Full premium theme for CMS
গত ২০ বছরে আমাদের থিয়েটার : রচনা-নির্দেশনায় উত্তর-প্রজন্ম
Блогът Web EKM Blog очаквайте скоро..

নির্দ্বিধায় বলা যায়, গত ২০/২২ বছরে ঢাকা তথা বাংলাদেশের নাট্যচর্চায় নতুন একটি প্রজন্ম, যাকে উত্তর-প্রজন্ম হিসেবে চিহ্নিত করা যায়- আত্মপ্রকাশ ও বিকাশের পর প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। বাংলাদেশে নিয়মিতমঞ্চনাট্যচর্চা যাঁদের হাত ধরে শুরু- উল্লেখিত ‘উত্তর-প্রজন্ম’ ঠিক তার পরের নাট্যজনেরা। তারা তাদের কাজ দিয়েই দৃশ্যমান ও বিকাশমান। বর্তমানে এরাই বাংলাদেশের নাট্যচর্চাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। এই উত্তর-প্রজন্মের যারা ইতোমধ্যে নাটক রচনা ও নির্দেশনায় উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন, উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছেন, তাদের সনাক্তযোগ্য কিছু প্রযোজনা ও পাণ্ডুলিপির নাম উল্লেখ করা এবং কোথায় কোন নাট্যদলের প্রযোজনায় সেগুলো মঞ্চে বা দর্শকসমুখে এসেছে তার খোঁজ-খবর নেয়াই বক্ষমান লেখার মূল উদ্দেশ্য। মনে রাখা দরকার- এ প্রয়াস মূলত গত ২০/২২ বছরের থিয়েটারচর্চাকেন্দ্রিক এবং তা কেবল নাট্যকার ও নির্দেশকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
তার আগে- প্রথম প্রজন্ম, যাঁরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধপরবর্তীকালে নাট্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন, এবং এই দেশের নাটককে নিয়মিত একটি চর্চায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন, একটি নতুন মাত্রায় উন্নীত করেছেন- তাঁদেরকে স্মরণ করা যাক। সেই প্রথম ও তৎসংলগ্ন প্রজন্ম যাঁরা রচনা ও নির্দেশনায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন (সেই প্রবীণদের অনেকে গত হয়েছেন, নিষ্ক্রিয় হয়েছেন কেউ কেউ, কেউ আবার আধাসক্রিয়, আবার অনেকে এখনো নিয়মিত ও সমান সক্রিয় আছেন), সেই নাট্যকার ও নির্দেশকদের উল্লেখযোগ্য ক’জনার নাম নেয়া যাক। তাঁরা হলেন- মামুনুর রশীদ, সেলিম আল দীন, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, আবদুল্লাহ আল-মামুন, সৈয়দ শামসুল হক, আতাউর রহমান, সৈয়দ জামিল আহমেদ, কামালউদ্দিন নীলু, সাঈদ আহমদ, আলী যাকের, আসাদুজ্জামান নূর, মমতাজউদদীন আহমদ, মান্নান হীরা, এস এম সোলায়মান, তারিক আনাম খান, আহমেদ ইকবাল হায়দার, শিশির দত্ত, লিয়াকত আলী লাকী, আব্দুস সেলিম, খায়রুল আলম সবুজ, আব্দুল্লাহেল মাহমুদ, সাজেদুল আউয়াল, খালেদ খান প্রমুখ। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ কেবলই নাট্যকার কিংবা অনুবাদক, কেউ আবার কেবলই নির্দেশক, আবার কেউবা নাট্যকার-নির্দেশক দুই-ই।
