Bookmaker Bet365.com Bonus The best odds.

Full premium theme for CMS

হাসান শাহরিয়ারের লেখার প্রতিক্রিয়া

Written by আজাদ আবুল কালাম.

Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..

সামনের দিন ভাবতে পিছন ফিরে দেখা

আমরা যারা গত শতাব্দীর মধ্যআশিতে, মানে ঐ ১৯৮৪-৮৫ সময়ে থিয়েটারের সাথে যুক্ত হয়েছিলাম, তখন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান কর্মচঞ্চল এবং নানান স্বপ্ন তখন থিয়েটারকর্মীদের মাথায়। আর উল্টোপিঠে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের দমন-পীড়ন। ফেডারেশানের পাশাপাশি ফয়েজ আহমদের নেতৃত্বে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রকাশ হলো সাংস্কৃতিক-জগতের জন্য যেন সম্মিলনীর আহ্বান, কী সৃষ্টিশীল আনন্দে, কী যুথবদ্ধ আন্দোলনে।

১৯৮৮-র বন্যা পরিস্থিতি ঢাকাসহ সর্বত্র সংস্কৃতিসেবীদের একত্র করেছে ত্রাণ-কার্যে। ঢাকায় টিএসসির ক্যাফেটেরিয়াকেন্দ্রিক ত্রাণ-সামগ্রী প্রস্তুত থেকে শুরু করে নানা প্রান্তে নৌকাযোগে বিলি-বণ্টন। বিলির পূর্বে ছিল পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ত্রাণ-সামগ্রী সংগ্রহ করা। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে উদয়-অস্ত সেই ত্রাণ কাজের মধ্যদিয়ে সংস্কৃতির নানান ক্ষেত্রের মানুষের সাথে পরিচয়, হৃদ্যতা। দল বা সংগঠনগুলোর মধ্যে যে দূরত্ব ছিল বা পরস্পরকে জানার ক্ষেত্রে যে বৈকল্য ছিল, তা অনেকটাই কেটে গেল।

তারপর এল ৯০-এর আন্দোলন এবং স্বৈরাচারের পতন, আপাত-গণতন্ত্রের উত্তরণ।

গণতন্ত্র আমাদের এক ধরনের মুক্তি দিল বটে, তবে সময় যতই ঘুরতে থাকল ততই জোট এবং গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান কেমন যেন রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন শুরু করল এবং এক সময় দলীয় রাজনীতির সমান্তরাল চালে চলতে থাকল।

দলীয় রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ-সংশ্লিষ্টতা জোট বা ফেডারেশানের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে বিড়ালের মত মিঁউমিঁউ-এ পর্যবসিত করল। ফ্যাসাদ, ধরনা, প্রতিবাদ, দাবি আদায়ের দৃঢ় সংকল্প, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে তার বিস্তার এবং সরকারের ওপর চাপ-সৃষ্টির সব দক্ষতা বা কৌশল ভোঁতা হতে শুরু করল। আর কিছু ‘নেতার’ জন্ম হতে থাকল, যারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে এমন কোনো দক্ষতার দৃষ্টান্ত রেখে যান নি বা প্রয়োজনও বোধ করেন নি। গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান বা পথনাটক পরিষদে এমন নেতারও জন্ম হলো যারা কৃতকর্মের পূর্বের সৃজনশীল ড্যাটা অসম্পূর্ণ বা একেবারেই শূন্যের কোটায় রেখে শুধু নেতা হতে চাইলেন, হলেনও। গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের নেতৃত্বের যে ধারাবাহিক সিলেকশন-প্রথা, তার মৃত্যু হলো অকালে এবং গণতান্ত্রিক-পদ্ধতিতে ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া চালু হলো। ভোটপূর্ববর্তী জনসংযোগ-কার্যক্রম দেশের সর্বসীমা ছুঁয়ে এল। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বিশাল আয়োজনে ঢাকার মহিলা সমিতি ও শিল্পকলা প্রাঙ্গণ মুখরিত হলো। কেউ জিতে গেল, কেউ হেরে গেল। বিজয়ীদের আমরা নেতৃত্ব হিসেবে পাওয়ার বদলে হলবণ্টন, বাৎসরিক সরকারি অনুদান (যার পরিমাণ প্রায় অপমানজনক) ইত্যাদির খাতায় দেখতে পেলাম।

গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের গঠনতন্ত্রে ১১ দফা বা ধারা কাগুজে-বাঘ হয়ে থেকে গেল। কাজের চেয়ে অগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর গুরুত্ব বাড়তে থাকল এবং নেতৃত্বে আধিপত্য-বিস্তারি মানস তৈরি হলো। তবে এইসব নেতৃত্বের কারণে সামাজিকভাবে কেউ কেউ প্রতিষ্ঠা পায়। ব্যক্তিগত অর্জনের ক্ষেত্রে কারো কারো সাফল্য দৃশ্যমান। নেতৃত্বের আধিপত্য-বিস্তার-চিন্তা কখনো কখনো স্বাভাবিক বিবেচনা রহিত করে। তার একটি উল্লেখযোগ্য আখ্যান সাম্প্রতিক-সময়ে দুজন নেতার বিরুদ্ধে নেয়া পদক্ষেপ। বিচার হলো না, আদালত বসল না, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না রেখেই তারা অর্থ-কেলেঙ্কারির মামলায় বহিষ্কৃত হলো। অন্য নেতারা যেমন নেতৃত্বের কারণে সামাজিকভাবে একটি অবস্থান পেয়েছেন, ঠিক একই কারণে বা তাদের ব্যক্তিগত অবস্থান এবং কাণ্ডজ্ঞানের কারণে তাদেরও (বহিষ্কৃত দুজনের) একটি সামাজিক-অবস্থান আছে। দুজনের হঠাৎ বহিষ্কার যেন রাতের আঁধারের ষড়যন্ত্রের মতো প্রকাশ পেল। তারা আমাদের বর্ষীয়ান প্রাজ্ঞ-নেতৃত্বের দ্বারে দ্বারে তাদের হাহাকার জানিয়েছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত সমাধান হয় নি। তারমানে ফেডারেশানের নেতৃত্ব আমাদের কারো কাছে আর দায়বদ্ধ নয় এবং স্বেচ্ছাচারিতাই আজকের দিনের মূলমন্ত্র

আগামীকে কি দেখা যায়?

‘থিয়েটারওয়ালা’-সম্পাদক হাসান শাহরিয়ারের লেখার প্রেক্ষাপটে আমি আগামী দেখতে পাই একটু ভিন্ন-বাস্তবতায়। এই বাস্তবতা রাজনৈতিক, আরো নির্দিষ্ট করে বললে মৌলবাদের বেবুঝ-উত্থান। যা দেখে-শুনেও আমরা সচেতনভাবে এড়িয়ে গেছি, ভেবেছি আমি একটু নিরাপদ থাকার বন্দোবস্ত করি আর সরকার তো আছেই। কারো কারো এমত মতামত এদেশে মৌলবাদ কখনোই রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে পারবে না। হয়ত কারণ, রাষ্ট্রযন্ত্র দখল একটি জটিল প্রক্রিয়ায় হয়, জনতার উত্থান, ভোট বা অস্ত্র-সহযোগে। এসব তো দৃশ্যমান বা প্রত্যক্ষভাবে রাষ্ট্রক্ষমতার দখল-পদ্ধতি। কিন্তু প্রত্যক্ষ-দখলের বদলে যদি তলে তলে দখল হয়ে যায় রাষ্ট্র, তাহলে? তাই কিন্তু হচ্ছে প্রতিদিন, প্রতিঘণ্টায়, প্রতিমিনিটে। এবং এ ক্ষেত্রে সরকার বা সরকারের বাইরের রাজনৈতিক দলগুলোর বড়ো কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হচ্ছে না। এবং. তার ফলে, মৌলবাদীদের এজেন্ডা ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

