Bookmaker Bet365.com Bonus The best odds.

Full premium theme for CMS

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান ও থিয়েটারচর্চার সামনের দিন : আমার ভাবনা

Written by কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন.

Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..

‘বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান ও থিয়েটারচর্চার সামনের দিন’ নিয়ে হাসান শাহরিয়ারের তথ্যবহুল লেখা ও মতামত পড়ে আমার কিছু ভাবনা এসেছে। শাহরিয়ারের লেখাটাকে কয়েকটা অংশে ভাগ করা যেতে পারে। গ্রুপ থিয়েটারের বর্তমান টানাপোড়েন লেখককে এই লেখাটা লিখতে বাধ্য করল, আর তা নিয়েই তিনি লেখার প্রথমভাগে তার মতামত দিয়েছেন। দ্বিতীয়ভাগে লিখেছেন বাংলাদেশের থিয়েটারচর্চার স্বাধীনতা-পূর্ব ও পরবর্তী-অবস্থা নিয়ে। তৃতীয়ভাগে তিনি আলোচনা করেছেন কেন গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান গঠন করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো এবং আবশ্যিকভাবে এর গঠনতন্ত্রই আলোচনার মূল-বিষয়বস্তু। সবশেষে, চতুর্থভাগে, শাহরিয়ার তার নিজস্ব-ভাবনা থেকে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানকে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন, ফেডারেশানের উচিত তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে ছোট করে ফেলা ইত্যাদি।

এখন, প্রথমভাগে যদি আলোকপাত করি, তাহলে শাহরিয়ারের সাথে আমি একমত যে, প্রায় দুই যুগ ধরে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের থাকা না-থাকা, এর কার্যক্রম নিয়ে একধরনের তিক্ততা, এর সততা বা এ সম্পর্কিত-গুজব, সব নিয়েই এক ধরনের টানাপোড়েন চলে আসছে। আমরা সকল থিয়েটারকর্মীরা আসলে দুইভাগে বিভক্ত। একদল বলছি গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের দরকার নেই, আরেকদল বলছি অবশ্যই দরকার আছে। সাম্প্রতিক একটা ঘটনা আমাদেরকে আবার যুক্তি-তর্ক নিয়ে মাঠে নামিয়ে দিয়েছে এবং আমরা আবার আমাদের পুরনো-বিতর্ক নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে অপেক্ষা করছি। আমার এই লেখায় আমি আর ওই সাম্প্রতিক ঘটনা উল্লেখ করলাম না (এই সংখ্যায় প্রকাশিত হাসান শাহরিয়ারের প্রবন্ধের শুরুতেই তার উল্লেখ আছে), কিন্তু এই ঘটনা বাকি সবার মতো আমাকেও লজ্জার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। আমরা গর্ব-করে বলতে ভালোবাসি, ‘থিয়েটার সবাই করতে পারে না’, ‘থিয়েটারের একটা ন্যায়নীতি আছে’, ‘সততা আছে’, কিন্তু ক্ষমতার দাপট যে আমাদেরকে কলুষিত করে দিচ্ছে, তা দিনকে দিন প্রতীয়মান হচ্ছে। তবে, আমি কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। আমি চাই সম্পূর্ণ-বিষয়টার একটা তদন্ত হোক এবং সুন্দর সমাধান হোক। আমাদের দিকে আঙুল-তোলা বন্ধ হোক। আমরা যেভাবে সর্বসাধারণের কাছে থিয়েটারকে তুলে ধরতে চাই, তা প্রশ্নবিদ্ধ হোক সেটা আমরা কেউই চাই না।

দ্বিতীয়ভাগে শাহরিয়ার স্বাধীনতা-পূর্ব ও পরবর্তী-বাংলাদেশের থিয়েটারচর্চা নিয়ে আলোকপাত করেছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে, এই প্রবন্ধে এই প্রসঙ্গটা না থাকলেও হতো। তবে, প্রসঙ্গটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এই বিষয়ে আরো বিশদভাবে আলাদা লেখা প্রকাশ করা উচিত। কারণ, বাংলাদেশের থিয়েটারচর্চার ইতিহাসটা, সবার, বিশেষকরে যারা থিয়েটারচর্চা করছে তাদের জানা দরকার। আমি আশা করব শাহরিয়ার এই অংশটুকুকে আলাদা করে একটা সম্পূর্ণ লেখা হিসেবে প্রকাশ করবেন।

