Bookmaker Bet365.com Bonus The best odds.

Full premium theme for CMS

থিয়েটারওয়ালার আলাপন : প্রাসঙ্গিক প্রতিক্রিয়া

Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৫
হাসান শাহরিয়ার
সম্পাদক- থিয়েটারওয়ালা

শুভেচ্ছা নেবেন। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে একটি নাটকের পত্রিকাকে বাঁচিয়ে রাখবার জন্য আপনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, বিষয়টি আমি ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখি। আমি আপনার পত্রিকার একজন অনিয়মিত লেখক এবং নিয়মিত পাঠক। থিয়েটারওয়ালা সপ্তম বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা (জুলাই- সেপ্টেম্বর-০৫) এ ছাপা শ্রদ্ধেয় নাট্যজন আতাউর রহমানের সাক্ষাৎকারটি সম্পর্কে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ঐ সংখ্যায় আতাভাই বলেছেন ‘আমাদের দেশে থিয়েটার করে কিছু পাওয়া যাবে না, তাই তারা থিয়েটার ব্যবহার করে পেতে চাচ্ছে’ (১০৪ পৃষ্ঠায়)। ঐ  প্রসংগে আপনার পরবর্তী প্রশ্ন ছিলো-:

কারা? আপনাদের প্রজন্ম, নাকি নতুন প্রজন্ম, নাকি সবাই?

ঐ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আতাভাই নিজ প্রজন্মের আজকের থিয়েটারে ইনভল্ভমেন্টের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে নতুন প্রজন্মের ডেডিকেশন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আমি বিষয়টির সঙ্গে একমত নই। পরবর্তী প্রজন্ম বা নতুন প্রজন্মের একজন নাট্যকর্মী হিসেবে আমি বিষয়টি মেনে নিতে পারিনি। আমি বলতে চাই ঐ পরবর্তী বা নতুন প্রজন্মই আজকের বাংলাদেশের থিয়েটার চর্চায় অনেক বেশি কমিটেড, পরিশ্রমী, এবং অনুশীলন ও অধ্যবসায়প্রিয়। নতুন বা পরবর্তী প্রজন্মের হাতে অনেক ভালো কাজ মঞ্চে এসেছে। বরং নতুন বা পরবর্তী প্রজন্মের কাজের ক্ষেত্রটি অগ্রজদের দ্বারাই অনেক বেশি সংকুচিত করে রাখা হয়েছে। বলা যায়, অগ্রজ প্রজন্মের অনেকের কাজই আজ নিবু নিবু প্রদীপ। সকলের অবশ্যই নয়, অনেকেই এখনো সৃজনশীলতায় উজ্জ্বল। সে তুলনায় আতাউরভাইয়ের সর্বশেষ প্রযোজনা নাট্যত্রয়ী নিবু নিবু প্রদীপ নয় কি? বা রক্তকরবী-তেও মঞ্চে লাক্স ষ্টার বিক্রয় প্রক্রিয়াটি ষ্পষ্ট নয় কি? নতুন প্রজন্মের কমিটমেন্টের অভাব আতাউরভাই মনে করতেই পারেন কিন্তু সেই মনে করাটাই কিন্তু শেষ কথা নয়। নতুন প্রজন্মের কেউ যদি প্রশ্ন করেন যে নতুনদের কাজ করার বা স্বাধীন মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে বা সুযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে আপনার নেতৃত্বাধীন দলই বা কতটুকু নমনীয়? বা কতটুকু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসৃত হয় আপনার দলে? আশা করি প্রশ্নটির উত্তর আতাউরভাই দেবেন। থিয়েটারওয়ালাতেই দিতে পারেন, যদি প্রয়োজন মনে করেন।

