Full premium theme for CMS
বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান ও থিয়েটারচর্চার সামনের দিন : আমার ভাবনা
Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..
‘বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান ও থিয়েটারচর্চার সামনের দিন’ শিরোনামে বিশ্লেষণধর্মী প্রস্তাবনামূলক একটি লেখা লিখেছেন ‘থিয়েটারওয়ালা’-সম্পাদক হাসান শাহরিয়ার। প্রথম সাত পৃষ্ঠায় এই বঙ্গের থিয়েটারচর্চার একটি ইতিহাস তুলে ধরেছেন লেখক, সংক্ষিপ্তভাবেই। এটি দরকারি কিন্তু এই শিরোনামে প্রয়োজনীয় নয় বোধকরি। তবুও লেখক ভূমিকা হিসেবেই হয়ত লিখেছেন এটি।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে চালু হওয়া গ্রুপ থিয়েটার চর্চা নিয়েই লেখকের মূল-আলোচনা। যদিও স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময়কে উনি ‘এক্কেবারে সৌখিন-মঞ্চনাট্যচর্চা’ বলেছেন কিন্তু অর্ধশতাব্দী ধরে চলে আসা আমাদের গ্রুপ থিয়েটার নাট্যচর্চাও মূলত সৌখিন নাট্যচর্চাই। কাঠামো এবং পদ্ধতিগতভাবে আমরা যে নাট্যচর্চা করে আসছি, সেটি যেভাবেই সংজ্ঞায়িত করা হোক না কেন, এটি সৌখিন নাট্যচর্চাই। পথিকৃৎ নাট্যজনগণ স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে এ বঙ্গে নাট্যচর্চা শুরুই করেছিলেন ‘নাট্য-আন্দোলন’ হিসেবে, একেবারেই আবেগনির্ভর। প্রয়োজনও ছিল তখন। পঞ্চাশ বছর অতিক্রান্ত হলো সে চর্চার, সেই আন্দোলন (বিশেষ উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য প্রচার) আর থামে নি বা থামাতে পারেন নি বা থামাতে চান নি।
যাইহোক প্রসঙ্গে আসি, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এগারোটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে। লেখক চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন লক্ষ্য-উদ্দেশ্যগুলো নিয়ে। ‘তাহলে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান এখন কী ভাবতে পারে?’ এবং ‘তাহলে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান টিকে থাকবে কী নিয়ে?’ উপশিরোনাম দিয়ে হাসান শাহরিয়ার জানিয়েছেন নিজের চিন্তা-ভাবনার কথাগুলো। ‘সহযোগিতা’ উপশিরোনামে চারটি সুনির্দিষ্ট পরামর্শ জানিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের ‘নেতাগিরি থাবা’ থেকে মুক্ত হয়ে থিয়েটারচর্চার সামনের দিনগুলোর এগিয়ে যাবার সম্ভাবনার কথা বলেছেন। তবে বাস্তবিক যা, তা হলো, ফেডারেশান এগুলো করবে না। কারণ, এই চারটি পরামর্শই বর্তমান ফেডারেশানচর্চার সাথে সাংঘর্ষিক। ভোটের হিসাবের তাল মেলাতে গেলে ফেডারেশান এ কাজগুলো করতে পারবে না। কিন্তু থিয়েটারের সামনের দিন নিয়ে ভাবতে হলে এই ভাবনাগুলোর বিকল্প দেখছি না তো!
চল্লিশ বছর পার করেও লক্ষ্য-উদ্দেশ্যগুলোর দুটির (৭. বিভিন্ন সময়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক-পর্যায়ে প্রশিক্ষণ, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, আলোচনা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা ও ৮. জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব আয়োজন করা) আংশিক ছাড়া আর কিছুই করতে পারে নি এই সংগঠনটি। নেতৃত্বের সংকট এটি, আমি মনে করি। ‘থিয়েটারচর্চা-বান্ধব’ও হয়ে উঠতে পারে নি সংগঠনটি। যে কাজগুলো ব্যক্তি বা দলের পক্ষে কর সম্ভব নয়, বা করা খুব দুরূহ, সেটি একটি ফেডারেশান খুব সহজেই করতে পারে। করে নি। করার প্রয়োজনও মনে করে নি। ‘আমাদের মঞ্চ আমরাই গড়বো’ শুরু করেও থেমে গেল কেন! ৫০টি মহড়া কক্ষ, ২০টি সেট গোডাউন, ৫০ জন থাকার মতো ডরমিটরি, ১টি ছোট স্টুডিও, ১টি লাইব্রেরি, ১টি থিয়েটার ক্লাব সম্বলিত থিয়েটার কমপ্লেক্স, একটি ফেডারেশানের পক্ষে করা গেল না চল্লিশ বছরে! অথচ সরকারের কাছ থেকে একটি জমি বরাদ্দ নিয়ে থিয়েটার কমপ্লেক্স করা কোনো হুজ্জুতের কাজ নয়। সেই হ্যাডম যে প্রতিষ্ঠান চল্লিশ বছরে অর্জন করতে পারে নি, তাকে নিয়ে ভাবতে হবে বৈকি!
