Bookmaker Bet365.com Bonus The best odds.

Full premium theme for CMS

পিঁয়াজ কাটার ইতিহাস

Written by বদরুজ্জামান আলমগীর.

Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..

 

 
কী সন্ধান করিতে ঘর হইনু বাহির
কী মধুর হাস্য আনিতে যাই অহর্নিশ
কী সংকেতে ছায়াতরুমন নাহি রয় থির
পরম সখা ওগো সখি রহিয়া রহিয়া বীর॥

অহন্যহনি ভুতামি গচ্ছন্তি যমমন্দিরম
শেষা স্থিরত্বমিচ্ছিন্তি কিমাশ্চর্যমতঃ পরম॥

যা কিছু কর তুমি, যাহা কিছুই কর! ধরো যে তোমার মুখ জেঠ মাসের ঠাডা রোইদে মুখ ছারখার হয়- তোমার মুখ, আহারে এমন সুন্দর মুখখানি! মুখের বুঝি বয়স হয় না! একখানে স্থির! এই যেমন শৈজালির বয়স বাড়ে কিন্তু মুখখানি এক আদলে বসা। আগে যা, এখনো তা, ভবিষ্যতেও সেই একই আদল!

ও... ও... আমার চানলো
কী হইছে, কী হইছে কে বকা দিছে
ও আমার তুলারে ও... ও...
ও আমার কুসুমগো...
কান্দে না কান্দে না
আসো আসো বাবা আঞ্চল দিয়া মুখখান মুইছা দিই। আমার শুয়াচান পাক্ষী!

এই সুযোগে পুলা দাদীর সাথে বান্দরামি করে।

মিছা করছি মিছা করছি!
আমারে ধরতে পারবা না।

এই দেখলাম এই নাই
বেতজোড়ে গাই নাই।

বান্দর তুই কই গেলি!
শৈজু, ভাই শৈজু, আসো, আসো বাইর হইয়া আসো।

শৈজু দাদীর সঙ্গে পলাপলি খেলায় মেতে ওঠে।

ঢাহার শহর ইতাকিতা লুঙ্গি ফইরা উতে
আতা নাই মুথা নাই আন্ধাধুন্ধা মুতে। টু... টু...

ঢাহার শহর ইতাকিতা লুঙ্গি ফইরা উতে
আতা নাই মুথা নাই আন্ধাধুন্ধা মুতে। টু... টু...

শৈজু... শৈজু...
ঢাহার শহর ইতাকিতা
শৈজু... শৈজু...
লুঙ্গি ফইরা উতে
শৈজালি
আন্ধাধুন্ধা মুতে

শৈজালি... শৈজালি... শৈজ্যা...

আইতাছি... আইতাছি বাপ!

কী করস, কই যাস?

দাদীর লগে পলাপলি খেলছিলাম।

কী করছিলি?

দাদীর লগে পলাপলি খেলছিলাম।

লায়েক হইছো- সেয়ানা হইয়া গেছ শৈজালি মিয়া, আমার লগে রংঢং করো?

হাছা কই, আল্লার কিরা বাজান, রংঢং করি না।

মজা করো, বাপের লগে মসকরা মারাও!  তুমিও ধরো যে আমি বুকচুদ একখান- আমার লগে যা খুশি তা-ই করতে পারো! শোন, আমারে আঙলাইও না। বেলা গড়ায়ে কোন দিকে যায় সে খেয়াল আছে?

আইজ কার ক্ষেতে যাই?

আইজ ক্ষেত নয় হাটে যাই। এক গুদামের চাল আরেক গুদামে সরানির কাম।

সোলোকওয়ালা আসে।

সাবেক আলী, সাবেক আলী মিয়া!

ওফ! কুফা! কুফা লাগছে!

হাঃ হাঃ হাঃ। কুফা!

হ, হ, কুফা! ঘর থাইকা বাইর হওয়ার মুখে তোরে দেখনের কুফা।

কুফা যদি লাগে, আমারে দেখলে যেমন লাগে, আমারে না দেখলেও তার কমতো দেখি না!

কিতাব পড়া রাখো মিয়া। কিতাব শোনার সময় নাই।

যাও, যাও। রেলগাড়ির লাহান ঝম ঝম ঝম ঝম যাও।

রেলগাড়ি ঝমঝম বগিবগি ঘষা
রেললাইন ঝিকমিক তামা আর কাসা
শুরু নাই শেষ নাই যাওয়া আর আসা
জামতলা নড়ে না এই কথা খাসা॥

ফক্কা হোই ফক্কা...ফক্কা হোই ফক্কা!

রেলগাড়ি যাবার আওয়াজ।
স্বপ্নদৃশ্যের সূচনা!