তৃতীয়-অংশে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের গঠনতন্ত্র এবং কেন আমরা এই ছাতার (ফেডারেল বডির) তলে একত্রিত হতে বাধ্য হয়েছিলাম তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে আমার পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, কোথাও কোথাও লেখককে একপেশে মতামত পোষণ করতে দেখা গেছে। মনে হয়েছে, কোনো একটা ধারণা মাথায় নিয়ে তিনি লিখতে বসেছেন। এত বছরের একটা প্রতিষ্ঠানের অবদানকে এক তুড়িতে উড়িয়ে দেয়ার কোনো উপায় নেই। থিয়েটারচর্চায় ফেডারেশান অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলেই আমরা এর কার্যক্রম নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। যদিও তার লেখায় বিশদভাবে ফেডারেশানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলোকে ধরা হয়েছে। এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা দেখি, যে কয়টা লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান গঠিত হয়েছিল (বর্তমান গঠনতন্ত্র-বিবেচনায়), তার অনেকগুলো আদৌ খোদ কমিটির লোকজন জানেন কিনা, জিজ্ঞাসা করলে সদুত্তর পাওয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। যেমন, নাট্যচর্চার-স্বার্থে বিভিন্ন সময় বিষয়ভিত্তিক আন্দোলন গড়ে তোলা, সারাদেশে স্থায়ী নাট্যমঞ্চ তৈরি করা ইত্যাদি। ঢাকায় একমাত্র শিল্পকলা একাডেমির তিনটা মিলনায়তন পেয়ে আত্মতুষ্টির ঢেঁকুর তুলতে তুলতে আমরা বছরের পর বছর পার করছি। নিয়মিত নাট্যবিষয়ক প্রকাশনা বের করা, এটা মনে হয় খোদ এই সংগঠন নিজেই ভুলে গেছে। দেশে একটা থিয়েটার ইন্সটিটিউটের কথা দলগুলো ব্যক্তিগতভাবে ভাবলেও, ফেডারেশান বোধহয় ভুলেই গেছে। পাঠ্যসূচিতে নাটক অন্তর্ভুক্ত আর পেশাদারি থিয়েটারের ক্ষেত্র-প্রস্তুত করার জন্য ফেডারেশান কী ভূমিকা রেখেছে তা আমরা দেখতেই পাচ্ছি। কিন্তু কেন আমরা আমাদের মহৎ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ৪১ বছরের মধ্যে গুলিয়ে ফেলেছি?

একদল চিৎকার করছি সব ঠিক আছে, আরেকদল বলছি এই অরাজকতা বন্ধ হোক। একসময় আমরা যোগ্য ব্যক্তিদের আমাদের নেতা নির্বাচন করতে পেরেছি এবং তাদের দেখিয়ে দেয়া পথে এগিয়েছি। থিয়েটার আলোকিত হয়েছে। কিন্তু কালে কালে এক ধরনের ক্ষমতা-কুক্ষিগত-করার একটা প্রয়াস প্রকট হয়ে উঠেছে। ফেডারেশানের নেতৃত্ব সবাই কেমন যেন এড়িয়ে চলতে শুরু করল। আমি বলতে চাচ্ছি, দলগুলো ফেডারেশান সম্পর্কে নামমাত্র আগ্রহ দেখানো শুরু করল। মিলনায়তন-বরাদ্দ এবং অনুদান-প্রাপ্তি ছাড়া ফেডারেশান নিয়ে মাথা ঘামানো কমে গেল। যার ফলশ্রুতিতে ফেডারেশানও তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভুলতে বসল। এরই মাঝে মিলনায়তন-বরাদ্দ ও টুকটাক কিছু কাজ করার পাশাপাশি ফেডারেশান এমন কিছু নেতা তৈরি করল যাদের একমাত্র কাজ হলো নেতাগিরি ফলানো। ভোটের কেনাবেচা শুরু হলো। অমুকের হাতে এত ভোট, তমুকের হাতে এত ভোট। ওকে দাঁড় করানো হোক, তাকে নেতা বানানো হোক। যার ফলে ক্রিয়েটিভ লোকজন ফেডারেশান সম্বন্ধে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে থাকল। আবার ওই যে, যে-ই যায় লঙ্কায় সে-ই হয় রাবণ! অনেক লম্বা লম্বা কাজের ফিরিস্তি দিয়ে আসন পেয়ে যাবার পর সব ভুলে যাওয়া। এসবই আমাদের আশাহত করে। আমরা ধরেই নিয়েছি, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান দিয়ে আসলে আর কিছু প্রাপ্তির আশা করা বৃথা; শুধুমাত্র কিছু ব্যক্তির ক্ষমতা এবং সময়ে সময়ে অরাজকতা হজম করা ছাড়া। বলছি না যে, এই সংগঠনটিকে সবসময় যুদ্ধংদেহী অবস্থায় থাকতে হবে, কিন্তু যে পরিপ্রেক্ষিতে ফেডারেশান তৈরি হয়েছিল, অন্তত জাতির সেই বিবেকের ভূমিকাটা ভুলে গেলে এই ফেডারেশান থেকে আমাদের প্রাপ্তি কী হতে পারে!

