Bookmaker Bet365.com Bonus The best odds.

Full premium theme for CMS

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান ও থিয়েটারচর্চার সামনের দিন : সহমত এবং মতামত

Written by প্রশান্ত হালদার.

Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..

‘থিয়েটারওয়ালা’ সম্পাদক হাসান শাহরিয়ারের ‘বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান ও থিয়েটারচর্চার সামনের দিন’-এর সাথে মূলত সহমত পোষণ করছি। সে যা বলতে চেয়েছে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে না বলে সোজাসাপ্টাই বলেছে। যুক্তি-সহকারে বিশ্লেষণ করেছে। পর্যাপ্ত তথ্যও হাজির করেছে। এবং স্রোতে গা না ভাসিয়ে, অযথা আবেগায়িত না হয়ে, বাস্তবতার নিরিখে কথা বলেছে। এ কথা বোধকরি থিয়েটারচর্চায় নিবেদিত অনেকের কথা হয়েই দাঁড়াবে।

তার এ লেখা প্রধানত তিনটি ভাগে বিভক্ত। তৃতীয় অংশে সামনের দিনগুলোতে থিয়েটারচর্চা ও ফেডারেশান-চর্চা কী ভঙ্গিমায় হতে পারে, তা। দ্বিতীয় অংশে আছে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান-সম্পর্কিত তথ্য-বিশ্লেষণ ও হতাশা। এবং প্রথম অংশে দেখি এদেশে গ্রুপ থিয়েটারচর্চার সংক্ষিপ্ত পূর্বাপর, যা আসলে ইতিহাসেরই অংশ-বিশেষ।

প্রথম অংশ নিয়ে প্রথমে কথা বলা যাক। এ অংশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসটুকু আপাতদৃষ্টিতে কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক বা বাড়তি-সংযোজন মনে হতে পারে, হয়ত-বা। কিন্তু না, আমার স্পষ্টতই মনে হয়েছে এই সংক্ষিপ্ত ইতিহাসটুকু, এ অংশের তথ্যসমূহ জানা থাকা দরকার। তা না হলে প্রবন্ধের মূল-অংশে গিয়ে পাঠকের গড়বড় করে ফেলার আশঙ্কা থেকে যায়। এ অংশে আছে এ দেশের নবনাট্য-আন্দোলনের অর্থাৎ স্বাধীনতার পর যে নিয়মিত নাট্যচর্চা শুরু হলো, তার আগমুহূর্তে এ ভূমিতে থিয়েটারচর্চার কী অবস্থা ও কী ব্যবস্থা ছিল, তা। এ খবরটুকু পাঠককে পরবর্তী-অংশে প্রবেশে সহজ হবে এবং বাড়তি সুবিধা দেবে।

এখানে আমরা পাই কিছু নাম, কিছু দল, কিছু স্থান, কিছু নাটক এবং কিছু ঘটনা। মীর মকসুদ-উস সালেহীন, বজলুল করিম, নূরুল মোমেন, মুনীর চৌধুরী, আসকার ইবনে শাইখ, কবির আনোয়ার, নীলিমা ইব্রাহিমসহ আরো অনেক উল্লেখযোগ্য মানুষ। কিছু নাটকের দলও ছিল, ড্রামা সার্কেল, ছাত্র-শিক্ষক নাট্যগোষ্ঠী, সাতরং, পারাপার ইত্যাদি। কিছু নাটক ছিলÑরাজা ইডিপাস, দণ্ড ও দণ্ডধর, রক্তাক্ত প্রান্তর, ভ্রান্তিবিলাস, ক্রীতদাসের হাসি ইত্যাদি। কিছু স্থানের সাক্ষাৎ পাই, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, বাংলা একাডেমির বটতলা, বর্ধমান হাউজের তেতলা, প্রেস ক্লাবের উল্টোদিকের আমেরিকান কালচারাল সেন্টার, ব্রিটিশ কাউন্সিল ইত্যাদি। কিছু ঘটনার সাক্ষাৎ পাই, বুলবুল ললিত কলা একাডেসিতে নাটকের বিভাগ ছিল, বাংলা একাডেমির উদ্যোগে আয়োজিত ড্রামা সিজন, ড্রামা সার্কেলের রাজা ইডিপাস কলকাতায় মঞ্চায়ন ইত্যাদি ইত্যাদি। এ সবই হাসান শাহরিয়ার সংক্ষেপে তুলে ধরেছে তার লেখার প্রথম অংশে। এতে করে পাঠক জানতে পারবে কোন ধারাবাহিকতায় এসে গ্রুপ থিয়েটার চর্চায় কখন দর্শনীর বিনিময়ে নিয়মিত প্রদর্শনীর শুরু হলো এবং এরপর কখন কোন প্রেক্ষিতে ‘বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান’ গঠিত হলো, সেসব। এতটুকু পরম্পরা উল্লেখ না থাকলে বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি থেকে যেত বলে মনে করি।

এবার আসি নিবন্ধের দ্বিতীয় অংশে। এ অংশে দেখতে পাই, নিয়মিত নাট্যচর্চার কোন প্রেক্ষিতে ‘বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান’ গঠিত হয়, তা। আমরা জানতে পারি, ঢাকা ও ঢাকার বাইরের দলগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে প্রথম সম্মেলন হয় ২৩ আগস্ট, ১৯৮১। তারপর এগিয়ে চলা। চলতে চলতে ৪০/৪১ বছর পার হয়ে বর্তমানে এসে ঠেকা। আমরা দেখতে পাই ফেডারেশানের ক্রমশ ‘অন্যরকম’ হয়ে ওঠা, আর এই ‘অন্যরকম’ যে ‘কীরকম’ তা ফেডারেশানের নিকট-অতীত ও বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এবং অবশেষে হতাশায় নিমজ্জিত হতে হয়। এই অংশে ফেডারেশান নিয়ে হাসান শাহরিয়ার হতাশাই ব্যক্ত করেছে।

‘থিয়েটারওয়ালা’-সম্পাদকের নিবন্ধের এক জায়গায় স্পষ্ট লেখা আছেÑ‘যারা মনে করে গত ৪০/৪১ বছরে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সফলতা আকাশচুম্বী, গ্রুপ থিয়েটার চর্চায় ফেডারেশানের উপস্থিতি অনিবার্য ছিল, আছে, এবং থাকবেই। ফেডারেশান গঠিত না হলে এতদিনে থিয়েটারচর্চা হয়ত বন্ধ হয়ে যেত, এমনকি নাট্যচর্চায় বিকল্প কোনোকিছু ভাবা প্রায় সংবিধান লঙ্ঘনের মতো ‘দণ্ডনীয় অপরাধ’, তাদের জন্য কোনো কথা বলতে চাই না। কিন্তু যারা মনে করে “বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান ও থিয়েটারচর্চার সামনের দিন’-এর জন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়া দরকার, এ রচনা কেবল  তাদের জন্য। অর্থাৎ, যারা ফেডারেশান-গঠনের প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি এর উৎকর্ষের-মানসে তার কর্মকা-কে সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখে থাকে, অর্থাৎ, ‘ভালোকে’ ভালো আর ‘মন্দকে’ মন্দ বলতে দ্বিধা করে না, এ আলোচনা তাদের জন্যই বলে ঠিক করেছি।”

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের একটি গঠনতন্ত্র আছে, সেখানে ১১টি উদ্দেশ্য-লক্ষ্যের কথা বলা আছে। ফেডারেশানের অসারতার প্রমাণ হাজির করতে এই ১১টি লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের কী পরিস্থিতি, কী হাল, তার তত্ত্ব-তালাশ করা হয়েছে এই নিবন্ধে। আমার মতামত প্রকাশ করার জন্য সেই ১১ স্তম্ভকে এখানে উপস্থাপন করতে হচ্ছে:
১.    গ্রুপ থিয়েটারের আদর্শকে সমুন্নত রাখার সংগ্রামকে সংহত করা।
২.    নাট্যচর্চার স্বার্থে বিভিন্নসময় বিষয়ভিত্তিক আন্দোলন গড়ে তোলা।
৩.    সারাদেশে স্থায়ী নাট্যমঞ্চ ও মুক্তমঞ্চ প্রতিষ্ঠার জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৪.    নাটককে ব্যাপক সামাজিক-ক্রিয়ার সাথে যুক্ত করা।
৫.    নিয়মিত নাট্যবিষয়ক প্রকাশনা বের করা।
৬.    নাট্যবিষয়ক সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা করা।
৭.    বিভিন্ন সময়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক-পর্যায়ে প্রশিক্ষণ, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, আলোচনা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা
৮.    জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব আয়োজন করা।
৯.    দেশে একটি থিয়েটার ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা।
১০.    মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়-পর্যায়ে পাঠ্যসূচিতে নাটককে অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
১১.    পেশাদারি থিয়েটরের ক্ষেত্র-প্রস্তুত করা।