উত্তর-প্রজন্মের বেলায়ও একই রকম- অর্থাৎ কেউ কেউ কেবলই নাটক রচনায় বা অনুবাদে নিয়োজিত, কেউ শুধুই নির্দেশনায়, আবার অনেকে দুইক্ষেত্রেই বিরাজমান। সেই পরবর্তী প্রজন্মের তত্ত্ব-তালাশ করা যাক, দেখা যাক গত ২০/২২ বছরে কে কোথায় কীসব ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে।
আজাদ আবুল কালাম ‘প্রাচ্যনাট’-এ নির্দেশনা দিয়েছেন ‘সার্কাস সার্কাস’, ‘এ ম্যান ফর অল সিজনস’, ‘কইন্যা’, ‘রাজা এবং অন্যান্য...’। এর মধ্যে সার্কাস সার্কাস তারই রচিত, রবার্ট বোল্টের এ ম্যান ফর অল সিজনস অনুবাদ করেছেন শাহেদ ইকবাল, কইন্যা রচনা করেছেন মুরাদ খান। রাজা এবং অন্যান্য... নাটকটি মঞ্চে এনেছেন রবীন্দ্রনাটক ‘রাজা’ অবলম্বনে । প্রাচ্যনাট প্রযোজনা ‘কিনুু কাহারের থেটার’ ও ‘গণ্ডার’ নির্দেশনা দিয়েছেন তৌফিকুল ইসলাম ইমন। ইউজিন আয়োনেস্কোর গণ্ডার (‘দ্য রাইনোস’) অনুবাদ করেছেন জহুরুল হক। এই দলের আরেকটি নাটক ইউজিন ও’নিলের ‘বনমানুষ’ (দ্য হেয়ারি এপ)- নির্দেশনা দিয়েছেন বাকার বকুল। বাকার বকুল রচিত দুটি নাটক ‘মুল্লুক’ ও ‘ঊর্ণাজাল’ও মঞ্চে এসেছে। বাকার বকুলেরই নির্দেশনায় মুল্লুক প্রযোজনা করেছে ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি’ আর ‘ঊর্ণাজাল’ মঞ্চে আনে ‘বাতিঘর’।
প্রাচ্যনাটের বাইরেও আজাদ আবুল কালামের নির্দেশনা আছে। ‘উদীচী’র ‘বৌবসন্তী’ ও ‘হাফ আখড়াই’ তারই নির্দেশিত নাটক; নাটক দুটির রচয়িতা রতন সিদ্দিকী। রতন সিদ্দিকীর আরও একটি নাটক মঞ্চে এসেছে- ‘চিলেকোঠার সেপাই’, যেটি আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের উপন্যাসের নাট্যরূপ। এটিও উদীচীর প্রযোজনা, এটি নির্দেশনা দিয়েছেন কামালউদ্দিন কবির। ‘জন্মসূত্র’ থেকেও কামালউদ্দিন কবিরের নির্দেশনায় একটি নাটক মঞ্চে এসেছে, ‘অহরকণ্ডল’ নামের এই নাটকটি রচনা করেছেন বদরুজ্জামান আলমগীর। বদরুজ্জামান আলমগীরের আরও দুটি রচনা- ‘নননপুরের মেলায় একজন কমলাসুন্দরী ও একটি বাঘ আসে’, ‘জুজুবুড়ি’- ইত্যাদি।
ফয়েজ জহিরের নির্দেশনায় ‘বিবর্তন যশোর’ মঞ্চে আনে ‘কৈবর্তগাথা’। আলোচ্য সময়কালে অর্থাৎ গত ২০/২২ বছরে ফয়েজ জহির আরও নির্দেশনা দিয়েছেন রেপাটরি সংগঠন ‘বাঙলা থিয়েটার’-এর ‘চে’র সাইকেল’, ‘সুবচন নাট্য সংসদ’-এর ‘তীর্থঙ্কর’। তীর্থঙ্কর রচনা করেছেন সামিনা লুৎফা নিত্রা। সামিনা লুৎফা নিত্রার ‘খনা’ মঞ্চে এনেছে সুবচন নাট্য সংসদ ও বটতলা। ‘বটতলা’র আরো দু’টি নাটক- মুহাম্মদ বেন আবদাল্লা’র ‘দ্য ট্রায়াল অব মাল্লাম ইলিয়া’- যেটি অনুবাদ করেছেন সৌম্য সরকার; এবং শাহাদুজ্জামানের উপন্যাস ‘ক্রাচের কর্নেল’ যেটির নাট্যরূপ দিয়েছেন যৌথভাবে সৌম্য সরকার ও সামিনা লুৎফা নিত্রা। এই নাটক ৩টি (খনা, দ্য ট্রায়াল অব মাল্লাম ইলিয়া, ক্রাচের কর্নেল) নির্দেশনা দিয়েছেন মোহাম্মদ আলী হায়দার। সুবচন নাট্য সংসদ মঞ্চে আরো এনেছে নাসরিন জাহানের ‘রূপবতী’। নাসরিন জাহানের আরেকটি নাটক ‘স্বপ্নবাজ’ যেটি ‘নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়’-এর প্রযোজনা ।
