Full premium theme for CMS
কর্পোরেট সংস্কৃতি, এবং নাট্যকর্মীর আত্মানুসন্ধান
Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..
প্যাসিভিটির পটকথা
যখন থিয়েটারওয়ালার উদ্যোগে এস এম সোলায়মান মেলার প্রায় শেষভাগে গিয়ে হাজির হই, তখন পর্যন্ত নানান কিছু বিযুক্তি নিয়ে জিজ্ঞাসু হয়ে আছি। এই বিযুক্তি পরিশেষে প্রায় নিজের সঙ্গে, এবং জিজ্ঞাসা খোদ বিযুক্তির প্রণালী এবং ব্যাকরণ নিয়ে। থিয়েটারবিবর্জিত জীবনযাপন করি আমি বহুকাল, এমনকি সংস্কৃতিবিবর্জিত। সেটা ইচ্ছাকৃত। এবং দরকার পড়লে তা নিয়ে প্রকাশ্য আলাপেও কোনো বাধা নেই আমার। তারপরও, সেদিন সকাল থেকেই যে সেখানে ছিলাম না, সেটার মূল কারণ মাইগ্রেনজনিত ব্যথা। আমি যখন মেলার দ্বিতীয়ার্ধে যাই প্রধান স্বার্থ ছিল এর উদ্যোক্তা থিয়েটারওয়ালা সম্পাদক সমেত পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ। কারো কারো সঙ্গে অনেকদিন দেখা নেই। একটা অন্তর্গত উত্তেজনা, আবার নিজের সেই প্রগাঢ় জিজ্ঞাসাটির সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও একটা জিজ্ঞাসা। ঢাকাই সম্পর্ক ও উদ্যোগমালার হাল ইদানীংকালে প্রজেক্টে পর্যবসিত হয়েছে। এর মধ্যে দুরূহ এই মেলা আয়োজনের মতো আত্মঘাতীপ্রায় একটা কাজ থিয়েটারওয়ালা ও তার মিত্ররা করতে গেলেন কেন!
এই মাথাব্যথা, কিংবা ধরা যাক মাইগ্রেন, পুষতে পুষতেই শিল্পকলা একাডেমীতে নামি। কিন্তু চারপাশে তাকাতেই ফেলে আসা ৮০’র দশকের এক একটা খণ্ডচিত্র খুব জোরেসোরে নাড়া দিয়ে গেল চোখ। নানান দিকে নানান দল নাটক করছে খোলা জায়গায়। আর প্রদর্শনী। দুটো গভীর সতর্কতা নিয়ে আমি মূল মঞ্চের দিকে যেতে থাকলাম। ভিতরে। সতর্কতা দুটো হচ্ছে: এক, কৌতূহলী হয়ে কিছুতেই এইসব অনুষ্ঠানের পুরো স্থাপনা এবং কলাকুশলী দল আমি চিনতে চাইব না; যেহেতু কিছুতেই ওই ঝটিকা সফরে আমি তা সামাল দিতে না পেরে মাথা আউলে ফেলব। দুই, কিছুতেই যেন নস্টালজিয়া গ্রাস না করে, যেহেতু নস্টালজিয়া কোনো কার্যকরী রাস্তা দেয় না যদি আদৌ আমরা সেটার খোঁজে থাকি।
শিল্পকলা একাডেমীর থিয়েটারের মূল প্রেক্ষাগৃহে তখন একটা মুক্ত আলোচনা চলছে। নানান নাটকের দলের কলাকুশলীরা গোল হয়ে বসে আলাপ করছেন। মঞ্চের মধ্যে এভাবে বসে আলাপ করা খোদ একটা চমকপ্রদ অনুশীলন এবং, সন্দেহ নেই যে, অনেক অভিজ্ঞতা এরকম হয় নি আমার আগে। কিন্তু তার থেকেও নাড়া দেবার মতো বিষয় হলো আলাপের মূল সূত্র। যে জিজ্ঞাসাটা উদ্যোক্তারা দিয়ে রেখেছিলেন তা হচ্ছে- এই বাজারে কী