Bookmaker Bet365.com Bonus The best odds.

Full premium theme for CMS

সাম্প্রতিক নাট্য প্রযোজনায় মঞ্চ পরিকল্পনা- ১

Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..

মঞ্চ পরিকল্পনা বা সেট ডিজাইন প্রসঙ্গটি কখনো এককভাবে বিচার্য নয়। কেননা আলো, পোশাক, রূপসজ্জা, সঙ্গীত, দ্রব্যসামগ্রী এবং সর্বোপরি অভিনয়ের সঙ্গে মঞ্চ পরিকল্পনার সু-সমন্বয়ের ফলেই গড়ে ওঠে একটি সার্থক প্রযোজনা। বাংলাদেশে আধুনিক নাট্যচর্চার শুরু থেকেই প্রযোজনার অন্যান্য উপাদানসহ ‘মঞ্চ পরিকল্পনা’ বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হতে থাকে। বলা যায়, নাট্য প্রযোজনার আধুনিকতা অভিধাটি অনেকাংশে নির্ভর করে মঞ্চ পরিকল্পনার আধুনিকতার ওপর। তাছাড়া দৃশ্যশিল্প হিসেবে মঞ্চ পরিকল্পনার আলাদা গুরুত্বতো রয়েছেই। একারণেই এই সময়কার নাট্য প্রযোজনায় মঞ্চ পরিকল্পনার প্রয়োগ ধারা ও বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনার লক্ষ্যেই বর্তমান রচনা।

প্রাকৃতজনকথা : সামন্ত শোষণ ও প্রাকৃত জীবনের দৃশ্যরূপ
আরণ্যক নাট্যদল প্রযোজনা- ৩০
নাটক : আব্দুল্লাহেল মাহমুদ, নির্দেশনা: মামুনুর রশীদ
মঞ্চ পরিকল্পনা: ফয়েজ জহির

প্রাচীন বাংলার প্রাকৃত জনপদে সামন্ত প্রভুদের নানা অনাচারের কাহিনী নিয়ে গড়ে উঠেছে নাটক ‘প্রাকৃতজনকথা’। একদিকে পাল সাম্রাজ্যের পতন ও বর্ম্মনদের উত্থান, অন্যদিকে এই শাসকচক্রের হাতে নিগ্রহ ও নিপীড়নের শিকার প্রাকৃত নর-নারী দ্বন্দ্ব পরিক্রমাই বর্ণিত হয়েছে এ নাটকে। ইতিহাসের সেই ক্রান্তিকালের সামন্তপ্রভু শিবদাস, নারায়ন সেন এবং সংঘবাসী অহিংস ভিক্ষু সর্বানন্দ, শ্রদ্ধানন্দ, রাহুল, মহাস্থবির প্রমুখ এ নাটকের পাত্র-পাত্রী।

প্রাকৃতজন প্রযোজনার ডিজাইন পর্যালোচনার পূর্বে সবিনয়ে জানাতে চাই, নাটকটি দু’বার দেখেছি, সেও বছর দেড়েক আগে। এর পাণ্ডুলিপি ইতোমধ্যে নাট্যপত্রিকা ‘থিয়েটার’-এ পাঠ করেছি। প্রায় দেড় বছর আগে দেখার স্মৃতি এবং পাণ্ডুলিপিকে নির্ভর করে এই আলোচনা প্রস্তুত হবে, ফলে এতে দু’একটি তথ্যগত অসংগতি থাকা অসম্ভব নয়। যদিও তাতে আমার মূলগত বিশ্লেষণে তেমন হেরফের হবে না।

প্রসেনিয়াম মঞ্চকে তিনটি অংশে বিভক্ত করে সম্পন্ন হয়েছে এ নাটকের মঞ্চ পরিকল্পনা। ১. মঞ্চের এক পাশে বৌদ্ধ সংঘের ভিক্ষুদের আশ্রম, ২. এর বিপরীত অংশে সামন্ত প্রভুর সিংহতোরণ, ৩. প্রসেনিয়াম ওপেনিং এর সামনের বাড়ানো অংশ। মঞ্চের এই বিভিন্ন অংশে একটি ইউনিট সেট-এ নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। সেট উপকরণে বাস্তবের সরাসরি প্রয়োগের পরিবর্তে নাট্যবিষয়ের ইঙ্গিতবহতাই এখানে লক্ষ্য করা যায়। দৃশ্যান্তরে একই সেট কাঠামো কখনো নির্দেশ করেছে (ভিন্ন ভিন্নভাবে) সংঘের ও প্রাসাদের প্রাঙ্গণ আবার কখনো বোঝানো হয়েছে দু’স্থানের অভ্যন্তর ভাগ। ভিক্ষুদের ব্যবহৃত চৌপায়া আসন দৃশ্যান্তরে প্রাসাদ অভ্যন্তরে সৌদামিনীর অধ্যয়নের উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। সেট উপাদানের এই বহুবিধ ব্যবহার মঞ্চ পরিকল্পনার আধুনিকতাকেই প্রমাণ করে। বিপর্যস্ত প্রাকৃতজনদের অভিনয়স্থান নির্দিষ্ট ছিল মঞ্চের সামনের বাড়ানো অংশে। প্রাচীন জনপদের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ-ই যেহেতু এ নাটকের মুখ্য বিষয়। সেট কাঠামোর সঙ্গে চরিত্র সমূহের অবস্থান সেই শ্রেণী বৈশিষ্ট্যসহ মানুষগুলোর মানসস্তর যথাযথভাবে মূর্ত হয়েছে। যেমন বিশাল উল্লম্ব অবস্থানের প্রাসাদ তোরণের সামনে যখন সামন্ত প্রভু ও তাদের সহচরেরা কথাক্রিয়ায় রত থাকে তখন ওই মস্ত তোরণ কাঠামো সাপেক্ষে তাদের খুবই ক্ষুদ্র মনে হয়। পাশাপাশি ভগ্নদশাগ্রস্থ বৌদ্ধ আশ্রমের সামনে অহিংস ভিক্ষুবৃন্দের অবস্থা বিশেষ করে সত্যনিষ্ঠ ও দ্রোহী ভিক্ষু সর্বানন্দের ঋজু অবয়ব ভিন্ন প্রণোদনা দেয় আর মঞ্চের বাড়ানো অংশে শূন্য আয়তনে প্রাকৃতজনদের অবস্থান বাংলার বিরাণ জনপদের জীবন সংগ্রামী জনমানুষের অস্তিত্বই প্রতীয়মান হয়।

প্রাকৃতজনকথা নাটকের দৃশ্য ইউনিটগুলোর ক্রম বিভাজন এরূপ: ১. বন্দনা ২. নিপীড়িত প্রাকৃতজন ৩. সংঘ প্রাঙ্গণ ৪. মহাসামন্ত প্রাসাদ প্রাঙ্গণ ৫. সংঘের অভ্যন্তরভাগ ৬. শিবদাসের কক্ষ ৭. প্রাসাদের অভ্যন্তরে সৌদামিনীর কক্ষ ৮. বিপর্যস্ত জয়ীকের বাসগৃহ ৯. ভিক্ষু সংঘের প্রাঙ্গণ ১০. প্রাসাদ প্রাঙ্গণ ১১. সংঘের প্রাঙ্গণ ১২. সংঘের অভ্যন্তর ১৩. পল্লী এলাকা ১৪. প্রাসাদ অভ্যন্তর ১৫. বৌদ্ধ সংঘ।

