Bookmaker Bet365.com Bonus The best odds.

Full premium theme for CMS

বাংলার আকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা

Written by সুজিত মনা.

Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..

    রাখাল গরুর পাল লয়ে যায় মাঠে
    শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে।
    রাখাল বাজায় বাঁশি কেটে যায় বেলা
    চাষী ভাই চাষ করে জেলে ভাসায় ভেলা।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে শঙ্খের ধ্বনিতে রাখালের ধমণীতে জেগে ওঠে জারি সারি ভাটিয়ালী পদ-পদাবলীর সুর মূচ্ছ্বনা। আউলা-বাউলা বাতাসে ভেসে দূর গাঁয়ে মাঠের কোলে প্রতিধ্বনি শোনা যেত প্রতিদিন। শত-শতাব্দির ঘর গৃহস্থালী, চাষ-বাস, লাঙ্গল-জোয়াল, কাঁচি-মাথাল। কোমরে গামছা আঁটা, হাতে বাঁশের বাঁশির ফোঁকরে ফোঁকরে ছিল এক অপূর্ব ডাইমেনশন জীবন-জীবিকার। আমাদের রাখাল এখন দলছুট রাজহংস ...

    রাখাল ছেলে রাখাল ছেলে বারেক ফিরে চাও
    বাঁকা গাঁয়ের পথটি বেয়ে কোথায় চলে যাও।

আমাদের রাখালকে তোমরা দেখেছ কেউ? কলা-পাতার চামর হাতে সেই যে চলে গেল ঘর ছেড়ে। দেশজুড়ে এখন উন্নয়নের জোয়ার, পিচ ঢালা রাস্তা ক্রমশ নগর পেরিয়ে ফসলি সবুজ ক্ষেত-খামার, বিল-বাওর, জলাশয় ঘিরে ধরেছে বাৎসরিক বাজেটে বাজেটে। সংকুচিত হতে হতে শঙ্কার ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে, মিডিয়ার যুগ, পার্টস-পাতির কারবার, গ্লোবালাইজেশন গোলক ধাঁধা, পণ্য-বানিজ্য সমাহার। প্রায় সকল কর্মই ফেরি হচ্ছে ঘরে বাহিরে। জনজীবনের যা হালচাল- তা দেখছেন, মানছেন, ভোগ করছেন। পেটে জ্বালা, বুকের গুপ্ত ব্যথা ছেয়ে ফেলে সর্বাঙ্গ। মাথায় যানজট, পিছে পিছে ঘুরছে সমন দিবা-রাতি। এই সময়ের তোড়ে নাটক-ঘরে প্রদীপ জ্বালানো যাবে কি ভাই? সমাজের গভীর সুড়ঙ্গ ভেদ করে নাটক-ঘরে আসতে হয়। বাজারে কেরোসিনের দাম আন্তর্জাতিক। বিশ্বব্যাংকের বিষফোঁড়া গোদের উপর। এনজিও ফোরাম ফর্মূলা দেয়। কোম্পানীগুলো প্রতি-প্রত্যেক মানুষকে প্রোডাক্ট বানাতে জেঁকে বসেছে কাঁধে। পণ্য-বানিজ্যের ছাঁচে মগজ ধোলাই চলছে অবিরত। রাজধানী থেকে অজ-পাড়া গাঁয়ে হাইড্রেলিক শব্দ-মহড়া, হাইব্রিড জীবন ধারা। এই উপদেষ্টা শাসনকালে এনার্জি সেভিংস বাল্বে বাল্বে চোখ ঝলসানো আলোর তোড়ে পশু-পাখি বনের গভীর থেকে গভীরতর বনে চলে যায়, জীবন জীবিকার সন্ধানে নিজ আত্মরক্ষায়।

    নিজের খেয়ে বনের মহিষ কে তাড়াবে ভাই?
    মহিষের শিঙে-এ মৃত্যু বাঁধা।
সমস্বরে নড়াচড়া প্রায় বন্ধ অবস্থা। যে যার মতো চলছে এদিক সেদিক। থিয়েটার দল বেধে করতে হয়। লোকবল লাগে। চর্বিত চর্বন চুয়ে থিয়েটার হয় না। নাট্যকলা দানা বাঁধে না। ধ্যান জ্ঞানে জোট বাঁধতে হয়। নাটক সুর তালের ব্যাপার। যত সময় গড়ায় ... সুর তাল ভাঙতে ভাঙতে চৌচির হয় মানব জীবন। এহেন অবস্থায় কে কেমন আছেন তা নিজেই ভালো জানেন। বর্তমানে সংকটটা মনোভঙ্গির কোঠরে পৌঁছে গেছে। বেতাল চলাফেরা দিবারাতি। জীবনের ছন্দ-বন্দ না থাকলে নাটক বাঁচে কোন কায়দায়? ‘ঢাল নাই তলোয়ার নাই, নিধিরাম সর্দার’ এভাবে কতটুকু কী হয়? যারা মেতে আছে, তারা কোন মতলবে মেতে আছে তাকালেই দেখতে পান। চ্যানেলের কারবার গ্রামের নাটক, শহরের নাটক, হাসির আয়োজন দরদামে কেনা-বেচা।

    আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা
    চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা।

মা তার সন্তানকে গল্প শোনায়, রাখাল বালক কেবল আশায় আশায় ঘুম পারে, ঘুমঘোরে স্বপ্ন দেখে। চাঁদ মামা তার কপালে টিপ দেবে কোনো একদিন। চাঁদ কি কোনোদিন আকাশ থেকে নেমে আসবে?

আমরা গুটিকতক কাছা-খোলা কামলা চাটমোহরে ছোট নাটকঘরে অপেক্ষার তারা গুনি। আর ভাবি নাটক হবে তো? সকল নাট্যকর্মী আজ একত্রিত হতে পারবে? প্রতিদিন মানুষের মগজ যে হারে ক্ষয় হয়, যান্ত্রিক ব্যবহারবিধিতে বিধ্বস্ত হয় শুভ বুদ্ধি, অস্থির এলোমেলো ভাবনায় হিমশিম খায় সৃজনকর্ম, নূয়ে পড়ে আপন স্বত্ত্বা। সমকালীন গণমানুষের অন্তর্নিহীত আশা, স্বপ্ন, সমাজ, সংস্কৃতি, শাসকচক্র, চন্দ্রগ্রহণের মতো হা গলায় গিলে খায়। চাঁদ মামা ডুবে যায় ... রাখাল ছেলে পথ হারায়। ভোর কৃষ্ণপক্ষ ধায়। ...


সুজিত মনা : নাট্যকর্মী, সমন্বয় থিয়েটার, চাটমোহর, পাবনা