নিয়ে কেন কীভাবে নাটক। খুব হতাশার সঙ্গে দেখলাম এরকম একটা অতিপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের সঙ্গে গড়পরতা সংমিশ্রণ ছিল খুবই ভাসাভাসা। এবং বড় একদল কর্মীই ‘বাজার’ ধারণাটাতে এক ধরনের মনোকষ্ট নিয়ে আলাপ করছেন। মোটামুটি দুটো অবস্থান শনাক্ত করা যায় এই মনোকষ্ট থেকে, অন্তত আমার সেভাবে মনে পড়ছে। এক, নৈতিক একটা অবস্থান থেকে বাজার বিষয়ে প্রায় ক্ষমা প্রার্থনার ঢঙে তাঁরা ‘আসল’ শিল্পকলার ‘রক্ষা’র জন্য কাকুতিমিনতি করছেন, পরস্পরের নান্দনিকতার কাছে। দুই, বাজার ধারণাটার ‘কালিমা’র চোটে এর অর্থ বদলে তাঁরা প্রায় মিলনমেলাটার প্রতিশব্দ হিসেবেই বাজারকে পুনঃর্প্রতিষ্ঠিত করার নিরর্থক চেষ্টা করছেন, পরস্পরের কল্পনাশক্তির কাছে।
কিন্তু বাজারটা তাহলে গেল কোথায়? কবেই বা বালুর মধ্যে মাথা গুঁজে গ্রীবাধারী উটটি মরুঝড় থেকে পরিত্রাণ পেয়েছে?! আমাদের শুভকামনা কিংবা মঙ্গলচিন্তাতে বাজারটা উধাও হয়ে যাবে? এত মঙ্গলচিন্তা আসে কোত্থেকে?
মঞ্চ নেই, মল তো হচ্ছে দেদারসে কয়েকবছর আগেও মল শব্দটার বলতে গেলে একটাই অর্থ ছিল আমার কাছে। এবং সেটা বাংলায়। পায়ের অলঙ্কারও যে একটা মল হতে পারে সেটাও মনে পড়ত বছরে দুয়েকবার মাত্র। ৯০ দশকের মধ্যভাগ থেকে, খসড়াভাগে, মল শব্দটার ইংরেজি অর্থ আমার অধিগত হতে থাকে। সেটা ব্যাপক এবং ক্রমাগত ব্যাপক। কিন্তু তারও আগে তামাম দুইটা দশক ধরে নির্বিশেষে, এবং বিশেষভাবে আশির দশকে অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইনের পাশাপাশি আরেকটা যৌথক্রন্দন ছিল থিয়েটারকর্মীদের- মঞ্চ নেই। নিরীখ করে ভাবলে অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইনের উপস্থিতি এবং মঞ্চের অনুপস্থিতি আসলে একই প্রসঙ্গ।
এরকম সময়ে থিয়েটার-বান্ধবদের উৎকণ্ঠাটাকে গভীরভাবে না নেবার উপায় ছিল না। আর সেই ভাবনার পাটাতন হিসেবে কাজ করেছে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বিপণন বাস্তবতা, মুদ্রা বাজারের সুস্পষ্ট কড়া একটা চেহারা। নয়া নয়া কর্পোরেট গোষ্ঠীর উত্থান, এদের বৈশ্বিক সম্পর্করাজি, স্থানীয় থিয়েটারকর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ একাংশের বিপণন বিশেষজ্ঞ হিসেবে আবির্ভাব হয়ে কোটি কোটি টাকা আয়- এইসব বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবা আমি জরুরি মনে করেছিলাম। ঢাকার বাহ্যিক স্থাপত্যে তখন কয়েকটা বছরের মধ্যে বিরাট একটা বদল এসেছে। সারি সারি বিরাট বিরাট কর্পোরেট ভবন