নাটকের শুরুতেই বিশাল তোরণে পেছন থেকে প্রক্ষেপিত তীব্র নীল আলোয় দৃশ্যমান হয় ধ্রুপদী নৃত্যভঙ্গিমায় এক নারী (সূত্রধার?)। ‘সমাগত প্রাকৃতজন, মঙ্গল হোক সকলের’ বলে সে মঞ্চ সম্মুখে এগিয়ে আসে। এই শিল্পীর নৃত্যপ্রবেশ, তার সুর-বাণী, বেশভূষা, সর্বোপরি মঞ্চ আলোর বর্ণ-পরিবেশ ইত্যাদি সব মিলিয়ে সাময়িকের জন্য হলেও পৌরাণিক আবহ তৈরি করে। যা কি-না নাট্যবিষয় ও ভাবের অনেকটা দূরবর্তী। এক ঝলকে একাধিক প্রশ্ন এসে যায় এখানে- প্রাকৃতজনের মঙ্গল কামনার্থী এই নারী কে? সামন্ত তোরণ থেকে তার প্রবেশ কেন? প্রযোজনায় বা নাট্য কাহিনীতে তার ভূমিকা কি তবে সূত্রধারের? তাহলে পরে আর নেই কেনো তার উপস্থিতি? তবে তা কি কেবল দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য নির্মাণ?

দ্বিতীয় দৃশ্য ইউনিটেই আমরা প্রত্যক্ষ করি প্রকৃত প্রাকৃতজনদের দৃশ্য। সামন্ত সৈনিকদের তাণ্ডবের শিকার একদল প্রাকৃত নর-নারী দর্শক আসনের মাঝ পথ দিয়ে আর্ত হাহাকারে সম্মুখ মঞ্চে মুখ থুবড়ে পড়ে। এ দৃশ্যের চরিত্র সমূহের পোশাক-পরিচ্ছদ ও প্রপস-ব্যবহার সব মিলিয়ে যথার্থই সেই কাল ও স্থানে যেন আমাদের প্রক্ষিপ্ত করে। সৈনিকদের তাণ্ডবলীলা প্রত্যক্ষ করছিল কিছুটা দূরে (মঞ্চডানে) ভীত, সন্ত্রস্ত, বেদনার্ত বৌদ্ধ ভিক্ষুবৃন্দ। এসময়ে মঞ্চের ক্ষয়প্রাপ্ত ও অমসৃন ক্ষুদ্রকায় তিনটি স্তম্ভ পুরো সংঘ আশ্রমকেই নির্দেশ করে। পর্যায়ক্রমে এ স্থানেই যখন স্থবির, রাহুলভদ্র, শ্রদ্ধানন্দ প্রমুখের কাছে একে একে অনাথ বালক, শ্রেষ্ঠীকন্যা সিরিমা আসছিলো- তখন তা সংঘের অভ্যন্তর রূপেই উপস্থাপিত হয়। একইভাবে সপ্তম দৃশ্য ইউনিটে শিবদাসের গৃহে ভিক্ষু সর্বানন্দের কাছে সৌদামিনী যখন পাঠ নিচ্ছিলো তখন তা প্রাসাদ অভ্যন্তর এবং দশম দৃশ্য ইউনিটে শিবদাস, নারায়ণ সেন ও শ্রীধর যখন শান্তিবাদী ভিক্ষুসংঘ বিনাশের ষড়যন্ত্র করছে তখন ওই স্থান দর্শকের কাছে প্রাসাদ প্রাঙ্গণ রূপে গণ্য হয়।

একদিকে নিপীড়িত প্রাকৃতজন ও অহিংস ভিক্ষুসংঘ অন্যদিকে সামন্ত প্রভুদের প্রাসাদ ষড়যন্ত্র-এই মূল দ্বন্দ্বকে উপজীব্য করেই মঞ্চের দু’পাশে বিপরীতধর্মী দৃশ্য উপকরণ স্থাপন করা হয়েছে। দু’ক্ষেত্রেই রঙের (পোড়ামাটি) সাদৃশ্য থাকলেও আকার-আকৃতি ও তলের বুনন (টেক্সচার) এর ভিন্নতা এবং আলোর ব্যবহার দৃশ্যবস্তুর বৈপরীত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বা বলা যায়, দৃশ্য বৈশিষ্ট্যকে যথার্থ রূপায়িত করেছে। তবে ভিক্ষুসংঘের মাটির গৃহের আদলের নিচে তিন ধাপের স্পষ্ট কাঠের সিঁড়ি ব্যবহারে এক মস্ত অসামঞ্জস্যতা প্রকট হয়েছে। ব্যাপারটি ডিজাইন শর্তকেও ব্যহত করেছে বলে মনে করি।

সামগ্রিক বিচারে প্রযোজনাটির ডিজাইন সমূহের মধ্যে নান্দনিক ঐক্য রক্ষা করা হয়েছে। নাটকের পাত্র-পাত্রীর বসন-ভূষণের পরিকল্পনায় কালের ছোঁয়া যেমন আছে। তেমনি চরিত্রের মনস্তাত্বিক দিকও প্রতিফলিত হয়েছে। সৌদামিনীর একই সঙ্গে সৌম্য ও দ্রোহ বৈশিষ্ট্য যথার্থই প্রতীয়মান হয়েছে তার পোশাকের সাদা, লাল ও সোনালী বর্ণে। ক্ষেত্রকর নারীর পরণে ধূসর বর্ণের শাড়ি ও মাটি রঙা জামা, শিবদাস চরিত্রে উজ্জ্বল ঘিয়ে বর্ণের সঙ্গে স্বর্ণজরির পাড় বিশিষ্ট ধূতি ও জামা, শ্রীধরের অনুজ্জ্বল সাদা ধূতির সঙ্গে একই রঙের চাদর, ভিক্ষুবৃন্দের বসন ইত্যাদি বর্ণ বিন্যাসে নাটকের বিষয় ও মূলভাবকে মূর্ত করেছে।

ক্রুসিবল : সেই সময়ের আবহ
নাট্যকেন্দ্র প্রযোজনা: ৬
নাটক: আর্থার মিলার, অনুবাদ: তাহমিনা আহমেদ, নির্দেশনা: তারিক আনাম খান
মঞ্চ পরিকল্পনা: তৌকীর আহমেদ