‘মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়’ প্রযোজনা ‘অহম তমশায়’ নাটকটিও আজাদ আবুল কালাম নির্দেশিত। এটির রচয়িতা আনন জামান। আনন জামানের আরও কিছু নাটক উল্লেখযোগ্য- ‘শিখণ্ডী কথা’, ‘নীলাখ্যান’, ‘শ্রাবণ ট্র্যাজেডি’, ‘নিশিমন বিসর্জন’। আনন জামানের এই নাটকগুলোও মঞ্চস্থ করেছে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়। এর মধ্যে শিখণ্ডী কথা নির্দেশনা দিয়েছেন রশীদ হারুন, নিশিমন বিসর্জন ও শ্রাবণ ট্র্যাজেডি নির্দেশনা দিয়েছেন আশিকুর রহমান লিয়ন আর ‘নীলাখ্যান’-এর নির্দেশক ইউসুফ হাসান অর্ক। ইউসুফ হাসান অর্ক আরো নির্দেশনা দিয়েছেন শুভাশিস সিনহা রচিত ‘ডালিমকুমার’- যেটি ‘নাট্যকেন্দ্র’র প্রযোজনা। বিবর্তন যশোর নাট্যদলের ‘মাতব্রিং’ ও ‘ব্রাত্য আমি মন্ত্রহীন’ নাটক দুটির নির্দেশকও ইউসুফ হাসান অর্ক, আর এ দুটি নাটকেরই নাটককার সাধনা আহমেদ। সাধনা আহমেদ রচিত আরো একটি নাটক ‘দমের মাদার’।
আজাদ আবুল কালাম ‘থিয়েটারওয়ালা রেপাটরি’র নাটক ‘শাইলক এন্ড সিকোফ্যান্টস’-এরও নির্দেশক। শাহযাদ ফিরদাউসের উপন্যাস ‘শাইলকের বাণিজ্য বিস্তার’ অবলম্বনে শাইলক এন্ড সিকোফ্যান্টস রচনা করেছেন হাসান শাহরিয়ার। হাসান শাহরিয়ারের অন্যান্য নাটক ‘চন্দ্রালোকে মনময়ূরী’, ‘বুদ্ধির ঢেঁকি’। চন্দ্রালোকে মনময়ূরী অসিত দাস পুলকের নির্দেশনায় মঞ্চে আনে চট্টগ্রামের ‘উত্তরাধিকার’। বুদ্ধির ঢেঁকি নাটকটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জুতা আবিষ্কার’ কবিতা অবলম্বনে রচিত- যেটি ‘মগজ সমাচার’ নামে ‘থিয়েটার আর্ট ইউনিট’ মঞ্চস্থ করেছে, যার নির্দেশক সাইফ সুমন। সাইফ সুমন এই দলে আরও একটি নাটক নির্দেশনা দিয়েছেন- ‘না-মানুষি জমিন’, আনিসুল হকের এই উপন্যাসের নাট্যরূপ তিনিই দিয়েছেন।
থিয়েটার আর্ট ইউনিটের ‘সময়ের প্রয়োজনে’, ‘শেষের কবিতা’ ও ‘অনুদ্ধারণীয়’ নাটক ৩টির নির্দেশক মোহাম্মদ বারী। জহির রায়হানের ছোটগল্প সময়ের প্রয়োজনে ও বুদ্ধদেব বসুর ছোটগল্প অনুদ্ধারণীয়’র নাট্যরূপ দিয়েছেন তিনি নিজে। আর রবীন্দ্র-উপন্যাস শেষের কবিতার নাট্যরূপ দিয়েছেন প্রশান্ত হালদার। থিয়েটার আর্ট ইউনিটের ‘মর্ষকাম’ এর রচয়িতা আনিকা মাহিন একা, এই নাট্যকারের আরেকটি নাটক ‘ম্যাকাব্রে’ মঞ্চস্থ করেছে সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটার (সিএটি)।