ঢাকার আকাশ এবং মাটি দুটোকেই দূরবর্তী এক মায়ারাজ্য বানিয়ে দিয়েছে। ফলে মঞ্চ না থাকার এই আহাজারি আমার বিশেষ ক্ষেত্রে মায়াকান্না এবং কপট সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক দাবি বলে মনে হতো। এমন এক দাবি যা কেবল সাংস্কৃতিককর্মীদের একটা অবয়ব রচনার অংশ ছিল মাত্র। আমি স্পষ্টত মনে করে এসেছিলাম যে মঞ্চ থাকতে পারত এবং সেটা কেউ কেউ চাইলে। আমার মনে পড়ে থিয়েটার-বান্ধবদের মধ্যকার অক্ষমদের সঙ্গে সরাসরি আলাপে আমি নামোল্লেখ করেই বলতাম: অমুক বা তমুক যদি চান মঞ্চ তাহলে হবে। হয়তো কোনো একটা ‘ব্যক্তিগত’ মানে কর্পোরেট ভবনের পেটের মধ্যে হবে। হয়তো কোনো একটা বাণিজ্যগোষ্ঠীর লোগো কিংবা নাম-জাত সমেত মঞ্চটার ডাকনাম তৈরি হবে। কিন্তু তাতে নামডাক কম হবে না, বেশিই হবে বরং। সত্যিকার অর্থে মঞ্চ হয়ে চলেছিল। সারি সারি ঢাকার নয়া স্থাপত্যের মধ্যে তখন নানান রকমের মিলনায়তন তৈরি হয়ে গেছে। উন্নয়নসংস্থা বা এনজিও’র বেশি। কিন্তু স্বায়ত্তশাসিত দপ্তর এবং পরিশেষে কর্পোরেট দপ্তরেও মিলনায়তনের অভাব নেই আর। কেবল ‘গ্রুপ থিয়েটার’-এর নাট্যকর্মীদের জন্যই মঞ্চ নেই। ‘ব্যক্তিগত’ মালিকানাধীন মঞ্চ হচ্ছে, নেই কেবল যৌথ ‘অংশীদারিত্বে’র মঞ্চ। না ভেবে আমার উপায় ছিল না। এখনো নেই।
যদি বিপণন বা মিডিয়া কনসালট্যান্ট হয়ে থিয়েটার মহলের একাংশ আকাশছোঁয়া ধনী হয়ে যেতে পারেন, যদি তাঁদের বিস্ময়কর তুলনারহিত তারকাখ্যাতি থাকতে পারে, তাহলে মঞ্চ অবশ্যই থাকতে পারে। কেবল বিপণন বিশেষজ্ঞ হবার পাশাপাশি তাঁদের থিয়েটারকর্মীদের যৌথ-অংশীদারিত্বের সহজলভ্য মঞ্চ বানানোকে এজেন্ডার মধ্যে রাখতে হবে। সেটা তাঁদের আছে বলে মনে হয় না। প্রাসঙ্গিকভাবে এখানে ছায়ানট কিংবা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের (বি. সা. কে) নিজস্ব ভবন বানাবার উদ্যোগগুলো উল্লেখযোগ্য। এমন নয় যে, ছায়ানট কিংবা বি.সা.কে. ভবনগুলোকে আমি অ-কর্পোরেট বলছি, বরং সঠিকভাবে এই উদ্যোগগুলো আর্থ-রাজনীতিক চারিত্র্য বিচার করার মতো যথেষ্ট তথ্য আমি জানি না। কিন্তু একটা নিরন্তর বদলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে, সমবায় যখন বিলীনপ্রায়, তখন কথিত গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের কর্তাব্যক্তিরা বিকল্প খুঁজে তিন দশকের একটা আহাজারিটার নিষ্পত্তি ঘটাতে পারতেন। কিন্তু সেরকম কোনো উদ্যোগ হয় নি। অন্তত এই লেখা লিখবার সময় পর্যন্ত।
‘গ্রুপ থিয়েটার’ কোন গ্রুপের সম্পত্তি?