নির্দিষ্ট স্থান-কালের ঘটনাক্রম নিয়ে নাটকটি রচনা করা হলেও এর বিষয় গুণেই এটি একটি ‘উঁচুমানের কালোত্তীর্ণ নাটক’। ম্যাসাচুসেটস এর সালেম শহরে সপ্তদশ শতাব্দীতে কুসংস্কার এবং গোঁড়ামির প্রবল প্রতাপে এক মস্ত সামাজিক ধস নেমেছিল। ওখানকার প্রথা অনুযায়ী লেখাপড়া, নাচ-গান-নাটক এসব কিছুই ছিলো অর্থহীন আনন্দ উপভোগ। সমাজের ক্ষমতাধর, স্বার্থপর, লোভী আর ধূর্তরা ঈশ্বর এবং শয়তানের চিরায়ত দ্বন্দ্বকে নিয়ে ভয়ঙ্কর খেলায় মেতে উঠতো। সেই করাল গ্রাস থেকে সরল সুন্দর শান্তিপ্রিয় ধর্ম-অন্ত প্রাণ কেউই রক্ষা পেত না। তাদের নাচ গানকে ডাইনি বা শয়তান আরাধনার সঙ্গে এক করে অপব্যাখ্যা করা হতো। ইতিহাসের এমন এক অদ্ভুত এবং ভয়ঙ্করতম অধ্যায় থেকে রসদ সংগ্রহ করে রচিত হয়েছে ‘ক্রুসিবল’ (১৯৫৩)।

ক্রুসিবল পাণ্ডুলিপিতে নাটকটির ঐতিহাসিক যথার্থতার ওপর একটি টীকায় বলা হয়েছে যে, এই নাটকে মানব ইতিহাসের সেই ভয়ঙ্করতম অধ্যায়ের সারসত্তা আবিষ্কার করা সম্ভব হবে আর প্রচলিত অর্থে ‘ইতিহাস’ বলতে যা বোঝায়, সে অর্থে ক্রুসিবল নাটকটি ইতিহাস নয়। এই টীকা ভাষ্যের পাশাপাশি ‘নির্দেশকের কথা’ উল্লেখ করা যেতে পারে- নাটকটির ধ্রুপদী মান অক্ষুন্ন রাখার জন্য পাণ্ডুলিপি রূপান্তরের বদলে প্রযোজনা তৈরিতে ভাষান্তর গ্রহণ করা হয়েছে এবং তাঁরা সেই সময়ের আবহ তৈরি করতে চেষ্টা করেছেন, যে চেষ্টা আবার ডকুমেন্টারি নির্মাণ নয়- নাট্য নির্মাণই যার মুখ্য উদ্দেশ্য।

নাট্যকারের টীকা এবং নির্দেশকের নির্দেশনা-ভাষ্য মনে রেখে প্রযোজনাটির প্রয়োগ পরিকল্পনা বিশেষত সেট ডিজাইন পর্যালোচনা করা যেতে পারে : নাটকটি চারটি অঙ্কে বিভক্ত। ১. সালেম শহরে রেভারে- প্যারিসের বাড়ি। ২. জন প্রক্টরের বাড়ি। ৩. গীর্জা। ৪. সালেমের কারাগারের একটি কক্ষ।

পাণ্ডুলিপিতে যে দৃশ্যবর্ণনা রয়েছে, মঞ্চ পরিকল্পনায় তার সুচারু প্রয়োগ লক্ষণীয়। যেমন- (প্রথম অঙ্কে) ‘প্যারিসের বাড়ির ওপরতলার একটি স্বল্প পরিসরের শোবার ঘর। বাঁদিকের একাটি অপ্রশস্ত জানালা। জানালার (কাঁচের পাল্লার) ভেতর দিয়ে ভোরের সূর্যালোক প্রবেশ করছে। ডানদিকের বিছানার পার্শ্বে একটি মোমবতি এখনও প্রজ্জ্বলিত। ঘরের অন্যান্য আসবাবপত্র হচ্ছে একটি কাঠের সিন্দুক, একটি চেয়ার এবং ছোট টেবিল। পেছন দিকে একটি দরজা ... ঘরটির মধ্যে এক পরিচ্ছন্ন ছিমছাম ভাব। ছাদের কড়িকাঠ বাইরে বেরিয়ে আছে।’ প্রথম অঙ্কের এই দৃশ্য স্থাপনাকে মুখ্য রেখে সেট ডিজাইন সম্পন্ন হয়েছে। অর্থাৎ কাঠের দেয়াল, জানালা, মেঝেতে দু’ধাপ বিশিষ্ট কাঠের জ্যামিতিক বিন্যাসের মেঝে, ছাদের কড়িকাঠ ঠিক রেখে কেবল দৃশ্যান্তরে কখনো জানালায় নেট সদৃশ কোনো পাল্লা, শিক দেয়া জানালা, দরজা, কাঠের বেঞ্চি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রথম দৃশ্যে রেভারে- প্যারিসের কন্যা বেটি প্যারিস যে খাটিয়াতে শুয়ে থাকে, দৃশ্যান্তরে (অন্ধকারে) তা সরিয়ে নেয়া এবং আসবাব পত্রের অবস্থান পরিবর্তন করে, সর্বোপরি অভিনয়শিল্পীদের ভিন্ন প্রবেশ প্রস্থান পথ নির্দেশে ভিন্ন দৃশ্য স্পষ্ট হয়। দৃশ্যান্তরে দেয়ালের কাঠের পাল্লার বিন্যাসও পরিবর্তন করা হয়। পুরো নাট্য ঘটনা একই সেটে উক্ত সামান্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে উপস্থাপিত হওয়ায় মঞ্চ পরিকল্পনাটি আধুনিক ব্যঞ্জনা ম-িত হয়েছে। যদিও নির্দেশনা শৈলীর ‘সেই সময়ের আবহ তৈরির চেষ্টা’র ফল হিসেবে মঞ্চ স্থাপনাটি কালিক ও স্থানিক নির্দিষ্টতা পেয়েছে। এমনকি পোশাক, রূপসজ্জা, আলো ইত্যাদি পরিকল্পনাসহ অভিনয় শৈলীতে বাস্তবানুগ রীতি অনুসৃত হয়েছে। সেটে ব্যবহৃত রঙ (কালচে পোড়া ইট রঙ) এবং অভিনয়শিল্পদের পোশাক রঙ নাট্য বিষয়ের ভাবকে যথার্থই প্রকাশ করেছে।

তবু একটি কালোত্তীর্ণ নাট্য বিষয়কে উপস্থাপনের জন্য কালিক ও স্থানিক আবহ তৈরি করা আধুনিক নাট্যশৈলীর পরিপ্রেক্ষিতে সঙ্গত কী না- এই প্রশ্নটি বোধ হয় এসেই যায়। কেননা, এক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিকতার অনুপুঙ্খ বিন্যাসের বদলে তার নাট্যিক আভাসইতো যথেষ্ট। ঘটনাা উক্ত-অনুক্ত নানা স্তর ও মাত্রাকে ইঙ্গিতপূর্ণ উপাদানের মাধ্যমে প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে মঞ্চ পরিকল্পনা আধুনিক ব্যঞ্জনা পেতে পারে।