একটি ফেডারেশান অবশ্যই দরকার। কিন্তু কেমন সে ফেডারেশান! এ বিষয়ে হাসান শাহরিয়ার সুস্পষ্ট মতামত দিয়েছেন ফেডারেশানের কাঠামো-পরিবর্তন নিয়ে আলোচনার সময়। আমি মনে করি দেশব্যাপী বিস্তৃত ফেডারেশান থাকতেই পারে একটি, কিন্তু আমি যেহেতু ঢাকা শহরে নাট্যচর্চাটা করি, এবং এই ঢাকা শহরেই রয়েছে অনেক নাট্যদল, সেহেতু ঢাকা মহানগরকেন্দ্রিক ফেডারেশান হতে পারে। ঠিক তেমনি প্রতি জেলায়ও থাকবে ফেডারেশান। সেগুলো কাজ করবে তাদের নিজেদের সমস্যা নিয়ে। কারণ, ঢাকায় নাট্যচর্চার সমস্যা আর একটি জেলা শহরের সমস্যা এক নয় নিশ্চয়ই। হওয়ার কথাও নয়।
সমাজ, রাষ্ট্রের দুর্বৃত্তায়ন নিয়ে বহুদিন বহু তো কথা হলো, এবার নিজেদের দিকে চোখ ফেরাই। যদি এখনও ভাবতে, বলতে, করতে চাই ভালো থিয়েটার, তবে এখনই শুরু করা যাক। যদিও গভীরে একটা নির্জীবতা চলমান তবুও থিয়েটারচর্চার সামনের দিন নিয়ে কথা বলার সময় আছে এখনও।
বর্তমান ফেডারেশান জাতীয় রাজনীতির ন্যায় যে ভোটকেন্দ্রিক চরিত্র এখন দাঁড় করিয়েছে, তাতে ভালো কিছুর প্রত্যাশা করা বোকামি মনে হয়। কিন্তু যেহেতু ফেডারেশান লাগবে, এটি পরিচালনার জন্যে নেতৃত্বও লাগবে, তাহলে কারা দিবে এর নেতৃত্ব। বর্তমান নির্বাচন-পদ্ধতিতে অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে। ফেডারেশানের সদস্য থাকতে পারে অনেক নাট্যদলই কিন্তু ভোট সবাই দিতে পারবে না। ভোটার হতে হলে সে দলকে সক্রিয় থিয়েটারচর্চায় থাকতে হবে। দেখা যায় একটি জেলায় ফেডারেশানভুক্ত দল আছে ২০টি। কিন্তু কাজ করছে ৫টি দল। বাকি ১৫টি দলের কোনোরকম সম্পৃক্ততা নেই থিয়েটারের সাথে। কিন্তু তার তো ভোট আছে। সুতরাং আমার ভোট পেতে হলে ঐ ১৫টি দলকেও লালন-পালন করতে হবে তো। এমনও দেখা গেছে, ঐ ১৫টি দলের ভোটারকে বাস ভাড়া দিয়ে, হোটেলে রেখে ভোট নেয়া হয়েছে। এই ভোটকেন্দ্রিক ফেডারেশানচর্চার অবসান যত দ্রুত হবেÑথিয়েটারের নতুন মাত্রা যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে ততই এই বঙ্গে।
থিয়েটারের একটি পেশাদারি-ক্ষমতা অর্জন সম্ভব হলো না আজও। আসলেই কি চেয়েছি আমরা থিয়েটারের পেশাদারিত্ব! মনে হয় না। কোনো পরিকল্পনাই তো নেয়া হয় নি। শুধু প্রয়োজন সরকারকে একটি পরিকল্পনা দেয়া, একটি বাজেট দেয়া। সরকার এখনও যে বাৎসরিক অনুদান দিচ্ছে এর যথাযথ বণ্টন-পদ্ধতি যদি দাঁড় করানো যায়, তাও একটা কিছু হয়। কিন্তু সেটি এই ভোটকেন্দ্রিক-ফেডারেশান দিয়ে যে হবে না, সেটি বুঝতে পণ্ডিত হওয়ার দরকার পড়ে না।
ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর দিন শেষ। এই সময়ে এসে এসব আপ্তবাক্য যতদ্রুত ভুলে যাওয়া যাবে, তত সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাওয়া যাবে থিয়েটার নিয়ে।
জয় চাই থিয়েটারের।
সাইফ সুমন ( This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it. ): নির্দেশক-নাট্যকার-অভিনেতা। সহযোগী সম্পাদক-থিয়েটারওয়ালা