এই ১১টি পয়েন্ট ধরে ধরে নিবন্ধকার পরিস্থিতির বিশদ-বর্ণনা করেছে। খুবই দুঃখজনক ও হাস্যকর সেই সব পরিস্থিতি। এইখানে সেই বিশদ-বর্ণনায় না গিয়ে একবার খুব সংক্ষেপে দেখা যাক এই ১১টি লক্ষ-উদ্দেশ্যের হালহকিকত-
‘এরমধ্যে ৩, ৫, ৬, ৯, ১০, ১১ বাস্তবায়নের ধারেকাছেও গত ৪০/৪১ বছরে ফেডারেশান যেতে পারে নি। সুতরাং বলাই যায়, ওগুলো তার কম্ম নয়। ৪, ৭, ৮ এর যতটুকু ফেডারেশান বাস্তবায়ন করেছে, তারচেয়ে চোখেপড়ার মতো বাস্তবায়িত হয়েছে একক নাট্যদলের দ্বারা বা ব্যক্তিগত-উদ্যোগে। আর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ২ এ, নাট্যচর্চার স্বার্থে বিষয়ভিত্তিক যে আন্দোলন গড়ে তোলার কথাটি আছে, সেটির মৃত্যু হয়েছে একই ব্যক্তি যখন ফেডারেশান ও সরকারি-নির্বাহী-সংস্থার পদটিতে বসেছে, সেদিন থেকেই। তার মানে, ‘হারাধনের’ আর একটি ছেলে বেঁচে আছে, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ১। যেটি পড়তে ভালো লাগে, কিন্তু এর কোনো অর্থ বের করা যায় না।’

তাহলে প্রশ্ন, কী নিয়ে টিকে আছে এই ফেডারেশান? এবং কী নিয়ে টিকে থাকবে সে? অথবা এতদিনে এসে আদৌ আর টিকে থাকার কোনো প্রয়োজন পড়বে কিনা? আর, এখনও যদি টিকিয়ে রাখার ইচ্ছা কারো থাকে তাহলে কোন কাঠামোয় টিকে থাকতে পারে, সেসব নিয়ে কথা বলেছে হাসান শাহরিয়ার এবং সেটা কোনোভাবেই জাতীয়-পর্যায়ের ফেডারেশান নয়, তা জোরের সাথে ব্যক্ত করেছে সে।

তৃতীয়পর্বে দেখি, ফেডারেশান না-ও থাকতে পারে এবং থাকলেও জেলাভিত্তিক থাকতে পারে যা ঐ জেলাশহরের বা ঐ জেলার নাট্যচর্চায় সহযোগিতা করবে কেবল। এটা বলতে গিয়ে প্রবন্ধকার চার রকমের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেছে, যাতে আসলে ফেডারেশানের ক্ষমতা ও কর্মতৎপরতা সীমিতকরণের কথাই বলা হয়েছে। ততটুকু ক্ষমতা ও কর্মতৎপরতা যতটুকু তার (ফেডারেশান বা ফেডারেল বডির) সাধ্যে কুলায় বা তার দ্বারা সহজে সম্ভব। এই তৃতীয়পর্বে দলগুলো ফেডারেশানভুক্ত হয়ে অথবা না-হয়েও কীভাবে থিয়েটারচর্চা চালিয়ে যেতে পারে, হলবণ্টন-ব্যবস্থা কীরকম হতে পারে, এছাড়াও আরো কিছু ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলেছে প্রবন্ধকার। যা কিছুটা বিক্ষিপ্ত ও সংক্ষিপ্তভাবে হলেও একটা দিক-নির্দেশনা দেয়ার চেষ্টা। এই চেষ্টার সাথে অন্যরাও ব্যক্তিগতভাবে বা মিলিতভাবে নানা আইডিয়া যুক্ত করতে পারে। যুক্ত করতে পারলে সামনের দিনগুলোর দিক-নির্দেশনা আরো সমৃদ্ধ হতে পারে। সম্ভাবনার দুয়ার আরো উন্মোচিত হতে পারে। এই অস্থির ও নীরব মুহূর্তে হাসান একটা সূচনা ঘটিয়েছে মাত্র। এই সূচনাস্রোত আরো বেগবান হবে নিশ্চয়ই। তা-ই হোক, সেই প্রত্যাশায় থাকি।

এসব প্রসঙ্গ ধরে আমিও থিয়েটারসংলগ্ন আমার সামান্য কিছু ভাবনা বা মতামত ভাগাভাগি করতে চাই।