ফক্কা। হ কথা খাঁটি, যেমন খাঁটি পায়ের তলার মাটি, আর সোনার একখান বাটি! শৈজালি- নাতি আমার! জানি সাধ ছিলো তোমার, ছোট্ট একখানি আহলাদ- চুলের ফিতার লাহান ছোট্ট এইটুকু সাধ- দাদীর লগে পলাপলি খেলনের আশা। শৈজালি, তোমার মুখখানা ডুমরা ফলের লাগান ব্যথা-ব্যথা দেখায়! আমার কথা শোন- দুইটা গাই পাল। একজোড়া গাভী। তোমার জীবন, নাতি আমার, কাদা আর ধুলায় গ্যাছে- খেজুর গাছের কাঁটায় কেন্দে কেন্দে গ্যাছে- এক নিমিষ খাড়ানের সময় পাও নাই। যদি একজোড়া গাই পাল- যেমন একজোড়া চোখ, যেমন একজোড়া মুনকার নাকির- তারা বড় হয়- তাদের ছাওয়াল পাওয়াল হয়- তারা দুধ দেয়- আমার সাদা চুলের বরণ দুধ- তুমি যদি সেই দুধ বেচো- তোমার বাচ্চারা পলাপলি খেলতে পারবে- খরিয়ামোড় পুল থাইক্কা লাফ দিয়া হিঙ্গাদুলি গাঙ্গের উপর পড়তে পারবে- তারা এমন সুন্দর একটা শিশুকাল- কচুপাতার উপর টলটল করা একফোঁটা পানির লাহান সুন্দর এমন শৈশব পাবে, হ শৈজালি- নাতি আমার, এমন রঙ্গ শৈশব আইনা দে!

রাত্রিকালের শব্দরা:
ওইয়ো... ওইয়ো... ওইয়ো...
ওইয়ো... ওইয়ো... ওইয়ো...

শৈজালি কথা ক, তালাশ দে। লোকে বলে, হ, হ, পাবলিক জানে তালা লাগে দরজার উপর, এ কেমন তালারে ভাই লাগে আমার কলবের ভিতর। ইব্রায়িম, আজার, চেনাজানা অরুণ একবার শোন- তালাশ দে-

ফাল দে, ফাল দে
ফাল্লানি খেলায় ফাল দে

কী ফাল কেমনে ফাল?

কী কথা কস আমার মাথায় অর্থ নাই তার
লাঙ্গল আসে জোয়াল আসে
বনভর্তি চাক্কা চাক্কা মাডি
কাম আর কাম থাকে উজান আর ভাডি॥

ফাল দে খেলা খেল
হাস্ ফকফক
ভাঁটফুল দলফুল
শালিক আর বক॥

আছে আছে শিশুকাল শৈশব নাম
পাইনারে পাইনা খালি দেখি কাম
খোঁজ নাও তালাশ করো।
ফল দেখি না।
খোঁজ নাও তালাশ করো
ফল দেখি না।
খোঁজ নাও তালাশ করো।
ফল নাই, তোরা কস আছে, দাদী কয় আছে, আমি বুঝি নাই কোনখানে আছে!

কী নাই, কী পাস নাই শৈজালি?

আমি না খালা, তুমি জানো
জবাব তার জানতে হবে
খোয়াবে দাদী কয় শৈশবের কথা
আমি পাই না খুঁজে তার আগামাথা।
কারে কয় শৈশব কও বিবরণ
সমস্যায় আছি গো খালা মরণ জিয়ন॥

জানি তোর মাথা পুরা খারাপ হয়।
তুই কস তোর দাদী তোরে কয়।

হ হ সত্যি বলি দাদী আমারে খোয়াবের ভিতর কয়, পথের মোড়ের লাহান বাঁকাইয়া বাঁকাইয়া কয়।

হাসাইসন না শৈজালি। তোর দাদী মরছে ত্ইু পেটে থাকার কালে, বাপের জন্মে তুই দাদীরে দেখস নাই। তোর দাদী কইত্থে আইয়ে!

তিনপথের মাথার কিরা খালা- আমার দাদী আমারে শিশুকালের কথা কয়- আমার গোলাপানের লাগি সুন্দর শৈশবের কথা কয়।

আমি জানি না যা, আমি দেখি না যা
তা আমি কোত্থেকে আনি?

দেখ দেখ জঙ্গলে দেখ
শরে বন্দরে দেখ
হাতের তালুর মধ্যে দেখ॥

দেখছি- বহুত দেখছি! কইনছেন দেহি আমার বয়স কতো হয়? কইনছেন দেহি? চল্লিশ না পাঁচচল্লিশ?