বনপাংশুল : নাট্যশিল্পী ও দর্শকমণ্ডলীর যুগপৎ অংশগ্রহণ
ঢাকা থিয়েটার প্রযোজনা- ২৬
নাটক : সেলিম আল দীন, নির্দেশনা : নাসির উদ্দীন ইউসুফ
মঞ্চ পরিকল্পনা: কামাল পাশা চৌধুরী, নাসির উদ্দীন ইউসুফ

একতলা পূইজা দিয়েছি তোমাগরে। আমারে আশ্রয় দাও যমদূত আমারে খুন করার আগে আমার জন্মান্তর ঘটায়ে দাও।

বনবৃক্ষের কাছে এই প্রার্থনা জানায় আশি বৎসরের বৃদ্ধ গুণীন। মৃত্যু আসন্ন ভেবে যমদূতের হাত থেকে বাঁচার জন্য আজন্ম লালিত বিশ্বাসে সে জড়িয়ে ধরে বৃক্ষকে; বৃক্ষ পূজক তার মানব-শরীরকে রূপান্তর করতে চায় বৃক্ষে। বিশ্বাস ও বোধের এই অনন্য ঐশ্বর্যবহুল অজস্র চিত্রকল্প ও দৃশ্য রূপায়িত হয় ‘বনপাংশুল’ নাট্যায়তনে। বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্যময় নাট্যরীতি পাঁচালির আধুনিকায়ন হয়েছে এ নাট্যে। রচনা থেকে শুরু করে এ উপস্থাপন শৈলীর সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে আছ উক্ত স্বাতন্ত্র্যের চিহ্নসূত্র।

এই ভূ-খণ্ডের বনবাসী (বনপাংশুল) এক ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী মান্দাই। তাদের যাপিত জীবনের বহু বিচিত্র চিত্র নিয়ে, গড়ে উঠেছে ঢাকা থিয়েটারের বনপাংশুল। বৃক্ষ মাটি সূর্যের আশ্রয়ে বেড়ে ওঠা মানব গোষ্ঠীর জীবনাচার ও বর্ণিল রিচ্যুয়াল সমূহের উপস্থাপনা বা তার পরিবেশ রচনা করা মাহনগরের অতি সীমাবদ্ধ নাট্যগৃহে দুঃসাধ্য একটি কাজ। তবু শিল্পীর অপার সৃজনশীলতায় তাবৎ বাধা বিপত্তি বিলীন হতে পারে- এই বিশ্বাসের বাস্তবায়ন আমরা দেখি বনপাংশুলের মঞ্চ পরিকল্পনায়। প্রসেনিয়ামের চতুষ্কোণ ফ্রেমকে উপেক্ষা করে মহিলা সমিতির সমগ্র মিলনায়তনকেই বনপাংশুলের নাট্য পরিবেশে রূপান্তরিত করা হয়। খরখরে বাকলসহ দু’একটি বড় বৃক্ষের আদল এবং অল্পসংখ্যক হলুদাভ সবুজ পাতা নিয়ে শীর্ণ দণ্ডের বেশ ক’টি গাছের সাজেশন বিন্যস্ত থাকে পুরো আয়তনে।

দর্শক এসে বসেন গাছ গাছালির মধ্যে। এ যেনো এক কৃত্যলক্ষ্যে নাট্যশিল্পী ও দর্শকমণ্ডলীর একসঙ্গে অবস্থান নেওয়া সেই অরণ্যে। প্রসেনিয়াম মঞ্চতল থেকে মিলনায়তনের সম্মুখ প্রবেশদ্বার পর্যন্ত বিস্তৃত অভিনয় স্থান। মেঝেতে বিছানো মেটে রঙের ম্যাট। দু’পাশে সারিবদ্ধ দর্শক আসন। গাছের আদল সমূহ সারাক্ষণ স্থানু-ই থাকে না। নাট্য বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই বৃক্ষ সংখ্যা কমে যেতে থাকে। আবার কখনোবা অভিনয়শিল্পীরাই বৃক্ষ সেজে বসেন বিভিন্ন স্থানে। তৈরি হয় বিচিত্র কম্পোজিশন। নাটকে যেমন বর্ণিত হয়েছে মানুষ ও বৃক্ষের প্রাণবন্ত সম্মিলনের নানা আখ্যান। অভিনয়শিল্পীদের মাথায় পত্র পল্লবিত ‘হেড গিয়ার’ বসিয়ে তেমনি মূর্ত হয় মানুষ-বৃক্ষ রূপ। যুগপৎ মানুষ ও বৃক্ষ, অভিনয়শিল্পী মঞ্চ উপাদান।

প্রসেনিয়াম মঞ্চের সম্মুখে আছে দু’ধাপ সিঁড়ি বিশিষ্ট একটি কাঠের প্লাটফরম। এর বিপরীতেই রয়েছে আর একটি প্লাটফরম। দু’প্লাটফরমের নিকটে আছে বিভিন্ন উচ্চতায় বাঁশ দিয়ে তৈরি ঘরের আদল। লতা পাতায় জড়ানো বাঁশে টানানো থাকে লোকচিত্রময় কুলা। মঞ্চ সংলগ্ন প্লাটফরম, এর সম্মুখভাগে এবং বিপরীত প্লাটফরম জুড়ে দৃশ্যায়িত হয় বন্দনা দৃশ্য। প্রদীপ হাতে বনপাংশুলগণ অপূর্ব রেখা-রঙ ও সুরছন্দে আবাহন করে। বন্দনা শেষে সন্ধামনি হয়ে মেঘলালকে ভয় দেখায় সুকী। এ দৃশ্যে অভিনয় এলাকার মধ্যস্থানে থাকে সেই মানুষ-বৃক্ষ অর্থাৎ গজারি আর শ্যাওড়ার ঝোপ। সুকী ও মেঘলালের হাস্যরসের এ দৃশ্য শেষে মঞ্চ সংলগ্ন স্থানে গোত্র প্রধান গুণীনের পৌরহিত্যে আশ্বিনের চাঁদনী রাতে বসে দরা (মদ) ও গীতের আসর। এ আসরে নাচে আর গায় শিবের কুচুনী-বিধবা নারী সুকী। গুণীন, সুকী, মেঘালাল, রাজেন্দ্র, অনীল, সুনীল, শেতলা, মঙ্গলী, মালতী, সতীশ, কমলা অতসি-বনপাংশুলগণ এদিকটাতেই বসবাস করে।

