Full premium theme for CMS
গত ২০ বছরে আমাদের থিয়েটার : নাটকে দুই বাংলা- দুই দশক
Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..
যেকোনো বিষয়ে আলোচনা বা লেখার পূর্বে ইতিহাস, বর্তমান সময়, সমাজ, ভৌগলিক অবস্থান ইত্যাদি বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা না থাকলে লেখার আঁচরগুলো হয়ে পড়ে সূত্রহীন, বিচ্ছিন্ন কিছু মূল্যহীন পাণ্ডুলিপি। ইতিহাসের খুব পিছনে পদচারণা না করে নির্দিষ্ট একটা সময়কালকে বিবেচনায় আনা যেতে পারে। ১৯৪৭-এ দেশ ভাগ হলো। ধর্মের ভিত্তিতে। বাংলা জাতিসত্তার মধ্যে বিভাজনের কাঁটাতারের রেখা টানা হলো। সত্তা এক হলেও ভৌগলিক সীমারেখায় একে অপরের থেকে আলাদা হতেই হলো। কারণ, ‘দেশ’ নামক একটি শব্দ। অনাহার, উদ্বাস্তু সমস্যা, স্বজন ছেড়ে আসার যন্ত্রণা, কত স্মৃতি বুকে নিয়ে কাঁটাতারের এপার-ওপার হলো বিপুল মানুষ। শুধু মানুষ নয়, মানুষের মন, আশা-আকাঙ্ক্ষাও ভাগ হলো। আমরা যারা ভারতীয় বলে চিহ্নিত হলাম, তারা ঝড়-ঝাপটা, দাঙ্গা সামলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথের সন্ধান কিছুটা পেলাম। সংবিধান রচনা হলো। গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা হলো ভারতবর্ষের মূল চালিকাশক্তি। অন্যদিকে, অর্থাৎ পূর্বপাড়ে গণতন্ত্রহীন স্বৈরাচারী ধর্মীয়রাষ্ট্র। এদেশ যদি মানবশরীরের এক বাহু হয়, তবে অপর বাহু হলো পূর্ববঙ্গ, যেখানে বাংলার বদলে চাপানো হলো বলপূর্বক উর্দু ভাষা।
শুরু হলো নতুন করে, নতুন দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলন। ‘মায়ের ভাষা- আমার ভাষা।’ আন্দোলন তীব্র হলো শুধু নয়, ভাইয়ের রক্তে রাঙা হলো পূর্ববাংলার রাজপথ। ‘ভাষার জন্য’ স্বাধীনতা আন্দোলন। লক্ষ মানুষের প্রাণ, হাজার হাজার মা-বোনদের সম্মানহানী, শিল্পী সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীদের প্রাণের বিনিময়ে এলো পূর্ববাংলার প্রকৃত স্বাধীনতা। সাল ১৯৭১। দেশ বাংলাদেশ। ভাষা বাংলা।
১৯৪৭-এর আগে নাটকের চর্চা পশ্চিমবঙ্গে শুরু হয়েছিল। যেটা গতি পেল ১৯৪৭-এর পর। হৈ হৈ করে পেশাদারী থিয়েটারের পথ চলা শুরু। পরবর্তী সময়ে তৈরি হলো গ্রুপ থিয়েটার। তথাকথিত পেশাদারী থিয়েটার আজ আর নেই। পশ্চিমবঙ্গের নাট্য অঙ্গন আজ পরিচালনা করছে গ্রুপ থিয়েটার। বাংলাদেশ ১৯৭১-এ স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর বেশ কিছু থিয়েটারদলের জন্ম হয়। সাধারণভাবে সেই থিয়েটারদলগুলোর প্রধান বা পরিচালক হলেন মুক্তিযুদ্ধের সেনানীরা। ফলে অতীতে ও বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের আবেগ, লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ, হাজার হাজার নারীর সম্ব্রমহানী, চক্রান্তকারীর ভূমিকা ইত্যাদি বিষয় এ পর্যন্ত নাটকে বহমান। আজও মুক্তমনা বুদ্ধিজীবী-শিল্পীদের দিকে শীতল চোখের চাহনি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে একপক্ষ, আস্তিনে চকচকে ইস্পাতের ফলা নিয়ে। তাই তো শুরু হয়েছে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ। তাই আজ নাটকের প্রতি নতুন প্রজন্মের আবেগ ও উন্মাদনা দ্বিধাহীন আন্তরিকতায় ভরপুর।
এদেশে অর্থাৎ পশ্চিবঙ্গে আজ সাম্প্রদায়িক বিভাজন, কণ্ঠরোধ করার প্রচেষ্টা, জাতিগত বিভাজন, ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার নগ্ন প্রচেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে আমরা নাটকের সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা ভীষণ উদ্বিগ্ন। বিচ্ছিন্ন কিছু নাটক বা নাট্যদল বাদ দিলে এই কালো অন্ধকারকে ভেদ করার প্রয়াস সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। সরকারের কৃপাদৃষ্টি লাভের আশায় দ্বিধান্বিত নাট্যসমাজ। যা আগামীদিনের জন্য ভয়ংকর।
শিল্পসৃষ্টি কি শিল্পের উৎকর্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্য?- নাকি সমাজের দর্পণ? এ বিতর্ক বহুদিনের। ‘নবান্ন’ নাটক শিল্পগুণে পরিপূর্ণ ছিল এই দাবি যত না সত্য, তার থেকে অনেক বেশি সত্য ছিল সমাজের আয়নাটাকে মানুষের সামনে তুলে ধরা। যা গোটা বাঙালিসমাজকে নাড়া দিয়েছিল। মানুষ, সমাজ, দেশ, পরিস্থিতি-প্রকৃতি ব্যতিরেকে শিল্প কোনো মর্যাদার আসনে স্থান পেতে পারে না বা পাওয়া উচিত নয়। আজ দুই বাংলার নাট্যসমাজ বিভ্রান্ত নয় তো?
গত দুই দশকে বাংলাদেশের নাট্যচর্চা
নাটকের জন্ম সাহিত্যের গর্ভে। নাটকের বেড়ে ওঠা সমাজ, দেশ, পরিস্থিতিকে আলিঙ্গন করে। নাটক পল্লবিত হয় সেই ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যেকার সঞ্চিত রস আহরণ করে। একথা স্বীকার করতেই হবে, বাংলাদেশের নাটকে ‘লোক-আঙ্গিক’-এর প্রাধান্য সেই কারণেই। ‘আধুনিক থিয়েটার’ একটা গোলমেলে শব্দ। ‘আধুনিক থিয়েটারে’র প্রকৃত অর্থ ধোঁয়াশায় মাখামাখি। লোকজ-আঙ্গিক তো চিরন্তন। চিরন্তন কি আধুনিক নয়? বিতর্ক চলছে, বিতর্ক চলবে। এই প্রতিবেদন বাংলাদেশের নাটকের গত দুই দশক-এর কিছু উল্লেখযোগ্য প্রযোজনা আলোকপাত করার চেষ্টামাত্র। যদিও এ কথা বিনম্রচিত্তে সঙ্গে স্বীকার করে নেয়া ভালো যে, একটি ছোট্ট প্রতিবেদনে সামগ্রিক চিত্র চিত্রায়িত করা কখনোই সম্ভব নয়। ত্রুটি স্বীকার করলাম।