এনজিও আপা আইছিলো- আমি জিগাই- এনজিও আপা, আমার বয়স কত হয়? এনজিও আপা হাসে- তোমার বয়স কত আমি কীভাবে বলবো শৈজালি মিয়া? তা-ও ঠিক। কিন্তু সবারতো বয়স থাকে, আমার একটা বয়স থাকবে না? দেন, আমারে একটা বয়স দেন আপা। মা-রে দেখি নাই- আর বাবা! বাবা সারাজীবন এত কাম করছে না! আমার বয়স বসানির সময় পায় নাই!

ঠিকাছে শৈজালি তোমার বয়স পঁয়তাল্লিশ।

আপায় কইছে তাই আমার বয়স পাঁচচল্লিশ। কিন্তু আমার মনে কয় আমার বয়স একশপঁচাত্তর। এই দুনিয়াতে কতোদিন ধইরা আছি! খালি বাঁইচা আছি! মেলা দিন ধইরা বাঁইচা আছি! আমিও লম্বা- আমার জীবনডা লম্বা- আর লম্বা কাজ।

খালি কাম আর কাম!
ও সোলোকচাচা, এনজিও আপা আপনি আমারে বয়স দিছেন- কোন বাজারে আমার শৈশব পাওয়া যায় একবার দেখাইয়া দেন! সোলোকচাচা ও সোলাকচাচা, আপনি কন শুনি।

ঘরে আসে বাইরে যায়
চুড়–ৎ ফুড়–ৎ পাখি
তোমায় আছে তোমায় নাই
বংশীপাতার বাঁশি।
তালাশ করো তালাশ করো মিয়া
পাইবা তারে আরাম করে হুক্কা টান দিয়া॥

হ হ ছিল- সত্যি কন চাচা- এক ঝাড় বাঁশ ছিল।
বাঁশ ঝাড়ের বাম পাশে জমিক্ষেতি ছিল।
বাবা কয় শৈজা আইজ তোর কপাল খুলবার পারে।
সত্যি কও বাজান?
যেমন দরজা খুলে যায়
তিনবেলা খুরাকির লাহান
তোমারও কপাল খুলে যাইবার পারে
মোরগের ডাকের সমান।

আমি বলি, কী হয় বাজান,
কে খুলে দিবে আমার দুয়ার
বাপ, বাজান, আমারে টান দিয়া
ছুড়ে মারো আসমানের উপর!

শোন মন দিয়া শোন। আজ ঢাকা থেকে শেখ ফরিদ মিয়া আসবে- সাথে তার পরিবার, পাম্প সু-পরা নাহরীন। হাতে পায়ে ধরে আনসার আলী মারফত তদবির দিছি- রেডি হয়ে নাও- তাড়াতাড়ি যাও বাজান- তাদের ফুট ফরমাশ করো- ছোডো মেয়ে নাহরীনরে সামলাইয়া রাখবা- মন জোগাও, মন জয় করো- তারা তোমায় ঢাকা নিয়া যাবে।

সত্যি সত্যি শেখ ফরিদ মিয়া আসে, গাড়ি থাইকা নাইমা নৌকায় উডে- আমি তাদের মাল-সামাল টানাটানি করি।

এই পোলা এতো হুড়াহুড়ি করতে আছিস কিসের জন্য? দূরে গিয়ে খাড়া। মাছরাঙ্গা পক্ষী চিনস, ওই যে দেখ মাছরাঙ্গা পক্ষী দেখেছিস? ভালো করে দেখ-

জি দেখছি।

চায়ের কাপের মধ্যে চিনি দিয়া চামচে নাড়া দিলে পরে যেমন কুডু কুডু কুডু কুডু করে এই পক্ষীটার বুকের ভিতরেও তেমন কুডু কুডু কুডু করে, কিন্তু একচুলও নড়ে না। তোর ভিতরও এমন কুডু কুডু করবে কিন্তু একটুও নড়ব না। যা।

যেই কথা সেই কাজ- আমি পাত্থরের মতো বইসা থাকি। এতোদিন জানি ফুল ফুডে বাগানে- পাথরের মধ্যেও যে ফুল ফুডে তাতো আগে জানি না। জানি না- বুঝি না- এই যে গড়ন গাঙ্গের ঢেউ- এইডা যেমুন ঢেউ না- যেমুন একটা মোরগের কানের লতি- কেমুন কেমুন কৈরা কাঁপে! আমার মনে কয়- আমি যেমন দুইডা ঘাসের মাঝখানে নোতুন একটা ডুগা- আস্তে আস্তে বাইর হইয়া আসি। হঠাৎ মনে হয় কে যেমুন বালি হাঁসের পাখের লাহান কাঁইপা কাঁইপা হাসি দেয়।

এই ... এই... এইদিকে চাও
ধরো ধরো
ছুঁড়ে দিলাম ধরো ধরো...
কী ধরতে কও?
জানি না, ধরো ধরো...