দৃশ্যান্তরে বিপরীত প্লাটফরমে অভিনীত হয় বন বিভাগের দৃশ্য। ফরেষ্টার হাসানের কাছে আসে লুৎফর মাস্টার ও মাতাল সঙ্গীসহ রাজেন্দ্র। নৃপেণের বাড়িতে আসে বাঙালি (মান্দাই-বাঙালি দ্বন্দ্ব এ নাটকের অন্যতম প্রসঙ্গ), ফরেস্টারের পরিচ্ছদ নিয়ে পালায় লালটু বানর- সে বাঁশের সিঁড়ি বেয়ে উঠে যায় মিলনায়তনের বেলকনিতে, আবার বন (মানুষ-বৃক্ষ) মাঝে সুকীর কাছে আসে মঙ্গলী- এইভাবে একে একে নৃপেণ, নৃপেণের স্ত্রী, পশুপতি, মঙ্গলী, মালতি, সতীশ, কমলা, বিশ্বেশ্বর, ছিদাম, সোনামুখী প্রমুখ বনপাংশুল তাদের জীবনের আলো অমানিশার কথামালা পরিবেশন করে। এর মধ্যে নৃপেণের বিষপানে মৃত্যু, শবযাত্রা, মেঘলাল-মালতীর বিয়ে, ছিদাম মূর্তিকরের কালী প্রতীমার অধিষ্ঠান, রাজেন্দ্র’র গুপ্তধন সন্ধান, বাঙালিদের দ্বারা রাজেন্দ্র’র ভিটা দখল প্রতিরোধে অনিল গং, মান্দাই-বাঙালি লড়াই, সুকীর বাসনা দমনের বিষ-পিঁপড়া দংশন দৃশ্যসহ নানা দ্বন্দ্বমুখর নাট্যক্রিয়ায় অভিনয়স্থান প্রাণবন্ত থাকে।

মঞ্চ পরিকল্পনা পর্যালোচনায় প্রাসঙ্গিকভাবেই এসে যায় অন্যান্য ডিজাইন প্রসঙ্গ। এ প্রযোজনার পোশাক পরিকল্পনায় দেখা যায়- মান্দাই পুরুষের সবুজ পাড় ও কোমড় বন্ধনীসহ লুঙ্গী, গায়ে ঘিয়ে রঙের সেলাই বিহীন এক খণ্ড কাপড়, গুণীনের গায়েরটিতে রয়েছে সবুজ পাতার রেখাচিত্র (ছাপ)। মান্দাই নারীর লাল আঁচল ও পাড়ের শাড়ি, কোমড় বন্ধনী, ত্বক রঙা ব্লাউজ। সোনামুখী চরিত্রে কালো ও হালকা সবুজ পাড় শাড়ি ও সুকী’র থাকে কালো লাল পাড় শাড়ি। ফরেস্টার হাসান ও তার সহকারীদের ছাইরঙা জামা ও ট্রাউজার। বাঙালি চরিত্রে সাদার ওপর নীল চেক লুঙ্গী ও সাদার ওপর মেজেন্টা চেক চাদর।

দ্রব্যসামগ্রীতে রয়েছে লোকজ নানা মোটিফ। দরা পানের পাত্র, খন্তা কুড়াল, শিকার কাজে বাশেঁর লাঠি-ইত্যাদি নানা লোক অনুষঙ্গ।একছাড়া কালী মূর্তী, বাঘ, ঘুচিয়াল, বানর ইত্যাদি বিভিন্ন লোক বৈশিষ্ট্য রক্ষা করেই উপস্থাপিত হয়। সঙ্গীত ও আবহ তৈরিতে ব্যবহৃত হযেছে কীর্তন, চণ্ডীপাঠ, কবিগানসহ নানা লোকসুর।

সামগ্রিকভাবে উপরিউক্ত উপাদান পর্যবেক্ষণে একটি ব্যাপার প্রতীয়মান হবে যে, বনপাংশুল প্রযোজনায় ডিজাইনারবৃন্দ কোনোভাবেই রিয়ালিজমের প্রশ্রয় নেননি। লোক উপাদানের চিরকালীন আধুনিকতাই সেখানে অনুসৃত হয়েছে। সেলিম আল দীন প্রবর্তিত আধুনিক বাংলা বর্ণনাত্মক নাট্যরীতি নিরেট বাস্তবতাকে সমর্থনও করে না। ওই নাট্যদর্শন ক্রিয়া অন্য এক উৎকর্ষময় বাস্তবতার মধ্যে নাট্যজন ও দর্শকমণ্ডলীকে বন্দিত করে। তা সত্ত্বেও বনপাংশুল প্রযোজনা কিন্তু একেবারে প্রশ্নহীন থেকে যায় না। যেহেতু এটি একটি সুনির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীর সামাজিক ধর্মীয় নৃতাত্ত্বিক প্রসঙ্গনির্ভর নাট্য; তাই সঙ্গত প্রশ্ন এসে যায়- মঞ্চ পরিকল্পনা থেকে শুরু করে প্রয়োগের প্রতিটি পর্যায়ে ওই নির্দিষ্ট নৃ-গোষ্ঠীর বৈশিষ্টাবলীর কোনো ছাপ আছে কী না। তাদের (মান্দাইদের) চলন-বলন, বসন-ভূষণ, আচার-আচারণ এবং এমনকি ঘড়বাড়িসহ তাদের দৈনন্দিন জীবনাচারের কোনো আভাস এই প্রযোজনায় আছে কি? অন্তত নাট্যিক কোনো ইঙ্গিত? বোধকরি নাটক রচনার ক্ষেত্রে সংলাপে ওই জাতির কথা বৈশিষ্ট্য আরোপের জন্য লোকজ ভঙ্গি ব্যবহৃত হয়েছে। মান্দাইদের মুখের কথা, বৈশিষ্ট্য বহুল কথার ভঙ্গি, স্বর-সুরে ইত্যাদি নিশ্চয়ই আছে। ঢাকা থিয়েটারের শিল্পীবৃন্দ সংলাপ উচ্চারণে ওই মৌল উপাদানের সামান্যও কি প্রয়োগ করেছেন?

শুধু সংলাপ কেন, প্রয়োগের অন্য দিকগুলোতেও একই প্রশ্ন প্রযোজ্য। লোক উপাদান সহযোগে আধুনিক মঞ্চনকশা আমরা প্রত্যক্ষ করি-এ কথা সত্য। কিন্তু এই প্রয়োগে বিশেষত মঞ্চ পরিকল্পনায় মান্দাই জনগোষ্ঠীর বসতবাটি বা পারিপার্শ্বিকতার নাট্যিক ইঙ্গিত কি আমরা পাই? তার মানে আবার এও নয় যে, কোনো নিদিষ্ট জাতিগোষ্ঠীর জীবন উপাখ্যান নির্ভর নাট্য নির্মাণ করতে হলে সেই জাতির সামাজিক সাংস্কৃতিক নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের হুবহু উপস্থাপন করতে হবে। এ প্রসঙ্গেই বনপাংশুল এর মঞ্চ পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রশ্ন এসে যায়; গোটা অভিনয় এলাকাকে আরণ্য পরিবেশে রূপান্তরিত করা হলেও তা কি মান্দাই পল্লীর কোনো ইঙ্গিত প্রমাণ করে? বিশেষ করে প্রসেনিয়াম মঞ্চে এবং বিপরীত প্লাটফরমে বাঁশ দিয়ে তৈরি চাদঁওয়ারি (ঘরের চালার ত্রিকোণাকার অংশ) প্যাটার্নে মান্দাইদের নিজস্ব গৃহকাঠামোর ন্যূনতম আভাস কি আছে?