প্রিয় সম্পাদক, আপনার পত্রিকার পূর্বউল্লেখিত সংখ্যার ১৩১ পাতায় আতাউর রহমানভাই বলেছেন যে, জীবনানন্দ দাশ-এর ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’ কবিতাটিকে গান বানানো তাঁর পছন্দ হয়নি। তাঁর অপছন্দের কারণটা সাক্ষাৎকারে পরিস্কার করে বলেননি। আমার তো মনে হয় আমার মতো অনেকেরই এটি ভালো লাগার গান, মুগ্ধ হয়ে বারবার শোনবার মতো একটি গান। কবিতায় এক ব্যাঞ্জনা, সুরে সেটা অন্য আর এক ব্যঞ্জনায় প্রকাশ পায়। ক’জন মননশীল ব্যক্তি পাওয়া যাবে, যাদের এই গানটি ভালো লাগে না, এ নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

এরপরই আতাভাই প্রশ্ন তুলেছেন যে-‘রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য শ্যামা-কে নাটক শ্যামাপ্রেম বানাবার কী অর্থ হতে পারে? চিত্তরঞ্জন বাবু কি রবীন্দ্রনাথের সৃজনশীলতায় নতুন করে কিছু যোগ করতে পেরেছেন?’- আমার মনে হয় বিষয়টি যোগ বিয়োগের নয়। নতুন বা ভিন্নতর দৃষ্টি ভঙ্গিতে রবীন্দ্রনাথের শ্যামা-কে দেখা বা বিশ্লেষণ করা। তাই যদি না হতো তাহলে তো প্রশ্ন উঠতেই পারে যে রবীন্দ্রনাথ তো ‘পোষ্ট মাষ্টার’ বা ‘সমাপ্তি’কে চলচ্চিত্রের জন্য লিখেননি, লিখেছেন ছোটগল্প, তাহলে সেটাকে চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত করে কি সত্যজিৎ রায় রবীন্দ্রনাথের সৃজনশীলতায় নতুন কিছু যোগ করতে পারেননি? উল্লেখ্য শ্যামা নৃত্যনাট্য বলে সেটাকে নাটক শ্যামাপ্রেম করা উচিত নয় যে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ঐ একই সাক্ষাৎকারে তিনিই ১১৪ পাতায় বলেছেন যে- ‘সত্যজিৎ রায় যদি অপুর ট্রিলজি করে আর কিছু না করতেন তবুও সত্যজিৎ রায় বিশ্ব নন্দিত হতেন’- তাহলে বিষয়টা কী দাঁড়ালো? একই সাক্ষাৎকারে কি তিনি নিজেই নিজের বিপরীতে দাঁড়াচ্ছেন না? বিষয়টা এখানেই শেষ নয়। যখন তিনি চিত্তরঞ্জন ঘোষের শ্যামাপ্রেম-র  সমালোচনা করছেন, বলছেন যে-‘চিত্তরঞ্জন কি রবীন্দ্রনাথের সৃজনশীলতায় কিছু যোগ করতে পেরেছেন?’ - ঠিক তখনই তিনি (আতাভাই) নিজে রবীন্দ্রনাথের তিনটি কবিতাকে নিয়ে নাটক করেছেন। যে কবিতা তিনটি (কর্ণকুন্তি সংবাদ, বিদায় অভিশাপ ও গান্ধারীর আবেদন) রবীন্দ্রনাথ কবিতা হিসেবেই লিখেছিলেন এবং স্থান দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথের কবিতার সংকলন ‘সঞ্চয়িতা’-তে। ঐ তিনটি কবিতাকে যদি রবীন্দ্রনাথ নাটক ভাবতেন তাহলে তিনি সেটাকে কবিতার সংকলনের অন্তর্ভুক্ত করলেন কেনো?