নাহরীন আমার দিকে একটা চেইন ঢিল দিয়া মারে। আমি বুঝতে বুঝতে ধরতে ধরতে চেইন গড়ন গাঙ্গের পানিতে গিয়া পড়ে।

আমি কিছু বুঝে উঠবার আগে মুহূর্তের মধ্যে মনে অয় বিদ্যুৎ চমকে যায়। কোনো কথা না বলে এক মুহূর্তের মধ্যে শেখ ফরিদ মিয়া আমাকে গড়ন গাঙ্গের মধ্যে পানিতে ঠেসে ধরে।
ও স্যার, ওঁ ওঁ ওঁ...
ওঁ ওঁ ওঁ

খানকির পোলা জানিস- এইডা ৫ ভরি সোনার চেইন!

না স্যার, আমি এই জনমে সোনা চিনি না।

তোর সোনা চেনার দরকার নাই- গাঙ্গের বালু চিন- চুৎমারনির পোলা।

যখন আমি কাঁদি, বালুর মধ্যে মুখটা আমার ঘষি- একটা গুঁই সাপের চলাচলের লগে আমি গাঙ্গের পাড়ে গিয়া খাড়াই- ক্ষেতি জমির উপর জাম্বুরা দিয়া বল খেলছিল যারা- তাদের  মধ্যে একজন- কেমুন লম্বাচুরা একজন আমার দিকে জাম্বুরার বল আগাইয়া দেয়, বলে, শৈজালি ধর ধর নে, বল নে- আয় একলগে বল খেলি।

সত্যিই একজন আমার দিকে খেলার লাগি একটা বল আগাইয়া দেয়- জাম্বুরার বল।

খোঁজরে খোঁজরে সাধু মধু মধু নাম
পানির তলায় চান্নি উডে এইডা কেমুন কাম।
খোঁজরে খোঁজরে সাধু মধু মধু নাম
খুঁজিবো খুঁজিবো আমি সে-ই অবিরাম॥

তামাম দুনিয়া তন্নতন্ন করে শৈজালি- হাহ্ শৈজালির তামাম দুনিয়া! আমারে হাসাইলেন মিয়া- শৈজালির আবার সারা দুনিয়া! টোনাটুনির বাসা যেমুন বুড়া আঙ্গুলের নখের লাহান ছোট, চোখের পানি গড়াইয়া পড়লে যেমুন তার দাগ থাকে না, কেবল সামান্য নোনতা নোনতা লাগে- শৈজালির জীবনও তেমন সামান্য আর অর্থহীন। কিন্তু দাদী যে কয় আছে, কোন হাটে কোন গেরামে একখান সুন্দর শৈশব আছে? এই তিন সন্ধ্যায় শৈজালি তুমি কোন হাটে পথ দিলা- বেলা যে গড়ায়?

যাই চাচা মধুর খোঁজে- দেখি কই পাই।

তুমি বুঝি সুন্দরবন যাও। চাচারে ভুইলো না মিয়া- যাও, তবে দোয়া করি, ফিরা আসবা জানি একদিন- সক্কলে তা-ই করে; ওই ঘাটে অপেক্ষায় থাকবে তোমার এই বুড়া চাচা আর গুদারা নাও।

কী-যে তাজ্জব চাচা, দাদী কয়- যে দাদীরে কোনদিন চোখে দেখি নাই- আমার এক খোয়াবের ভিতর- তারপর থিকা বালিহাঁসের পাখে পাখে বুঝি ভইরা উডে আমার গতর। দাদী কয় এমন একখান জিনিস নাকি আছে আড়ালে আবডালে- শিশুকাল- সুন্দর শৈশব তারে কয়!

হ,হ, যাও, তবে মিয়ার বেটা- দূর দেশে ঘোরো- খুঁইজা দেখো ডাক্তার, কবিরাজ, যাদুকর বড়ো। যাও শৈজালি তাই কর।

তা ধরেন যায়, অনেকেই যায়- আসলে সবাই যায়। কেউ আগে, কেউ পরে, একজন ডানে, একজন বামে। এমনকি কেউ উপরে... হাঃ হাঃ হাঃ। জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে কই আর কী! আগে ধরেন পানের লগে সাদা পাতা মারতাম- ডাক্তার ম্যাডাম ফতোয়া দিছেন- সাদা পাতা ক্যান কিল ইউ- হাঃ হাঃ হাঃ। আমারে কিল করনের আগে আমি-ই তিনারে কিল করে দিছি, আর সাদা পাতা খাই না। সে গ্যাছে। ফরি... ফরি, ওই বেটা ফইরা...

