Bookmaker Bet365.com Bonus The best odds.

Full premium theme for CMS

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান ও থিয়েটারচর্চার সামনের দিন : বিক্ষিপ্ত কিছু ভাবনা

Written by শামীম সাগর.

Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান নিয়ে বর্তমানে নানান জিজ্ঞাসা আর কৌতূহল তৈরি হয়েছে। সাংগঠনিক কিছু বিষয় আমজনতা-পর্যায়েও খোলাসা হয়ে গেছে, এতে করে এই মোর্চা বা প্লাটফরম সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। এই সংগঠনটির অস্তিত্ব-সংকট এবং টিকে থাকা না-থাকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছরে দাঁড়িয়ে যেখানে বাংলাদেশের থিয়েটারের নিজস্ব একটি চেহারা বিশ্বজুড়ে প্রতিষ্ঠা পাবার কথা, সেখানে আমরা থিয়েটারচর্চাকে পাশে সরিয়ে নির্বাচন-কেন্দ্রিক থিয়েটার রাজনীতির চর্চার গড্ডালিকায় গা ভাসিয়েছি। এতে সাময়িক কিছুজনের হয়ত সুবিধালাভ হবে কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে থিয়েটারেরই ক্ষতি। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা আমাদের ব্যথিত করেছে, শঙ্কিত করেছে!

এমনই প্রেক্ষাপটে নাট্যজন এবং ‘থিয়েটারওয়ালা’ পত্রিকার সম্পাদক হাসান শাহরিয়ার একটি প্রবন্ধ রচনা করেছেন, যেটির শিরোনাম ‘বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান ও থিয়েটারচর্চার সামনের দিন’। এই প্রবন্ধ পাঠের সময় কিছু বিক্ষিপ্ত ভাবনা মাথায় খেলে গেছে, যার প্রতিফলন নিচের পয়েন্টগুলোয় উল্লেখ করলাম।

বাংলাদেশ  গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান, একটি প্রতিষ্ঠিত মোর্চা/প্লাটফরম, এটির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি রয়েছে। এমন একটি সংগঠনকে বিলুপ্ত করে দেবার চিন্তা কখনোই বাস্তবসম্মত নয়; কেননা সকলকে কোনো না কোনো মোর্চা বা প্লাটফরমে সংগঠিত হয়ে একসাথে এগোতে হবে। বরং থিয়েটারচর্চার ধরন-অনুযায়ী একাধিক মোর্চা বা প্লাটফরম গঠন হলে সব ধরনের থিয়েটারচর্চার অবারিত পথ খুলে যাবে, সব ধরনের থিয়েটার দলই সমান সুযোগ এবং সুবিধা ভোগ করবার অধিকার লাভ করবে।

আমাদের থিয়েটারচর্চায় আমরা ভালো থিয়েটারের প্রধান উপাদান হিসেবে ভালো মঞ্চের দোহাই দিয়ে ভালো থিয়েটার নির্মাণ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছি। ভালো থিয়েটারের মূলশক্তি এর গল্প-অভিনয়-দর্শন, কখনোই মঞ্চ-আলো হতে পারে না। আর সারাদেশ জুড়েই জেলা শিল্পকলা একাডেমির স্থায়ী মঞ্চ স্থাপিত হয়ে গেছে, উপজেলা পর্যায়ে উন্মুক্ত মঞ্চ নির্মাণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। থিয়েটার দলগুলো এই স্থাপনাগুলো অনায়াসে গ্রহণ করতে পারে। শুধুমাত্র ঢাকা শহরের দু-তিনটি মঞ্চের পিছনে না ছুটে সারাদেশ-জুড়ে স্থাপিত মঞ্চগুলোকে ব্যবহার করা কিংবা বিকল্প স্থান খোঁজা দরকার।

বাংলাদেশের থিয়েটারচর্চাকারীরা বুক ফুলিয়ে বলে যে থিয়েটার নৈতিকতার শিক্ষা দেয়। কিন্তু বাংলাদেশের গ্রুপ থিয়েটারচর্চাকারী দলগুলো এই নৈতিকতার শিক্ষার চর্চা নিজ দলেই সম্পূর্ণভাবে করে না। যখন একজন নাট্যকর্মীকে চাকুরিক্ষেত্রে মিথ্যা বলে, ছাত্রকে পরীক্ষার ক্ষতি করে থিয়েটার করতে বাধ্য করা হয়, এই চর্চাটি কখনোই নৈতিক নয়। থিয়েটারে এই চর্চা বন্ধ হওয়া উচিত, কারণ ছোট ছোট অনৈতিক চর্চা জড়ো হয়ে বড়ো আকারে পুরো থিয়েটারচর্চায় প্রভাব ফেলেছে। বর্তমানে ফুল প্রফেশনাল থিয়েটার ছাড়া কোনো গতি নেই। দিন দিন জীবনযাত্রা আরো কঠিন হয়ে উঠছে, আর কিছুদিন পর পকেটের টাকা খরচ করে থিয়েটার করতে আসা জনের সংখ্যা ক্রমে কমতে থাকবে।