মাঝেমাঝে থিয়েটারকর্মীদের মধ্যে আলোচনা হয়, ফেডারেশানের নেতা হওয়ার জন্য কেন কিছু ব্যক্তি ঘুরেফিরে একরকম মরিয়া হয়ে থাকেন। প্রাপ্তিটা কীসের? অর্থ, যশ, নাকি সম্মানের? নিজের মেধা-বিকাশের চেষ্টা নেই অথবা এক জায়গায় থমকে আছেন বছরের পর বছর। অথবা, প্রাপ্ত সব সুযোগসুবিধা নিজে কিংবা নিজের দলকে পাইয়ে দেয়া নিয়ে ব্যস্ত। এসব আচরণ পুরো ফেডারেশানকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। তাহলে কি আমরা ধরেই নেব ক্ষমতা-কুক্ষিগত করাই এখনকার ফেডারেশানের নেতাদের একমাত্র লক্ষ্য? নাকি উপরি-হিসেবে আর্থিক-প্রাপ্তিও হয় (যদিও ব্যাপারটা অজানা, প্রমাণ-সাপেক্ষ)?

আমি বরাবর বিশ্বাস করি, ফেডারেশান আমাদের দরকার। যেকোনো প্রসঙ্গে আমি এককভাবে যতই জোরাল প্রতিবাদ বা মতামত ব্যক্ত করি না কেন, সেটা কখনো একটা প্ল্যাটফর্ম থেকে আসা প্রতিবাদ বা মতামতের মতো জোরাল হবে না। আমাদের দেশে এককভাবে কত বড় বড় প্রাপ্তিযোগ হয়েছে, অথচ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান একটা ৪১ বছরের প্রতিষ্ঠান হয়েও তার উল্লেখ করার মতো প্রাপ্তি হাতে-গোনা। এই প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্তিগুলো এখনও জোরাল ভূমিকা রাখতে পারছে না। এখনও আমরা নাটক মঞ্চস্থ করতে গিয়ে নানাবিধ বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। তাহলে প্রাথমিক-প্রাপ্তিই তো প্রশ্নের সম্মুখীন। এক ব্যক্তির একাধিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপালনও কাজের-ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের কর্তা এক ব্যক্তি হতে পারেন না বলেই আমি বিশ্বাস করি। এর ফলে ফেডারেশানের কার্যক্রম সংকুচিত হয়ে তলানিতে দাঁড়িয়েছে। শিল্পকলার মহাপরিচালকের পদটা রাজনৈতিক-পদ বলেই আমার মনে হয়। যার ফলে, ফেডারেশানের নেতা ওই একই ব্যক্তি হলে বেশিরভাগ কাজই বাধাগ্রস্ত হয়, দাবি-দাওয়া তখন নিজের ভাবমূর্তি রক্ষা করতেই ব্যয় হয়ে যায়Ñনিজের চেয়ার-রক্ষার তাগিদে। যার ফল আমরা ভোগ করছি।  

পরিশেষে বলতে চাই, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের যে ১১টি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আছে সেগুলো সঠিকভাবে প্রয়োগ করার মতো নেতার অভাবে ফেডারেশানের আজ এই ‘মৃত্যুপথযাত্রী’ অবস্থা। পরিত্রাণের উপায় হচ্ছে, ফেডারেশানকে সঠিক-জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে, নাট্যকর্মীদের সক্রিয় হতে হবে, ন্যায্য-দাবী আদায় করে নিতে হবে। আপনার আমার সংগঠন নিয়ে কেউ ছেলেখেলা করবে আর আমরা প্রতিবাদ না করে, ‘দেখি না কী হয়’ বলে বসে থাকলে সব সম্ভাবনা কর্পূরের মতো উবে যাবে। নিজের নাটকের দল নিয়ে আমাদের যেমন চিন্তাভাবনা-টানাপোড়েন থাকে, তেমনই মঞ্চনাটকের অবস্থাও টালমাটাল। তাই সামগ্রিক-বিচারে আমাদের একসাথে বুক বেঁধে দাঁড়াতে হবে।

সময় চলে যাচ্ছে, এখনই দরকার প্রতিবাদ-প্রতিরোধ।

কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন ( This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it. ): অভিনেতা-নির্দেশক। মুখ্য সম্পাদক প্রাচ্যনাট