‘বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলি’, ‘তাইরালির বুকে মিজু মুন্সীর পাও’, ‘প্রজেক্ট হান্ড্রেড প্লাস’- নাটক ৩টির নাট্যকার ও নির্দেশক আমিনুর রহমান মুকুল। নাকটগুলো মঞ্চে আনে ‘পালাকার’। হেরিন ম্যাককেল রচিত এবং আমিন ও আদনান রূপান্তরিত ‘নোরার তিন কন্যা’, গোলাম শফিক রচিত ‘মানগুলা’, আর ‘কালবেলা’ নাটকের নির্দেশকও আমিনুর রহমান মুকুল। গোলাম শফিকের আরও দুটি নাটক উল্লেখ করা যায়- ‘বাইচাল’ ও ‘ভূমধ্যসাগার’। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘উজানে মৃত্যু’ মঞ্চে আনে পালাকার। এর নির্দেশনা দিয়েছেন শামীম সাগর। শামীম সাগর আরো নির্দেশনা দিয়েছেন ‘চন্দ্রাবতী কথা’, নাটককার আসলাম আলী, এটি মঞ্চস্থ করেছে কুষ্টিয়ার ‘বোধন থিয়েটার’। জেলা শিল্পকলা একাডেমি, কুষ্টিয়া মঞ্চে আনে শামীম সাগর নির্দেশিত ‘চিয়ারি’। নাটকটি আনিসুল হকের উপন্যাস ‘চিয়ারি ও বুদুরাও কেন গ্রাম ছেড়েছিল’র নাট্যরূপ, নাট্যরূপ দিয়েছেন শামীম সাগর নিজেই। তার রচিত আরো একটি নাটক ‘শ্বেত রাক্ষস ও কালো পোকার গল্প’।
আমিনুর রহমান মুকুল রচিত ‘সাম্পান নাইয়া’ মঞ্চে এনেছে চট্টগ্রামের উত্তরাধিকার- যার নির্দেশনা দিয়েছেন মোসলেম উদ্দিন সিকদার। এই নির্দেশকের আরেকটি নাটক ‘কানার হাটবাজার’ যেটির নাট্যকার মোকাদ্দেম মোরশেদ। ‘কানার হাটবাজার’ মঞ্চস্থ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমি, চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের নাট্যসংগঠন ‘ফেইম স্কুল অব ডান্স, ড্রামা অ্যান্ড মিউজিক’ মঞ্চে আনে আলবেয়ার কাম্যু’র ‘ক্যালিগুলা’- এটির রূপান্তর ও নির্দেশনা দিয়েছেন অসীম দাশ। ফেইমের নাটক ‘গ্রিক ট্রিলজি’- সেটিরও নির্দেশনায় অসীম দাশ। তার আরো একটি রূপান্তর ও নির্দেশনা ‘কমরেডস হাত নামান’- এটি করেছে চট্টগ্রামের ‘গণায়ন নাট্য সম্প্রদায়’।
ফয়েজ জহির রাজশাহীর ‘অনুশীলন নাট্যদলে’র ‘বহে প্রান্তজন’ নাটকটি নির্দেশনা দেন যার রচয়িতা মলয় ভৌমিক। এছাড়াও মলয় ভৌমিকের রচনা ও নির্দেশনায় অনুশীলন নাট্যদল মঞ্চে আনে ‘ম্যাও সংকেত্তন’, ‘ভূমিকন্যা’।
সাইমন জাকারিয়ার লেখা নাটক ‘বিনোদিনী’ করেছে ‘ঢাকা থিয়েটার’। নাটকটি নটী বিনোদিনীর আত্মজীবনী থেকে নেয়া। ঢাকা থিয়েটার থেকে তাঁর আরেকটি নাটক হয়েছে ‘ন-নৈরামণি’ যেটির নির্দেশনায় ছিলেন সাইদুর রহমান লিপন। সাইমন জাকারিয়ার আরো দু’টি নাটক নির্দেশনা দিয়েছেন সাইদুর রহমান লিপন- বরিশালের ‘শব্দাবলী গ্রুপ থিয়েটার’ এর ‘এ নিউ টেস্টামেন্ট অব রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’ আর কুষ্টিয়ার ‘বোধন থিয়েটার’ এর ‘শুরু করি ভূমির নামে’। শব্দাবলীর আরেক প্রযোজনা ‘ফণা’র নাট্যকার শাহমান মৈশান ও নির্দেশক সুদীপ চক্রবর্তী। এই নাট্যকার ও নির্দেশক যৌথভাবে কাজ করেছেন ‘থিয়েট্রেক্স’-এর ‘দক্ষিণা সুন্দরী’ নাটকে। শাহমান মৈশান মূলত নাট্যকার হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এন্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের ছাত্রদের নিয়ে ‘প্রকৃতি চিত্রা ও অমলের চাড়ালনামা’ নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন। এই বিভাগ থেকে আরো কিছু নাটকের নাম উল্লেখ করতে হয় যেগুলোর নির্দেশক ইসরাফিল শাহীন। ইসরাফিল শাহীন নির্দেশিত নাটক ‘থ্রি সিস্টার্স’, ‘টোবাটেক সিং’, ‘ম্যাকবেথ’। একই বিভাগে সুদীপ চক্রবর্তীর নির্দেশনায় এসেছে ‘চাকা’। সুদীপ চক্রবর্তী বাইরের আরো অনেক দলে নির্দেশনা দিয়েছেন- ‘শূন্যন’ রেপাটরিতে ‘লাল জমিন’, সুবচন নাট্য সংসদের ‘মহাজনের নাও’। মহাজনের নাও-এর নাট্যকার শাকুর মজিদ।
শাকুর মজিদের আরেকটি নাটক ‘হাসনজানের রাজা’ অনন্ত হিরার নির্দেশনায় মঞ্চে আনে ‘প্রাঙ্গণেমোর’। অনন্ত হিরা প্রাঙ্গণেমোরের ‘শ্যামাপ্রেম’, ‘আওরঙ্গজেব’ ও ‘ঈর্ষা’ নাটকেরও নির্দেশক। আর নাট্যকার ও নির্দেশক হিসেবে অনন্ত হিরার ‘লোকনায়ক’ও মঞ্চে আনে প্রাঙ্গণেমোর। রবীন্দ্রনাথের ‘চার অধ্যায়’ উপন্যাসের নাট্যরূপ দিয়ে ‘স্বদেশী’ নামে নিজেই নির্দেশনা দেন নূনা আফরোজ, তার নির্দেশনায় প্রাঙ্গণেমোর মঞ্চস্থ করে ‘রক্তকরবী’ ও ‘শেষের কবিতা’। শেষের কবিতার নাট্যরূপ অনন্ত হিরার। নূনা আফরোজ নাট্যকার ও নির্দেশক হিসেবে মঞ্চে আনেন ‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’। প্রাঙ্গণেমোর ‘কনডেম সেল’ নামে আরেকটি নাটক মঞ্চস্থ করে- যার নাটককার অনন্ত হিরা আর নির্দেশক আউয়াল রেজা।
সুবচন নাট্য সংসদ ‘প্রণয় যমুনা’ মঞ্চস্থ করে সুদীপ চক্রবর্তীর নির্দেশনায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের রাধাকৃষ্ণ উপন্যাসের এই নাট্যরূপ দিয়েছেন আসাদুল ইসলাম। আসাদুল ইসলাম ‘নদ্দিউ নতিম’ নামে কথা সাহিত্যক হুমায়ূন আহমেদের ‘কে কথা কয়’ উপন্যাসের নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন, যেটি রেপাটরি নাট্যদল ‘ম্যাড থেটার’-এর প্রযোজনায় মঞ্চে এসেছে। তার আরও একটি নাট্যরূপ ‘ষড়ভূজ’, এটি কথা সাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের ছোটগল্প ‘ইব্রাহিম বক্সের সার্কাস’ অবলম্বনে রচিত। এছাড়াও স্যামুয়েল বেকেটের ‘ওয়েটিং ফর গডো’ অনুবাদ করেছেন তিনি। সুদীপ চক্রবর্তী হবিগঞ্জের ‘জীবন সংকেত নাট্যদলে’র ‘জ্যোতি সংহিতা’ নাটকেরও নির্দেশনা দিয়েছেন। জ্যোতি সংহিতার নাটককার রুমা মোদক। রুমা মোদকের আরেকটি নাটক হরিশংকর জলদাসের উপন্যাসের নাট্যরূপ ‘জলপুত্র’ মঞ্চে এনেছে ‘বেঙ্গল থিয়েটার’, এটি নির্দেশনা দিয়েছেন হাসান রেজাউল।