এবার বলুন প্রিয় সম্পাদক, রবীন্দ্রনাথের শ্যামা নৃত্য নাট্যের যদি শ্যামাপ্রেম হিসেবে নাটক হবার দরকার না থাকে, তাহলে আতাউর ভাইয়ের-ই-বা রবীন্দ্রনাথের তিনটি কবিতা নিয়ে নাটক করবার কী প্রয়োজন? শ্রদ্ধেয় চিত্তরঞ্জন ঘোষ, যিনি দীর্ঘদিন কোলকাতার বহুরূপী নাট্যদলের সঙ্গে ছিলেন, যিনি বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাট্যদলের শ্রেষ্ঠ নাট্যপত্রিকা ‘বহুরূপী’ সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তিনি যদি রবীন্দ্রনাথের সৃজনশীলতায় কিছু যোগ করতে না পেরে থাকেন তাহলে আতাভাই কীভাবে রবীন্দ্রনাথের সৃজনশীলতায় ‘কিছু যোগ’ করলেন সেটা জানবার কৌতুহল তো পরবর্তী বা নতুন প্রজন্মের একজন ‘কমিটমেন্টলেস’ নাট্যকর্মী হিসেবে আমাদের হতেই পারে। তাই পরবর্তী বা নতুন প্রজন্মের একজন ‘কমিটমেন্টলেস’ নাট্যকর্মী হিসেবেই মনে করি যে, ঐ ধরনের ফিক্সড বা স্ট্রাকচার্ড ধারণা যাঁরা আঁকড়ে আছেন তারা এক ধরনের মুসলিম জঙ্গিবাদীদের মতোই কট্টর ‘রবীন্দ্র মৌলবাদী’ এবং এরাই রবীন্দ্র নাট্যচর্চা ও প্রসারের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়।

এবার বিনীতভাবে অগ্রজ আতাউর ভাইকে অনুরোধ করবো, একবার ভাবুন না যে অনুজরাও বড় হয়েছে। ওরাও বুঝতে বা ভাবতে শিখেছে, ওরাও কাজ করছে। লাঠি লজেন্স কিনে দিলেন, যা ইচ্ছা তাই বললেন আর অনুজরা ঐ লাঠি লজেন্স পেয়ে যাবার আনন্দেই তা চুস্তে চুস্তে মুখ লাল করে বাড়ি ফিরে গেলো-সে-দিনে অনুজরা বোধহয় আর নেই। বরং অনুজদের কীভাবে হাত বাড়িয়ে তুলে আনা যায়, কীভাবে ওদের কাজে সাহায্য করা যায়, সেটা ভাবুন। আপনারা অগ্রজ, আপনারা সমালোচনা করবেন, ভুল ধরবেন, ভুল ধরিয়ে দেবেন সেটাই আমরা প্রত্যাশা করি। কিন্তু সেটা না করে, সাহায্যের হাত না বাড়িয়ে কেবলই মুরুব্বিয়ানা ফলাতে বা নিজেদের পাণ্ডিত্য ফলাতে থাকলে বরং নিজেরাই পিছিয়ে যাবেন।

আজকের বাংলাদেশের থিয়েটারের মূল স্রোত হচ্ছে নতুন বা পরবর্তী প্রজন্ম। আজকের থিয়েটার ডিজাইনের ক্ষেত্রে প্রায় শতভাগ প্রাধান্য বিস্তার করে সৃজনশীল কাজ করে চলেছে নতুন বা পরবর্তী প্রজন্মের তরুণরা। যেখানে নতুন প্র্রজন্মের নাট্যকার নির্দেশকদের ন্যূনতম উল্লেখযোগ্য ১০টি প্রযোজনা আজকের বাংলাদেশের থিয়েটার চর্চায় ঢাকার কোনো না কোনো মঞ্চে প্রতি সন্ধ্যায় প্রদর্শিত হচ্ছে-যা নাট্যকর্মী বা সাধারণ দর্শক ভালো প্রযোজনা হিসেবে গ্রহণ করছে, সেই প্রজন্মকে কমিটমেন্টলেস বলাটা বোধকরি ঠিক না।

প্রিয় সম্পাদক, আমি আপনাকে এ লেখাটি থিয়েটারওয়ালা-র পরবর্তী সংখ্যায় ছাপানোর বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। কারণ, একজন আতাভাইয়ের মতামতই তো শেষ কথা নয়। আমার বিশ্বাস এ লেখাটি ভবিষ্যতে অগ্রজ ও অনুজদের সম্পর্কের সেতু বন্ধনে সহায়ক হলেও হতে পারে। ধন্যবাদ।

প্রীতি ও শুভেচছা জানবেন।

ইতি

স্বাক্ষর
(অনন্ত হিরা)

অনন্ত হিরা : নাট্যকর্মী, সদস্য- প্রাঙ্গণে মোর