Full premium theme for CMS
মঞ্চ-অভিনয়ে সৃজন-স্বাতন্ত্র্য : আক্ষেপ-অভিমান-প্রাপ্তি
Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..
স ম্পা দ কী য়
আক্ষেপপর্ব
বক্ষ্যমান-সংখ্যার পরিকল্পনা থেকে শুরু করা যাক।
আমরা জানি, মঞ্চ-প্রযোজনা মূলত বর্তমান দর্শকের জন্যই সৃষ্টি ও পরিবেশন করা হয়। এবং, প্রযোজনায় অনিবার্য উপাচারের মধ্যে একমাত্র পাণ্ডুলিপি ছাড়া আর সবকিছুই কালের গর্ভে হারিয়ে যায়। যেমন, নির্দেশক-ডিজাইনার-কিংবা অভিনেতা-অভিনেত্রীর (অর্থাৎ অভিনেতৃর) সৃজনশীলতা, ইত্যাদি। কারণ একটাই। আমরা সবাই জানি, ‘থিয়েটার’ মানেই হলো, ত্রিমাত্রিক স্থান+জলজ্যান্ত অভিনেতৃ+জলজ্যান্ত দর্শক। সুতরাং কালের যাত্রায় যারা হারিয়ে যায়, তারা আর বর্তমান-‘থিয়েটার’-এর অংশ হয় না, হয়ে যায় স্মৃতি।
কিন্তু এমন করে না-হারায়ে আগামী কালেও বাঁচিয়ে রাখার উপায় কী? উত্তর, এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় হচ্ছে, ওইসব শিল্পীর সৃজনশীলতার কথা যদি কেউ অভিজ্ঞতার আলোকে লিখিত আকারে বিশ্লেষণ করে যান। এ কাজটা আমাদের থিয়েটারে প্রায় অনুপস্থিত। এই খামতি দূর করবার জন্য ‘থিয়েটারওয়ালা’ কয়েকজন অভিনেতৃর ‘অভিনয়ে সৃজন-স্বাতন্ত্র্য’ নিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ প্রকাশ করার প্রয়াশ নিয়েছি। সৃজন মানে তো নতুন, অপূর্ব কিছু করা বা হওয়া, তা যেকোনো শিল্পমাধ্যমেই হোক না কেন। আর স্বাতন্ত্র্য তো স্ব বা নিজের মতোৎ যা আর-সবার থেকে ভিন্ন কিছু। তো আমরা জানি, অভিনয়ে প্রতিটা অভিনেতৃর স্বভাব-স্বাতন্ত্র্যে নতুন, অপূর্ব কিছু সৃষ্টি বা সৃজন হয়। আমরা এই প্রকাশনার মাধ্যমে বুঝতে চাচ্ছি, বাংলাদেশের মঞ্চে ধীমান প্রতিভাধর একেক নট-নটী নতুন কী কী বিশেষ অভিনয়শৈলী প্রয়োগ বা প্রকাশ করেছেন, যার ফলে দর্শক-সাধারণ মুগ্ধ হয়েছেন তাদের অভিনয়ে।
ঠিক করেছি, প্রয়াত ৪ অভিনেতৃ, মোহাম্মদ জাকারিয়া (১৯২৩-১৯৯৩), নাজমা আনোয়ার (১৯৪১-২০০৪) হুমায়ূন ফরীদি (১৯৫২-২০১২) ও খালেদ খান (১৯৫৮-২০১৩)-এর অভিনয়ে কোন ধরনের সৃজন-স্বাতন্ত্র্য লক্ষ করা গেছে তা অন্বেষণ করবার চেষ্টা করব। যদি সফল হই, তবে পরবর্তীসময়ে এর ধারাবাহিক প্রকাশনা হতে পারে।
থিয়েটারওয়ালা’য় যারা লেখেন কিংবা এখনও লেখেন নি, এমন প্রায় ৫০ জনের কাছে আমাদের আগ্রহ ও চাহিদার কথা জানাই।
এবং তখনই জন্ম নেয় ‘আক্ষেপপর্ব’র।
প্রস্তাব পাওয়ামাত্রই একে একে জানান দিতে থাকেন যে, এ বিষয়ে লেখা দেয়া তাদের পক্ষে অসম্ভব। যুক্তি হিসেবে বলা হলো, ‘অভিনয়ে সৃজন-স্বাতন্ত্র্য’ ব্যাখ্যা করবার মতো ক্ষমতা তাদের নাই। কেউ কেউ বললেন, উল্লেখিত চার অভিনেতৃই বহুদিন হলো প্রয়াত। যখন মঞ্চে তাদের অভিনয় দেখেছেন, তখন অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু সেই মুগ্ধতার বিশ্লেষণমূলক-স্মৃতি এখন প্রায় বিস্মৃত। কেউ কেউ জানালেন, এদের কারো মঞ্চ-অভিনয় দেখারই সুযোগ ঘটে নিÑতাহলে ‘অভিনয়ে সৃজন-স্বাতন্ত্র্য’ লিখি কীভাবে?
সবার কথায়ই যুক্তি আছে, কিন্তু ‘আক্ষেপ’ ঠেকাই কীভাবে?