শুরুর দিকে একটা সময়-পর্যন্ত বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের নির্বাহী কমিটি গঠিত হতো সিলেকশনের মাধ্যমে। ততদিন-পর্যন্ত ফেডারেশান অনেকটাই ছোট পরিসরেই ছিল। কিন্তু দিনে দিনে যখন এর কলেবর বাড়তে থাকল, অর্থাৎ সংগঠনটা যখন অনেক বড়ো হয়ে উঠল, অনেকের ভেতরেই নির্বাহী কমিটির সদস্য হওয়ার আকাঙ্ক্ষা জন্মাতে লাগল, এবং সম্মেলনের সময় একটা পদে একাধিক প্রার্থীর দেখা মিলতে থাকল। তখন ইলেকশন-পদ্ধতি অবলম্বন ছাড়া আর তো বিকল্প থাকে না। এবং হয়েছেও তাই। আসলে এ সময়ে এসে নির্বাচন-পদ্ধতিতে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু মুশকিল হয়েছে, ফেডারেশানের নির্বাচন যখন তথাকথিত রাজনৈতিক-নির্বাচনের রূপ পেয়ে যাওয়ার পথে হাঁটে। যখন প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিনিধিদের আর্থিক-সুবিধা দেয়ার কথা ওঠে, প্রার্থীর যোগ্যতার চেয়ে যখন লবিংটাই বড়ো হয়ে দাঁড়ায়। মুশকিল হয় তখনই বছর বছর ধরে যাদের দলে শো হয় না, হলেও কালেভদ্রে, অথবা দলে চলমান কোনো নাটক নেই, নতুন নাটক নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা নেই, থিয়েটারবিষয়ক অন্য কোনো কার্যক্রমও নেই, সেসব দলের প্রতিনিধিরাও যখন ফেডারেশানের নির্বাহী কমিটিতে থাকে। এবং এদের সংখ্যা একেবারে কমও না। বর্তমান কমিটিতেও এমন অনেকেই থেকে থাকবে। এসব দেখে মনে অনীহা জন্মায়। খারাপ লাগে যখন ভালো-মন্দ একই পাল্লায় মাপা হয়, খুব হতাশ হতে হয় যখন কোনো ভালো নাটক কিংবা ভালো নাটকওয়ালা কোনো দলের প্রতি ফেডারেশানের কোনো পক্ষপাত থাকে না। আমি একবারও বলছি না, অপেক্ষোকৃত কম-চর্চাকারীরা বা কম যোগ্যতাসম্পন্ন দলগুলো কোনো সুযোগ-সুবিধা পাবে না। কিন্তু অবধারিতভাবে এসব দলের তুলনায় উৎকর্ষের বিচারে ভালো ও নিয়মিতচর্চাকারী দলগুলোর বেশি সুবিধা পাওয়া উচিত, তা সে হলবণ্টন থেকে শুরু করে উৎসবে অংশগ্রহণ, অনুদান-প্রাপ্তি ও অন্যান্য যতপ্রকার সুবিধাদি আছে। মোদ্দাকথা, ‘ভালোকে’ই প্রাধান্য দিতে হবে। ‘প্রাধান্য দেয়া’ বলতে যা বোঝায় তা-ই।

কিন্তু ভোটের-নির্বাচনের কথা মাথায় রাখলে তা বুঝি আর করা হয়ে ওঠে না।

ফেডারেশান ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছে এক কর্তৃত্ববাদী সংগঠন। কাজের চেয়ে কথা বেশি, সহযোগিতার চেয়ে আওয়াজ বেশি, পৃষ্ঠপোষকতার চেয়ে প্রচার বেশি। শুধু ঢাকায় না, সারাদেশেই সে কর্তৃত্ব করতে চায়। তাই তো দেখি একটা নাম-সর্বস্বদল একটা অ্যাক্টিভ দলের তুলনায় অনুদান বেশি পায়। একটা অ্যাকটিভ দল ফেডারেশানভুক্তির আবেদন করে বছরের পর বছর ঘুরছে, কিন্তু কোনো ফল আসে না। এমনও দেখা যাচ্ছে, কোনো কোনো দলের আবেদনের ফাইল গায়েব হয়ে যায়, বোর্ড-মিটিং-এ অনেক দলের আবেদনের কথা বেমালুম চেপে যাওয়া হয়, এমনি নানা কিছু। ফেডারেশানের উৎসবে নাট্যদল নির্বাচন করা হয় মূলত ভোটের-রাজনীতি মাথায় রেখে। ফেডারেশান সেই কবে একবার ‘বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার নির্দেশিকা’ প্রকাশ করেছিল, বই আকারে।  সেখানে দলগুলোর প্রযোজনা এবং অন্যান্য কর্ম-তৎপরতা-সংক্রান্ত তথ্য সন্নিবেশিত ছিল। খুবই ভালো উদ্যোগ ছিল সেটা। ২০১৮-১৯ সালের দিকে পুনরায় বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার নির্দেশিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়। দলগুলো যথারীতি নিজেদের তথ্যসমূহ জমাও দেয়। কিন্তু সবকিছুর পরও কোনো এক ‘অজানা’ (অথবা ‘জানা’) কারণে সেটা এ কবছরেও আলোর মুখ দেখল না। আমলাতন্ত্র শুধু সরকারি দপ্তরেই না, ফেডারেশানেও প্রবেশ করেছে।