আইতাছি আইতাছি।

তাড়াতাড়ি আয়, চিলুমচি লৈয়া, পানের পিচ ফেলাইতে অইবো। অনেকেই যায়, পানের পিচও যাইবো। হাঃ হাঃ হাঃ।

বড় মিয়ার হাসি পানের পিকের সঙ্গে সোনায় সোহাগা হয়। গমগম করে তার ধমক, কাজের লোক বাবুর্চি ব্যস্ত পেরেশান। কথা সত্যি- এ হলো জগতের বিধি, কেউ আসে কেউ যায়- আসা যাওয়ার মধ্যখানে বের করে নিতে হয় নিজের উপায়। ব্যঞ্জন রাধিবার কালে আপনার রাঁধুনীর যে নিয়ম।

মিনতি, মায়া মিনতি।

জি খালামু।

তোমার কাটাকুটি কদ্দুর মা- রসুন কাটছো?

জি খালামু।

হলুদ পাইছো?

পাচি খালামু। কালকি খালু ফতেপুর থন নিয়া আনু, পাচি, সব পাচি।

সব পাছো?

জি খালামু।

অখন পিঁয়াজ কাটু কনো। দারুচিনি পানো?

পানো, সব পানো।
পিঁয়াজ কাটো সব থিকা পরো।
চোখি বড়ো জ্বালা কনো।
পিঁয়াজ না হলিতো ব্যঞ্জন সুস্বাদ হবি না মিনতি।

খালামু আমি তাহা বড়ো জানো। সব শেষ পিঁয়াজ কাটুম- কুচিকুচি পিঁয়াজ কাটো চোখ বড়ো জ্বলো- বিশি জ্বলো!

তোমার কী হয় মিয়া। তুমিও পিঁয়াজ কাটো নাকি- চোখ দেখি লাল।

ঘুম হয় নাই।

ক্যান নেশা ভাঙ করছো?

না ঘুমাইতে পারি নাই।

ক্যান, ঘুমাইতে পারো নাই ক্যান?

ঘুমানির জাগা নাই- শুইতে পারি নাই।

কি কও মিয়া, এতো বড়ো আল্লার দুনিয়া- শুরু শেষ নাই। তার মধ্যে তুমি ঘুমানির লাগি একমুঠ জাগা পাও না!

কথা সত্যি, মানি।

কথাতো কও না। দেখি যেন সোনার একখান চুপচাপ খনি। নাম কী তোমার?

শৈজু- শৈজালি।

বাহ্ বাহ্ শৈজু। মিল দেখি বৈজু- বৈজু বাউরা। দেখছো নাকি সেই ছায়াছবি- চলচ্চিত্র! দিলীপ কুমার মিয়া- দিলীপ কুমার হিরো!
দিলীপ কুমার মিনা কুমারীরে কয় চুল আঁচড়াও বেটি।
চুল কীভাবে আঁচড়াবো জনাব আমার চিরুনিতো নাই।
ওফ! আমার নায়িকা মিনা কুমারীর চিরুনি নাই!
এই নাও চিরুনী- আমার বুকের পাঞ্জর কাটি চিরুনি বানাই।
এই সেই চিরুনি।
চিরুনি, চিরুনি, চিরুনি, রাঙা চিরুনি, টুহু চিরুনি, বিলাতী চিরুনি, মসকা চিরুনি! চিরুনি, চিরুনি!
আর এই ডিব্বা- পান, সুপারি, জর্দ্দা, জাফরান মিশানো শাহী পানের ডিব্বা।
আর কি চান-  আমি প্রয়োজনীয় সামগ্রীর এক চলন্তিকা ডিকশনারি- পান, সুপারি, জর্দ্দা, চিরুনি, ফিতা, ক্লিপ, ব্লাউজ, গহনা, ফ্লাজিল, টেট্রাসাইক্লিন- এমনকি মুরগীর আণ্ডা অর্থাৎ ডিম। হাত তালি, হাত তালি, হাত তালি।
এই ডিব্বা এখন আমার হাতে।
হ, হ, ম্যাডাম আপনার হাতে। পান খাবেন, ঠোঁট লাল করবেন- মনোবাঞ্চা পূর্ণ হবে- খাপে খাপ আম্বিয়ার বাপ।
পান খাবো না পান খাওয়াবো। নাগরের মুখে পান তুলে দিবো- হারামখোর নাগর। নামও তার নাগর আলী। নাগরের কাছে যাই কেমনে- পথ চিনি না।
আমারে কন! আপনি খোঁজেন- আমিও খুঁজি!
তুমি কারে খোঁজো?
খুঁজি- কিছু খুঁজি। খুঁজতে খুঁজতে গেরাম ছাড়ি শহরে আসি।
তুমি আসো শহরে, আমি যাবো গ্রামে।
গেরামে যাবেন- কোন গেরাম?
নাম জানি না- খালি মানুষটা চিনি।
সবাই যে কয় শহরে সবকিছু আছে- ঢাকার শহর। আপনি দেখি উল্টা কথা কন!
সে আমার ধান নিছে মান নিছে। খবর পাই সে বিল পাড়ি দিছে সড়ক পাড়ি দিছে- দাড়ি গোঁফ বড় করে ছদ্মবেশ নিছে।
আহারে আমার যদি মনের আশা পূরণ হয় আমি আপনার লগে যাইতে পারি- খুঁজে বার করতে পারি সেই বেতমিজ লোক, শাস্তি দিবো হারে হারে, যে ভেঙ্গে দিছে এক মায়ের বুক।
তার দরকার নাই, ফেলে দিছি মাথার কাপড়, দেখবো হারামখোর তোরে কোন ঘরে পাই।
দেখেন দেখেন তালাশ করে দেখেন।