আমরা এইটুকু বিশ্বাস করতে চাই, দু-একটা ব্যতিক্রম ছাড়া সংস্কৃতি-অঙ্গনের বেশিরভাগ মানুষই মৌলবাদী-চিন্তার বাইরে। তারা মুক্তভাবে কাজ করে যেতে চায় একটি মুক্ত-সমাজে। মুক্ত-সমাজ আপাতত তৈরি হবার সম্ভাবনা দিন দিন দূরের ক্ষীণ রেখার মতো আছে, দেখা যায় শুধু, কিন্তু অতদূর কি যাওয়া যায় বা যাবে? এমত অবস্থায় আগামীর গ্রুপ থিয়েটারচর্চা বা সাংস্কৃতিক-কর্মকাণ্ডের যে ব্যাপক প্রসার ঘটানো দরকার, সেই ক্ষেত্রে আমাদের টনক নড়ছে কি অথবা প্রস্তুতির চিন্তা আছে কি?

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের প্রয়োজনীয়তার প্রাসঙ্গিকতা নির্ভর করছে আগামীর প্রস্তুতির উপর। এখন একলোক-কেন্দ্রিক বহু বছর ধরে নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টা মূললক্ষ্য থেকে আমাদের দূরে সরিয়ে রাখছে। খুব পুরনো কথা ‘ঢেলে সাজানো’, পুরনো কথাটিই এখন প্রাসঙ্গিক মনে হয়।

আমাদের অনেক কিছুর দরকার, অনেক দাবি-দাওয়া, সে সব নিয়ে এই মৌলবাদের উত্থানকালে ফেডারেশানের আগামীর পরিকল্পনা কে করবে? বর্তমান নেতৃত্ব নিশ্চয়ই নয়।

সবচেয়ে আক্ষেপের বিষয় এত বড়ো ফেডারেশান, তার অধীনে কত কত দল, সেই দলগুলোর নাটকের মান কেমন? আমার ব্যক্তিগত মত, আমাদের বেশিরভাগ নাটক এখনও কর্মশালাভিত্তিক-উপস্থাপন-যোগ্যতার মাপকাঠিতে সীমিত, আমার নির্মিত নাটকগুলোসহ। এটিই আসল জায়গা। এই জায়গাটিকে একটি পেশাদারি স্তরে পৌঁছানোর বড়ো দায়িত্ব ছিল ফেডারেশানের। এখানেই সবচেয়ে বড়ো পরাজয় ফেডারেশানের। কারণ, ভোট এবং নেতৃত্বে এমন কেউ নেই, যে নাটক বা প্রযোজনাগুলোকে যথার্থ বিচার করার সক্ষমতা রাখেন। যারা পারতেন, তারা হয় ফেডারেশানের আলংকারিক পদে আছেন, নয় প্রক্রিয়াটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন কিংবা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের জন্ম সময়ের-প্রয়োজনে হয়েছে এবং সেই প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায় নি। দরকার যোগ্য এবং গতিশীল প্রাজ্ঞ-নেতৃত্ব যাতে করে এর প্রাসঙ্গিকতা স্পষ্ট হয় থিয়েটারকর্মীদের মধ্যে।

যেকোনো সরকারের গা-ঘেঁষে বেকুবের মতো দাঁড়িয়ে থাকা ফেডারেশানের কর্ম নয়।

হাসান শাহরিয়ার একটি বহুল-তথ্যসম্বলিত এবং দিকনির্দেশনামূলক বিস্তৃত লেখা তৈরি করেছেন। এই লেখাকে গুরুত্ব-সহকারে বিবেচনা করা উচিত। সামনের দিনগুলোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শুধু ফেডারেশান নয়, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, পথনাটক পরিষদ সবারই একটু নড়েচড়ে বসার এটিই প্রকৃত-সময়।

সবশেষ কথা

সবক্ষেত্রের নেতাদেরও বোঝার দরকার বা আয়নায় নিজেকে প্রশ্ন করার সময় এসেছে, কেন সে নেতা হতে চায়? তার কী কোনো প্রস্তুতি আছে নেতা হওয়ার জন্য? সংশ্লিষ্ট-ক্ষেত্রে তার সৃজনশীল সম্পৃক্ততার ‘ছাপ’ কি স্পষ্ট নাকি শুধুই ‘জলছাপ’!

থিয়েটারের জয় হোক।

আজাদ আবুল কালাম ( This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it. ): অভিনেতা-নাট্যকার-নির্দেশক