মাধ্যম হিসেবে টেলিভিশনের সঙ্গে ছায়াযুদ্ধ করবার মতো মূর্খতার মানে হয় না। সেটা আমার উদ্দেশ্য নয়। টেলিভিশন বা ব্যাপকার্থে শ্র“তি-দৃষ্ট মাধ্যম এখন একটা কঠোর বাস্তবতা বর্তমান দুনিয়ায়, এবং কয়েক দশক ধরে। কিন্তু ছায়ানট কিংবা বি.সা.কে.-এর মতো সাংস্কৃতিক-বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো যে “নিজস্ব” ভবনের উদ্যোগ নিতে পেরেছে এবং সঠিক পৃষ্ঠপোষক বাছাই করতে পেরেছে সেটার সাধারণ একটা কারণ ঠাহর করে নিতে কষ্ট হয় না। অন্তত টেলিভিশন মাধ্যম দ্বারা এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্ণধারেরা যে আত্মীকৃত হন নি- সেটা তাঁদের পক্ষে ইচ্ছাকৃত হোক বা না হোক- সেই বাস্তবতাটা এক্ষেত্রে ঘোরতর প্রভাবক। এখানে টেলিভিশনের প্রসঙ্গটা হয়তো কিছুটা ক্রীড়াচ্ছলে বলা। ব্যাপকার্থে চিন্তা করলে মুখ্য প্রসঙ্গটা বিপণনের কাজে নিবিষ্টভাবে জড়িয়ে পড়া। এখানে স্পষ্ট করবার আছে যে আমার তরফে জিজ্ঞাসাটা নৈতিকতার নয়, বরং রাজনৈতিকতার। থিয়েটারকর্মীদের মিডিয়া কনসালট্যান্ট হয়ে ওঠা কিংবা তাঁদের পক্ষে তাবড় তাবড় বাজেটের উন্নয়ন প্রপাগান্ডার কাজ করাকে আমি বিশেষভাবে মন্দ (কিংবা ভালো) বলতে চাইছি না। আমার ভাবনার জায়গাটা হলো অপরাপর সাংস্কৃতিক-বুদ্ধিবৃত্তিক দলের তুলনায় থিয়েটারকর্মীদের একাংশের পেশাগত রূপান্তর ‘গ্রুপ’ থিয়েটারকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। একথা বলার সময় মনে পড়ছে কীভাবে মুম্বই চলচ্চিত্র থেকে আয় করে উৎপল দত্ত কোলকাতার থিয়েটারে প্রাণ সঞ্চার করবার জন্য ব্যয় করেছেন।
‘গ্রুপ’ থিয়েটার কোনো কালে এর ঘোষণানুরূপ গ্রুপ ছিল কিনা সেটা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা জিজ্ঞাসা, এবং অতীব জরুরি জিজ্ঞাসা। কিন্তু এখানে এটুকু ধরে নিয়ে আগানোই কাজের যে কোনো একটা কালে ঘোষিত এবং বহুলকথিত ‘গ্রুপ থিয়েটারের চেতনা’ কার্যকরী ছিল। এর নেতৃত্বের টানাপড়েন স্বাধীন বাংলাদেশের একটা সাধারণ প্রপঞ্চ। কিন্তু নেতৃত্বের টানাপড়েনকে এবং নেতৃত্ব নির্বিশেষে পেশাদারিত্বের রূপান্তরকে একাকার করে দেখার সুযোগ নেই। হালের বাংলাদেশে গ্রুপ থিয়েটার বলে কথিত সাংস্কৃতিক জগতের শীর্ষস্থানীয় প্রায় সকল অনুঘটক কর্পোরেট বিপণনে কায়মনে নিয়োজিত। আর কোনো সাংস্কৃতিক পরিক্ষেত্র একইভাবে আক্রান্ত নয়।
কিন্তু কর্পোরেট থিয়েটার কি হওয়া সম্ভব?
আমার অনেক ধারণা নেই যে পাশ্চাত্যের পেশাদার থিয়েটারকে বা এর অংশবিশেষকে কর্পোরেট থিয়েটার বলা যাবে কিনা। বিদগ্ধ বিশ্লেষকেরা নিশ্চয় সে ব্যাপারে ধারণা দিতে পারবেন। কিন্তু সেই জিজ্ঞাসা এখানে বিশেষ প্রাসঙ্গিক নয়। তবে কর্পোরেট থিয়েটার আত্মপ্রকাশ করলে, এর নিজস্ব শ্রেণীমহিমাতেই, নির্দিষ্ট ভোক্তাকুল পেয়ে যাবে। বাংলাদেশের রূপান্তর সেদিকে হচ্ছে কিনা সেটা আরও স্বতন্ত্র জিজ্ঞাসা। তবে এর লক্ষণ দেখা যায়। যদি থিয়েটার ভোগ করা নগরের কুলীণ বর্গের আকাঙ্খার অংশ হয়ে ওঠে, তাহলে কর্পোরেট থিয়েটার কেবল সময়ের অপেক্ষা। এবং এর জন্য পুরো ক্ষেত্র তৈরি হয়ে আছে- খানিক বাহ্য, বেশিরভাগই উহ্য।