নাই আমার এই ডিব্বার দরকার নাই!
আপনে যান। খোঁজ করেন।
আমি যার তালাশ করি, মনে কয় তার দেখা পাইছি! পাইছি। ওই রাস্তার উপর দিয়া বেজান দৌড়ে যায়।
ট্রাক। ভাই ট্রাক খাড়াও। খাড়াও।

শৈজু রাস্তার উপরকার দ্রুত চলমান ট্রাকের সামনে যেতে দৌড়ে যায়।

কুকসাইর গ্রাম। কুকসাইর গ্রাম থেকে এক বলদ গরুর পিঠে চড়ে আসে শৈজুর বাপ। গড়ন গাঙ্গের এই পাড় আর ওই পাড়। ইস কী যে বৃষ্টি! গড়ন গাঙ্গের এপাড়ে কুকসাইর গ্রামের মানুষ গুদারা নাওয়ের অপেক্ষা করে- অপর পাড়ে গরুর পিঠে খোঁজ নিতে আসে শৈজুর বাবা সাবেক আলী।

কেডা, হেই পারে তুমি কেডা?
কাহু, আমি সূর্যালি কাহু- সূর্যালি।
সূর্যালি?
হ কাহু।
শিবাচরণ, আমি শিবাচরণগো।
শিবু?
আমি কুরা মিয়া, কুরা মিয়া।
ডলক নামছে। তুফান আইবো। তুমি যাও, বাড়ি যাও কাহু।
নারে বাড়িত যাইতাম না। শৈজালি কই?
শৈজালি গঞ্জে।
বড় বড় ডলক।
তুফান আইবো।
যাও।
দাদা বাড়ি যাও।
বাড়ি যাইতাম না। আমি যাইতাম না।
বাড়ি যাও। দুনিয়া গয়রত কইরা আইবো।
না আমি যাইতাম না।

সাবেক আলী মিয়ার ডাক বুঝি শত মাইল ভেদ করে ঢাকার শহরে এসে পৌঁছে।

সাবেক আলী মিয়ার গলার আওয়াজ এমনই এক ধ্বনি
শত মাইল দূরত্বে খাড়া শৈজুর বুকের মধ্যে শুনি।

শৈজু ক্ষিপ্র হয়, ক্ষুধার মতো দুরন্তশিং চঞ্চলতায় সে এক দৌড়ে ট্রাকের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, সেই ট্রাকে, শৈজু ভাবে তার খোয়াবের সবুজ বুঝি আছে- চোখকানা ষাঁড়ের হিংস্রতায় ট্রাক গর্জন করে আসে- কিসের রিক্সা কিসের মানুষ কে কার পরোয়া করে- মাতাল ড্রাইভার দ্যাখে কোন এক জানোয়ারবৃক্ষ দুই হাত প্রসার করে ট্রাকের পথ আগলে দাঁড়ায়, ড্রাইভার ব্রেক কষে, জানপ্রাণ ব্রেক- এই, মাঙ্গির পুত সর- ওহ!
রাস্তার মাঝখানে তুই ক্যান খাড়াস?

আমার জাম্বুরা চাই।

বেজন্মার জাত, ডাইল মারছস? এগুলি জাম্বুরা না।

তয় কি?

তরমুজ। জাম্বুরা যদি চাস তো এই যে আলিশান বিল্ডিং- ওইখানে যা।

হ, তাই-ই যাই। শেষ না দেখে ছাড়বো না, হ।

কী এক মন্ত্রে শৈজালি আস্তে আস্তে বড় দালানের দিকে যায়। ইয়া বড় জমাজমি গাছ গাছালির মেলা, বেহেস্ত থেকে নাইমা আইলো খাড়া হেলাফেলা।