বনপাংশুলের নরনারীদের যে বেশভূষা (রঙরেখা) আমরা দেখি তাতে মান্দাইদের প্রকৃত জীবনছবি অনুধাবন করা সম্ভব নয়। যদিও নারী চরিত্রে ত্বক-রঙ ব্লাউজ ব্যবহার আদিবাসী মানুষের নিরাভরণ পরিচ্ছদের নাট্যিক ইঙ্গিত হিসেবেই গণ্য করা যায়। অন্যান্য ডিজাইনে লোকরীতির অত্যাধুনিক নানা প্রয়োগ লক্ষ্য করা গেলেও এ প্রযোজনার আলোকে পরিকল্পনাতে প্রযুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক নানা কৃৎ-কৌশল। নাট্য বিষয়ে গতি প্রকৃতি সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এবং চরিত্রসমূহ মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা অনুসারে আলোর রঙ পরিবর্তন ও প্রক্ষেপন করা হয়েছে। নাটক শুরুর পূর্বে মঞ্চে তানপুরা রাখা এবং মধ্যপর্যায়ে কোচ বৃত্তান্ত গীত আসরে হারমোনিয়ামের ব্যবহার কি মান্দাই নৃতত্ত্ব সমর্থন করে? না কি তা মৌল উপাদানের সঙ্গে সম্পৃক্তিবিহীন নাগরিক প্রয়াস মাত্র! এক্ষেত্রেও সেই একই কথা-বাস্তব উপাদানের হুবহু উপস্থাপন আমরা আশা করি না; আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্রের নানা উপকরণের কোনো না কোনো নমুনা বা নিদেনপক্ষে সঙ্গতিপূর্ণ উদ্ভাবিত কোনো বাদ্যতো ব্যবহার করা যেতো।

এ ডলস হাউস : সমকালীন শিল্প বিবেচনা
প্রযোজনা : নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নাটক : হেনরিক ইবসেন। আনুবাদ : খায়রুল আলম সবুজ, নিদের্শনা : ইসরাফিল শাহীন
মঞ্চ পরিকল্পনা : ফয়েজ জহির ও কামালউদ্দিন কবির

বাস্তববাদী ঘরানার নাটক ‘এ ডলস হাউস’। নাট্যকলা বিষয়ের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষাথীদের ক্লাসরুম প্রযোজনা ছিলো এটি। ফলে অভিনয় থেকে শুরু করে প্রযোজনার প্রতিটি পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে বাস্তবানুগ রীতির প্রতি অনুগত থাকতে হয়েছিল। তবে সে ক্ষেত্রে (মঞ্চ পরিকল্পনাতে তো অবশ্যই) সামগ্রিকভাবে প্রযোজনা শৈলীতে সমকালীনতা বা আধুনিকতার প্রসঙ্গটি ছিল প্রধান বিবেচ্য।

ঊনিশ শতকের মধ্য সময়ে ফরাসী সাহিত্য ও চিত্রকলায় বাস্তববাদী ধারার প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়। প্রায় একই সময়ে নাট্যশিল্পেও তা অনিবার্য হয়ে উঠলো। তখন নাটক রচনার ক্ষেত্রে এরকম ধারণা তৈরি হলো যে, নাট্যকারের উচিত তার চারপাশের জগত ও জীবনের সত্যকার নাট্যচিত্র তুলে ধরা, যে জগত জীবনকে তিনি পঞ্চইন্দ্রিয় দ্বারা পর্যাবেক্ষণ ও নিরীক্ষণের মাধ্যমে দেখেন ও জানেন; তার উচিত সর্বতোভাবে বাস্তববাদী হওয়া’ (জিয়া হায়দার, নাট্যকলার বিভিন্ন ইজম ও এপিক থিয়েটার, বাংলা একাডেমি, ঢাকা। পৃঃ ৫) নরওয়ের হেনরিক ইবসেন (১৮২৮-১৯০৬) সামাজিক সমস্যার বাস্তবাদী রূপায়ণে বিশেষ করে বিষয়বস্তু ও ভাবনার সাহসী উপস্থাপনায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁর অনন্য সাধারণ ক্ষমতায় নম্র, অনুগত নোরা’র পারিবারিক মিথ্যার খোলস ভেঙ্গে বেরিয়ে আসার দ্রোহী ভঙ্গিটি আধুনিকতার প্রতীকে রূপান্তরিত হয়।

নাট্যচর্চায় বাস্তববাদী যখন বিকাশ লাভ করেছিল, তখন প্রায় একসঙ্গে আরেকটি শিল্প আন্দোলন-ন্যাচারালিজম-এর উদ্ভব ঘটে। এই রীতির দৃশ্য পরিকল্পনায় অতিরিক্ত ‘ডিটেল’ অর্থাৎ ফটোগ্রাফিক উপস্থাপনা লক্ষ্য করা যায়। অপরপক্ষে রিয়ালিজম বা বাস্তববাদে অপ্রয়োজনীয় ডিটেল-এর প্রাধান্য নেই। এর ফলে পরবর্তী সময়ে মঞ্চ পরিকল্পনায় ‘সিলেকটিভ’বা simplified realism অভিধাটি যুক্ত হয়েছে।

তিন অঙ্ক বিশিষ্ট ‘এ ডলস হাউস’ (নোরা) পাণ্ডুলিপিতে মঞ্চে পরিবেশ নির্মাণের যে নির্দেশনা রয়েছে তা সংক্ষেপে নিম্নরূপ:
বেশ খোলামেলা আরামদায়ক একটি ঘর। পেছনের দেয়ালে দু’টি দরজা। ডান দিকের দরজা দিয়ে হলঘরের দিকে আর বাঁদিকের দরজা দিয়ে হেলমারের পড়ার ঘরের দিকে যাওয়া যায়। দু’টো দরজার মাঝখানে দেয়াল ঠেসে একটি পিয়ানো। বাঁ দিকের দেয়ালের মাঝ বরাবর অন্য একটি দরজা। দরজার কাছাকাছি জানালা আছে। জালানার কাছে একটি গোল টেবিল, হাতল চেয়ার ও ছোট্ট একটি সোফা। ডান দিকের দেয়ালে প্রায় পিছনের দিকে একটি দরজা। একটু দূরে দেয়ালের গায়ে লাগোয়া স্টোভ। স্টোভের সামনে দু’একটা ইজি চেয়ার ও দোলনা চেয়ার। দরজা এবং স্টোভের মাঝখানে ছোট একটি টেবিল। আসবাব পত্র সেরকম দামি নয়, তবে রুচিশীল। দেয়ালে কিছু খোদাই কাজের নিদর্শন। চিনা কারুকাজ করা একটি কেবিনেট এবং আরো কিছু আনুষঙ্গিক টুকিটাকি। একটি ছোট বই শেলফ। শেলফে চমৎকার বাঁধানো কিছু বই। মেঝেতে গালিচা।