স্বাধীনতা পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনের সূচনাপর্বে মুজিব হত্যা ও ফৌজি শাসনে দীর্ঘ মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। এরইমধ্যে ধীরে ধীরে প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে নাটককে বেছে নিলেন প্রবীণ ও তথাকথিত নবীনেরা। তারই ধারাবাহিকতায় এলো নতুন শতক।
২০০০ থেকে ২০১০। এই সময়ের কিছু আগে-পরের উল্লেখযোগ্য নাটকগুলোর মধ্যে সংক্রান্তি, রাঢ়াঙ (আরণ্যক নাট্যদল), প্রাচ্য, নিমজ্জন, ধাবমান (ঢাকা থিয়েটার), স্বদেশী, লোকনায়ক (প্রাঙ্গণেমোর), কাল সকালে, সময়ের প্রয়োজনে, মগজ সমাচার (থিয়েটার আর্ট ইউনিট), ভাগের মানুষ (সময়), কথা’৭১ (ঢাকা পদাতিক), তীর্থঙ্কর (সুবচন নাট্য সংসদ), নিত্যপুরাণ (দেশ নাটক), এ ম্যান ফর অল সিজনস্, রাজা এবং অন্যান্য... (প্রাচ্যনাট), কালসন্ধ্যা (নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়), বারামখানা, মুক্তি (থিয়েটার), রিকোয়েস্ট কনসার্ট, বাংলার মাটি বাংলার জল (পালাকার), কহে বীরাঙ্গনা (মণিপুরি থিয়েটার), লাল জমিন (শূন্যন), বহে প্রান্তজন (অনুশীলন নাট্যদল, রাজশাহী), চে’র সাইকেল (বাঙলা থিয়েটার)। এছাড়াও এই সময়কালে আরো কিছু ভালো নাটক মঞ্চস্থ হয়। যেমন, খনা (সুবচন নাট্য সংসদ), আরজ চরিতামৃত (নাট্যকেন্দ্র), হাফ আখড়াই (উদীচী), প্রাগৈতিহাসিক (নাগরিক নাট্যাঙ্গন), আমিনা সুন্দরী (থিয়েটার আর্ট ইউনিট), অ্যাম্পিউটেশন (সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটার), থ্রি সিস্টার্স, চাকা (থিয়েটার এ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), শাইলক এ্যান্ড সিকোফ্যান্টস (থিয়েটারওয়ালা রেপাটরি), সোনাই মাধব (লোক নাট্যদল), মধুমালা (তির্যক, চট্টগ্রাম), নীল ময়ূূরের যৌবন (শব্দাবলী, বরিশাল), ইংগিত, দ্রোহ, কৈবর্ত বিদ্রোহ, কথা পু-্রবর্ধন (বগুড়া থিয়েটার)।
২০১১ থেকে ২০১৮। এই সময়কালে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতি ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয় বলা যায়। এই পরিবেশে নতুন নাট্যদল যেমন গঠিত হয়, তেমনি ভিন্ন বিষয়, ভিন্ন আঙ্গিক, থিয়েটারের নানা পরীক্ষামূলক কাজে যুক্ত হয় বিভিন্ন নাট্যদল। মহাজনের নাও (সুবচন নাট্য সংসদ), শেষের কবিতা, না মানুষ জমিন (থিয়েটার আর্ট ইউনিট), ট্র্যাজেডি পলাশবাড়ি, বনমানুষ (প্রাচ্যনাট), মাতব্রিং (বিবর্তন যশোর), ভঙ্গবঙ্গ (আরণ্যক নাট্যদল), টার্গেট প্লাাটুন, হ্যামলেট (বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি), ঈর্ষা, আমি ও রবীন্দ্রনাথ, হাসনজানের রাজা (প্রাঙ্গণেমোর), ক্রাচের কর্নেল (বটতলা), নারীগণ (পালাকার), লেইমা (মণিপুরি থিয়েটার), জবর আজব ভালোবাসা (থিয়েটারওয়ালা রেপাটরি), দমের মাদার (নাট্যম রেপার্টরি), ঊর্ণাজাল, আমার আমি (নান্দীমুখ, চট্টগ্রাম), জ্যোতি সংহিতা (জীবন সংকেত নাট্যগোষ্ঠী, সিলেট), হরগজ (স্বপ্নদল), দ্য ডিসটেন্ট নিয়ার (বাঙলা থিয়েটার), অন্ধকারে মিথেন (আগন্তুক), মেরাজ ফকিরের মা, শিখণ্ডী কথা, শেকড়ে ক্যান্সার (রংপুর নাট্যকেন্দ্র)।