শৈজালির কানে আসে- ওই খাড়া, বলীয়ান দালানের ভিতর এক মহা গোলযোগের শোরগোল- চিৎকার, হৈহুল্লোড়, ধমকাধমকি। তার মধ্যে এক মোরগ বুঝি আপ্রাণ ছোটাছুটি করে কক কক ককক কক ক... কক কক কক কক...
তাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে হবে।
বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার এখনই মোক্ষম সময়।
আমাদের সজাগ থাকতে হবে।
আমাদের চারপাশে তারা সাপের মতো কিলবিল কিলবিল করছে।
আজ এই ক্রান্তিলগ্নে তাদের একদিন কী আমাদের একদিন।
কক... কক... কক... কক... কক... কক... কক... কক...
আর বসে থাকার সময় নাই।
জাগতে হবে।
আপনি চুপ করেন।
চুপ করেন।
আপনি চুপ করেন।
আপনি চুপ করেন।

এই হট্টগোলের মধ্যে মোরগ আরও সন্ত্রস্ত উত্তেজিত হয়ে ওঠে। যে মোরগটি এখানে- এই চার দেওয়ালের ভিতর- ভয়ে শঙ্কিত- রাগে উত্তেজিত- প্রতিহিংসায় ক্ষিপ্র- তার কী বিবরণ?
 
এ-মোরগ আরেকটি মোরগের সঙ্গে লড়াই করছিল। দুজন-ই শেয়ান শেয়ান। দুই মোরগের লড়াই- ক্ষিপ্রতা ও ক্ষোভ যেন গাঁয়ে, চরাচরে, ঢাকার শহর সবখানে লাঠি খেলার বিন্যাস ছড়িয়ে পড়ে।

ওই যে দুই মোরগ লড়াই করছিলো তাদের কী ঘটে? লড়াইয়ের মাঝখানে রণে ভঙ্গ হয়। দুই মোরগের দুই মালিক তাদের দুজনকে আটকে ফেলে- কেননা তারা আক্রমণে ছিন্নভিন্ন রক্তাক্ত হয়।

কথা হয়, অসমাপ্ত লড়াই আবার শুরু হবে। কিন্তু বাস্তবত তা আর হয়ে ওঠে না। একটি মোরগ পাইকারের কাছে চড়া দামে বিক্রি হয়ে যায়। এই সেই মোরগ অসমাপ্ত লড়াইয়ের আক্রোশ নিয়ে খাবার টেবিলে যাবার জন্য এই সুন্দর ও কুৎসিত অট্টলিকার ভিতর এসে পৌঁছে।

একেতো প্রতিহিংসায় মোরগ ছটফট করে, তার উপর তাকে পাকড়াও করার জন্য যে শোরগোল হয় তাতে তার গোস্বা তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে। ফলে সে যখন দ্যাখে তারা গলা ফাটিয়ে বিকট আওয়াজে কথা বলে তখন মোরগ কী করে? নজ্জার কথা, বড় নজ্জার কথা!

একজনের বিকট মুখে- মানে যেথাসেথা নয়- খারে খা বক্কিলারে খা- একেবারে মুখগহ্বরে টুক করে হাগু করে দেয়!

দালানের বাইরে সেকি বিরাট হাসির গমক।

হাগু করার ফলে সার্কাস আরো দ্বিগুণ চৌগুণ জমে ওঠে। আরো চিৎকার আরো হট্টগোল-
ধর- ধর- শালার মোরগরে পাকড়াও!
দরজা লাগা, দরজা লাগা।
কাগজপত্র দলিল ফাইল ল-ভ- হইয়া গেল!
ওই শালার পুত দারোয়ান। দারোয়ান।
কক... কক... কক... কক... কক... কক... কক... ক... ক...
মোরগ জান বাঁচাতে উড়ে এসে বাবুর্চির টুকরির উপর ছিটকে পড়ে। টুকরির মধ্যে ছিল ভর্তা বানানোর লাগি জাম্বুরা, হ হ জাম্বুরা। পিঁয়াজ, রসুন, মরিচ, লবঙ্গ, এলাচি, দারুচিনি।
জাম্বুরা, পিঁয়াজ- লাল পিঁয়াজ- আরো কত কী!
মোরগের আঘাতে বাবুর্চির মাথার সকল সরঞ্জাম মেঝেতে পড়ে ছত্রখান হয়।
জাম্বুরা সিমেন্টের মেঝেতে বাড়ি খেয়ে লাফ দিয়ে দীর্ঘ বারান্দায় এসে পড়ে। শৈজু দ্যাখে আরে আরে কথা সত্যি হয়। সত্যিই এক জাম্বুরা উপর থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে তার দিকেই নামে।

জাম্বুরা লাফ দেয়- বারান্দা পার হয়।
তারপর সিঁড়ি- এই উঁচু সিঁড়ি।
জাম্বুরা লাফায়!
আসে!
লাফায়!
আসে!
লাফায়!
মাঠে এসে পড়ে।
তবু লাফ দেয়!
যায়!
আরো যায়!
যায়!
শেষ পর্যন্ত বড় রাস্তার পাশে এসে থামে।
এইতো সেই জাম্বুরা- শৈজু বেজান হয়ে যার তালাশ করে ফেরে।