‘থিয়েটার ক্লাব’ নাম দিয়ে সেখানে হয়েছে ফেডারেশানে ‘অফিস’। হতে পারে সেটা সাময়িক সময়ের জন্য। কিন্তু এই এতদিনেও কি ফেডারেশান অফিসটা সরিয়ে নিতে পারত না? কিংবা থিয়েটার ক্লাবের জন্য আলাদা একটা জায়গার ব্যবস্থা করতে পারত না? যখন একই ব্যক্তি দুজায়গার প্রধান (ফেডারেশানের চেয়ারম্যান ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক), তখন কি ব্যাপারটা আরো সহজ ছিল না? নাকি সে কারণেই বিষয়টা আরো জটিল?

এরকম আরো কত কথাই হয়ত বলা যাবে। আর, সর্বশেষ ফেডারেশানে ঘটে-যাওয়া ঘটনা, আর্থিক-দুর্নীতির কারণ দেখিয়ে সংগঠনটার সেক্রেটারি জেনারেলসহ দুজন নির্বাহী সদস্যকে তাদের স্ব স্ব পদ থেকে অবাহতি দেয়া হয়েছে, এবং এর কোনো স্বচ্ছ তদন্ত এখনও হয় নি। অপরদিকে করোনাকালে নাট্যকর্মীদের সহযোগিতা-দানের জন্য আমেরিকা থেকে যে তহবিল সংগ্রহ করা হয়েছে তারও কোনো হিসাব দেয় নি ফেডারেশান। এসব ঘটনায় ফেডারেশান তো বটেই, সাধারণ-নাট্যকর্মীদেরও প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, ইমেজ ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ফেডারেশানের এই কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই উত্তীর্ণ হয়েছে কিন্তু সম্মেলনের কোনো কথা আপতত শোনা যাচ্ছে না। মাঝে না-হয় করোনাজনিত ঝামেলা ছিল, কিন্তু এখন তো করোনামুক্ত সময় যাচ্ছে বাংলাদেশে। আসল কথা হচ্ছে কে কী চায়। ফেডারেশানের মধ্যে এমন দু-চারজনও কি নেই, যারা এমন পরামর্শ দিতে পারে যে, মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটি আর টেনে নেয়া উচিত নয়, দ্রুত সম্মেলন করে নতুন নির্বাহীদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা দরকার? যেন, ‘সড়কে উঠছি যে সে-ই গেড়ে বসছি, কারো পথ না ছাড়ছি’ ধরনের অবস্থা ফেডারেশানে। এক্ষেত্রে নীলকণ্ঠ সেনগুপ্তের রাজা রাজা খেল নাটকের কথা মনে পড়ে যায়। যেখানে দেখা যায়, কোনো এক পাগলাগারদে পাগলরা মিলে ‘রাজা রাজা’ খেলছে। সেই খেলায় যখনই যে-ই রাজা সাজছে, সে-ই আর মাথা থেকে মুকুট খুলতে চাচ্ছে না। খেলা শেষ হলেও না। প্রতিবারই রাজার মাথা থেকে জোর করে মুকুট ছিনিয়ে নিতে হচ্ছে। ফেডারেশানেরও হয়েছে একই দশা। এ সংগঠন যে অনেকটাই অকার্যকর তা ফেডারেশানের লোকজন এবং যেকোনো সাধারণ-নাট্যকর্মীও বোঝে। আমাদের সামনে বুঝি আর উৎকৃষ্ট কোনো উদাহরণ থাকল না। হতাশায় মাথাটা অবনত করে রাখা, ঝিম ধরে থাকা, আর ক্রুদ্ধ হওয়া!

এই যদি হয় পরিস্থিতি, এই যদি হয় ফেডারেশানের সার্বিক-অবস্থা, তাহলে সেই ফেডারেশান থাকলেই-বা তাতে কার কী? আর, না থাকলেই-বা কী?

প্রশান্ত হালদার ( This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it. ): অভিনেতা ও লেখক