ্যায় (ফেব্রুয়ারি ২০২০/মাঘ ১৪২৬ এ প্রকাশিত) ছাপা হয়। ‘থিয়েটারওয়ালা’র এবারের বিশেষ-সংখ্যায় নাট্যসমালোচনাটি পুনঃপ্রকাশ করা হলো]

আমি বহু জায়গায় বহুবার বলেছি, আবারও বলছিÑ২০১৯ সাল আমাদের মঞ্চনাটকের জন্য একটি ফলবান বছর। ২০১৯ সালে ঢাকার মঞ্চে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নাটক এসেছে এবং এর মাঝে বেশ কয়েকটি নাটক খুবই উচ্চমানের। আরও আশার বিষয় হলো এসব ভালো নাটকগুলো এসেছে নতুন নতুন সংগঠনের ব্যানারে, নতুন নতুন প্লাটফর্মে। ২০১৯ সালের প্রশংসিত নাটকগুলোর মধ্যে নতুন সংগঠন ‘তাড়ুয়া’র লেট মি আউট অন্যতম। লেট মি আউট নাটকটি নানা কারণে প্রশংসার দাবি রাখে। তবে নাটকটির দর্শকপ্রিয়তা অর্জনের অন্যতম প্রধান কারণ এর বিষয়বস্তু। অত্যন্ত সময়োপযোগী ও স্পর্শকাতর একটি বিষয়বস্তুকে চমৎকার একটি গল্পের প্লটে, অত্যন্ত নাটকীয়তার সাথে উপস্থাপন করেছেন নাট্যকার। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে আমাদের মঞ্চে রাজনৈতিক-নাটকের যে সংকট, লেট মি আউট তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে প্রবল এক ঝাঁকুনি দেয় দর্শককে। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত সুনিপুণভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রের অব্যবস্থার কথা তুলে ধরা হয়েছে এ নাটকে। নাটকের ঘটনাটি ১৯২৮ সালের সুদূর লস অ্যাঞ্জেলেসের হলেও, তা আর নির্দিষ্ট কোনো সময় আর স্থানের ঘেরাটোপে আটকে থাকে নি, হয়ে ওঠে বৈশি^ক ও চিরকালীন। বিচারহীনতার সংস্কৃতি যে কীভাবে আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজসমূহকে  ক্রমাগত কলুষিত করে চলছে তারই যেন এক দালিলিক প্রমাণ লেট মি আউট। নাটকের মুখবন্ধে নাট্যকার রুনা কাঞ্চন কবুল করে নিয়েছেন, ঞযব জড়ধফ ঙঁঃ ড়ভ ঐবষষ ইু অহঃযড়হু ঋষধপপড়, ঘড়ঃযরহম রং ঝঃৎধহমব ডরঃয ণড়ঁ ইু ঔধসবং ঔবভভৎবু চধঁষ এই বই দুটি এবং ঈষরহঃ ঊধংঃড়িড়ফ পরিচালিত চলচ্চিত্র ঈযধহমবষরহম দ্বারা অনুপ্রাণিত এই নাটক।
 
লেট মি আউট মিসেস ক্রিস্টিন কলিন্স নামের এক মায়ের গল্প, যার কিশোর ছেলে ওয়ালটার কলিন্স নিখোঁজ হয়ে যায়। ৫ মাসেও সন্তানের কোনো খোঁজ মেলে না। নিখোঁজ সন্তানকে ফিরে পেতে দিনের পর দিন পুলিশ ডিপার্টমেন্টে ধর্ণা দেন মা। একদিকে সন্তান না পাওয়ার বেদনা অন্যদিকে পুলিশের দফতরে ক্রমাগত ধর্ণা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন মা। কিন্তু অটুট মনোবলের কারণে ক্রিস্টিন কলিন্স তাঁর সন্তানকে ফিরে পেতে অনড় থাকেন। এক পর্যায়ে পুলিশ বিভাগ তার সন্তান বলে অন্য এক ছেলেকে ধরিয়ে দেয়। মিসেস কলিন্স বুঝতে পারেন, যে ছেলেকে তার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে, সে ছেলে তার সন্তান নয়। কোথাও কোনো ভুল হচ্ছে। মা তার প্রকৃত সন্তানকে ফিরে পেতে বারবার পুলিশের কাছে যান। এক পর্যায়ে পুলিশ তাকে পাগল সাব্যস্ত করে মানসিক হাসপাতালে পাঠায়। সেখান থেকেও তিনি তার আসল সন্তানকে ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। আইনি লড়াইয়ে তার পাশে এসে দাঁড়ান গির্জার পাদ্রি। যে পাদ্রি বলতে পারেন ‘লোভ ও ব্যক্তিগত লাভের জন্য প্রতিদিন সাধারণ নিরীহ জনগণকে দোষী সাব্যস্ত করে আসামি করা হচ্ছে। ভয় ভীতি আর দুর্নীতিতে এই শহর ডুবে যাচ্ছে’। আজকের সময়ে রাষ্ট্রের কাঠমোতে ধর্মীয় নেতারা যেভাবে হালুয়া-রুটির মুখাপেক্ষী হয়ে চোখে ঠুলি এঁটে থাকেন, এই পাদ্রি যেন তার বিপরীত ¯্রােতে দাঁড়ানো এক মানুষ। সন্তান হারানো মায়ের পাশে এসে দাঁড়ানো এই পাদ্রি মানবিক সমাজের  প্রতীক হয়ে ওঠেন। ওয়ালটারকে ফিরে পেতে আদালতে চলতে থাকে আইনি-প্রক্রিয়া আর অন্যদিকে পুলিশ বিভাগের অভ্যন্তরে ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহের জন্য ঘটতে থাকে নানা ঘটনা। আইনের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে মা হারান তার প্রিয় সন্তানকে। তারপরেও মা পিছু হটেন না। তিনি ন্যায় বিচারের জন্য দীর্ঘসংগ্রাম চালিয়ে যান ৩৬ বছর। এক পর্যায়ে জীবন ও লড়াই তার কাছে অসম্ভব হয়ে ওঠে। তিনি মুক্তি চান সিস্টেমে আটকে যাওয়া জীবন থেকে।