এই এতোসব বাস্তব উপাদান স্থাপনের মাধ্যমে মঞ্চকে ভারাক্রান্ত করার যুগ বেশ আগেই গত হয়েছে। এখন বরং ন্যূনতম উপাদান সহযোগে নাট্যক্রিয়া সম্পাদনই  মুখ্য বিষয়। ‘অপ্রয়োজনীয় ডিটেল’ এখনকার নাট্যপ্রয়োগ ধারাতে কেবল বাহুল্যই নয়, শিল্পর্থের পরিপন্থীও-বটে। বাস্তবের প্রতিরূপ নির্মাণে একদিকে দর্শকের দর্শন ব্যপারটি যেমন স্থির ও সীমাবদ্ধ হয়ে যায়, অন্যদিকে স্বাভাবিকভাবেই কল্পনা বা অনুভবের দিকটি রুদ্ধ হয়ে যায়। যেহেতু ‘নোরা’র পারিবারিক মিথ্যার খোলস ভেঙ্গে বেরিয়ে আসা’ প্রসঙ্গটি অর্থ্যাৎ মানুষ নোরা-এ নাটকের মূল প্রসঙ্গ তাই স্থান পরিবেশের সুচারু স্থাপনা ব্যাপারটি সেক্ষেত্রে নিতান্তই অনাবশ্যক। চরিত্রসমূহের নাট্যক্রিয়া সম্পাদনের জন্য যে সমস্ত দ্রব্য সামগ্রী বা উপাদান জরুরি প্রযোজন, ‘এ ডলস হাউস’ প্রযোজনার ‘সেটে’ কেবল তা-ই উপস্থাপিত হয়েছে।

অর্থাৎ পাণ্ডুলিপিতে উল্লিখিত পরিবেশ সামগ্রীর বিস্তারিত বর্ণনার মধ্য থেকে ‘সরল বাস্তব’ উপাদানের সমাহারে সম্পন্ন হয়েছে এ নাটকের মঞ্চ পরিকল্পনা। ‘একটি গোল টেবিল, দু’টো হাতল চেয়ার, স্টোভের সামনে একটি দোলনা চেয়ার, একটি ডিভান, ছোট্ট বই শেলফ, শেলফে বাঁধানো কিছু বই, একটি লং প্লে রেকর্ডার, ফুলের টব’-এই সব মিলিয়ে ‘বেশ খোলামেলা আরামদায়ক ঘর’। সমগ্র ডিজাইনে দেয়াল-দরজা-জানালার কোনো বালাই নেই।

নাট্যমণ্ডলে ( নাট্যকলা বিভাগের নিজস্ব নাট্যগৃহ ) ডলস হাউস প্রযোজনার শুরুতেই দেখা যায় দর্শক আসনের ডান দিক থেকে নোরা নিজ ঘরের (মঞ্চের) বাইরে দাঁড় করানো লোহার স্টেন্ডে ঘন্টি বাজায়। উইংস থেকে আয়া বেরিয়ে, সেই অদৃশ্য দরজা সম্মুখে এসে নোরা’র সঙ্গের কুলিটির হাত থেকে ক্রিসমাস ট্টি ও ঝুরিটি নিয়ে নেয়। ঘন্টি স্ট্যান্ড থেকে সামান্য সম্মুখে এগুলেই মঞ্চের প্রান্তে মিলনায়তনের দেয়াল (প্রসেনিয়াম আর্চ সদৃশ) ঘেঁষে রয়েছে ছোট স্ট্যন্ড সহ চিঠির বাক্স। এটিও লোহার তৈরি। আসবাব সামগ্রীগুলো মঞ্চে এমনভাবে বিন্যস্ত থাকে যেনো মঞ্চের তিন দিকে ‘অদৃশ্য হয়ে যায়। যেমন, প্রথম অঙ্কে নোরা ও মিসেস লিন্ডে‘র কথোপকথনের সময় বাইরে থেকে (অর্থাৎ দর্শক আসনের ডান দিক থেকে) ড. র‌্যাংক প্রবেশ করে ও স্টোভ ও বই শেলফের পেছন দিয়ে গমন করাতে উক্ত দেয়াল (দর্শক কল্পনায়) প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রযোজনাটির অভিনয় ও নির্দেশনার একটি দিক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, তা হলো অভিনয়শিল্পীরা স্বতঃস্ফূর্ত নাট্যক্রিয়া (অভিনয়) উপস্থাপন করেছেন। তা কেবল যথার্থ সংলাপ প্রক্ষেপনেই নয়, শরীরের সঞ্চালন ও প্রকাশভঙ্গিকে প্রকৃত অর্থেই তারা কাজে লাগিয়েছেন। শিল্পীরা অভিনয়স্থানের সচেতন ব্যবহার করেছেন। ওয়াহিদা মল্লিক জলি পরিকল্পিত পোশাক-পরিচ্ছেদে স্কান্ডেনেভিয়ান পোশাকশৈলীর আভাস যেমন ছিল তেমন রঙ (কফি রঙ), পোশাক ও সর্বোপরি আলোর পরিশীলিত প্রয়োগে সৃষ্টি হয়েছিলো নানা তাৎপর্যপূর্ণ কম্পোজিশন।

বুনোহাঁস : ফটোগ্রাফিক দৃশ্যসজ্জা
প্রযোজনা : সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটার, ঢাকা
নাটক : হেনরিক ইবসেন, রূপান্তর : খারুল আলম সবুজ, নির্দেশনা : এম. কে. রায়না
মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনা : কামরুজ্জামান রুনু

সেট ডিজাইন সংক্রান্ত এক লেখায় (থিয়েটারওয়ালা, এপ্রিল-জুন ১৯৯৯ সংখ্যা) উল্লেখ করেছিলাম যে, অর্থ ও তাৎপর্যের দিকে লক্ষ্য রাখলে ‘সেট ডিজাইন’ এর বাংলা পরিভাষায় ‘সজ্জা’ শব্দটি যথোপযুক্ত নয়। আধুনিক ধারণা ও প্রয়োগ মতে ‘সেট ডিজাইন’ প্রসঙ্গটি সজ্জা বা সাজানোর ব্যাপার নয়; এর পিছনে ক্রিয়াশীল থাকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং তা সম্পন্ন করতে প্রয়োজন হয় সুনির্দিষ্ট নান্দনিক প্রক্রিয়া। বলা বহুল্য, স্থান ও কালান্তরে সেট ডিজাইন ধারণাটিও নানাভাবে বিবর্তিত হয়ে চলছে। যে নির্দিষ্ট পরিপ্রেক্ষিতে, বা বলা যায়, নাট্যশিল্প বিকাশের যে পর্যায়ে নাট্যবিষয়ে (content) ও উপস্থাপনে (performance) বাস্তববাদী রীতি পদ্ধতির উদ্ভব হয়েছিল,বর্তমানকার শিল্প ভাবনা বা চর্চার পরিপ্রেক্ষিত তার চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা।