বর্তমানে কোনোভাবেই অ্যামেচার থিয়েটার করে বাংলাদেশের থিয়েটারকে সামনে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। কোনো সাংস্কৃতিক-কর্মকাণ্ডই এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না আর কয়েক বছর পর থেকে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই পেশাদারি দল গঠন করে এগোতে হবে, কেননা এখন প্রতিটি মানুষ তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে অর্থের মাপকাঠিতে মাপতে চাইছে। তার ব্যয়িত প্রতিদিনের সময়ের আর্থিক-রিটার্ন যদি সে না পায়, তাহলে এই পুঁজিবাদী সময়ে সে কেন পকেটের পয়সা খরচ করে থিয়েটার কিংবা সাংস্কৃতিক-কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত রাখবে? বিষয়টি নিয়ে ব্যক্তি-পর্যায় হতে রাষ্ট্রীয় নীতিগত-পর্যায় পর্যন্ত ভাববার প্রয়োজন রয়েছে।

প্রতি বছর বাজেট বাড়ে কিন্তু সাংস্কৃতিক-সংগঠনগুলোর অনুদানের পরিমাণ বাড়ে না, বিশেষকরে থিয়েটারের বাৎসরিক বাজেট এমন হওয়া উচিত যেন ৮/১০ জনের একটি পেশাদারি দল এক বছর অন্য কোনো চিন্তাভাবনা না করে শুধু থিয়েটারেই মনোযোগ দিতে পারে। দুই-তিন দিনের খুচরা প্রশিক্ষণ না করে বুনিয়াদি দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের (অভিনয়, নির্দেশনা, নাটক রচনা, কারিগরি অন্যান্য বিষয়) ব্যবস্থা করতে হবে, দায়সারা গোছের শুধু সংখ্যা বাড়ানোর কার্যক্রমে কোনো সুফল মিলবে না, বরং শর্ট-কাটে থিয়েটার করবার কুচর্চার পথ খুলে যাবে।

এটি সত্যি যে, বর্তমানে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের নেতাদের এবং ফেডারেশানভুক্ত দলগুলোর নেতাদের মনোযোগ থিয়েটারচর্চার থেকে নির্বাচনের দিকেই বেশি, আগ্রহও সেদিকে। ফলে সারাদেশের থিয়েটারচর্চায় ধস নেমেছে। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানভুক্ত নাট্যদলের সংখ্যা প্রতিবছরই কমছে, কেন? দলগুলো শর্ত অনুযায়ী নাট্য-নির্মাণ আর প্রদর্শনী করতে পারছে না বলে? যদি নাই পারে, তাহলে তার দায়ভার একা ওই নাট্যদলের হতে পারে না, দায়ভার ফেডারেশানকেও নিতে হবে। সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা এক একটি নাট্যদলকে যদি এক একজন ব্যক্তি ধরি আর ফেডারেশানকে নেতা ধরি, তাহলে ব্যক্তির সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নেতাকে তো ভূমিকা রাখতেই হবে, ব্যক্তিকে সংগঠন থেকে বাদ দিয়ে দেয়াটাই সমাধানের পথ হতে পারে না।

গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের উচিত এবং প্রধান-কাজ এখন হবে খসড়া-নীতি তৈরি করে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের সাথে দেনদরবার শুরু করে সেই নীতিকে আইনগত ভিত্তি তৈরি করা; যে নীতিতে নাট্যসংগঠন, নাট্যকর্মী, নেপথ্যশিল্পীদের আর্থিক-মূল্যায়নের পাশাপাশি পেশাদারি থিয়েটার, থিয়েটারের উন্নয়ন, বিকল্প ছোট ছোট নাট্যমঞ্চ-বিষয়ের পাশাপাশি অন্তঃদেশীয় এবং আন্তঃদেশীয় থিয়েটার প্রদর্শনীর বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়া।

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান এবং সরকার যদি থিয়েটারের সাথে সাথে সামগ্রিক সাংস্কৃতিক-কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগ না করে তবে আমাদের সামনে শতবর্ষী অন্ধকার যুগ অপেক্ষা করছে।

শামীম সাগর ( This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it. ): নাট্যকার-নির্দেশক-অভিনেতা