Full premium theme for CMS
নূরুল হক : আজীবন থিয়েটারে
Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..
নাটকের দলে সবাই অভিনয় করতে আসে। নূরুল হকও তেমনি অভিনয় করতেই এসেছিল আমাদের দলে। ওর চেহারায় একটা বৈশিষ্ট্য ছিল, কণ্ঠস্বর অদ্ভুতভাবে মোটা। জন্মগতভাবেই যেন নিচের পর্দায় বাঁধা। আমার কাছে ইন্টারেস্টিং মনে হতো। ইবলিশ নাটকে ওর জন্য একটা চরিত্র ছিল। খুব চমৎকার করতো। একটা বেদনা ছিল ওর জন্য। আরণ্যকে ঢোকার আগে আরেকটা দলে সে কাজ করতো, বহুদিনের অবলুপ্ত একটি দলে, যার প্রধান ছিলেন রায়হান গফুর। রায়হান গফুর অভিনয় মোটামুটি করতো কিন্তু সে হয়ে গেল টিভি উপস্থাপক। নূরুল হককে বলে দিলো- তোমার যে চেহারা, তাতে তুমি অভিনয় তো দূরের কথা, দর্শকদেরকেও হলে ঢুকিও না। তোমার চেহারা দেখে দর্শক ভয় পাবে। হায়রে! একজন শিল্পীর কী বিকৃত উচ্চারণ! একজন অভিনেতার সৌন্দর্য ভাবনা আমায় ভীষণ কষ্ট দেয় এবং সেকারণেই বোধহয়, আমার স্নেহটা ওর প্রতি আতিশয্যে পরিণত হয়। আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে পড়ে সে।
কখন জানি না, সে দলের রূপসজ্জার কাজে জড়িয়ে পড়ে। কাজটা ভালোভাবেই রপ্ত করে ফেলে সে। ফ্যাসিলিটিজ ডিপার্টমেন্টের চাকুরি আর আরণ্যকে কাজ, এই নিয়েই চলছিল ওর জীবন যাপন। কখন যে এক দূরারোগ্য ব্যধি ওর ভেতরে জায়গা করে নিয়েছে কেউ বুঝতে পারি নি। কিন্তু রোগটা সুপ্ত থেকে যায় ওর দেহে। চলছিল দিনগুলো এভাবেই। একদিন ঠাকুরগাঁও থেকে নাটক করে ফেরার পথে হঠাৎ তার মধ্যে কিছু মানসিক বিভ্রম দেখা দিলো। ডাক্তাররা কেউ কেউ ভুল চিকিৎসাও করলো। এবং অবশেষে জানা গেল সুপ্ত রোগটিই জেগে উঠেছে। রোগের বিস্তার কিছুতেই রোধ করা গেল না। পরিবারটিকে নিঃস্ব করে দিয়ে নূরুল হক বিদায় নিল।
আমাদের থিয়েটারের সুদীর্ঘ যাত্রাকালে অনেক আশা নিয়ে যারা সাথী হয় তারা অনেকে সরে যায়, পা পিছলে পড়ে যায় কিন্তু যারা আমরণ থিয়েটারের সাথেই রইলো, তাদের প্রতি ঋণ আমাদের অপরিশোধ্য। নূরুল হক তেমন খ্যাতি পায় নি, অর্থও পায় নি থিয়েটারের কাছ থেকে। কিন্তু তবুও রঙ্গমঞ্চের রূপতৃষ্ণায় রয়ে গেল যেন অনন্তকালের জন্যই।
মামুনুর রশীদ
নাট্যব্যক্তিত্ব