তালিকা আরো কিছুটা দীর্ঘ হতে পারতো। কিন্তু যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, সম্প্রতি বাংলাদেশে বেশ কিছু ভালো নাট্য-প্রযোজনা হচ্ছে। সেটা শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক নয়। জেলা ও উপজেলাতে নবীন প্রজন্ম যারা থিয়েটারে নতুন ভাষার সন্ধানে, প্রয়োগে ও চর্চায় মগ্ন। সবাইকে সেলাম।
একই সঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন, পথনাটকের চর্চা কমবেশি বাংলাদেশে আছে। কিছু নাট্যদল এই কাজে রত আছে দীর্ঘদিন। যদিও প্রচারের আলোয় তারা আলোকিত হয় না। দীর্ঘদিন ধরে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহব্যাপী ও পহেলা মে শহীদ মিনারের পাদদেশে পথনাটক উৎসব হয়ে আসছে, যা অবশ্যই ব্যতিক্রমী প্রয়াস। উল্লেখযোগ্য পথনাটকের দলগুলো হলো- আরণ্যক নাট্যদল, নাট্যধারা, থিয়েটার আর্ট ইউনিট, সুবচন নাট্য সংসদ, দৃষ্টিপাত, অনুশীলন নাট্যদল (রাজশাহী) ইত্যাদি। পথনাটকের নাট্যকার হিসেবে যাদের খ্যাতি সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে, তারা হলেন: মান্নান হীরা, মলয় ভৌমিক, অলোক বসু প্রমুখ। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্প্রতি বিভিন্ন নাট্যদল সংগঠিত করছে, তা হলো নাটকের ওয়ার্কশপ। আগামী দিনের জন্য যা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে নাটকের প্রচারের ক্ষেত্রে প্রিন্টিং মিডিয়া এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া বিশেষ সহকারী ভূমিকা গ্রহণ করে যা থিয়েটারের প্রচার ও প্রসারে বিশেষ সহায়ক।
গত দুই দশকে পশ্চিমবঙ্গে (ভারত) নাট্যচর্চা
এই বঙ্গে নাট্যচর্চার ইতিহাস দীর্ঘদিনের, যার শুরু হয়েছিল ইংরেজদের হাত ধরে। ফলে আমাদের এই বঙ্গে কাজের ধারার মূল বিন্যাস অনেকটাই ইউরোপিয়ান ঘরানার। যে কারণে ‘লোকজ-আঙ্গিক’ প্রযোজনার সংখ্যা এখানে যথেষ্ট কম। দলীয়ভাবে গ্রুপ থিয়েটারের সংখ্যা ২০০০ এর উপরে। সব দল সমানভাবে সময়ান্তর প্রযোজনা নির্মাণ করছে তা হয়তো নয়, কিন্তু সামগ্রিকভাবে কাজের ধারা অব্যাহত আছে। বিগত এক দশকে জেলার বেশ কিছু ভালো প্রযোজনা অবশ্যই কলকাতাকে টেক্কা দিতে পারে। কলকাতার তথাকথিত বড় ও মাঝারি দলগুলোর প্রযোজনার বিষয় ‘যেমন বেণী তেমনি রবে চুল ভেজাবো না’ গোছের। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কলকাতার দুই-একটি ও কলকাতার বাইরের জেলার অনেকগুলো দলের কাজ বিশেষভাবে স্থান পাচ্ছে। ধারে ভারে নয়, তাদের স্বীকৃতি কাজের বিচারে। ধীরে ধীরে কলকাতার নাটক ক্রমশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। যা নাট্যধারার জন্য স্বাস্থ্যকর।
এই পর্যায়ে ভালো নাটকের বিন্যাসকে তিনটি ভাগে করার চেষ্টা করছি। প্রথম ভাগে (ক) ৬৫ ঊর্দ্ধ বয়সের নাট্য পরিচালকগণ, (খ) ৫০-৬৫ মধ্যবর্তী বয়সের নাট্য পরিচালকগণ, (গ) বয়স ৫০ অনূর্ধ্ব পরিচালকদের নির্মিত প্রযোজনা।
ক) বিভাস চক্রবর্তী- শ্বেত সন্ত্রাস, শৃন্বন্তু কমরেডস্, হ্যামলেট, রাজরক্ত; অশোক মুখোপাধ্যায়- অন্ধযুগের মানুষ, বিয়ে গাউনি কাঁদন চাঁপা; মনোজ মিত্র- যা নেই ভারতে; অরুণ মুখোপাধ্যায়- নির্ণয়, পুতুল নাচের ইতিকথা; ঊষা গাঙ্গুলি- কাশীনামা; প্রকাশ ভট্টাচার্য্য- রমণীমোহন, মনসামঙ্গল; গৌতম মুখোপাধ্যায়- মা; কুন্তল মুখোপাধ্যায়- কালচক্র, অমল সিনড্রম; রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত- মাধবী।
খ) দেবেশ চাটার্জ্জী- দেবী সর্পমস্তা, ব্রেন, ইয়ে; বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়- মুদ্রারাক্ষস, ক্যালিগুলা; কৌশিক সেন- দুশমন নং-১, কর্কটক্রান্তির দেশে; সুমন মুখোপাধ্যায়- রক্তকরবী, যারা আগুন লাগায়, বিসর্জন; কৌশিক চট্টোপাধ্যায়- কোজাগরী, গুলি, চন্দ্রগুপ্ত; গৌতম রায়চৌধুরী- মেঘবতী, ব্যাস, দেশদ্রোহী, চতুরঙ্গ, দিবারাত্রির কাব্য; গৌতম হালদার- মেঘনাদবধ কাব্য, নকশী কাঁথার মাঠ, ময়মনসিংহ গীতিকা; ব্রাত্য বসু- ১৭ জুলাই, কন্যাদান, বোমা; সীমা মুখোপাধ্যায়- মায়ের মতো, জলছবি; তপন জ্যোতি দাস- তথাগত, কৃষ্ণপক্ষ; শ্যামল চক্রবর্ত্তী- শেকল ছেঁড়া হাতের খোঁজে; সুজন মুখোপাধ্যায়- ঘাসিরাম কোতোয়াল, ডন; রাজা ভট্টাচার্য্য- ফুড়–ৎ; তরুণ প্রধান- ডাকঘর, সীতায়ন, ফাগুন রাতের গপ্পো; কিশোর সেনগুপ্ত- তৃতীয় একজন, নুরলদীনের সারাজীবন; পরিমল ত্রিবেদী- গম্ভীরা গম্ভীরা; দেবব্রত আচার্য্য- মহুয়া উপাখ্যান।
গ) শান্তনু দাস- ম্যাকবেথ, দ্য মিরর; সন্দীপ ভট্টাচার্য্য- সন্তাপ; তথাগত চৌধুরী- তিন পয়সার পালা; অর্ণ মুখোপাধ্যায়- অথৈ; কৌশিক কর- নাটক ফাটক, অটো; প্রিয়াঙ্কু শেখর দাস- গু ঘধসব রং গহরজান; বিপ্লব দে; আদিরাজা, চম্পাবতী, গোস্টস; রুদ্র প্রসাদ চক্রবর্ত্তী- লজ্জা; পার্থ প্রতিম দেব- নাচনী; সোহিনী সেনগুপ্ত- বিপন্নতা; অবন্তী চক্রবর্ত্তী- লালসালু।