চমৎকার গল্প ও সংলাপে লেট মি আউট নাটকটি রচনা করেছেন রুনা কাঞ্চন। এটি প্রবলভাবে একটি রাজনৈতিক-নাটক। রাজনৈতিক-নাটক রচনা ও মঞ্চে উপস্থাপনা চাট্টিখানি কথা না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব নাটক খুব স্থূলভাবে একটি সুনির্দিষ্ট গ-ি ও সময়ের আবর্তে আটকে যায়। সময়কে অতিক্রম করতে পারে না। রুনা অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে দেশ-কাল-সময়কে অতিক্রম করে বৈশি^ক সংকটের একটি নাটক রচনা করেছেন। আর বাকার বকুল সেই রচনাকে মঞ্চে উপস্থাপন করেছেন সমকালীনতার পরিচ্ছদে চিরকালীন একটি প্রযোজনা হিসেবে। এই নাটকের কনটেন্ট ও তার মঞ্চ-উপস্থাপনায় রয়েছে অসাধারণ মুন্সিয়ানা। বিচার বহির্ভূত হত্যা, বিচারহীনতার-সংস্কৃতি এবং প্রশাসন ও আইনের ঘেরাটোপ, দীর্ঘসূত্রিতা, সিস্টেম যে একটি জাতি-সমাজ-রাষ্ট্রকে অমানবিক ও পঙ্গু করে দিতে পারে তারই এক শৈল্পিক উপস্থাপনা লেট মি আউট। একটি আধুনিক নাটক যেমনটা হওয়া উচিত, লেট মি আউট তেমনই। এই নাটক দর্শককে মহান শিল্প-অনুভবের আনন্দ দান করে, শিল্পের সুষমায় দর্শনের সুগভীর জগতে অবগাহন করায়।
 
তবে কিছু কিছু বিষয়ে নাট্যকার ও নির্দেশক আরও একটু ভেবে দেখতে পারেন। এ নাটকে সংলাপের গুরুত্ব অনেক। অভিনয়শিল্পীদের বাচিক অভিনয়ে আরও দক্ষ হওয়া দরকার। এছাড়া মানসিক হাসপাতালের দৃশ্য একাধিকবার ফিরে আসায় প্রথমবার যে আবেদন তৈরি করে পরে আর তা করে না, বরং তা রিপিটেশন বলে মনে হয়। পাশ্র্বঘটনার অনুসঙ্গ হিসেবে নাইট ক্লাব ও স্কুলের ছেলেমেয়েদের ডান্স ও কোরিওগ্রাফি হয়তো দর্শককে এক ধরনের রিলিফ দেয় কিন্তু তা মায়ের আর্তিকে অনেকাংশে লঘু করে দেয়। বরং মাকে ফোকাসে রেখে দর্শকের মনে মায়ের বেদনাকে জারিত করতে পারলে নাটকটি আরও সার্থক হয়ে উঠতে পারে। কাহিনির ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া চারিত্র্যের কারণেই নাটকটির সংলাপ উচ্চগ্রামে বাঁধা, সেই উচ্চগ্রামকে প্রশমিত করার জন্য মা-ই হতে পারেন অনন্য অবলম্বন। মায়ের চরিত্রে রুনা চমৎকার অভিনয় করলেও আরও কিছু  ছোটখাটো ঘটনা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সন্নিবেশিত করে সন্তান ফিরে না পাওয়ার বেদনা, একজন সাধারণ মানুষের অসহায়ত্ব, সর্বোপরি বিচারহীনতার-সংস্কৃতিকে আরও প্রবলভাবে একীভূত করে মায়ের আর্তিকে তীব্রতর করার মাধ্যমে আরও আবেদনময় করে তোলার সুযোগ রয়েছে।

তবে অস্বীকার করার উপায় নেই যে. সমকালীন রাজনৈতিক-প্রেক্ষাপটে লেট মি আউট অত্যন্ত সাহসী, সময়োপযোগী স্মার্ট প্রযোজনা।
    
অলোক বসু ( This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it. ): নাট্যকার-অভিনেতা-নির্দেশক