অলোক বসুর রচনা ও নির্দেশনায় ‘নাট্যধারা’ মঞ্চে আনে ‘অতীশ দীপঙ্কর সপর্যা’ আর ‘মেঠোপথ’ প্রযোজনা করে ‘অতঃপর মাধো’। এছাড়াও ‘নাট্যধারা’ মঞ্চে আনে অলক বসু রচিত ও দেবাশীষ ঘোষ নির্দেশিত ‘অশ্বমেধ যজ্ঞ’। দেবাশীষ ঘোষের নির্দেশনায় ঢাকা পদাতিক মঞ্চে আনে ‘কথা ’৭১’, নাটকটি রচনা করেছেন কুমার প্রীতীশ বল।
এই আলোচ্য সময়ে ‘স্বপ্নদল’ মঞ্চে এনেছে ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ আর ‘হরগজ’। দুটি নাটকেরই নির্দেশক জাহিদ রিপন। মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের নির্দেশনায় ‘পুত্র’ মঞ্চে এনেছে ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি’। মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন নাটকের দল ‘কিসসা কাহিনী’ থেকে তার নির্দেশনায় মঞ্চে আনেন আসাদুজ্জামান দুলালের নাটক ‘সুখ চাঁন্দের মোড়’।
‘থিয়েটার’ (নাটক সরণি) প্রযোজনা ‘মুক্তি’ মঞ্চে আসে ত্রপা মজুমদারের নির্দেশনায়। লী ব্লোসিং এর এই নাটকের ভাবানুবাদ করেছেন মিজারুল কায়েস। ত্রপা মজুমদার নির্দেশিত থিয়েটারের আরেকটি প্রযোজনা ‘বারামখানা’, নাটকটির রচয়িতা পান্থ শাহরিয়ার। পান্থ শাহরিয়ারের নির্দেশনায় নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় থেকে মঞ্চে আসে ‘ঘাসিরাম কোতয়াল’। এছাড়াও রেপাটরি দল ‘আগন্তুক’ এর ব্যানারে মঞ্চে আসে পান্থ শাহরিয়ার রচিত ও নির্দেশিত ‘অন্ধকারে মিথেন’ ও ‘ধলেশ্বরী অপেরা’।
মাহমুদুল ইসলাম সেলিম মানিক বন্দোপাধ্যায়ের ‘প্রাগৈতিহাসিক’ গল্পের নাট্যরূপ দিয়েছেন যা মঞ্চস্থ করেছে ‘নাগরিক নাট্যাঙ্গন’। নাগরিক নাট্যাঙ্গনের আরেকটি নাটক ‘গওহর বাদশাহ ও বানেছাপরী’ মঞ্চে আসে হৃদি হকের রচনা ও নির্দেশনায়। অপু শহীদ রচিত দুটি নাটক ‘ঈশ্বর পাঠ’ ও ‘চণ্ডীদাস’। রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প ‘নষ্টনীড়’ অবলম্বনে ‘অন্তর্খনন’ রচনা করেছেন রুবাইয়াৎ আহমেদ। রুবাইয়াৎ আহমেদের আরো নাটক ‘হিড়িম্বা’, এবং ৫টি নাটকের অনুবাদ (পঞ্চস্বর)। ‘ওপেন স্পেস থিয়েটার’ মঞ্চে আনে ‘টুয়েলভ অ্যাংরি ম্যান’- যেটির মূল লেখক রেজিনাল্ড রোজ এবং নির্দেশনা দিয়েছেন এম আরিফুর রহমান।
‘মণিপুরি থিয়েটার’ এর আত্মপ্রকাশ ও বিকাশ সবই গত ২০/২২ বছরে। এই দলের সবগুলো নাটকেরই নির্দেশক শুভাশিস সিনহা। ‘শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন’, ‘দেবতার গ্রাস’, ‘কহে বীরাঙ্গনা’, ‘হ্যাপি ডেজ’। দেবতার গ্রাস রবীন্দ্রনাথের কবিতার নাট্যরূপ- নাট্যরূপ দিয়েছেন নির্দেশক স্বয়ং। কহে বীরাঙ্গনা মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘বীরাঙ্গনা’ পত্রকাব্য অবলম্বনে নির্মিত। আর স্যামুয়েল বেকেটের ‘হ্যাপি ডেজ’র নির্দেশকের অনুবাদেই মঞ্চে এসেছে। নাটকের দল ‘চারুনীড়ম’ থেকে গাজী রাকায়েত নির্দেশনা দিয়েছেন ‘শেষ নবাব’।