এছাড়াও ধারাবাহিকভাবে বেশকিছু নাট্যদল উল্লেখযোগ্য কাজ করে চলেছে। যেমন- বেলঘড়িয়া অভিমুখ, ইউনিটি মালঞ্চ (হালিশহর); কালিয়াগঞ্জ বিচিত্রা, গোবরডাঙা নকশা, নাট্য আনন (সিউড়ী); ইলোরা (বোলপুর); রণ (বহরমপুর); ইনসাইড আউট (বর্ধমান); যুগের যাত্রী (চন্দননগর); ক্রান্তিকাল (সোদপুর); আরোহী (ব্যান্ডেল); শিল্পকৃতি (মহিষাদল); স্পন্দন (সোনারপুর); কলাকুশলী (জলপাইগুড়ি); এবং আমরা (বর্ধমান); শান্তিপুর সাংস্কৃতিক সংঘ (শান্তিপুর) ইত্যাদি।
বর্তমান সময়ে পথনাটকের চর্চা ক্রমশ ক্ষয়ের দিকে। যে দলগুলো এ ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ব্রীহি, যুগাগ্নি (বহরমপুর), চেনা আধুলি (হালিশহর), হালিশহর সাংস্কৃতিব চক্র, অনীক্ষা (অশোকনগর), বিঃসর্গ, শতাব্দি, আয়না (কলকাতা), পথমেলা (কাঁচড়াপাড়া), অন্যকণ্ঠ (লক্ষ্মীকান্তপুর), প্রয়াস (ঝাড়গ্রাম ইত্যাদি।
সংক্ষেপে ‘নাটকে দুই বাংলা- দুই দশক’ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। দুই বাংলায় নাটকের আদান-প্রদান বেড়েছে। বেড়েছে ওয়ার্কশপ ও সেমিনারের সংখ্যা। বাংলাদেশের নাট্য অঙ্গন আজ প্রাণপ্রাচুর্য ও আন্তরিকতায় ভরপুর। অন্যদিকে এই বাংলার নাট্য অঙ্গন আত্মতৃপ্তিতে মগ্ন, প্রাণপ্রাচুর্যের অভাব। তারপরও বেড়ে চলেছে উন্নাসিকতা। ধরা যাক, বাংলাদেশের নাট্য বিষয়ক সেমিনার ও ওয়ার্কশপগুলোতে এ বঙ্গের যতজন সম্মানীয় আলোচক ও অভিজ্ঞ নাট্যজন উপস্থিত থাকেন, এই বঙ্গে কি অনুরূপচিত্র ধরা পড়ে? এক কথায় ‘না’। কেনো? তার কোনো থিয়েট্রিকাল ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে না। এ বড় বেদনার। ভৌগোলিক সীমারেখায় বিভক্ত দুটি দেশ। একথা ঠিক। একটি দেশের মাতৃভাষা বাংলা। অপর দেশের একটি অঙ্গরাজ্যের ভাষা বাংলা। বাংলা ভাষার চর্চা, সাহিত্যরচনা, নাটকনির্মাণ ইত্যাদি আদান-প্রদান সমভাবে না হলে কীভাবে শিল্পের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি সম্ভব? এই সত্য আমরা মিলিতভাবে কবে উপলব্ধি করব কে জানে! শুধুমাত্র বিনম্র আবেদন করতে পারি, উন্নাসিকতা পরিহার করে বাংলা নাটকের নতুন নতুন সৃষ্টিশীলতার লক্ষ্যে একে অপরের হাতটা শক্ত করে ধরি। পৃথিবীব্যাপী শোষণ, নিপীড়ন, দখলদারি, সন্ত্রাস, বিভাজন ইত্যাদি নিয়ে সংকটের উগ্র তাপে দগ্ধ হচ্ছি প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত। এই সময় শিল্পসৃষ্টির পাশাপাশি অহংকারহীন নিবিড় বন্ধুত্ব খুব গুরুত্বপূর্ণ। ‘সংকটের বিহ্বলতা’ নয়, ‘জয়’ই হোক আমাদের লক্ষ্য।
জয় হোক বাংলা নাটকের। জয় হোক বাংলার।
মোহিত বন্ধু অধিকারী ( This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it. ): নাট্যকর্মী। সদস্য- ঋত্বিক, বহরমপুর, ভারত।