আমরা জানি, বাস্তববাদী নাটকে বিষয়গত ও প্রকারগত বিপ্লবের পরিপূরক হিসেবে সেট ডিজাইনের ক্ষেত্রেও কিছু বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছিলো। নাটকে বর্ণিত পরিবেশ যেমনটা হওয়ার কথা ঠিক তেমটিই করার দিকে গুরুত্ব আরোপকারী প্রয়োগশিল্পী ছিলেন আদ্রেঁ আঁতোয়া (১৮৫৮-১৯৪৩০)। মঞ্চে অভ্রান্ত ও পূর্ণ অনুকৃতিতে অর্থাৎ জানালা, দরজা, আসবাবপত্রের ডিটেলে তিনি ছিলেন যত্নবান। স্তানিস্লাভস্কিও ( ১৮৬৫-১৯৩৮) আঁতোয়ার মতোই মঞ্চকে করে তুলেছিলেন বাস্তবানুগ। আবার প্রায় সমকালেই মায়ারহোল্ড ( ১৮৭৪-১৯৪২) মঞ্চ পরিকল্পনায় এনেছিলেন ব্যাপক মৌলিক পরিবর্তন। ‘আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রকৌশল যে কৃত্রিম বিশ্ব তৈরি করেছে ..., বিশেষ করে স্থাপত্য ও ভাস্কর্য থেকে উপকরণ ও উপমা সংগ্রহ করে তিনি সেট ডিজাইনে আগ্রহী ছিলেন, (আলী আনোয়ার, আধুনিক নাটক, বাংলা একাডেমী, ঢাকা ১৯৮৫, পৃ: ৬৭)।

এরপর সময় যত গড়িয়েছে, শিল্প চিন্তা-শিল্পশৈলী নানা রূপ-রূপান্তরের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে। বিভিন্ন শিল্প মতবাদ শিল্পাঙ্গনকে যেমন আন্দোলিত করেছে, তেমনি নাট্যচর্চাতেও তার  প্রভাব পড়েছে। চিত্রকলার নানা বৈপ্লবিক বিচিত্র সৃষ্টি প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই নাট্য প্রযোজনায় বিশেষত সেট ডিজাইনে বৈচিত্র্যপূর্ণ অবদান রেখে এসেছে।

বুনোহাঁস রচনাকাল ১৮৮৪ সাল। আলোচ্য প্রযোজনাটি তৈরি হয়েছে ১৯৯৯ এ। এ নাটকে (পাণ্ডুলিপিতে) বাস্তব পরিবেশ পরিমণ্ডলের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। মঞ্চে আমরা উক্ত বর্ণনার পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রয়োগই লক্ষ্য করি। কেবল রূপান্তরের কারণে- ঘর, আসবাবপত্র, দ্রব্যসামগ্রী ইত্যাদির গঠনকাঠামো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটকে স্পষ্ট করেছে।

মঞ্চ পরিকল্পক বলেছেন, ‘একই ড্রইংরুম সংলগ্ন ভিন্ন পরিবেশের দু’টি কক্ষ, এরপর চিলেকোঠা, স্টুডিও, নানা দিকের দরজা-বিষয়গুলো যতটা সহজে ভাবা যায়, বাস্তববাদী নাটক বিশেষ করে ইবসেনের নাটকের ক্ষেত্রে ততটা সহজ নয়। কঠিন বাস্তবতার মূল সুরটি সেটের মধ্য দিয়ে আসবে কিনা এটাই ছিল মূল কথা।’ (বুনোহাঁস প্রযোজনা স্যুভেনির)। ব্যক্তি স্বাধীনতা ও আত্ম-মুক্তির উপায় সম্পর্কিত প্রতীকী এ নাটকের নাট্যক্রিয়াসমূহ সম্পাদনের জন্য মঞ্চে বাস্তব উপাদানের ব্যাপক সমাহার আমরা প্রত্যক্ষ করি। যেমন : ... অত্যাধুনিক বাড়ি, ভেতরে জাঁকজমকপূর্ণ অংশ, দোতলার করিডোর, দোতলা থেকে নেমে আসা সিঁড়ি, বেতের তৈরি সোফা-টেবিল, বই শেলফসহ ঘরের মস্ত দরজা-জানালা ইত্যাদি। অর্থাৎ সত্যকার কোনো ‘ইশতিয়াক চৌধুরী’র বাড়ির কিছু অংশই যেনো তুলে আনা হয়েছে নাট্যমঞ্চে। সেট নির্মাণের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে প্লাই-উড, কাঠ ও বেত। পুরো ঘরের দেয়াল ও অন্যান্য সলিড অংশে স্মোক রঙ ও বেতের স্থানে ন্যাচারাল রঙ রাখা হয়েছে। সমস্ত স্থাপনাতে ডিটেল-এর কোনো কমতি নেই। সব মিলিয়ে বুনোহাঁস-এর মঞ্চ পরিকল্পনাতে ফটোগ্রাফিক ব্যঞ্জনাই মুখ্য হয়ে উঠেছে।

মঞ্চ পরিকল্পনা ও পোশাক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সর্বতোভাবে বাস্তবের অনুগামী থাকলেও আলোক পরিকল্পনায় একাধিক দৃশ্যে ‘মুড লাইট’ প্রক্ষেপন করা হয়েছে। চরিত্রের মনস্তাত্বিক অবস্থাকে নির্ভর করে আলোর বিশেষ সোর্স এবং রঙ ব্যবহৃত হয়েছে। আলোক পরিকল্পনার এই ভিন্নতর ব্যঞ্জনাকে অবশ্যই আধুনিক নাট্যশিল্পশর্তের প্রয়োগ বলে বিবেচনা করা যায়। আধুনিক প্রযোজনা নির্মাণে সময় ও স্থানের হুবহু উপস্থাপনের বদলে সময় ও পারিপার্শ্বিকতার বিশ্লেষণই তো প্রয়োজন। তাছাড়া বাস্তবানুগ নাট্য বিষয়ের উপস্থাপন মানে তো হুবহু অনুকরণ বা উপস্থাপন নয়। বরং সেই বাস্তব অভিজ্ঞতার নানা স্তর, না বলা কথা ইত্যাদি বিচিত্র মাত্রাকে পরিস্ফূট করে দর্শকের কল্পনাকে চাড়িয়ে দেয়াইতো মুখ্য হওয়া উচিত। এতে করে বাস্তবের অন্তর্নিহিত সত্য এবং অনুভূতিরাজি মূর্ত হয়ে উঠতে পারে।

সামগ্রীকভাবে এই বাস্তবানুগ মঞ্চব্যবস্থাপনা সঙ্গতই কিছু প্রশ্নে জন্ম দেয়: এক. বিংশ শতাব্দীর শেষ লগ্নে এসে আধুনিক নাট্যশিল্পীদের সেট ডিজাইনে এতো নিরেট বাস্তবতা কেনো? দুই, ‘বাস্তববাদী উপস্থাপনার ক্ষেত্রে’ শিল্পচিন্তার সমকালীনতা কি থাকতে নেই? তিন, দেশের সার্বিক নাট্যচর্চার পরিপ্রেক্ষিতে বুনোহাঁসের মতো বিশাল (প্রায় দুই লাখ টাকা!) খরচের সেট-এর যৌক্তিকতা কতটুকু?

কামালউদ্দিন কবির : নাট্য নির্দেশক, সাংবাদিক- ভোরের কাগজ