শহীদুল জহিরের গল্প ‘আমাদের বকুল’ এর নাট্যরূপ ‘লাল পিঁপড়া’ মঞ্চস্থ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমি, জামালপুর। শাহীন রহমানের এ নাট্যরূপের নির্দেশনা দেন শাহীন মালেক ইভান। ‘আরশীনগর’ এর প্রযোজনায় শহীদুল জহিরের উপন্যাস ‘সে রাতে পূর্ণিমা ছিল’ মঞ্চরূপ দেন রেজা আরিফ। নাটকের দল আরশীনগর থেকে রেজা আরিফের আরো একটি নির্দেশনা- অভিজিৎ সেনের উপন্যাস ‘রহু চণ্ডালের হাড়’। তার নির্দেশনায় মঞ্চে এসেছে- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রযোজনা ‘কারবালার জারি’। শহীদুল জহিরের গল্প ‘কাঠুরে ও দাঁড়কাক’ এর নাট্যরূপ ‘জনমে জন্মান্তর’ মঞ্চে আনে ‘দেশ নাটক’, এটির নাট্যরূপ ও নির্দেশানা দিয়েছেন নাসির উদ্দীন শেখ। উক্ত সময়ে অর্থাৎ গত ২০/২২ বছরে দেশ নাটক মঞ্চে আরো আনে ‘লোহা’ ও ‘অরক্ষিতা’- ইশরাত নিশাতের নির্দেশনায়। লোহা’র নাটককার নির্দেশক স্বয়ং আর অরক্ষিতা’র নাট্যকার মাহবুব লীলেন। দেশ নাটক মাসুম রেজার রচনা ও নির্দেশনায় মঞ্চে আনে ‘নিত্যপুরাণ’। মাসুম রেজা রচিত ‘আরজ চরিতামৃত’ মঞ্চায়িত হয় ‘নাট্যকেন্দ্র’ থেকে। মাসুম রেজা রচিত আরো একটি নাটক ‘জলবালিকা’।
মোটামুটি এই হলো গত ২০/২২ বছরে নাট্যরচনা ও নির্দেশনায় উত্তর-প্রজন্মের উল্লেখযোগ্য থিয়েটারযজ্ঞ। বেখেয়ালে বা স্মরণের ভুলে দু’একজনের নাম হয়তো বাদ রয়ে যেতে পারে। আমি তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। যাদের নাম উল্লেখ করা হলো, তারা বেশিরভাগই থিয়েটারের সাথে সরাসরি যুক্ত। অর্থাৎ অধিকাংশই কোনো না কোনো নাটকের দলের সাথে জড়িত। আবার দলের সাথে জড়িত নন এমনও আছেন কেউ কেউ। এদের দু’একজন বিদেশেও পাড়ি জমিয়েছেন, এখন আর লিখছেন না, অথবা লিখছেনও কেউ। অর্থাৎ সবাই মোটামুটি একটা সক্রিয় চর্চার মধ্যে আছেন যা কোনোভাবেই হেলাফেলার নয়। সকলের হাত ধরেই বাংলাদেশের থিয়েটার এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে চলেছে। তবে নিয়মিত চর্চা ও সনাক্তযোগ্য প্রযোজনা আর পাণ্ডুলিপি যত বাড়বে ততই গতিশীল হবে আমাদের থিয়েটার তথা নাট্যচর্চা, আর এভাবেই তৈরি হবে থিয়েটারের পরম্পরা। পরম্পরা না থাকলে এ শিল্প প্রবহমান থাকে না। এই নতুন প্রজন্মের হাত ধরে থিয়েটার পেয়েছে নানান ধরন-ধারণ, নানামুখি বাঁক-বৈচিত্র্য। বিষয়ে-রচনায়-নির্মাণে-অভিনয়ে এত রকমারি চর্চা এসেছে, যা অবলীলায় স্বীকার করতেই হয়, যা সত্যিই অভূতপূর্ব!
প্রশান্ত হালদার ( This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it. ): অভিনেতা ও লেখক। সদস্য- অনুস্বর।