কিন্তু কর্পোরেট থিয়েটার এবং চলমান থিয়েটারসমূহের কর্পোরেট-আসক্ত কিংবা কর্পোরেট-কৃত হয়ে পড়া একদম বিভিন্ন বিষয়। এখানে কর্পোরেট-কৃত হয়ে পড়া বলতে থিয়েটারকর্মীদের জীবনযাপনে একটা বিশেষ সাংস্কৃতিক বাতাবরণই কেবল নয় বরং আমি বোঝাতে চাইছি জীবন-জীবিকার সুস্পষ্ট নিয়ন্ত্রণ কতিপয় কারকের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়াকেও। এই দাবিটি আপাত জটিল ধরনের। অন্তত এই কারণেও যে এটা প্রমাণ করবার জন্য কিছু বাহ্য ধরনের গবেষণা-উপাত্ত হাজির করার চাপ থাকে। কিন্তু ঘটনাচক্রে এই পত্রিকাটির পাঠকেরা কোনো না কোনোভাবে থিয়েটার-সংশ্লিষ্ট এবং যেভাবে আমার প্রস্তাবনাটি হাজির করেছি তাতে, নিজ নিজ অবস্থান থেকে, চারপাশে তাকালেই প্রস্তাবনাটির গভীর অথচ সরল পাটাতনটি স্পষ্ট হবার কথা।
এখানে থিয়েটারের কর্পোরেটায়নের দুটো লক্ষণ, আপাতত, আমি হাজির করেছি। এক, থিয়েটারকর্মীদের জীবনযাপনে সাংস্কৃতিক বাতাবরণ; এবং দুই, থিয়েটারকর্মীদের জীবিকার উপর কতিপয় কারকের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ। প্রথমটি শনাক্ত করা সম্ভব থিয়েটারে গভীর স্তরবিন্যস্ত এবং অনড়প্রায় একটা অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ-ব্যবস্থা ও সম্পর্কপ্রণালী দেখে। দ্বিতীয়টি শনাক্ত করা সম্ভব অধিকাংশ নিবেদিতপ্রাণ থিয়েটারকর্মীদের কর্মসংস্থানের বিদ্যমান ব্যবস্থা দেখে, তাঁদের ইচ্ছা-নিরপেক্ষ বা সাপেক্ষভাবে পর্বতপ্রমাণ থিয়েটার ব্যক্তিত্বসমূহের সঙ্গে একনাগাড় তদ্বিরের অনুশীলন দেখে।
বাংলাদেশে আসলে বহুকাল ধরেই গ্রুপ থিয়েটার নেই।
একটা কপট শিরোনামা
স্বল্পাকার এই রচনার শিরোনামাটি এক অর্থে কপট। সেটা এই অর্থে যে রচনাটি জবাব দেবার কোনো উদ্যোগ নেয় নি এ যাবৎ। এবং এখনও নিচ্ছে না। আমার লক্ষ্য ছিল আদি প্রশ্নটিকে আমি যে পাটাতনে বিবেচনা করি তা তুলে ধরা। তাহলে যদি এরকম অনুধাবনে, এরকম পাটাতনে, সমসাময়িক বাংলাদেশে থিয়েটার করবার জিজ্ঞাসাটাকে দাঁড় করানো যায় তাহলে এর উত্তরটা কিংবা উত্তরগুলো পদ্ধতিগতভাবে একটা পথ খুঁজে পায়।
এই বাজারে নাটক তো বাজারটাকে আড়াল করতে পারে না! সেটাই হবে সবচেয়ে গর্হিত কাজ। অপেশাদার এবং আত্মঘাতী। তাহলে কর্পোরেট সংস্কৃতির এই আগ্রাসী কালে খোদ কর্পোরেট সংস্কৃতিটাই বিষয়বস্তু হবার দাবিদার সর্বাগ্রে। এমনসব নাটক যেগুলো বাহ্য এবং উহ্য সকল কারককে উন্মোচন করতে প্রয়াস নেবে।
আমি একটা নাটক দেখার অপেক্ষায় আছি যেখানে এমনকি খোদ নাট্যাঙ্গণের শক্তিধর কারকদেরকে নাটকটি তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণ করতে সাহসী এবং সমর্থ। যদি আমার যোগ্যতা ও সামর্থ্যে কুলাত, আমি এই প্রচেষ্টার আরম্ভকারদের দলে থাকতাম। নিশ্চিতভাবে।
মানস চৌধুরী : নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক, মিডিয়া বিশ্লেষক এবং গল্পকার।