অভিমানপর্ব
তারপরও বলছি, আক্ষেপ আছে ঠিকই, কিন্তু কোনো অভিমান নাই। কেননা, যারা লেখা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন, তারা লেখক হিসেবে সততার পরিচয় দিয়েছেন। নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে যেকোনো লেখক লিখতে না-ই পারেন। সেটা সম্পাদককে আগাম জানিয়ে দেয়ার জন্য তাদের সবাইকে ‘আক্ষেপ’ নিয়েও ধন্যবাদ জানাতেই হয়। আর এই আক্ষেপ দীর্ঘতর না-করবার লক্ষে যারা যারা লেখা দেয়ার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন, তাদের কাছে দায়িত্ব ও স্বভাব-বশত নিয়মিত-বিরতিতে লেখার জন্য তাগাদা চালিয়ে যাই। লেখকরাও একে একে বিনয়ের সাথে ‘সময়’ চাইতে থাকেন। এবারের লেখার বিষয়বস্তু যেহেতু খানিকটা জটিল, তাই সময় না-দিয়েও কোনো উপায় থাকে না। আশার কথা এই যে, ধীরে ধীরে লেখা আসতে থাকে।
কিন্তু লেখার সংখ্যা পর্যাপ্ত-পর্যায়ে পৌঁছয় না। ফলে, আবারও তাগাদা আর বিপরীতে লেখা দেয়ার আশ্বাস চলতেই থাকে। এবং ফলস্বরূপ, বেশ কিছু লেখা হাতে পৌঁছে যায়। কিন্তু যারা লেখার জন্য ‘সময়’ চেয়ে বসে আছেন, তাদের লেখা পাওয়া না-পাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানতে তাগাদা চালিয়ে যেতেই হলো। বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করলাম, তারা লেখা দিতে অপারগতা জানাচ্ছেন না, আবার লেখা দিচ্ছেনও না। এবং এক পর্যায়ে ফোনে যোগাযোগ করেও তাদের নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না।
এই পর্যায়ে জন্ম নিল ‘অভিমানপর্ব’র।
যখন ফোন-ম্যাসেজ-ম্যাসেঞ্জার সব ওয়ান-ওয়ে হয়ে গেল, মানে, অন্যদিক থেকে কোনো সাড়া-শব্দ আসছিল না, তখন ‘লেখা’র চেয়ে ‘লেখক’কে নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। একজন মানুষ যোগাযোগ করতে না-পারার অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটা হতে পারে, তার অসুস্থতা। এক্ষণে, ‘লেখা-প্রসঙ্গ’ বাদ দিয়ে ‘লেখকের’ শারীরিক অবস্থার কথা জানার চেষ্টা করতে থাকি। এবং আনন্দ-সংবাদ এই, জানতে পারি, তারা সবাই সুস্থ আছেন। জানতে পারি, তারা লেখা দিতে ইচ্ছুক, এবং অনেকদূর লিখেও ফেলেছেন। তাহলে যোগাযোগ বন্ধ রেখেছেন কেন? যোগাযোগ রেখে কী উত্তর দিবেন, এটা নাকি তাদেরকে একটু অস্বস্তিতে ফেলছে। লেখাটা পাঠানোর পরই তারা যোগাযোগ করতে চান।
কিন্তু শেষ-সংবাদ এই যে, গত ৪/৫ মাস ধরেও ‘অনেকদূর লিখে ফেলা’ লেখাটা তারা শেষ করতে পারেন নি, এবং সে কারণে আমাদের সাথে যোগাযোগও করছেন না।
তাই, বাধ্য হয়ে তাদের ‘লেখা’ পাওয়ার আশা ত্যাগ করে, যাদের লেখা পেয়েছি, তাদেরকে আর অপেক্ষায় না রেখে প্রেসে যাওয়ার পথ ধরেছি। কিন্তু ‘থিয়েটারওয়ালা’র ২৫ বছরের পথচলায় যারা ‘লেখা’ দিয়ে আমাদেরকে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন, তাদের ‘অনেকদূর লিখে ফেলা’ লেখা প্রকাশ করতে না পেরে আমাদের কি ‘অভিমান’ হতে পারে না? আশা রাখি, পরবর্তীসংখ্যাগুলোতে আপনারা আমাদের ‘অভিমান’ ভাঙানোর চেষ্টা করবেন।
প্রাপ্তিপর্ব
যে বিষয় নির্বাচন করেছি, সত্যিকার অর্থেই এ বিষয়ে লেখা একটু কঠিনই বটে। যাদের লেখা পেয়েছি, তারা তাদের লেখা নিয়ে অতটা সন্তুষ্ট না। কারণ হিসেবে বলেছেন, স্মৃতি থেকে লিখতে গিয়ে অনেককিছুই ঠিকঠাক মতো বিশ্লেষণ করতে পারেন নি। কিংবা ‘অভিনয়ে সৃজন-স্বাতন্ত্র্য’ নিয়ে লিখতে গিয়ে লেখাগুলো অনেকটাই স্মৃতিচারণ ধাঁচের হয়ে গেছে। লেখকবৃন্দ যতটা আক্ষেপ নিয়ে বলছেন, আমাদের ততটা আক্ষেপ নাই। কেননা, এ বিষয়ের উপর কিছু লেখা একমলাটে প্রকাশ করতে পারছি, সেটাই আমাদের প্রাপ্তি, সেই আনন্দ নিয়েই থাকতে চাই।
আশা করি পাঠকবৃন্দও ভালো-মন্দ মিলিয়ে সংখ্যাটিকে গ্রহণ করে নিবেন।
ইতি
হাসান শাহরিয়ার
(
This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it.
)
১৬ কার্তিক ১৪৩০। ১ নভেম্বর ২০২৩।
মোহাম্মদপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।