এবার শৈজু তার শৈশবের সেই সোনার জাম্বুরা ধরতে যায়।
তাইরে নাইরে না- বিধি হয় বাম।

যে পথে জাম্বুরা আসে সে পথেই দালানের ভিতর থেকে এক লাল পিঁয়াজের বড় একখানা খোশা প্রজাপতির লাহান উড়ে উড়ে জাম্বুরার উপর এসে বসে।

সবুজ জাম্বুরার উপর তীব্র লাল পিঁয়াজের খোশা উড়ে এসে বসা-মাত্র পুরো দৃশ্যপট পাল্টে যায়।

জাম্বুরা আর একটি ফলমাত্র থাকে না- পিঁয়াজের খোশা-ও তাই। জাম্বুরার উপর বসা-মাত্র আর তরকারির মসলামাত্র থাকে না- দুই মিলে এক ভিন্নতর কম্পোজিশন তৈরি করে- লাল আর সবুজের অতি চেনা, বড়ই চেনা; কী যে সুন্দর দারুণ ভয়ঙ্কর এই কম্পোজিশন!

এতো গুমর বোঝে না শৈজালি।
সে তার জাম্বুরা ধরতে যায়।
কিন্তু পথিমধ্যে এক যাদুকরের কালো লাঠি তার পথ রোধ করে।

আর আগাবা না।
এই যে আমার জাম্বুরা!
এইডা জাম্বুরা না।
এই যে, এই যে গোলগাল চান্দের লাহান সুবজ জাম্বুরা!
তোমার চোখের মধ্যে কোনো চোখ নাই, খালি আয়না- কাচের গেলাস।
কী কন মিয়া ভাই?
দেখো না মিয়া তোমার জাম্বুরার উপর লাল একখান পিঁয়াজের খোশা বসে রয়? তুমি কি চোক্ষের মাথা খাও? তার অর্থ বোঝা না?
কী অর্থ হয়!
তার অর্থ আমার এই কালো লাঠি- তার অর্থ তুমি আর আমি। এর অর্থ আমি আর তুমি। যার অর্থ তুমিও না আমিও না। কাজ হয় না- কোনো কিছুতে কাজ হয় না- পথে যাই কাজ হয় না- ঘাটে যাই কাজ হয় না- রাতে যাই কাজ হয় না- দিনে যাই কাজ হয় না। কতো জায়গায় যে গ্যাছি, কতো জায়গায় দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছি কিছু হয় না, যাদের হয় তাদের হয়, আমার কিছু হয় না। আহারে কতো ঘাটে ঘাটে গ্যাছি! এইটা আমার শেষ ম্যাজিক দেখি কাজ হয় কিনা। বিক্রি হইছি- সামান্য টাকায় বিকায়া গ্যাছি- দেখি কাজ হয় কিনা!

এবার যাদুকর জাম্বুরা হাতে নেয়- জাম্বুরার অছিলায় চলন্ত বাসের দিকে একটা বোতল ছুঁড়ে মারে।

হয় হয় তাতে কাজ হয়।

বাসে আগুন ধরে যায়।

বাস ধাউ ধাউ করে জ্বলে, বাসের ভিতর যাত্রীরা চিৎকার করে, হাউমাউ করে।

শৈজালি দ্যাখে জ্বলন্ত বাসের ভিতর থেকে একটি লোক- লোক নয়- আগুনেরও পা থাকে, আগুনও দৌড়াতে জানে- একদলা আগুন শৈজালির দিকে দৌড়ে দৌড়ে আসে!

শৈজালি দ্যাখে কে, কেগো তুমি আমার দিকে আসো! তোমার হাতে বল- আমার লাগি জাম্বুরার বল!
শৈজালি পৃথিবীর আদিমতম মাতৃজরায়ুর ভিতর থেকে আর্তনাদ করে ওঠে।
ও... ও... ও...
ও... ও... ও...
শৈজালি কংক্রিটের ঘাসের মাঝে, আগুনের দুধের উপর গড়াগড়ি যায়।
কোন অজানা আসমানের ফোকর থেকে এক মায়ের তলপেট থেকে অজর নহর শিশুরা নেমে আসে।

উড়িয়া যাওগো পবনের বাতাস
মা ফাতিমা কাইন্দা কয়।
পুত্রশোকে জ্বলছেগো আগুন
বাতাসে কী গাও জুড়ায়!

ইতি। কেনো ইতি হয় না গো মা! দৃশ্যকাব্য পিঁয়াজ কাটার ইতিহাস॥
বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বদরুজ্জামান আলমগীর: নাট্যকার